![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমার মস্তিষ্কে আমার দ্বারা তৈরিকৃত, আমার কল্পনা জগৎটি অনেক বড়। আমি আমার কল্পনার চরিত্রের একটি চরিত্র। আমার নিজের এই কল্পনার জগৎটির জন্য আমাকে অনেক সময় ব্যায় করতে হয়, তাই আপনাকে নিয়ে ভাবার মত সময় আমার কাছে নেই।জানি আপনারও থাকবে না !!!
মুখবন্ধ_কথাঃ
ভিত্তিহীন বস্তু আর অবাস্তব সত্য কথা, কখনই বিশ্বাসযোগ্য হয়না । যদিও এদের পেছনে উচ্চমাত্রার যুক্তি কাজ করে । কিন্তু যুক্তি সবসময় গ্রহনযোগ্য হয়না। কিছুক্ষেত্রে আমাদের মস্তিষ্ক যুক্তিকে কুসংস্কার বা অন্ধ বিশ্বাস বলে ধরে নেয় । কিন্তু কুসংস্কার বা অন্ধবিশ্বাস একজন মানুষের মস্তিষ্কে আপনা-আপনিই সৃষ্টি হয়না। এই সৃষ্টি হবার পেছনেও থাকে ঐ অকল্পনীয়,অদেখা সেই ভিত্তিহীন বস্তু অথবা কোন এক অবাস্তব সত্যের কঠোর যুক্তি। যা মেলানো যায়না । আর ওটাকেই অন্ধবিশ্বাস আর কুসংস্কার এর পর্যায়ে নিয়ে যায় আমাদের মস্তিষ্ক ।
ইথামার_ডিকোন
ইথামার সাহেবের সাথে রিফাতের দেখা হয় এক চার্চের পাশের গ্রেইভইয়ার্ডে। সময়,মাঝরাতই হবে। তো, তিনি খুব জমকালো পোশাক পরিধান করেছিলেন।রিফাতের জমকালো মনে হল এই কারনে, তিনি পুরানো ব্রিটিশ সৈনিকদের পোশাক পরে ছিলেন। যা কিছুটা দৃষ্টিকটু, ভদ্রলোক কিছু একটা খুজছিলেন।রিফাত তার দিকে তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল। তিনি রিফাতের দিকে একনজর তাকিয়ে আবার তিনি তার খোজায় মন দিলেন। তিনি প্রত্যেকটা সমাধির পাশে গিয়ে কি যেন,খুজছিলেন। তিনি যখন তার কাজ সেরে গ্রেইভইয়ার্ডের বাহিরদ্বারে এলেন তিনি আবারও রিফাতের দিকে তাকালেন। রিফাত খুবই আগ্রহ নিয়ে তার সামনে গিয়ে তাকে জিজ্ঞাস করলেন , আপনি কি খুজছিলেন?
ইথামার সাহেব কিছু বুঝতে পারলেন না। তিনি একবার পিছনে তাকিয়ে যাচাই করে নিলেন পেছনে আর কেউ আছে কিনা ।এবং খুবই বিভ্রান্তকর গলায় আর হতবাক হয়ে রিফাত’কে অতি দ্রুততার সহিত একটি ইংরেজী প্রশ্ন জিজ্ঞাস করে ফেললেন। যার অর্থ “আপনি আমাকে দেখতে পাচ্ছেন আর আপনার কপালে এত রক্ত কেন”?
রিফাত “হ্যাঁ” সূচক ইঙ্গিত দিল। তাতে ভদ্রলোক আরও অবাক হলেন এবং খুবই দ্রুততার সহিত হাটা শুরু করলেন। রিফাত তার পিছু নিল। এবং তার সাথে কথা বলা শুরু করল। তার পুরো নাম ইথামার ডিকোন। তিনি একজন খ্রিস্টান। তার ধারনামতে, তিনি একজন ব্রিটিশ সৈনিক ছিলেন। ইথামার সাহেব খুবই দ্রুত ইংরেজী বলেন এবং তার ইংরেজী বুঝতে মাঝে মাঝে রিফাতের সমস্যা হচ্ছে। রিফাত ইতিমধ্যেই কয়েকবার তাকে ধীরে ধীরে বলতে বলেছে। রিফাত যা বুঝতে পেরেছে তা হলঃ ১৯৩০-৩৫ সালের কোন একদিনে তাকে এবং তার সাথে আরও সাইত্রিশ জন ব্রিটিশ সৈন্যকে একটা গর্তের মধ্যে ফেলে,সেই গর্তে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। প্রথমদিকে তার ধারনা ছিল তিনি ঐ আগুনে পুড়েই মারা যান এবং তাকে দাফন করার প্রয়োজন হয়নি। কিন্তু একযুগ পরে তিনি জানতে পারেন, তিনি মারা গিয়েছেন ঠিকই এবং তার শরীরের অর্ধাংশ খ্রিস্টান রীতিতেই কোন না কোন, গ্রেইভইয়ার্ডে দাফন করা হয়েছে।সমস্যা হচ্ছে, আগুনে পুড়ে যাওয়া অধিকাংশ সৈন্যকেই দাফন করা হয়েছিল কিন্তু তাদের পরিচয় দিয়ে তথা তাদের নাম লিখে কোন সমাধি করা সম্ভব হয়নি এবং তাদের প্রত্যেকেই আলাদা আলাদা চার্চের গ্রেইভইয়ার্ডে পাঠানো হয়।এর কারন জানতে চাইলে, ইথামার সাহেব রিফাতকে বলেন, চার্চের ফাদারের ধারনা ছিল, যেহেতু সৈন্যদের মৃত্যু ঈশ্বর স্বাভাবিকভাবে দেয়নি সেহেতু তাদের আত্মা অভিশপ্ত আর তারা এই পৃথিবীতেই থাকবে । তো এই অভিশপ্ত, অতৃপ্ত আত্মাদের যদি একই গ্রেইভইয়ার্ডে রাখা হয় তাহলে এরা সেই গ্রেইভইয়ার্ডের জন্য ক্ষতির কারন হয়ে দাঁড়াবে এবং এদেরজন্য সেই গ্রেইভইয়ার্ড পরিত্যক্তও হয়ে যেতে পারে। ইথামার সাহেব কয়েক যুগ ধরেই তার সমাধি খুজছেন। কিন্তু এখনও তিনি তার সমাধির খোজ পাননি বরং তার মত আরও কিছু অতৃপ্ত আত্মাদের সাথে তার দেখা হয়েছে।
চার রাস্তার মোড়ে আসতেই ইথামার সাহেব এক বৃদ্ধ ভদ্রমহিলা সাথে রিফাতের পরিচয় করিয়ে দিলেন। ভদ্রমহিলার সাথে ইথামার সাহেবের দেখা এক বাগানের ছোট্ট কুঠিরে।তিনি কুঠিরে গিয়ে দেখেন , ভদ্রমহিলার মৃতদেহ একটা শিয়ালে ভক্ষন করছে এবং এই কুঠির থেকে দূরে একটা বাড়ি থেকে গানের বাজনা আর রঙবেরঙ এর আলো এসে এই কুঠিরে পড়ছে। ভদ্রমহিলার বাড়ীতে তার নাতীর বিয়ে চলছে। ভদ্রমহিলার ছেলেমেয়েদের ধারনা তাদের মা একজন বিধবা মানুষ তাকে যদি বিয়ের মত এই শুভ অনুষ্ঠানে রাখা হয় তাহলে তার নাতীর ভবিষ্যৎ জীবন ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে। তাই তাকে তার ছেলেমেয়েরা পরিবার থেকে দূরে এই বাগানের কুঠিরে রেখে গিয়েছে। ভদ্রমহিলা এই শোঁকেই মারা যান। কিন্তু নাতীর বিয়ে দুইদিন পার হয়ে গেলেও কেউ তাকে দেখতে আসেনি । যখন ছেলেমেয়েরা তাকে পেয়েছে তাকে আর চেনার উপায় নেই । তার মুখ-হাত-পা’য়ের কোথাও মাংস ছিলনা।
ইথামার সাহেব আর বৃদ্ধ ভদ্রমহিলা খুবই অবাক হয়ে রিফাতের দিকে তাকিয়ে আছে। তারা বুঝতে পারছেনা কি করে রিফাত তাদেরকে দেখতে পাচ্ছে? রিফাত তাদের এই কৌতুহল দূর করার জন্য তাদেরকে তার সাথে আসতে বলল। ইথামার সাহেব আর বৃদ্ধ ভদ্রমহিলা রিফাতের সাথে হাটতে লাগলেন। রিফাত তাদেরকে নিয়ে এক হাসপাতালে ঢুকল এবং সেই হাসপাতালের মর্গের সামনে নিয়ে এল তাদের । মর্গের সামনে যেই লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্স ছিল সেটার দিকে রিফাত ইশারা করল আর তাদেরকে বলল যে, আজ সন্ধ্যার দিকে আমাকে কেউ ধাক্কা দিয়ে, বাসের ছাদ থেকে দেয় আর সেখানেই আমার মৃত্যু হয়। ইথামার সাহেব জিজ্ঞাস করছিলেন না আমার কপালে রক্ত কোথা থেকে এল? যাহোক, তারপর ওখান থেকেই কিছু মানুষ এই হাসপাতালে নিয়ে আসে আমায়। কিন্তু বাচাতে পারেনি। আমার বাবা-মা এখানে থাকেন না । তারা খুবই ব্যস্ত। এখন দেশের বাইরে। হাসপাতালের কর্তৃপক্ষকে ফোন করে আমার লাশ আমার দেশের বাড়ীতে পাঠিয়ে দিতে বলা হয়েছে । রাত বেশি হয়ে যাওয়ায় অ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভারের সাহস হচ্ছেনা আমাকে নিয়ে আমার দেশের বাড়ীর উদ্দেশ্য যাবার । ভোরে রওয়ানা হবেন তিনি আমাকে নিয়ে। তাই ভাবলাম, কাল দুপুরের মধ্যে তো আমাকে দাফন করাই হবে তাই একটু হেটে আসি।বাবা-মা’কে অনেকমাস হল দেখিনা। বাসায় থাকলে তাদের কাছেই যেতাম। কিন্তু, আপনাদের দু’জন কে পেয়ে গেলাম বাবা-মায়ে’র জায়গায়। ইথামার সাহেব আপনি আপনার মরদেহ খুঁজে পাবেন, আশা করছি। আর একটা জিনিস, মৃত লোকজন ছাড়া আপনাকে কেউ-ই দেখতে পারবেনা,কথাটা মাথায় রাখবেন। ভোর হতে চলল ইথামার সাহেব , আমি গিয়ে আবার ঘুমিয়ে পড়ি । নাহলে ড্রাইভার এর মাথা নষ্ট হয়ে যাবে। আপনার সাথে পরিচয় হয়ে ভাল লাগল ইথামার সাহেব, আসি। এই বলে রিফাত চলে গেল। ইথামার সাহেব আর ঐ ভদ্রমহিলা খুবই অবাক হয়ে গেলেন। তারাও আম্বুলেন্সে উঠে পড়লেন এই আশায় যে, রিফাত চোখ খুলে আবারও তাদের সাথে কথা বলবে ।কিন্তু, রিফাতের সেই ঘুম আর ভাঙল না। ইথামার সাহেব বার বার আর সজোরে রিফাতকে বলতে থাকলেন, “যারা কেবল শরীরটা মেরে ফেলতে পারে কিন্তু আত্নাকে মারতে পারে না তাদের ভয় করো না। যিনি শরীর ও আত্না দু’টোই ধ্বংস করতে পারেন বরং তাঁকেই ভয় করো।” বাইবেলের কিছু হবে, ইথামার সাহেবের কথা আর শোনা যাচ্ছেনা। কি আজীব...!!!
[মরদেহ আর ঘুমন্ত জীবিত মানুষের পার্থক্য কি জানেন? ঘুমন্ত জীবিত মানুষকে ডাক দিলেই সে চোখ খুলে আপনার দিকে তাকাবে । কিন্তু মৃত মানুষটিকে ডাক দিলে, সে হয়ত আপনার কথার উত্তর দিবে কিন্তু আপনি বুঝতে পারবেন না। হয়ত সেই আপনাকে ডাকছে ,আপনার কাছ থেকে সাহায্য চাচ্ছে কিন্তু আপনি বুঝতে পারছেন না। অতৃপ্ত আত্মারা, জীবিত মানুষের কাছে বোবা হয়ে যায়। অতৃপ্ত আত্মারা দেখতে পাই, শুনতে পাই,বুঝতেও পারে কিন্তু প্রকাশ করার ক্ষমতা তাদের আর থাকেনা...!!! ]
©somewhere in net ltd.