| নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস | 
![]()
সোলেমানিয়ার  থেকে ৬৯  কিঃ মিঃ দূরে ইরান  সীমান্তের  কাছে মাওয়াত এলাকা ।  মাওয়াত  যাওয়ার  পথে  সবচেয়ে  আকর্ষনীয়  দিক  হলো  পাহাড়  কেটে   বানানো   রাস্তা   দিয়ে  পাহাড়ের  চুড়ায়  উঠে  একই  ভাবে  ঘুরে  নীচে  নামতে  হয়।  আগাগোড়া  পাহাড়ী  পথে  মাওয়াত।  শীত  ছাড়া  অন্যান্য  সময়  পাহাড় গুলো  ধূসর  থাকে,  মাঝে  মাঝে  ঝাউগাছ  ও অল্প  কিছু  গাছ  দেখা  যায়, আর  শীতে  প্রকৃতি অপরুপ  রুপ  ধারন  করে।  মাওয়াত  যাওয়ার  পথে  পাহাড়গুলো  সাদা  বরফে  ঢাকা  পড়ে  যায়। বরফ  সরিয়ে  রাস্তা  করে  নিতে  হয় । বরফ,  ঝাউবন  সব  মিলিয়ে  শীতকালটাতে  এই  এলাকাকে  শ্বেতপুরীই  বলা  চলে  ।  শীতকালে  মাওয়াতের  পথে  বরফে  অনেক  ছবি  তুলেছিলাম  অনেক  দিন এ বরফ  থাকে,  বিশেষ  করে  পাহাড়ের  আড়ালে থাকা পাহাড়গুলোয়   সূর্যের  আলো  পড়ে  না  বলে  বরফ  গলতে  সময়  নেয়  ।  মাওয়াত  হয়ে  কাঁচা  রাস্তা  চোমান  পর্যন্ত  গেছে,  এটা  ইরানের  সীমান্ত  এলাকা। এখানে একটা পাহাড়ী  ছোট  নদী  আছে,  নদী   পার  হলেই  ইরান।  কুর্দিস্থানের  অনেক  জিনিষপত্র  বিভিন্ন ভাবে  আসে  এ  পথে,  এটাকে বর্তমানে  ক্ষুদ্র  ব্যবসায়ীদের  জমজমাট ব্যবসাকেন্দ্র  বলা  চলে।  মাওয়াতের  বৈশিষ্ট  অন্যান্য  এলাকার  মতই,  মানুষগুলো  গরীব  গ্রামের  বাড়ীঘরগুলো  পাথর ও  মাটির  তৈরী  ।  অল্প  কিছু  দালান  আছে।  মানুষ  জমি  চাষ  ও  পশু  পালন  করে  জীবিকা  নির্বাহ  করে  থাকে।  খুব  সরল  ও  অতিথি  বৎসল  মানুষ । দারিদ্র  তাদের  আন্তরিকতা   মান  করতে  পারেনি ।  
 
চোমান, মাওয়াত সীমান্ত  এলাকা  
 মাওয়াত  থেকে  সীমান্ত  এলাকা  চোমান  রওয়ানা  হলাম সকালের  দিকে,  পথে  অপূর্ব  নৈসর্গিক  দৃশ্য  দেখতে  দেখতে চলছি  । সুন্দর  দিন,  নীচে  পাহাড়ী  ঝরনা , পাহাড়ের  উপর  থেকে  নীচের  সবুজ  বিশাল  উপত্যকা  ও  সমতল  ভূমি  অপূর্ব  লাগছিল । পাথর  কেটে  বানানো  রাস্তা,  নুড়ি  বিছানো  পথ।  মাঝে  মাঝে  বৃষ্টির  পানিতে  পিচ্ছিল।  পাহাড়  গুলোর  মাটি  উর্বর । আঙ্গুর  ও  অন্যান্য  শাক সব্জী  এখানে  হয়।  তবে  অনেক  এলাকায়  মাইন  পোতা  ।  ইরাক  ইরান  যুদ্ধের  সময়  দুই  দেশই  সমগ্র  এলাকায়   মাইন  পুতে  রেখেছিল।  মাইনের  এই  দুর্বিষহ  যাতনা এখন  মানুষ  ভোগ  করছে।  দুই  একটা  বিদেশী  এনজিও  তাদের  স¦ল্প  বাজেট  দিয়ে  মাইন  পরিস্কারের  কাজ  চালিয়ে  যাচ্ছে।  সমগ্র  কুর্দিস্থানে  প্রায়  ২৫  লাখ  মাইন  পোতা  বা  ছড়ানো  হয়েছিল  ।  আর  এই  ইরাকী  অঞ্চলে  মাত্র  ৫  লাখ  লোক  ।  প্রতি  লোকে  যদি  ১টা  মাইন  উড়িয়ে  দেয় আরও  ২০  লাখ মাইন থাকবে  যা  সরাতে  প্রায়  ৫০  বৎসর  লাগবে  ।  বরফ,  ভূমি  ধ্বস  ও  বৃষ্টিতে  অনেক   মাইন   স্থানচ্যুত  হয়ে  গেছে  এবং  বিপদজনক  অবস্থায়  রয়েছে  ।  কত যে  দুর্ঘটনা  ঘটছে  তার  ইয়ত্তা  নেই  ।   অনেক  যুবক,  বৃদ্ধ,  শিশু  মাইনের  আঘাতে  আজ  পঙ্গুঁ।  তাদের  জীবনের  আনন্দ  আজ   নিভে  গেছে  ।  পঙ্গুত্বের  অভিশাপ  নিয়ে  হারানো  অঙ্গ  প্রত্যঙ্গ  নিয়ে  এক  দুর্বিষহ  জীবন।  এ এক  অমানবিক  অবস্থা।  এক  দিকে  সুন্দর  প্রকৃতি  অন্যদিকে মানুষের দুর্দশা   মনকে  বিষাদাক্রান্ত  করে  তোলে। 
  পাহাড়ের  নীচের  অপূর্ব  দৃশ্য ও গ্রাম  দেখতে  দেখতে আমরা  চলছি। গ্রামগুলো  ছোট, ৭/৮ টা  বাড়ী  নিয়ে  সহজ  সরল  জীবন। বন্ধুর  পাহাড়ী  পথে  দেড়  ঘন্টার  মত  গাড়ী  চালিয়ে  চোমানে  পৌছালাম ।  চোমান,  দুটো  পাহাড়  শ্রেণীর  মাঝে  একখন্ড  সমতলে  গড়ে  ওঠা  অস্থায়ী  আবাস স্থল। ব্যবসায়ী  এবং  তথা  কথিত  চোরাকারবারীদের  অস্থায়ী  আস্তানা  ।  পাহাড়ের   চূড়া  ও  গায়ে  কেটে  কেটে রাস্তা   বানানো  হয়েছে।  রাস্তার  সরাসরি  নীচেই  খাড়া  ঢাল  ।  ঢালের  নীচে  বয়ে  চলছে  পাহাড়ী  নদী  ।  এক  দিকে  ইরান  অন্য  দিকে  ইরাকী  কুর্দিস্থান  ।  সমতলে  গাধা  ও খচ্চরের  পিঠে  এপার  ওপার  মাল  পরিবহন  চলছে  তারপর  মালপত্র  ট্রাকে  লোড  হচ্ছে  ।  দুরে  ইরানের  সীমান্ত  রক্ষীরা  দূর্গ  থেকে  পাহারা দিচ্ছে ।  একটা  অলিখিত  অনুমতি  আছে  এখানকার  কারবারীদের  সাথে  সীমান্ত  রক্ষীদের ।  আর  কুর্দিস্থান  প্রান্তে  প্রহরী  নেই । সাময়িক  সরকারের  হাত এতদুর  আসতে  পারেনি,  তাদের  জনবল,  অর্থবলের  ঘাটতির  কারণে। অনেক  তাবু  খাটানো  হয়েছে। পথে  পথে  অনেক ঘোড়া  খচ্চর  তাবুর  আশে পাশে  মাল  আদান  প্রদানে  ব্যবহ্নত  হচ্ছে।  অস্থায়ী  দোকান  রয়েছে  সবার জন্য।  কেনা  কাটা   চলছে  ।  মোটামুটি  বেশ  ব্যস্ত।  লোকজন  বেশ  আন্তরিক। আমাদের  চা  ও  ইরানী  বিস্কিট  খেতে  দিল ।  চোয়ানী  ?  অর্থ্যাৎ  কেমন  আছো?  'বাসি'   জোর  বাস,  ভাল,  খুব  ভাল,  স্পাস,  ধন্যবাদ- জানালাম।  পথে  যেতে  যেতে  রোপওয়ে  দেখলাম  এগুলোও  স্থানীয়  ভাবে  বানানো,  মাল  পারাপারের  জন্য । অনেক  ট্রাক  লাইন  ধরে  দাড়িয়ে আছে।  জীবন  যাত্রার  প্রায়  সমস্ত  সামগ্রী , ডিম,  প্লাষ্টিকের  জিনিষ,  মুরগী,  ফল  টমাটো  সব্জী  সবকিছুই  এখানে   আদান  প্রদান  চলছে  ।  কাপড়  চোপড়ও  অনেক  আসে  সবই জীবনের  প্রয়োজনে  ।  রাস্তা  এখানে  বেশ  বিপদ  জনক,  চড়াই  উৎরাই  পার  হয়ে  আমাদেরকে  যেতে  হয়েছে  ।  মোটামুটি  দুপুর  হয়ে  গেল  মাঝামাঝি  পথে  যেতেই। পথের  মাঝে  ছোট  গ্রাম্য  খাবারের  দোকানে  থামলাম। মালিক  বেশ  আন্তরিক,  আমাদের  বসতে  দিল,  কিছু  খাবার দিল টেষ্ট  করার জন্য , আমরাও  কিনে  খেলাম, বেশ  সস্তা  । কুর্দিস্থানে  হোটেলেও  মাঝে  মাঝে  খেতাম  স¦াদ  বদলানোর  জন্য।  খেতে  ভালই  লাগে  তবে  বাঙ্গালীর  খাবারের  স¦াদ  পাওয়া  যায়  না।  কুর্দিরা  ভাত  অনেকটা পোলাউর  মত  রান্না  করে,  সাথে  ডাল,  কিসমিস দেয়।  ভাত,  দু¤¦ার  মাংশ,  বিন  (কুর্দিরা  বলে   ফ্রাসোলিয়া) ও  অন্যান্য  সব্জী,  অঢেল  রান্না  বান্না  । পাশেই  প্রাকৃতিক  ঝর্ণা  থেকে  পানি  পড়ছে  টেপের  সাহায্যে  সেখানে  খাওয়া,  ধোয়া  সব  কাজ  হচ্ছে,  ব্যবসায়ী,  ট্রাক  চালকরা  এখানে  খেতে  আসে । বোঝাই  যায়  না  এত  লোক  এখানো  খাওয়া  দাওয়া  করে ।  অতিথি  বৎসল  মানুষদের সাথে কিছু সময়  কাটিয়ে সোলেমানিয়াতে   ফিরে এলাম । 
 
২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩  সন্ধ্যা  ৭:৫৬
শোভন শামস বলেছেন: ধন্যবাদ ++
২| 
২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩  সকাল ১০:৫৪
মনিরা সুলতানা বলেছেন: অতিথি বৎসল মানুষদের সাথে কিছু সময় কাটিয়ে সোলেমানিয়াতে ফিরে এলাম ।    ![]()
ভাল লাগলো  
 
২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩  সকাল ১১:৫৬
শোভন শামস বলেছেন: ধন্যবাদ ++
©somewhere in net ltd.
১|
২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩  দুপুর ১:৫৮
অপূর্ণ রায়হান বলেছেন: +++++++++++++++++