নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সুখীমানুষ

সুখী মানুষ

সত্যিকারের সুখীমানুষের সাথে আমার একটাই পার্থক্য, সুখীমানুষের গায়ের জামা ছিলো না, আমার আছে।

সুখী মানুষ › বিস্তারিত পোস্টঃ

এই ভালোবাসাগুলোই আমি গুনি...

১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১০:৫৯

ইংরেজীতে একটা কথা আছে, শো মাস্ট গো অন...।
অর্থাৎ যাই ঘটুক কাজ থেমে থাকবে না। এখন আমি যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি তা হলো, লাইফ মাস্ট গো অন...। মা নেই আজ ১৪ দিন হলো। ব্যক্তিগত ভাবে এখনো কিছুই করতে পারছিনা, শুধু মা'র মুখ মনে পড়ে। কিন্তু অফিস করছি, সংসার করছি। ব্যক্তি আমার শোক যেন অফিসে বা পরিবারে না পড়ে তার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

যাইহোক, বাসায় বাজার সদাই নাই। গিন্নি বলে দিলো
-বাজার আব্দুল্লাহপুর থেকে আনবা। আর দরদাম কইরা আনবা। শব্জিবাজার একদামে কিনার জায়গা না।
কিন্তু ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের সাথে দরদাম করতে আমার মায়া লাগে। কয় টাকাই বা পূজি, কয় টাকাইবা লাভ করবে?

টুকটাক বাজার করলাম। এক চাচার কাছ থেকে গাজর, মুলা নিলাম। চল্লিশ টাকা দাম হলো। পঞ্চাশ টাকার একটা নোট দিয়ে বল্লাম
- চাচা পেঁয়াজের এই ডান্ডাগুলা কত করে?
- ২০ টেহা কইরা বেচ্চি চাচা, এহন ১৫ টেহা দিয়া নিবার পারবাইন যে..
ভাবলাম গিন্নির কথাটাও রাখি, টাকাটারও একটা রাউন্ড ফিগার করি।
- চাচা ১০ টাকা রাখেন। সমান সমান ৫০ হয় তাইলে।
চাচা মুখে বল্লেন, নাহ চাচা এত লাভ নাই। কিন্তু গাজর, মুলার সাথে একটা পেঁয়াজের শ্বাস এর আঁটিও প‌্যাক করে দিলেন। বিড়বিড় করে বল্রেন
- চাচা এতগুলা জিনিস নিয়া একটা আবদার করছুইন। মানুষতো চাচা মানুষের লাইগ্গাই, কী কন?

চট করে মনে হলো পকেট থেকে দশটা টাকা বের করে বলি, চাচা চা খাইয়েন। কিন্তু হঠাৎ করেই মনে হলো, ভুপেন হাজারিকার মানুষ মানুষের জন্য গান তিনি শুনেননি। তিনি হৃদয় দিয়ে অনুভব করেছেন, মানুষ মানুষের জন্য। এই অনুভূতিকে আমি অপমান করতে পারি না। আমার কাছে পাঁচ, পঞ্চাশ, পাঁচশো কোন বিষয় না। কিন্তু পাঁচ টাকা ছাড় দিয়ে তিনি যে মানুষ হতে চাচ্ছেন আমাকে মানুষ ভেবে তাকে অপমান আমি করতে পারি না। শব্জিগুলো হাতে নিয়ে প্রাণ খুলে একটা হাসি দিয়ে বল্লাম
- চাচা আপনার মেহেরবানী।
চাচা তার মেহেরবানীর জন্য "ব্যাপার না" ভঙ্গিতে কিছুটা গর্বিত হাসি দিলেন। মুখে কয়েকটা দাত এখনো অবশিষ্ট আছে, প্রত্যেকটা দাঁতকেই তখন মনে হলো এই বড় মনের মানুষটার সাথে তারা গর্ব করে দাঁড়িয়ে আছে।
-০-
বাসায় ফিরলাম একগাদা বাজার নিয়ে।
সারা দিন অফিস করে পুরুষ মানুষ ক্লান্ত হয়ে বাসায় ফিরে। অপরপক্ষে বাসার মানুষগুলোও সারাদিন অপেক্ষার পর মানুষটাকে কাছে পায়। তাদের তখন সারাদিনের অপেক্ষার পর টুকটাক দাবিগুলো মিটানোর পালা। বাসায় ঢুকার সাথে সাথেই প্রিয় ঈ..ঈ... শুরু করলো। তারমানে তাকে কোলে নাও। কাঁধের ব্যাগ রাখারও সময় পেলাম না। দড়জায় দাড়িয়েই ব্যাগটা ভাগ্নিকে দিয়ে বল্লাম, রাখ্। প্রিয়কে কোলে নিয়ে তার মাকে সহ বের হলাম হাটতে।

পার্কে, রাস্তায় প্রায় আধা ঘন্টা হাটলাম। আমার সাড়ে আটমাসের পুত্র যা দেখে তাতেই মুগ্ধ। গাড়ি দেখে, চট করে ঘাড়টা ঘুরিয়ে গাড়ি যতক্ষণ দেখা যায় অতক্ষণ তাকিয়ে থাকে। উপরে লাইট দেখে, মাথা ঘুড়িয়ে উপরের দিকে হা করে লাইট দেখে। আবার ঈ ঈ করে। এই ঈ আর আগের ঈ এর মধ্যে একটা পার্থক্য আছে। আগের ঈ হলো আমাকে কোলে নাও। এবারের ঈ হলো, আব্বু তুমিও দেখো কী সুন্দর! এই পার্থক্যটা কেবল বাবা মা ই ধরতে পারেন। অথবা যিনি শিশুটির সাথে সবসময় সময় দেন।

খুধা লেগেছে। বউওতো অনেকদিন ধরেই সংসার করছেন। মুখে না বুঝালেও অন্তরদিয়ে তিনি আমাকে বুঝেন। বারবার বলছেন, এইটা খাও, ওইটা খাও। পরে ভাবলাম পিঠা খাই। এগারো নাম্বার সেক্টরের তিন নাম্বার রোডের মাথায় একজন খালা পিঠা বানান। আগেও দুই দিন পিঠা নিয়েছি। বল্লাম
-খালা পিঠা দেন, খাই।
এই কথাগুলো আমি একটু আন্তরিকতার সাথে বলার চেষ্টা করি। এমন ভাবে বলি যেন এখানে টাকা পয়সার কোন বিষয় নাই। তিনি আমার খালা, তাকে বলতেছি খালা পিঠা দেন, খাই।

খুব মায়া মায়া একটা হাসি দিলেন তিনি পান খাওয়া মুখে। আমি জানি তিনি তখন মনে মনে ভাবছেন, পিঠাটা যেন সুন্দর হয়। একটু আগে বা একটু পরে উঠালে হবে না। সবচেয়ে সুন্দর পিঠাটা দিতে হবে ব্যাচারাকে। তিনি একটা পিঠা দিলেন। বল্লাম
- খালা ঐ দিন আপনার পিঠার সাথের ভর্তা দিয়া বাসায় ভাতও খাইছি। অনেক মজা হয় আপনার ভর্তাটা।
পাশেই বসা ছিলেন এই ভর্তার রেসিপি যিনি দিয়েছেন তিনি। খালার স্বামী। তিনি গর্বিত হাসি দিয়ে বল্লেন
- স্যার আমি সিমের বিচিগুলা নিজে কিনি। বাইচ্ছা বাইচ্ছা সব কিনি।
খালা বল্লেন
- আমি নিজের হাতে যত্ন নিয়া বানাই।


একটা সুন্দর ছোট্ট পলিথিনে করে অনেকটা ভর্তা আমার জন্যই যে প‌্যাক করা হচ্ছে তা বুঝতে বাকী রইলো না। একটা অপরাধবোধ কাজ করছে। কেবল মনে হচ্ছে মাত্রতো পিঠা বিক্রি শুরু হয়েছে। এতটা ভর্তা যে দিয়ে দিচ্ছে, যদি পরে ভর্তার অভাবে কাষ্টমার পিঠা না খেয়ে ফেরত যায়!

কৃতজ্ঞতাবোধ থেকেই টুকটাক কথা বল্লাম
- খালা আপনার ছেলেটা কই? এরে যে দেখতেছিনা?
হাসি দিয়ে বল্লেন
-ও তো মাদ্রাসায় থাকে। আইজ চইলা গেছে।

একটা পিঠা খেয়ে পাঁচ টাকা দেওয়ার কথা। দশ টাকা দিয়ে ভর্তা নিয়ে হাটা দিলাম। পিছনদিক থেকে খালু দৌড়ায়ে আসলেন
- স্যার স্যার আপনারে আমি খুশি হইয়া ভর্তা দিসি, এই টাকা আমি নিতাম না।
এই খুশিকেও অশ্রদ্ধা করতে পারলাম না। বাকী পাঁচটা টাকা ফেরত নিলাম।
-০-
আজ পাঁচ পাঁচ দশটাকার বন্ধনে আমি আটকা পড়লাম। ইংরেজীতে বলতে গেলে বলতে হয় আই কাউন্ট দিজ বন্ডিং। এই ভালোবাসাগুলোই আমি গুনি...।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৪:৪৯

আহলান বলেছেন: সুন্দর লিখেছেন ...
জীবনের এই ছোট ছোট নুড়ি পাথরের মতো ঘটনা গুলো থেকেও অনেক কিছু শেখার ও বোঝার আছে .... আফসোস লাগে এমন বহমান জীবন ইতিহাসে কোন মন্তব্য কেন থাকে না ...আমরা কি এই সমাজের মানুষ নই? আমরা কি শুধুই বিশেষ কোন বিষয়ের প্রত্যাশী ?

১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৫ সকাল ৯:৫৫

সুখী মানুষ বলেছেন: আশপাশের সবকিছুকে সুন্দর নজরে দেখে নিজে আমি সুখী।
আমার সুখের ছোটছোট ঘটনাগুলো ভালো লেগেছে জেনে মনে হচ্ছে, আসলে আমরা সবাই সুখী; শুধু কতটা সুখী তা ভাবি না। ধন্যবাদ ভাই।

২| ১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ১২:২৩

নূসরাত তানজীন লুবনা বলেছেন:
আজ পাঁচ পাঁচ দশটাকার বন্ধনে আমি আটকা পড়লাম। ইংরেজীতে বলতে গেলে বলতে হয় আই কাউন্ট দিজ বন্ডিং। এই ভালোবাসাগুলোই আমি গুনি...
খুব ভালো লাগলো

১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৫ সকাল ৯:৫৩

সুখী মানুষ বলেছেন: গিন্নিকে আপনার মন্তব্যটা আজ বাসায় গিয়ে দেখাবো। তিনি আমাকে বকেন, আমি কী সব ফালতু জিনিস লেখি। আমার পক্ষে দাঁড়াবার জন্য ধন্যবাদ আপুনি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.