নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আলিফ লাম মিম

সাইয়্যিদ ইসমাঈল কীব্রিয়্যাহ

সাইয়্যিদ ইসমাঈল কীব্রিয়্যাহ › বিস্তারিত পোস্টঃ

লাইলাতুল বারায়াত

২৯ শে আগস্ট, ২০০৭ রাত ২:১২

অদ্য দিবাগত রাত্রি লাইলাতুল বারায়াত। এদেশে লাইলাতুল বারায়াত সাধারণত ‘শবে বরাত’ নামে সমধিক পরিচিত। শব্দ দুইটি ফার্সী। অর্থ ভাগ্য রজনী। পবিত্র কোরআনে ‘সুরা দুখানে’ যে ‘লাইলাতুল মুবারাকাতান’ শব্দগুলি আসিয়াছে, তাহার অর্থ ‘বরকতময় রাত্রি।’ তফসিরবিদ ইকরামা এবং আরও কেহ কেহ বলেন, শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাত্রিই হইতেছে এই বরকতময় রাত্রি- “যে রাত্রিতে প্রতিটি প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয়ের বিজ্ঞোচিত ফয়সালা দেওয়া হইয়া থাকে।” (সুরা দুখান-আয়াত ৩/৪) অন্যরা এই অভিমত অস্বীকার করিতে চান। তবে শেষ নবী (দঃ) কর্তৃক বর্ণিত ‘লাইলাতুন নিসফে মিন শাবান’- ‘শাবান মাসের মধ্যভাগের রাত্রি’ নিঃসন্দেহে লাইলাতুল বারায়াত বা শবে বরাত। হজরত আলী (রাঃ) হইতে বর্ণিত, শাবানের ১৫ তারিখে (১৪ তারিখ রাত্রিতে) শেষ নবী (দঃ) লোকজনদের ডাকিয়া বলিতেন, “তোমরা সকলে এই রাত্রিতে ইবাদতে জাগ্রত থাকিবে। দিনের বেলায় রোজা রাখিবে। কেননা, শাবান মাসের ১৪ তারিখে সূর্যাস্তের পর আল্লাহ স্বয়ং প্রথম আসমানে অধিষ্ঠান করেন। সবাইকে ডাকিয়া জিজ্ঞাসা করেন, “কে আছ ক্ষমা প্রার্থনাকারী? তাহাকে আমি ক্ষমা করিয়া দিব। কে আছ রিজিকের অন্বেষণকারী? তাহাকে আমি রিজিক দিব। কে আছ রোগগ্রস্ত? তাহাকে আমি সুস্থতা দান করিব? এই রূপ আরো কেহ আছে কি? আমি প্রত্যেকের প্রয়োজন মিটাইব।” একই হাদিসে হজরত মোয়াজ ইবনে জাবলে (রাঃ) আর একটু বেশী বলিয়াছেন। তাহার বর্ণনা, শেষ নবী (দঃ) বলিয়াছেন, “এই পবিত্র রজনীকে মহান আল্লাহ্ তায়ালা সমগ্র সৃষ্টিকে ক্ষমা করেন কিন্তু যাদুকর, গণক, কৃপন, মদ্যপায়ী, ব্যাভিচারী, হিংসুক, শেরেককারী, অন্যের হক নষ্টকারী এবং পিতামাতার অব্যাধ্য সন্তানদের গোনাহ্ আল্লাহ এই মহান রাত্রিতেও ক্ষমা করেন না। ”



অনেকে বলেন, শবে বরাত শুধুমাত্র এই উপমহাদেশেই পালিত হইয়া থাকে, মুসলিম বিশ্বের অন্যত্র হয় না। কেহ কেহ এই রাত্রির ইবাদত বন্দেগী ও প্রতিবেশীদের হালুয়া-রুটি বিতরণকে প্রতিবেশী সমাজের ধার করা রেওয়াজ হিসাবে বর্ণনা করেন। এই শ্রেণীর লোকেরা কাঠখোট্টা অনুষ্ঠান সর্বস্ব রীতিনীতিকে ধর্ম বলিয়া সাব্যস্ত করেন। অতি কঠোরতা আর অতি সহজিয়া।।ইসলাম ইহাদের মধ্যে মধ্যপন্থার ধর্ম। তাই ইসলামের মুনাজাতে দুনিয়ার কল্যাণ আর আখেরাতের কল্যাণ অবিচ্ছেদ্য। এদেশে প্রতি বৎসর শবে বরাত অত্যন্ত মহাসমারোহে উৎযাপিত হয়। ইহার বাহ্যিক বর্ণাঢ্য দৃশ্য সর্বসাধারণের মনে একটা মহতীভাবের উদ্রেক করে বৈকি! অনেকে এই রাত্রিতে পরলোকগত পিতা-মাতা ও আত্মপরিজনের রূহের শান্তি প্রার্থনা করেন। কিন্তু উপরে হজরত মোয়াজ বিন জাবলের (রাঃ) বর্ণিত শেষ নবীর (দঃ) হাদিসে যে ৯ ধরনের মানুষের গোনাহ আল্লাহ্ মাফ করিবেন না বলিয়া বলা হইয়াছে, এই সম্পাদকীয় নিবন্ধের পাঠক/পাঠিকা একবার নিজের দিকে তাকাইয়া নিজেকেই প্রশ্ন করুন, ‘আমি কি এই পবিত্র রাত্রির ইবাদত বন্দেগী হইতে নিজের ভাগ্য পরিবর্তন করিতে পারিব? ভাগ্য পরিবর্তনের মাধ্যমে অধিকারী হইতে পারিব কি চির-কাঙিক্ষত সেই নাজাত বা মুক্তির?’



পবিত্র কোরআনে এমন একটি আয়াত আছে যাহার সারমর্ম- ‘হে বান্দা নিরাশ হইও না আল্লাহর রহমত হইতে। আল্লাহ তোমাদের সকল পাপ ক্ষমা করিয়া দেবেন।’ ইহার দ্বারা বুঝা যায়, অত্যন্ত পাপী বান্দা এমনকি ওই হাদিসের ৯ কিসিমের মধ্যে যাহারা পড়েন, তাহারাও খাঁটি দিলে তওবা করিলে আল্লাহর দরবারে কান্নাকাটি করিলে তিনি অবশ্য অবশ্যই তাহাকেও মাফ করিতে পারেন, মাফ করিবেন। আল্লাহ্র এক নাম গফুররুররহিম।। পরম ক্ষমাশালী পরম দয়ালু। এই প্রেক্ষাপটে ভাগ্য-রজনী ও মুক্তি-রজনী হিসাবে শবে বরাত তথা লাইলাতুল বারায়াত-এর আগমন আমাদের মত পাপী-তাপী বান্দাদের জন্য এক অফুরন্ত রহমত আর অনবদ্য নিয়ামতের ভান্ডার। তবে দেখিতে হইবে এই দিন রাত্রি-রোজা-নামাজ-বন্দেগী যেন এই দিন-রাত্রির মধ্যেই শেষ হইয়া না যায়। যাহারা আল্লাহ্কে মানে না বা না-মানার ভান করে, তাহাদের জন্য আফসোস! তবে, তাহাদের জন্যও আল্লাহ্র রহমতের বুলন্দ তোরণ আর ইসলামের মুক্তির দরওয়াজা চির উন্মুক্ত। সামনে রমজান মাস। এই শাবান মাস হইতেছে উহার প্রস্তুতিপর্ব। যে সব লোক বাতি আগরবাতি পোড়াইয়া, বাজি ফুটাইয়া এই রাত্রি পালন করিতে চায়, তাহারা যেমন ইসলামের সঠিক শিক্ষা হইতে দূরে সরিয়া যায়, তেমনি যাহারা ব্যবসা বাণিজ্যের নামে এই মাস হইতে শুরু করিয়া সামনের রমজান মাস পর্যন্ত জিনিসপত্রের মূল্য অযথা বাড়াইয়া মানুষের দিনগুজরানকে জানের উপরে টানিয়া তোলে।। তাহারাও হাদিস কথিত অন্যের হক নষ্টকারী ছাড়া কে আর? আল্লাহ্ সবাইকে সুমতি দিন। এই রাত্রির রহমত ও বরকতে মুসলিম উম্মাহকে জিন্দা করুন! এই রাত্রির কল্যাণে দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ সবার জন্য উন্মুক্ত হউক, আমি



(সৌজন্যে: ইত্তেফাক)

মন্তব্য ১১ টি রেটিং +০/-১

মন্তব্য (১১) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে আগস্ট, ২০০৭ রাত ২:২৪

দ্বীপবালক বলেছেন: এই রাতের কিছু মর্যাদা কোন কোন হাদীসে বর্ণনা করা হয়েছে। কিন্তু হাদীসগুলোর কোনটিই বিশুদ্ধতার মান্দন্ডে উত্তীর্ণ নয়।
আর সূরা দুখানে যে রাতের কথা বলা হয়েছে তা কদরের রাত। কারণ কদরের রাতে আল্লাহ কুরআন নাযিল করেছেন। সুরা দুখানের ঐ আয়াতে আল্লাহ বলেছেন, "আমরা একে একটি বরকতম্য রাতে নাযিল করেছি।" আর সূরা কদরে বলেছেন, "আমরা একে কদরের রাতে নাযিল করেছি।" তাই দুখানে বর্ণনা করা রাত আর কদরের রাত। ইকরিমা (রঃ) তার তাফসীরে ওটা ভুল বলেছেন। তিনি ছাড়া আর কেউ একথা বলেননি।

যাই হোক এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে নীচের লিংক দেখুন।

শবে বরাত ও প্রাসঙ্গিক কিছু কথা।

২| ২৯ শে আগস্ট, ২০০৭ রাত ৩:৩০

এস্কিমো বলেছেন: আপনি যে হাদিসের কথা বলেছেন - দয়া করে কি এর সূত্র উল্লেখ করবেন? @সাইয়্যিদ ইসমাঈল কীব্রিয়্যাহ

৩| ২৯ শে আগস্ট, ২০০৭ রাত ৩:৫০

ফজলে এলাহি বলেছেন: এই মন্তব্যটি পূর্বের একটি পোষ্টেও করেছিলাম। এখানেও দিলাম পাঠকদের সুবিধার জন্য।

শবে বরাত নিয়ে লেখার প্রয়োজন বোধ করছি না, কেননা, ইতিমধ্যে দলীল সমৃদ্ধ ও অত্যন্ত যুক্তিপূর্ণ লেখা এসে গেছে। নীচের তিনটি লিংকগুলো দেখুন-
১) শবে বরাত - ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া (১ম কিস্তি)
২) শবে বরাত - ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া (২য় কিস্তি)
৩) শবে বরাত - ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া (৩য় ও শেষ কিস্তি)
................................
আপনার উল্লেখিত দলীলগুলোর প্রসঙ্গে আলোচিত অংশ এখানে তুলে দিলাম:
"আলী ইবনে আবী তালিব (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ "যখন শা'বানের মধ্য রাত্রি আসবে তখন তোমরা সে রাতের কিয়াম তথা রাতভর নামায পড়বে, আর সে দিনের রোযা রাখবে; কেননা সে দিন সুর্য ডোবার সাথে সাথে আল্লাহ তা'আলা দুনিয়ার আকাশে অবতরণ করেন এবং বলেন: ক্ষমা চাওয়ার কেউ কি আছে যাকে আমি ক্ষমা করে দেব। রিযিক চাওয়ার কেউ কি আছে যাকে আমি রিযিক দেব। সমস্যাগ্রস্থ কেউ কি আছে যে আমার কাছে বিমুক্তি চাইবে আর আমি তাকে উদ্ধার করব। এমন এমন কেউ কি আছে? এমন এমন কেউ কি আছে? ফজর পর্যন্ত তিনি এ ভাবে বলতে থাকেন"।
হাদীসটি ইমাম ইবনে মাজাহ তার সুনানে (১/৪৪৪, হাদীস নং ১৩৮৮) বর্ণনা করেছেন। আল্লামা বূছীরি (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি) তার যাওয়ায়েদে ইবনে মাজাহ (২/১০) গ্রন্থে বলেনঃ হাদীসটির বর্ণনাকারীদের মধ্যে ইবনে আবি সুবরাহ হাদীস বানাতো। তাই হাদীসটি বানোয়াট।"
এ হাদীসটির সনদ সম্পর্কে আরো দেখতে পারেন নীচের লিংকে:
হাদীস শাস্ত্রের বিগত শতাব্দীর সবচেয়ে শক্তিশালী আলেম মরহুম নাসের আদ্-দ্বীন আল-বানী রাহিমাহুল্লাহর গবেষণায় হাদীসটি মওদুউ বা জাল হাদীস হিসেবে বিবেচিত হয়েছে

এ রাত সম্পর্কিত আরো হাদীসের তাখরীজ রয়েছে যেমন-
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু 'আনহা বর্ণিত হাদীস যা দ্বয়ীফ বা দুর্বল হাদীস
এটি এবং - এটিও দেখতে পারেন

================
দ্বীপবালকের মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

৪| ২৯ শে আগস্ট, ২০০৭ ভোর ৪:৩৬

নাজিম উদদীন বলেছেন: দেশ-বিদেশে শবে বারাতের গুরুত্ব পৌঁছে দিতে হবে।
শুধু উপমহাদেশে পালন করা হবে এটা ঠিক না।
এ বরকতময় রাত সবার জন্য শুভ হোক।
দুনিয়ার সকল মুসলিমের বারাত খুলে যাক, অন্যরা হা করে তাকিয়ে থাকুক।

৫| ২৯ শে আগস্ট, ২০০৭ ভোর ৪:৪২

রাশেদ বলেছেন: @ নাজিম উদদীন...৫ দিলাম। ব্যাপক হাসি পাইল। এমন এক জিনিষ আমরা পালন করি যেইটা নাকি ধর্মে নাই। এই ব্যপারটা এখন পর্যন্ত আলেমরা একমত হইতে পারল না যে এইটা আছে নাকি নাই। কে সত্য কে মিথ্যা আল্লাহ জানেন।

৬| ২৯ শে আগস্ট, ২০০৭ সকাল ১১:৩৭

বইপাগল বলেছেন: শবে বরাত সম্পূর্ণ একটি নবপ্রথা, এ রাতকে ভাগ্যরজনী মেনে কোনো ধরণের ইবাদত সম্পূর্ণরূপে বিদ'আত, চাই তা ব্যক্তিগতভাবে হোক বা সামষ্টিকভাবেই হোকঃ

ইমাম 'আতা ইবনে আবি রাবাহ, ইবনে আবি মুলাইকা, মদীনার ফুকাহাগণ, ইমাম মালেকের ছাত্রগণ, ও অন্যান্য আরো অনেকেই এ মত পোষণ করেছেন। এমনকি ইমাম আওযায়ী যিনি শাম তথা সিরিয়াবাসীদের ইমাম বলে প্রসিদ্ধ তিনিও এ ধরনের ঘটা করে মসজিদে ইবাদত পালন করাকে বিদ'আত বলে ঘোষণা করেছেন।
তাদের মতের সপক্ষে যুক্তি হলোঃ

১. এ রাত্রির ফযীলত সম্পর্কে সুস্পষ্ট কোন দলীল নেই। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ রাত্রিতে কোন সুনির্দিষ্ট ইবাদত করেছেন বলে সহীহ হাদীসে প্রমাণিত হয়নি। অনুরূপভাবে তার কোন সাহাবী থেকেও কিছু বর্ণিত হয়নি। তাবেয়ীনদের মধ্যে তিনজন ব্যতীত আর কারো থেকে বর্ণিত হয়নি।
আল্লামা ইবনে রজব (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেনঃ শা'বানের রাত্রিতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অথবা তার সাহাবাদের থেকে কোন নামায পড়া সাব্যস্ত হয়নি। যদিও শামদেশীয় সুনির্দিষ্ট কোন কোন তাবেয়ীন থেকে তা বর্ণিত হয়েছে। (লাতায়েফুল মা'আরিফঃ ১৪৫)।
শাইখ আব্দুল আযীয ইবনে বায (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেনঃ 'এ রাত্রির ফযীলত বর্ণনায় কিছু দুর্বল হাদীস এসেছে যার উপর ভিত্তি করা জায়েয নেই, আর এ রাত্রিতে নামায আদায়ে বর্ণিত যাবতীয় হাদীসই বানোয়াট, আলেমগণ এ ব্যাপারে সতর্ক করে গেছেন'।

২. হাফেজ ইবনে রজব (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি) যিনি কোন কোন তাবেয়ীনদের থেকে এ রাত্রির ফযীলত রয়েছে বলে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেছেনঃ ঐ সমস্ত তাবেয়ীনদের কাছে দলীল হলো যে তাদের কাছে এ ব্যাপারে ইসরাইলী কিছু বর্ণনা এসেছে।
তা হলে আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, যারা এ রাত পালন করেছেন তাদের দলীল হলো, যে তাদের কাছে ইসরাইলী বর্ণনা এসেছে, আমাদের প্রশ্নঃ ইসরাইলী বর্ণনা এ উম্মাতের জন্য কিভাবে দলীল হতে পারে?

৩. যে সমস্ত তাবেয়ীনগণ থেকে এ রাত উদযাপনের সংবাদ এসেছে তাদের সমসাময়িক প্রখ্যাত ফুকাহা ও মুহাদ্দিসীনগণ তাদের এ সব কর্মকান্ডের নিন্দা করেছেন। যারা তাদের নিন্দা করেছেন তাদের মধ্যে প্রখ্যাত হলেনঃ ইমাম আতা ইবনে আবি রাবাহ, যিনি তার যুগের সর্বশ্রেষ্ট মুফতি ছিলেন, আর যার সম্পর্কে সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে উমার (রা.) বলেছিলেনঃ তোমরা আমার কাছে প্রশ্নের জন্য একত্রিত হও, অথচ তোমাদের কাছে ইবনে আবি রাবাহ রয়েছে।
সুতরাং যদি ঐ রাত্রি উদযাপনকারীদের সপক্ষে কোন দলীল থাকত, তাহলে তারা 'আতা ইবনে আবি রাবাহর বিপক্ষে তা অবশ্যই পেশ করে তাদের কর্মকান্ডের যথার্থতা প্রমাণ করার চেষ্টা করতেন, অথচ এরকম করেছেন বলে প্রমাণিত হয়নি।

৪. পূর্বেই বর্ণিত হয়েছে যে, যে সমস্ত দুর্বল হাদীসে ঐ রাত্রির ফযীলত বর্ণিত হয়েছে, তাতে শুধুমাত্র সে রাত্রিতে আল্লাহর অবর্তীর্ণ হওয়া এবং ক্ষমা করা প্রমাণিত হয়েছে, এর বাইরে কিছুই বর্ণিত হয়নি। মুলতঃ এ অবতীর্ণ হওয়া ও ক্ষমা চাওয়ার আহবান প্রতি রাতেই আল্লাহ তা'আলা করে থাকেন। যা সুনির্দিষ্ট কোন রাত বা রাতসমূহের সাথে সংশ্লিষ্ট নয়। এর বাইরে দুর্বল হাদীসেও অতিরিক্ত কোন ইবাদত করার নির্দেশ নেই।

৫. আর যারা এ রাত্রিতে ব্যক্তিগতভাবে আমল করা জায়েয বলে মন্তব্য করেছেন তাদের মতের পক্ষে কোন দলীল নেই, কেননা এ রাত্রিতে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বা তার সাহাবা কারো থেকেই ব্যক্তিগত কিংবা সামষ্টিক কোন ভাবেই কোন প্রকার ইবাদত করেছেন বলে বর্ণিত হয়নি।
এর বিপরীতে শরীয়তের সাধারণ অনেক দলীল এ রাত্রিকে ইবাদতের জন্য নির্দিষ্ট করাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করছে, তম্মধ্যে রয়েছেঃ
আল্লাহ বলেনঃ “আজকের দিনে আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে দিলাম”। (সূরা আল-মায়েদাহঃ ৩)।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি আমাদের দ্বীনের মধ্যে এমন নতুন কিছুর উদ্ভব ঘটাবে যা এর মধ্যে নেই, তা তার উপর নিক্ষিপ্ত হবে। (বুখারী, হাদীস নং ২৬৯৭)।
তিনি আরো বলেছেন, যে ব্যক্তি এমন কোন কাজ করবে যার উপর আমাদের দ্বীনের মধ্যে নেই তা অগ্রহণযোগ্য হবে।(মুসলিম, হাদীস নং ১৭১৮)।
শাইখ আব্দুল আজীজ ইবনে বায (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেনঃ আর ইমাম আওযা'য়ী (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি) যে এ রাতে ব্যক্তিগত ইবাদত করা ভাল মনে করেছেন, আর যা হাফেয ইবনে রাজাব পছন্দ করেছেন, তাদের এ মত অত্যন্ত আশ্চার্যজনক বরং দুর্বল; কেননা কোন কিছু যতক্ষন পর্যন্ত শরীয়তের দলীলের মাধ্যমে জায়েয বলে সাব্যস্ত হবেনা ততক্ষন পর্যন্ত কোন মুসলিমের পক্ষেই দ্বীনের মধ্যে তার অনুপ্রবেশ ঘটাতে পারেনা। চাই তা ব্যক্তিগতভাবে করুক বা সামষ্টিকভাবে দলবদ্ধভাবে জামাতের সাথেই করুক। আর চাই গোপন বা প্রকাশ্য যেভাবেই করা হোক। কারণ বিদ'আতকে অস্বীকার করে এবং তা থেকে সাবধান করে যে সমস্ত দলীল প্রমাণাদি এসেছে সেগুলো সাধারণভাবে তার বিপক্ষে মত দিচ্ছে। (আত্তাহযীর মিনাল বিদ'আঃ১৩)।

৬. শাইখ আব্দুল আযীয ইবনে বায (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি) আরো বলেনঃ সহীহ মুসলিমে আবু হুরায়রা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, "তোমরা জুম'আর রাত্রিকে অন্যান্য রাত্র থেকে ক্বিয়াম/ নামাযের জন্য সুনির্দিষ্ট করে নিওনা, আর জুম'আর দিনকেও অন্যান্য দিনের থেকে আলাদা করে রোযার জন্য সুনির্দিষ্ট করে নিওনা, তবে যদি কারো রোযার দিনে সে দিন ঘটনাচক্রে এসে যায় সেটা ভিন্ন কথা"। (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১৪৪, ১৪৮)। যদি কোন রাতকে ইবাদতের জন্য সুনির্দিষ্ট করা জায়েয হতো তবে অবশ্যই জুম'আর রাতকে ইবাদতের জন্য বিশেষভাবে সুনির্দিষ্ট করা জায়েয হতো; কেননা জুম'আর দিনের ফযীলত সম্পর্কে হাদীসে এসেছে যে, "সুর্য যে দিনগুলোতে উদিত হয় তম্মধ্যে সবচেয়ে শ্রেষ্ট দিন হলো জুম'আর দিন"। (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৫৮৪)। সুতরাং যেহেতু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জুম'আর দিনকে বিশেষভাবে কিয়াম/নামাযের জন্য সুনির্দিষ্ট করা থেকে নিষেধ করেছেন সেহেতু অন্যান্য রাতগুলোতে অবশ্যই ইবাদতের জন্য সুনির্দিষ্ট করে নেয়া জায়েয হবেনা। তবে যদি কোন রাত্রের ব্যাপারে সুস্পষ্ট কোন দলীল এসে যায় তবে সেটা ভিন্ন কথা। আর যেহেতু লাইলাতুল কাদর এবং রমযানের রাতের কিয়াম/নামায পড়া জায়েয সেহেতু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে এ রাতগুলোর ব্যাপারে স্পষ্ট হাদীস এসেছে।

৭. যদি শা'বানের মধ্যরাত্রিকে উদযাপন করা বা ঘটা করে পালন করা জায়েয হতো তাহলে অবশ্যই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ ব্যাপারে আমাদের জানাতেন। বা তিনি নিজেই তা করতেন। আর এমন কিছু তিনি করে থাকতেন তাহলে সাহাবাগণ অবশ্যই তা উম্মাতের কাছে বর্ণনা করতেন। তারা নবীদের পরে জগতের শ্রেষ্টতম মানুষ, সবচেয়ে বেশী নসীহতকারী, কোন কিছুই তারা গোপন করেননি'। (আত্তহযীর মিনাল বিদাঃ ১৫,১৬)।

উপরোক্ত আলোচনা থেকে আমাদের কাছে স্পষ্ট হলো যে, কুরআন, হাদীস ও গ্রহণযোগ্য আলেমদের বাণী থেকে আমরা জানতে পারলাম শা'বানের মধ্য রাত্রিকে ঘটা করে উদযাপন করা চাই তা নামায বা অন্য কিছু যাই হোক অধিকাংশ আলেমদের মতে জগন্যতম বিদ'আত। শরীয়তে যার কোন ভিত্তি নেই। বরং তা' সাহাবাদের যুগের পরে প্রথম শুরু হয়েছিল। যারা হক্কের অনুসরণ করতে চায় তাদের জন্য দ্বীনের মধ্যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল যা করতে বলেছেন তাই যথেষ্ট। ১

৭| ২৯ শে আগস্ট, ২০০৭ সকাল ১১:৪০

অচেনা বাঙালি বলেছেন: মোল্লার দেখি অভাব নাই!

৮| ২৯ শে আগস্ট, ২০০৭ দুপুর ১২:০২

সাঈফ শেরিফ বলেছেন: অচেনা তুমি তোমার কিছু হিন্দু মোল্লা নিয়ে আস দেখি।
শবে বরাত বলে কিছু নাই এটা একমাত্র জামাত-শিবির পন্থীদের কাছেই শুনেছি।

৯| ২৯ শে আগস্ট, ২০০৭ বিকাল ৪:০০

ফজলে এলাহি বলেছেন: মাশাআল্লাহ্, আমাদের সাঈফ শেরিফ ভাই তো দেখি জামাত-শিবির ছাড়া বাইরের কোন খবরই রাখেন না। :)

১০| ২০ শে জুলাই, ২০১১ রাত ১০:১৩

মোঃ আরিফ রায়হান মাহি বলেছেন: সাইফ শেরিফ অত্যন্ত ভাল কথা বলেছেন।

জামাত শিবির ওহাবী মতবাদে দিক্ষীত আর এটাই ওহাবীদের প্রচলন যে শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতের কোন গুরুত্ব নাই, ঈদেমিলাদুন্নবি নাই, (সেইটা এখন মোল্লারা নিজেদের পেট চালানোর জন্য সিরাতুন্নবি হিসেবে পালন করে), নবিজীর কোন গুরুত্ব নাই, উনি সাধারন মানুষ।


অবশ্যই এই ধরনের কথা জামাত শিবির তথা ওহাবী মতবাদের লোক ছড়ায় এবং তাদের দ্বারা কতিপইয় লোক বিভ্রান্ত হয় কিন্তু তারা ছড়ায় না। তাই এইটা জামাত শিবির তথা ওহাবীদের কাজ বলে ধরা যায়।

১১| ২০ শে জুলাই, ২০১১ রাত ১০:৩৪

মোঃ আরিফ রায়হান মাহি বলেছেন: ও ভাল কথা, হাদীসগুলোকে বানোয়াট বলা হয়েছে অনেক পরে অনুমানের ভিত্তিতে।

প্রথম দিককার মুহাদ্দিসগন এটাকে বানোয়াট বলেননি বরং এটাকে দুর্বল বলেছেন।

ইমাম বুখারী এটাকে কেন সংকলন করেননি সেটাও বিভিন্ন বর্ননায় এসেছে তাই সেটা জানলেই বাকিটা জানা যাবে। (মূলত বিরোধী দলিলগুলো এর উপর ভিত্তি করেই এসেছে, তাই এটা সম্পর্কে জানা গেলেই বুঝা যাবে বিরোধিতা কতটুকু সত্য, কেউ বলুক কেন ইমাম বুখারী এটা সংকলন করেননি)আর সিহাহ সিত্তার বিভিন্ন হাদীসেও এর সহীহ বর্ননা আছে। পরবর্তীতে কিছু মুহাদ্দিস একে দুর্বল বলেছেন, কিন্তু বাতিল বলেন নি, তারও পরে অত্যুতসাহী মুহাদ্দিস একে বাতিল বলে আর সেগুলোর রেফারেন্সই বিরোধীরা টানে। আর যার এর প্রচলন করে তারা মূলত ওহাবী।

আর বিরোধীরা এর বিরোধিতা করতে গিয়ে এই কয়টিই রেফারেন্স টানে, অথচ এর বাহিরে এর পক্ষে যে কত দলিল আছে তা কেউ সার্চ করে না। আর এর বর্ননার প্রথমেই ভুল। উপমহাদেশে এর প্রচলন কে বলেছে? আরব বিশ্বে প্রায় সব জায়গাতেই এমনকি সৌদিতেও এই শাবান মাসে অনেকেই নিয়ম করে নফল ইবাদত করেন এমনকি রোযাও রাখেন। ১৪ তারিখ দিবাগত রাতকে আলাদা গুরুত্ব সবাই দেয়। সৌদির ওহাবীরা অবশ্য এটা সহ আরো অনেক চর্চা থেকে বিরত থাকে।

যারা এগুলো বিশেষ উদ্দেশ্যে প্রচার করে তারা কখনোই বলে না, কারন তাদের প্রচারে উদ্দেশ্য আছে, আর (লক্ষ্য করবেন, এটা কিন্তু ইদানিং কালের ধারনা অর্থাৎ ওহাবীদের আমাদের দেশে অনুপ্রবেশের পর থেকে শবে বরাত বিদাত, কিছু বছর পেছনে যান, শবে বরাত একটা সর্বজনীন চর্চা ছিল)।আর যারা সাধারন মুসলিমরা ঐটুকু শুনেই কেউ বিদাত বলে ধরে নেয় আর কেউ থেমে যায় সিদ্ধান্ত নেয়া থেকে, অথচ কেউ বাকিটা খোঁজ করে না।

১২| ২০ শে জুলাই, ২০১১ রাত ১০:৩৫

মোঃ আরিফ রায়হান মাহি বলেছেন: ও ভাল কথা, হাদীসগুলোকে বানোয়াট বলা হয়েছে অনেক পরে অনুমানের ভিত্তিতে।

প্রথম দিককার মুহাদ্দিসগন এটাকে বানোয়াট বলেননি বরং এটাকে দুর্বল বলেছেন।

ইমাম বুখারী এটাকে কেন সংকলন করেননি সেটাও বিভিন্ন বর্ননায় এসেছে তাই সেটা জানলেই বাকিটা জানা যাবে। (মূলত বিরোধী দলিলগুলো এর উপর ভিত্তি করেই এসেছে, তাই এটা সম্পর্কে জানা গেলেই বুঝা যাবে বিরোধিতা কতটুকু সত্য, কেউ বলুক কেন ইমাম বুখারী এটা সংকলন করেননি)আর সিহাহ সিত্তার বিভিন্ন হাদীসেও এর সহীহ বর্ননা আছে। পরবর্তীতে কিছু মুহাদ্দিস একে দুর্বল বলেছেন, কিন্তু বাতিল বলেন নি, তারও পরে অত্যুতসাহী মুহাদ্দিস একে বাতিল বলে আর সেগুলোর রেফারেন্সই বিরোধীরা টানে। আর যার এর প্রচলন করে তারা মূলত ওহাবী।

আর বিরোধীরা এর বিরোধিতা করতে গিয়ে এই কয়টিই রেফারেন্স টানে, অথচ এর বাহিরে এর পক্ষে যে কত দলিল আছে তা কেউ সার্চ করে না। আর এর বর্ননার প্রথমেই ভুল। উপমহাদেশে এর প্রচলন কে বলেছে? আরব বিশ্বে প্রায় সব জায়গাতেই এমনকি সৌদিতেও এই শাবান মাসে অনেকেই নিয়ম করে নফল ইবাদত করেন এমনকি রোযাও রাখেন। ১৪ তারিখ দিবাগত রাতকে আলাদা গুরুত্ব সবাই দেয়। সৌদির ওহাবীরা অবশ্য এটা সহ আরো অনেক চর্চা থেকে বিরত থাকে।

যারা এগুলো বিশেষ উদ্দেশ্যে প্রচার করে তারা কখনোই বলে না, কারন তাদের প্রচারে উদ্দেশ্য আছে, আর (লক্ষ্য করবেন, এটা কিন্তু ইদানিং কালের ধারনা অর্থাৎ ওহাবীদের আমাদের দেশে অনুপ্রবেশের পর থেকে শবে বরাত বিদাত, কিছু বছর পেছনে যান, শবে বরাত একটা সর্বজনীন চর্চা ছিল)।আর যারা সাধারন মুসলিমরা ঐটুকু শুনেই কেউ বিদাত বলে ধরে নেয় আর কেউ থেমে যায় সিদ্ধান্ত নেয়া থেকে, অথচ কেউ বাকিটা খোঁজ করে না।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.