![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বহু নিয়ম মেনেছি। লেখাপড়া করার নিয়ম... মেনেছি, পরীক্ষা দেবার নিয়ম... মেনেছি, চাকরী করবার নিয়ম... মানব। কিন্তু নিয়মটা কে মানা উচিৎ একথাটাও কি মানতে হবে ?
ওপাড়ার পুরোনো জমিদার বাড়িটাতে অলরেডি নোটিশ টানিইয়ে দেওয়া হয়েছে “ বসবাসের জন্য বিপদজনক ”, সরকারের এসব নোটিশে তোয়াক্কা না করেই ওখানে কিছু উদবাস্তু মানুষ এখনো পরবর্তী প্রজন্মের সপ্ন দেখে চলেছে। সপ্ন দেখছে ল্যম্পপোষ্ট এর নিচে ঘুমিয়ে থাকা মানুষগুলো। হয়ত সকালের ঘুমটা ভাংবে কাকের ডাক আর সিটি কর্পোরেশানের আবর্জনা তোলার গাড়িটার শব্দে তবুও ওরা সপ্ন দেখে। তাদের উলংগ শিশুরা দিনে দিনে অভ্যস্ত হতে থাকে সায়দাবাদ-গাবতলী গামী লোকাল বাস গুলার হেল্পারের গদবাধা কন্ঠস্বরের সাথে। রাত গভীর হয়, কিছু গৃহপালিত মানুষ রোজকার মত ঘরে ফিরে যায় । আরেক শ্রেণীর মানুষ জেগে ওঠে, রাতটাই তাদের অন্ন জোগায়। কখনো ওভারব্রীজের অন্ধকার, কখনো ঝকঝকে নিয়ন আলোর নিচে , কখনো বা জনবহুল ফুটপাথ কিংবা চারদেয়ালের বদ্ধ ছাঁদ - তাদের জন্য কোন ধরাবাধা নিয়ম নেই। কোন স্থানই তাদেরকে তাদের সামাজিক অবস্থান থেকে নূনতম বিচ্যুতিও ঘটাতে পারে না। তারা শুধু জানে জায়েজ-নাজায়েজ, বিধি- নিষেধ, নীতি-নৈতিকতা নামক কিতাবী শব্দ গুলা অতীতে তাদের পেট ভরায় নি আর ভবিষ্যতেও ভরাবে না, তাই নিজেকে বিলিয়ে দিয়ে ওরা জীবিকা নির্বাহ করে। ছোট বেলায় হয়ত চায়ের দোকানে কাজ করবার সময় ছেলেটা বাংলা সিনেমাতে দেখেছে, স্টেথোস্কোপ নিয়ে কিছু ডাক্তার অপারেশান থিয়েটারের দিকে ছুটে যাচ্ছে, রোগীকে বাচিয়ে মানুষের শ্রদ্ধার মনি হয়ে উঠছে কিছু সময়ের ব্যাবধানেই । ছেলেটা কেন জানি চেয়েছিল সেও যদি ওমন পারত !!! সে এখন বড় হয়েছে। তবে সাদা এপ্রন পরা ডাক্তার হতে পারেনি,,,,এখন সে গ্যারান্টি সহকারে হারবাল ওসুধ বিক্রি করে। অনেক ভাল মানের রিপ্রেজেন্টিটিভ এর চেয়েও সে ভাল আশ্বস্ত করতে পারে মানুষকে।
এরা বাদেও শহরে আরেক শ্রেণী মানুষ আছে যাদের দীর্ঘশ্বাসে রোজ ভারী হয় শহরের বাতাস … ওরা মধ্যবিত্ত, ওদের কান্নার কোন শব্দ নেই, রঙ নেই, বর্ণ নেই। মাস শেষ হত এখনো তিন দিন বাকি, কিন্তু মানিব্যাগে আইডি কার্ড আর কিছু একাডেমিক কাগজ ছাড়া কিছুই অবশিষ্ট নেই ছেলেটির। তোষকের নিচের কাগজ গুলোকে বিক্রি করে হয়ত এই বেলাটা আধপেট খেয়ে চালিয়ে দেয়া যাবে…কিন্তু বাকি দিন গুলা ? এমন সব অদ্ভুত প্রশ্নে জর্জরিত কিছু মানুষের মধ্যে আছে রিপন স্ট্রীটের নতুন দু-তলা হওয়া বাড়ির মেয়েটির। রোজ বিকেলে ছাদের ওঠে কাপড় মেলতে, আর পরিচয় এভাবেই পাশের বাসার একটি ছেলের সাথে। উইন্ডো কানেকশান … তাদের তিনদিনের প্রেম। তারপর আর ছেলেটিকে দেখতে পায়নি মেয়েটি। খোজ নিয়ে জেনেছে বাড়িটিতে টূ-লেট লেখা। এতকিছুর পরও মানুষগুলো বেচে থাকতে চায়, শহরটিই তাদেরকে স্বপ্ন দেখায়। মাসের প্রথম দিনটির আশায় যারা দীর্ঘ ত্রিশ ফাড়ি কাঠে পিষ্ট হয় তাদের কারো কারো অপেক্ষার প্রহর গোনা হয়ত শেষ হয় আজকের মত কোন একটা দিনে । গত মাসের দেনার টাকা বাদ দিলে মাইনের যে অল্প বাকি থাকে তাদিয়েই দু-চার রাতের সপ্নের খোরাক যোগানো যায় কিছু আনরোমান্টিক দম্পতির। আজ হয়ত কারো প্রেমিকার বিয়ে,দুটো সপ্নের মাঝে আর আকাশ ছোয়া প্রাচীর দাঁড়িয়ে যাবে। মেয়েটির দিকে কেউ কখনো আড় চোখে তাকালেও ছেলেটি মেনে নিতে পারেনি আর সেই মেয়েটির আজ ফুলসয্যা, আজ স্বেচ্ছায় মেয়েটি বিলিয়ে দিবে নিজের সতীত্ত্বকে । একটা ভুয়া প্রেসক্রিপশান দেখিয়ে কিছু ঘুমের ওসুধ কিনিয়ে রেখেছিল ছেলেটি … আত্তহত্যা করবার ইচ্ছা তার না, শুধু একটি রাতের জন্য সে নিজেকে হত্যা করতে চাইছে। ছেলেটি ঘুমিয়ে পড়ল … ঘুমিয়ে পড়ল পুরো শহর !!!
বিচ্ছিন্ন মানুষগুলার এসব ছোট ছোট গল্প গুলো কখনো ছাপার কাগজে বের হয়না, এদের কাহিনি নিয়ে তেমন সিনেমাও বানানো হয়না। তবে এখনো কিছু ভাবুক মানুষ এই শহরটাকে নিয়ে চিন্তা করে। গান লেখে শহরটাকে নিয়ে। লোকাল বাসে চেপে আপিস যেতে যেতে জানলা দিয়ে খেয়াল্ করে শহরের বেড়ে ওঠাটা। কারো সাথে দেখা হয়ে যায় তার প্রথম প্রেমিকার। হয়ত ভাগ্য সুপ্রসন্ন থাকে না, প্রেমকার ফর্সা আংগুল গুলা ঢেকে থাকে আরেকটা শ্যমলা হাতের স্পর্শে। এই শহরটাই আমাদের সপ্ন দেখায়, আবার প্রয়োজনে বাস্তবতায় ছুড়ে দেয় । কখনো মেঘ হয়ে আগলে রাখে , কখনো বৃষ্টি হয়ে ধুয়ে দেয়।
১০ ই অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ১০:০২
শূণ্য মাত্রিক বলেছেন:
বুঝলেন মিতা … মাঝে মাঝে অভিমান হয় শহরটার উপর। একে একে সব কেড়ে নিল। প্রথমে শৈশব, পরে সপ্ন … ইভেন প্রথম প্রথম ক্রাশটা ও (কান্নার ইমো) । মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ
২| ১০ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১২:১৯
সচেতনহ্যাপী বলেছেন: জীবনের কঠিন দু'টো সত্যিকে মেলে ধরেছেন।। আরও- ওরা মধ্যবিত্ত, ওদের কান্নার কোন শব্দ নেই, রঙ নেই, বর্ণ নেই।।
১০ ই অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ১০:০২
শূণ্য মাত্রিক বলেছেন: মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। কি করব বলুন … আমিও খেয়াল করে দেখেছি আমার কান্নার কোন রঙ নেই। শ্রব্যতার সীমার অনেক উপরে ওগুলো, কেউ শুনতে পায়না।
৩| ১০ ই অক্টোবর, ২০১৫ দুপুর ২:৪১
হাসান মাহবুব বলেছেন: "এই শহর জানে আমার প্রথম সবকিছু
পালাতে চাই যত সে আসে আমার পিছুপিছু"
শহর তাড়া করেছে। দৌড়াও! দৌড়ুতেই থাকো অনিঃশেষ।
©somewhere in net ltd.
১|
০৯ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ৮:৪৭
রিকি বলেছেন: শহর বিশেষত মেগাসিটির চাকচিক্য তুলে ধরলেও, কেউ কখনও তার ড্রব্যাক পার্টগুলো তুলে ধরেনা মিতা, এটাই বাস্তবতা।