| নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস | 
   ভারত এত কাছে তবুও যাওয়া হয় না । তাই প্রতিবেশী  দেশ  ভারত দেখার  ইচ্ছেটা  সেই  ছোট  বেলা  থেকে। কেন যেন সুযোগ হয়ে  উঠছিলো না ।  পৃথিবীর  বিভিন্ন  দেশে  ভ্রমণের  সুযোগ  পেলেও পাশের  দেশ ভারত  অদেখাই  রয়ে  গিয়েছিল।  ২০০৮  সালে  এই  সুযোগ  এলো । সময়টা  জুলাইয়ের  শেষ দিকে ।  বেশ  কদিন  সময়  পাব  ভারতের  রাজধানী ,  ভারতীয়  সিলিকন  ভ্যালী  অর্থাৎ  ব্যাংগালোর, বিশাখা  পত্তম  ও  ভারতীয়  পশ্চিম  বংগের  রাজধানী  কলকাতা  একটু  ঘুরে ফিরে  দেখার  ।  এই  ফাঁকে  আগ্রা, জয়পুর  দেখার  সখটাও  মিটিয়ে  নেয়া  যাবে । ৩০ জুলাই  সকাল  নয়টা  ত্রিশ  মিনিটের জেট  এয়ার  ওয়েজ  এর  ফ্লাইট  নম্বর  ৯  ডব্লিউ  ০২৭১  এ  করে  ঢাকা  থেকে  ¢পস‘£ষ  পথে  রওয়ানা  হলাম  ।  ১ ঘন্টা ৫০ মিনিট ফ্লাইট  টাইম  শেষে  স্থানীয়  সময়  পৌনে  বারটায়  ইন্দিরা  গান্ধী বিমান  বন্দরে  ল্যান্ড  করল  আমাদের  প্লেন  ।  
 
ইন্দিরা  গান্ধী  আন্তর্জাতিক  বিমান  বন্দর, দিল্লী  
 কাষ্টম  ও  ইমিগ্রেশন  শেষ  করতে  সময়  লাগেনি ।  মোবাইলের  সিম  কিনতে  ২  ঘন্টা  লেগে  গেল ।  সিম  কিনলাম  ৩৪০ ষ¦¢ভ দিয়ে  ।  নিউ  দিল্লীর  রাজেন্দ্র  ভ‘ঢ়ষ হোটেল  জয়পে সিদ্ধার্থতে  আসতে  আসতে  ২টা  ৩০  হয়ে  গেল ।  ফ্রেস  হয়ে  ৩-৩০ এ  রুম  থেকে  নেমে  এলাম । লোকাল  দোকানে  বার্গার  ও  ড্রিংকস  দিয়ে  দুপুরের  খাবার  খেলাম, সাথে  জুস । এরপর  ৪-৩০  এ  বাসে  করে  শহর  ঘুরতে  বের  হলাম ।  প্রথম দেখায় পুরানো  দিল্লী  শহর বেশ নোংরা,  ময়লা  ও  অনুন্নত, বাজে লাগলো   পরে আস্তে আস্তে চোখে সয়ে গিয়েছিল।  দেখতে  দেখতে  মোগল  আমলের  ঐতিহাসিক দিল্লী  জামে  মসজিদে  চলে  এলাম ।
 
জামে  মসজিদ, দিল্লী  
 আসরের  নামাজ জামে  মসজিদে   পড়লাম। জুম্মা মসজিদ সম্রাট শাহাজানের  শেষ  কীর্তি  ।  লাল  কেল্লার  বিপরীত  দিকে  ১৬৫৮ সালে  প্রায়  দশ  কোটি  টাকা  ব্যয়ে  তিনি  এ  মসজিদটি  তৈরি  করেন।  পিয়াজ  আকৃতির  গম্বুজ  আর  দীপ  শিখার  মত  মিনার  যুক্ত  অপরুপ  সৌন্দর্য  মন্ডিত  ২০১  ফুট  উচু  মসজিদটিতে  ৩৯ টি  সিঁড়ি  বেয়ে  ঢুকতে  হয় ।  
 
জামে  মসজিদ, দিল্লী
মসজিদের  ভিতরে  প্রায়  পঁচিশ  হাজার  লোক  একসাথে  নামাজ  আদায়  করতে  পারেন ।  এখানে  মহানবী  হযরত  মুহাম্মদ  (দঃ)  এর  চটি, একটি  দাড়ি, তার  সমাধির  একটি  চাঁদোয়া  সংরক্ষিত  আছে । বিশাল  মসজিদ অর্থের  অভাবে  সংস্কার  নেই  তাই আস্তে  আস্তে  নষ্ট  হয়ে  যাচ্ছে । সময়ের অভাবে এগুলো দেখা হয়নি, এর কাছাকাছি মিষ্টির দোকান থেকে দিল্লাকা লাড্ডু খেলাম । 
 
রাজঘাট, মহাত্মা  গান্ধীর  সমাধি
সেখান  থেকে  মহাত্মা  গান্ধীর  সমাধি  রাজঘাট  ঘুরে  এলাম ।  রাজঘাট  বেশ  সুন্দর  করে  সাজানো। আবহাওয়া গরম, বাতাসে  আর্দ্রতাও  বেশ। গরমের  কারণে  তেমন  ভাল  লাগেনি । বিকেলেও  গরম  কমেনি। বহু  খ্যাতনামা  ব্যক্তির  শেষ  কৃত্যস্থল  রচিত  হয়েছে  যমুনার  পারে  ।  এগুলো  দেখতে  হলে  প্রথমেই  আসতে হবে রাজঘাটে  ।  ফিরোজশাহ  কোটলার  কাছে  যমুনার  পারে  মহাত্মা  গান্ধীর  মরদেহ  ভম্মীভূত  হয়  ।  এখানে তার  সাদাসিদে  সমাধি  বেদিটিকে দেখা যাবে। এ  সাধারণ  বেদীটির  সামনে  দাঁড়ালে চোখের  সামনে  ভেসে  উঠবে  সেই  অহিংসার  ব্রতী, কাঠের  খড়ম  ও  খদ্দর  পরিহিত  দেবতুল্য  সাধারণ  লোকটির  চেহারা  ।   এখানে  আছে  গান্ধী  স্মারক  সংগ্রহশালা।  আরও  তার সম্পর্কে  লিখিত  প্রায়  পনেরো  হাজার পুস্তক  সহ  তার  লিখিত ও ব্যবহৃত  বহু  দ্রব্য  সামগ্রী  ।  এগুলোর  মধ্যে  তার  চপ্পল, লাঠি , চরকা, জেলখানার  বাসনপত্র  ও  জীবনের  শেষ  দিনে  পরিহিত  রক্তমাখা কাপড় । নাথুরাম  গড্সে  কর্তৃক  বুলেট  বিদ্ধ হয়ে  নিহত  হন গান্ধীজি । 
  
রেড  ফোর্ট, দিল্লী
তারপর  লাল  কেল্লা  বা  রেড  ফোর্ট  দেখতে গেলাম।  দিল্লী  এসে  প্রথম  ধাক্কাতেই  হতাশ  হলাম।  হিন্দি ছবিতে  দেখা  চাকচিক্যের  সাথে  বাস্তবের  বেশ  ফারাক ।  দিল্লীর  অন্যতম  প্রধান  আকর্ষণ  সম্রাট  শাজাহানের  নির্মিত  লাল  কেল্লা  বা  রেড  ফোর্ট  ।  ১৬৪৭  সালে  তিনি  এই  লাল  কেল্লা  তৈরির  মাধ্যমেই  দিল্লী  নগরীর  ভিত  রচনা  করেছিলেন  । এক  সময়  সম্পূর্ণ  জায়গাটা  ছিল  খোলা  বিরান  অঞ্চল, হায়েনার  বসবাসের  স্থান  ।  সম্রাট  শাহজাহান  এই লাল  কিল্লা  প্রতিষ্ঠা  করেন  ।  তিনি  আগ্রা  থেকে  মোগল  সাম্রাজ্যের  রাজধানী  দিল্লীতে স্থানান্তর  করার  জন্যই  এই  স্থাপনা  নির্মান  করেন  যার  নির্মান  কাজ  ১৬৪৮  সালে  শেষ  হয়  ।  সম্রাট  এটার  উদ্ভোধন  করেন  ।  বিপুল  উৎসাহ  ও  বর্ণীল  উৎসবের  মধ্যে  দিয়ে  লাল  কেল্লার  সীমানা  ছাড়িয়ে  নতুন  নগর  শাহজাহানাবাদের  পত্তন  হয়  ।   তখন  এটিই  ছিল  শক্তি  আর  সৌন্দর্য্যরে  আধার । এর  চারপাশ  ৯০  ফুট  উচু  দেয়াল  আর  ৩০  ফুট  গভীর  পরিখা  দিয়ে ঘেরা । এক  সময়  এটি  ছিল  দুর্জেয়  এক  মহাশক্তিশালী  দুর্গ ।  ১৭১৫  সালের  ভূমিকম্প, ১৭৩৯  সালের  নাদির  শাহের  আক্রমণ  ও  লুট,  ১৭৫৯  সালে  মারাঠি  ও  অন্যান্য  আক্রমনে এই  দুর্গ   শক্তিহীন  হয়ে  পড়ে  । তবে  শক্তিহীন  হলেও  সে  সৌন্দর্য্যরে  মোহনীয়  রুপ  নিয়ে  দাঁড়িয়ে আছে  বহুকাল ধরে  । ১৮৫৭  সালের  সিপাহী  বিদ্রোহের  সময়  ব্রিটিশ  সৈন্যরা  এর  অনেক  ক্ষতি  সাধন  করে  ।  
দিল্লীর  রেডফোর্টে  সন্ধার  পর  লাইট  এন্ড  সাউন্ড  শো  হয়  ।  দর্শকদের  বসার  সুন্দর  ব্যবস্থা  আছে  ।  দুরে  বাদশাহদের  দরবার,  খাস  মহল  মসজিদ  ইত্যাদি  ভবন  ।  এগুলোর  উপর  বিভিন্ন  সময়  বিভিন্ন  রংএর  আলো  ফেলে  সাথে  শব্দের  সমন্বয়ে  সুন্দর  এই  লাইট   এন্ড   সাউন্ড  শো, টিকেট  কেটে  ভিতরে  ঢুকতে হয়  ।  হিন্দী  ও ইংরেজী  দুটো  ভাষায়  এই  প্রোগ্রামটা  হয়।  ইংরেজীতে  শেষ  হলে  ভারতীয়  দর্শকদের  জন্য  হিন্দী  ভাষায়  উপস্থাপন  করা  হয়।  সন্ধ্যা  ৭-৩০ এ লাইট  এন্ড  সাউন্ড  সো  দেখলাম  রেড  ফোর্ট এ  ।  মোঘল  আমলের  ইতিহাস  দিয়ে  শুরু  হয়ে  ভারতের  স্বাধীনতা  দিবস  ১৫  আগস্ট  ১৯৪৭  পর্যন্ত  ধারাবাহিক  ঘটনাগুলো  শব্দ  দিয়ে  বর্ণনা  করার  চমৎকার  ব্যবস্থা ।  সেনাবাহিনীর মার্চের পদধ্বনি, ড্রামের  শব্দ,  ঘোড়ার  খুরের  আওয়াজ  পরিষদের  কথাবার্তা  সব  মিলিয়ে  আলো  ও  শব্দের  মধ্যে  রেড  ফোর্ট  যেন  প্রান  ফিরে  পায়  ।  মোগল  আমল  থেকে  শুরু  করে  ১৫  আগস্ট  ১৯৪৭  সালে  ভারত  স্বাধীন হওয়া  পর্যন্ত  ইতিহাসের  টানাপোড়েন  উত্থান  পতন  এর  ইতিহাস  সুন্দর  ভাবে দর্শকদের  সামনে  উপস্থাপন  করা  হয়  এই  অনুষ্ঠানে  । তিন  শতাব্দী  ধরে  এই  লাল  কিল্লা  ভারতের  বুকে  দাড়িয়ে  আছে  ।  জীবনের  শেষ  প্রান্তে  শাহজাহান  ক্ষমতার  লড়াইতে  তার  ছেলে  আওরঙ্গজেব  এর  হাতে  বন্দী  হয়  এবং  ১৬৬৬  সালে  মৃত্যুর    পূর্ব  পর্যন্ত  এখানে  বন্দী  জীবন যাপন  করেন ।  আওরঙ্গজেব  এখানে  দোর্দন্ড প্রতাপে  রাজত্ব  করেন  এবং  মোতি  মসজিদ  নির্মান  করেন  ।  এটাই  কেবল  তিনি  এখানে  যোগ  করেছেন  ।  
আওরঙ্গজেবের  মৃত্যুর  সাথে  সাথে  মুগল  বংশের  ক্ষয়  শুরু  হয়  ।  পরবর্তী  বাদশাহরা  নাচ  গান  এ  আসক্ত  হয়ে  পড়েন  এবং  একের  পর  এক  ক্ষমতায়  আসেন  ও  চলে  যান ।  তারা  বার  বার  পারস্য  থেকে  আসা  নাদির  শাহর  আক্রমনের  শিকার  হয়ে  দুর্বল  থেকে  দুর্বলতর  হয়ে  পড়েন । শেষ  মোগল  সম্রাট  বাহাদুর  শাহ জাফর  একজন  কবি  ও  কবিতার  ভক্ত  ছিলেন  ।  ১৮৫৭  সালের  যুদ্ধের  পর  বাহাদুর  শাহকে  বার্মা  মুলুকে  নির্বাসন  দেয়া  হয় ও তার  কিছু  কিছু  বংশধরকে  হত্যা  করা হয় ।  ভারত  ইংরেজ  শাসনের  আওতায়  আসে  ।  পরবর্তী  ২০০  বৎসর  ইংরেজরা  ভারতে  তান্ডব  চালায় । মহাত্মা  গান্ধী, নেহেরু  ও  অনেক  সাহসী  বীর  ভারতীয়রা  ভারতকে  স্বাধীনতার  স্বাদ  গ্রহনে  সাহায্য  করে  ।   শব্দ  ও  আলোর  মুর্চ্ছনায়  কখন  যে  সময়  কেটে  যায়  বোঝা  যায়  না  ।  ভারতের  ইতিহাস  না  জানা  থাকলেও  একজন  শ্রোতা  এই  অনুষ্ঠানে  বসে  অনেক  অভিজ্ঞতা  লাভ  করতে  পারে  ।  এখানে  মোগল  সম্রাটদেরকেও  ভারতের  আগ্রাসী  শক্তি  হিসেবে  দেখানো  হয়েছে ।  বিদেশীরা  যে  ভারতে  থাকতে  পারে  না  চলে  যেতে  বাধ্য  হয়  তাই  দেখানো  ও  বোঝানোর  চেষ্টা  হয়েছে  ইতিহাস  ও  দেশপ্রেম  মূলক  এই  অনুষ্ঠানে  ফোর্ট  ঘুরে  দেখার  পাশাপাশি  এটাও  একটা  বিশাল  অভিজ্ঞতা  ।  বাইরে  এসে  নিম্বু  পানি  খেলাম।  তারপর  হোটেলে  এসে  ডিনার করতে  বের  হলাম । ডিনারে  বিরিয়ানী  খেলাম। সাউথ  ইন্ডিয়ান  রান্না  মশলা, ঝাল  ও  তেলে  একাকার।
পরদিন  সকাল  বেলা  হোটেলে  নাস্তা  খেলাম  তারপর  কাজকর্ম  সেরে  দুপুর  বেলা  আবার  হোটেলে  ফেরৎ।  দিল্লীর  রাজপথ  গুলো দেখা  হলো  ।  মানুষজন  তেমন  নেই, রাস্তা  প্রশস্থ, গাড়ীগুলো  বেশীরভাগ  ভারতীয়। দুপুরে লাঞ্চ  করতে  গেলাম,  ফ্রাইড রাইস ও  ভেজিটেবল  খেলাম  রাজেন্দ্র  প্লেস ষ্টেশন এর  কাছে  ছোট  একটা  রেস্তোরাতে, এক  শিখ  তরুন  এর  মালিক  । ৯ রুপি দিয়ে  টিকেট  করে  রাজেন্দ্র প্লেস মেট্রো  স্টেশন  থেকে  কনট  প্লেস  যাওয়ার  জন্য  তৈরী  হলাম  ।  রাজীব  চক  ষ্টেশনে  নামতে  হলো, তারপর  হেঁটে  কনট  প্লেস । বেশ  সুন্দর  জায়গা ।  কনট  প্লেস  থেকে  জুতা  ও  জামা  কাপড়  কিনলাম । কনট  প্লেসের  কাছেই দিল্লী  আন্ডার  গ্রাউন্ড এসি  মার্কেট  পালিকা  বাজারে  নামলাম ।  অনেক  আগে এর নাম  শুনেছিলাম ।  আজ  নতুন  অভিজ্ঞতা হলো  দিল্লীর  মেট্রোতে  চড়া, এছাড়া বাসে  করে  ঘুরার  সময়  সুন্দর  রাস্তাগুলো  দেখলাম । একটু  পরিচ্ছন্নতা  ও  নতুনত্বের  ছোঁয়াতে গতকালের  হতাশা  কিছু  কমে  গেছে  আজ ।  বৃষ্টি  হলো  আজ  দিল্লীতে ।  ইন্ডিয়া  গেট  দেখলাম । পরে  আসলে  ছবি  তুলতে  হবে এই  বিখ্যাত  স্থাপত্যের  ।  
   আগস্ট  মাস   ভারতের  স্বাধীনতা  দিবস  এর  মাস ।  ১ লা  আগস্ট   ইন্ডিয়া  গেট  এর  সামনে  বেড়াতে  গেলাম  ছবি  তুললাম বেশ  কিছু ।  বেশ  গরম  আর  রৌদ্র  ।  ৪-৩০  এর  দিকে  মেট্রো  ট্রেনে  করে  ক্যারলবাগ  মার্কেট  দেখতে  গেলাম।  অনেক  দোকান  পাট । একটা  সোজা  রাস্তার  দুপাশে  মার্কেট।  ব্রান্ডের  জিনিষ  পত্রের  অনেক  গুলো  দোকান  আছে। কে এফ সি’র মত  আন্তর্জাতিক  চেইন সপ  অনেক আছে ।  সব ধরণের  পণ্যের  সমাহার থেকে  পছন্দ  করে  কিনে  নিলেই  হলো , দামও  সাশ্রয়ী।  আজকে  দিল্লী  ঘুরতে  ভালই  লাগল  ।  আকবর  রোড, তোঘলক রোড, মানসিংহ রোড, আশোকা রোড দেখলাম । আগামীকাল  আগ্রার  পথে  রওয়ানা  হব ।  
আগ্রা
    সকালে  ৬-৩০ এ  উঠে  হোটেলেই   নাস্তা  করলাম ।  ৭-৩০ এ  আগ্রার  উদ্দেশ্যে  বাসে  করে  রওয়ানা  হলাম  । দিল্লীর  সীমানা  পেরিয়ে  হরিয়ানা  প্রদেশ  হয়ে  উত্তর  প্রদেশে  ঢুকলাম।  দুইবার  হাইওয়েতে টোল  দিতে  হলো  ।  হরিয়ানা  একটু  নীচু  এলাকা, এখানে  জমিতে পানি  জমে ।  চলার  পথে  উত্তর  প্রদেশ  সীমান্তের  কাছে  একটা  হোটেলে  যাত্রা  বিরতী। হোটেলটা পর্যটকদের জন্য  বিশেষ  ভাবে  বানানো । ফ্রেস  হবার জায়গা  অন্যান্য কেনাকাটি এবং খাবারের  ব্যবস্থা  আছে।  সুভ্যেনিরের  বেশ  দাম  তবে  ভাল  সুভ্যেনির  আছে  ।  দুপুর  ১ টায়  আগ্রায়  পৌঁছালাম  ।  আগ্রাক্যান্ট  এর  চাইনিজ  রেস্তোরাতে  বেশ  মজা  করে  লাঞ্চ  করলাম ।  তারপর  ৪ টার  দিকে  জয়পে  প্যালেস  হোটেলে  এলাম  ।  সুন্দর  সাজানো, রুমগুলো  বেশ ভাল, আমাদেরকে  বেশ  আন্তরিকতার  সাথে রিসিভ  করল হোটেল  কর্তৃপক্ষ ।     ৪-৩০ এ  তাজমহল  দেখতে  গেলাম ।  
 
তাজমহল,আগ্রা
পৃথিবীর  সপ্তম  আশ্চর্যের  আরও  একটা  নিদর্শন  দেখার  সৌভাগ্য  আল্লাহ  দিলেন । ভেতরে ঢোকার  টিকেট এর ব্যবস্থা  আছে ।  বাংলাদেশীদের  জন্য  সাতশ  পঞ্চাশ  রুপী  করে  টিকেট  ।  বেশ  চেক  করে  ভেতরে  ঢুকার  আয়োজন ।  পৌনে  ছটা  পর্যন্ত  ভেতরে  ঘুরে  ঘুরে  দেখলাম  অপূর্ব  সুন্দর  দেখার  মত  স্থাপনা  । মানুষ  পৃথিবীতে  কত সম্পদ  ঢেলেছে  তা  দেখা  যায়  এখানে  ।  সব  জায়গায়  ঘুরে ঘুরে দেখলাম চোখ  জুড়িয়ে  যায় ।  ক্যামেরায়  ছবি  তুললাম তাজমহলের  ।  ৬ টায়  আগ্রা  ফোর্টে  এলাম।  
বিশাল  কারবার, বাদশাহদের  থাকার  জায়গা  বেগম ও  শাহজাদীদের  থাকার  ব্যবস্থা  দেখলাম  ।  শাহজাদী  জাহানারা ও  রওশন  আরার  মহল  দেখা  হল  ।  বন্দী  অবস্থায়  শাহজাহান  যে জায়গা থেকে তাজমহল  দেখতেন  সেখানে গেলাম  ।  সন্ধ্যায়  আগ্রার  বাজার  এলাকা  থেকে  খাবার  কিনলাম  ।  রাতে রুমে  টিভি  দেখে  সময়  কাটালাম  ।  পরদিন  ভোর  ৭-৩০ এ  আগ্রা  থেকে  জয়পুর  এর  দিকে  রওয়ানা  হলাম ।  পথে  ১০-৩০ এ  ফতেহপুর  সিক্রিতে  গেলাম  ।  সম্রাট  আকবর  এটা  বানিয়েছিল ।  এখানে ১৫০ রুপি  দিয়ে ভারতের  বিভিন্ন  স্থানের  উপর  নির্মিত  কয়েকটা  সিডি ও  বই  কিনলাম  একটা  ছেলের  কাছ  থেকে  । ব্যাটারী চালিত টেক্সি  নিয়ে  ফতেহপুর  সিক্রিতে  এলাম  । 
 
  ফতেহপুর  সিক্রি থেকে  যাত্রা  করে  জয়পুর  পৌঁছাতে  ৩ টা  বেজে  গেল।  জয়পুরে  রাস্তার  পাশে  আকবর  হোটেলে  যোহরের  নামাজ  পড়লাম  ।  এটা খাবারের  রেস্তোরা  । ২০০ রুপি  দিয়ে  ভাত  মাংস  ডাল  দিয়ে  দুপুরের  খাবার  খেলাম  । তারপর  আম্বর প্যালেস  দেখতে  এলাম । সম্রাট আকবরের  হিন্দু  রাজপুত  রাণী  জুদাবাই  এর  প্রাসাদ  এটা ।  জয়পুরের  রাজপুত  রাজা  মানসিংহ  এটা  নির্মাণ  করেন  ।  জয়পুরকে  পিংক  সিটিও  বলে । জয়পুরে  কয়েকটা  ছবি  তুললাম  ।  আম্বর  প্যালেসে  পরিবেশ  বান্ধব  ব্যাটারী  চালিত জীপে  করে  যেতে  হয় ।  পাহাড়ের  উপর  অনেক  উঁচুতে  প্রাসাদ।  সবদেখার পর মার্কেটিং  করতে  এলো। সবই  ফিক্স প্রাইস এর দোকান  । চুড়ি  কিনল  অনেকে, শাড়ীও  পাওয়া  যায় ।  ৬ টার  দিকে  দিল্লীর  পথে  রওয়ানা  হলাম  ।  রাত  ১১-৩০  এ  মাইল  স্টোন  ৩২  নামের  ক্যাফেতে  ডিনার  খেলাম।  দিল্লী  তখনও  ৩২  মাইল  দুরে ।  হোটেলে  আসতে আসতে  ১২-৩০  বেজে  গেল । সব  গুছিয়ে  ঘুমাতে  ২ টা  বাজলো ।  ৭০০  কিঃমিঃ  এর  মত  বাস  ভ্রমণ  হলো  আজ।  এটা  ভারতে অবস্থানকালীন  একদিনের  দীর্ঘতম  বাস  যাত্রা  । সকাল ৪ টায়  উঠে হোটেলের  ডাইনিং  এ  নাস্তা  খেতে  গেলাম । হালকা নাস্তা খেয়ে  ৫-৩০ এ  এয়ারপোর্টের  উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম  ।  
 
ব্যাংগালোর  বিমান  বন্দর
জেট এয়ারে  দিল্লী  ব্যাংগালোর  ২-৩০  মিনিট  এর  ভ্রমণ, সময়মত  রওয়ানা  হলাম  ।  ১২-৩০ এর  দিকে  ব্যাংগালোর  বিমান  বন্দরে  পৌঁছালাম। প্লেনে  নাস্তা  দিল  সার্ভিস  ও  বেশ  ভাল  ।  ব্যাংগালোর  বিমান  বন্দর  বেশ  সুন্দর।  ইউরোপের  মত  খোলামেলা  ও  পরিচ্ছন্ন। এয়ারপোর্ট থেকে  ৪৫  কিঃমিঃ  দুরে  আমাদের  হোটেল  ।  কোন  ট্রাফিক  জ্যাম  নেই । আমরা  ভাইসরয়  হোটেলে  উঠলাম । ব্যাংগালোরকে  ভারতের  সিলিকন  ভ্যালীও  বলা  হয় । রুমে  এসে  হোটেলের  ডাইনিং  এ  লাঞ্চ  করতে  গেলাম । বেশ  মজার  খাবার  ১২৫ রুপি  বিল  এলো ।  
আজ  বিকেলে  ভারতের  অন্যতম  সফ্্টওয়ার  নির্মাতা  প্রতিষ্ঠান  ইনফোসিস  দেখতে  গেলাম  । বেশ  সুন্দর  কনফারেন্স  রুম, জনসংযোগ কর্মকর্তা  একজন  প্রাণোচ্ছল  তরুন  ।  ভাল  ব্রিফ  করল ।  তারপর  ইনফোসিস  এর  ৮০  একর  জায়গাতে ব্যাটারী  চালিত  কারে  করে  বিভিন্ন  ধরণের  আধুনিক  স্থাপনা  ও  চিত্তবিনোদনের  ব্যবস্থা  ঘুরে ঘুরে দেখলাম । সন্ধ্যায়  পর  সিল্ক  শাড়ীর  বাজারে  গেলাম ।  বেশ  সুন্দর  শাড়ী পাওয়া  যায়  এখানে,এরাই  বানায় ।  রাতে  ৮৫  রুপি    দিয়ে  মজা  করে  ২ টা  শোয়ারমা  ও  জুস  দিয়ে  ডিনার  করলাম  ।  পরদিন  সকাল  ১০ টার  দিকে  হিন্দুস্তান  অ্যারোনটিকস্্  লিমিটেড  এ  ভিজিট  ছিল । ভারত যে  অনেক  এগিয়ে  আছে  এ  ধরনের  শিল্প  প্রতিষ্ঠান  দেখে  তা  বুঝা  যায় ।  ভারত  এখন  হেলিকপ্টার  বানাতে  পারে  ।  
 
সফ্্টওয়ার  নির্মাতা  প্রতিষ্ঠান, ইনফোসিস  
১২ টার  দিকে  ভারত  ইলেকট্রনিক্স  লিমিটেড  এ  গেলাম  । অনেক  রকম  ইলেকট্রনিক্স  ও যুদ্ধের  যন্ত্রপাতি  বানায়  এই  প্রতিষ্ঠান।  এই  প্রতিষ্ঠানের  ৭৬ঃ২৪  শেয়ার  সরকার  ও  পাবলিক  এর।  নাসডাক  নিউইয়র্কেও  এদের  শেয়ার  আছে  ।  বিকেল  ৫ টায়  শহর  দেখতে  বের  হলাম।  
 
ব্যাংগালোর  শহরের  দৃশ্য
ব্রিগেড  রোড  ও  মহাত্মা  গান্ধী  রোডে  গেলাম।  ছবি  তুললাম  ।  অনেকক্ষণ  হেঁটে  মসজিদ  খুজে  পেলাম  সুলতান  মসজিদ,এখানে  মাগরেবের  নামাজ  পড়লাম, বেশ  বড়  মসজিদ  ।  কে এফসি’তে  ৩০০  রুপি  দিয়ে  ডিনার  করলাম ।  তারপর  ৬০  রুপি  দিয়ে  সি এন জি ট্যাক্সিতে  করে  হোটেলে  ফিরে  আসলাম।  পানি  কিনলাম  ১  লিটার  ।  গোসল  ও  নামাজ  পড়ে  ব্যাগ  গোছালাম  ।  বেশ  ভোরে  উঠতে  হবে।  ব্যাংগালোর  শহর  সারাদিনে  কিছুটা দেখা হলো  ।  
 
০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৬  বিকাল ৩:০৭
শোভন শামস বলেছেন: ধন্যবাদ সাথে থাকবেন।
২| 
১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৩  বিকাল ৫:৩৪
মনিরা সুলতানা বলেছেন:  হু ... 
  পড়লাম  ![]()
 
০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৬  বিকাল ৩:০৭
শোভন শামস বলেছেন: ধন্যবাদ সাথে থাকবেন।
৩| 
২০ শে জানুয়ারি, ২০১৩  দুপুর ১:৪৬
েবনিটগ বলেছেন: +
 
০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৬  বিকাল ৩:০৭
শোভন শামস বলেছেন: ধন্যবাদ সাথে থাকবেন।
©somewhere in net ltd.
১|
১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৩  দুপুর ১২:৩৬
বিল্লা বাবা বলেছেন: বস, হায়দ্রাবাদ কি গেসিলেন? যাইয়া থাকলে ওইটার বর্ণনা দিয়েন।