![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বহু নিয়ম মেনেছি। লেখাপড়া করার নিয়ম... মেনেছি, পরীক্ষা দেবার নিয়ম... মেনেছি, চাকরী করবার নিয়ম... মানব। কিন্তু নিয়মটা কে মানা উচিৎ একথাটাও কি মানতে হবে ?
বাদল সরকারের কালজয়ী একটি নাটকের নাম “এবং ইন্দ্রজিৎ”। নাটকটি লেখা ১৯৬৩ তে, যখন মোটামুটি চীন-ভারত যুদ্ধ চলছে, আর তার সাথে বড্ড বেখাপ্পা পরিস্থিতিতে পড়েগিয়েছিল ভারতের কমিউনিষ্ট পার্টি গুলো। সবচেয়ে দোটানায় পড়েছিলেন চীন পন্থী কমিউনিষ্ট পার্টি গুলো যারা কিনা মাও সে তুং এর মাও সে তুং এর সনদে ভারতের মানুষকে মুক্তির সপ্ন দেখিয়েছিল। ফলে তারা তারা পার্টির নীতি ও আদর্শগত দিক দিয়ে বেশ দোটানায় পড়েগেছিলেন, ফলস্রুতিতে পার্টির ভাংগন। এদের কোন একটা দলে জড়িয়ে গিয়েছিলেন বাদল সরকার নিজেও। এবং ইন্দ্রজিৎ নাটক টিতেও ফুটে উঠেছিল কিছু দ্বিধা-দোলাচলতার চিহ্ন। “হাসবার ক্ষমতা চলে যাচ্ছে আমার। … আজগুবি সৃষ্টিছাড়া হয়ে উঠছে আমার লেখা। আর সবচেয়ে মারাত্তক- এতো রূপক এতো আড়াল স্বত্তেও সত্যিই মানুষগুলো বড় বেশি স্পষ্ট হয়ে উঠছে। ”- কথাগুলো বাদল সরকারের সমসাময়িক প্রকাশিত একটা আক্ষেপ।
অমল, বিমল, কমল, ইন্দ্রজিৎ - এরাই মূলত নাটকির প্রধান চরিত্র। আর খানিকটা বিশ্লেষকের ভূমিকায় পাওয়া যায় একজন কবিকে যিনি লিখতে চান। কিন্তু তার ভাষ্যমতে সমস্যাটা দাঁড়ায় যে তিনি কলকাতা শহরের কত শ্রেণী পেশার মানুষ তার ক জনকেই বা চিনেন তিনি। আর তাদেরকে কাছে থেকে যখন জানেনই না তখন তাদের নিয়ে কি বা লিখবেন তিনি। নাটকের প্রথম দিকে যেটি দেখা যায় যে অমল, বিমল, কমল, ইন্দ্রজিৎরা কলেজের ছাত্র। তাদের আড্ডায় মাঝে মাঝে কবিকেও পাওয়া গেছে। আড্ডার বিষয় বস্তু কখনো ক্রিকেট, কখনো সিনেমা... রাজনীতিকে বানার্ড শ’র নাটকে মেশানো ঠিক হয়েছিল কিনা অথবা মেশানো হলেও তাতে নাটকির সাহিত্য মূল্য আদৌ কমে কিনা কিংবা ভূগোলের বাইরে কোন পৃথিবী আছে কিনা আর থাকলেও সেখানে সবছেড়ে ছুড়ে দিয়ে ইন্দ্রজিৎ কেন চলে যেতে চায় – এসবই। কিছু শিক্ষিত মধ্যবিত্ত কলেজ গন্ডীর ছেলেদের আগ্রহের তীর গুলো যেদিক যেদিক ছুটে আরকি। তবে লেখক এখানে “অমল-কমল-বিমল” দেরকে দেখিয়েছেন আমাদের সমাজের আর দশটা মানুষের মত করে যারা কিনা সমাজের সাথে আপোষ করে রোজ বেচে আছে, কিন্তু ইন্দ্রজিৎ কে তিনি সম্পূর্ণ আলাদা একটা রূপ দিয়েছেন। ইন্দ্রজিৎ সমাজ, সিষ্টেমের নিয়মগুলোর সাথে আপোষ করতে চায়না, সেগুলোকে ঘৃণা করে। অবশ্য বাধ্য হয়ে দিন শেষে ওগুলোর সাথেই সহবাস করতে হয়। তবে নাটকটি বিশেষত্ত্বই ফুটে উঠেছে ইন্দ্রজিৎ চরিত্রটির চরিত্রায়নের মধ্য দিয়ে।
‘এবং ইন্দ্রজিৎ’ নাটকটি কিন্তু “স্ত্রী চরিত্র বর্জিত” নয়। এখানে ইন্দ্রজিতের প্রমিকা হিসেবে পাওয়া যায় একটি মেয়েকে যার নাম কবি রেখেছিলেন মানষী। মূলত মানষীর সাথে কথোপকথনেই ‘এবং ইন্দ্রজিৎ’ রচনার আসল উদ্দেশ্যটা চোখে পড়ে। সে একটি সাধারন আটপৌরে চিন্তা ধারার মেয়ে-পরিবারের শৃংখল, সমাজের মেনে নেওয়া না মেনে নেওয়া ইত্যাদি অনেক কিছু কেয়ার করে চলতে হতো তাকে। এ ব্যাপারটাতেই ইন্দ্রজিৎ এর রাগ। ইন্দ্রজিতের ভাষায়ঃ “বহু নিয়ম মেনেছি...লেখাপড়া করার নিয়ম-মেনেছি, পরীক্ষা দেবার নিয়ম- মেনেছি, চাকরী করবার নিয়ম – মানব। কিন্তু নিয়মটা কে মানা উচিৎ একথাটাও কি মানতে হবে ? নিয়ম না মেনে নিয়মের দড়িটাকে ঘৃণা করব, যেই দড়ি দিয়ে আষ্টে পিষ্টে বাধা আছি সেই দড়িটাকে পূজো করে কি লাভ” ? আরেকটি উল্লেখযোগ্য দিক ফুটে আসে ইন্দ্রজিতের একটি কথার সূত্র ধরে। “যেই নিয়মে সাত বছরের একটি ছেলেকে জুতো পালিশ করতে হয় আর এক বছরের একটি ছেলেকে কোলে রাখতে হয় সেই নিয়মটিকে যে আমি মানতে পারিনা”। ইন্দ্রজিৎ সমাজ ও সমাজের পরিবর্তন চাইতো। অন্য কথায় সেটাকে বোধহয় বিপ্লব ও বলা চলে। এদিক থেকে তিনি চরিত্রটির মাঝে সম্ভবত কিছুটা সাম্যবাদী দৃষ্টিভংগি ফুটিয়ে তুলেছেন। সম্ভবত চরিত্রটি বাদল বাবুর নিজের জীবনেরই ফটোগ্রাফ।
নাটকটির শেষে গিয়ে অমল, কমল, বিমল দের সাথে ইন্দ্রজিৎ এর পার্থক্যটা স্পষ্ট হয়। তাদের সবার সাথেই কবি চরিত্রটির শেষবারের কথোপকথন হয়। তাদের সবাই ব্যাস্ত সংসার, স্ত্রী, চাকরির বদলি, ছেলের বোর্ডিং স্কুলে ভর্তি, কিংবা ইন্সুরেন্স পলিসির বিজ্ঞাপন নিয়ে। তবে ব্যাতিক্রম পাওয়া যায় ইন্দ্রজিৎকে নিয়ে, মানষীকে সে ভালোবাসলেও কোন একটা দোটানার কারনে তাকে বিয়ে করতে পারিনি। ইন্দ্রজিৎ আমাদের সমাজের ঐ প্রতিবাদী চরিত্রটির মুখোচ্ছবি যারা জীবন্টাকে নিয়ে আলাদা চিন্তা করবার ক্ষমতা রাখে, জীবনটাকে আলাদা খুব নিজস্ব সংগায় সংগায়িত করবার ক্ষমতা রাখে। সমাজ ও ঘুনেধরা নিয়মগুলোর সাথে চিরচারিত সহবাসকে এরা প্রচন্ড ঘেন্না করে। আমাদের আজকের সমাজেও অমল, কমল, বিমলদের মত গতানুগতিকতার বাইরে অনেক ইন্দ্রজিৎকে পাওয়া যায় যারা জীবনের একটা মোড়ে এসে অনেক গুলো হিসেব মেলাতে পারেনা। যুগে যুগে ইন্দ্রজিৎরা এসেছে পৃথিবীতে, ভবিষ্যতেও আসবে। সমাজটাকে পরিবর্তনের সপ্ন নিয়ে, মানুষগুলোকে সপ্ন দেখাতে...আর এমন হাজার ইন্দ্রজিৎ এর জীবনের বলি নিয়ে আমাদের সমাজটা রোজ বড় হচ্ছে...বুড়ো হচ্ছে।
১৭ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১০:২৭
শূণ্য মাত্রিক বলেছেন: অসং্খ্য ধন্যবাদ ভাইয়া
২| ১৮ ই অক্টোবর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৫৬
আরণ্যক রাখাল বলেছেন: আমি নাটক খুব কম পড়েছি| সেলিম আল দীন, মুনীর চৌধুরী আর সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ এর বাইরে আর কারো লেখা পড়ার সৌভাগ্য হয়নি| বাদল সরকারের নাম অনেক শুনেছি| আপনার লেখাটাও সুন্দর| বইটা পড়ার আগ্রহ জাগল| ইদ্রজিতের সাথে আপনার বর্ণনা মতে অনিমেষের মিল পেলাম| আপনি পেয়েছেন?
১৮ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ৮:২৫
শূণ্য মাত্রিক বলেছেন: অসম্ভব সুন্দর একটা মিল তুলে এনেছেন ভাইয়া। অনিমেষ সরাসরি নকশাল করলেও, এবং ইন্দ্রজিৎ থেকে এটা বোঝা যায় যে বাদল সরকার সরাসরি ইন্দ্রজিৎ কে এক্সপোজ করেননি। যদি করতেন হুবহু অনিমেষই হতো নি:সন্দেহে।
আপনার সুচিন্তিত মতামত দেখে সত্যিই মুগ্ধ হলাম ভাই। ভালো থাকবেন
৩| ১৮ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ৯:২৮
জেন রসি বলেছেন: আসলে সব মানুষ যদি সমাজ ভাঙ্গার স্বপ্ন না দেখে প্রতিবাদ না করত তাহলে কিন্তু সামাজিক বিবর্তনই থেমে যেত।চমৎকার পোষ্ট।
১৯ শে অক্টোবর, ২০১৫ দুপুর ১২:৪২
শূণ্য মাত্রিক বলেছেন: অবশ্যই। সুন্দর বলেছেন ভাইয়া। ধন্যবাদ
©somewhere in net ltd.
১|
১৭ ই অক্টোবর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:২২
প্রামানিক বলেছেন: সমাজটাকে পরিবর্তনের সপ্ন নিয়ে, মানুষগুলোকে সপ্ন দেখাতে...আর এমন হাজার ইন্দ্রজিৎ এর জীবনের বলি নিয়ে আমাদের সমাজটা রোজ বড় হচ্ছে...বুড়ো হচ্ছে।
ভাল লাগল।