নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সুখীমানুষ

সুখী মানুষ

সত্যিকারের সুখীমানুষের সাথে আমার একটাই পার্থক্য, সুখীমানুষের গায়ের জামা ছিলো না, আমার আছে।

সুখী মানুষ › বিস্তারিত পোস্টঃ

টেলিভিশন টেকনোলজি

২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সকাল ১১:০৪

ছোটবেলায় স্কুলে রচনা আসতো "টেলিভিশন"। জার্ণি বাই বোটের মতই পরিচিত ছিলো এই রচনা। রচনা শুরু হতো এই ভাবে "টেলিভিশন শব্দটি এসেছে গ্রীক টেলি ও ল্যাটিন ভিজিও থেকে"। টেলি মানে দূর। আর ভিজিও থেকে ভিশন। ভিশন মানে হলো দেখা। অর্থাৎ দূর থেকে দেখা যায় এমন একটা কিছু। ঘটনার শুরুটা কিন্তু হয়েছিলো বাংলাদেশ থেকে! আমাদের বিক্রমপুরের ছেলে জগদিস। যথাযথ সম্মান দিয়ে দুনিয়ার সবাই যাকে জানেন বিজ্ঞানি স্যার জগদিসচন্দ্র বসু নামে।



১৮৯৪ সালে কলকাতার টাউন হলে জগদীশ চন্দ্র বসু বিনা তারে তরঙ্গ পাঠিয়ে অদূরবর্তী একটি ঘন্টা বাজিয়ে দেখান সবাইকে। কিন্তু এর পেটেন্ট তিনি করেননি। ১৮৯৫ সালে মার্কনী একটি যন্ত্র তৈরী করেন যা ২.৪ কি.মি. দূর পর্যন্ত তরঙ্গ পাঠাতে পারে। পরে ১৯০০ সালে মার্কনী রেডিওর পেটেন্ট করে নেন। তাই জগদীশ বাবু আবিষ্কারক হয়েও পেটেন্ট না করায় তাঁকে অফিসিয়ালি রেডিওর আবিষ্কারক বলা হয় না। যাই হোক রেডিওর মাধ্যমে কথা ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব হল দূর থেকে দূরে। মানব সভ্যতার প্রথম বিস্ময়কর যন্ত্র রেডিও। ১৮৩২ সালে হারকিউলিস ফ্লোরেন্স ক্যামেরার ছবি ধরে রাখা নিয়ে কাজ করেন। যদিও তিনি তা প্রকাশ করে যাননি। ১৮৮৪ সালে ২৩ বছরের এক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ধারণা করে যে ভিডিও সিগনাল এক স্থান থেকে অন্য স্থানে পাঠানো সম্ভব। পল গটলায়েব নিপকো নামের সেই ছেলেটি তখন এর পেটেন্টও করে ফেলে। কিন্তু তখন পর্যন্ত এম্প্লিফাইড টিওব তৈরী না হওয়াতে কিছুতেই তিনি পেটেন্টে করা যন্ত্র বানাতে সক্ষম হননি। পরে নিপকোর’র ধারনা অনুযায়ী কাজ শুরু করেন স্কটিশ বিজ্ঞানী জন লজি বিয়ার্ড। ১৯২৫ সালে তিনি লন্ডনে টেলিভিশনের প্রথম ছবিটি দেখাতে সক্ষম হন। তারহীন শব্দ পাঠিয়ে মার্কনী যে রেডিও আবিষ্কার করেছিলেন ১৯০০ সালে তা তো আর নতুন করে আবিষ্কার করার কিছু নাই। লজি বিয়ার্ড তারহীন ছবিও পাঠাতে পারলেন। এখন অপেক্ষা শুরু হলো ছবি ও শব্দের সমন্বয়ে একটা যন্ত্র কে বানাবে। ফিলু ফার্ণসওর্থ নামের মাত্র ২১ বছরের এক মার্কিন বিজ্ঞানী তা করে দেখালেন। বেশীরভাগ মানুষই লজি বিয়ার্ডকে টেলিভিশনের আবিষ্কারক জানেন। কথা সত্য। কিন্তু বাস্তব টেলিভিশন বলতে যা বুঝায় তার জনক বলে কেউ কেউ মনে করেন ফার্ণসওর্থকে। মাত্র চৌদ্দ বছর বয়সে তিনি স্বপ্ন দেখতেন একটা কাঁচের বাক্সে আলো ধরে তা অন্য বাক্সে কিভাবে পাঠানো যায়। তাঁর সেই স্বপ্ন আজ রঙ্গীণ হয়ে ধরা দেয় কোটি কোটি ঘরে।



এ তো গেলো একেবারে শুরুর কথা। চলুন এবার দেখে নেই টেলিভিশন সম্প্রচার কিভাবে করা হয়। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কয়েকটি ধাপে ধাপে করা হয় এই কাজ।



ইনজেষ্ট:



ইনজেষ্ট হচ্ছে একেবারে শুরুর ধাপ। ক্যামেরায় ধারণ করা ভিডিও সাধারণত ম্যাগনেটিক ফিতার টেপ এ জমা হয়। এই টেপ ভিটিআর ও কম্পিউটারে সাহায্যে ডিজিটাইজ করে ভিডিও সার্ভারে রাখা হয়। আধুনিক সব ক্যামেরায় অবশ্য ক্যামেরার ইন্টারনাল ডিস্কে অথবা ম্যামরি কার্ডে (পিটু কার্ড বা এসডি কার্ড) সরাসরি ডিজিটাল ফাইল হিসাবেই ভিডিও ষ্টোর হয়। তবু ইনজেষ্টের কাজ যে থাকে না তা না। কারন ইন্টারনাল ম্যামরি বা ম্যামরি কার্ড থেকে ভিডিও সার্ভারে তো নিতেই হয়। আর এই প্রসেসটির নাম ইনজেষ্ট।



এনএলই:



নন লিনিয়ার এডিটিং। শব্দটা খটমটে শুনালেও ঘটনা সহজ। ইনজেষ্টের পর ভিডিও ফাইলতো পাওয়া গেলো। এই ভিডিওকে বলা হয় র'ভিডিও। এই ভিডিওকে এডিট করে অনুষ্ঠান বা সংবাদ উপযোগী করতে হয়। কম্পিউটার ও ভিডিও এডিটিং কার্ডের মাধ্যমে এই ভিডিও এডিটিং এর কাজটি করা হয়। এর নামই এনএলই। এমন নামকরন করার কারন কি? আগে যখন কম্পিউটার ছিলো না তখন ম্যাগনেটিক টেপে ভিডিও এডিট করা হতো। এক নম্বর পজিশান থেকে তিন নম্বর পজিশানে যেতে হলে তো লাফ দিয়ে যাওয়া যেতো না। ফিতা ঘুরিয়ে এক এর পর দুই, দুই এর পর তিন এমন করে যেতে হতো। তাহলে ঘটনাটা লিনিয়ার হলো না? তাই এর নাম ছিলো লিনিয়ার এডিটং। এখন তো কম্পিউটারে এমন ফিতা টানার ব্যাপার নাই। মাউস ক্লিক করেই এক ফুটেজের সাথে অন্য যেকোন ফুটেজ জুড়ে দেওয়া যায়। ঘটনাটায়তো আর লিনিয়ার কিছু থাকলো না, তাইনা? তাই হয়ে গেলো এনএলই।



গ্রাফিক্স:



গ্রাফিক্স খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। টেলিভিশনের চেহারা নির্ভর করে এই বিভাগের ক্রিয়েটিভ মানুষদের কাজের উপর। ভিডিও এডিটিং এর ফাঁকে ফাঁকে সাপোর্টিং হিসাবেও গ্রাফিক্স খুবই প্রয়োজনীয় একটি অংশ।



ষ্টুডিও:



এই সেকশনটি নিয়ে কথা বলার তেমন কিছু নাই। কারন ব্যাপারটা সবার পরিচিত। অবশ্য নিউজ পড়তে দেখার সময় হয়ত অনেকেই ভেবে দেখেন না যে এর পিছনে সাউন্ড, লাইট, সেট, মেকআপ সহ আরো কত কত গুরুত্বপূর্ণ মানুষজন জড়িত।



পিসিআর:



প্রোগ্রাম কন্ট্রোল রুম। ষ্টুডিওতেতো অনেকগুলো ক্যামেরা থাকে । অনেকগুলো মাইক্রোফোন থাকে। কখন কোন ক্যামেরা দর্শকদেরকে দেখানো হবে। কখন কার সাউন্ড দর্শকদেরকে শুনানো হবে সব কিছু কন্ট্রোল করা হয় পিসিআর এ।



এম সি আর:



মাষ্টার কন্ট্রোল রুম। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জায়গা। এখানে কমার্শিয়াল, প্রমোশনাল, নাটক, সিনেমা সবকিছু সিডিউল অনুযায়ী গুছানো থাকে। কখন কি দেখানো হবে এর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় এখান থেকেই। এবং ভিডিওর সাথে এমবেড করে টিকার বা স্ক্রিনে দেখানো অন্যান্য গ্রাফিক্স যোগ করা হয়।



কার:



CAR / CER দুটুই ঠিক। সেন্ট্রাল এপারেটাস রুম অথবা সেন্ট্রাল ইকুইপমেন্ট রুম। টেলিভিশন ষ্টেশানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্র, সার্ভার সব সাধারনত একটা রুমে রাখা হয়। এই রুমটির নাম ‘কার’।



আর্থষ্টেশান:



টেলিভিশনের বাইরের বেশীরভাগ মানুষেরই এই রুমটির প্রতি আকর্ষণ একটু বেশী থাকে। অথচ যন্ত্রপাতি তেমন বেশী কিছু কিন্তু এখানে থাকে না। সহজ করে বলতে গেলে, এমসিআর থেকেতো ফাইনাল একটা ভিডিও পাওয়া গেলো। হোক সে নাটক, নিউজ কিংবা অন্য কোন লাইভ ভিডিও। এই ভিডিওটিকে ৩৬ হাজার কিলোমিটার উপরের একটা কৃত্রিম উপগ্রহে পাঠানোর যাবতীয় কাজ করা হয় এই আর্থ ষ্টেশানে। প্রথমে এই ভিডিওটিকে দেওয়া হয় এনকোডার নামক একটি যন্ত্রে। এই যন্ত্রের কাজ হলো ভিডিওটিকে হিবিজিবি করে ফেলা। হিবিজিবির একটা উদাহরণ দেই। ধরুন আপনার হাতে কেউ একটা চিঠি দিলো। চিঠিতে লেখা J MPWF ZPV। কিছু বুঝা গেলো? এবার প্রত্যেকটি অক্ষরের আগের অক্ষরটা দিয়ে অক্ষরটাকে রিপ্লেইস করেন। I LOVE YOU হলো? সহজ কথাটা একটু প‌্যাঁচ দেয়াতেই দুর্বোধ্য হয়ে গেলো তাই না? আপনি যদি সূত্রটি না জানেন তাহলে কিন্তু এই চিঠির মানে বের করতে পারবেন না কিছুতেই। আমি যে ভিডিও সিগনালটি পাঠাবো তা যেন পথিমধ্যে কেউ রিসিভ করে দেখতে না পারে তাই এই কান্ড করা। এবার সহজ ভিডিও সিগনালটিকে প‌্যাঁচ মরে (এনকোড করে) হিবিজিবি বানানো হলো। এই হিবিজিবিকে এবার ঢুকানো হয় মডুলেটর নামক একটি যন্ত্রে। ভিডিও সিগনালটিকে ৩৬ হাজার কিলোমিটার উপরে পাঠাতে হলে সাথে একটি ক্যারিয়ার যোগ না করলে এত দূরে পাঠানো সম্ভব না। এই কাজটিই করা হয় এই পর্যায়ে। এবার মডুলেটর থেকে আউটপুট নিয়ে দেওয়া হয় আপ কনভার্টার নামক একটি যন্ত্রে। এই যন্ত্রের কাজ হলো ক্যারিয়ার সহ ভিডিও সিগনালটিকে নির্দিষ্ট একটি ফ্রিকোয়েন্সিতে পাঠানোর উপযোগী করা । আর এই সিগনালটিকে আরো বেশী শক্তিশালী করার জন্য অন্য একটি যন্ত্রে দেওয়া হয়। তার নাম এইচপিএ। অর্থাৎ হাই পাওয়ার এম্পলিফায়ার। ব্যাস টেলিভিশনের সিগনাল মহাকাশে যাবার জন্য প্রস্তুত। এবার এই সিগনালকে ডিসের মাধ্যমে রিসিভ করে তাকে ডিকোড করে নিলেই ভিডিও দেখা যাবে। ডিকোড করা মানে হলো, J MPWF ZPV কে I LOVE YOU বানানো।



সহজ ভাষায় সহজ করে সম্প্রচার বলতে গিয়ে আরো অনেক বিষয় না-বলা রয়ে গেলো। প্রতিটা বিষয় আরো ডিপ লেভেলে আলোচন আস্তে আস্তে আসবে। আমাদের সাথেই থাকুন, ভালো থাকুন।





Click This Link

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সকাল ১১:৩৬

ইরফান আহমেদ বর্ষণ বলেছেন: :) :) :)


ভালো পোস্ট

২| ২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:১৬

খেয়া ঘাট বলেছেন: ভালো একটা পোস্ট।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.