নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

হাসছিল সজারু ... ব্যাকরণ মানিনা ... হয়ে গেল হাসজারু ... ক্যামনে তা জানিনা ...

শূণ্য মাত্রিক

বহু নিয়ম মেনেছি। লেখাপড়া করার নিয়ম... মেনেছি, পরীক্ষা দেবার নিয়ম... মেনেছি, চাকরী করবার নিয়ম... মানব। কিন্তু নিয়মটা কে মানা উচিৎ একথাটাও কি মানতে হবে ? 

শূণ্য মাত্রিক › বিস্তারিত পোস্টঃ

অনুগল্পঃ জানালা

০২ রা এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ১২:০৪


জয়ীদের বাড়িটা চারতালা, একটা পুরোনো পাড়ায় … ওরা থাকে সেকেন্ড ফ্লোরে। জয়ীর পৃথিবী বলতে ওর সাজানো গোছানো শোবার ঘরটা… ছোট থেকেই বেশ পরিপাটি মেয়েটা। রুমের উত্তর দিকে একটা জানালা আছে, তার ছিটকানিতে মোটামুটি মরিচা পড়ে গেছে, ওটা ঠিক খোলা হয়না আর। বাড়ীটা পুরোনো পাড়ায় হবার কারনে আশেপাশে বস্তির সংখ্যাই বেশি, আর জয়ীর রুমের জানালা দিয়ে বস্তিগুলো বড্ড উলংগ অবস্থায় দেখতে পাওয়া যায়। এই বাড়িতে ওঠার প্রথম দিকে জয়ী জানালা দিয়ে নিচটা প্রায় দেখত … কিন্তু দৃশ্যটা ওর ভালো লাগত না। ক্ষুধা, দারিদ্র, অভাব, টিকে থাকার লড়াই – সবকিছু একটি ফ্রেমে ভেসে আসতে একটুও সময় নিতনা। মন খারাপ হয়ে যেত মেয়েটির । হয়ত ওর মা ব্যাপারটি খেয়াল করেছিলেন, বুঝতে পেরেছিলেন জানালাটা মেয়ের চিন্তা-ধারার উপরে বেশ প্রভাব ফেলছে। ব্যাস … তারপর থেকে জানালাটা খোলা নিষেধ ছিল।

জানালা যে জীবনযাপনের একটা অংশ হতে পারে এটা কখনো জয়ীর মাথায় আসেনি …অন্তত যতদিন দ্বীপ ওর পাশে ছিল । পারিবারিক কড়া শাসনের মধ্য দিয়ে মানুষ হলেও মেয়েটা ছিল বড্ড বেশি নিরীহ … ওর মাঝে মাঝে এটা ভেবে হাসি পায় যে যখন ও মা হবে তখন কিভাবে শাসন করবে ওর ছেলে মেয়েদের !! ওর ভয় ছিল বকা দিতে গিয়ে ও হেসে ফেলবে। হয়ত এমন সপ্নের কারন হিসেবে দ্বীপও খানিকটা জড়িত ছিল। দ্বীপের সাথে জয়ীর আলাপ ও যখন ক্লাসে এইটে পড়ে … সাইকেল নিয়ে ছেলেটা রোজ় ফলো করত জয়ীকে কোচিং এ যাবার পথে । জয়ী ব্যাপারটা খেয়াল করলেও কোন কেয়ার করেনি। কিন্তু একদিন দ্বীপ সাইকেল থামিইয়ে সরাসরি জয়ীকে বলে ফেলে “আমি তোমাকে ভালোবাসি” !!! জয়ী অবাক হয়েছিল, “আমি তোমাকে ভালোবাসি” বলাটা এতো সহজ ?? সে প্রচন্ড নার্ভাস হয়ে পড়েছিল … কিন্তু এভয়েড করতে করতে একদিন কিভাবে যেন ও দ্বীপকে মিস করতে শুরু করে। তারপর দ্বীপকে সামান্য প্রশ্রয় দিল ও … শর্ত ছিল কোচিং এ যাবার পথে শুধু ঐ সময় টুকুই কথা বলবে ওরা। কোন ফোন নয়, ডেটিং নয়। কিন্ত এই শর্তে বেশিদিন সন্তুষ্ট থাকতে পারেনি দ্বীপ। সে প্রায়ই জয়ীকে একটু দূরে ঘুরতে নিয়ে যেতে চাইত … এমন জায়গার নাম বলত যেগুলো জয়ী কখনো শোনেনি। দ্বীপকে অনেক ভালোবাসত ও, ওর ছোট্ট পৃথিবীর অনেকখানি নিয়ে নিয়েছিল সে … কিন্তু জয়ীর কাছে যে ভালোবাসার সংগাটা ছিল তাতে স্পর্শ, গায়ের গন্ধ কিংবা নিঃশ্বাসের গাড় উষ্ণতা কখনোই প্রভাবক ছিল না। না করে দেয় সে দ্বীপকে … যতটুকু জয়ীর মনে আছে কয়েকদিন না করবার পরে দ্বীপ ওকে “আনকালচারড” বলে কোচিং এর ঐ রাস্তাটাতেই ফেলে রেখে যায়। তারপর জয়ীকে দেখিয়ে দেখিয়ে পালাক্রমে কয়েকটি মেয়েকে নিয়ে ঘুরেছে দ্বীপ … হয়ত মেয়েটিকে কালচার শেখাবার জন্য। দুই মাস হতে চলল … দ্বীপ আর জয়ীকে ফেলে গেছে। সাজানো, গোছানো লক্ষী মেয়েটা এখন অনেকটাই শেকড়হীন অনুভব করে। ওর মা-বাবা চাকুরিজীবি হওয়ায় মেয়ের এই ভেংগে পড়াটা তারাও টের পায়নি।

হঠাৎ একদিন জয়ীদের পাশের বাড়ির বস্তিটাকে অনেক শোরগোল শোনা যায় … খুব কৌতুহল হয় ওর । মায়ের নিষেধ থাকলেও তিনি এখন বাড়ী নেই, জানালা খুলে দিল সে। জয়ী কিছুক্ষন খেয়াল করবার পর বুঝতে পারল কেউ একজন মারা গেছে ওখানে … একজন ওর মায়ের মত বয়ষ্ক মহিলা মাটি চাপড়ে চাপড়ে কাদছে। আর এক বছরের একটা নেংটা ছেলে মাটিতে গড়াগড়ি খাচ্ছে… পিচ্চিটা কাদছিল কিনা অনেক খেয়ালের পরও জয়ী বুঝতে পারেনি। আচ্ছা … পরিবারটার কি হবে !! বাচ্চা ছেলেটা কি বুঝেছে ওর বাবা মারা গেছে !!! এমন অনেক প্রশ্ন নিয়ে সে আস্তে আস্তে জানালাটা বন্ধ করে দিল।

পরদিন খুব সকালে কৌতুহল বশত আবার জানালা খুলে সে … কিন্তু অবাক হয়ে যায়। কালকের শোকের লেশমাত্র সেখানে নেই। সে দেখল কিছু বাদাম ওয়ালা ঝোলা, বাশি নিয়ে বেরিয়ে পড়ছে … কারো কারো হাতে ঝুড়ি কোদাল। বস্তির কিছু ছেলে বাড়ির পাশে একটা ফাকা জাগায় মার্বেল খেলছে। বাড়ির বউরা উঠান ঝাড়ু দিচ্ছে, কেঊ কেঊ কয়লা দিয়ে দাত মেজে কল পাড়টায় লাইন দিয়েছে মুখ ধোবার জন্য। তাদের ভিতর জয়ী সেই মহিলাটাকে দেখল যার স্বামী কাল মারা গেছে। মহিলাটা ভাংগা চুলার কিছু কিছু জায়গা মাটি দিয়ে লেপে দিচ্ছে। আর বাচ্চাটা পাশেই একটা বস্তার উপরে বসে খেলা করছে … । জয়ী একটা অদ্ভুত ব্যাপার আবিষ্কার করল… এত অভাবে থাকবার পরেও এদের চেহারায় কেমন যেন একটা তৃপ্তির ছাপ আছে। ওরা কেন জানি সুখে আছে। মানুষের ব্যাক্তিগত জীবন যাপন এতটা কাছ থেকে আগে কখনো দেখেনি জয়ী। এই মানুষগুলো সারা পৃথিবীর ভেংচি থেকে মুখ ফিরিয়ে দিব্যি বেচে আছে… আর ও কিনা আজ শুধু দ্বীপের জন্য থেমে আছে যার কাছে ভালোবাসা মানে স্পর্শ ?? একটা অদ্ভুত জীবনবোধের সাথে পরিচিত হয় জয়ী… পায় উঠে দাড়াবার কিছু অনুপ্রেরনা। তারপর থেকে ওর ঘরের উত্তরের ঐ জানালাটা আর কখনো বন্ধ হয়নি। শীত … গ্রীষ্ম … বর্ষা … কখনোই না।

মন্তব্য ৩০ টি রেটিং +৮/-০

মন্তব্য (৩০) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ১২:০৮

প্রামানিক বলেছেন: জয়ী একটা অদ্ভুত ব্যাপার আবিষ্কার করল… এত অভাবে থাকবার পরেও এদের চেহারায় কেমন যেন একটা তৃপ্তির ছাপ আছে।

চমৎকার অনুগল্প। ধন্যবাদ

০৩ রা এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১০:১৬

শূণ্য মাত্রিক বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ প্রামানিক ভাই। ভালো থাকবেন।

২| ০২ রা এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ১২:১৭

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: অনুগল্প ভালো লাগলো।
ধন্যবাদ শুন্য মাত্রিক।

০৩ রা এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১০:১৭

শূণ্য মাত্রিক বলেছেন: আপ্নাদের মত গুণীদের প্রশংসা সত্যিই অনুপ্রেরনা দেয়। অনেক ধন্যবাদ পড়বার জন্য।

৩| ০২ রা এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ১২:১৯

বার্তা বাহক বলেছেন: সুন্দর গল্প। ধন্যবাদ।

০৩ রা এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১০:১৭

শূণ্য মাত্রিক বলেছেন: ধন্যবাদ বার্তা বাহক, ভালো থাকবেন।

৪| ০২ রা এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ১২:২০

মোস্তফা সোহেল বলেছেন: ভাল লেগেছে

০৩ রা এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১০:১৮

শূণ্য মাত্রিক বলেছেন: ধন্যবাদ মোস্তফা সোহেল । ভালো থাকবেন।

৫| ০২ রা এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ১২:৩৩

অমনিট্রিক্স বলেছেন: অনেক ভালো লাগলো।

০৩ রা এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১০:১৮

শূণ্য মাত্রিক বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ অমনিটিক্স ।

৬| ০২ রা এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ১২:৪৮

রিপি বলেছেন: এই মানুষগুলো সারা পৃথিবীর ভেংচি থেকে মুখ ফিরিয়ে দিব্যি বেচে আছে… আর ও কিনা আজ শুধু দ্বীপের জন্য থেমে আছে যার কাছে ভালোবাসা মানে স্পর্শ ?? একটা অদ্ভুত জীবনবোধের সাথে পরিচিত হয় জয়ী… পায় উঠে দাড়াবার কিছু অনুপ্রেরনা।

কথাগুলি চমৎকার। ভালো লেগেছে আপনার অনুগল্প।

০৩ রা এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১০:১৯

শূণ্য মাত্রিক বলেছেন: ধন্যবাদ রিপি। মন্তব্যের জন্য, এবং ধৈর্য নিয়ে পড়বার জন্য।

৭| ০২ রা এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ১২:৫০

মনসুর-উল-হাকিম বলেছেন: চমৎকার সুন্দর লিখেছেন, শুভেচ্ছান্তে ধন্যবাদ।

০৩ রা এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১০:২০

শূণ্য মাত্রিক বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ হাকিম ভাইয়া । ভালো থাকবেন।

৮| ০২ রা এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ১২:৫৬

ক্ষুদ্রমানব বলেছেন: অসাধারন লেখা ।

০৩ রা এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১০:২০

শূণ্য মাত্রিক বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ ক্ষুদ্রমানব ভাই।

৯| ০২ রা এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৩:৪১

অপু তানভীর বলেছেন: চমৎকার লেখা ! :)

০৩ রা এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১০:২১

শূণ্য মাত্রিক বলেছেন: হা হা হা । অনেক ধন্যবাদ অপু তানভীর ভাইয়া ।

১০| ০২ রা এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৪:৫০

অলওয়েজ ড্রিম বলেছেন: এই গল্পের জয়ী বেশ মানবিক আর তার মা পুরাটাই তথাকথিত আধুনিক। তাই সে মেয়েকে বস্তির দিকের জানালা খুলতে নিষেধ করে যাতে মেয়ে বস্তির জীবনবোধ দ্বারা প্রভাবিত না হয়ে পড়ে। কিন্তু শেষপর্যন্ত জয়ী বস্তির জীবনবোধ দ্বারা প্রভাবিত হয়েই তার দু:খকে জয় করার প্রেরণা পায়।

চমৎকার গল্প।

০৩ রা এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১০:২১

শূণ্য মাত্রিক বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ অলওয়েজ ড্রিম। আপনি অল্প কয়েকটি বাক্যেই আমার গল্পটার সার সংক্ষেপ করে দিয়েছেন।

১১| ০২ রা এপ্রিল, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৪৬

সুমন কর বলেছেন: সাবলীল লেখাটা পড়তে ভালো লাগল।

০৩ রা এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১০:২২

শূণ্য মাত্রিক বলেছেন: অনেক ধন্যবাস দাদা । আপনার মন্তুব্য সবসমই অনুপ্রেরনা যোগায়।

১২| ০২ রা এপ্রিল, ২০১৬ রাত ৯:৫৯

ঐন্দ্রিলা নিশাত বলেছেন: সুন্দর সাবলীল গল্প। শুভেচ্ছা রইল।

০৩ রা এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১০:২৩

শূণ্য মাত্রিক বলেছেন: উনেক ধন্যবাদ নিশাত । ভালো থাকবেন।

১৩| ০২ রা এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১০:২৮

কথাকথিকেথিকথন বলেছেন: দারুণ লেগেছে অনুগল্প । এসব চিন্তা করে অনেক খারাপলাগার মধ্যেও ভাল থাকা যায় ।

০৩ রা এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১০:২৪

শূণ্য মাত্রিক বলেছেন: একদম মনের কথাটা বলেছেন ভাই। আসলে নিজের খারাপ লাগা গুলো থেকে মুখ ফেরাতেই এগুলো নিয়ে একটু নাড়াচাড়া। অনেক ধন্যবাদ ভাই।

১৪| ০৩ রা এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১২:৩৬

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: দারুণ অনুগল্প।
অঞ্জন দত্তের গানটার মতো।

০৩ রা এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১০:২৫

শূণ্য মাত্রিক বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ আরণ্যক রাখাল। আমার জানালা দিয়ে একটু খানি আকাশ দেখা যায় ??? এই গানটা ??

১৫| ০৩ রা এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ২:২৬

হাসান মাহবুব বলেছেন: সার্থক অণুগল্প।

০৩ রা এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১০:২৬

শূণ্য মাত্রিক বলেছেন: ধন্যবাদ হাসান ভাই। কি আর বলব, একটু ব্লগে অনিয়মিত হয়ে পড়েছি। ভাই মিস করি আপনাদের অনেক । কেমন আছেন ??

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.