নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সুখীমানুষ

সুখী মানুষ

সত্যিকারের সুখীমানুষের সাথে আমার একটাই পার্থক্য, সুখীমানুষের গায়ের জামা ছিলো না, আমার আছে।

সুখী মানুষ › বিস্তারিত পোস্টঃ

শুক্কুর ভাই

১৩ ই নভেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১:৪৯

শুক্কুর ভাই কালা

পাইছে মার্কা তালা

যাবে এবার যাবে গো

শুক্কুর ভাই যাবে গো...



বয়স তখন চার কি পাঁচ। শুক্কুর ভাই মেম্বার পদপ্রার্থী। দিন রাত রিক্সায় করে মাইকিং চলছে। আমরা বাচ্চারা রিক্সার পিছন পিছন দৌড়াই। যিনি মাইকে 'যাবে এবার যাবে গো...' বলেন, তাকে খুব হিংসা করি। আহা যদি একবার মাইকে বলতে পারতাম, যাবে এবার যাবে গো... শুক্কুর ভাই যাবে গো।



কয়দিন পর এলাকায় অনেকের হাতে দেখছি ব্যোমা (টিন দিয়ে বানানো চিমনী / চোঙ্গা)। ব্যোমা দেখতে অনেকটা মাইকের মত। এর চিকন মাথাটা মুখে চেপে কথা বলতে হয়। ঢাকা শহরে চানাচুরওয়ালাদের হাতে প্রায়ই দেখা যায় বস্তুটা। যাই হোক, বাচ্চারা এবার ঘুরছি ব্যোমাওয়ালার পিছন পিছন। যদি একটু কথা বলতে দেন। একবার সুযোগ পেয়েও গেলাম! ব্যোমায় এমন জোস নিয়ে কেম্পেইন করলাম যে ব্যোমাওয়ালা পুরা মুগ্ধ। ঘটনা এখানেই শেষ না। বিকাল বেলা রিক্সা করে যে মাইক আসে এই মাইকের সাথেও দেখি সকালের ব্যোমাওয়ালা। মাইকে কথা বলার সুযোগ পেয়ে গেলাম!



দিন রাত চলছে অপেক্ষা। কখন হাতে একটা ব্যোমা পাবো, মাইক পাবো আর বলতে পারবো, শুক্কুর ভাই কালা, পাইছে মার্কা তালা, যাবে এবার যাবে গো...।



বাড়ীতে সব্বাইকে রিকোয়েষ্ট করছি ভোটটা যেন শুক্কুর ভাইকে দেন। ভক্তের এই তথ্য শুক্কুর ভাইয়ের কানে যেতে সময় লাগলো না। টের পেলাম একদিন সকাল বেলা। ঘুম থেকে উঠে দেখি দুইটা বিশাল সাইজের ব্যোমা আমার খাটে। বড় বড় চোখ নিয়ে তাকিয়ে আছি। মা বল্লো, রাতে তোর শুক্কুর ভাই আসছিলো, তুই তো ঘুমায়ে ছিলি। তোরে দুইটা ব্যোমা দিয়া গেছে।



এর পর শুক্কুর ভাই প্রায়ই আমাদের বাড়ী আসেন আমাকে দেখতে। বারাক ওবামা এখন আমাকে দেখতে আসলেও হয়ত এতটা খুশি এখন হবো না। বয়স সম্পর্কে আমার সবচেয়ে বড় অভিযোগ হলো, বয়স বাড়ার সাথে সাথে আমাদের সুখ দুঃখের অনুভূতিগুলো ভোঁতা হয়ে যায়। ছোটবেলার স্যাকারিন দেওয়া পচিশ পয়সার আইসক্রিমের আনন্দের কোটিভাগের একভাগও পাওয়া যায়না এখনের এন্ডারসেনের আইসক্রিমে।



যাই হোক, ইলেকশান হলো। শুক্কুর ভাই বিপুল কম ভোটে ফেইল করলেন। মা বল্লেন, শুক্কুরতো দেখি আমাদের পরিবারের ভোট আর তার পরিবারের ভোট ছাড়া আর কারো ভোটই পায় নাই।



কয় দিন পর বাজারে গেলাম আব্বার হাত ধরে। শীতের দিন, দেখি শুক্কুর ভাই একটা চাদর গায়ে দিয়ে জুবুথুবু হয়ে মাটিতে বসে আছেন। সামনে একটা মাছের থালা। ছোট মানুষ, তবু বুঝতে বাকী নাই - শুক্কুর ভাই পেশায় জেলে। বড় হয়ে দেখেছি, ইলেকশান করার ভূত কারো কারো মাথায় চেপে বসে। সে কিছুদিনের জন্য ভুলে যায় তার পেশা, পরিবার সব। বিপুল ভোটে ফেল করার পর আবার সম্বিৎ ফিরে পান, ফিরে যান পেশা ও পরিবারের কাছে। মানুষের এ এক বড়ই বিস্ময়কর আচরণ।

-০-

এবার ঠিক করেছি, বাড়ী গেলে শুক্কুর ভাইকে খুঁজে বের করবো। বুঝুক আর নাই বুঝুক জড়ায়ে ধরে প্রথমেই বলবো, ভাই আপনে আমার চাইল্ড হিরো। এরপর প্রাণ খুলে বলবো, শুনবো অনেক কথা। কে জানে শুক্কুর ভাই এখন কি করছেন, কোথায় আছেন। আদৌ আছেন কি না।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.