নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সুখীমানুষ

সুখী মানুষ

সত্যিকারের সুখীমানুষের সাথে আমার একটাই পার্থক্য, সুখীমানুষের গায়ের জামা ছিলো না, আমার আছে।

সুখী মানুষ › বিস্তারিত পোস্টঃ

#আমার_দেখা_রাতগুলি - ০৪

১২ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১:২৫

ঘন অন্ধকার। গভীর রাতে রাস্তায় হাটছি আর ভাবছি, চোখ বন্ধ করে কি হাটা যায়? নাহ, এক পা আগানোর পর আর পা চলে না। অথচ এই অন্ধকারে কিছু দেখা না গেলেও চোখ খোলা রেখে আমি সুন্দর পথ চলছি। রাতের এই ঘুরাঘুরির নেশা আমাকে ভালোই ধরেছে। নিজেকে কেমন যেন রাজা, রাজা মনে হয়। সবাই ঘুমায়, আর আমি পথে পথে ঘুরে বেড়াই, যেদিক খুশি। কত কবরস্থান, কত শ্মশানঘাট ঘুরে দেখলাম। চাঁদের আলোর মায়া আর অন্ধকারের নেশা ছাড়া আর কিছুই নজরে পড়লো না। যাচ্ছি আজ সদর আলী মসজিদের দিকে। বহু বছর আগে পাওয়া ভয় গেঁথে আছে মনে। আজ আমাকে দেখতেই হবে, কেন পেয়েছিলাম এত ভয়। কী আছে এত ভয়ের সেখানে? একটু দূরেই চাপা কান্নার শব্দ ভেসে আসলো।

রাতে পথে পথে ঘুরছি প্রায় মাস ছয়েক হয়ে গেলো। রাতের ঘটনাগুলা আমার কাছে খুবই যৌক্তিক। গ্রামের বাড়ী সব চেয়ে ভয়ের যে ঘটনা ঘটে তা হইলো, বাঁশ ঝাড়ের বাঁশ এদিক সেদিক দোলে উঠা। আমি খুব কাছ থেকে দেখেছি। হয় বাতাসের ঘূর্ণি না হয় বাঁদর বা কাঠবিড়ালীর ছোটাছোটি। কোন কিছুতেই আমার ভয় লাগে না। কান্নার চাপা স্বরেও আমার ভয় হইলো না। আমার একটা বারও মনে হয় নাই, কোন জিন-পেত্নির কান্না আমি শুনছি। সামনে এগিয়ে গেলাম। হরমুজ দাদীর কান্না, মন্তু দাদার বউ। গ্রামের সবাই কোন না কোন ভাবে আত্মীয় হয়। মন্তু দাদাও তাই (২৬/৮/২০১৫ এ মন্তু দাদা মারা গেছেন)। আমাকে খুব আদর করতেন। বলতেন
- নাতি মোটা মাইয়া বিয়া করবি।
আমি অবাক হয়ে বলতাম
- কেন, মোটা কেন?
মন্তু দাদা অভিনয় করে দেখায়ে বলতেন
- এমন কইরা যখন ধরবি, তখন মনে হইবো তুই কাউরে ধরছোস।
আর একট কথা প্রায়ই বলতেন। কথাটা বলার আগে একটু মুচকি হাসি দিয়ে ভ্রু গুলা নাচাইতেন। এরপর দুষ্ট হাসি দিয়ে বলতেন
- ছোটখাটো অজুহাতে বউরে সব সময় মাইরের উপর রাখবি। আর না হয় মাইয়া মানুষ সোজা থাকে না।

আজ মনে হয় মাইয়া মানুষ সোজা রাখার কোন ঘটনা ঘটেছে। অথচ এই হরমুজকে তিনি প্রেম করে বিয়ে করেছিলেন। বাড়ী থেকে উঠিয়ে নিয়ে ছিলেন পিঠে করে। মাইল দশেক পথ পিঠে করে নিয়ে তবেই নিজের বাড়ী তুলেছিলেন। মনটা খারাপ হয়ে গেলো। মন্তু দাদাকে বেশ কয়েক দিনে বলেছি
- মন্তু ভাই, কারো উপর হাত তোলার অধিকার কিন্তু আপনার নাই। বউ হোক, সন্তান হোক আর অন্য কেউই হোক।
মন্তু ভাই হাসি দিয়া উড়ায়ে দিয়া বলতো
- রাখ নাতি, তর ভাবের কথা দিয়া দুনিয়া চলতো না।

সামনে আগাচ্ছি। সামনে প্রাইমারী স্কুল। স্কুল পার হয়ে আরেকটু সামনে গেলেই সদর আলী মসজিদের রাস্তা। স্কুল ঘরের কোনায় দেখি জ্বলজ্বল করা দুইটা চোখ। এই চোখের সাথে আমি পরিচিত। এলাকার লালী কুত্তা। সে বাচ্চা দিয়েছে আজ কয়েকদিন হইলো। প্রথম দিন যেদিন বাচ্চা দিলো, আমি গুনে দেখলাম চারটা বাচ্চা। মনেমনে বল্লাম, আহারে কেন জোড় বাচ্চা হইলো! কে জানি বলেছিলো, কুকুর, বেড়াল, বাঘ এরা জোড় বাচ্চা রাখে না। বাচ্চাদের বাবাটা এসে যে কোন একটাকে মেরে খেয়ে ফেলে। কথাটা আমার বিশ্বাস হয় নাই। একটা বাবা কিভাবে পারে তার সন্তানকে খেয়ে ফেলতে! কয়েকদিন পরেই দেখি কুকুরের বাচ্চা তিনটা। সেদিনের পর থেকে যখনই কুকুরের বাচ্চাগুলা দেখি, আমার মন খারাপ হয়। আহারে জোড় ভাঙ্গার নিয়মের কাছে কি পিতৃস্নেহের পরাজয় হয় পশুকূলে! কুকুরটার কাছে গিয়ে কিছুক্ষণ দাঁড়াইলাম। ওওও করে কুকুরটা কতক্ষণ কাঁদলো। কষ্ট পাওয়া মানুষকে বুকে জড়িয়ে ধরলে যেমন ফুপায়ে ফুপায়ে কেঁদে উঠে। কুকুরটাও তেমনি আউওও.. করে গলা ফাটায়ে কান্না শুরু করলো। আহারে আমরা কবে পশু পাখীর ভাষা বুঝবো? সেদিনওকি মানুষজন পশু জবাই করে খাবে! পারবে খেতে?

আজ মন খারাপের উপর আবারো মন খারাপ হইলো। অন্ধকার রাতে আমি সন্তান হারা এই কুকুরটার কষ্টও টের পাচ্ছি। কষ্টের সম্মোহনী ক্ষমতা অনেক বেশী। মনে কেমন যেন ঘোরের মত তৈরী হয়। আমি এই ঘোর লাগা মনে ধীরে ধীরে হেটে যাচ্ছি সদরআলী মসজিদের দিকে। বাসা থেকে যখন বের হই তখন ভেবেছিলাম, দেখা হে পেহলি বার গান গেয়ে আজও সেই পথে যাবো। দেখবো মসজিদের ভিতর থেকে তেমন করে ধমকের শব্দ ভেসে আসে কি না। কিন্তু গান গাওয়ার মত কোন পরিস্থিতি মনের আর নাই। গ্রামে অনেক কথা প্রচলিত আছে, রাতের বেলা মসজিদে নাকি জিনরা ঘুমায়। এবং তাহাজ্জতের নামাজের সময় এক সাথে নামাজও পড়ে।

আমি গ্রামের সবচাইতে সহজ, সরল ছেলে। আমি কারো সাথেই তেমন মিশি না। আমার তেমন কোন বন্ধু নাই। বন্ধু বলতে বুক সেল্ফ ভর্তি বইগুলাই আছে। আর মসজিদে যদি ভূতই থাকে। তাহলে সেই ভূতগুলা নিশ্চয়ই নামাজী ভূত। নামাজী ভূততো খারাপ হওয়ার কথা না। আমার মত নিরীহ মানুষকে কেন ভয় দেখাতে যাবে?

আমার নানী খুব নামাজী ছিলেন। তিনি প্রতিদিন আট থেকে দশ রকম নামাজ পড়তেন। নানুকে নিয়ে কতগুলা যুক্তি আমার কখনোই মিলতো না, আজও মিলে না। নানু প্রায়ই বলতেন, তাহাজ্জুতের নামাজের জন্য তিনি অজু করে পুকুর থেকে ফিরছেন। আর তার সামনে দাঁড়ায়ে আছে ইয়া বড় এত জিন। আকাশের মধ্যে মাথা। দুই পা যেন বিশাল দুই নারিকেল গাছ। সেই নারিকেল গাছের মত পায়ে সাদা কাপড় জড়ানো। জিনটা নানিকে নাকি বলতো
- যা, আমার পায়ের নীচে দিয়া যা।
নানু প্রায়ই বলতেন
- বুচ্ছস, যদি খালি পায়ের নীচ দিয়া যাইতাম, তাইলেই দুই পা চিপাইয়া আমারে ধরতো।
নানু আমাকে দুই চউক্ষে দেখতে পারতো না। কারন আমি যুক্তি দিয়া বলতাম
- নানু জিনতো নাকি আগুনের তৈরী। একদিন দুই পায়ের নীচ দিয়া গিয়া দেইখো তো। একটু আগুনের সেকা'র মত হয়ত লাগবো। চাপতো খাইবা না।

নানু খুব পরহেজগার মহিলা ছিলেন। কিন্তু জিন, ভূত কখনোই উনার পিছ ছাড়ে নাই। সে বহু বছর আগে কথা। এখন নানু নাই। থাকলে হয়ত বলতাম
- বুড়ী তোমার আর কী কী হেলুসিনেশন হয় বলো।

আমি সদর আলী মসজিদের সামনে দাঁড়ায়ে আছি। বাম পাশে খোয়াজের দীঘি। যে দীঘিতে এই মসজিদের মোয়াজ্জিন আলেক ক্কারীর ছেলেকে জিনে মেরে রেখে দিয়েছিলো পানিন নীচে ধ্যানের ষ্টাইলে বসিয়ে।

খুব অবাক হয়ে খেয়াল করলাম দীঘির ঝোপের কাছে জোনাকী জ্বলছে। ছোট বেলায় জোনাকী পোকার আলোজ্বলা অংশটা চিমটি দিয়ে কেটে ফেলতাম। তারপরেও জ্বলতো। আহারে কী নিষ্ঠুরের মত কাজ করতাম! তখনো কি ভেবে দখার জ্ঞান ছিলো যে এত সুন্দর একটা প্রাণীকে আমি বিনা করনে মেরে ফেলছি? দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভাবছি, মানুষ জ্ঞনের অভাবেই খারাপ কাজ করে। খারাপ কাজের নিষ্ঠূরতা যার যত বেশী, সে তত বেশী কম জানে। তাই সে পারে অমন করতে। আমি খোলা মনে গান ধরলাম
- আঁধার আমার ভালো লাগে / তারা দিয়ে সাজিওনা আমার আকাশ...

এখন আমি জানি, আমার গানের কণ্ঠ খুবই বাজে। তাই আর গাই না। কিন্তু তখন মনের আনন্দেই গান গাইতাম। ঐরকম বন্ধু কেউ ছিলো না যে সত্য কথাটা বলে দিবে যে, দোস্ত তোর গানের গলা নাই, বাদ দে।

জোনাকি পোকার দিকে তাকিয়ে ছিলাম। আমি ভুলেই গিয়েছিলাম, আমি কোথায় আছি, কেন আছি। মসজিদের ভিতর থেকে শব্দ ভেসে আসলো। সেই কাঁপা কাঁপা কণ্ঠের ধমকের শব্দ। এবার খেয়াল করে শুনলাম কী বলে। ভিতর থেকে বলছে
- চউপ, যা, যা দূরে যা।
তারপর দেখি উচ্চস্বরে দোয়াও পড়ছে, লা হাওলা অলা...।

আমি যা বুঝার বুঝে গেলাম। রাত তখন হবে হয়ত দুইটা কি তিনটা। আমি ধীরে ধীরে বাড়ীর দিকে হাটা শুরু করলাম। তখন ছিলো রোজার মাস। মসজিদে মানুষজন এ'তেকাফে বসেছে। ভেতরে যে দুই একজন মানুষই আছেন। তারা উল্টা আমাকে জিন ভেবে বসে আছে। আমি জানি, এই গল্পটাই নানান মুখে নানা রকম হয়ে সকাল বেলা ছড়াবে।

প্রত্যেকটা মানুষই শিল্পী। অন্তত কথা বলার ক্ষেত্রেতো অবশ্যই। একটা কথা শুনে হুবহু মনে রাখতে পারুক আর না পারুক। সাথে নিজের মত করে দুই একটা শব্দ জুড়ে দিয়ে গল্পটা সে ঠিকই শেষ করতে পারে। আর দুই একটা বসানো শব্দেই গল্প তখন অতিগল্পের দিকে মোড় নেয়। আর এই অতিগল্পগুলাই এক সময় ফুলে ফেপে সত্যের চেয়েও বড় দাগ কেটে যায় মন থেকে মনে।

বাড়ীতে ফিরলাম। সবাই এখনো ঘুমে। ভাবলাম কল চেপে হাত, মুখ ধোয়া যাবে না। শব্দ হবে, মা'র ঘুম ভেঙ্গে যাবে। তখনো আমাদের পাকা ঘাটলা হয় নাই। আমি পুকুরের কোনার দিকে হাটা দিলাম। এলাকার সবচাইতে বড় তেতুল গাছ পুকুরের এই কর্ণারটাতে। শুধু তাই না গ্রামের সব একমাত্র শেওড়া গাছটাও তার প্রতিবেশী। দিনে দুপুরে তাই পুকুরের এই কর্ণারটা একেবারে অন্ধকার থাকে। আজ এই অমাবশ্যার রাতে আমি অবাক হয়ে গেলাম। পুকুরের কোনাটা আলোকিত হয়ে আছে। সে আলো আবার বাতাসের মত ঢেউ খেলে যাচ্ছে। আমি ভাবলাম, যাবো পা ধুইতে? নাকি ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়বো?

মন্তব্য ১২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই অক্টোবর, ২০১৫ ভোর ৬:৪০

নাবিক সিনবাদ বলেছেন: ভালো লাগলো, ধন্যবাদ।

২| ১২ ই অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ১০:৩২

ঢাকাবাসী বলেছেন: মোটামুটি লাগল।

৩| ১২ ই অক্টোবর, ২০১৫ দুপুর ১:৫০

রেজওয়ানা আলী তনিমা বলেছেন: আপনার লেখার ভাষা বেশ সাবলীল। শুভেচ্ছা রইলো।

৪| ১২ ই অক্টোবর, ২০১৫ বিকাল ৩:৪৪

শ্যামল সোম বলেছেন: অসম্ভব সুন্দর একটা লেখা পড়লাম ভীষণ ভালো লাগলো।

৫| ১৩ ই অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ১১:২৫

কাবিল বলেছেন: পরের পর্ব কি এ পর্বের শেষ থেকে শুরু হবে?

১৩ ই অক্টোবর, ২০১৫ দুপুর ২:০৪

সুখী মানুষ বলেছেন: গত ৪ পর্বে তো এমনই করে আসছি কাবিল ভাই।
পরের পর্বের আকর্ষণ বাড়াতে কিন্তু আমি এই কাজটা করছি না। করছি শুধু বুঝানোর জন্য যে, পরে আরো ঘটনা আছে। এখনই আমার দেখা রাতের স্মৃতিগুলো শেষ করছি না। অবশ্য পাঠকের সাড়া তেমন পাচ্ছি না :(
আপনারা কয়েকজন কাছের মানুষই কেবল মন্তব্য করছেন।

৬| ২০ শে অক্টোবর, ২০১৫ ভোর ৪:৩২

শ্মশান বাসী বলেছেন: আরে বলেন কি?? সাড়া পাচ্ছেন না মানে??

২০ শে অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ১১:১৯

সুখী মানুষ বলেছেন: আপনি তো থাকেন শ্মশানে, তাই দেখতেছেন না। খেয়াল করে দেখেন, কয় জন পড়ে, আর কয়জন মন্তব্য করে :(

৭| ২১ শে অক্টোবর, ২০১৫ বিকাল ৪:২৭

পাজল্‌ড ডক বলেছেন: আপনি লিখতে থাকুন,ভাল লাগছে :)

২২ শে অক্টোবর, ২০১৫ বিকাল ৩:৪৩

সুখী মানুষ বলেছেন: পরের পর্বেও আপনাকে সাথে পাবো, আশা রাখি... :)

৮| ২২ শে অক্টোবর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:১৪

পাজল্‌ড ডক বলেছেন: ইনশআল্লাহ :)

৯| ২৭ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ৩:২০

শ্মশান বাসী বলেছেন: শ্মশানে কি বলগ দিয়া ইন্টারনেট চালানো যায় না??

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.