![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বিকেল বেলা মাঝে মাঝে ঘুরতে বের হই। লস অ্যাঞ্জেলসে ৭ টার পর সন্ধ্যা নামে। দিনের বেলা দুপুরের দিকে সূর্যের আলোর তীব্রতা থাকলেও ৫ টার পর তাপমাত্রা কমতে থাকে। বিকেল চারটার পর বের হলাম। আজকের গন্তব্য কাছের গ্লানডেল শহর ও সেই শহরের গেলারিয়া মল ঘুরে দেখা। গ্লেনডেল ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্যের লস অ্যাঞ্জেলেস কাউন্টির ভার্দুগো পর্বতমালা অঞ্চলে অবস্থিত একটি শহর। এর একটি ছোট অংশ সান ফার্নান্দো উপত্যকায় পড়েছে। এটি ডাউন টাউন লস অ্যাঞ্জেলেস থেকে প্রায় ১০ মাইল উত্তরে অবস্থিত। গ্লেনডেল লস অ্যাঞ্জেলেস কাউন্টির চতুর্থ জনবহুল শহর। গ্লেনডেল শহরের পাশে বারব্যাঙ্ক শহর ও হলিউডের অবস্থান। এই শহর আমেরিকান অ্যানিমেশন চলচ্চিত্রের একটি প্রধান প্রযোজনা কেন্দ্র। এখানে মার্ভেল অ্যানিমেশন, ড্রিমওয়ার্কস অ্যানিমেশন এবং ডিজনিটুন স্টুডিও রয়েছে। আমেরিকার দ্বিতীয় প্রজন্মের ধনীরা এখন এই শহরের সুন্দর সুন্দর ভিলাতে বসবাস করে। আমরা গাড়িতে করে এখানে আসলাম, তবে বাসে করেও লস এঞ্জেলস থেকে এখনে আসা যায়।
ইউরোপীয় বসতি স্থাপনকারীদের আগমনের আগে হাজার বছর ধরে স্থানীয় আমেরিকানরা লস অ্যাঞ্জেলেস নদীর গ্লেনডেল ন্যারোতে বাস করত। তারা এই নদীকে পশ্চিম নদী বলত। সে সময় এই এলাকায় অশ্বাংনা, হাহামোংনা, মাউংনা, তুজুঙ্গা এবং উইকাঙ্গা নামে বেশ কিছু গ্রাম ছিল। ১৭৬৯ সালে, পোর্তোলা অভিযানের পর এই অঞ্চলে স্থায়ী স্প্যানিশ আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়। অভিবাসন, সিফিলিস, হাম এবং গুটিবসন্তের মতো ইউরোপীয় রোগের কারনে আদিবাসী সম্প্রদায় প্রায় জনশূন্য হয়ে পড়ে। ১৭৮৪ সালে, বাজা ক্যালিফোর্নিয়ার স্প্যানিশ সেনাবাহিনীর একজন কর্পোরাল হোসে মারিয়া ভার্দুগো, লাস ক্যালিফোর্নিয়ার প্রদেশের লেফটেন্যান্ট গভর্নর পেড্রো ফাগেসের কাছ থেকে র্যাঞ্চো সান রাফায়েলের অধিকার লাভ করে। এই জায়গা গুলোতে পশুপালনের জন্য অনুমতির থাকলে ও এর মালিকান স্প্যানিশ রাজের হাতে থাকত। ১৭৯৮ সালে, ভার্দুগো সামরিক বাহিনী থেকে অবসর গ্রহণ করে তার খামার সম্প্রসারণ করতে থাকে। তার প্রায় ২০০০ গবাদি পশু, ৬৭০টি ঘোড়া এবং ৭০টি খচ্চর ছিল। তিনি সেখানে বিভিন্ন ফসল, মরিচ, কমলা, ডুমুর, আঙ্গুর এবং ডালিমের মতো ফসল চাষ করতেন এবং ওয়াইনও তৈরি করতেন। মেক্সিকান স্বাধীনতা যুদ্ধের শেষে ১৮২১ সালের কর্ডোবার চুক্তির ফলে মেক্সিকানরা স্পেন থেকে স্বাধীনতা লাভ করে। মেক্সিকান-আমেরিকান যুদ্ধের শেষে ১৮৪৭ সালের কাহুয়েঙ্গা চুক্তির পর আল্টা ক্যালিফোর্নিয়ায় আমেরিকান নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা হয়। এসব কিছুই এখন এখানে নেই, এগুলো এখন ইতিহাস। সারা বিশ্বের মানুষ এখন এখানে দেখা যায়। এখানকার পরিবেশ পরিচ্ছন্ন এবং এখন এখনে সাদা আমেরিকান মানুষের আধিক্য চোখে পড়ে। একটু ইতিহাসের কথা জানতে জানতে আমরা গেলারিয়া মলের এলাকায় চলে আসি।
গ্লেনডেল গ্যালারিয়া, গ্লেনডেলের একটি বিশাল তিনতলা শপিং সেন্টার এবং অফিস কমপ্লেক্স। ১৯৭৬ সালে ১,৬০০,০০০ বর্গফুট জায়গায় এটি চালু করা হয়। এটি লস অ্যাঞ্জেলেস কাউন্টির তৃতীয় বৃহত্তম মল। এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আয়কারী শপিং সেন্টারগুলির মধ্যে একটি হিসাবে স্থান পেয়েছে। মলটিতে টার্গেট, ডিকস স্পোর্টিং গুডস, জেসি পেনি, ম্যাসি'স, হোম গুডস এবং ব্লুমিংডেল ও অন্যান্য অনেক ক্রেতা বান্ধব ও আকর্ষণীয় ষ্টোর রয়েছে। অ্যাপল ইনকর্পোরেটেড বিশ্বের প্রথম দুটি অ্যাপল স্টোরের একটির অবস্থান হিসেবে গ্লেনডেল গ্যালারিয়াকে বেছে নেয়। সারা বছর ধরে প্রায় ৩ কোটির মত মানুষ গ্যালারিয়া পরিদর্শন করে। এটি শীর্ষ ১০০টি শপিং সেন্টারের মধ্যে একটি। গ্যালারিয়ায় ২০০ টিরও বেশি দোকান রয়েছে।
এখানে গাড়ি পারকিং এর জন্য অনেক বহুতল পারকিং স্পেস আছে, তবে বেশীরভাগ আগে থেকে বুক করা। ফ্রি পারকিং এর ব্যবস্থা ও রয়েছে একটু খুজে নিতে হয়।
পারকিং শেষে আমরা মল ঘুরতে বের হলাম। অনেক মলে সেল চলছে, মানুষ ব্যাগ ভর্তি করে কাপড় ও অন্যান্য জিনিস কিনছে। অনেকে পরিবার নিয়ে এসেছে। ছুটির দিন হওয়াতে জন সমাগম বেশী। অনেক খাবারে দোকান আছে। আমরা এলাকা ঘুরে দেখছি এমন সময় একটা ট্রাফিক লাইটের কাছে একটা গাড়ি এসে দাঁড়াল। গাড়িতে চারজন, সবার মাথায় পাণ্ডার বড় মুখোশ পড়া। তারা পাশে দিয়ে যারা যাচ্ছিল তাদেরকে একটা করে বক্স দিচ্ছিল। আমরা ও পেলাম। এই বক্সে তাদের নতুন দোকানের খাবার সবার মাঝে পরিচিত করতে এড হিসেবে ফ্রি দিচ্ছে।
একটু বেলা পড়ে আসলে আমরা মল এলাকার একটু ভেতরের অংশে চলে আসি। এখানে বেশ খোলা জায়গা ও বড় ফোয়ারা রয়েছে। জায়গাটা আমেরিকানা নামে পরিচিত। এখানে মিউজিকের সাথে সাথে ফোয়ারা পানিতে ছন্দের সৃষ্টি হয়। সুন্দর বসার জন্য ঘাসের জমি রয়েছে। ফোয়ারার পাশে ও বসা যায়। ছুটির দিনে এখানে প্রেমিক প্রেমিকারা একান্তে সময় কাটানোর পরিবেশ আছে। অনেকে তাদের বন্ধু বান্ধবের জন্য অপেক্ষা করে। বেশ কিছু খাবারের দোকান রয়েছে আশেপাশে। বার্ন্স এন্ড নোবেলের বই এর বিশাল ষ্টোর। লোভ সামলাতে পারলাম না। এত সুন্দর করে সাজানো। অনেক পাঠক সেলফ থেকে বই নিয়ে বসে পড়ছে, কিনতেই যে হবে এমন কোন কথা নেই। তিন তলায় খাবারের দোকান আছে, পড়তে পড়তে খিদে লেগে গেলে পাঠক সেখানে খাচ্ছে। এখানে যারা কাজ করে তারা বেশ বন্ধু বৎসল মনে হল, আমি দক্ষিণ আমেরিকা ভ্রমণের উপর বই চাইলাম, আমাকে সুন্দর করে কোথায় পাওয়া যায় দেখিয়ে দিল, একজন সেলফের কাছে নিয়ে গেল। বইয়ের রাজ্যে কিছুক্ষণ কাটিয়ে মন ভাল হয়ে গেল। সন্ধ্যা হয়ে আসছিল, চারিদিকে বাতি জ্বলে উঠেছে। আলো ঝলমলে এই এলাকা ঘুরে দেখার জন্য খোলা ট্রামের ব্যবস্থা আছে। বেশ বড় লাইন, লাইনে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে ট্রামে চড়ে বসলাম। একজন চালক ও একজন গাইড। গাইড এই এলাকার ইতিহাস ও এখানে এখন কি কি আছে তা জানালো। পুরো এলাকা একবার ঘুরে আসা হল ট্রামে চড়ে।
যাওয়ার সময় হয়ে এসেছে, সন্ধ্যার সাথে সাথে একটু ঠাণ্ডা হাওয়া ও হালকা শিশির পড়ছে। এখানে আসার পর এই এলাকায় কিছু ছবি তুললাম। একটা সুন্দর বিকেল কাটিয়ে আমরা আবার ফিরতি পথে রওয়ানা হলাম।
©somewhere in net ltd.