![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমার মস্তিষ্কে আমার দ্বারা তৈরিকৃত, আমার কল্পনা জগৎটি অনেক বড়। আমি আমার কল্পনার চরিত্রের একটি চরিত্র। আমার নিজের এই কল্পনার জগৎটির জন্য আমাকে অনেক সময় ব্যায় করতে হয়, তাই আপনাকে নিয়ে ভাবার মত সময় আমার কাছে নেই।জানি আপনারও থাকবে না !!!
সামনের ঐ দূরের ছাদটায়
ছেলেটা দাঁড়িয়ে থাকে। কারনে-
অকারনে দাঁড়িয়ে থাকে। কি যে দেখে ঐ
জানে, আদেও জানে কিনা সন্দেহ..! সেদিন
দুপুর দুইটার সময় ইফতি বারান্দায় এল, দেখে সেই
ছেলে ঠাই দাঁড়িয়ে আকাশের
দিকে তাকিয়ে আছে। বেশিক্ষণ যদিও
তাকাতে পারছেনা। সূর্যের
আলো চোখে পড়ছে কিনা! ইফতি প্রতিদিনই ঐ
ছেলেটার উদ্ভট কর্মকান্ড দেখে,আগে অসহ্য
লাগত ওর কাছে, এখন কেমন যেন
সয়ে গেছে তার কাছে।
ছেলেটি ঐ ফ্ল্যাটে বেশিদিন নাহ, কয়েকমাস
হবে উঠেছে। মনে হয় কোন ভার্সিটিতে পড়ে।
কিন্তু, ছেলেটা কেমন জান..!
সেদিন পলিথিনের প্যাকেটের
মধ্যে একটা গোল্ড ফিস নিয়ে আসল ছাদে।
তারপর, পলিথিনের প্যাকেটটা মুখের
কাছে নিয়ে কি বিড়বিড় করল। তারপর
সজোরে সামনের ছোট্ট নালাটায়
প্যাকেটটা ফেলে দিল। আর সেদিন তো,
ছেলেটির কর্মকান্ড দেখে ইফতির চোখ
কপালে উঠল। ভয়ে তার গা শিউরে উঠেছিল।
ছেলেটা ছাদের রেলিং এর উপর
দিয়ে খালি পায়ে হাটছিল। কী সাহস,
পড়ে গেলে নির্ঘাত মৃত্যু। ভাগ্যিস, পড়ে নি..!!
→
সেদিন বিকালে কোচিং থেকে আসার
পথে ছেলেটাকে দেখল।
ছেলেটা একটা গাছের দিকে তাকিয়ে আছে।
খুব মনযোগ দিয়ে কি যেন দেখছে।
ইফতি ছেলেটার
পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে ছেলেটা কী দেখার
চেষ্টা করছে, ইফতি তা খোজার চেষ্টা করল।
ইফতি এদিক-ওদিক তাকাল, তারপর
ছেলেটাকে জিজ্ঞেস করল,
- কী দেখ, গাছে?
ছেলেটি ইফতির দিকে না তাকিয়েই উত্তর
দিল, "আস্তে, পাখিটা উড়ে যাবে"।
- পাখি মানে?? কী পাখি??
- আমিও জানিনা..বোঝার চেষ্টা করছি..
- তুমি কি পাগল?
ছেলেটি এবার ইফতির দিকে তাকাল।
কালো ফ্রেমের চশমার পিছনের চোখ
দিয়ে ইফতির উপর থেকে নিচ পর্যন্ত চোখ
বুলিয়ে, চেঁচিয়ে বলল- "মেয়েমানুষ,
এখানে কি? যান এক্ষুনি.."
-ইফতি চোখ ছানাবড়া করে বলল,, চেঁচাচ্ছেন
কেন?
ছেলেটি কিছু না বলেই, হনহন করে হাটা শুরু করল।
ইফতি দাঁড়িয়েই থাকল...!!
বাসায় ফিরে ইফতি আবার বারান্দায় গেল,
ছেলেটি ছাদেই আছে..
হঠাৎ বিদ্যুৎ চমকালো, চারপাশ অন্ধকার
হয়ে;বৃষ্টি পড়া শুরু হল।
ছেলেটি উঠে দাঁড়িয়ে দু'হাত
ছড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে রইল।
ছেলেটির বৃষ্টিতে ভেজা দেখে ইফতিরও
ভিজতে ইচ্ছে হল, কিন্তু সে ভিজলনা।
ছেলেটির বৃষ্টিতে ভেজা সে উপভোগ
করতে লাগল।
পরদিন, ইফতি কোচিং শেষে ফেরার
পথে ছেলেটিকে দেখল কাধে ব্যাগ
নিয়ে সে হেটে যাচ্ছে। ইফতি তার পিছু নিল।
ছেলেটি সামনের পার্কের
একটা ফাকা জায়গা বেছে বসে পড়ল। ইফতিও
বসল পাশে। ছেলেটি অবাক হল কিন্তু কিছু
বললনা। ইফতি জিজ্ঞেস করল, তোমার নাম কি?
- নাম শোনা কি গুরুত্বপূর্ণ?
- না জানতে ইচ্ছা হল।
- ও, আমি শান্ত..
- আমি ইফতি.
- আমি আপনার নাম জানতে চাইনি...
- আমিই বললাম, এমনিতেই..
- ইফতি, আপনি কি আম পাড়তে পারেন?
- মানে?
- পার্কের ঐ আমগাছটায় অনেক কাচা আম আছে,
চলুন গিয়ে পাড়ি ..
- আজ না, অন্যদিন..
- আমি পেড়ে আনি..আপনি খান..
- না..না..আপনি বসুন...
- আচ্ছা, ঠিকাছে..
- গতকাল রেগে গিয়েছিলেন কেন?
- রাগিনি তো.... চেঁচিয়ে ছিলাম..
-কেন??
- বাহ্যিক দিক দিয়ে আপনি অনেক সুন্দরী আর সুন্দরী
মানুষের মন সুন্দর হয়না তো, এইজন্য..
ইফতি সজোরে হাসতে লাগল এই কথা শুনে। শান্ত,
মাথা নিচু করল।
- আপনি কি করেন?
- পড়াশোনা.. আপনি?
- পড়াশোনায়...আজ আমি যায়। অনেকক্ষণ
হয়ে গেছে। আর
আপনি ছাদে উঠলে পাগলামি একটু কম কইরেন...
ইফতি চলে গেল। শান্ত বসেই থাকল।
→
কয়েকদিন পর ইফতির সাথে শান্ত'র দেখা হল।
শান্ত'র চশমার ফ্রেমটা ভেঙ্গে গেছে। আজ তার
চোখে চশমা নেই। ইফতি, শান্ত'র চোখের
দিকে তাকিয়ে থাকল কিছুক্ষণ। তারপর
জিজ্ঞেস করল,
- তুমি কি লেন্স দিয়েছ চোখে?
- না তো..
- তোমার চোখ নীল কেন, এত??
- জানিনা...!!
- চশমা না দিয়ে চোখে দেখতে পাও?
- পাই..আমার চোখে কোন সমস্যা নেই..
- তাহলে চোখে চশমা দাও কেন?
- ভাল লাগে তাই...
- কাল বিকালে সময় হবে তোমার?
- না কাল তো, ভালবাসা দিবস। এইদিন তোমার-
আমার জন্য নাহ..
ইফতি মাথা নিচু করে হাসে। গতদিন পার্কের
যেই জায়গায়টাই বসেছিলাম, আমি কাল তোমার
জন্য ওখানেই অপেক্ষা করব..যাই...
→
পরদিন বিকালে শান্ত এক তোড়া গোলাপ ফুল
নিয়ে পার্কে গেল। ইফতি মেয়েটা ঐ
জায়গাতেই বসে আছে।
ইফতি পার্কের ঐ আমগাছ থেকে ৯টা কাচা আম
পেড়েছে। ইফতিকে দেখেই শান্ত ফুলের
তোরা পিছনে লুকিয়ে ফেলেছে। শান্ত ইফতির
পাশে গিয়ে বসে।
ইফতি শান্তকে প্রথমে দুইটা কাচা আম দিল। শান্ত
প্রশ্ন করার আগেই সে আর তিনটা, তারপর আর
চারটা। ইফতি, শান্ত'র চোখের দিকে তাকাল
আবার চোখ সরিয়ে নিল।
শান্ত এই পর্যায়ে হাসল। সে পেছন থেকে তার
গোলাপ ফুলের তোড়াটা বের করল, সেখান
থেকে প্রথমে তিনটা, তারপর আরও তিনটা,তারপর
আর চারটা গোলাপ তার হাতে ধরিয়ে দিল।
ইফতি শান্ত'র চোখের দিকে তাকিয়ে আছে,
শান্ত চুপচাপ কিছুক্ষণ বসে থেকে ইফতিকে বলল,
ইফতি, তোমার হাতটা ধরা যাবে?
ইফতি সঙ্গে সঙ্গে শান্ত'র হাতটা ধরে বলল,
যেসব জিনিসে তোমার অধিকার থাকবে, কখনই
তার জন্য অনুমতি নেবেনা.....
ইফতি আর শান্ত বসে থাকল অনেকক্ষণ.....!
কখনও জোরে হাসি আবার কখনও শান্ত'র
পাগলামি, শুধু ইফতিকে হাসাই.....
[ বি: দ্র: বুদ্ধিমানদের জন্য ইশারায় যথেষ্ট। তবুও
যারা কষ্ট করে এ পর্যন্ত পড়েছেন, তারা আম আর
গোলাপের যোগসূত্র না ধরতে পারেন, তাদের
জন্য ছোট্ট টিপস : "আমি তোমাকে ভালবাসি "
"আমিও তোমাকে ভালবাসি " - মনে হয়
বুঝতে পেরেছেন। কিছু কিছু সময় ইশারা অনেক
গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে....^_^ ]
©somewhere in net ltd.