![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বহু নিয়ম মেনেছি। লেখাপড়া করার নিয়ম... মেনেছি, পরীক্ষা দেবার নিয়ম... মেনেছি, চাকরী করবার নিয়ম... মানব। কিন্তু নিয়মটা কে মানা উচিৎ একথাটাও কি মানতে হবে ?
একটা সময় হয়ত ছিল যখন ভালোবাসা নামক টপিক টা আজকের মত উন্মুক্ত ছিল না বরং সীমাবদ্ধ ছিল … সীমাবদ্ধ ছিল লুকিয়ে লুকিয়ে দেখা করা, চিঠির খাম, হাতের লেখা কিংবা মসৃন পিচের দিকে তাকিয়ে দুটো মানুষের পথ চলার মধ্যে। তখনো মানুষ দুটো পরষ্পরের দিকে খুব বেশি সময় ধরে তাকিয়ে থাকতে পারত না …মানুষদুটো ভাবতো তারা হয়ত লজ্জা পাচ্ছে। কিন্তু সেটা ছিল আসলে সম্মান, লজ্জা নয়। সেটাই আসলে স্বার্থক ভালোবাসা যখন ভালোবাসার মানুষটির সামনে নিজেকে অনেক ছোট মনে হয়। ক্লাসের প্রথম বেঞ্চে বসা চুল বেণী করা পড়ুয়া টাইপের মেয়েটাকে যখন পঞ্চম বেঞ্চে বসা উস্কোখুস্কো চুলের ছেলেটিকে ভাল লেগে যেত তখন সে প্রথমে নিজেকে সংশোধনের চেষ্টা চালাত। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আনমনে চুলে সিথিটা পালটে অন্য দিকে নিয়ে দেখত তার রূক্ষ চেহারায় পরিবর্তন আসছে কিনা। পঞ্চম বেঞ্চের বন্ধুগুলোকে পাশ কাটিয়ে ছেলেটা আস্তে আস্তে তৃতীয় বেঞ্চে বসতে নিজেকে অভ্যস্ত করত, ক্লাসে রেস্পন্স দিয়ে হয়ত মেয়েটার দৃষ্টি আকর্ষনের চেষ্টা করত। যেদিন সিদ্ধান্ত নিত মেয়েটাকে প্রোপোজ করবে তার এক সপ্তাহ আগ থেকে চলতে থাকত রিহার্সেল… শাওয়ারের নিচে, আয়নার সামনে কিংবা অন্ধকারে একা রাস্তায় । সেযুগে Messanger বলতে কোন এপ্লিকেশান নয় বরং খাকি পোশাকের মার্ডগার্ড বিহীন সাইকেল ওয়ালা পোষ্ট ম্যান টিকের বোঝাত। পরিবারের বদলি হবার পর থেকে দুটো মানুষ হয়ত এই চিঠি লিখেই নিজেদের ভাললাগা কিংবা মান অভিমান প্রকাশ করত। ভালোবাসার মানুষটির হাতের লেখার উপর ঠোটের স্পর্শ করতেও যেন আত্ত-সমালোচনায় ভুগত তারা। অবশ্য আমি সেই জেনারেশানের প্রতিনিধিত্ত্ব করিনা, আমি এই জেনারেশানেরই ছেলে। তবে নেহাৎ আমার কল্পনাশক্তির জোরেই কথাগুলো লিখলাম।
সমাজ পাল্টেছে, জগৎ পাল্টেছে, রাজনীতি পালটেছে… মানুষগুলো পাল্টেছে আর পাল্টেছে ভালোবাসাও। আর ভার্চুয়াল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এনে দিয়েছে তাতে অন্য একটি মাত্রা। এযুগেও আমাদের ভাল লাগে, আমরা ভালবাসি…তবে প্রেমে পড়লে আমরা প্রথমে মেয়েটির ফেসবুক আইডি কিংবা ফোন নম্বর নিতে ব্যস্ত থাকি। বেশির ভাগ সময়ই মেয়েটিকে ইম্প্রেস করি চ্যাটিং উইন্ডোতে, পড়াশুনো কিংবা কোন এক্সট্রা কারিকুলাম দিকে নয়। এখানেই একটা পরিরর্তন ঐ ৩০ বছর আগের জেনারেশানের পঞ্চম বেঞ্চের বসা ছেলেটির সাথে। ভালোবাসার মানুষটির উপরে যখন অভিমান হচ্ছে আমরা স্টাটাস দিয়ে জগৎ সুদ্ধ মানুষকে জানিয়ে দিচ্ছি আমি খারাপ আছি, কিন্তু সেই মানুষটিকে জানাতে পারছি না যার কাছে একটি নত হলেই সে আমাকে সকল ফ্রাস্টেশান থেকে সরিয়ে নিতে পারবে। প্রযুক্তি থেকে আমরা যেমন রোজ অনেক কিছু পাচ্ছি, ঠিক তেমনে আমরা অনেক কিছু হারিয়ে ফেলছি… অবশ হতে থাকছে আমাদের আবেগ- অনুভুতি, ভুলে যাচ্ছি ভালোবাসা প্রকাশ করার ভাষাটা, অভিধানের যুক্ত করছি “বস্তাপচা সেন্টিমেন্ট” টাইপের নতুন নতুন শব্দ। এই প্রজন্মের পোস্ট ম্যান গুলোর কিন্তু আর আগেকার মত ব্যাস্ততা নেই, তারা আজ সরকারী কাগজ বয়ে বেড়ায়… সেকালের মতন কাগুজে অনুভুতি গুলোকে আর নয়। যেই কাগুজে অনুভুতিগুলোকে একসময় লুকিয়ে রাখা হত বিছানার নিচে আজ সেগুলো জমা হচ্ছে সাইটগুলোর সার্ভারে। আর আমরা Chatting এর মাধ্যমেই মুক্তি দিয়ে দিয়েছি ঐ খাকি পোষাকের পোস্টম্যানকে। কেন মুক্তি দিবনা ?? সে চিঠি পৌছাতে সাত দিন সময় নিত, আর তো মেসেজ পাঠাতে সাত সেকেন্ডও সময় লাগছে না। কিন্তু…
কৃত্তিম ইমো গুলো কি সত্যিই আমাদের মনের অবস্থাকে তুলে ধরতে পারে ? যখন আমার ফুপিকে কান্না আসবে তখন কি ইমো ইউজ করব ওপাশের মানুষটিকে বোঝাব ? আচ্ছা, চ্যাটিং এর সময় আমাদের স্ক্রিনের ওপাশের মানুষটির মনিটরে কতগুলা চ্যাটিং উইন্ডো খোলা সেটা কি আমরা কখনো জানতে পারব ? জানতে পারব ওপারে মূল্যবান মানুশটির মনোযোগ কতগুলো উপাংশে বিভক্ত হচ্ছে ? আর সেই বিভাজিত উপাংশের কতটুকুই বা আমার চ্যাটিং উইন্ডোতে রিপ্লাই হিসেবে আসছে ?
০৯ ই অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ১০:২৫
শূণ্য মাত্রিক বলেছেন: একদিম ঠিক বলেছেন। আজ সেগুলো বুঝতে পারলেও এই অভিশপ্ত বৃত্তটি থেকে বেরিয়ে আসতে পারছি না আমরা।
২| ০৮ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ৮:৫২
জুন বলেছেন:
কৃত্তিম ইমো গুলো কি সত্যিই আমাদের মনের অবস্থাকে তুলে ধরতে পারে ? যখন আমার ফুপিকে কান্না আসবে তখন কি ইমো ইউজ করব ওপাশের মানুষটিকে বোঝাব ? আচ্ছা, চ্যাটিং এর সময় আমাদের স্ক্রিনের ওপাশের মানুষটির মনিটরে কতগুলা চ্যাটিং উইন্ডো খোলা সেটা কি আমরা কখনো জানতে পারব ? জানতে পারব ওপারে মূল্যবান মানুশটির মনোযোগ কতগুলো উপাংশে বিভক্ত হচ্ছে ? আর সেই বিভাজিত উপাংশের কতটুকুই বা আমার চ্যাটিং উইন্ডোতে রিপ্লাই হিসেবে আসছে ?
ভীষণরকম ভাবে সহমত আপনার সাথে। সেই চিঠি, পিওনের জন্য জানালায় অপেক্ষা এখন ধুসর অতীত।
+
০৯ ই অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ১০:৩৪
শূণ্য মাত্রিক বলেছেন: ধূসর অতীতের ঐ পিছুটান টাই মাঝে মাঝে কেন জানি খুব আকড়ে ধরে। মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ
৩| ০৮ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ৯:৪১
আহমেদ জী এস বলেছেন: শূণ্য মাত্রিক ,
মানুষ যতো শারীরিক, অর্থনৈতিক, প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে এগিয়ে গেছে , ততো পিছিয়ে গেছে মানবিক অনুভূতিগুলো থেকে ।
আসলে সঠিক ও ঋদ্ধ: জ্ঞান না থাকলে যা হয় তা-ই হচ্ছে । কাঁচকে হীরে ভেবে বুকে তুলে নিচ্ছে । দু'টোর যে কি পার্থ্ক্য সে বোধটুকু পর্য্যন্ত এদের লুপ্ত হয়ে গেছে ।
একটি প্রবাদের কথা বলি ------ মন যা জানেনা, চোখ তা দেখেনা । আবার চোখ যা দেখেনা , মন তা জানেনা ।"
এযুগে না আছে মন , না চোখ । আবেগ- অনুভুতি গুলি তারা চ্যাটরুমের ভাষায় দেখছে যান্ত্রিকতায় । আর মন সেই যান্ত্রিকতাই জানছে ।
বহু উপাংশে বিভক্ত এই যান্ত্রিকতাই এদের পূর্ণাঙ্গ ভালোবাসা - আবেগ ইত্যাদিকে বোঝার ক্ষমতাকেই অক্ষম করে দিয়েছে ।
০৯ ই অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ১০:৩৮
শূণ্য মাত্রিক বলেছেন: সত্যি বলতে কি ভাই আমি যখন আর দুটো প্রজন্ম পরের সভ্যতার কথা চিন্তা করি তখন কিছুটা স্বান্তনা পায়। কারন সেই যান্ত্রিক সময়টা দেখে যেতে হবে না অন্তত। সুচিন্তিত মতামতের জন্য ধন্যবাদ
৪| ১০ ই অক্টোবর, ২০১৫ বিকাল ৩:০৬
হাসান মাহবুব বলেছেন: "আজ তোমার চিঠি
যদি নাই পেলাম হায়
আমি ভেবে নেবো
ডাকপিয়নের
অসুখ করেছে"
(ফিডব্যাক, ১৯৮৮)
"সেই অসুখ লেগে থাকা ডাকপিওন
এখন আর বেঁচে নেই"
(মাকসুদ এবং ঢাকা, ১৯৯৯)
সেই ডাকপিওনটাকে যদি আবার বাঁচিয়ে তোলা যেতো!
১০ ই অক্টোবর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:২৯
শূণ্য মাত্রিক বলেছেন: ইমোশোনাল করে দিলেন ভায়া সত্যি সত্যি। অসাধারন একটা গানের লিরিক রেফারেন্স হিসেবে ব্যাবহার করেছেন। মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
৫| ১০ ই অক্টোবর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:০৪
সুমন কর বলেছেন: চেনা-জানা কথাগুলো সুন্দরভাবে ফুঁটিয়ে তুলেছেন। শেষ প্যারায় দারুণ বলেছেন। ৩য়+।
১০ ই অক্টোবর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:২৭
শূণ্য মাত্রিক বলেছেন: মন্তব্যটুকুর জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ দাদা।
©somewhere in net ltd.
১|
০৮ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ৮:৪১
ক্রিবিণ বলেছেন: আসলেই তাই... আমরা ইমো ও ইগোর সর্বোত্তম অপব্যবহারে ব্যস্ত নিজেকে মুল্যায়নের সর্বনিম্ন ধারণাটুকু বিকিয়ে...