নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

হাসছিল সজারু ... ব্যাকরণ মানিনা ... হয়ে গেল হাসজারু ... ক্যামনে তা জানিনা ...

শূণ্য মাত্রিক

বহু নিয়ম মেনেছি। লেখাপড়া করার নিয়ম... মেনেছি, পরীক্ষা দেবার নিয়ম... মেনেছি, চাকরী করবার নিয়ম... মানব। কিন্তু নিয়মটা কে মানা উচিৎ একথাটাও কি মানতে হবে ? 

শূণ্য মাত্রিক › বিস্তারিত পোস্টঃ

তোমরা যারা নোবেল জয়ী বব ডেলানকে শুধু গায়ক ভাবো

১৪ ই অক্টোবর, ২০১৬ সকাল ১০:৪৯


বৃষ্টির দিনে আজকে যখন আপনার মন খারাপ হচ্ছে তখন প্লেলিস্ট থেকে অঞ্জন দত্তের “আমি বৃষ্টি দেখেছি” শুনে নিজেকে খুজে পাচ্ছেন … কিংবা শত স্ট্রাগলের পরে দিন শেষে বিছানায় গা এলিয়ে দিচ্ছেন, সাউন্ড বক্সে হালকে ভলিউমে চালিয়ে দিচ্ছেন ‘চাকরিটা আমি পেয়ে গেছি বেলা শুনছেন …’ কিংবা অনুপমের ‘আমাকে আমার মত থাকতে দাও’ … আচ্ছা এই গানগুলো কেন আপনার কাছে আলাদা হয়েছে ? আসলে গান কিংবা গানের এরেনা গুলা কি জন্মগত ভাবে এমন ছিল ? যারা এই গানগুলা লিখছেন তাদের আইডোলজি কেমন ? জানতে ইচ্ছে করেনি কখনো ?? আমি কিছুটা জানানোর চেষ্টা করছি …

২৪ শে মে, ১৯৪১ । নাম রবার্ট এলেন জিমারম্যান। একটা ফুটফুটে ছেলে জন্ম নেয়, পৃথিবীর আলোবাতাস নিয়ে বড় হয়। যৌবনে তার উপর মিউজিকের ভূত চাপল… স্কুলে থাকা কালীনই সে কিছু বন্ধুদের নিয়ে একটা ব্যান্ড ফর্ম করে। তবে মিউজিকটাকে প্রফেশান হিসেবে নেওয়া শুরু বোধহয় তার কলেজ লাইফ থেকে, বিভিন্ন নাইটক্লাব-রেস্তারায় উনি ফোক গান গুলা করতেন। এই ছেলেটিই পরে “বব ডেলান” নামে আত্ম প্রকাশ করেন, যদিও এটা তার ছদ্ম নাম। কিন্তু এক একটা সময়ে একটা জাতির উপর থেকে এক এক রকমের রেভ্যুলিউশান বয়ে যায় … তখন আমেরিকায় একটা গৃহ যুদ্ধ সংক্রান্ত ঝামেলা চলছিল। এই প্রভাব টা বব ডেলানের উপরেও পড়ে। মিউজিকের দিক দিয়ে বব ডেলানের অনেকে ফলো করতেন, তবে তার মধ্যে অন্যতম ছিলেন এলভিস প্রেসলি। কারন সমসাময়িক ঐ সময়ে পপ সিংগার হিসেবে এলভিস জনপ্রিয়তার তুংগে ছিলেন।

কিন্তু বব গান লেখার আগ পর্যন্তও গানগুলা প্রচলিত নিয়ম ভাংগেনি … খুব ভালোবাসার গানগুলা বেশ ন্যাকা ন্যাকা আবার বিরহের গানগুলাও বিরহকে ফুটিয়ে তুলতে ব্যাস্ত ছিল। যদি রক বা মানেওয়ালা গানগুলাও তাদের ফুটিয়ে তোলা মানে নিয়েই ব্যস্ত ছিল। কিন্তু ফোক গানগুলা নিয়ে কেউ এভাবে এক্সপেরিমেন্ট করেনি … গানগুলা কখনো আপনার সময়ের কথা বলত না। আপনার শহর, আপনার চাওয়া, আপনার রাগ-অভিমান, আপনার না পাওয়া গুলা সময়ের সাথে প্যারালালি চালিয়ে যাওয়ার মত লেখক ছিলনা। তারপর বব ডেলান গান লেখা শুরু করেন … তার গানগুলা একটা নতুন শাখার জন্ম দিল “ফোক রক” বা শহুরে লোককথা। এই শহরের দশটা পাচটা মানুষ, তাদের জীবন যাপন, প্রাপ্তি অপ্রাপ্তি কিংবা প্রেমে পড়ার গল্প … হতে পারে সে একজন Tambourine বাদক, যেটা তিনি Hey Mr. Tambourine man play a song for me গানটাতে শুনিয়েছেন। কখনো কখনো তার গানগুলো তার নিজস্ব রাজনৈতিক চিন্তা ধারার প্রতিফলন ঘটিয়েছে, কখনো যুদ্ধ বিরোধী অবস্থান নিয়েছে। এমন একটি গান Blowing in the wind … যেটা “কতটা পথ পেরুলে তাকে পথিক বলা যায়” নামে বাংলা অনুবাদ করেছিলেন কবির সুমন। বব ডেলানের আগে সারা পৃথিবী কল্পনাও করেনি যে How many times can a man turn his head, and pretend that he just doesn’t see … এমন কোন গানের লাইন হতে পারে !!! সারা পৃথিবী ভাবেনি যে এইকথাগুলা কখনো গানে মাধ্যমে বলা যেতে পারে। তৎকালীন আমেরিকায় যারা নাগরিক অধিকার সংক্রান্ত আন্দোলনে জড়িত ছিল, তারা এই গানটা থেকে প্রচুর মনোবল পেয়েছিল। ইভেন বব ডেলান নিজেও এই আন্দোলনের প্রথম সারির একজন ছিলেন। তার গানগুলা সেসময় “প্রোটেস্ট মিউজিক” নামেও খ্যাত ছিল।

আজ একটা সমালোচনা প্রায় শোনা যাচ্ছে, একজন গায়ক কিভাবে সাহিত্যে নোবেল পান !!! আপনি যদি ববকে একজন গায়ক হিসেবে জানেন তবে আপনার কাছে সে প্রশ্নটা আসাই স্বাভাবিক। কিন্তু যদি আপনি বব ডেলানটা যদি মনোযোগ দিয়ে শুনেন বা তার রেভ্যুলিউশান নিয়ে পড়াশোনা করেন – তাহলে হয়ত আপনি খানিকটা আচ করতে পারবেন। আজ থেকে ৫০০০ বছর আগের কথা চিন্তা করলে আমরা ইংরেজ কবি হোমার কিংবা শ্যাফোকে পাব। তারা গীতিকবিতা লিখতেন সেগুলা গেয়ে শোনাবার জন্যই। কথাটা নোবেল কমিটিও উল্লেখ করেছেন … আর বব ডেলানও সেই একই কাজ করেছেন। তার লিরিক গুলাই তার সাহিত্য… তার রেভ্যুলিউশানের হাতিয়ার । কিন্তু পার্থক্য হল তিনি সেগুলা গেয়ে শুনিয়েছিলেন । Things Have Changed গানটা ২০০১ সালে অস্কার পুরষ্কার পেয়েছিল। এছাড়াও তিনি বেশ কয়েকবার নোবেল পুরষ্কারের জন্য মনোনিত হয়েছিলেন … কিন্তু ফাইনালি এবার নোবেল কমিটি তার নাম ঘোষনা করলেন। তাই এখান থেকে এটা স্পষ্ট যে তার মনোনয়ন নিয়ে প্রশ্ন ওঠার অবকাশই থাকেনা।

বব ডেলান সৃষ্ট এই নতুন শাখায় সারা পৃথিবী জুড়ে অনেক তরুন আকৃষ্ট হয়েছিল, আমরা ওপার বাংলায় অঞ্জন দত্তকে পেয়েছি। যিনি আজও অকপটে তার গানে ডেলার কথা অকপটে স্বীকার করেন। The Beatles ব্যান্ড ও বব ডেলানের গান থেকে অনুপ্রানিত। ইভেন জর্জ হ্যারিসনরা বিভিন্ন বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে বব ডেলানের দর্শনকে উক্তি হিসেবে ব্যাবহার করতেন। একটা একুয়িস্টিক গিটার আর মুখে হারমোনিকা নিয়ে নিজের দর্শন, নিজের বয়স, নিজের সময়ের কথা বলা যায় – এটাই সারা পৃথিবীজুড়ে ইয়াং জেনারেশানকে এটাই আকৃষ্ট করেছে। প্রতিটা শিল্প কর্ম কোন না কোন একজন মানুষের হাত ধরে আলাদা পরিচয় পায় তেমনি গান ব্যাপারটাও বব ডেলানের হাত ধরে আলাদা একটা একটা চেহারা পায়। বব ডেলানের আরেকড়া পরিচয় দিয়ে শেষ করব … ১৯৬৫ এর কিছু পর বব ডেলান কিছুটা আড়ালে চলে যান। অনেক বছর তিনি কোন লাইভ পারফর্ম করেননি। পরে ১৯৭১ সালে জর্জ হ্যারিসন যখন বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের নৃশসতা সারা বিশ্বের কাছে তুলে ধরবার জন্য ম্যাডিসন স্কয়ারে “কনসার্ট ফর বাংলাদেশ” এর আয়োজন করেন তখন তিনি অনেক শিল্পীকে সেখানে পারফর্ম করার জন্য আমন্ত্রন জানান। অনেকে আসেন , অনেকে ডিনাই করেন। কিন্তু বব ডেলান একবারেই রাজী হয়ে যায়। একটা সাক্ষাৎকারে হ্যারিসন নিজেও জানান তিনি অবাক হয়েছিলেন, কারন অনেক বছর বব ডেলান কোন লাইভ করেননি। তিনি ভীত ছিলেন তার শ্রোতারা তাকে আবার কিভাবে নিবে … কিন্তু বব ডেলান সব কিছুকে পিছনে ফেলে অংশ নিয়েছিলেন ঐ দিন ম্যাডিসন স্কয়ারের কনসার্ট ফর বাংলাদেশে। দাড়িয়েছিলেন বাংলাদেশে ঘটে চলে নৃশংসতার বিরুদ্ধে।




মন্তব্য ৫ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই অক্টোবর, ২০১৬ সকাল ১১:০১

কিশোর মাহমুদ বলেছেন: এভাবে যদি হত তাহলে আমাদের দেশের লালন শাইজী কিংবা আব্দুল করিম কি দোষ করেছে?

২| ১৪ ই অক্টোবর, ২০১৬ সকাল ১১:৪৩

রঙ্গীন ঘুড়ি বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ। চোখের সামনে রেভ্যুলেশনের সেই দিনগুলো দেখতে পাচ্ছিলাম।সাবলীল বর্ণনা। ভাল লাগা রেখে গেলাম।

৩| ১৪ ই অক্টোবর, ২০১৬ সকাল ১১:৪৩

রঙ্গীন ঘুড়ি বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ। চোখের সামনে রেভ্যুলেশনের সেই দিনগুলো দেখতে পাচ্ছিলাম।সাবলীল বর্ণনা। ভাল লাগা রেখে গেলাম।

৪| ১৫ ই অক্টোবর, ২০১৬ ভোর ৫:৩৭

রক্তিম দিগন্ত বলেছেন:
সমালোচনাগুলো সত্যিকার অর্থে কারা করছে? আমার মনে হয় স্বল্প জ্ঞানের ব্যক্তিরাই।

নোবেল পুরষ্কার পাওয়া নিয়ে বেশ কয়েকবছর ধরে বিতর্ক চলছেই। বিতর্কের থামাথামি নেই। বিতর্ক চলবেই। তাই বলে সমালোচনা!!!

আপনার পোস্টটি চমৎকার। ডিলান সম্পর্কে জানানোয় উপকৃতও বটে।

৫| ১৭ ই অক্টোবর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৫২

হাসান মাহবুব বলেছেন: প্রতিবার সাহিত্যে নোবেল দেয়, আর আমি কিছু নতুন নাম জানি। বিজ্ঞজনেরা গম্ভীর মুখে আলোচনা করেন পুরষ্কারপ্রাপ্ত লেখকের লেখার আঙ্গিক এবং ধরন, অথবা কে পেলে ভালো হত ইত্যাদি বিষয়ে। বব ডিলান পাওয়ায় সেই ঝামেলাটা হয় নাই এবার। তার নোবেল পাওয়ার খবরে উল্লসিত হয়ে চিক্কুর দিছি এই বইলা যে আরে ইনি তো আমার চেনা লোক! কিন্তু কতটুকু চেনা? তীব্র বিষাদী সময়ে সবচেয়ে কাছের বন্ধুটি কাঁধে হাত রেখে পাশে থাকার প্রতিজ্ঞা করলে যতটুকু চেনা হয়, ঠিক ততটুকু চেনা।

বব ডিলানকে নিয়ে বিশ্লেষণধর্মী লেখা প্রসব করার মত জ্ঞান-গরীমা আমার নেই। আমি শুধু ভালো লাগাটাই প্রকাশ করতে পারি। তার একটি গান আমার কাছে ধর্মীয় আরাধনার পর্যায়ে চলে গিয়েছিলো। প্রতিদিন নিয়ম করে শ্রদ্ধার সাথে গানটি শুনতাম। বলা ভালো, জপতাম। বিশূদ্ধ আবেগে, অমলিন ভালোবাসায়। সময়টা আমার জন্যে খুব বিচিত্র ছিলো। কেবল কুয়েট থেকে পাস করে বেরিয়েছি। দুই বছর ইয়ার লস, জঘন্য রেজাল্ট। ভয়ে ভয়ে দুয়েক জায়গায় সিভি দেই। ডাক আসে না। লেখালেখি করে ক্যারিয়ার গড়ার মানসে পত্রিকা অফিসে ঢু মারি। গীতিকার হবার খায়েশও কম ছিলো না। বেশ কিছু আন্ডারগ্রাউন্ড ব্যান্ডের সাথে যোগাযোগ করে তাদের প্র্যাকটিস প্যাডে সময় কাটাতে গিয়ে নিজেকে ভীষণ মিসফিট বোধ করে গুটিয়ে যাই। স্বপ্নগুলো আশাহীন চোখে আমার দিকে তাকিয়ে ভরসা খোঁজে। আমি চোখ ফিরিয়ে নেই। সেই সময় আমার কূল নাই কিনার নাই, কাঁচা বয়সের আবেগ আছে, আশ্রয় নাই। নিজেকে মনে হত সুউচ্চ পাহাড় থেকে গড়িয়ে পড়া পাথরখন্ড। সেই সময়ে আমি শুনি বব ডিলানের পবিত্রতম উচ্চারণ। নীড়হারা মানুষের জন্যে বাড়িয়ে দেয়া তার হাত ঠিক যেন আমাকেই খুঁজে নিলো। টেনে তুললো হতাশার গভীরতম খাঁদ থেকে।
"How does it feel?
How does it feel
To be without a home
Like a complete unknown
Like a rolling stone ?"

তিনি জানতে চাইলেন, আমিও মন খুলে বললাম তাকে। আর এভাবেই তিনি আমার প্রিয়তম বন্ধুটি হয়ে গেলেন, ঠিক যেমন করে আপন করে নিয়েছেন দুর্বিপাকে ভরা এই পৃথিবীর হাজারো বিষণ্ণ মনকে। যুগে যুগে তিনি আশাহীন মানুষের পক্ষে গান বেঁধেছেন, শান্তির পৃথিবীর জন্যে লড়াই করেছেন। বব ডিলান- একজন প্রেমিক, একজন প্রতিবাদী, একজন দার্শনিক,একজন শিল্পী। আপনার জন্যে অনেক ভালোবাসা রইলো।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.