![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বহু নিয়ম মেনেছি। লেখাপড়া করার নিয়ম... মেনেছি, পরীক্ষা দেবার নিয়ম... মেনেছি, চাকরী করবার নিয়ম... মানব। কিন্তু নিয়মটা কে মানা উচিৎ একথাটাও কি মানতে হবে ?
এক
রাত তিনটা সাতাশ। পুরো শহরের মানুষ আরেকটি ক্লান্ত কর্ম ব্যাস্ত দিন পার করে বিভোরে ঘুমোচ্ছে। কিন্তু কিছু মানুষ আছে যাদের রাতে ঘুমোলে চলেনা। রাতটা তাদের কাছে আশীর্বাদ, তাদের অন্নদাত্রী। শহর থেকে কিছুটা পাশে হওয়ায় হ্যারিসন রোডটা প্রায় রাত এগারোটার পর পরই শুনশান হয়ে যায় … পুলিশি টহল থাকলেও তা সাড়ে এগারোটার আগেই, পরে না মোটেও। দ্বিগুন টাকা দিয়ে হলেও রিক্সা কিংবা অটো এদিকটার পথ মাড়ায় না। বছর তিনেক আগের কথা… একদিন এলাকা বাসী এই রোডের পাশ্ববর্তী একটি খাদের ভিতরে তিনটি লাশ উদ্ধার করে, লাশ তিনটি কার পরে শনাক্ত হয়েছিল। তারা আলাদা আলাদা জায়গার অধিবাসী কিন্তু তাদের মৃত্যুটা একই ভাবে হয়েছিল। তিনজনের শরীরেই মাথা নেই, যেন গলা থেকে কোন মেশিন খুব সূচারুভাবে মাথাটাকে আলাদা করে নিয়েছে। কিন্তু পুলিশ সহ ফরেন্সিকের ডাক্তাররা যেটা দেখে অবাক হয়েছিলেন সেটা হল ঘটনাস্থলে কোন রক্ত ছিলনা। ঘটনাস্থলে মৃতদেহ গুলোর মানিব্যাগ, টাকা সহ যাবতীয় জিনিস পাওয়া যায়, ধ্বস্তাধ্বস্তির চিহ্ন পাওয়া যায় কিন্তু একটি ফোটা রক্ত সেখানে ছিলনা। আর তাদের ক্ষতস্থানের ধরনটা ছিল অস্বাভাবিক, ফরেন্সিক ডাক্তারের সংবাদ সম্মেলনে জানান যে তাদের কর্মজীবনে এমন নিখুত ক্ষত এই প্রথম এক্সপেরিয়েন্স করলেন তারা।
দুই
এত রাতে যারা হ্যারিসন রোডের রাস্তা দিয়ে শিষ বাজিয়ে হেটে যেতে পারেন তারা স্বাভাবিক পেশাজীবি হতে পারেন না। রাত সত্যিই তাদের অন্নদাত্রী… এমন দুজন রমন ও মহিদুল। ডাকনাম মহি। দুজন একই পাড়াতে থাকে, তাদের পেশাও এক…চুরি। মহি ছিচকে চোর… বাসাবাড়ি থেকে সাধারন জিনিস চুরি করে। কিন্তু রমন অনেক ডেঞ্জারাস, সে কবস্থান থেকে কাফন চুরি করে। তার কোন পিছুটান না থাকলেও মহির ছিল। মহি আগে গ্রামে থাকত … বাবা মরেছে জন্মের আগে, মা গত হয়েছে দশ বছর বয়েসে। বিয়ে করেছে মহিদুল, কিন্তু তার কিছুদিন পরেই তাদের একমাত্র ভিটে বাড়িটা বানের জলে তলিয়ে যায়। তখন সে তার বৌকে নিয়ে শহরের দিকে আসে… চুরির ব্যাপারে তার বউয়ের ছিল ব্যাপক আপত্তি।
- বিয়ার আগে আফনেই আমার মায়েরে কইছিলেন আপনি রাইতে মাওলানার গোডাউনে মুনিষ খাটেন। তারা এহনো জানেনা আফনে চোর। আমি এহহান চোরের লগে ঘর করতেছি। প্যাটের বাচ্চাডারে জম্মের পর কি বুজাইমু ?? তোর বাপে চোর ?
- তুই খালি খালি আমারে দোষ দিস বৌ, তুই তো জানিস … আমি কি খারাপ লোক বল ? প্যাটের দায়ে এই কাম করি, তোরে কি খাওয়ামু তাছাড়া। গতরের কাজ আমার ধাতে সয়না। আর আমি যাগো বাড়িতে চুরি করি তাগো ঢের পয়সা আছে। এট্টুখানি চুরিতে তাগো কুনো যায় আসে না।
মহির পরিচয় রমনের সাথে হয় শহরে এসেই। রমন মহিকে অনেক বোঝায় যে এই সাধারন ছিচকে চুরি বাদ দিয়ে তার সাথে কাফন চুরিতে যোগ দিতে, লাভ সমানে ভাগাভাগি হবে। কিন্তু মহি সময় নিচ্ছিল… পরে লাভের কথাচিন্তা করে রাজি ও হয়ে যায়। কারন তার পরিবারে নতুন অথিতি আসছে, একটা মুখ বাড়া মানে মহির কাছে অনেক কিছু।
তিন
আজ রমনের সাথে কাফন চুরির প্রথম দিন মহির। তাদের গন্তব্য হ্যারিসন রোড দিয়ে স্টেশানে যেতে বাম হাতের গোরস্থানটিতে। গোরস্থানের গেটে দারোয়ান থাকে … তাই গেট দিয়ে তারা ঢুকবেনা। পাশের একটা গলি দিয়ে গোরস্থানটির সীমানা প্রাচীর দেখা যায়, ঐ প্রাচীরের নিচে একটা ধ্বসা কবর আবিষ্কার করেছিল রমন। সেখান গলেই ঢুকল তারা। ঢোকার সময় মহির পায়ে একটা শক্ত কিছু বাধে … দুই সেলের টর্চটা সেদিকে তাক করল সে। দেখল একটা কংকালের পাজরের উপর তার পা। খুব জোরে চিৎকার করতে গেছিল সে, মুখ চেপে ধরল রমন। তাকে বোঝালো এগুলোর সাথে অভ্যস্ত হতে হবে। গোরস্থানের পরিবেশটা গায়ে কাটা দিচ্ছিল মহির। সীমানা প্রাচীরের উপর লাগানো নিয়ন আলোগুলো কবরের ফলকে প্রতিফলিত হয়ে একটা ভৌতিক পরিবেশ সৃষ্টি করেছিল… সাথে তার মনোযোগ নষ্ট করছিল গোরস্থানের শব্দগুলো। কোনটা শেয়ালের ডাক, কোনটা কুকুরের গুলিয়ে ফেলছিল মহি। গোরস্থানের ভিতরে যেন ওরা অন্য একটা চেহারা ধারন করে … বদলে যায় ওদের দিনের চেনাজানা বৈশিষ্ট।
মহি খুব মনোযোগের সাথে দেখছে রমনের কাজের ধরনটা। যেই কবরটা তারা আজ বেছে নিয়েছে সেটা গতকালকেই মাটি দেওয়া হয়েছে … তাই উপরের মাটিটা নরম আছে এখনো। ছোট কোদালটা দিয়ে মাটি সরাতে লাগল রমন, কাজে হাত লাগাল মহিও। মাটি সরে গেলে বাশের খাপাচি গুলো একটা একটা করে তুলে আনল ওরা দুজন মিলে। এখন সাদা কাফনে মোড়া একটা মৃতদেহ স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে মহি। রমন তার দিকে ইশারা করে নেমে গেল কবরের ভিতরে। দুই সেলের টর্চের আলোটা মহির হাতের সাথে সমানুপাতিক হারে কাপছে … নানা রকমের প্রশ্ন তখন ঘুরছে তার মাথায়। আচ্ছা যদি হঠাৎ করে এই লাশটা চোখ খুলে তাকায় ? যদি হাতটা দিয়ে রমেনকে চেপে ধরে ? যদি তাকে কবরের মধ্যে টেনে নেয় ?? ততক্ষণে রমেন একটানে মৃতদেহের উপরের দিক থেকে কাপড় সরিয়ে ফেলল … কপূরের কড়া গন্ধ ছড়িয়ে পড়ল চারিদিক। মহি স্পষ্ট বুঝতে পারছে তার হৃদকম্পটা অনিয়মিত হয়ে আসছে আস্তে আস্তে। এই প্রথম মৃতদেহের মাথাটা দেখতে পেল সে। একটা ২৫ বছর যুবকের মৃতদেহ। সারা শরীরে কাটা ছেড়ার চিহ্ন। মহি আন্দাজ করল সম্ভবত ময়না তদন্তের লাশ। তারপর কাফনটা রমন মৃতদেশ থেকে আলাদা করে নিল… একদম সম্ভ্রমহীন অবস্থায় পড়ে থাকল মৃতদেহটা। বিবেক তাড়নায় ভুগছিল মহি, সে মুসলমান। কিন্তু রমন হিন্দু। সে যত স্বাভাবিকভাবে এটা করতে পারবে মহি সেটা পারবেনা। এই ব্যপারে রমন বলেছিল
- তুই আবার যুধিষ্ঠিরের মতন কতা কইতে শুরু করলি কবে থেইকা ? এই দামী কাফন গুনা কি মরা মাইনষের কুন কাজে লাগে ?? তুই ই ক !! ঐতা দিয়া যদি আমার তোর মত দুইডা মাইনষের পেটের ভাত কিনা হয় তয় খারাপ কিসে ??? শোন… মনে রাখবি চুরি করতে আইছস, আর চুরি করতে আইসা নীতি বাক্য **** চলে না।
চার
মহি চিন্তা করে দেখল এটা বেশ লাভজনক, আর বউকে সে এব্যাপারে জানাবেনা । কিন্তু সে পরপর দুদিন রমনের দেখা পায়নি। বাধ্য হয়ে সে রমনের বাড়ি গেল, দেখল তার বাড়ির উঠানে এক বুড়ি বসে … সম্পর্কে রমেনের খুড়ি মা। তিনিই জানালেন আজ ঘুম থেকে উঠে রমেনের প্রচন্ড জ্বর, বেহুশ হয়ে পড়ে আছে… আর মাঝে মাঝে প্রলাপ বকছেঃ “আমি আর জ্যেবোনেও তোমাদের এদিকে আইব না… তোমরা আমার কতা শোনো না ক্যান …আমারে এইবারের মতন যাইতে দাও। তোমাগো কাপড় আমি তোমাগোরে ফিরায় দিব”। কথাগুলোর মাথা মুন্ডু কিছুই বুঝলনা মহি। অগত্যা সে বাড়ি চলে আসল। কিন্তু পেট তো থেমে থাকে না, মহি মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সে এখন থেকে ছোট ছোট চুরি বাদ দিয়ে দিবে… রমনের কথা গুলোই মনে ধরেছে তার। কিন্তু রমেনের জন্য বসে থাকলে তার চলবে না, আজ সে হয়ত একাই বেরুবে গোরস্থানের উদ্দেশ্যে।
রমনের সাহায্য ছাড়া কাফনচুরির প্রথম দিন আজ মহির। সে একাই বেরুয়েছে, সাথে কিছু বলতে মাত্র দু’সেলের একটা টর্চ। রমনের আবিষ্কৃত সেই পুরোনো কবরের সুড়ংগের মধ্য দিয়েই প্রবেশ করল সে, তবে আজ খুব সাবধানে… কংকালটার উপরে পা ফেলেনি সে। কিন্তু টর্চের আলো কবরে ফেলায় সে খেয়াল করল কংকালের মাথাটা সেখানে নেই। সে ততটা গুরুত্ত্ব দেয়নি… সামনের দিকে হেটে গেল। কবরস্থানটা নতুন একদম মহির কাছে, কোনটা পুরোনো কিংবা কোনটা নতুন কবর সেটা মোটেও বুঝতে পারছে না মহি। তার উপরে কাল বৃষ্টি হয়েছে… সে একটা করব বেছে নিল। আস্তে আস্তে সরাতে লাগল মাটিগুলো… মাটি সরাতেই বাশের খাপাচীগুলো বেরিয়ে আসল। সে একটা একটা করে সেগুলো সরাতে লাগল… পুরো গোরস্থনে জীবন্ত প্রাণী বলতে সে একা। হঠাৎ মহি তার পাশে কিছু একটা আছে বলে অনুভব করল… গাড় নিঃশ্বাস নেবার শব্দ। মহি খুব কষ্টে নিজের হার্টবিট সংবিত করার চেষ্টা করল… পাশে তাকাতে ভয় পাচ্ছে সে। ক্রমশ সেই নিঃশ্বাসের শব্দটা তার কাছে চলে আসতে লাগাল , এবার না তাকালে বিপদে পড়তে পারে মহি। সে খুব কষ্টে মাথাটা ঘুরালো। একটা কালো কুকুর, চোখগুলো জ্বলজ্বল করছে তার দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে। সে হাতের টর্চ নাড়িয়ে ভয় দেখাতে চাইল, কুকুরটা ভয় পেলনা… ঠিক সেই একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে ওর দিকে। কেমন জানি অস্বাভাবিক চাহনি আছে কুকুরটার , কিছু একটা বোঝাইতে চাচ্ছে মহিকে যেন। এবার মহি চাইল টর্চের আলোটা ওর দিকে ফেলতে…কেননা ও যে কাজটা করতে এসেছে সেখানে অনাকাংক্ষিত অতিথির উপস্থিতিটা খুবই বিব্রতকর। কিন্তু এটা কি ?? মহি খুব কষ্টে নিজেকে চিৎকার করা থেকে সংযত রাখল তার সামনে যে প্রানীটা দাঁড়িয়ে তার পায়ের পাতায় মানুষের পায়ের মত আংগুল। এটা দেখে মহি আবারো প্রানীটার মুখের দিকে চাইতে দিয়ে দেখল সেটি আর নেই। কিছুই বুঝতে পারল না সে … নিজের ভ্রম ভেবে আবার মনোযোগ দিল নিজের কাজে। ততক্ষনের বাশের খাপাচী গুলো সরানো শেষ। সে ভিতরে নামল … কিন্তু বিশ্রী একটা দুর্গন্ধে তার প্রায় বমি চলে আসার যোগাড় হল। ততক্ষনে সে বুঝতে পারল সে ভুল কবরে নেমে পড়েছে, এটা অনেক পুরোনো। সে উঠে পড়তে যাবে হঠাৎ সে অনুভব করল তার পায়ের নিচের মাটি সরে যাচ্ছে। কোন ক্রমে হাতদুটো সে কবরের ধারে রেখে আপ্রান উঠতে চেষ্টা করল, কিন্তু তার শরীরের ভর যেন কয়েকগুন বেড়ে গেছে। সে বুঝতে পারল সে ক্রমশ তলিয়ে যাচ্ছে … কোথায় যাচ্ছে সে জানেনা, ক্ষীন আলোয় সে দেখতে পেল কবরের মুখের কাছে সেই অদ্ভুত প্রানীটি তার দিকে সেই আগের মতই চাহনিতে তাকিয়ে আছে… বেশ কিছুক্ষন মাটির সাথে যুদ্ধের পর সে পায়ের নিচে শক্ত কিছু আবিষ্কার করল।
পাচ
অনেকবড় একটা জায়গা, ঘর বলতে সেটাকে অস্বস্তি হয়। একটা মানুষ সমান উচ্চতা, চারিদিকে ঝাপসা এক ধরনের আলো আছে। কিন্তু সে আলোটার উৎস মহি অনেক চেষ্টাতেও বের করতে পারল না। পুরো ঘরটাতে সে একা…কোন দরজা নেই, না আছে কোন জানালা। দেয়ালগুলো মাটির । কিন্তু কিছু ক্ষন যেতে না যেতেই মহির মেরুদন্ড বেয়ে শীতল একটা স্রোত বয়ে গেল। কি দেখছে এসব সে ?? সে কি এই পৃথিবীতে আছে ?? সে কি জীবিত আছে ?? সে দেখল কাফনে মোড়া সিলিন্ডার আকারের কিছু বস্তু তার দিকে এগিয়ে আসছে, একটা মানুষকে কাফনে মোড়ালে যেমন হয় ঠিক সেমন। কাফনটি মাথা আর পায়ের কাছে বেধে রাখা … কিন্তু এরা হাটছে কিভাবে ? ঝাপসা আলোয় সে শুধু এটুকু দেখতে পেল ওরা এগিয়ে আসছে… শূণ্যে ভর করে, মাটিতে ওদের সংস্পর্শ নেই। ওরা গোল হয়ে ঘিরে ফেলেছে মহিকে। এর পরের স্টেপটা কি হতে পারে মহির মাথায় আসছিলনা… ওরা কি মহিকে মেরে ফেলবে ? কাফন চুরি করতে এসেছে বলে কি মহিকে এই কবরের নিচেই আটকে রাখবে ওরা ? ততক্ষনে মৃতদেহের মাথার অংশের কাফন সরে যেতে লাগল… সবার একই সাথে। ওরা যেন মহিকে বিচার করবে। কাফনটা সরে বুকের কাছাকাছি এসে থেমে ফেল। যাদেখল দেখল মহি তাতে সে নিঃশ্বাস ফেলতে ভুলে গেছিলো। কে বলেছে এরা মৃত ? দিব্যি সবাই তাকিয়ে আছে মহির দিকে, কাউকে আলাদা ভাবে চেনার উপায় নেই। তাদের শরীরে অর্ধ গলা মাংস ঝুলে আছে… যেন এই মাত্র মাটি থেকে উঠে আসল। কপূরের গন্ধটা আর নেই, বিশ্রী একটা গন্ধ … পৃথিবীর কোন দূর্গন্ধের সাথেতার তুলনা হয়না। তারা নিজেদের ভিতরে কথা বলছে… এমন ভাষা মহি কোনদিন শোনেনি। কিন্তু অলৌকিক ভাবে মহি বুঝতে পারছে তা কি বলতে চায়। মহি খেয়াল করল সমস্ত মৃতদেহরা কিন্তু উঠে আসেনি । অল্প কিছু সংখ্যক, মহি আন্দাজ করল এদের কাফন সম্ভবত চুরি করেছিল রমন। হঠাত তার মনোযোগ কাড়ল তার ডানপাশের তিনটি মৃতদেহ, যাদের মাথা ছিলনা। কাফনের ঐ অংশটুকু ঝুলে ছিল … “আচ্ছা এরা ঐ তিনজন না যাদের মৃতদেহ হ্যারিসন রোডের ধারে পেয়েছিল পুলিশ “ ? – নিজেকে প্রশ্ন করল মহি। শেষ ঝটকাটা তখনো অপেক্ষা করছিল মহির জন্য … সে দেখল মৃতদেহ গুলো সমস্ত শরীরের কাফন খুলে এগিয়ে আসছে মহির দিকে। তাদের শরীরের পচে যাওয়া মাংশ আর মাটির মিশ্রনে যে কি ঠিক কি রংটা তৈরী তাদের দেহের সেটা ঐ ঝাপসা আলোতে বুঝতে পারেনি মহি। ওরা চাচ্ছেকি ? মহি শত চেষ্টায় তার পা এক ইঞ্চি নড়াতে পারল না সেখান থেকে। কিন্তু ওরা এগিয়ে আসছে ? ওরা কি আলিংগন করবে মহিকে ? আর পারল না মহি, চিৎকার করে উঠলঃ “আমি আর জ্যেবোনেও তোমাদের এদিকে আইব না… তোমরা আমার কতা শোনো না ক্যান …আমারে এইবারের মতন যাইতে দাও। তোমাগো কাপড় আমি তোমাগোরে ফিরায় দিব”।
ছয়
সন্ধ্যা ছয়টা বাইশ। মহি রাতে বাইরে থাকে বলে দিনের বেলায় ঘুমিয়ে নেয়। কিন্তু হঠাৎ তার চিৎকার চেচামেচি শুনে ঘরে চলে আসল মহির বৌ।
- এমনে বাচ্চা মাইনষের মতন চেচান কেন ? কি জানি কইতেছিলেন “আমি তোমাগোরে তোমাগো কাপড় ফিরায়ে দিব”… হইছিল কি আপনার ? আফনে কি মাইনষের পরনের থেইকা কাপড় ও চুরি করবার লাগছেন ?? – বলতে বলতে হেসে ফেল মহির বৌ।
কোন ক্রমে ঘোরটা কাটল মহির। গায়ে কোনক্রমে একটা কাপড় জড়িয়ে দৌড় দিল রমনের বাড়ির দিকে। দেখল ও খানিকটা সুস্থ্য। মহির স্বপ্নের কথা শুনে কিছুক্ষন চুপ করে থাকল রমন, চোখেমুখে তার এক ধরনের আতংক। সে মহিকে বলল গত রাতে সে নিজেও এই একই স্বপ্ন দেখে… প্রচন্ড ভয় পায়, আর জ্বর আসে। ওদের দুজনেই দুজনের দিকে তাকি … স্বপ্ন অবাস্তব, অলৌকিক হয় ওরা জানে, কিন্তু একই স্বপ্ন দুজনের দেখার অর্থ কি সেটা ওরা জানেনা। দুজনেই সিদ্ধান্ত নিল মৃত্যুর আগে ওরা কখনো আর গোরস্থান মুখো হবে না।
হ্যারিসন রোড ধরে হাটতে হাটতে বাড়ি ফিরে আসছে মহি… তার বাড়ি আসার পথে গোরস্থানটি পড়ে। কিছুক্ষন আনমনে তাকিয়ে থাকল সে গোরস্থানের দিকে… এখন রাত পড়ে গেছে। লোকজনের আনাগোনাও কম। একটা সময় হঠাৎ চোখাচোখি হল গোরস্থানের দারোয়ানটির সাথে। অদ্ভুত একটা হাসি দিলে দারোয়ানটা যেন সে মহিকে কত বছর চিনে… না, ঐ হাসি অন্য কোন রহস্য আছে। একটা অপরিচিত লোককে দেখে কেন হাসবে দারোয়ান ?? কথাটা চিন্তা করতে আবার বাড়ির পথে পা বাড়াল মহি। এবার হাটার গতিটা একটু বেশি।
১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:১০
শূণ্য মাত্রিক বলেছেন: ধন্যবাদ প্রামানিক ভাই মন্তব্যের জন্য।
২| ১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ৩:২৩
ফারহান মুক্তাদির বলেছেন: ভাল্লাগচে......
১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:১০
শূণ্য মাত্রিক বলেছেন: ধন্যবাদ ফারহান মুক্তাদির।
৩| ১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১০:২৮
অলওয়েজ ড্রিম বলেছেন: খাইছে, গায়ের লোম সব দাঁড়িয়ে গেছে।
শেষ অনুচ্ছেদে কিছু একটা রহস্যের ইশারা, কিন্তু ধরতে পারি নাই।
ক্লান্ত কর্ম নাকি কর্ম-ক্লান্ত?
আর সেমন হবে নাকি তেমন?
১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:১০
শূণ্য মাত্রিক বলেছেন:
ধন্যবাদ অনওয়েজ ড্রিম। ভয় পেয়েছেন জেনে ভাল্লাগলো … হি হি হি । আর যে ব্যাকরণে অনেক দূর্বল , আপনি বলে দিলেই ভালো হতো। এখন আরো কনফিউজড হয়ে গেছি।
৪| ১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১০:৫৫
সাদ ছানু বলেছেন: খুব ভালো লাগছে।
১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:১১
শূণ্য মাত্রিক বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ আপনাকে সাদ ছানু, মন্তব্যের জন্য।
৫| ১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৩:০৩
কল্লোল পথিক বলেছেন: চমৎকার গল্প ভাল লেগেছে।
১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:১১
শূণ্য মাত্রিক বলেছেন:
ধন্যবাদ কল্লোল পথিক, গল্পটা যে ধৈর্য নিয়ে পড়েছেন দেখে ভাল্লাগলো।
৬| ১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৪:২৮
দিশেহারা রাজপুত্র বলেছেন: দারুণ লিখেছেন। ভয়ের স্বাদ দিয়েছেন কলমের খোঁচায়।
শেষের রহস্যে পাঠকের জন্যে ছেড়ে দিয়েছেন অনেক কিছু। গল্পের এদিকটাও ভালো লাগল।
১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:১২
শূণ্য মাত্রিক বলেছেন: হা হা হা … কিবোর্ডের খোচায় আর কি। অনেক ধন্যবাদ একটা সুন্দর সুচিন্তিত মন্তব্যের জন্য। আর হ্যা … এবারের প্রোফাইল পিকচারটা কিন্তু ঝাক্কাস হয়েছে।
৭| ১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৪:৫৬
খোলা মনের কথা বলেছেন: প্রায় জমে গেছিলাম। রাতে গল্পটা পড়লে আরএকটু মজা হত।
যাই হোক খুব সুন্দর হয়েছে
১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:১২
শূণ্য মাত্রিক বলেছেন:
অনুপ্রেরনা পেলাম ভাই। ধন্যবাদ। ধৈর্য ধরে পুরোটা পড়েছেন এটা দেখেই ভাল্লাগলো।
৮| ১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৫:২৬
হাসান মাহবুব বলেছেন: আতঙ্কে হাত পা...
সমাপ্তিটা নিয়ে ভাবছি।
১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:১২
শূণ্য মাত্রিক বলেছেন:
হাসান ভাইইইইইইইইই !!! আপনার মন্তব্য না পেলে কেমন জানি খালি খালি লাগে পোষ্টটা। ধৈর্য ধরে পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন।
৯| ১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:১৮
সুমন কর বলেছেন: রহস্যময় গল্প ভালো লাগল।
১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:১২
শূণ্য মাত্রিক বলেছেন:
ধন্যবাদ সুমন দাদা। আপনার মন্তব্য দেখলেই মনে একটা ছবি ভেসে আসে যে দাদা মনে হয় অফিস থেকে এসে কষ্ট করে ধৈর্য ধরে আমাদের পোষ্ট গুলো পড়ছে।
১০| ১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৩৯
শাহাদাত হোসেন বলেছেন: ভালো লাগলো ভয়ের সাথে রহস্যের মিশ্রণ।
১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:১৩
শূণ্য মাত্রিক বলেছেন:
ধন্যবাদ শাহাদৎ ভাই মন্তব্যের জন্য। ভালো লেগেছে জেনে ভালো লাগছে।
১১| ১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:১৯
সুমন কর বলেছেন: হাহাহাহা....কেন এমন মনে হলো !!! ফ্রী না হয়ে তো, আর পড়তে পারবো না !!
২ দিন ব্লগে ছিলাম না (অফিসের কাজের চাপে), আজ বিকেলে পর ফ্রী হয়ে ব্লগিং শুরু করলাম। (আজ অফিস বন্ধ ছিল... )
১২| ১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ৯:৩০
গিয়াস উদ্দিন লিটন বলেছেন: গা ছমছমে গল্প !
ছমছমে ভাবটা ধরে রেখেই গল্পটা শেষ করা যেতো না ?
তাহলে ভৌতিক রেষটা থেকে যেতো ।
১৩| ১৭ ই জানুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৩:৫৭
অপর্ণা মম্ময় বলেছেন: কাল রাতে মোবাইল থেকে দেখেছিলাম সাম্প্রতিক মন্তব্যের ঘরে আপনার গল্পের নাম। ঢুকে কমেন্ট গুলো আগে পড়ে ভাবলাম গল্প দিনের বেলায় পড়াটাই ভালো হবে।
গল্পটা আসলেই ভালো লাগছে। মহির প্রথম অভিজ্ঞতার যে বর্ণনাটা দিলেন ও মনে মনে কি ভাবছিল, লাশ চোখ খুলে তাকাবে কিনা, ওর পা টেনে ধরবে কি না ইত্যাদি দ্বিধাদ্বন্দ্বটা ভালো লাগছে। কবরস্থানের ছবি দেখে মনে হচ্ছে সত্যিকারের তোলা ছবি!
আমি খালি ভাবি কাফন চোরদের কতটা সাহস হলে তারা কবরে নেমে কাপড় চুরি করতে পারে।
আমার ছোট বেলার কথা। আমার ভাইয়া আর তার বন্ধুরা বিকেলের দিকে জুরাইন কবরস্থানের পাশের মাঠে খেলত। একদিন ক্রিকেটের বল একটা কবরের খোলা অংশ দিয়ে ঢুকে গেছিল। ওদের এক ফ্রেন্ড ছিল, খুব সাহসী। খুব লম্বা ছিল বলে তার নাম হয়েছিল লম্বু রনি। সেই রনি ভাই তার হাত কবরের খোলা জায়গা দিয়ে দিয়ে ঢুকিয়ে বল বের করে আনছিল, সাথে সাথে কিছু চুলও উঠে আসছিলো। তার ভয় লেগেছিল কিনা জানি না রনি ভাইকে দেখলেই আমার ভয় লাগতো এই ভেবে তার সাথে মৃত মানুষের গন্ধ লেগে আছে।
অলওয়েজ ড্রিম ভাইয়ের কমেন্ট দেখুন। কর্মক্লান্ত হবে। সেমন না হয়ে তেমন হবে।
ভালো থাকুন।
১৪| ১৭ ই জানুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৫:২৩
তানজির খান বলেছেন: কাফনচোর, দারুণ লেখনী। শুভ কামনা রইল আপনার জন্য।
১৫| ১৭ ই জানুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:২৩
আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: খুব ভালো লিখেছেন। ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১|
১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১২:৪১
প্রামানিক বলেছেন: কাফন চুরির লোমহর্ষক ঘটনা।