![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বহু নিয়ম মেনেছি। লেখাপড়া করার নিয়ম... মেনেছি, পরীক্ষা দেবার নিয়ম... মেনেছি, চাকরী করবার নিয়ম... মানব। কিন্তু নিয়মটা কে মানা উচিৎ একথাটাও কি মানতে হবে ?
প্রলেতারিয়েত বা নিপীড়িত শ্রেণীর মানুষের অধিকার আদায়ের লক্ষে পৃথিবীর বেশ কয়েকটি দেশ উত্তপ্ত হয়েছিল কালের পরিক্রমায় । তারপর আস্তে আস্তে সেগুলো বিপ্লবে রূপ নেয়, সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব। ফরাসী বিপ্লব, রুশ বিপ্লব, চীনা বিপ্লব এবং সর্বশেষ আমাদের প্রতিবেশি দেশ ভারতে নকাশাল আন্দোলন। ক্ষয়ক্ষতি, ব্যাপ্তিকাল, আন্দোলনের উদ্দেশ্য-পরিনতি কিংবা ফলাফলের দিক দিয়ে চিন্তা করলে হয়ত নকশাল আন্দোলনকে রুশ কিংবা চীনা বিপ্লবের পাশে রাখা যায় না, কিন্তু এই উপমহাদেশের সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের দিক চিন্তা করলে এই আন্দোলনটির বেশ প্রভাবশালী ভূমিকা পাওয়া যাবে। আমি রাজনীতি বুঝিনা, ইতিহাস গত দিক থেকেও সল্পজ্ঞানী কিন্তু আমার বয়েসের কিছু মধ্যবিত্ত বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্র সে দিন স্টাইলিশ পোষাক ফেলে দিয়ে কাধে তুলে নিয়েছিল শান্তিনিকেতনী ব্যাগ আর ব্যাগের ভিতরে মার্ক্স এবং মাও সে তুং এর একগাদা বই- এই ব্যাপারটা বরাবরই আমার কৌতুহলের যোগান দিত। মূলত সে কারনেই লিখতে বসা।
নকশাল আন্দোলনের নামকরন হয়েছিল পশ্চিম বংগের ‘নকশালবাড়ী’ নামক একটি জায়গার নামানুসারে। এটি মূলত ছিল তৎকালীন একটি কমিউনিষ্ট আন্দোলন যেটা বিংশ শতাব্দীর সপ্তম দশকে পশ্চিমবংগের নকশালবাড়ী থেকে শুরু হয়ে ধীরে ধীরে ছত্রিশগড় এবং অন্ধ্র প্রদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। একটা বড় সময় ধরে এই আন্দোলনের নেতৃত্ত্ব দিয়েছিলেন চারু মজুমদার এবং কানু স্যানাল। কিন্তু এই আন্দোলনের সূত্রপাতটা বেশ একটি সাধারন ‘অবিচার’ এর ঘটনার মত, কিন্তু সেই অবিচারের প্রতিবাদটা ছিল ব্যাপক। ১৯৬৭ সালে দার্জিলিং এর নকশালবাড়ীর বিমল কিষান নামের একজন কৃষককে তার নিজের জমি চাষ করতে অনুমতি দেন আদালত। কিন্তু ব্যাপারটিকে সহজ ভাবে নেয়নি স্থানীয় জোতদাররা। তারা তাদের প্রভাব খাটিয়ে গুন্ডা দিয়ে ঐ কৃষকের থেকে জমি ছিনিয়ে নেয়। তখন এগিয়ে আসেন চারু মজুমদার এবং কানু স্যানাল। তার স্থানীয় কিছু নিম্নবিত্ত কৃষকের সাথে নিয়ে ঐ জমি ফিরিয়ে আনবার জন্য জোতদারদের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলেন । সেই সময়ে একজন পুলিশ ইন্সপেক্টরও খুন হল। জ্যোতি বসু ছিলেন তৎকালীন সরাষ্ট্রমন্ত্রী … তার নির্দেশেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে পুলিশ বেপরোয়া গুলি চালায়। নারী শিশু সহ মারা যান মোট এগারো জন। সরকার এভাবে খানিকটা আন্দোলন দমন করতে পারলেও আগুন কিন্তু ভিতরে ভিতরে জ্বলতে থাকে… ছড়িয়ে পড়তে থাকে তাদের সাম্যবাদী আদর্শ কলকাতা ও ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে।
চারু মজুমদারের জীবনী দেখলে বোঝাযায় তিনি বরাবরই একজন বিপ্লবী চরিত্র। ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষার আগেই তিনি সাম্যবাদী ধারায় অনুপ্রণিত হয়ে লেখাপড়া ত্যাগ করেন। তার জীবদ্দশায় বেশ বড় একটা সময় কাটিয়েছেন জেলে নয়ত আত্তগোপন করে। রাজনৈতিক জীবনে তিনি কমিউনিষ্ট আন্দোললের সাথে জড়িত ছিলেন। কিন্তু চীন ও রাশিয়ার আদর্শগত কারনে ভারতের কমিউনিষ্ট পার্টি বিভক্ত হয়ে গেলে তিনি সিপিআই (এম) এর সাথে একাত্ততা করেন। পরবর্তীতে বিভিন্ন কারনে দল থেকে বহিষ্কৃত হন আবার দলে ফিরেও আসেন। কিন্তু পরে দলের মতাদর্শের সাথে একমত না হতে পারার ফলে তিনি নিজ দলের পর্যন্ত শত্রূ হয়ে যান, এবং তার নামে সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করবার মত অপরাধ ও আনা হয়। কারনটা অবশ্যই ছিল নকশাল আন্দোলন নামে তার নতুন বিপ্লব সৃষ্টি করতে যাওয়া।
নকশাল আন্দোলনটি ছিল মূলত চীনে মাও সে তুং এর বিপ্লবের পদাংক অনুসরন করে, চারু মজুমদার নিজেও মাও এর মতাদর্শে বিশ্বাসী ছিলেন। তিনি মনে করতেন ভারতের কৃষক ও গরীবদের মাও সে তুং এর রাস্তায় বিপ্লব করে নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা উচিৎ। তাদের মূল লক্ষ ছিল মাও সে তুং যেমন চীনে বিপ্লব ঘটিয়ে সাম্যবাদ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, কৃষক-গরীব-শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার তাদের হাতে তুলে দিয়েছিলেন তার আদলেই ভারতে বিপ্লবের মাধ্যমে কৃষকদের জমি ও শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনা নিশ্চিত করা। যদি এক কথায় বলা হয় তাহলে নকশাল আন্দোলনের উদ্দেশ্য ছিল তৎকালীন তথাকথিত আধা সামন্ততান্ত্রিক সমাজ ব্যাবস্থাকে সরিয়ে একটা উন্নত সমাজ ব্যাবস্থা কায়েম করা। “শ্রেণী সংগ্রাম” এবং “শ্রেণী শত্রু” শব্দদুটি এই টপিক রিলেটেড খুবই গুরুত্ত্বপূর্ন কি-ওয়ার্ড। শ্রেণী সংগ্রাম বলতে বোঝায় কোন একটা শ্রেণীর বিরুদ্ধে অপর একটি শ্রেনীর সংগ্রাম। যেমনঃ কোন একটি অঞ্চলের একদল কৃষক যদি মনে করে জমিদাররা তাদেরকে ঠাকাচ্ছেন তবে তারা ঐ সুবিধাবাদী শ্রেনীর বিরুদ্ধে সংগ্রাম ঘোষনা করতে পারে। এটা হবে ঐ জমিদারদের বিরুদ্ধে কৃষকদের শ্রেণী সংগ্রাম। আর শ্রেণী শত্রু বলতে বোঝনো হয় যাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ বা সংগ্রাম করা লাগবে। মাও সে তুং চীনা বিপ্লবের সময় শ্রেণী সংগ্রামের একটা প্রাক্টিক্যাল উদাহরন দেখিয়েছিলেন। আর নকশাল আন্দোলনের মূল মন্ত্রও ছিল শ্রেণী সংগ্রাম গড়ে তুলে চিহ্নিত শ্রেণী শত্রুদের খতম করা।
ইতিহাস ও আদর্শগত দিক গেল, কিন্তু মানুষ কিভাবে নিয়েছিল সাম্যবাদ প্রতিষ্ঠার এই প্রচেষ্টাটিকে ? কলকাতার ছাত্র মহলে এটি ব্যাপক সাড়া ফেলেছিল সেসময়ে। ছাত্রদের একটা বড় অংশ লেখাপড়া ছেড়ে নেমে পড়েছিল বিপ্লবী কর্মকান্ডে। চারু মজুমদারের নির্দেশে তারা ছড়িয়ে পড়েছিল শহর থেকে গ্রামে। উদ্দেশ্য হল শ্রেণী শত্রু খতম করবার, তাদের শ্রেণী শত্রুর তালিকায় ছিল ভূস্বামী, জমিদার, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, মহাজন… । কিছুদিনের মধ্যেই তারা জাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় দখন করে দেয়, সেখানে ওয়ার্ক শপে তারা পুলিশের সাথে লড়বার জন্য অস্ত্র বানাতো। কলকাতার প্রসিডেন্সি কলেজও তাদের নিয়ন্ত্রনে ছিল। মূলত তখন কার যুবাদের পরিবর্তনের সপ্ন দেখিয়েছিল এই আন্দোলনটি। শিক্ষিত যুবক ছেলে গুলো কলেজ, বই, পড়াশুনো শিকেয় তুলে রেখে দেয়ালে দেয়ালে পোষ্টার মেরে বেড়াতো, আর তাতে লেখা থাকতঃ “চীনের চেয়ারম্যান আমাদের চেয়ারম্যান”, “ভিয়েতনাম, লাল সালাম”, “কমরেড মাও লাল সালাম” ইত্যাদি। ফলে কিছু দিনের মধ্যেই এই আন্দোলনটি তৎকালীন ধনী দের উপ্রে এক ধরনের ভয়ের কারন হয়ে দাঁড়ায়, সাথে দারুন রকমের আপত্তিকর অবস্থায় পড়ে যায় দেশের সরকার। তৎকালীন মূখ্যমন্ত্রী সিদ্ধার্থ সংকর রায় নকশাল দের প্রতিত্তুর দেবার সিদ্ধান্ত নেন। পুলিশকে কিছু এক্সট্রা ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল যার বলে তারা ইচ্ছা মত যাকে তাকে গ্রেপ্তার করতে পারত, পারত গুলির ব্যাবহার করতে । সরকার দেশের মানুষকে বুঝিয়েছিল যে তারা ঐ চরমপন্ত্রীদের সাথে গৃহযুদ্ধে নেমেছে আর চরমপন্ত্রীদের কাছে গনতন্ত্র মূল্যহীন। এমন বিরূপ প্রচারনার ফলে দেশের মানুষও একসময় নকশালদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন। কিন্তু সরকারের এই দমন নীতিতে বহু বিপ্লবী ছাত্রছাত্রীদের পাশাপাশি পুলিশ অনেক নীরিহ নিরস্ত্র ছাত্র ছাত্রীদের ও গ্রেপ্তার করত। তাদেরকে থানায় এনে বেধোড়ক মার, আত্তীয়দের থেকে টাকা নেও এমনকি ধর্ষনের অভিযোগ পর্যন্ত পাওয়া যেত। এভাবে মূলত সরকার এক মাসের মধ্যেই এই আন্দোলন দমন করতে সক্ষম হয়েছিল। চারু মজুমদার গ্রেপ্তার হল ১৯৭২ সালে এবং আলীপুর জেলে তিনি নিহত হন, আর কানু স্যানাল আত্তহত্যা করেন নিজ বাড়িতে। ধারনা করা হয় কারনটি ছিল তার শারীরিক অসুস্থতা। এটাই মূলত নকশাল আন্দোলনের সল্প ভাবে বলা ইতিহাস।
নকশাল আন্দোলন সফল হয়নি, কেন হয়নি এটা পর্যালোচনা করবার মতো প্রস্তুতি আমার পাবলিক ভাবে নাই। তবে কিছু কারন বলা যেতে পারে সেটা হল যেমন কমিউনিজম, সাম্যবাদ, সমাজতন্ত্র খুবই পড়াশোনার বিষয়। কিন্তু তৎকালীন অনেক ছাত্র-ছাত্রী কিছু না বুঝে জাস্ট রোমান্টিকতার জন্য ওটাতে জড়িয়ে ভবিষ্যত নষ্ট করেছিল। আর একবার চীনের সাথে ভারতের সীমান্তযুদ্ধ হয়, সুতরাং ভারতের মানুষ চীনের উপরে অনেক ক্ষীপ্ত হয়ে উঠেছিল, বিশেষ করে মাও সে তুং এর উপরে। তার নকশাল পন্থীদের “চীনের চেয়ারম্যান, আমাদের চেয়ারম্যান” শ্লোগানটি খুব বেশি ধোপে টিকেছিল একথা বলা যাবেনা। আরেকটা ব্যাপার মনে হয় নকশাল আন্দোলনটা হুট করে শুরু হয়েছিল আবার হুট করে শুরু শেষ হয়েছিল। কিন্তু বিপ্লব ঘটাতে প্রথমে দেশের মানুষকে ত্যাগ স্বীকার করবার জন্য প্রস্তুত থাকতে হয়। আর সে প্রস্তুতি ভারতবাসীর ছিলনা। শুধু নকশাল বাড়ীর প্রভাব দিকে পুরো দেশকে চমকে দেবার চিন্তাটা ঠিক ছিলনা বোধহয়, কারন ভারতের সাধারন মানুষ তখনো সাম্যবাদের সুবিধা অসুবিধা নিয়ে বিস্তর বুঝে উঠতে পারেনি।
রাজনীতি, কমিউনিজম, ইতিহাস এগুলো নিয়ে আমার খুব একটা মাথা ব্যাথা না থাকলেও একটা ব্যাপার আমাকে বরাবরই ভাবিয়েছে । সেটা হল তৎকালীন তরুণদের পরিবর্তন করতে চাওয়ার ইচ্ছাটা। চিন্তা করতে পারেন কিছু মধ্যবিত্ত বাংগালী ছেলে পরিবার , ভবিষ্যত, লেখাপড়া ছেড়েছুড়ে একটা শান্তিনিকেতনী ব্যাগ কাধে নিয়ে বেরিয়ে পড়ল ?? তারা বিপ্লব ঘটাকে, তারা চেয়েছিল দেশের কোন মানুষ না খেয়ে থাকবে না, তারা চেয়েছিল একটা উন্নত সমাজ ব্যাবস্থা। তাদের কোন চাওয়াটা খারাপ ছিল ? তাদের দোষ ছিল পূর্বের প্রজন্মগুলোর মত তারা ঘুনে ধরা নিয়মের শৃংখলটাকে পূজো করেনি ? হ্যা… হয়ত ওরা যে পথটা বেছে নিয়েছিল সেটা ভুল ছিল, কিন্তু আমার বয়েসী যে যুবকরা একটা জীবন্ত সমাজের সপ্ন দেখার মত গাটস রেখেছিল- এর জন্য আমি সারাজীবন শ্রদ্ধা করব তাদের। নকশাল আন্দোলন কি দিয়েছে ঐ দেশটির খুব একটা ভেবে দেখিনি তবে শত শত ‘অনিমেষের’ সপ্ন ও ভবিষ্যত কেড়ে নিয়েছে এটা বলতে পারি।
বিঃদ্র- আমি ইতিহাস কিংবা পলিটিক্যাল সায়েন্সের স্টুডেন্ট নই, ইঞ্জিনিয়ারিং এর একজন অধম ছাত্র। তাই এই বিষয়ে আমার প্রাতিষ্ঠানিক কোন জ্ঞান নাই। অনেক বছর আগে থেকেই নিজের কৌতুহল মেটাবার জন্য পড়াশোনা করতাম এগুলো নিয়ে নেটে, এবং করছিও। তাই যদি তথ্য ,ইতিহাস ও মন্তব্য গত কোন ভুল থাকে (ইনশাল্লাহ থাকবার কথা নয়)তাহলে আমার অনিচ্ছাকৃত ভুলের জন্য অগ্রিম ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।
২৩ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১২:২৬
শূণ্য মাত্রিক বলেছেন: ঠিক বলেছেন গেম চেঞ্জার,,,, দ্রুত আন্দোলন করে সফল হবার ইতিহাস শুধু বোধহয় লেনিন এরই আছে। তাছাড়া নাই।
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ
২| ২৩ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১২:৪১
রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: নকশাল প্রথমে সাম্যবাদী অান্দোলন হিসেবে শুরু হলেও পরবর্তীতে সন্ত্রাসবাদী অান্দোলনে রুপ নেয় ।
২৩ শে অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ৮:২৮
শূণ্য মাত্রিক বলেছেন: একমত। শ্রেনী শত্রু খতমের নামে ওরা অনেক মানুষকে হত্যা করেছিল। তবে পুলিশ কিংবা সরকার ও সে সময় তাদের প্রতি সুবিচার করেনি এটাও আমাদের বলতে হবে।
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ
৩| ২৩ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১:২৩
নব ভাস্কর বলেছেন: নকশালদরে বিষয়ে আমারও কিছুটা জানার সুযোগ হয়েছে। আমার মনে হয় নকশালরা কি করতে চেয়েছিল সেটা তারা নিজেরাই বোঝেনি। বিপ্লব করতে গিয়ে তারা উপমহাদেশের সামাজিক প্রেক্ষাপট বিচারে এনেছিল কি না তা নিয়ে আমার ঘোরতর সন্দেহ আছে। নকশালদের তত্ত্বকথা সাধারণ মানুষের মাথায় ঢোকেনি। ফলে তারা ভুলভাবে সমাজে উপস্থাপিত হয়েছে। আর বিপ্লব এগিয়ে গিয়েছে ব্যর্থতার দিকে।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে নকশালপন্থীরা দুই কুকুরের লড়াই বলে অভিহিত করে গণজাগরণের বিপরীতে অবস্থান নিয়েছিল ফলে যে মানুষের জন্য তারা বিপ্লব করতে চেয়েছিল তাদের থেকে একেবারেই বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। তারপরও যতটুকু আলো মিট মিট করে জ্বলছিল তা কোন বিপ্লবী চেতনার আলো ছিল না, তাই কেবল অন্ধকারই বাড়িয়েছে।
২৩ শে অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ৭:৫৫
শূণ্য মাত্রিক বলেছেন: সহমত পোষন করছি। তবে নকশাল শেষের দিকে অনেক ভাবে বিভক্ত হয়ে যায়, ধরে ধরে শ্রেণী শস্ত্রু নিধনের বিষয়টি নিজ দলের অনেকেই মেনে নিতে পারেননি। কিন্তু আমি শুনেছিলাম একবার নকশালরা নাকি আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধকে সমর্থন জানিয়েছিল, যদিও আমার কাছে রেফারেন্স এখন নাই। তবে কিছু নকশাল টাইপের বামপন্থি মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী ছিলেন এটা পড়েছি। তাদের ধারনা দেশ স্বাধীন হলে আমরা ভারতের আজ্ঞাবহ হয়ে যেতাম আর পরাধীন থাকলে পাকিস্তানের। বাংলাদেশের সমসাময়িক বিপ্লবী সিরাজ সিকদার এই ধারনা পোষন করতেন।
আপনার সুচিন্তিত মতামতের জন্য ধন্যবাদ ভাই
৪| ২৩ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ২:১৩
আমি মিন্টু বলেছেন: আমি আবার এসব পড়লেও কিছের নাকশাল আবার বাকশাল আন্দলোন এসব বুঝি নাগো ভাই । আমারে একটু বুঝাই কহন যায় ভাই
২৩ শে অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ৮:০৮
শূণ্য মাত্রিক বলেছেন: সহজ কথায় নকশাল ছিল একটা বিদ্রোহী বামপন্থি দের দল, যারা নিজেদের আদর্শ রক্ষার্থে সিপিআই সিপিএম থেকে বেরিয়ে এসেছিল । ওরা চেয়েছিল কৃষকরা তাদের জমি ফিরে পাক, শ্রমিক মজুররা তাদের অধিকার ফিরে পাক .... আর সেই অধিকার আদায়ের লক্ষে তারা চীনের বিপ্লবী মাও সে তুং এর পদাংক অনুসরণ করে শ্রেণী সংগ্রাম করে। কিন্তু আস্তে আস্তে সেটা সন্ত্রাসী আন্দোলনে রূপ নেয়। পুলিশ ব্যাপক ধরপাকড় চালায়, ওপের গুলি করে ওদের থামানোর জন্য। নকশাল বাদী সাথে অনেক নিরীহ ছেলেরাও সে সময় ভবিষ্যৎ হারায়। সমরেশ মজুমদারের কালবেলা, কালপুরুষ পড়লে এগুলো পুরোপুরি ক্লিয়ার হয়ে যাবেন আশা করি।
ধন্যবাদ
৫| ২৩ শে অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ১০:০২
বঙ্গভূমির রঙ্গমেলায় বলেছেন:
নকশাল আন্দোলন সম্পর্কে তেমন কিছু জানা ছিলনা।
আপনার পোস্টের মাধ্যমে জানতে পারলাম।
ধন্যবাদ ভাই।
২৩ শে অক্টোবর, ২০১৫ বিকাল ৩:১১
শূণ্য মাত্রিক বলেছেন: জানাতে পেরে আরো ভালো লাগছে … ভাল থাকবেন ভাইয়া।
৬| ২৩ শে অক্টোবর, ২০১৫ দুপুর ১২:২৩
শাশ্বত স্বপন বলেছেন: নকশাল এর প্রতি দুর্বলতা আছে আমার
২৩ শে অক্টোবর, ২০১৫ বিকাল ৩:১১
শূণ্য মাত্রিক বলেছেন: থাকাটা অস্বাভাবিক নয় ভাই। মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
৭| ২৩ শে অক্টোবর, ২০১৫ দুপুর ২:১১
জেন রসি বলেছেন: নকশাল আন্দোলনে যুক্তির চেয়ে আবেগের প্রাধান্য ছিল বেশী।পথে নামলেই নতুন পথের দেখা পাওয়া যাবে অনেকটা এমন ভাবনা থেকেই এ আন্দোলন শুরু হয়ে গিয়েছিল। তবে বাস্তব পরিস্থিতি বিশ্লেষণ না করে চীনের গণতান্ত্রিক বিপ্লবকে অনুকরন করার একটা ভ্রান্ত প্রবনতা ছিল নকশাল নেতেদের মধ্যে। তবে এ আন্দোলনে যারা নিজের জীবন বাজি রেখে ঝাপিয়ে পড়েছিল তারা আসলেই একটি শোষণহীন সমাজ গড়ার জন্য নিজেদেরকে উৎসর্গ করেছিল। তাদের প্রতি সবসময় শ্রদ্ধা থাকবে।
চমৎকার পোষ্ট।
২৩ শে অক্টোবর, ২০১৫ বিকাল ৩:১১
শূণ্য মাত্রিক বলেছেন: পুরোপুরি সহমত ভাইয়া। মাও সে তুং পেরেছিলেন তার ব্যাপক জনসমর্থনের জন্য, কিন্তু নকশাল পন্থীরা একটু বেশিই রোমান্টিসিজম দেখিয়ে ফেলেছিল। শ্রেণী শত্রু খতমের ব্যাপারটা ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজের মূর্তি ভাংগার মত কাজ তাদেরকে জন সমর্থন থেকে সরিয়ে নিয়েছিল। ফলস্রুতিতে সরকার ব্যাপক দমন নিপীড়ন চালালেও দেশবাসী প্রতিবাদ করেনি। শুধু তাদের পথটা ভুল ছিল ।
অনেক ধন্যবাদ। আপনার মন্তব্য বরাবরই অনুপ্রেরণা দেয়।
৮| ২৩ শে অক্টোবর, ২০১৫ বিকাল ৫:৪৩
প্রামানিক বলেছেন: নকশাল আন্দোলন সম্পর্কে অনেক কিছু জানা হলো। ধন্যবাদ
২৪ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১১:৪১
শূণ্য মাত্রিক বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই। জানাতে পেরেছি জেনে খুব ভালো লাগল
৯| ২৩ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ৯:৩৯
আহমেদ জী এস বলেছেন: শূণ্য মাত্রিক ,
আপনার বিশ্লেষন আর পাঠকের মন্তব্য পড়ে এক কথায় উপসংহার টানা যায় এভাবে ------ এক গাছের ছাল আর এক গাছে লাগেনা কিম্বা সৌদি আরবের খেজুর বাংলাদেশের মাটিতে হবেনা । অর্থাৎ একটি ভুখন্ডের সামগ্রিক আবহাওয়া ( সামাজিক ,অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, ভৌগলিক, সাংষ্কৃতিক ইত্যাদি ) আর একটি ভুখন্ডে অভিযোজিত হয় না তেমন একটা ।
খোল নলচে না পাল্টালে তা সম্ভব নয় মোটেও ।
আমাদের দেশেও চরম বামপন্থী দলগুলোও একারনেই ব্যর্থ ।
তবে এটা ঠিক , একটি স্ফুলিঙ্গই দাবানল ছড়ানোর জন্যে যথেষ্ট । তরুন সমাজকে একটি সত্যিকারের আদর্শের দাবানলে গরম করে তোলা যায় হয়তো সহজেই কিন্তু তাকে ধরে রাখা বড্ড কঠিন । দাবানল বেপরোয়া হয়ে গেলে সব পুড়ে ছাই হয়ে যায় ।
২৪ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১১:২৮
শূণ্য মাত্রিক বলেছেন: অসাধারণ বিশ্লেষণ করেছেন আহমেদ জি এস। একদম সঠিক বলেছেন, পরিবর্তনের সপ্ন দেখিয়ে যে দাবানল টা সৃষ্টি করেছিলেন চারু মজুমদারেরা পরে সেটাই লাগামহীন হয়ে গেছিল। আর কমিউনিজম এর মত বিষয়ে মানে শত মত শত রকমের বিশ্লেষণ, ফলে আন্দোলন খাপছাড়া হতে সময় নেয়নি।
অসাধারণ বিশ্লেষণের জন্য ধন্যবাদ
১০| ২৪ শে অক্টোবর, ২০১৫ দুপুর ২:০৪
আল ইফরান বলেছেন: সামাজিক ন্যায়বিচার কায়েমের লক্ষ্যে সমাজের যে অংশটি এই আন্দোলনের সাথে সামিল হয়েছিল, তাদের কাছে 'সাম্যবাদ, মুক্তি আর ন্যায়বিচার' প্রতিষ্ঠার কোনো সুনির্দিস্ট কর্মপরিকল্পনা ছিলো না।
সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব কোনো রঙ্গিন স্বপ্নের ফানুস নয়, চরম ধৈর্য্য, ত্যাগ আর ইস্পাতসম দৃঢ়তার প্রয়োজন যা দেখিয়েছিলো বলশেভিকরা অথবা মাওবাদীরা।
কানু স্যানাল আর চারু মজুমদাররা বিপ্লবের রোমান্টিক স্বপ্ন দেখিয়েছেন আর তার কঠিন বাস্তবতার রুপটি দেখিয়ে দিয়েছে ধনিক শ্রেণীর স্বার্থরক্ষাকারী শাসকশ্রেনী।
এই ভাবে নেতৃত্বের অবিমৃশ্যকারীতায় হারিয়ে যাওয়া হাজার হাজার সম্ভাবনাময় তরুন-তরুনীর হারিয়ে যাওয়ার দায় ইতিহাসের বুক থেকে মুছে যাবে না।
২৪ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১১:৩৮
শূণ্য মাত্রিক বলেছেন: ভীষনভাবে একমত ভাই। পূর্ব পরিকল্পনা ছাড়াই ওরা খুব বড় একটা মেনিফেস্টো হাতে নিয়ে ফেলেছিল। আমার মনে হয় চারু মজুমদার কিংবা ক্যানু স্যানালেরা নিজেরাও বুঝতে পারেননি যে তাদের নকশাল বাড়ীর প্রয়াস টুকু এভাবে যুব সমাজকে পরিবর্তনের সপ্ন দেখাবে। আর ওরা চীনের আদলে হলেও তারা দেশের জন্য কিছু করতে চেয়েছিল, এটুকুই অনেক কিছু। কিন্তু দেশ সেই সপ্ন দেখা যুবকদের গ্রহন করতে পারেনি।
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ
১১| ২৪ শে অক্টোবর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:০১
ডাঃ মারজান বলেছেন: নকশাল আন্দোলন সফল হয়নি। ঝরে গিয়েছিল কিছু তাজা প্রাণ, আবার কারো খোঁজ মেলেনি। জেলের ভেতর নির্যাতনে বরণ করে নিতে হয়েছিল পঙ্গুত্ব। হয়ত তাদের আদর্শ ঠিক ছিলনা, কিন্তু তারা দাঁড়িয়েছিলো নিপীড়িত মানুষের পাশে। আজও রক্ত চোষারা বেঁচে আছে, আগামীতেও থাকবে। কিন্তু তারুন্যের মৃত্যু নেই, প্রতিবাদ আসবেই।
২৪ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১১:৪৫
শূণ্য মাত্রিক বলেছেন: সহমত ডা: মারজান। হ্যা, ,, তাদের বেছে নেওয়া পথটা সত্যিই সঠিক ও সময়োপযোগী ছিল না, কিন্তু তাদের প্রত্যাশা ও সাহস অবশ্যই শ্রদ্ধার দাবি রাখে।
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ
©somewhere in net ltd.
১|
২৩ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১২:১৮
গেম চেঞ্জার বলেছেন: নকশালদের ব্যাপারটা আমাকে আজো ব্যথিত করে। আসলে হুটহাট কোন সংগ্রামই সফল হয় না। সুপরিকল্পনা, চরমপন্থার আশ্রয়, আবেগ মানসিক অধৈর্য, জনগনের সাথে দূরত্ব প্রভৃতি কারণে চারু মজুমদাররা হেরে গেলেন। যদিও তাদের লক্ষ্য ছিল জনতার জন্য, মুক্তির জন্য দুঃশাসন থেকে।
পোস্ট ভাল হয়েছে। ১ম +