নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নানা দেশ কত কথা

শোভন শামস

আমার দেখা নানা দেশের কথা সবার জন্য - পাঠকের ভাল লাগাতেই আনন্দ

শোভন শামস › বিস্তারিত পোস্টঃ

গৃহযুদ্ধ অবস্থা – সাউথ সুদান

০৬ ই জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ৮:২৮

পৃথিবীর নবীনতম দেশ সাউথ সুদান। ২০১১ সালের জুলাই মাসে এই দেশটা সুদান থেকে আলাদা হয়ে নতুন দেশ হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। সহজে তাদের এই সৌভাগ্য আসেনি। তাদের এই স্বাধীনতার জন্য অনেক দাম দিতে হয়েছে।এখন দেশটাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সময়। উন্নত বিশ্বের অনেক দেশ এই দেশটাকে সাহায্য করছে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর জন্য। দেশটা অনুন্নত, মানুষগুলো বহু বছর ধরে যুদ্ধ করেছে, এই দেশের মানুষেরা দেশের বিশাল ভুখণ্ডে খুব কমই চাষাবাদ করেছে। এই শ্রমে তেমন আগ্রহ নেই তাদের । একটু চেষ্টা করলে দেশের মাটিতে কিন্তু সোনা ফলান যায়।

সাঊথ সুদানিদের পেশা পশুপালন, যুগ যুগ ধরে তারা এই কাজ করে এসেছে। ঘাসের অভাব নেই এদেশে, প্রায় সমতল দেশ, হোয়াইট নীল নদের পানি আছে এদেশে, এরা আরও ভাল থাকতে পারত এবং এখনো পারে। এদের মাটির নীচে আছে তরল সোনা- তেল। বর্তমানে সবচেয়ে সংঘাত পূর্ণ প্রদেশ জংলে নাকি তেলের উপর ভাসছে। এই তেল আজ অব্দি তোলা হয়নি, তবে অন্য প্রদেশের তেল ক্ষেত্রগুলো নানা দেশের কম্পানির মাঝে ভাগ করে দেয়া হয়েছে। জংলে প্রদেশে নিরাপত্তা অবস্থা ভাল না হওয়াতে এখনো তারা তেল উঠাতে পারছে না।



তেল উৎপাদনকারী এলাকা

ইউনিটি এবং আপার নাইল প্রদেশের তেল ক্ষেত্র গুলো তারা স্বাধীনতার সময় পেয়েছে এবং সেখানে তেল উত্তোলন অব্যাহত রয়েছে। এই তেলের টাকাই তাদের নানা অশান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

জুলাই ২০১১ সালের স্বাধীনতার পর থেকে আজ পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট সালভা কির দেশটি শাসন করে আসছেন। ২০১৩ সালের জুলাই মাসে প্রেসিডেন্ট মন্ত্রী পরিষদ ভেঙে দেন এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট রিক ম্যাচার ও কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীকে বরখাস্ত করেন। তখন থেকে দেশটিতে ভেতরে ভেতরে অশান্তি দানা বাধতে থাকে। ডিঙ্কা সাউথ সুদানের সবচেয়ে বড় গোত্র, এরপর হল নুয়েররা। প্রেসিডেন্ট সালভা কির একজন ডিঙ্কা এবং রিক ম্যাচার নুয়ের গোত্রের।



রিক ম্যাচার ও প্রেসিডেন্ট সালভা কির, জুলাই ২০১৩

গত ১৫ ডিসেম্বর ২০১৩ রাতে প্রেসিডেন্ট সালভা কিরের সভাপতিত্বে নেশানাল লিবারেশান কাউন্সিলের মিটিং চলছিল, সেই মিটিঙে নুয়ের গোত্রের নেতাদেরকে তাদের আশানুরূপ গুরুত্বপূর্ণ পদ দেয়া হয়নি। এতে তাদের মধ্যে চাপা ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এসময় একজন অজ্ঞাত বন্দুকধারী গুলি ছোড়ে। এই ঘটনা প্রেসিডেন্ট সালভা কিরের বিরুদ্ধে কু এর ব্যর্থ চেষ্টা হিসেবে গণ্য করে অনেক নেতাকে গ্রেফতার করা হয়।



মানবিক বিপর্যয় - জুবাতে উদ্বাস্তুরা চলছে আশ্রয়ের খোঁজে

এই সময় নুয়ের গোত্রের সেনারা জুবার বিল পাম ও ইউনিভার্সিটি এলাকায় সৈন্য দের কাছ থেকে অস্ত্র ও গোলাবারুদ ছিনিয়ে নেয়। এই ঘটনায় প্রায় পাঁচশত সামরিক ও বেসামরিক মানুষ নিহত হয়। সারা শহরে মারামারি শুরু হয় এবং ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত তা চলতে থাকে। এস পি এল এ এবং ডিঙ্কা গোত্রের সম্ভাব্য প্রতিশোধের ভয়ে নুয়ের গোত্রের ৬০,০০০ মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে জুবার জাতিসংঘের বিভিন্ন কম্পাউন্ডে আশ্রয় গ্রহন করে।



প্রায় এক লক্ষ আশি হাজার মানুষ এই গৃহ যুদ্ধে গৃহ হারা হয়েছে

নুয়ের অধ্যুষিত জংলে ও ইউনিটি প্রদেশে সংঘাত ছড়িয়ে পড়ে এবং বিদ্রোহিরা তেল সম্মৃদ্ধ জংলে প্রদেশের রাজধানী বোর এবং ইউনিটি প্রদেশ দখল করে নেয়। পরে সরকারী বাহিনী বোরের নিয়ন্ত্রন নিলেও তা আবার হাতছাড়া হয়ে যায়। জানুয়ারি ২০১৪ ‘র প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত জংলে ও ইউনিটি প্রদেশে প্রেসিডেন্ট জরুরি অবস্থা জারি করে। এই প্রদেশ গুলোতে সরকারী ও বিদ্রোহী বাহিনীর মধ্যে সংঘাত চলতে থাকে। এই ঘটনায় সারা দেশে প্রায় ১০০০ মানুষ নিহত হয় এবং ১৮০,০০০ মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়ে।



ওরা উদ্বাস্তু - ওরা উৎখাত হয়েছে ভিটে মাটি থেকে

জংলে প্রদেশে ডিঙ্কা গোত্রের প্রায় ৭০,০০০ উদ্বাস্তু নীল নদের অন্য পারে খোলা আকাশের নীচে আশ্রয় নেয়। এই সংঘাত যেন জাতিগত সহিংসতায় রুপ না নিতে পারে সেজন্য জাতিসংঘ এবং আফ্রিকান ইউনিয়ন ইথিওপিয়ার আদ্দিস আবাবায় সাউথ সুদান সরকার এবং বিদ্রোহী দের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। দুই গোত্রের মানুষগুলো এখন অমানবিক জীবন যাপন করছে এবং সারা দেশেই একটা অশান্ত এবং নিরাপত্তাহীনতা বিরাজ করছে।



সাউথ সুদানের এথনিক ম্যাপ

আফ্রিকার রুয়ান্ডা এবং কঙ্গোতে জাতিগত দাঙ্গায় বহু মানুষের প্রানহানীর ঘটনা পৃথিবীবাসীদের আন্দোলিত করেছিল। সাউথ সুদান একটা নব্য স্বাধীন দেশ, এই দেশে ক্ষমতার দ্বন্দ্বে সাধারন মানুষ বলি হউক এটা কেউ চাচ্ছেনা। রিক মাচার তার বিদ্রোহী বাহিনীকে জুবার দিকে পাঠানোর হুমকি দিচ্ছে। বিদ্রোহীরা জোর পূর্বক জুবা শহরে ঢুকতে চেষ্টা করলে স্থানীয় ডিঙ্কারা এস পি এল এর ডিঙ্কা সৈন্যদের সহায়তায় নুয়ের সম্প্রদায়ের উপর হামলা করে তাদেরকে হত্যার চেষ্টা করবে এবং আরেকটা কঠিন মানবিক বিপর্যয় ঘটবে।





বর্তমানে জানুয়ারি ২০১৪’র প্রথম সপ্তাহে জংলে প্রদেশে সরকারী বাহিনীর সাথে বিদ্রোহীদের যুদ্ধ চলছে। জুবাতে মাঝে মাঝেই দুই দলের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনা ঘটছে।



কিছু ছবি এবং তথ্য নেট ও স্থানীয় পত্রিকা

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০৭ ই জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ১:৫৩

রেজওয়ানা আলী তনিমা বলেছেন: তথ্যবহুল পোষ্টের জন্য ধন্যবাদ।

০৭ ই জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ৮:০৬

শোভন শামস বলেছেন: সাথে থাকবেন।
আফ্রিকার এই দেশটা এখন বেশ সমস্যার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে।

দুটি বড় গোত্র এখন মুখোমুখি।

ধন্যবাদ+++

২| ০৭ ই জানুয়ারি, ২০১৪ দুপুর ১২:৩২

শরৎ চৌধুরী বলেছেন: বেশ তথ্যবহুল পোষ্ট; তনিমার সাথে সহমত।

০৭ ই জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ৮:০৭

শোভন শামস বলেছেন: ধন্যবাদ সাথে থাকবেন

আপনাদের ভাল লাগলেই আমার আনন্দ

ভাল থাকবেন।

৩| ১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৫:৫০

ইমরান আশফাক বলেছেন: জংলে প্রদেশের তেল বাংলাদেশের জন্য সংরক্ষিত থাকুক, আমাদের নিজস্ব তেল কোম্পানীগুলি আর্থিক ও কারিগরী দিক দিয়ে সামর্থ অর্জন করা মাত্র ওখানে যাবে। উপযুক্ত শেয়ার দেওয়া হবে ঐ দেশের সরকারকে।

২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সকাল ১১:০২

শোভন শামস বলেছেন: ধন্যবাদ সাথে থাকবেন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.