নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

হাসছিল সজারু ... ব্যাকরণ মানিনা ... হয়ে গেল হাসজারু ... ক্যামনে তা জানিনা ...

শূণ্য মাত্রিক

বহু নিয়ম মেনেছি। লেখাপড়া করার নিয়ম... মেনেছি, পরীক্ষা দেবার নিয়ম... মেনেছি, চাকরী করবার নিয়ম... মানব। কিন্তু নিয়মটা কে মানা উচিৎ একথাটাও কি মানতে হবে ? 

শূণ্য মাত্রিক › বিস্তারিত পোস্টঃ

অতঃপর ইন্দ্রজিৎ.........

১৬ ই জুলাই, ২০১৫ দুপুর ১:১৩

যুগে যুগে অমল, কমল, বিমলেরা এই পৃথিবীর বুকে এসেছে। আর দশটা গৃহপালিত সমাজ আর সমাজিক নিয়ম গুলার সাথে আপোষ করে দিব্যি জীবনটা কাটিয়ে গেছে। রিক্সার পয়সা বাচাবার চক্করে স্কুল থেকে ফেরার পথে প্রায়শই দাড়িগোফ ওয়ালা বটগাছটার নিচে জিরিয়ে নিয়েছে, কিন্তু বাংলা ২য় পত্র পরীক্ষার খাতায় ‘একটি বটের আত্তকাহিনি’ রচনাটি আসলেও লেখার ফুরসুরৎ পায়নি ঠিক অমলেরা, পাছে মা কিংবা শিক্ষকের জেরার শিকার হতে হয়। এযুগে অধ্যবসায় কিংবা সময়ের মূল্য রচনাগুলাতে বেশি ত্যেনা পেচানো যায়, এবং নম্বরও বেশি…… এটা অমলদের শিক্ষকেরা শিখিয়ে দিয়েছে। আর সেই নিয়ম গুলাকে আষ্টে-পিষ্টে আকড়ে রেখেই অমলেরা ‘অমল’ হয়েছে। “সূর্য পূর্ব দিকে ওঠে”, কিংবা “সততাই সর্বোৎকৃষ্ঠ পন্থা” এই ধ্রুব গুলার সাথেই ওরা আস্তে আস্তে অভ্যস্ত হয়ে গেছে, অতঃপর একসময় ওরা তর্জনী তুলতে ভুলে গেছে , ভুলে যায় কৈফিয়ত চাইতে, প্রশ্ন করতে । তবে এপিঠের ওপারেও একটা ‘ওপিঠ’ বলে কিছু থাকে। সেই অমল, কমল আর বিমলদের যুগ থেকেই ইন্দ্রজিৎ রাও জন্ম নিয়ে আসছে, দেখিয়ে এসছে পৃথিবীকে আর দশটা-পাচটা মধ্যবিত্ত গন্ডির মধ্যে আটকে থেকেও কিভাবে নিজের আদর্শটাকে জিয়িয়ে রাখা যায়। তবে ইন্দ্রজিৎদের চলার পথটা অমলদের মত সহজ ছিল না। আমি ১৯৬৭ দিকে কার কিছু “ইন্দ্রজিৎ” এর কথা বলতে পারব। অমলদের মায়েদের মত ইন্দ্রজিৎ দের মায়েরাও ছেলেকে নিয়ে সপ্ন দেখেছেন, সপ্ন দেখেছেন মধ্যবিত্ত পরিধিটার বাইরে উকি দিয়ে জীবনটাকে একটু বুঝতে, কত দিন হয়ত রাতের খাবার নিয়ে ছেলের জন্য বসে থাকতে থাকতে টেবিলের উপ্রেই ঘুমিয়ে গেছেন। কিন্তু রাতে টয়লেটে টিকটিকি দেখে ভয় পেয়ে চিৎকার করা ছেলেটা যে কবে বিপ্লবী হয়ে গেছেন মা টেরই পাননি। মার্ক্সবাদকে বিশ্বাস করে ইন্দ্রজিৎরা কলেজ বয়কট করেছে, পড়াশুনো বয়কট করেছে, এমনকি ক্যাম্পাসের সবচে মেধাবী ছেলেটার যেন কি মনে করে সেদিন ব্যাগে ও “Text Book Of Electrical Technology” পরিবর্তে “Marxism On Religion “ বইটা ঢুকিয়ে নিয়েছিল । ব্যাস…। তারপর থেকে আর ফেরানো যায়নি আর ওরাও কেন জানি পিছে তাকাবার প্রয়োজন মনে করেনি। তৎকালীন পশ্চিমবংগে চলমান গনতন্ত্রটাকে ওরা নাম দিয়েছিল “আধা-সামন্ততান্ত্রিক আধা ওপনিবেশিক” শাসন ব্যাবস্থা, আর সেই মিথ্যে গনতন্ত্রটাকে বন্ধ করে ওরা সাম্যবাদ প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিল। পাড়ার সবচে লাজুক ছেলেটাও সেদিন নাম লিখিয়েছিল এই দলে। দেয়ালে দেয়ালে পোষ্টার লাগিয়ে বেড়িয়েছিল “চীনের চেয়ারম্যান আমাদের চেয়ারম্যান” লিখে। কমরেডের পাশে দাঁড়িয়ে ‘রেডবুক’ ডানহাতে নিয়ে ও হুংকার ছেড়েছিল “পার্টির আজ্ঞাধীন বন্দুক, বন্দুকের আজ্ঞাধীন পার্টি নয়”। তারপর ??? তারপর সিস্টেম এর্টাক, হারিয়ে গেছে সেকালের ইন্দ্রজিৎরা। চেয়েছিল। চাইলে পারতো…ওরা চাইলেই পারতো ওসব ভেল্লাবাজী বাদ দিয়ে নিজের ক্যারিয়ারের দিকে মন দিতে, পারত জেলের অন্ধকার কুঠরীর পরিবর্তে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কোন অফিসের চেয়ারে নিজেদের জায়গা করে নিতে অথবা পারত সবকিছু যেমন চলছে তেমন চলতে দিয়ে চারিপাশের সমাজ, শাসন ব্যাবস্থার সাথে গা ঘেষাঘেষি করে বাকি জীবনটা কাটিয়ে দিতে। না, তারা তা করেনি। তাদের অনেকেই অবশ্য অমলদের মত ইঞ্জিনিয়ার হতে পারিনি। হতে পারিনি ডাক্তার, গুছোতে পারিনি বাবার ব্যাবসা কিংবা হতে পারিনি তার গার্লফ্রেন্ডের সপ্নের নায়কটি। যে আদর্শ বুকে নিয়ে ইন্দ্রজিৎরা বাড়ি ছেড়েছিল, ছেড়েছিল কলেজ, পড়াশুনো……হতে চেয়েছিল মাও সে তুং এর সৈনিক সে আদর্শ তাদেরকে জীবনের কোন মোড়ে পৌছে দেয়নি। তাদের আদর্শটা কতটুকু যুক্তিযুক্তি ছিল সে ব্যাপারে আমার মন্তব্য করার মত কোন যোগ্যতা কিংবা পড়াশুনো কোনটাই আমার নাই, আর সেটা নিয়ে আমার মাথাব্যাথাও কম। তবে তৎকালীন ঐ কথিত বখে যাওয়া (!!!) যুবক তথা ইন্দ্রজিৎদের আর পাচটা মানুষের থেকে আলাদা চিন্তা করার ক্ষমতা, নিজের আদর্শের জন্য নিজেদের ভবিষ্যত বলি ক্ষমতা , এক দাপটে সব বাধা নিঃশেষ করে দেবার মত মনোবলকে আমি আজো শ্রদ্ধা করি। মদ্দাকথা ওরা দেশের জন্য, দেশের খেটে খাওয়া দারিদ্রসীমার কাছাকাছি মানুষ গুলার জন্য কিছু করে যেতে । হয়ত তাদের বেছে নেওয়া রাস্তাটা ভুল ছিল কিংবা তাদের ভুল পথে পরিচালিত করা হয়েছিল তবে তাদের উদ্দেশ্যটা মিথ্যে ছিল না।

ইন্দ্রজিৎরা শক্তির মত, ওরা কখনো ফুরোয় না। ওরা থেমে যায় না, হারিয়ে যায় না……বিভিন্ন যুগে, বিভিন্ন আন্দোলনে ওরা বিভিন্ন রূপে ফিরে আসে। ওরা আসবে পরিবর্তনের সপ্ন নিয়ে, আর নিজের সপ্ন টুকুর বিনিময়ে নিজের ভবিষ্যত নিজের অস্তিত্ত্বটুকুও দাড়িপাল্লার ওপারে তুলে দিতে প্রস্তুত থাকবে ওরা …তবে ইন্দ্রজিৎরা যুগে যুগে জন্মালেও হয়ত বাদল সরকারেরা ক্ষণজন্মা। তাই হয়ত আজ ওদেরকে চিনিয়ে দেবার কেউ নেই, নেই ওদেরকে সঠিক পথটা দেখানোর কোন রাহবার । তবুও ইন্দ্রজিৎরা আছে.........হাজার ঘৃণা থাকা স্বত্তেও রোজ সহবাস করতে বাধ্য হচ্ছে কিছু মেকি সমাজ আর সেখানে টিকে থাকবার জন্য স্বার্থবাদী নিয়মকানুন গুলোর সাথে। জীবন সায়হ্নে হয়ত এরা অমল, কমল, বিমলদের মত জীবনের হিসেবটা ঠিক মিলিয়ে উঠতে পারে না তবে এই সব ইন্দ্রজিৎ দের জীবনের বলী নিয়েই যুগে যুগে সমৃদ্ধ হয়ে উঠেছে ইতিহাসের মোটা মোটা বই গুলো, আর হচ্ছেও !!!!

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.