নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মাছের মত চোখ থাকলে ভাল হত, জাগতিক সব সূক্ষ্ম আর জটিল বাস্তবতাগুলো অবলোকন করার মত সুযোগ থাকত ।।

শৈপীল

আমার মস্তিষ্কে আমার দ্বারা তৈরিকৃত, আমার কল্পনা জগৎটি অনেক বড়। আমি আমার কল্পনার চরিত্রের একটি চরিত্র। আমার নিজের এই কল্পনার জগৎটির জন্য আমাকে অনেক সময় ব্যায় করতে হয়, তাই আপনাকে নিয়ে ভাবার মত সময় আমার কাছে নেই।জানি আপনারও থাকবে না !!!

শৈপীল › বিস্তারিত পোস্টঃ

অস্পৃশ্য......!!

২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ৮:০৩

ওর জীবন্ত হাতটা ধরার ইচ্ছা ছিল কিন্তু ধরার সাহস পেলাম না। যখন ইচ্ছেপূরণের সময় আসল তখন হাতখানা আর জীবন্ত নেই।

আমার নিজেরই বিশ্বাস হচ্ছেনা যে, ও চলে গেছে..!!

ওর তো যাওয়ার কথা ছিলনা, ও তো বলেছিল যাবেনা, তবুও কেন চলে গেল??

না..না..ও যেতেই পারেনা, ও তো চোখ বন্ধ করে ঘুমাচ্ছে...!!

কিন্তু এটা কেন সবাই বুঝতে পারছেনা। আমিও তো দাড়িয়ে আছি, আমার চোখে তো জল নেই। আমার দৃঢ় বিশ্বাস ওর ঘুম ভাঙবে এখুনি...

কিন্তু, এত লোক ওর আশেপাশে তবুও, ও কিভাবে এতক্ষণ চোখ বুজে রয়েছে??

আরে আরে কাপড় দিয়ে ওর চারপাশ ঢেকে দিল কেন ঐ মহিলাগুলো?? ঘুম থেকে উঠছেনা বলে, ওকে গোসল করানো হচ্ছে কি আজীব ব্যাপার..

ওর ঘুম এখনও ভাঙলোনা কেন? ওকে সাদা কাপড় পরানোই বা হচ্ছে কেন? আরে ওর নাকে-কানে তুলা দিচ্ছে কেন? পাশের দাড়িওয়ালা হুজুরটাই বা কি বলছে? ওকে খাটিয়ায় কেন রাখা হল? ওর মুখটা ঢেকে দিল কেন? আরে ওরা আবার নামাজও পড়া শুরু করেছে, কি বোকা দেখুনতো, ও এক্ষুণি ঘুম থেকে উঠল বলে..ওরা সালাম ফিরাল তবুও সে উঠলনা। চারপাশ হতে কান্নার শব্দ আসছে, চারজন লোক মিলে ওর ঘুমন্ত অবস্থায় ওকে সহ ওর খাটিয়াটি কাঁধেচেপে নিয়ে হাটা শুরু করল, তবুও ওর ঘুম ভাঙলোনা, কিন্তু এত লোকজন মিলে ওকে নিয়ে যাচ্ছেই বা কোথায়??

ওরা কবরস্থানের দিকে যাচ্ছে কেন??

মানুষ এত বোকা কিভাবে হয়?? ও এখনও জীবিত আছে, তবুও ওর জন্য মাটিখুড়ে দাফন করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ওকে দু'জন ধরে কবরের মধ্যে নিয়ে গেল, আমার আর সহ্য হলনা, আমি চিৎকার দিয়ে বললাম, দাড়াও, শেষবারের জন্যে হলেও আমি ওর হাতটা ধরতে চাই। কিন্তু, একি! কেউ আমার কথা কেন শুনতে পারছেনা। কেউ আমাকে গুরুত্ব-ই দিচ্ছেনা, আমার দিকে ভ্রু-ক্ষেপ করারও কারো সময় নেই। আমি নীরবে দাড়িয়ে রইলাম। ওকে ঘুমন্ত অবস্থায় মাটিচাপা দেয়া হল। আমি কিছুক্ষণ ঐ কবরের পাশে বসলাম। তারপর নিজের বাড়ীর দিকে পা-বাড়ালাম। বাড়ীর সামনে উপস্থিত হতেই দেখলাম, বড়সড় লোকজনের মিছিল। উঠানে একটা নীথর-নিস্তেজ দেহ পড়ে আছে। কাছে যেতেই দেখলাম একজন ভদ্রমহিলা ঐ দেহটা ধরে কাঁদছে আর পাশে এক ভদ্রলোক চুপচাপ দাড়িয়ে টপটপ করে চোখের পানি ফেলছে আর চোখ মুছ-ছে। এই দু'জনকেই আমি চিনি। নাড়ীর টান আর রক্তের সম্পর্ক সবই আছে এদের সাথে। কিন্তু আমিই তো এদের একমাত্র ছেলে, তাহলে দেহটা কার?? হালকা ভীড় ঠেলে এগিয়ে গিয়েই দেখলাম, আমিই শুয়ে আছি ওখানে, আমিও চোখবন্ধ করে ঘুমিয়ে আছি, শান্তির ঘুম। আমাকেও সাদা কাপড় পরানো হল, নাকে-কানে তুলা দেয়া হল। তারপর জানাজা শেষে খাটিয়ায় উঠিয়ে কবরস্থানের দিকে নেয়া হল। আমার জন্যেও জায়গা করা হয়েছে, যথারীতি আমাকে মাটিচাপা দেয়া হল। আমি বসে আছি আমার কবরের সামনে। কেউ নেই আর সেখানে, একটা মেয়েকে দেখলাম এদিকে আসতে আমার কবরের সামনে বসল কিছুক্ষণ, তারপর আমার দিকে এল, আমি চিনি তাকে একটু আগে তাকে দাফন করা হয়েছে । আমার সামনে আসতেই তাকে বললাম, যাক! ঘুম ভাঙল তোমার তাহলে...

সে আমার পাশে বসল, মাথাটা হালকা নাড়াল, বুঝলাম সম্মতিসূচক ইঙ্গিত। তারপর সে বলল, আমরা তো রাস্তার এক পাশ দিয়েই যাচ্ছিলাম ঐ বাসওয়ালার কি দরকার ছিল, আমাদের মেরে ফেলার?

- বাসটার ব্রেক ফেল হয়েছিল, ইচ্ছা করে করেনি ড্রাইভারটা কিছু...

- হুমম... যা হয় ভালোর জন্যেই হয়..

- তাই বুঝি?

- হ্যা তাই.. ঠিক তাই। তুমি না আমার হাত ধরে কি যেন বলতে চেয়েছিলে? বলে ফেল এখনি..

- এখন বলে কি লাভ?

- আমরা মুক্ত হয়ে যেতাম।

- হাত দিতে অনেকখানি দেরি করলে তুমি...অনেকখানি...

- দিলাম তো অবশেষে... আমাদের কাহিনীটা অমর হয়ে থাকবে...

- কিভাবে?? কেউই তো জানলনা..

- কেউ না কেউ তো অবলোকন ঠিকই করেছে..

- কে???

- ভূতে...ট্যারা লম্বা ভূতে.. দেয়ালেরও কান থাকে আর কথাতো বাতাসে ভাসে, কারো না কারো কানে ঠিকই চলে যাবে- এই বলে সে উচ্চস্বরে হাসতে লাগল, তার হাসি এই নীরব কবরস্থানের চারপাশ হতে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। আমিই শুনছি হয়ত...!!

ওর হাতের উপর আমার হাতটা রাখলাম। ও আড়চোখে তাকাল কিন্তু আমি আর কিছুই বললাম না। কারণ, আমি চাইনা মুক্ত হতে...!!

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.