নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নানা দেশ কত কথা

শোভন শামস

আমার দেখা নানা দেশের কথা সবার জন্য - পাঠকের ভাল লাগাতেই আনন্দ

শোভন শামস › বিস্তারিত পোস্টঃ

উদ্বাস্তু জীবন – সাউথ সুদান

১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ৮:০২



জীবন কখনো থেমে থাকে না। ডিসেম্বের ২০১৩ সালের মাঝামাঝি সাউথ সুদানে গৃহ যুদ্ধের কারনে যে মানবিক বিপর্যয় শুরু হয়েছে তা এই জানুয়ারি ২০১৪’র মাঝামাঝিতে এখনও চলছে। জুবা শহরে প্রানে বাঁচার জন্য নুয়ের গোত্রের মানুষ জাতিসংঘের কম্পাউন্ডে আশ্রয় নিয়েছে। জুবা থেকে শুরু হওয়া বিপর্যয় দেশের অন্য প্রদেশগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে। জংলে প্রদেশে নুয়েরদের আধিপত্য তাই প্রানে বাঁচতে ডিঙ্কারা তাদের বাসস্থান ছেড়েছে। সমস্যা রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক হলেও এখন তা প্রধান দুই জাতিগত সম্প্রদায়ের মধ্যে সংঘাতে রূপ নিতে পারে বলেই ধারনা করা হচ্ছে।



বোরের কাছাকাছি নদী পারাপার

বোর শহর থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে সরকারী বাহিনী অর্থাৎ এস পি এল এর সাথে বিদ্রোহীদের মধ্যে যুদ্ধ চলছে। জংলে প্রদেশে প্রায় সত্তর হাজার ডিঙ্কা জীবন বাঁচাতে এবং গৃহযুদ্ধের হাত থেকে রক্ষা পেতে ঘরবাড়ি ছেড়ে হোয়াইট নীল নদীর অন্য পারে খোলা আকাশের নীচে আশ্রয় নিয়েছে। এই সুযোগে নৌকার মাঝিরা তাদের পারাপারের ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছে। নদী পাড় হতে প্রতিজনে ৬৬ সাউথ সুদানিজ পাউন্ড বা ৪০ ডলার লাগে। এটা সাধারন মানুষের জন্য সংগ্রহ করা বেশ কষ্টের। বাঁচার জন্য মানুষেরা ধার দেনা করে তাই নদী পার হচ্ছে।



নদীর ওপাড়ের শিবির

নদী পাড় হলেও ওপাড়ে আছে কেবল ঝোপ গাছ আর খোলা জায়গা। খাদ্য, আশ্রয়ের অভাব প্রকট, যুদ্ধ চলার কারনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে দ্রুত সাহায্য সেখানে পৌছাতে পারছে না, এতে মানুষগুলোর দুর্দশা কেবল বেড়েই চলছে। বিশেষত এই সময়ে সবচেয়ে বেশী ক্ষতি গ্রস্থ হচ্ছে বৃদ্ধ, মহিলা আর শিশুরা। গৃহ যুদ্ধ তাদেরকে মানবেতর জীবন যাপনে বাধ্য করছে।



জুবা শহর আপাত দৃষ্টিতে শান্ত মনে হলেও পরিস্থিতি থমথমে

জুবার নিরাপত্তা পরিস্থিতি আপাতত শান্ত মনে হলেও তা থমথমে। প্রায় প্রতিদিন শহরের নানা জায়গায় ছোটখাটো ঘটনা ও গোলাগুলির শব্দ শোনা যায়। শহরের প্রায় ষাট হাজার মানুষ উদ্বাস্তু , এরা প্রায় সবাই দেশের দ্বিতীয় বড় গোত্র নুয়ের সম্প্রদায়ের। নুয়ের অধ্যুষিত এলাকাগুলো এখন জনহীন ও পরিত্যক্ত।



উদ্বাস্তু শিবিরে মোবাইল ফোন চার্জ করার ভ্রাম্যমান ব্যবস্থা

এই একুশ শতকে জীবন অনেক এগিয়ে গেছে। মোবাইল এখন একটা প্রয়োজনীয় উপকরণ, খাওয়া একটু কম হলে ও চলে তবে কথা বলা ও কিছু বিনোদনতো লাগবেই। এই মোবাইল ফোন চার্জ করার জন্য উদ্বাস্তু শিবিরে ভ্রাম্যমান ব্যবস্থা চালু হয়ে গেছে। এখানে ছোট জেনারেটরের সার্ভিস পাওয়া যাচ্ছে। নানা ধরনের চার্জার ও সাময়িক আলোর প্রয়োজনে এগুলো ব্যবহার হচ্ছে।



জুবার উদ্বাস্তু শিবির

আই ও এম এর দেয়া তাবু এবং খোলা আকাশের নীচে নিজেদের ব্যবস্থায় ঘরছাড়া মানুষগুলো তাদের সাময়িক আশ্রয় বানিয়ে নিয়েছে। পনেরো হাজারের উপর মানুষ এক জায়গাতে আছে, তারা নিঃশব্দে তাদের নিজ কাজ করে যাচ্ছে বাঁচার জন্য। মারামারি,ঝগড়া ফ্যাসাদ এবং চিৎকারের শব্দ প্রায় শোনাই যায়না। তারা যেন তাদের এই দুর্ভাগ্য মেনে নিয়ে জীবনটাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। সারাদিনের জন্য পনেরো লিটার পানি পায়। এটা দিয়ে রান্না, গোসল এবং ধোয়া মোছার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। এই কাম্পে নতুন শিশুর জন্ম হচ্ছে মানুষ মারা যাচ্ছে। একটা বাচ্চার নাম দিয়েছে হিল্ডা, এদেশে জাতিসংঘের সেক্রেটারি জেনারেলের বিশেষ দূতের নামে, জায়গার নামে একজনের নাম রাখা হয়েছে টম্পিং।

সকাল থেকেই জীবন যুদ্ধ শুরু হয়ে যায় উদ্বাস্তু শিবিরে, মহিলারাই এই কাজে সবার আগে থাকে, সকাল হলেই তাদের নাস্তার আয়োজন শুরু হয়। পানির গাড়ি এসময় চলে আসে। মহিলারা মাথায় প্লাস্টিকের ড্রামে করে পানি ভর্তি করে নিজেদের তাবুতে আসে। রাস্তার উপর এখন অনেক ছোট দোকান চলছে, তারা সকালের নাস্তা ও চা বানিয়ে বিক্রি করছে। যাদের কেনার সাধ্য আছে তারা কিনে নাস্তা খাচ্ছে। ছেলেরা এখানে বেশ ভাল আছে যদিও আক্রমনের প্রধান শিকার তারাই। এরা যুদ্ধ করে আর বেঁচে থাকলে অলস জীবন যাপন করে। জীবনের চাকা মূলত মহিলারাই চালু রাখে এই দেশে।

রাস্তার পাশে পলিথিন দিয়ে ছোট ঘরের মত বানিয়ে পুরুষ মানুষেরা আড্ডা জমায়। এর একসময় মিলিশিয়া ছিল, পরে পুলিস কিংবা এস পি এল এ তে সৈনিক ছিল , গৃহ যুদ্ধের পর তারা তাদের কর্মস্থল ছেড়ে এখন রিফিউজি কাম্পে আশ্রয় নিয়েছে। এখানে এখন দেদারসে চা বিস্কিট বিক্রি হচ্ছে, প্রথম দিকে খাবার ও পানির অভাব ছিল, এখন পানি পাওয়া যাচ্ছে, আর মানুষেরা তাদের নিজ তাড়নাতে বাকী জিনিসপত্র জগার করে আনছে। এখানে এখন মোবাইল ফোনের কারদ থেকে শুরু করে কাপড়চোপড় সবই পাওয়া যায়। কষ্টের মাঝেও উদ্বাস্তুরা তাদের জীবন চালিয়ে নেয়ার সংগ্রাম অব্যাহত রেখেছে।

বিদেশী এন জি ও, ইউ এন এইচ সি আর ও অন্যান্য সাহায্য সংস্থা গুলো দিনরাত তাদের কাজ অব্যাহত রেখেছে। কত দিন এই অবস্থা চলবে তা এখনো বলার সময় আসেনি, তবে নতুন এই স্বাধীন দেশে জাতিগত দাঙ্গা এবং গৃহ যুদ্ধ কারোরই কাম্য হওয়া উচিত নয়। ভাল থাকুন সাউথ সুদানের মানুষেরা, আমরা সবাই এটাই চাই।



সুত্রঃ নিজে দেখা,নেট ও সংগ্রহ



মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে জানুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৫:১১

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: ভয় হয়- আমাদের যে থমথমে অবস্থা- তা ভেঙ্গে পড়লে বুঝি আমাদের নিয়ে আবার কেউ না এরকম লেখে!!!!!!!

আপনার চোখে অনেক জানা হচ্ছে:)

ধন্যবাদ।

২৯ শে জানুয়ারি, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৫৮

শোভন শামস বলেছেন: আশা নিয়েই তো আমরা বেঁচে থাকি।

সাথে থাকবেন

ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.