নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সুখীমানুষ

সুখী মানুষ

সত্যিকারের সুখীমানুষের সাথে আমার একটাই পার্থক্য, সুখীমানুষের গায়ের জামা ছিলো না, আমার আছে।

সুখী মানুষ › বিস্তারিত পোস্টঃ

মা রে... ও মা।

২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১১:১২

গত দিন বিকাল ৪:৩৩ মিনিটে একটা কল আসলো মোবাইলে।
আমার মা ফোন দিয়েছে! মা'র ছবি ভাসছে মোবাইলে।
আমি কি ফোনটা ধরবো না ধরবো না, আমার মাথা কিছুই কাজ করছে না। আমি সারা জীবন মা'র ফোন কেটে ব্যাক করেছি। অভ্যাসবসতঃ তাই করলাম। আমার হাত পা কাঁপছে। মা মারা গেলেন চব্বিশ দিন আগে, মা কিভাবে ফোন করবেন? পরে দেখি আব্বা কল করেছেন মা'র ফোন দিয়ে। ঠিক তখন থেকে আমার কেমন জানি হ্যালুসিনেশন হচ্ছে। এর উপর ছোট দুলাভাই গতদিন ফোন দিয়ে বল্লেন, একটু সাবধানে থাইকো, চল্লিশ দিন কিন্তু আত্মা ছেলেমেয়েদের সাথে ঘুরে বেড়ায়। মা'কে ঠিক পাশেই যেন দেখতে পাচ্ছি। এস এস সি পরীক্ষার আগে যেমন মা পাশে বসে থাকতেন দুধের গ্লাস হাতে নিয়ে ঠিক তেমন একটা ফিলিংস।

এস এস সির কথা বলার পর একটা স্মৃতি মনে আসলো -
এস এস সিতে ষ্টার মার্কস পাইলাম।
মা জিজ্ঞাসা করলো, বাবু তুমি কী নিবা?
আমি আমার মায়ের সম্বল জানি। আর আব্বার কাছ থেকে কোনদিন কিছু চেয়ে আমাদের অভ্যাস নাই। কারন মাসের বেতন পেয়ে বাড়ী আসতে আসতই আমার স্কুল শিক্ষক বাবা'র বেতনের টাকা শেষ হয়ে যায়।

বাটা'র পাউয়ার কেডস তখন আমার কাছে স্বপ্নের মত একটা বিষয়। বয়সটা তখন এমন যে, মায়ের সাধ্যের বিষয়টা তখন বুঝি আবার নিজের সখ চাপাও দিতে পারছি না। সাহস করে বলে ফেল্লাম, মা এক জোড়া পাউয়ার কেডস কিন্না দেও।

বাড়ীতে আমার মায়ের গেরিলা বাহিনী ছিলো। এদের বয়স পাঁচ থেকে দশ বছরের মধ্যে। এলাকায় আইসক্রিক ওয়ালা বাক্সে বারি দিয়ে অ্যা...ই আ..ই..স...ক্রি...ম বলে হাক দেওযা মানেই হলো - এই গেরিলা বাহিনী এখন মা'র আঁচলের কাছে ঘুরঘুর করবে আর বলবে, জেডি... দাদি...। ব্যাস মা বুঝে যায় এই ডাকের মানে কী।

মা এই গেরিলা বাহিনীকে দিয়ে গাছ থেকে পেয়ারা, কামরাঙ্গা, জাম্বুরা ইত্যাদি যা ছিলো তা বিক্রি করার ব্যবস্থা করলেন। তিন চার দিন পরে বল্লেন, বাবু চলো।

এই প্রথম আমার কুমিল্লা শহরে যাওয়া, মায়ের সাথে। এত গাড়ী, এত রিক্সা, এত এত দোকানপাট! এসএসসি পাস করে ফেলেছি, তবু ভয়ে ভয়ে মা'র হাত ধরে রাখলাম। পাছে হারিয়ে যাই। কুমিল্লার মনোহরপুর একটা বাটা'র শোরুম ছিলো, এখনো আছে কি না জানি না। মা সেখান থেকে পাঁচশো টাকা দিয়ে এক জোড়া বাটা'র পাওয়ার কেডস জুতা কিনে দিলেন।

যে মা আমাকে দুনিয়ায় আনলেন, আমাকে শহর চেনালেন। সেই মাকেই আমি শহরে এনে আমার কাছে রাখতে পারি নাই। যে কয়বারই তিনি ঢাকায় এসেছেন, এসেই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। হাসপাতাল থেকে সরাসরি বাড়ী চলে গেছেন। মা অসুস্থ হয়ে কাউকেউ বিরক্ত করতে চাননি। খুব নিরবেই চলে গেলেন, কাউকে বিরক্ত না করেই।
-০-
যাদের মা আছেন তাঁরা কি আমার এই মা হারানোর ব্যাথাটা বুঝবেন? তারা কি মায়ের পা দুইটা ধরে আজ একটু বসে থাকবেন? মা হয়ত বলবেন, কী পাগলামী শুরু করলি! এর পরেও মা একটু খুশি হবেন, আর সন্তানের এইটাই জীবনের শ্রেষ্ট পূঁজি। মা রে... ও মা

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১১:৩১

চিরনতুন বলেছেন: চোখে পানি চলে আসলো...মায়ের জন্য আমার এই আকুতি নেই ভেবে আরো কষ্ট হলো...আল্লাহ আপনার মাকে বেহেস্ত নসিব করুন!

২| ২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১১:৩১

আহলান বলেছেন: কঠিন বাস্তবতা .... দুনিয়ার নিয়ম এমনই, না? আর কোন অপশন নাই? :(

৩| ২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ২:২২

হাসান মাহমুদ ১২৩৪ বলেছেন: :'( :'(

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.