![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
"কিরে? তুই এখনো আমার ব্লক রিমুভ করিস নি? এখনো রেগে আছিস আমার উপর? এক বছরের বেশি হয়ে গেল, ফালতু ঝগড়া বাচ্চাদের মত। লীভ ইট ইয়ার। একটু সেন্সিবল হ, প্লিজ। ব্লকটা সরা। খুব অস্বস্তিকর।"
ঘুম থেকে উঠেই মেসেজটা দেখল রূপ। মেসেজটা পড়েই খুব মেজাজ খারাপ হল নিজের উপর ওর। কতদিন ধরে ভেবেছে ফেসবুকের ব্লক লিস্ট থেকে দিহানের নামটা রিমুভ করে দেবে। মনেই থাকেনা। বেচারা হয়ত নাম দিয়ে কতবার সার্চ দিয়েছে আর পেয়েছে 'পেজ নট ফাউন্ড'। ব্লক সরিয়ে নিলে, একদিন হঠাত করে পেয়ে যেত। দিহানের মনে হত, হঠাত কেন ব্লক সরাল রূপ? নিজেই নিজেকে নিয়ে লুপহোলে পড়ে যেত দিহান। রূপের তখন মনে হত, আমি জিতেছি। কেন ব্লক সরালাম, তা ভাবতে ভাবতে এখন দিহান মরে যাক, পেইন খাক শয়তানটা।
আপাতত এসএমএসের কোন রিপ্লাই দিল না রূপ। ইচ্ছে করেই রিপ্লাই দিল না। রিপ্লাই না দেয়ায় দিহান কি কি ভাবতে পারে, তা ভেবেই নারকীয় সুখ পাচ্ছে রূপ। প্রথমে ভাব্বে, মেসেজটা কি যায়নি নাকি? তারপর অনেকবার রিসেন্ড করতে গিয়েও করবে না। রিসেন্ড অপশনটার আশেপাশে ঘুরঘুর করবে, পাশে বসে অন্যমনস্ক হয়ে নখ কাটবে, তারপরে হাজারটা সাতপাঁচ ভেবে রিসেন্ড অপশন থেকে ফেরত আসবে। তারপর মনে করবে,মেসেজটা মনে হয় ইনবক্সে পড়ে আছে, রূপ খেয়াল করেনি। কি করা যেতে পারে? একটা মিস্কল দেবে দিহান? এবার রূপের নাম্বারটা বের করে অনেকক্ষণ বসে থাকবে দিহান। হাত নিশপিশ করবে, মাথা খুটবে, নিজেকে দুটো গালি দিবে যে মিস্কল দেবে কিনা এবং আবারো হাজারটা সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে ফেরত আসবে দিহান, মিস্কল আর দেয়া হবে না ওর। সর্বশেষ যা ভাবতে পারে দিহান, সেটা হল, মেসেজটা রূপ পড়েছে। কিন্তু ভাব নিচ্ছে পড়েনি। বা, এটা লিখে আবার মেসেজ পাঠানো লাগে। বা, ব্লক সরায়নি বলে দিহান মরে যাচ্ছে, এরকম একটা এটিটিউড। এবং এসব ভাবতে ভাবতে দিহান বলবে, মরুক গে। চূলোয় যাক।
দুদিন পর,
ফেসবুক খুলতেই দিহান দেখে ইনবক্সে একটা মেসেজ। রূপের। তার মানে ব্লক সরিয়েছে। ওপেন করতেই দেখে বিশাল এক লেখা, লেন্থ দেখে মনে হচ্ছে দিহানের পড়তে মিনিমাম কয়েক যুগ লাগবে। তারপরেও পড়ে শেষ করল। যত্তসব আলবাল, কানা বগীর ছা, ডুগডুগি, ইতংবিতং কথাবার্তা। পড়তে পড়তে দিহানের মাথা ধরে গেল। এইবার দিহানের পালা। মেসেজটা SEEN করে রেখে দিল। আপাতত, নো রিপ্লাই। কেন কোন রিপ্লাই দিলাম না বা দিচ্ছি না তা ভাবতে ভাবতে রূপের দুদিনের ঘুম হারাম হবে এবং এটা ভেবে দিহান এখন নারকীয় সুখ পাচ্ছে।
দুদিন পরে দিহান রিপ্লাই দিল, আস্তে আস্তে চ্যাট বক্সটা আবার এক বছর আগের মত হয়ে গেল।
কিন্তু ঝামেলার এখানেই শেষ নয়। আপাতত কে কাকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠাবে তা নিয়ে মুখে কেউ কিছু না বল্লেও একটা খুতখুতানি মনের ভিতর উঁকিঝুঁকি মারছেই। রূপ খুব করে ভাবছে, দিহান রিকোয়েস্ট পাঠাক, ওদিকে দিহান ও মনে মনে ভাবছে, "ব্লক তো ও করেছিল, আমি না। ওর পাঠানো উচিত।"
এভাবে প্রতিদিন তারা কয়েকবার একে অপরের প্রোফাইলে ঘুর ঘুর করে, অনেকবার ভাবে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠাই, কিন্তু আর পাঠানো হয়ে ওঠে না। এবং তারা জানে ইগো নামের বিশেষ বস্তুটার জন্য তাদের দুজনের কারো পক্ষেই হয়ত এ কর্মটি সাধন করা সম্ভব হবে না। আফসোস, এত্তগুলা আফসোস।
©somewhere in net ltd.