![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমার মস্তিষ্কে আমার দ্বারা তৈরিকৃত, আমার কল্পনা জগৎটি অনেক বড়। আমি আমার কল্পনার চরিত্রের একটি চরিত্র। আমার নিজের এই কল্পনার জগৎটির জন্য আমাকে অনেক সময় ব্যায় করতে হয়, তাই আপনাকে নিয়ে ভাবার মত সময় আমার কাছে নেই।জানি আপনারও থাকবে না !!!
আমার ঘরের জানালাটা খোলা। মৃদু বাতাস আসছে জানালা দিয়ে, তাই ঘুমটা এখনও ভাঙেনি। মশারির ভেতরে আমি ঘুমাচ্ছি। আজ ক্লাসও নেই, তাই ঘুম থেকে ওঠার কোন টেনশান নেই । ভাবছি আরও ঘুমাব । কয়টা বাজে , দেখব নাকি? না থাক!
একটু পর ফোনটা বেজে ঊঠল । ফোনের ঘড়িতে ন’টা বেজে ত্রিশ মিনিট। আর ফোন দিয়েছে ইরা। ধরব কিনা ভাবছি! ধরলেই কোন না কোন কাজ ধরিয়ে দেবে, আর আমার ঘুম যাবে মাটি হয়ে...!! তবুও ধরা উচিৎ ...
দেখি কি বলে!!
তুমি কই?
তুমি ...!! কি রে মাথা ঠিক আছে তোর? কারে কল দিতে গিয়া কারে কল দিছস??
আমি তোমাকেই কল দিয়েছি...
আবার তুমি... ঐ তুই তুমি তুমি করে কথা বলছিস ক্যান?
খুব কাছের মানুষকে তুমি করেই বলতে হয়...
উফফ...!! কি কাজ সেটা বল?
কোন কাজ নেই। তোমার তো ক্লাস অফ আর আমারও ... চল, কোথাও ঘুরে আসি...
আমি ঘুমাইতেছি, যাইতে পারুম না...
একটা চড় দিব, খাটাশ কোথাকার... তাড়াতাড়ি আয়...
ওকে... এক ঘন্টা টাইম দে, আসতেছি...
কি একঘন্টা...!! তুই কি বিয়ের সাজ দিবি নাকি?
ধুর... রাখ ফোন...
আমি ফোন কেটে দিলাম।
ফ্রেশ হয়ে যেতে হবে এখন ওর বাড়ীর সামনে।
ইরার সাথে পরিচয় হয় আমার, সোশিয়াল সাইটে । ওখানে টুকটাক কথা বার্তা হত ওর সাথে... তারপর দুজনে এক ভার্সিটিতে ভর্তি হয়। ইরা আমার থেকে এক বছরের বড় তবুও আমি তুই তুই করে বলি । অনেক পছন্দ করি ওকে... বুঝলেন, অ...নে...ক...
# পৌছালাম ওর বাড়ির সামনে । বাড়ি তো না... প্রাসাদ। বাইরে দাঁড়িয়ে ওকে মিসকল দিলাম। এখনই ড্রাইভারসহ গাড়ী নিয়ে সে বাড়ি থেকে বের হবে । আর পরনে থাকবে... টি-শার্ট আর জিনস...
কিন্তু , এ কি...!! গেট খুলল। কোন গাড়ী নেই , ইরার পরনে শাড়ী সেটা আবার নীল রঙের । নীল রঙ আমার ফেবারিট। কিন্তু, ইরা তো কখনও শাড়ী পরেনা। সোশিয়াল সাইটেও ওর কোন শাড়ী পরা ছবি নেই। আমি একদিন ওকে বলেছিলাম যে, তোমার একটা শাড়ী পরে ছবি দিও... ও দেইনি। তাহলে, আজ...
ইরা ধীরে ধীরে সামনে এল । ও নিচে তাকিয়ে আছে। আমি বুঝতে পারছিনা কেন? ওকে খুব সুন্দর লাগছে , বলব এ কথা ওকে... আমার রক্ত সঞ্চালন দ্রুত হল আর হার্ট জোরে জোরে বিট করতে শুরু করল... আমার সাহসে কুলালনা... ও এখনও নিচে তাকিয়ে আছে...
আমি বললাম,
তো...র, মানে তু...মি ফার্স্ট শাড়ী...
হ্যা...
সুন্দর ...
কী?
শা...ড়ী ...
আর আমি??
তুই...তু...তুমিও...
ইরা মৃদু হাসল সেটাও নিচে তাকিয়ে। আমি পুরা নার্ভাস হয়ে পড়েছি। আমি কপালে ঘাম আসছে...
ইরা বলল, চল...
-কোথায় ...?
-দেখি... কোথায় যাওয়া যাই...
- কিসে যাবি...ওহ...যাবা?
-রিকশায়...
- একটা রিকশা নিব না দুইটা...??
ইরা উচ্চস্বরে হাসতে লাগল আমার এই প্রশ্ন শুনে... ওর নিষ্পাপ ঠোটের হাসি দেখে আমার চারপাশ কাজ করা বন্ধ করে দিল। ফোকাস শুধু ওর হাসির দিকে... বারবার মস্তিষ্ক সেটা রিপ্লে করে দেখাচ্ছে...
ঘোর কাটল ওর কথা শুনে , একটায় নাও... তুমি আমি একসাথে যাব...
-আচ্ছা...
মেয়েদের সাথে রিকশায় ওঠার অভিজ্ঞতা আমার নেই । এখন ইরার সাথে উঠব... ইরা আজ গাড়ী নিলনা কেন? কি এমন স্পেশাল ডে যে সে, শাড়ী পরছে ? নাকি আমার কথা শুনে... আবার আজ তুমি তুমি করে বলছে...
কেন??
রিকশায় উঠলাম, আমি ওর থেকে ছয় আঙুলের দূরত্ব নিয়ে বসলাম। আমি এতটা অস্বস্তিকর ফিলিংস হচ্ছিল যে, আমি ইরার সাথে কথা তো দূরে থাক , তাকানোর সাহস পাচ্ছিলাম না। ইরা আমার দিকে অনেকক্ষণ তাকিয়ে বলল, রিকশার হুডটা উঠায় দে তো...
ইরা বলে কি এটা? হুড উঠাইলে তো, ছয় আঙুলের গ্যাপও চলে যাবে তার থেকে...
ইরার সাথে চোখাচোখি হল...
হ্যা, দিচ্ছি...
দিলাম হুড উঠিয়ে... ওর আমার মধ্যেকার দুরুত্ব চার আঙুল এখন। রিকশাটা ভাঙা রাস্তা দিয়ে চলা শুরু করল যখন তখন দুরত্বটা জিরোতে নেমে আসছিল। আমি দুরত্ব সুষম রাখার জন্য , ইরা আমার মাঝখানে রিকশার সিটটাতে নিজের হাতটা রাখলাম। হঠাৎ , ইরা আমার হাতের উপর হাত রাখল। বিশ্বাস করতে পারবেন না, আমার পুরা শরীর ঠান্ডা হয়ে গেল। বিভিন্ন কল্পনা আসছিল ইরাকে নিয়ে। ভাবলাম ইরাকে আজ বলেই দেব আমার তাকে ভাললাগার কথা । সোশিয়াল সাইটে ফার্স্ট ওকে দেখেই ভাল লেগেছিল... কিন্তু, দুই বছর আট মাস হয়ে গেলেও সেটা আমি এখনও তাকে বলতে পারিনি...!!
ইরা একটা পার্কের সামনে রিকশা থামাল। ভাড়া দিয়ে রিকশাওয়ালাকে বিদায় করলাম। ইরা আমার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল, এটা তোমার ফার্স্ট মেয়েদের সাথে রিকশায় ওঠা ছিল তাইনা??
হ্যা...
সত্যি করে বলত আমায় কেমন লাগছে...
খুবই সুন্দর লাগছে...
আচ্ছা... তুই একটু আশে-পাশে থাক , আমি জিসানের সাথে দেখা করে আসি।
জিসান মানে?? জিসান ভাইয়া...??
হ্যা...
তার সাথে কি দরকার তোর??
আরে গাধা...!! তুই তো গতকাল ক্যাম্পাসে যাস নাই... জিসান ভাই ক্যাম্পাস ক্যান্টিনে সবার সামনে আমাকে প্রপোজ করছে... তাও আবার অর্কিড ফুল দিয়া... পাগল একটা...
{কী হল বুঝলাম নাহ...!! অনেকদিন চোখ দিয়ে পানি পড়েনা... আজ কেন জানি চোখভার হয়ে গেল... }
অনেক কষ্টে পানি থামিয়ে ইরাকে বললাম, দ্যাটস গ্রেট... কনগ্রাচুলেশানস্।
নিচে তাকিয়ে হাসি...
তাহলে আমাকে আনলি কেন? কাবাব মে হাড্ডি...
তুই থাম... তোকে আমার বাপ-মা আমার থেকে বেশি বিশ্বাস করে, অর্ন এই... অর্ন ঐ... অর্নের এটা ফলো কর... অর্নের ওটা ফলো কর... উফফ... অসহ্য একটা ব্যাপার! বাসায় যখনই বললাম, তোর সাথে রিকশায় করে বেরব... কেউ একটাও কথা বলে নাই। জিজ্ঞেসও করে নাই... তুই আমারে কই নিয়া যাচ্ছিস? আর যদি বলতাম, এই বান্ধবীর বাড়ী যাচ্ছি তাইলে প্রথমে ঐ বান্ধবীরে ফোন দিত তারপর তোরে আর সাথে ঐ ড্রাইভার পাঠিয়ে দিত... তোর সাথে একা বের হওয়া যায়, সিক্রেট শেয়ার করা যায়... আমাদের রিলেশানের কথা তোকে দিয়েই বাবাকে বলাব... কিন্তু, এখন না, পরে...আর হ্যা, আমার মুখের তো ঠিক নাই ,যখন- তখন , যারে তারে তুই বলে ফেলাই। জিসানরে যেন তুই না বলে ফেলি তাই সকালে তোকে , তুমি তুমি করে কথা বলছিলাম। কিছু মনে করিস না...
নিজের আবেগের উপর আর নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারছিলাম না। ওকে জোরে বললাম, যা... তুই, দেখা কর গিয়া...!!
ইরা মিষ্টি হেসে চলে গেল।
এভাবে ইরা প্রায়ই আমাকে নিয়ে বের হত, ক্ষনিকের জন্য ওকে পাশে পেতাম। আর পার্কে গেলে দূর থেকে ওর অন্যকারও হাতধরার দৃশ্য, পাশাপাশি বসে কথাবলার দৃশ্য দেখতাম...
সেদিন বিকালেও ওকে নিয়ে পার্কে গেছিলাম। সেদিন জিসান ভাই আসেনি। আকাশে রঙধনু ছিল আমি সবুজ ঘাসের উপর বসে রঙধনু দেখছিলাম আর ইরা মোবাইল নিয়া এপাশ-ওপাশ করে জিসান ভাইকে ফোন দিচ্ছে। আর ছটফট করছে...
ইরা আমার পাশে এসে বসল, বলল, যত্তসব আর ভাল লাগেনা... কী দেখিস তুই?
আমি ইরার চোখের দিকে তাকিয়ে বললাম, রঙধনু, জিনিসটা অনেক দিন বা সপ্তাহ পর পর আসে ক্ষনিকের জন্য । কিন্তু মানুষ প্রজাপতির রংবেরঙের পাখার চেয়ে এটাকে বেশি পছন্দ করে কেন বলতে পারিস?
মানে...!!
ভাবসম্প্রসারণ ছিল... যার সারকথা হল, যে জিনিস বা বস্তুটা মানুষের পাশে বা হাতের নাগালে থাকে সেই জিনিসটা মানুষ চাইনা... দূরে থাকা জিনিসটাকে মানুষ পছন্দ করে... !!
ইরা প্রথমে মাথানিচু করল তারপর ফোন সুইচড্ অফ করল। আমার দিকে তাকাল । তার চোখে মায়া নামক জিনিস দেখতে পেলাম আমার জন্য। আমি ওর মায়াবী চোখের দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসলাম। আর মনে মনে বললাম, গল্প ছিল তোকে অনেক বলার... বলবনা আমি তা...!
©somewhere in net ltd.