![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সত্যিকারের সুখীমানুষের সাথে আমার একটাই পার্থক্য, সুখীমানুষের গায়ের জামা ছিলো না, আমার আছে।
সেই ভিক্ষুক হারুনের সাথে আজ আবার দেখা, উত্তরা ৫ নাম্বার লেকের ধারে। ঠিক আগের মত দুই হাটু বুকে জড়িয়ে মাটিতে বসে আছে।
- কি হারুন আছো কেমন?
আনন্দে ডগমগ হয়ে হারুন থুপ্ করে এক গাল থুতু ফেল্লো। থুতুর কিছুটা নিজের গায়ে পড়লো। এক গাল হেসে বল্লো
- হ ভালা আছি। তুমি থাকো কই? আসো না কেন?
বড় বড় পীর ফকিররা সবাইকে তুই করে বলে। হারুন সবাইকে তুমি করে বলে। বল্লাম
- হারুন, আমার তো একটা ছেলে হইছে। ছেলে তো মামা-বাড়ী থাকে।
- হ বুচ্ছি তুমিও ওই খানে থাকো। ঠিকই আছে।
- মাঝেমাঝে উত্তরা আসি। তোমারে তো সকাল বেলা হাটার সময় পাই না হারুন, ঘটনা কি?
হারুন আবার আনন্দে ডগমগ হয়ে থুপ করে এক গাল থুতু ফেলে বল্লো
- তোমার মত অনেকেই আমারে পছন্দ করে, সবার লগে দেখা করতে যাওন লাগে না?
- মিরপুর মাজারে গেছিলা?
- নাহ এইবার দেশে গেছিলাম।
হারুন বেশ শুকিয়ে গেছে। সে তো ঠিক ভিক্ষুকই না, পাগলও। শরীরের কি হয়েছে তার খোঁজ খবর রাখে কি না কে জানে। জিজ্ঞাসা করলাম
-হারুন, শুকাইছো কেন? শরীরতো দেখি ভাইঙ্গা গেছে তোমার
হারুন আবার আনন্দে থুপ্ করে থুতু ফেলে বল্লো
- খেয়াল করছো শুকাইছি যে? আমার তো অসুখ
- ক হইছে?
- উরাতের মাঝ খানে টিউমার হইছে।
এই কথা বলে সে ইঙ্গিতে টিউমারের জায়গা দেখাচ্ছে আর আনন্দে ডগমগ করছে। সে টিউমার দেখানোর আনন্দে আবার থুপ করে থুতু ফেল্লো। এবার পুরা থুতু পড়লো তার কোলের উপর। পুরা থুতু কোলের উপর পড়ায় হারুন কিছুক্ষণ অবাক হয়ে এরপর আরো তীব্র আনন্দে হাসতে থাকলো। হারুনের উরুতে টিউমার দেখানোর ইঙ্গিত দেখে একটু ভয় পেয়ে বল্লাম, হইসে হইসে টিউমার দেখাইতে অইবো না।
হারুন এবার রসিক হাসি হেসে বল্লো
- তুমি যেইটা ভাবছো এইটা না। পায়ের মাঝখানে কই নাই, উরাতে কইছি।
হারুনকে টুপ করে টাকা দেওয়ার জন্য হাত বাড়ালাম। হারুনের দেখলাম টাকা নেওয়ার দিকে কোন আকর্ষণ নাই। একটু গম্ভীর হয়েই বল্লো
- তোমার টেকা দেওয়া লাগবো? টেকাইকি সব?
আমি টাকাটা হারুনের হাতে গুঁজে দিলাম।
হারুণ একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বল্লো
- টেকা কিছু না, টেকা কিছুই না।
আমি মানুষের সাথে মিশি। মানুষ যা দেখেছি তাতে আমি প্রায় নিশ্চিৎ - যার যত টাকা তার বুদ্ধি বিবেক ততই কম। কোটি কোটি টাকার মালিকের সাথে কথা বলে প্রায়ই আমার মনে হয়েছে - গর্ধবের বাচ্চা, তুই এত টাকা কামাইলি কেমনে?
হারুনের কাছ থেকে বিদায় নেওয়ার ভঙ্গিতে হাটা দিলাম। হারুন বল্লো
- বইসা থাকি আর ভালা মানুষের অপেক্ষা করি। টেকার লাইগ্গা হারুন বইসা থাকে না।
কেন জানিনা মনে হলো, হারুনের এই ভালো মানুষদের মধ্যে আমিও আছি। নিজের প্রশংসা সামনাসামনি শুনা খুবই বিব্রতকর। না শুনার ভাণ করে হন হন করে হাটা দিলাম। হারুনের কণ্ঠটা দূরে মিলিয়ে যাচ্ছে। শেষ যে কথাটা হারুনের শুনলাম তা আবছা আবছা
- তুমি আইসো, হারুন ভালা মাইনসের অপেক্ষা করে।
(আমি দোষে-গুনে আর দশ জনের মতই মানুষ। তবু কিছু কিছু মানুষ আমাকে কম জেনেই ভালো মানুষ মনে করে। এতেই আমার চোখ ভিজে যায়। চোখ ভিজে যায় ভালোবাসার ঋণে। আমার কোন অর্থের ঋণ নাই। ভালোবাসার ঋণে আমি জর্জরিত।
২| ০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ দুপুর ২:৩৮
মুহম্মদ ইমাম উদ্দীন বলেছেন: অর্থের ঋণ শোধ করা গেলেও ভালবাসার ঋণ শোধ করা যায় না।
৩| ০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ৮:৫০
ফা হিম বলেছেন: কোটি কোটি টাকার মালিকের সাথে কথা বলে প্রায়ই আমার মনে হয়েছে - গর্ধবের বাচ্চা, তুই এত টাকা কামাইলি কেমনে
৪| ০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ৮:৫৮
কলমের কালি শেষ বলেছেন: হুম কেউ টাকার পাগল কেউ ভালবাসার পাগল । পৃথিবীতে সবাই ই কিছু না কিছুর জন্য পাগল । কেউ খারাপ দিকের কিছুর জন্য কেউ ভাল দিকের কিছুর জন্য । এই নিয়েই পৃথিবী চলবে ।
লেখাটি পড়ে ভাল লাগলো ।
৫| ০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ১০:৫৩
বাংলার পাই বলেছেন: যার যত টাকা তার বুদ্ধি বিবেক ততই কম।---------------কথা কিন্তু সত্য।
আমার কোন অর্থের ঋণ নাই। ভালোবাসার ঋণে আমি জর্জরিত। ---------------------আমার মনে হয় পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ঋণ এটাই যা কখনো পরিশোধ করা যায়া না।
©somewhere in net ltd.
১|
০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সকাল ১০:২১
রিভানুলো বলেছেন: চোখ ভিজে যায় ভালোবাসার ঋণে। আপনার লেখা মন ছুয়ে গেল ++++