নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

হাসছিল সজারু ... ব্যাকরণ মানিনা ... হয়ে গেল হাসজারু ... ক্যামনে তা জানিনা ...

শূণ্য মাত্রিক

বহু নিয়ম মেনেছি। লেখাপড়া করার নিয়ম... মেনেছি, পরীক্ষা দেবার নিয়ম... মেনেছি, চাকরী করবার নিয়ম... মানব। কিন্তু নিয়মটা কে মানা উচিৎ একথাটাও কি মানতে হবে ? 

শূণ্য মাত্রিক › বিস্তারিত পোস্টঃ

কিছু মানুষের কথা … যাদের জীবন নিয়ে গল্প হয়না।

২৬ শে জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১০:১৬

একটা রোজকার মধ্যবিত্ত রুটিন, ঘুরে ফিরে সেই একই গন্ডির মধ্যে নতুনত্ত্ব খুজে নেবার ক্লান্তি… আর দিন শেষে একটা শক্ত তোষকের উপর চোখ বুজে প্রত্যাশা আর প্রাপ্তির সমীকরনটির বামপক্ষ ডানপক্ষ মেলাতে মেলাতে ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়া। কিছু মানুষ আছে যাদের জীবন নিয়ে গল্প হয়না, গল্পের জন্য যে শৈল্পিক প্লট টুকু প্রয়োজন হয় সেটা তাদের পুরো জীবন কালের কোন একটা পর্যায়েও তৈরী হয়না। কিন্তু এই মানুষগুলোর স্বপ্ন কিন্তু অদ্ভুত হয়, সেগুলো শৈল্পিক ছাপ থাকে। বড় হব, পাজেরো গাড়ি চড়ে অফিস যাব, আই ফোন থাকবে … ডুপ্লেক্স ফ্লাট – এসব সস্তা স্বপ্ন নয়। এদের স্বপ্নের ভিতরে থাকে বৃষ্টি, এদের স্বপ্নের ভিতরে থাকে সিগ্রেট … থাকে কুয়াশা ভেজা সীমাহীন একটা রানওয়ে জুড়ে আনমনে হেটে যাওয়া কোন কিশোরী… হয়ত প্রিন্সেস। তার পিছনে পিছনে হেটে চলা ও একসময় ভোর হলে রাজকন্যাটির হারিয়ে যাওয়া। কিংবা একদিন অফিস থেকে ফেরার পথে হঠাৎ বৃষ্টি, বাস স্টপে একা দাঁড়িয়ে। খানিক বাদে খেয়াল হল পাশে একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে, কাকের মত ভিজে গেছে। তবু ওড়না টুকু দিয়েই ভেজা পোশাক টাকে একহাত নেওয়ার চেষ্টা। তার চুলের থেকে কিছু পানি মাঝে মাঝে ছিটকে এসে লাগছে গায়ে। একটু পরেই L/9 বাস এসে গেল… কাক ভেজাটা মেয়েটা ভিড়ের মধ্যে হারিয়ে গেল। কিংবা জীবনে প্রথম সিগ্রেট খাওয়াটা… ঝোড়ো হাওয়াটার সাথে যুদ্ধ করে সিগ্রেট টাকে জ্বালিয়ে রাখবার আপ্রান চেষ্টা। ব্যাস … স্বপ্নগুলো এমনি হয় খানিকটা। না … এগুলো নিয়েও গল্প হয়না, সিনেমা হয়না… আর হলেও বাজারে ঠিক কাটতি খায়না। যদিও লেখা হয় তবে দোকান গুলোতে বনদস্যু, সুপার হিউম্যান, অর্থনীতি, ভালোবাসা এসব নিয়ে লেখা বইগুলোর চাপে চ্যাপ্টা হয়ে পড়ে থাকে ।

এসব মানুষগুলোর ভালোবাসা নিয়েও তেমন সাড়া পড়ে না পৃথিবীতে… এরা ভালোবাসে, ভালোবাসতে চায় কিন্তু সেগুলোকে নিয়ে কখনো ‘ক্লোজ আপ কাছে আসার গল্প’ লেখা হয়না। আজকাল ভালোবাসার কিন্তু অনেক অর্থবহ ভাষা বের হয়েছে … প্রেমিক প্রমিকাকে বিশ্বাস করাতে পারছে, বোঝাতে পারছে তারা পরষ্পরকে কতটা ভালোবাসে। মদ্দকথা, ভালোবাসা ব্যাপারটা এখন আর সেই পুরোনো Abstract ফিলিং এর মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। এখন ভালোবাসাকে ছাদের নিচে বদ্ধ ঘরে পাওয়া যায়, দুটো মানুষ পরষ্পরের নিষিদ্ধ গাড় নিঃশ্বাসের উত্তাপের মধ্যে ভালোবাসা খুজে পাচ্ছে। কিন্তু আমি আজ যাদের নিয়ে লিখছি তাদের ভালোবাসার সংগাটা ঠিক এমন না। মেয়েটা একদিন ছাদে কাপড় মেলতে গিয়ে দেখে পাশে বিল্ডিং এর সেকেন্ড ফ্লোরে একটা ছেলে ঘরের মধ্যে গিটার নিয়ে একটা রবীন্দ্র সংগীত কাভার করার চেষ্টা করছে… মেয়েটা কিন্তু ছিল রবীন্দ্র সংগীতের ওস্তাদ। খুব রাগ হল ছেলেটার উপরে… কিন্তু কয়েক মিনিট অতিক্রান্ত হতেই সেই রাগটুকু প্রতিস্থাপিত হল অদ্ভুত এক ধরনের অস্থিরতা দিয়ে। শাস্ত্রীয় সংগীতের ভক্ত মেয়েটা দুম করে বেসুরো গলায় রবীন্দ্র সংগীত গাওয়া ছেলেটাকে ভালোবেসে ফেলল। ছেলেটার মনে কি সেই ভালোবাসার কোন প্রভাব ফেলেছিল… ? এটা বোঝার আগেই সেকেন্ড ফ্লোরে একটা নতুন ভাড়াটে উঠে গেল, মেয়েটার ভালোবাসাটা অব্যক্তই থেকে গেল।

পাড়ায় একটা ছেলে ছিল… জেলা স্কুলের ফোর্থ বয়। পড়াশুনো, টিউশন আর ডিসিপ্লিন ছাড়া খুব কম জিনিসই বুঝত ছেলেটা। তার বাড়িত কয়েক পা দুরেই একটা মেয়ে থাকত, ওর চেয়ে বেশ ছোট। মেয়েটাকে দেখলেই গা জ্বলত ছেলেটার… কেননা প্রচুর ঢং করে চলাফেরা করে সে। কিন্তু মেয়েটা হাসি দিলেই ওর গালে কেমন জানি একটা গর্ত হয়ে যেত… দূর্বলতা বলতে এই একটাই ছেলেটার। কবে কে জানে ছেলেটা মনে মনে ভালোবেসে ফেলল মেয়েটাকে। একদিন বড় হয়ে ছেলেটা জানালো তার ভালোবাসার কথা … ততদিনে মেয়েটা অন্য একটা ছেলেকে নিজের রাজপুত্র বানিয়ে ফেলেছে …

এই মানুষ গুলোই… যাদের নিয়ে এই গল্প লিখছি, ওরা বড় হয়, সংসার করে, বুড়ো হয়। বিয়ের আগে ছেলেটা ভাবে বৌ এর সাথেই প্রেম করবে, প্রেমিকা থাকলে যে কাজ গুলো করত সেগুলো বৌ এর সাথে করবে। হয়ত ফুসকা খাবে, ধানমন্ডি লেকে হাত ধরে ঘুরবে, হাতের চারটা আংগুলের মাঝে নিজের হাতগুলো গুজে দিয়ে রাস্তার দিকে তাকিয়ে হাসবে… আরো কত্ত কি। একসময় বিয়ে হয়… বাসর রাতে একটা অনুগত মেয়েকে দেখে ছেলেটা প্রেমের কথা ভুলে যাবে… আদিম একটা অভ্যেস খুব করে ভর করে বসবে। মেয়েটাও বাধ্যগতের মত এপ্রিসিয়েট করবে… সম্পর্ক যখন শারীরিক দিকেই চলে যায় তখন আর ফুসকা খাওয়া, লেকে ঘুরা ঘুরি কিংবা পিছন দিক থেকে চিমটি কাটবার মত প্রেম টা থাকে না। সেটা আস্তে আস্তে সাংসারিক দিকেই চলে যায়… কয়েক বছরের মধ্যে ছেলেটা একটি বাধ্য বাবা , মেয়েটা একটা বাধ্য মা হয়ে যায়। তার কিছু বছর পর দাদু … দাদী। প্রেম করেও ওঠা হয়না ওদের। এক সাথে কত বছর কাটিয়ে দিল কিন্তু কেউ কাউকে বলে উঠতে পারলনা “এই শইতান জানো … আমি তোমাকে কতটা ভালোবাসি ”? ।

আমি কাদেরকে নিয়ে লিখলাম … আমি জানিনা। এরা কোন নিদির্ষ্ট জাত না, বর্ণ না … তবে এদের বেশির ভাগই মধ্যবিত্ত অথবা পৃথিবীর দশটা পাচটা সস্তা নিয়মকে কলাগাছ দেখিয়ে বড় হতে চাওয়া কিছু মানুষ। জীবনের শেষের দিকে এদের বেশির ভাগেরই সময় কাটে একটা রকিং চেয়ারে, চোখে মোটা লেন্সের চশমা। হাতে একটা ডায়েরি নিয়ে ভাবতে থেকে জীবনের ভুল গুলো… চিন্তা করতে থাকে রাস্তার নেওয়া ভুল টার্ন গুলোর কথা। কিন্তু আমাদের জীবনে Back Space বাটন খানা দেননি সৃষ্টিকর্তা । একটা অমুছনীয় কালি দিয়ে মহাকালের অদৃশ্য এক খাতায় রোজ লিখে যাচ্ছি… পাতা ফুরোচ্ছে, ওল্টাচ্ছি। পিছনের পাতার লেখাগুলো অবসর সময়ে শুধু পড়া যায়…আর আফসোস করা যায়। একটা সময় খাতাটা ফুরিয়ে যাবে… হারিয়ে যাবে মানুষটা মহাকালের স্রোতে।


মন্তব্য ৫ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ২৬ শে জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১০:৫৭

স্ট্রাটাজেম বলেছেন: আদিম একটা অভ্যেস খুব করে ভর করে বসবে। মেয়েটাও বাধ্যগতের মত এপ্রিসিয়েট করবে…

মুগ্ধ হয়ে পরলাম ., প্লাসের উপরে কিছু থাকলে সেইটাও দিতাম.।.।.।.।।

২৭ শে জানুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১২:৩৩

শূণ্য মাত্রিক বলেছেন: আপনি পড়েছেন, আমার জন্য এতটুকুই যথেষ্ঠ ভাই। ধন্যবাদ.ভালো থাকবেন।

২| ২৭ শে জানুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১:৫৮

স্ট্রাটাজেম বলেছেন: আপনাকেও ধন্যবাদ

৩| ২৭ শে জানুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৩:০৯

অপর্ণা মম্ময় বলেছেন: ভালো লাগলো ভাবনাগুলো

৪| ০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ২:৩৩

সামি কবীর বলেছেন: ভালোবাসা ব্যাপারটা এখন আর সেই পুরোনো Abstract ফিলিং এর মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই।KOTHATA DARUN CILO .
'' apni jader kotha gula bollen asole tader ovvasgula valovasa hoe darai , kintu ses jibonporjonto kaw kawk valobashi kothata bole uthte parena '.... porisomapti to akanei hoi ..

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.