![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বহু নিয়ম মেনেছি। লেখাপড়া করার নিয়ম... মেনেছি, পরীক্ষা দেবার নিয়ম... মেনেছি, চাকরী করবার নিয়ম... মানব। কিন্তু নিয়মটা কে মানা উচিৎ একথাটাও কি মানতে হবে ?
নৌকার উপরের ঢেউ এর মত যে অংশটা আছে অনেকটা ওটার মত দেখতে, ওগুলাকে কি বলে আমি ঠিক জানিনা। সারি সারি ভাবে সাজানো আছে অনেকগুলা, উপরে কালো রঙের পলিইথিন দেওয়া, বোধহয় বৃষ্টি আটকাতে। ওটাই ওদের ঘর, আর বালুর উপরে কিছু সারের বস্তা বিছিয়ে মেঝে বানানো। ওটার ভিতরে একটা মানুষ দাড়াবার মত জায়গাও নেই খুব জোর বসতে পারে ওরা। ওদেরকে যেখানে দেখেছি তার আশেপাশে অনেক জায়গা জুড়েও কোন আমাদের মত সভ্য সামাজিক মানুষের বাসস্থান দেখিনি তবে একটা পুকুর মত কিছু একটা ছিল আর কিছু বাকি সব জংগল , আর এর মাঝে খানিকটা জাগয়া করে নিয়ে ওরা প্রায় ১০/১২ টা পরিবার সংসার বেধেছে।
হালকা বৃষ্টির জন্য কিছু মহিলা নৌকার ঢেউ টুকুর মধ্যদিয়ে মাথা বের করে দিয়ে অস্থায়ী একটা চুলায় ফু দিচ্ছে, হাড়িতে সম্ভবত ভাত রান্না হচ্ছিল, আর কিছু উলংগ বাচ্চা বৃষ্টির তোয়াক্কা না করেই বালুর উপরে লাফিয়ে লাফিয়ে খেলছে। ওদের মায়েরা সম্ভবত ওদের বকা দেয়না কারন তারা জানেন, হাল্কা-জ্বর, সর্দি-কাশি, মাইগ্রেনের ব্যাথা এগুলা আমাদের সভ্য সমাজের রোগ, ওদের ছেলেদেকে অন্তর এই রোগ গুলা কাবু করতে পারবে না। আমি যাদের কথা এতক্ষন বলছি ওরা বেদে, ওদের ব্যাপারে আমার অতটা জানা নেই তবে এটুকু জানি ওদের স্থায়ী কোন বাসস্থান নেই আর ওরা এক জাগায় বেশিদিন থাকেও না। জীবিকার প্রয়োজনে ওরা বিভিন্ন জাগায় নৌকার মত ঐ বাসস্থান করে থাকে। এদের কথা এজন্য বলছি কারন এদের সমাজ থেকে দেখা ছোট্ট একটা দৃশ্য আমি বোধহয় কোনদিন ভুলবনা। সেটাই লিখছি—
ওদের বাসস্থানের পাশে যে হালকা জংগল মত আছে ওখানে আমি একটা ছেলে আর একটা মেয়েকে দেখেছিলাম। মেয়েটার বয়েস অনেকটা ক্লাস সিক্স-সেভেনে পড়ার মত হবে, পরনে একটা খুবই নোংরা ছেড়া সালোয়ার। মেয়েটা অনেক পিচ্চি, সালোয়ারের ঝুলটা ওর হাটুর অনেক নিচ পর্যন্ত চলে এসেছিল। আর ছেলেট উলংগ, বয়েস ২/৩ বছর বোধহয় আমি জানিনা, তবে হাটতে পারে মোটামুটি কথা বলতে পারে এমন অনেকটা। আন্দজ করা যাচ্ছিল যে ওরা ভাই-বোন । মেয়েটা ঝোপের মধ্যে পেয়ারা কুড়োচ্ছিল, রাখার মত কোন ঝোলা ছিলনা হাতে, সালোয়ারের নিচটা টেনে অনেকটা ব্যাগের মত বানিয়েছিল আর পেয়ারা গুলো ওর মধ্যে রাখছিল। হঠাত দেখলাম ওর ছোট ভাইটা নিচু হয়ে একটা পেয়ারা কুড়িয়ে নিল, মুখের ভিতর দিয়ে যাবে ওমনি বোনটা কেড়ে নিল ওটা। ভায়ের দিকে তেমন মনোযোগ না দিয়েই পেয়ারটিকে ওর নোংরা সালোয়ারের সাথে কয়েকবার ঘষা দিল। তারপর সেটা ভাইয়ের হাতে দিয়ে সামনে চলে গেল পেয়ারা কুড়োতে- এই দৃশ্যটাই আমার চোখের সামনে দিয়ে যাচ্ছেনা।
মেয়েটা ওর কাজের মধ্যেও ঠিক ওর ছোট ভাইটার খেয়াল রেখে চলেছিল, সে জানত এই পেয়ারাটাতে মুখে দিয়ে দিলে ওর ভাইয়ের ফুড পয়জনিং হতে পারত। কিন্তু পাগলীটা কি জানত ঐ ফলটাতে E-coli, Clostridium কিংবা Salmonella র মত জীবানু থাকতে পারে, যেটা কাপড়ের ঘষাতে দূর হয়না এবং ওর শরীরের কাপড়টাও যথেষ্ঠ নোংরা কিংবা মাটিতে পড়ে থাকা পাকা পেয়ারাটার ভিতরে পোকাও থাকতে পারে !!! না, এতকিছু না ভেবে মেয়েটা ঠিক বোনের দায়িত্ত্ব পালন করেছিল আর আমি হলফ করে বলতে পারি ওটা ঐ ছেলেটার কিচ্ছু হবেনা……কিচ্ছু না। হয়ত যুক্তি দেখাতে বললে দেখাতে পারব না, তবে যেই খাবারটাতে এত স্নেহ লেগে থাকে সেখানে ঐ ব্যাকটেরিয়া গুলো ওর কি ক্ষতি করবে !!! আমি অলৌকিকে বিশ্বাস করি, বিশ্বাস করি এবং বিশ্বাস করি…তিনবার বললাম। আর সেই বিশ্বাস থেকেই বলছি – বোনের স্নেহ আর ঐ E-Coli দুটাই আল্লাহর সৃষ্টি , কেন জানিনা মন জোর দিয়ে বলছিল বোনের এই স্নেহের কাছে ব্যাকটেরিয়া কখনো জয়ী হতে পারেনা। দৃশ্যটা অনেক সাধারন আমি জানি সেটা নিয়ে এতটা প্যাচাল পাড়া লাগেনা এটাও বুঝি। আপনাদের খাবার টেবিলে হয়ত এটা নিত্যদিনের ব্যাপার। তবে আমার কাছে এতটা এক্সাইটেড লেগেছিল কেন ঠিক জানিনা হয়ত আমার কোন বোন নেই হয়ত সেজন্য। হয়ত ঐ বাচ্চা ছেলেটাকে দেখে একটু হিংসা করেছিলাম সেদিন। এই বাস্তু ভিটা হীন মানুষগুলো আমাদের মত বিশ্বায়নের প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেনি … কিংবা ঐ বাচ্চা মেয়েটাকেও মোটা মোটা বই পড়িয়ে মানবিকতার শিক্ষা দেওয়া হয়নি । তবুও ওরা মানবিকতার চর্চা করে চলেছে নীরবে … আর আমরা যারা নিজেদের সভ্য সমাজের মানুষ বলে ক্লেইম করি, তারা অনেকেই বছরের পুরোনো বইয়ের সাথে ওটাকে মুড়িয়ে শিকেয় তুলে রেখেছি।
২| ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১১:৩৭
শাশ্বত স্বপন বলেছেন: মাওয়া বাড়ি যাবার পথে অসংখ্য এরকম পোকা মাকড়ের বসতি দেখি। খুব কষ্ট হয়, এরা নিজের ভাগ্যকে পরিবর্তন করতে চায় না, করে না। আর সরকারও কিছু করে না
৩| ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৪:১৮
হাসান মাহবুব বলেছেন: ভালো থাকুক ওরা মুক্ত আকাশের নিচে আর চঞ্চল বাতাসের চপলতায়।
৪| ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৪৬
প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: সহদরের প্রতি এই আদর-ভালবাসা বেঁচে থাকুক।
৫| ০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ২:০৬
রাফাজ বলেছেন: বোনের ভালবাসা বেঁচে থাকুক চিরকাল
৬| ০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ৯:০৯
আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: বেদে ছেলে মেয়ে (ভাই বোন) দুটির যেমন বর্ণনা দিয়েছেন, ওরা আসলে ওইভাবেই জীবন যাপনে অভ্যস্ত। দারিদ্র্য, অশিক্ষা, কুশিক্ষা ইত্যাদি এইভাবে জীবন কাটাতে ওদের বাধ্য করে।
©somewhere in net ltd.
১|
০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১০:২৭
আলোকিত-পৃথিবীর-সন্ধানে বলেছেন: বনপাড়া বাইপাসের পাশে এ রকম একটা ঘটনা দেখে খুবই মন খারাপ লাগল। কি নিষ্টুর বাস্তবতা,,,,,,