![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমার শহর, এর একটি প্রশস্ত রাস্তা ছুটে যায় রাজধানীর দিকে। আর বাকি রাস্তা গুলো অন্য আরো কিছু মফস্বলগামী।প্যারিস কিংবা লন্ডন এর মত শহর নয়। তাই ব্যাখ্যায় কাফকা কিংবা চার্লস ডিকেন্স এর মত আভিজাত্যপূর্ণ অলঙ্কার ঠেশে ভরা সম্ভব হবে না। শার্ল বদল্যয়র যেমন নরকের সৌন্দর্য খোঁজার চেষ্টা করেছেন তেমনি আমি নিজেকে এই মফস্বলের একজন হাতুড়ে লেখক দাবী করে আমার শহরের কিছু বর্ণনা একটু পেঁচিয়ে নিজের মত করে উপস্থাপনের চেষ্টা করবো ।
এই শহরে রাস্তা আছে, দালান আছে, পার্ক আছে , ছোট খাট রেস্টুরেন্ট আছে, খেলার বড় মাঠ আছে, হাতি নেই কিন্তু ঘোড়া আছে (আজকাল মাঝে মধ্যে দু’একটা নজরে পরে।), গরু আছে, ছাগল আছে, মানুষ আছে । এ শহরের মানুষগুলোর সময় ও চুরি করে নিয়ে যায় জীবনের মুক্তির আশার নীল নক্সা। বেঁচে থাকে মানুষ বেঁচে থাকে আশা, অনেক আশা পূর্ণতা পায় আবার অনেক আশা ছায়া রূপে থেকে যায়, চোখের সামনে ভাসে কিন্তু তাকে স্পর্শ করা যায় না ।
এ শহরে সাহসের মানদণ্ড বেশির ভাগ সময় কইলজা(কলিজা) দিয়ে প্রকাশ করা হয়। যার কলিজা যত বড় তার সাহস তত বেশি। সেই সাহস প্রকৃত অর্থে কতটুকু মূল্য বহন করে তা আমার জানা নেই । এ শহরের স্বল্পকালীন রাজধানী ফেরত ছেলেদের গোল্ডলিফ থেকে বেনসনে রুপান্তরের উদাহরণ আছে ঢের । চায়ের দোকানে দু একজন প্রতিবাদীও মাঝে মধ্যে চোখে পড়ে। চোখে পড়ে ভেসে যাওয়া আগামীর অগ্রদূতদের তারপর তারা যেন কোথায় হারিয়ে যায়। সামাজিক প্রতিযোগিতার ট্র্যাকে নিজেদের দৌড়ের গতি বাড়ানোর চেষ্টায় হয়তোবা তারাও শামিল হয়ে যায় । তারপরো মুষোলাধারে বৃষ্টিতে ভিজতে থাকা যুবকদের দেখলে মনে আশা জাগে একটা অজানা মুক্তির আশা । যেখানে মানুষ নিজেদের উজার করে দিয়ে বলবে আমি মানুষ, আমি বাঁচতে ভালোবাসি । কিন্তু অন্যের হাতে আমার স্বাধীনতাকে বিলিয়ে দিয়ে নয়। পরাধীনতায় মানুষ অন্যের লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করে নিজেদের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা খুঁটির বাঁধন শক্ত করার চেষ্টা করে । এই অসহায়ত্বপূর্ণ সত্যটাকে মেনেই করে ।
এ শহরের মানুষ গুলোও “আমি” “আমি “ করতে ভালোবাসে। অন্যের “আমি’ত্বতে আবার এরা সমালোচনা করে চলে একাধারে । ‘আমিত্ব’কে অবশ্য খারাপ কিছু মনে করার কারণ নেই । মানুষের একটি বৈশিষ্ট্যই তো ইগো বা আমিত্ব । তবে বেশি ‘আমিত্ব’ তে নিজের নিরাপত্তাহীনতা প্রকাশ পায় , এতে সুযোগসন্ধানীদের মস্তিষ্কে ঝোপ বুঝে কোপ মারার একটা পরিকল্পনা জন্মাতে পারে।
এ শহরে উপেক্ষিত , অর্থহীন একটি চরিত্র আজো চোখে পড়ে । এই চরিত্রের নাম ‘পাগল’ । বেশির ভাগ শিশুরা এদের ভয় পায় অনেক সময় প্রাপ্ত বয়স্করাও । অনেক ধরণের পাগলের আনাগোনা এ শহরের অলিগলি, মাঠে ঘাটে। পুরুষ পাগল , মহিলা পাগল, নগ্ন পাগল ,অর্ধ নগ্ন পাগল, ভবের পাগল । এই পাগল নামক বিশেষ চরিত্রটির আজো বিচ্ছিন্ন আড্ডায় আনাগোনা কমই। তবে শহরের যুবকগুলোর ভেতর রাজনীতির ঝোক খুব বেশি । শহরের রাজনৈতিক তারকাদের সংখ্যাও একেবারে অগ্রাহ্য করার মত নয়। মিছিলের স্লোগানে এই কথিত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ত্বরা প্রায়শই স্থান পায় । তবে নাগরিকদের দূর্ভোগের পরিমাণ একেবারে কম নয়।
এ শহরে নিন্দুকদের পরিমাণ কম নয় । গুজবে এরা আজো বিশ্বাস করে, গুজবের উত্থান তখনই হয় যখন আলোচনার বিষয় থাকে সীমবদ্ধ, সৃষ্টিশীলতা থাকে কারারুদ্ধ । গুজবও একধরণের সৃষ্টিশীলতা বটে, যে সৃষ্টিশীলতা অমর হতে পারে না তবে নিজেদের সময়গুলোকে নির্মমভাবে হত্যা করতে সক্ষম ।
শহরতলীর দোকান গুলোতে ক্রেতা-বিক্রেতার দ্রব্যসংক্রান্ত দরকষাকষি প্রকাশ করে দেয় অর্থনীতির সীমাবদ্ধতা । কালো রঙের আকাশের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করে দেয় শহরের অলিগলির দূর্ভোগ । তবুও মানুষ মানুষের জন্য বলে আমরা চিৎকার করি সেই চিৎকার মানুষের কানে পৌঁছে কিন্তু অন্তরে যাবার আগেই তা চুরি হয়ে যায়, চুরি করে নিয়ে যায় আরেক শ্রেণীর চতুর মানুষ । তবুও আমরা বেঁচে আছি চলন্ত যাযাবরের উদ্দেশ্যহীন পা ধরে যে পথের শেষ কোথায় তা জানিনা তবুও জীবনের শেষ সময়ের আগমনের আগে যতটুকু বেশি পথ পারি দিতে পারবো তাতেই সৃষ্টি হতে পারে এক নতুন মাইলফলক । জয়তু আমার শহর, জয়তু শহরের জনমানব ।
১৮ ই জুন, ২০১৬ রাত ১:৪২
ব্রতশুদ্ধ বলেছেন: মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ আপনাকে।
©somewhere in net ltd.
১|
১৭ ই জুন, ২০১৬ ভোর ৪:৪০
কাশফুল মন (আহমদ) বলেছেন: ভালো বলেছেন