![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সত্যিকারের সুখীমানুষের সাথে আমার একটাই পার্থক্য, সুখীমানুষের গায়ের জামা ছিলো না, আমার আছে।
- হ্যাঁ বলেন, আপনার ব্যবসার আইডিয়াটা বলেন।
- স্যার আমি বাতাস বেচবো।
জগলুল সাহেব অবাক হয়ে ছেলেটাকে দেখছেন। ব্যাটা বলে কী! বাতাস বেচবে? এই হইলো আধুনিক ছেলেপেলেদের স্মার্টনেস। থাপড়ায়ে দেন্দা বানায়া ফেলা দরকার, --জাদা। তিনি মেজাজ ঠান্ডা করে হাসি দিয়ে বল্লেন
- বাতাস ব্যবসা তো নতুন কোন আইডিয়া না। সিলিন্ডারে ভরে অক্সিজেন, এসিটিলিন বিক্রি হচ্ছে না?
রিমন খুব সুন্দর করে হাসলো। এমন হাসি যার অর্থ হলো, স্যার আপনি যে এইটা বলবেন তা আমি জানতাম।
- স্যার আমি সাধারণ বাতাস বেচবো।
- সাধারণ বাতাস পাবলিক কেন কিনবে?
- স্যার প্রথমত এইটা স্যার পাবলিক কিনবে না। এর ক্রেতা হবে সিলেক্টিভ কয়েকজন মানুষ। আমার প্রথম কাষ্টমার হবেন স্যার আপনি নিজে।
জগলুল সাহেবের বেশ মজা লাগছে। ব্যবসার একই টাইপ বিষয় হেন্ডেল করতে করতে তিনি কয়েক বছর ধরেই ক্লান্ত। ছেলেটার এই কনফিডেন্স দেখে বেশ মজা পাচ্ছেন তিনি। ব্যবসার খাতিরে না, বরং একটু কথার মজার কারনেই তিনি আরো শুনতে চাচ্ছেন এমন ভাঙ্গিতে মাথা নাড়লেন।
- আর দ্বিতীয় কারন হচ্ছে স্যার, বাতাসটা আসবে সুন্দরবন থেকে। এবং ব্রেন্ডিং টা হবে, লিভ ইন সিটি - ব্রিদ ফ্রম দ্যা ফরেষ্ট।
জগলুল সাহেব বিসনেজ নিয়ে ভাবছেন না। জাষ্ট ছেলেটার সাথে তাল মিলায়ে বল্লেন
- আর যদি কেউ সাগর থেকে বাতাস পেতে চায়?
এক সেকেন্ডের মত রিমন একটু ভাবলো
- স্যার আপনি জাত ব্যবসায়ী। ঠিক বলছেন, আমরা তো রিকোয়ারমেন্ট অনুযায়ী প্লেস থেকে বাতাস এনে দিতেই পারবো। তাহলে আপনি স্যার ব্যবাসার মটো লাইনটা লিখে দিন প্লিজ।
- তো বাতাসটা তুমি আনবা কিভাবে?
- স্যার বিশাল আকারের ট্যাংকারে কম্প্রেষ্ট এয়ার আমরা লোকালি কালেক্ট করবো।
রিমনের চোখ চকচক করে উঠলো
-স্যার আমরা কিন্তু সিজনাল ফ্লেভারও দিতে পারবো। ধরুন শীতকাল শুরু হয়েছে, শরিষা ক্ষেতের পাশ থেকে আমরা এয়ারটা কালেক্ট করলাম।
এবার জগলুল সাহেব একটু ব্যবসায়িক দৃষ্টিকোন থেকেই মজা পেলেন। আর একটু আইডিয়া যোগ করলেন
- আচ্ছা ইয়ে তোমার নামটা যেন কী?
- স্যার রিমন
- ও হ্যাঁ রিমন, শোন। নির্দিষ্ট কোন ফুল গাছ থেকে যদি আমরা এয়ারটা কালেক্ট করি? গন্ধটা কি থাকবে কম্প্রেষ্ট অবস্থায়?
রিমন একটা কনফিডেন্সের হাসি দিলো
- স্যার এই নিয়ে আমার পড়াশোনা আছে। থিসিস লেভেলে স্যার গেলাম না। দামি সব পারফিউম কিন্তু স্যার নেচারাল ফুলের নির্জাস থেকে ন্যাচারাল পদ্ধতিতেই তৈরী হয়।
জগলুল সাহেব একটু মজা পেলেন। চেয়ার থেকে একটু ঝুঁকে এসে বসলেন।
- আচ্ছা ধরো আমি ইনভেষ্ট করলাম। তুমি ব্যবসা শুরু করলে। প্রোডাক্ট কিভাবে বিক্রি করবে তা নিয়ে ভেবেছো?
- স্যার বড়লোকরা সবাই ইউনিক হতে চায়। আমি যতদূর জানি, একবার বিএমডব্লিউ গাড়ির দাম কমিয়ে দেওয়াতে তাদের বিক্রি কমে গিয়েছিলো। কেউ কম টাকায় এই দামি গাড়ি কিনতে চায়না। একটা পেষ্ট্রিজ আছে না? পরে গাড়ীর দাম যখন অনেক বাড়িয়ে দেওয়া হলো তখন বিক্র অনেক বেড়ে গেলো।
- এই আইডিয়ার সাথে তোমার বাতাস বিক্রির মির কোথায়?
- স্যার যে কোটিপতিকে কিছুতেই কনভিন্স করতে পারবো না তার জন্য একটা শেষ চাল হিসাবে একটা ট্রাম কার্ড আছে?
- কী সেটা?
- স্যার, ধরুন আপনাকেই যদি বলি। প্রতি মাসে মাত্র দুই লাখ টাকা খরচ করে আপনি ফ্রেস বাতাস পাচ্ছেন। ধরলাম ফ্রেস বাতাসের দিকে আপনার আগ্রহ কম। অন্তত এইটা একবার ভেবে দেখুন, আপনার কোন বন্ধু আপনার সাথে দেখা করতে আসলে বলতে পারবেন - এই দেখো কান্ড, বাতাস কিন্তেছি দোস্ত দুই লাখ টাকা দিয়া মাসে। এর কোন মানে হয়? এর পরেও লিভিং ঢাকা, গেটিং এয়ার ফ্রাম সুন্দরবন, হা হা হা। স্যার, এই কথাটা বলতে পারার সুযোগ কিন্তু সমস্ত বাংলাদেশে আপনি একাই পাচ্ছেন!
জগলুল সাহেব ছেলেটার বুদ্ধি দেখছেন আর ভাবছেন এই বয়সে তার নিজের কি এতটা বুদ্ধ ছিলো? তিনি রিমনের দিকে একটু সুন্দর চাহনি দিয়ে মিষ্টি করে হাসলেন
- শুনো রিমন, ধরো এখন আমার কাছে তুমি এই সার্ভিসটা বিক্রি করতে আসছো। করো দেখি, আমাকে কনভিন্স করো।
রিমন একটা হাসি দিলো।
- স্যার ধরাধরির কিছু নাই। আমি জানি আপনিই হবেন আমার প্রথম কাষ্টমার। তো স্যার শুরু করি...
এই বলে রিমন সত্যি সত্যি রুম থেকে বের হয়ে গেলো। বাইরে গিয়ে নক করলো। জগলুল সাহেব ব্যবসায়ি মানুষ। তিনি দীর্ঘ এক ঘন্টা সাইত্রিশ মিনিট রিমনকে অপেক্ষা করালেন।
রিমন হাসি মুখে ঢুকলো। জগলুল সাহেব একু গম্ভীর হয়েই ইশারায় বসতে বল্লেন। তিনি টুকটাক কাজ সারলেন। এতক্ষণ কোন কথাই হয়নি এমন ভঙ্গিতে বল্লেন
- হ্যাঁ বলেন
রিমন মিষ্টি করে একটা হাসি দিলো
- স্যার, আপনার জন্যই তৈরী করা হয়েছে এমন এক পিস প্রোডাক্ট নিয়ে আপনার কাছে এসেছি।
জগতেই সবাই নিজে গুরুত্ব পাওয়া পচ্ছন্দ করে। এমনকি গুরুত্বহীন ব্যক্তিও গুরুত্ব পেলে নড়েচড়ে বসে। জগলুল সাহেব আলাদা কেউ না। সরাসরি প্রোডাক্ট বিক্রে করতে আসা মানুষজন দেখলে বিরক্ত হওয়া স্বাভাবিক। তিনি তা হলেন না। একবার এপয়েন্টমেন্ট নিয়ে এক ভদ্রলোক এসেছিলেন। আসার পর দেখা গেলো কোট, টাই পড়া ভদ্রলোক এসেছেন এনসাইক্লোপিডিয়ার বই সাথে অক্সফোর্ড ডিকশেনারী ফ্রী এই অফার নিয়ে। জগলুল সাহেব ভদ্রলোককে বল্লেন, কেন আমি এই বইগুলা কিনবো তার উপর একটা রচনা লিখে রেখে যান, আমি পরে বিষয়টা দেখতেছি।
জগলুল সাহেব ভ্রু কুঁচকে জাজ্ঞাসা করলেন
- আমার জন্য তৈরী করা? আমার সম্পর্কে আপনি কতটুকু জানেন?
- স্যার আপনি ন্যাশনাল ফিগার। আপনার সম্পর্ক মিডিয়ায় যতটুকু আসে অতটুকু স্যার জানি।
- যেমন?
- স্যার আপনার এলার্জি রিলেটেড প্রোবলেম হচ্ছে কিছুদিন ধরে। কিছুদিন আগে আপনি সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলবার্নিয়া হাসপাতল থেকে এই বিষয়ে চিকিৎসাও নিয়ে এসেছেন।
এবার জগলুল সাহেব একটু চমকালেন। ছোকড়ার বয়স কত হবে, পচিশ? ছেলেটাতো ভালো স্মার্ট!
-স্যার ঢাকা শহরে আমরা যে শ্বাস নিচ্ছি কী নিচ্ছি একটু দেখবেন? আমি সাথে করে শুধু একটা টর্চ লাইট এনেছি দেখানোর জন্য।
- দেখান
রিমন পকেট থেকে একটা ছোট্ট টর্চ লাইন বের করলো। লাইট টা ছাদের দিকে তাক করে জ্বেলে রেখে দিলো জগলুল সাহেবের টেবিলের উপর। লাইটের বীম ধরে একটা ধূলার আনাগোনা দেখা যাচ্ছে। জগলুল সাহেব নিজেও একটু চমকালেন। এত ধূলা তার রুমে ঘুরে বেড়াচ্ছে! আর এই ধূলার ঘূর্ণির মাঝে তিনি বসে আছেন? যেখানে ধূলা তার সাক্ষাৎ শত্রু!
জগলুল সাহেব লেট মেরিজ করেছেন। তার ছেলেটার বয়স এখন মাত্র ছয় বছর। তিনি প্রায়ই ভাবেন, তার কিছু একটা হয়ে গেলে ছেলেটার কী হবে? তিনি এখন যে কোন মূল্যে সুস্থভাবে কিছু দিন বাঁচতে চান। টাকা পয়সার সাথে অনেক কু-স্বভাব আসে। ছেলের জন্মের পর তার সব কু-স্বভাব তিনি ত্যাগ করেছেন। খুব আগ্রহ নিয়ে তিনি রিমনের দিকে তাকিয়ে আছেন। মাঝে কিছুক্ষণ যে তিনি অভিনয় করেছিলেন দ্বিতীয়বার সাক্ষাতের শুরু থেকে তা তিনি ভুলে গেলেন। একেবারে সাধারণ মানুষের মত সহজ করে তিনি রিমনের হাত চেপে ধরলেন।
-রিমন, আমি এতটা অসুস্থ না যে এখনই মরে যাচ্ছি। কিন্তু সুস্থভাবে আমি আরো কিছু দিন বাঁচতে চাই। যতটা সম্ভব সুস্থ থেকে। আমার ছেলেটাকে জগৎ সংসারের হাল ধরতে না শিখিয়ে আমি মরতে চাইনা। তুমি করো, প্রজেক্ট শুরু করো।
রিমনের পিতা আছে। কিন্তু পিতৃস্নেহ যে এতটা গভীর হয়, এতটা গভীর তা কোন দিন ফিল করেনি। অসম্ভব ভালোবাসা নিয়ে সামনেই এই লোকটাকে বাবা বলে ডেকে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছা করছে রিমনের।
২| ০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:২৫
বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: বাহ!
একসময় পানি কিনে খাবে এটা কেউ ধারনাই করতে পারতো না।
পানির ব্যবসা বললে হেসেই খূন হতো, বা পাগল ভাবতো!!
কে জানে সামনে মিনি বোতলে ফ্রেস এয়ার কিনা লাগে নাকি
++++++++
৩| ০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৪ সকাল ১০:৪১
অপূর্ণ রায়হান বলেছেন: ভালো গল্প +
চীনে একজন কিন্তু এভাবে ক্যানে করে বাতাস বিক্রি করে এই বিষয়ে প্রথম রীতিমত সাড়া তোলেন । ওনার নাম মনে নেই । তবে উনি আগে থেকেই একজন সফল ব্যাবসায়ি ছিলেন ।
ভালো থাকবেন ।।
৪| ০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১:২১
কাল্পনিক_ভালোবাসা বলেছেন: পুরো লেখাটা ভালোই লাগছিল। প্রাঞ্জল লেখা। তবে এন্ডিংটা পছন্দ হয় নি। বলতে পারেন, আমি কিছুটা অন্যরকম এন্ডিং আশা করেছিলাম।
৫| ০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১:৩১
হাসান মাহবুব বলেছেন: ভালো লাগলো লেখার গতি, কিন্তু ধুম করে শেষ হয়ে গেলো।
৬| ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১২:৫৭
কলমের কালি শেষ বলেছেন: গল্প বেশ ভালো লাগলো ।
©somewhere in net ltd.
১|
০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৫:৫৮
ঢাকাবাসী বলেছেন: খুব ভাল লাগল।