![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমার মস্তিষ্কে আমার দ্বারা তৈরিকৃত, আমার কল্পনা জগৎটি অনেক বড়। আমি আমার কল্পনার চরিত্রের একটি চরিত্র। আমার নিজের এই কল্পনার জগৎটির জন্য আমাকে অনেক সময় ব্যায় করতে হয়, তাই আপনাকে নিয়ে ভাবার মত সময় আমার কাছে নেই।জানি আপনারও থাকবে না !!!
মেয়েটির সাথে আমার পরিচয় হয়নি এখনও । চিনিও না ভাল করে । নামও শোনা হয়নি আর শোনার ইচ্ছাও নেই আমার । কিন্তু, মেয়েটা কদিন ধরে এমন করছে কেন?
কোচিং ক্লাস থেকে বের হয়ে ঐ গেটের সামনে দাঁড়িয়ে আমাকে দেখে সে হাসছে , এ কদিন! চরম বিরক্তি লাগছে আমার , কোনদিন যে আমি আয়নার সামনে নিজের চেহারাই দেখিনা ঠিক করে, সে আজকাল কোচিং এ বের হবার আগে , কোচিং থেকে ফিরে এসে বারংবার আয়নার সামনে দাড়াচ্ছি, শুধু ঐ মেয়ের জন্য । ছেলেরা আয়না বেশি দেখে যখন তারা প্রেমে পড়ে। কিন্তু, আমার ওরকম কিছু নেই। চিন্তার বিষয়, তার আমাকে দেখে হাসির কারন কি?
আমার মতে ঘটনার শুরু ঐ বৃষ্টিপাত । যেদিন আমি আর ও
এ দুজন ছাড়া কেউ আর কোচিং এ আসেনি। ক্লাসরুমে আমি একাই ছিলাম। মেয়েটি ঢুকল তার সেই অশ্রুভেজা চোখ নিয়ে । অশ্রুভেজা চোখের দিকে তাকালে নিজের চোখেও জল চলে আসে। সাইন্টিফিক কোন কারন আছে হয়ত । আর একটা কথা , মেয়েদের দুইটা গোপন অস্ত্র থাকে যেগুলো কাটাছেড়া ছাড়াই আপনার মনে স্থায়ীভাবে ক্ষত সৃষ্টি করতে পারে । একটি হল মিষ্টি ঠোটের হাসি আর একটি অশ্রুশিক্ত আঁখি । এ দুটো অস্ত্রের মুখোমুখি হলে এড়িয়ে যাওয়ায় বেটার । আমিও এড়িয়ে যাচ্ছিলাম । কিন্তু, প্রকৃতি হয়ত চাচ্ছিলনা । মেয়েটি দাঁড়িয়ে অনর্গল কেদেই যাচ্ছিল । আমি তার সামনে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করলাম, কি হয়েছে?
মেয়েটি কোন কথার উত্তর না দিয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে কাদতে শুরু করল।আর তার চোখের পানিতে লবণাক্ত হতে লাগল ,আমার শার্টখানা। ইচ্ছা করছিল ঠেলে সরিয়ে দি । কিন্তু, পারলাম না । কিছু কিছু ইচ্ছা আছে যেগুলো পূরণ করার সুযোগ থাকলেও-তা পূরণ করতে নেই!
মেয়েটিকে চেয়ারে বসালাম আর আমার গলা ছাড়ালাম ওর হাত থেকে। কিন্তু মেয়েটি এখনও কাদছে । কী কারন হতে পারে কাঁদার?
হয়তবা ব্রেকআপ হইছে। নাইলে মেয়েরা এত কাদেনা।
জিজ্ঞেস করলাম, তোমার কি ব্রেকআপ হইছে?
কান্নার মাত্রা আরও বাড়ল, অস্ফুট ইশারায় ‘’হ্যা’’-সূচক ইঙ্গিত পেলাম।
আমি বললাম, ওহ! এই কথা । তার জন্য এত কান্নার কি আছে?
নিজের চেহেরাটা আয়নায় দেখছ কখনও? কত্ত সুন্দর তোমার চেহেরা । একটা গেছে আরেকটা চলে আসবে । এত কান্নাকাটি কিসের?
আমার এই নিম্নমাত্রার বাস্তবতা শুনে তার কান্না থেমে গেল। আর সে অগ্নিচক্ষু দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বলল- আমি ঐরকম মেয়ে না । যে একটা ছেড়ে.........
আমি কি বলছি যে তুমি ঐ টাইপের? কে যেন বলছেনা , যে যেতে চাই তাকে যেতে দাও। জোর করে ধরে রেখ না । সে যদি তোমার হয় তাহলে সে ফিরে আসবে নাহলে...... শুনতেছ কি বলতেছি?
হ্যা, শুনতেছি।
এখন আর একটা কাজ কর বাড়ি গিয়া, ফেবুতে ওর একাউন্ট থাকলে ব্লক দিয়া দাও, ওর কোন গিফট দেয়া থাকলে ফেলায় দাও, ছবি থাকলে পুড়াই ফেল । তাইলে পরে আর ওর স্মৃতি তোমারে কাদাবেনা। ঠিক আছে ?
মেয়েটি ফ্যালফ্যাল করে আমার দিকে তাকিয়ে ছিল। তারপর চোখ মুছে চলে গেল...
কিন্তু, এটার জন্য আমাকে দেখে সে হাসবে কেন? ওর কাছে গিয়া কি জিজ্ঞেস করব? না থাক, আমারে দেইখ্যা যদি কারও হাসি পাই ,পাইল। আমার কি!
কিছুদিন পর...
ওভারব্রীজে হাটতেছিলাম ।হঠাৎ পাশ থেকে ঐ মেয়ে এসে বলল-
তুমি কি ব্যস্ত?
-তুমি এখানে কি কর?
-আমি আগে প্রশ্ন করছি।
-নাহ , ব্যস্ত না । কিন্তু কেন বলত?
-হাটতে হাটতে কথা বলি।
-নাহ। আমি তোমার সাথে হাটতে ইচ্ছুক না! যদি কিছু বলার থাকে বল, নাইলে যাও...!!
-তোমারে থ্যাঙ্কস দিতে আসছিলাম ।
-কেন?
-তোমার কথামত ওরে ব্লক দিছি, ছবি পুড়াইছি, গিফট ফেলাই দিছি । খুব মজা লাগতেছে এখন?
-তুমি থ্যাঙ্কস দিতে আসছিলা , দেয়া শেষ । আর আমাকে থ্যাঙ্কস দেবার পেছনে কারণটাও আমার জানা শেষ । তাইলে তুমি তোমার রাস্তা ধর আর আমি আমার রাস্তা ধরি... যাই তাহলে...
মেয়েটি হাজারো ক্রোধভরা দৃষ্টি নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি হনহন করে ওকে রেখে চলে গেলাম।
পরদিন কোচিং শেষে আবারও আমাকে দেখে হাসছিল গেটে দাঁড়িয়ে । আজকে ওকে পুরা অন্যরকম লাগছে । ওর গায়ে ফতুয়া,জিন্সের পকেটে হাত, মাথায় বাকানো টুপি , আর গালে সম্ভবত চুইংগাম। পুরা পোলা পোলা ভাব। আমি ওর কাছে গিয়ে জিজ্ঞাস করলাম, তুমি প্রতিদিন আমারে দেখে হাস ক্যান?
তোমার আর আমার বাসের টিকিট কাটছি। চল উঠি...
টিকিট কাটছ মানে । আমি বি আর টি সি তে উঠিনা ।
আজকে উঠল্যা।
-আচ্ছা, তুমি না গাড়ীতে আস, ওটার কি হবে?
পেছন পেছন আসবে।
বি আর টিসি এর দোতলায় উঠলাম। ও আর আমি পাশাপাশি। ও এখনও হাসছে । মেয়েরা বেশী হাসলেই প্রেমে পড়ার লক্ষন । আর এই হাসিই মাঝে মাঝে ওদের ক্ষতি সাধন করে। হাসি নামক ইয়ার্কির ছলে পোলাপান অতি অশ্লীল কর্মকান্ড করে বসে...
এরকম চিন্তা লগ্নে মেয়েটার চুল চোখে এসে লাগল। বাসের জানালা দিয়ে বাতাস আসছে। মেয়েটার বাকা টুপিও ওর খোলা চুল সামলাতে পারছেনা । প্রকৃতির নির্মল বায়ুর কাছে যে, কৃত্রিম সব কিছুই যে অচল...
তুমি আমার নাম জান?
হ্যা...না...কি বললা?
কোন জগতে ছিলা? আমার নাম জান তুমি?
-না। আমারটা জান?
-জানি। আমারটা শোনার ইচ্ছা আছে?
-নাহ! তোমার নাম আমি দিয়েছি ‘ক্যাপ পড়া এলোকেশী’ ।
মেয়েটা এবার আরও জোরে হাসল । আমি বাকা চোখে তাকিয়ে ওর হাসি দেখছি। কিছু হাসি আছে যা আপনার চোখকে হাসির মালিকের উপর পরিপূর্ণভাবে নজর দিতে বাধ্য করবে । মেয়েটার ক্ষেত্রে লজিকটা একেবারে খেটে যায় । আমি ভাবছি, মানুষের হাসি কি করে এত সুন্দর হয়! এ পরী নয়ত! নিশ্চয়ই ডানা হারিয়ে ফেলেছে আর ওদের গোষ্ঠী ওকে মানুষের মাঝে ফেলে দিয়েছে।
-এই যে, তুমি কি এ জগতে আছ?
-আছি।
-একটা কথা জিজ্ঞেস করি!
-কর।
তোমার কথামত সব কাজ করেছি। আয়নায় নিজের মুখটাও দেখলাম । আমি কি আসলেই সুন্দর?
-হ্যা, অনেক সুন্দর ।
মেয়েটা এদিক ওদিক তাকাল, তারপর বলল, তোমার হাতটা কি ধরতে পারি!
চোখের ভাষা পড়ার যোগ্যতা আমার কখনও ছিলনা। কিন্তু, এখন ‘ক্যাপ পড়া এলোকেশীর’- চোখের ভাষা আমি পরতে পারছি। সে উত্তরের আশায়...
বাসটা থামল। আমি ওকে বললাম, আমি এখানে নামব।
সেও নামল আমার সাথে ।
আচ্ছা চলি তাহলে । টিকিট কেনার জন্য ধন্যবাদ।
আর কিছু বলবানা...!!
-আসি হ্যা। আবার দেখা হবে।
আমি পিঠ ঘুরিয়ে চলে আসছি। কিন্তু, বারবার মেয়েটির ঠোটের হাসি আমার চোখের সামনে আসছে।
এ কি ভুল করেছি আমি । মিষ্টি ঠোটের হাসি আমার চোখ দিয়ে দেখে ফেলেছি! সে এই অস্ত্র দিয়ে আমার মনে স্থায়ী ক্ষত করে দিয়েছে । আমি কি পেছন ফিরে দেখব বা ওর হাতটা ধরে বলব, আমি ওকে...
থাক! আগেই তো বললাম, ‘কিছু কিছু ইচ্ছা আছে যেগুলো পূরণ করার সুযোগ থাকলেও-তা পূরণ করতে নেই’।
©somewhere in net ltd.