নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সুখীমানুষ

সুখী মানুষ

সত্যিকারের সুখীমানুষের সাথে আমার একটাই পার্থক্য, সুখীমানুষের গায়ের জামা ছিলো না, আমার আছে।

সুখী মানুষ › বিস্তারিত পোস্টঃ

সেন্টমার্টিনের সেই ছো্ট্ট পালোয়ান

২৬ শে জানুয়ারি, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৩৩

একেবারে তুচ্ছ একটা ঘটনা।

সেন্টমার্টিন যাচ্ছি। টেকনাফে ওয়েটিং রুমে বসে আছি। জাহাজ আসার কয়েক মিনিট আগে হঠাৎ করে দেখলাম একদল ছোটছোট ছেলেপেলে এসে হাজির। যে যার মত ছোটাছুটি করে লাগেজ মাথায় তুলে নিচ্ছে। আমাদের সামনে এসে একান্তই ছোট একটা ছেলে দাঁড়িয়ে বল্লো

- স্যার ব্যাগ নিয়া দেই?

আমি তো অবাক! বল্লাম

- ব্যাগ নিয়া দেই কি রে ব্যাট? তোরেইতো কোলে করে নেওয়ার বয়স।

ছেলেটা ফিক করে হেঁসে দিলো। সঙ্গে সঙ্গেই লাগেজটা হুই করে মাথায় তুলে নিলো। কথায় না, কাজে সে বুঝিয়ে দিলো।



২০১২ সালের ঘটনা। আমরা তখন দুই টুনাটুনি। লাগেজ বড় কিছু না। নিজেই তো ঢাকা থেকে আনলাম। জাহাজেও নিতে পারতাম। ছেলেটার জন্য মায়া লাগছে। জাহাজে পৌছে পকেট থেকে একশো টাকার একটা নোট দিতে চাইলাম, নিলো না। বল্লো

- স্যার আমি তো ব্যাগ নামাইয়াও দিমু। তখন দিয়েন।



দূর থেকে সেন্টমার্টিন দেখা যাচ্ছে। এই জিনিস দেখার জন্য গিন্নি এত এত প্ল্যান-প্র্রোগ্রাম করে এসেছে। যখন তীরের কাছাকাছি তখন দেখি ভীড়ভার ঠেলে আমাদের সেই পালোয়ান এসে হাজির। যেন বহু দিনের বহু কাছের পরিচিত মানুষ এমন একটা ভঙ্গিতে লাগেজ মাথায় করে নেমে গেলো।



ছেলেটা এতই ছোট যে আমি আর পারলাম না। জাহাজ থেকে নেমে সে হোটেল পর্যন্ত যেতে চাইলো। কিন্তু আমি লাগেজ নিয়ে নিলাম। বল্লাম

- ব্যাটা বহুত হইসে, আর না, দে।

টাকা দিলাম। কত দিয়েছিলাম তা মনে নাই, তবে বেশীই দিয়েছিলাম। ছেলেটা খুব সুন্দর একটা হাসি দিলো। এই হাসির মূল্যের চেয়ে কমই দিয়েছিলাম হয়ত। যাই হোক, জানতে চাইলো

- স্যার কবে যাইবেন?

- ঠিক নাইরে ব্যাটা, দেখি কয়দিন ভালো লাগে।



এত কথা বলার ফাঁকে যে কথাটা বলা হয় নাই তা হলো, গিন্নি জাহাজে উঠার পরই দেখা গেলো, তার সি সিকনেস আছে। প্রচন্ড ভয়ে সে অস্থির। ভয় পাওয়ার সময়কার তার কিছু ছবি আছ। ছবিগুলো সংসারের শান্তির কথা মাথায় রেখে দেওয়া গেলো না। তিনি হোটেলে উঠার পর পরই বল্লেন, তিনি ঢাকা ফেরত যাবেন! এতক্ষণে জাহাজ ফেরত চলে গেছে। এখন ফিরতে হলে ফিরতে হবে ট্রলারে। যিনি জাহাজে ভয় পেয়ে অস্থির তিনি ট্রলারে কিভাবে যাবেন? সিদ্ধান্ত হলো, পরের দিনই আমরা ব্যাক করবো।



লাগেজ নিয়ে সাগরের কাছাকাছি এসেছি মাত্র। দুর থেকে দেখি আমাদের সেই ক্ষুদে পালোয়ান দৌড়ো আসছে। মুখে তার মহা আনন্দের হাসি। বউরে বল্লাম

- বউ ছেলেটা আমাদেরকে পছন্দ করছে।

বউ চোখ খোঁচ করে আমার দিকে তাকালেন। যার অর্থ হচ্ছে - তুমিতো মনে করো সবাই তোমারে পছন্দ করে। এইটা তোমার মূদ্রা দোষ।



আমাকে কোন কিছু বলার সুযোগ দিলো না। সে নিজের মত করে লাগেজ নিয়ে চলে গেলো। কোন এক কারনে এদিন যাত্রী অনেক বেশি ছিলো। জাহাজে উঠে ছেলেটারে দুইশো টাকা দিয়ে বল্লাম

- ব্যাটা আজকের পেমেন্টটা এডভান্স রাখ

- নাহ স্যার...

খুব মায়া নিয়ে তারে বুঝায়ে বল্লাম

- শোন ব্যাটা, আজ মানুষ অনেক বেশী। নামার সময় হুরাহুরিতে আমাদেরকে যদি খোঁজে না পাস!

- কি কন স্যার, পামু

- আইচ্ছা হইলো, পাইলেতো পাইলিই, না পাইলেও সমস্যা নাই।



আমি জানি গিন্নি এই এডভান্স পেমেন্টের আইডিয়াটা পছন্দ করেছেন। কিন্তু স্বভাবতো চাপের মধ্যে রাখা! তাই আবারো ভ্রু কুঁচকে (এইটা নকল কুঁচকানো) তিনি বল্লেন

- এই পোলা আর ফেরত আসবো? এই হইসে তোমার বুদ্ধি!

আমি জানি তিনিও মনে মনে চাচ্ছেন ছেলেটা ফেরত না আসুক। সে অন্য কোন একজনের লাগেজ মাথায় তুলে বলুক

- স্যার ব্যাগটা নামায়া দেই?

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৬ শে জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ৮:০৭

হাসান মাহবুব বলেছেন: ভালা পুলা।

২| ২৬ শে জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ১১:২৪

হাসান মাহমুদ ১২৩৪ বলেছেন: আমি হলে আর ফিরে আসতাম না ;) ;) ;) ;) ;) ;) ;)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.