![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বিশ্বে তামাক উৎপাদন বা তামাকের ধারণা সর্ব প্রথম ইউরোপ ও আমেরিকা মহাদেশে পরিলক্ষিত হয়। প্রাচীন কালে তামাক শুধু মানুষের ব্যবহার্য হলেও তা অর্থকারী ফসল হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে। তামাকের উৎপাদন প্রায় বাংলাদেশের সব এলাকায় পরিলক্ষিত হয় তবে বেশিরভাগ তামাক উৎপন্ন হয় দেশের উত্তরাঞ্চলে তথা বৃহত্তর রংপুর জেলায়। এই উত্তরবঙ্গের অধিকাংশ কৃষিজীবী মানুষের অর্থের যোগান দেয় এই তামাক। তামাক উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাত করনে মানুষ, পরিবেশ, মাটি ও জীব বৈচিত্রের নানারকম ক্ষতি সাধিত হয়, অপর দিকে বাংলাদেশ সরকার তামাক ও তামাকজাত পন্য থেকে ব্যাপক রাজস্ব আদায় করে থাকে যা অর্থনেতিক প্রবৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এ জন্য তামাক একটি বিতর্কিত শস্য হিসেবে পরিগনিত হয়।
তামাকের উৎপত্তি ও নামকরণের ইতিহাসঃ
তামাক শব্দের ইংরেজী প্রতিশব্দ 'Tobacco' এই শব্দটি স্পানিশ শব্দ 'tobaco' শব্দ থেকে এসেছে। তামাকের বৈজ্ঞানিক নাম 'Nicotina tobacum': এটি solanaceae গোত্রের বড় পাতা বিশিষ্ট একটি উদ্ভিদ। জ্যা নিকোট নামের এক ব্যক্তি প্রথম ফ্রান্সে তামাকের চাষ করেন।
তার নাম অনুসারেই তামাকের নামকরন করা হয় 'Nicotina' বিভিন্ন তথ্য অনুযায়ী ধারণা করা হয় ১৩শ শতাব্দি থেকে ইউরোপ ও আমেরিকা মহাদেশের বিভিন্ন দেশে যেমনঃ মেক্সিকো, স্পেন ফ্রান্স, ইতালি ও ব্রাজিলে তামাক চাষ শুরু হয়। তামাক গাছের শুকানো পাতা থেকে বিভিন্ন ধরনের তামাকজাত পন্য যেমনঃ সিগারেট, বিড়ি, হুক্কা, গুল, জর্দা ও অন্যান্য ধুমপানজাত পন্য।
বাংলাদেশে তামাকের ব্যবহারঃ
ভাস্কোদাগামার ভারত আবিষ্কারের পরপরই ১৫০৮ সালে পর্তুগিজ রা ভারতীয় উপমহাদেশে তামাক নিয়ে আসে। তবে সেই তামাক ছিল অত্যন্ত নিম্নমানের। পরবর্তীতে ১৯২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়া অঙ্গরাজ্য থেকে ভার্জিনিয়া উপমহাদেশে আসে। তারপর ধীরে ধীরে উপমহাদেশের সর্বত্র বিস্তৃতি লাভ করে। তামাক চাষ প্রায় সব ধরনের মাটিতে উপযোগী তবে বেলে-দোয়াশঁ মাটিতে তামাক ভালো জন্মায়। আর বাংলাদেশের অধিকাংশ কৃষি জমিই বেলে-দোয়াশঁ মাটি সমৃদ্ধ। তাই তামাক চাষ এদেশে দ্রুত জনপ্রিয়তা লাভ করে। বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলাতে মোট ৭৩,৫৩৫ হাজার একর জমিতে প্রতিবছর তামাক চাষ করা হয়। বাংলাদেশে তামাক উৎপাদনে প্রসিদ্ধ জেলা হলঃ রংপুর, কুষ্টিয়া, যশোর, ফরিদপুর ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলায়। বাংলাদেশে উৎপাদিত বিভিন্ন জাতের তামাকের নামঃ ভার্জিনিয়া, মতিহারি, ভেঙ্গী, সুমাত্রা ও ম্যানিলা ইত্যাদি।
উত্তরবঙ্গে তামাক চাষঃ
ব্রিটিশ সরকারের তথ্য অনুযায়ী, ১৯০৮ সালে রংপুরের বুড়ির হাটে একটি তামাক গবেষণা কেন্দ্র গড়ে ওঠে। প্রতিষ্ঠানটি তামাক উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন প্রচার প্রচারনা চালায়। আবার বিশ্বের বিভিন্ন দেশ হতে ১১৪টি জাতের তামাক সংগ্রহ করে এবং সুরভি ও সুগন্ধি নামক দুটি নতুন জাতের তামাক উদ্ভাবন করে। তারপর থেকে উত্তরবঙ্গে তামাক চাষ ব্যাপক আকার ধারন করে। উপজেলা কৃষি অফিস সুত্রে জানা যায়ঃ
১৯৯৭-৯৮ সালে ৩৯০৫ হেক্টর জমিতে তামাক চাষ হয়।
১৯৯৮-৯৯ সালে ৩২১০ হেক্টর জমিতে তামাক চাষ হয়।
১৯৯৯-০০ সালে ৪৩৬৩ হেক্টর জমিতে তামাক চাষ হয়।
২০০০-০১ সালে ৫০০০ হেক্টর জমিতে তামাক চাষ হয়।
২০০১-০২ সালে ৬৫০০ হেক্টর জমিতে তামাক চাষ হয়।
তারপর থেকে প্রতিবছর গড়ে ৫ হাজার হেক্টর জমিতে তামাক চাষ করা হচ্ছে।
তামাক উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাত করনে নারী সম্পৃক্ততাঃ
তামাক চাষে নারীদের কাজের ধরনঃ
তামাক চাষের ক্ষেত্রে বীজতলা তৈরী থেকে শুরু করে তামাক প্রক্রিয়াজাতকরণ পর্যন্ত নারীদের সম্পৃক্ততা লক্ষনীয়। তামাক চাষে নারী সম্পৃক্ততার বিভিন্ন ধাপ।
১) বীজতলা তৈরী, ২) চারা রোপণ,
৩) রিং তৈরী করা, ৪) শুর টানা,
৫) কলমা ভাঙ্গা, ৬) পাতা ভাঙ্গা,
৭) পাতা স্টিক করা, ৮) পাতা পোড়ানো,
৯) পাতা জাগ দেওয়া।
বিড়ি ফ্যাক্টরীতে নারী শ্রমিকঃ
প্রতিবছর ২ হাজার ৫ শত কোটি শলাকা সিগারেট এবং ১০ হাজার ৮ শত কোটি বিড়ি উৎপাদিত হয়। ২০০৯-১০ অর্থ বছরে প্রতি ২৫ শলাকা বিড়ির প্যাকেটে ২ টাকা করে কর ধার্য করলেও তা পাশ হয়নি। তামাক গাছের কান্ড, শিকর ও অন্যান্য উচ্ছিষ্ট অংশ বিড়ি তৈরীতে ব্যবহার করা হয়। বিড়ি কারখানা গুলোতে পুরুষের পাশাপাশি বিপুল সংখ্যক নারী ও শিশু শ্রমিক কাজ করে থাকে। বিড়ি শ্রমিকরা প্রতি হাজার বিড়ি বানানোর জন্য ২১ টাকা করে পেয়ে থাকে। নিম্ন মজুরী ছাড়াও বিড়ি কারখানায় শ্রমিকরা অত্যন্ত অমানবিক ও বিষাক্ত পরিবেশে কাজ করতে হয়।
তামাক চাষে নারীদের স্বাস্থ্যগত ক্ষতিঃ
তামাক চাষ ও প্রক্রিয়াজাতকরণে নারীদের প্রত্যক্ষ সম্পৃক্ততা পরিলক্ষিত হয়। এর ফলে নারীদের শারীরিক ও মানসিক ক্ষতি সাধিত হয়।
যেমনঃ
• বীজতলা তৈরীতেঃ কোমর ব্যাথা, চোখে অন্ধকার দেখা।
• রিং তৈরীতেঃ চোখে রক্ত ওঠা, হাত অবশ হওয়া।
• কলমা ভাঙ্গাতেঃ হাতে ঘা হওয়া, অরুচি, পাতলা পায়খানা।
• পাতা ভাঙ্গাতেঃ শ্বাসকষ্ট, হাপানি, শরীর দুর্বল হওয়া।
তামাকের অর্থনৈতিক অবদানঃ
বাংলাদেশের পুজিবাজারে একমাত্র তালিকাভুক্ত সিগারেট উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। "ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকো বাংলাদেশ (বিএটিবি)" দীর্ঘদিন ধরে এই প্রতিষ্ঠান বেসরকারি খাতের শীর্ষ করদাতা প্রতিষ্টানের স্থান ধরে রেখেছে। তামাক ও তামাকজাত পন্য থেকে বাংলাদেশ সরকার সর্বোচ্চ রাজস্ব আদায় করে থাকে। এ খাত থেকে প্রতিবছর ১৪,০০০ হাজার কোটি টাকার বেশি রাজস্ব আসে। যা সরকারের দেশীয় রাজস্বের ১০ শতাংশ। তামাকের মূল্য নির্ধারক আইন "টোবাকে প্রইসিং পলিসি" এর যথাযত বাস্তবায়নেরর মাধ্যমে আরও অতিরিক্ত বিপুল পরিমান রাজস্ব আদায় সম্ভব।
তামাক শিল্পের অর্থনৈতিক সম্ভাবনাঃ
সঠিকভাবে নীতি নির্ধারণ করতে পারলে বর্তমানের চেয়ে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা টাকা রাজস্ব আদায় করা যাবে। বাড়তি রাজস্ব আদায়ের জন্য করনীয় বিষয় সমূহঃ→
1) নিম্নস্তরে সিগারেটের দাম বাড়ানো।
2) চোরাচালান বন্ধের জন্য উচ্চস্তরের সিগারেট গুলোর যথাযত দাম নির্ধারন করা।
3) বর্তমান সিগারেটের দাম এবং কর কাঠামোর জটিলতা হ্রাস।
4) যথাযত পলিসির বাস্তবায়ন। ইত্যাদি।
তামাকের স্বাস্থ্যগত ক্ষতিঃ
তামাক একটি বিতর্কিত পন্য কেননা তামাক কোন খাদ্য শস্য নয় আবার কৃষি ফসলও নয়, কোন শিল্পের কাঁচামালও নয়। তামাকের পাতায় নিকোটিন নামক বিশেষ পদার্থ থাকে বলে তা অন্যান্য পাতা থেকে ভিন্ন। তামাক পাতা থেকে তৈরী হয় বিভিন্ন ব্রান্ডের সিগারেট ও বিড়ি। এছাড়াও জর্দা, গুল ইত্যাদি তৈরী হয়। বিংশ শতাব্দিতে তামাকের কারণে ১০০ বিলিয়ন মানুষ মৃত্যুবরণ করেছে। যা দুই বিশ্বযুদ্ধে নিহতের সংখ্যারও অধিক।
তামাকজাত পন্য এর ব্যবহার ও ধুমপান বাংলাদেশের মানুষের অকাল মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ। ধুমপানের মাধ্যমে নিকোটিন বিষাক্ত পদার্থ মানুষের শরীরে প্রবেশ করে মানুষকে মৃত্যুর দিকে ধাবিত করে।
বাংলাদেশে প্রতিবছর ৯৫ হাজার মানুষ তামাকজনিত বিভিন্ন রোগে মৃত্যুবরণ করছে। Global Adult Tobacco - এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী→ বাংলাদেশে ৪৩ ভাগ মানুষ ধুমপানে আসক্ত বা তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার করে। ধোয়াবিহীন তামাক ব্যবহার করে ২ কোটি ২০ লাখ মানুষ।
প্রতিবছর তামাক ব্যবহারের ফলে ১২,০০,০০০ মানুষ বেশ কিছু তামাক জনিত কঠিন রোগে ভূগছে। যেমনঃ ক্যান্সার, হার্ট এ্যাটাক, স্ট্রোক, ফুসফুস ক্যান্সার, ব্রঙ্কাইটিস, টিবি, হাপানি ও যক্ষা ইত্যাদি। যক্ষা রোগে প্রতিবছর ৭০ হাজার মানুষ মারা যায়। যা বিশ্বে ৬ষ্ট স্থানে।
তামাকের পরিবেশগত ক্ষতিঃ
১) খাদ্য-শস্য উৎপাদন হ্রাসঃ
বাংলাদেশে ১৯৭১ সালে কৃষি জমির পরিমান ছিল ২ কোটি ৯৭ হেক্টর। ১৯৮৬ সালে তা কমে দাড়ায় ৮১ লাখ ৫৮ হাজার হেক্টর এবং ২০০৩ সালে দাড়ায় ৭০ লাখ ৮৭ হাজার হেক্টর। অপরদিকে তামাক কোম্পানি গুলোর প্রচারনার কারনে তামাক চাষ খাদ্য উৎপাদনের জমি সমূহ দখল করছে। বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় ৭৪০০০ হেক্টর জমিতে তামাক চাষ হচ্ছে। দেশের কুষ্টিয়া, রংপুর, মানিকগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, রাজশাহী ও পার্বত্য এলাকায় তামাক চাষ ব্যাপক ভাবে বেড়ে চলছে। বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার মাত্র ২৫ শতাংশ মানুষ খাদ্য নিরাপত্তায় রয়েছে। আর সিংহভাগ মানুষই দারিদ্র সীমার নিচে বসবাস করছে। বাড়তি জনসংখ্যার এই দেশে আরও অধিক পরিমানে খাদ্য উৎপাদনে তামাক চাষ প্রধান অন্তরায়।
২) বায়ু দুষণঃ
তামাক চাষে প্রচুর পরিমানে রাসায়নিক ও কীটনাশক ব্যবহার করা হয়। যা বায়ু দুষণের অন্যতম প্রধান কারণ। এছাড়াও তামাকের পাতা প্রক্রিয়াজাতকরণে প্রচুর পরিমানে কাঠ, তুষ, ও খড় জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এ জন্য ব্যাপকভাবে বনাঞ্চলের গাছ কাটা হচ্ছে। প্রতি একর তামাকের উৎপাদিত পাতা প্রক্রিয়াজাতকরণে ৫ টন জ্বালানি কাঠের প্রয়োজন হয়। যা বায়ুকে দুষিত করে।
৩) জমির উর্বরতা হ্রাসঃ
তামাক চাষে প্রচুর পরিমানে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহারের ফলে মাটির উর্বরতা হ্রাস, পানির ধারণ ক্ষমতা হ্রাস ও ভূমিক্ষয় বৃদ্ধি করে। তামাক উৎপাদিত জমিতে অতি সহজে অন্যকোন ফসল উৎপাদন সম্ভব হয় না। কেননা দীর্ঘদিন তামাক উৎপাদন ভূ-গর্ভস্থ পানির সংকট সৃষ্টি করে। এছাড়াও রাসায়নিক সারের প্রভাবে ব্যাপক স্বাস্থহানি, বনভূমি, পানি, জলজ প্রাণী ও পরিবেশের অপূরনীয় ক্ষতি সাধিত হয়।
তামাক চাষের সামাজিক ক্ষতিঃ
১) শিশুশ্রম বৃদ্ধিঃ
তামাক উৎপাদনের কাজে প্রচুর পরিমান জনবলের কায়িক পরিশ্রমের প্রয়োজন হয়। এজন্য চাষীদের প্রায় পরিবারের কিশোর কিশোরী সহ সকলেই তামাক উৎপদনের কাজে সম্পৃক্ত হয়। যা কিশোর-কিশোরীদের শিক্ষায় ব্যাঘাত ঘটায় অন্যদিকো শিশুশ্রম বৃদ্ধি পায়। আর তামাক প্রক্রিয়াজাতকরণ প্রতিষ্ঠান সমূহে বেশিরভাগ শ্রমিকই নারী ও শিশু। এতে করে তাদের ব্যাপক স্বাস্থ্যহানী ঘটে।
২) যুব সমাজ ধ্বংসঃ
ধুমপান ও তামাকজাত পন্য ব্যবহার করার ফলে যুব সমাজ নেশাগ্রস্ত হচ্ছে যা সামাজিক ব্যাধি স্বরূপ। আর কিশোর-কিশোরীরা কৌতুহলের বশবর্তী হয়ে ধুমপানে আসক্ত হচ্ছে। যার ফলে তারা ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে ধাবিত হয়। যা একটি দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের অন্তরায়।
তামাকের অর্থনেতিক ক্ষতিঃ
1. তামাকের ব্যবহারজনিত কারণে প্রতিবছর দেশে ৫৭ হাজার লোক মারা যায় এবং রোগে আক্রান্ত হয় প্রায় ২২ লাখ মানুষ। এই রোগ ও মৃত্যুজনিত ক্ষতি প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকা।
2. জিডিপিতে তামাকজনিত ক্ষতির পরিমান ১-২ শতাংশ। এ ক্ষতি না হলে জিডিপি আরও এক শতাংশ বৃদ্ধি পেত। জিডিপি হত ৬.৫ থেকে বেড়ে ৭.৫ শতাংশ।
3. তামাক উৎপাদনের ক্ষেত্রে তামাক প্রক্রিয়াজাত কোম্পানি গুলোর দেওয়া অর্থের প্রলভনে কৃষকরা তামাক চাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছে। যার মাধ্যমে তারা দেশীয় কৃষকদের শোষণ করছে। খাদ্য শস্য উৎপাদন কমাতে ভূমিকা পালন করছে এবং কোম্পানির উপর জনগণের নির্ভরতা বাড়াচ্ছে। যা দেশীয় অর্থনীতির জন্য হুমকি স্বরূপ।
4. বছরে যে পরিমান বিড়ি সিগারেট বাংলাদেশের মানুষ সেবন করে তার মূল্য প্রায় ৮০০০ কোটি টাকা। যা তামাক উৎপাদন না করলে মানুষের পুষ্টিকর খাদ্যের সহায়ক হতো।
5. তামাক উৎপাদনে ব্যবহৃত জমিতে ধান চাষ করা যায় তাহলে প্রায় ৩ লাখ মেট্রিকটন চাল বাংলাদেশের খাদ্য ভান্ডারে যোগ করা সম্ভব।
তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণে সরকারি বিধিমালাঃ
তামাক, তামাকজাত পন্য ও ধুমপান স্বাস্থ্য ও অর্থনীতির জন্য এক বিশাল হুমকি স্বরূপ। জনস্বাস্থ্য, পরিবেশ ও অথনীতির ক্ষতির দিক সমূহ বিবেচনা করে বাংলাদেশ সরকার বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ ও নীতিমালা প্রণয়ন করেছে। বাংলাদেশ সরকার সর্বপ্রথম ২০০৩ সালে WHO এর আন্তর্জাতিক চুক্তি Framework Convention on Tobacco Control (FCTC) তে স্বাক্ষর করে ও সে অনুযায়ী তামাক নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করতে থাকে।
এরই ধারাবাহিকতায় তামাক নিয়ন্ত্রণে আইনি নীতিমালা প্রণয়ন করে ২০০৫ সালে যা "তামাকজাত দ্রব্য (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০০৫" নামে পরিচিত। উক্ত আইনটি ২০১৩ সালে সংশোধিত হয়। এই নীতিমালার কিছু উল্লেখযোগ্য ধারা হলঃ
1) পাবলিক প্লেস ও পাবলিক পরিবহনে ধুমপান নিষিদ্ধ
2) অটোমেটিক ভেন্ডিং মেশিন স্থাপন নিষিদ্ধ।
3) অপ্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তির কাছে তামাক ও তামাকজাত দ্রব্য বিক্রয় ও ব্যবহার নিষিদ্ধ।
4) ধুমপানের জন্য নির্দিষ্ট এলাকার ব্যবস্থা।
5) সতর্কতা মূলক নোটিশ প্রদান।
6) তামাক আমদানির বিবরণ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কে প্রদান।
7) তামাক ও তামাক জাতীয় ফসল উৎপাদন ও ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করণ ব্যবস্থা গ্রহণ।
8) জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেল গঠন।
9) তামাকজাত পন্যের বিজ্ঞাপন ও প্রচারণা নিষিদ্ধ।
10) তামাকজাত পন্যের প্যাকেটে স্বাস্থ্য ও ক্ষতি সম্পর্কিত সচিত্র বাণী মুদ্রণ।
11) তামাক ও তামাকজাত দ্রব্য সম্পর্কিত নীতিমালার বহির্ভূত সকল কার্যক্রম বা অপরাধ → The Code of Criminal Proceduce-1998 এর আওতায় বিচার কার্যক্রম সম্পাদিত হবে।
তামাক মুক্ত দিবসঃ
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও এর সহযোগী সংস্থা সমূহের উদ্দোগে তামাকের ঝুকিপূর্ণ সকল অবস্থা তুলে ধরা ও বিভিন্ন বিধি প্রণয়নে উদ্বুদ্ধ করতে ১৯৮৭ সাল থেকে প্রতিবছর ৩১ মে বিশ্ব তামাক মুক্ত দিবস পালন হয়।
বিভিন্ন বছর বিভিন্ন প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে তামাকমুক্ত দিবসটি পালিত হয়। কয়েকটি দিবসের প্রতিপাদ্য তুলে ধরা হলঃ
• ২০১৭ সালে→ তামাক উন্নয়নের অন্তরায়।
• ২০১৬ সালে→ সাদামাটা মোড়ক তামাক নিয়ন্ত্রণে আগামি দিন।
• ২০১৫ সালে→ তামাকজাত পন্যের অবৈধ ব্যবহার বন্ধ কর
• ২০১৪ সালে→ জনস্বাস্থ্য রক্ষায় তামাকজাত দ্রব্যের কর বৃদ্ধি
• ২০১৩ সালে→ তামাকের সকল প্রকার বিজ্ঞাপন ও পৃষ্ঠপোষকতা নিষিদ্ধ।
• ২০১২ সালে→ তামাক কোম্পানির আগ্রাসন বন্ধ হোক।
• ২০১১ সালে→ তামাক নিয়ন্ত্রণে WHO এর ফ্রেমওয়ার্ক কনভেমশন।
• ২০১০ সালে→ Gender and Tobacco with an emplaxs on Marketing to Women
• ২০০৯ সালে→ তামাকের অবৈধ ব্যবহার বন্ধ কর।
তামাক নিয়ন্ত্রণে বা নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবানে প্রতিবন্ধকতাঃ
প্রতিবছর বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যদিয়ে তামাক মুক্ত দিবস পালিত হয় এবং বিভিন্ন সময়ে তামাক ও তামাকজাত পন্যের উৎপাদন ও ব্যবহার যথাযত ভাবে কমানো যাচ্ছে না। এর পিছনে কিছু প্রতিবন্ধকতা রয়েছে যেমনঃ→
1. জনসচেতনতার অভাব।
2. আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কার্যক্রম পালনে অনীহা।
3. তামাক নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থার জবাবদিহিতার অভাব।
4. তামাক নিয়ন্ত্রণে পর্যাপ্ত জনশক্তির অপ্রাচুর্যতা।
5. কোম্পানির প্রতি নমনীয়তা।
6. কৃষকদের কোম্পানি নির্ভরতা।
7. কর কাঠামোর জটিলতার কারণে তামাক জাতীয় পন্যের উপর কর বৃদ্ধি করতে না পারা।
তামাক উৎপাদন, তামাক প্রক্রিয়াজাতকরণ, তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার সব কিছুই পরিবেশ, স্বাস্থ্য ও অর্থনীতির জন্য মারাত্মক হুমকি। এসব ক্ষতি থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য তামাকের পরিবর্তে অন্যফসলের আবাদে কৃষককে উৎসাহিত করা প্রয়োজন। অন্যদিকে বাংলাদেশ সরকার সিগারেটের দাম নির্ধারণে ও নীতিমালার সঠিক বাস্তবায়নে আমরা পেতে পারি একটি তামাক মুক্ত সমাজ বা পরিবেশ।
সুপারিশঃ
1. তামাকের ক্ষতি সম্পর্কে কৃষককে সঠিক ধারণা দিতে হবে।
2. তামাকের পরিবর্তে অন্য ফসলের আবাদে কৃষককে উদ্বুদ্ধ করতে হবে।
3. সঠিক সরকারি নীতিমালা বাস্তবায়নে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে দলবদ্ধ ভাবে সহায়তা করতে হবে।
4. তামাক প্রক্রিয়াজাতকরণ কোম্পানি গুলোর প্রতি কঠোরতা ভাব প্রদর্শন করতে হবে।
5. ধুমপান জাতীয় পন্যের সঠিক দাম ও কর নির্ধারন করতে হবে।
6. তামাকের যত্রতত্র ব্যবহার বন্ধে জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে।
২৫ শে মার্চ, ২০১৮ দুপুর ১২:২৬
সিয়াম বিল্লাহ ৭৪ বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই
২| ২৫ শে মার্চ, ২০১৮ দুপুর ১২:৩২
মো: নিজাম উদ্দিন মন্ডল বলেছেন:
প্রথম প্রথম, ছোট ছোট পোস্ট দিন। বেশী বড় করে লিখলে কেউ পড়বে না।
আর প্রথম পাতায় লিখতে চাইলে ব্লগে নিয়মিত থাকুন, পড়ুন, লিখুন, ব্লগের নীতিমালা মেনে চলুন।
©somewhere in net ltd.
১|
২৩ শে মার্চ, ২০১৮ রাত ১২:৩৪
মো: নিজাম উদ্দিন মন্ডল বলেছেন: আপনার ব্লগিং পর্ব শুভ হোক।
ব্লগে নিয়মিত হবার চেষ্টা করুন, অন্যের লেখা পড়ুন, আর লিখতে থাকুন। সাথে ব্লগের নীতিমালা মেনে চলুন।