নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যতবার মানুষ হওয়ার চেষ্টা করেছি, ততবারই পুরুষ হয়ে উঠি। তুই শালা একটা ‌‘পুরুষ’ শব্দটি সম্ভবত পৃথিবীর নিকৃষ্ট একটা গালিতে রূপান্তরিত হবে। পুরুষ হিসেবে গর্ব করার কিছু নেই, আমি লজ্জিত, সত্যি লজ্জিত যে আজও মানুষ হতে পারিনি।

সীমান্ত প্রধান

যা কিছু সত্য, তাই সুন্দর

সীমান্ত প্রধান › বিস্তারিত পোস্টঃ

বুলবুলি

৩০ শে জুলাই, ২০১৩ রাত ২:২৬

সেদিন সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরছিলাম। কখনো এতোটা তারাতারি বাড়ি ফেরা হয়না। আজ ফিরতে হচ্ছে। বড্ড ক্লান্ত। গতকাল রাতে প্রচন্ড রকম বৃষ্টি হওয়ায় বাড়ি ফেরা হয়নি। অফিসের চেয়ারে হেলান দিয়ে রাতটা পাড় করেছি। দিনের বেলায় কাজের চাপে বাড়ি যাওয়া হয়নি। তাই আজ একটু আ্েভাগেই বাড়ি ফেরা। এ জন্য সব কাজই খুব দ্রুত সেরেছি।



বাড়ির অনেকটা কাছাকাছি আসতেই একদল মানুষর জটলা! ঋষিপাড়ার কদম গাছটার সামনে প্রায় শ’খানেক নারী পুরুষ। কি হচ্ছে এখানে? আসতে আসতে ভাবছিলাম। মাঝে মাঝে আবার ওই জটলার মধ্য থেকে আলোর ঝলকানি দেখা যাচ্ছে। এখানে স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায় বছরে একবার পূজো করেন। কালি পূজা। হয়তো সেই পূজাকে ঘিরে এবার তারা নতুন কিছু করেছে। আর তাই হয়তো উৎসূক জনতা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে। কিন্তু পূজা তো সবে মাত্র শেষ হয়েছে মাস ২ এক হবে! তাহলে এইটা কিসের জটলা? হঠাৎ আলোর ঝলকানিই বা আসছে কোত্থেকে? এমন সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে এগিয়ে যাই সামনে। ভীর ঠেলে বিষয়টা কি দেখার চেষ্টা করি।



আলোর ঝলকানিটা সাংবাদিকদের ক্যামেরার ফ্লাশ লাইটের। একের পর এক স্ন্যাপ নিচ্ছে তারা। তারা স্ন্যাপ নিচ্ছে একটি কিশোরীর নিথর দেহের। বয়স কতো হবে ১৪ কি ১৫। শ্যাম বর্ণের পাতলা গড়ন। মুখবয়টা দেখতে মনে হচ্ছে খুবই সুশ্রী ছিলো। এখন বুঝা যাচ্ছে না। কারন মুখ ভর্তী নখের আচর আর কামড়ের দাগ। থোক থোক রক্ত জমে আছে মুখের অনেকটা জায়গা জুড়ে। একটা ছেড়া নোংরা লুঙ্গি দিয়ে গতরটা ঢাকা।



মেয়েটি ধর্ষিতা হয়েছে। গতকাল রাতে একদল লম্পট মেয়েটিকে জোরপূর্বক গণ ধর্ষণ করেছে। অবশেষে ওই ধর্ষকের দল মেয়িটিকে শ্বাসরোধে হত্যা করে কদম গাছটার পাশে ডোবার মাঝে ফেলে গেছে সম্পূর্ণ বিবস্ত্র অবস্থায়। অনেকেই নাকি মেয়েটির উদোম শরীর দেখছিলো দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে। গতরটা ঢেকে দেয়ারও কেউ প্রয়োজন বোধ করেনি। তবে একজন ভিক্ষুক তার ঝোলা থেকে একটি ছেড়া লুঙ্গি দিয়ে মেয়েটির উদোম শরীরটা ঢেকে দেয়। খবর পেয়ে সংবাদকর্মীরা ছুটে আসে। অবশ্য সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশে খবর দেয়া হয়েছে। এখনো পুলিশ এসে পৌছায়নি। আধা ঘন্টা আগে খবর দেয়া হয়েছে পুলিশে। হয় তো আরো আধা ঘন্টা পরে আসবে পুলিশ।



বাঁশির শব্দ শোনে মনে হলো পুলিশ এসেছে। ঝট বাধা মানুষগুলোকে ধাক্কিয়ে সরিয়ে দেয়া হচ্ছে। তাকাতেই দেখলাম পুলিশ। অবেশেষে এলেন তারা। কি ব্যাপার, মেয়েটির লাশ এখানে কি ভাবে এলো? ‘ডোবায় পড়া ছিলো’, ‘তাহলে উপরে এলো কি কওে’? এমন নানা প্রশ্ন করতে থাকে তারা। তাদের এমন আরো অনেক প্রশ্নের কারনে অনেকেই ঘটনাস্থল থেকে এক পা দু পা করে পিছ পা হয়ে কেটে পড়ছেন। এতোক্ষণ যেই জটলাটা ছিলো এখন আর তা নেই। গুটি দুই এক মানুষ দাঁড়ানো। আর আট কি দশ জন সাংবাদিক।



এক লোক পুলিশদের জানালো-ডোবার কুল ঘেষে কেউ একজন পড়ে আছে দেখতে পেয়ে স্থানীয় এক বৃদ্ধা মহিলা সামনে এগিয়ে যান। তিনি ভেবেছিলেন মেয়েটি বেঁচে আছেন। তাই মেয়েটিকে টেনে একটু উপরে তুলে আনেন। পরে মেয়েটির এই হাল দেখে তিনি ভয়ে চিৎকার করে উঠেন এবং ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান। পরে একজন দুই জন করে আমরাও আসি। সংবাদ পেয়ে সাংবাদিকরাও আসেন। আপনাদেরকেও খবর দেয়া হয়।



পুলিশ থানায় ফোন করে লাশ বহনকারী ভ্যানটাকে পাঠাতে বলে। ভ্যান এলে লাশটিকে পাঠিয়ে দেয়া হয় ময়না তদন্তের জন্য মর্গে। মেয়েটিকে কি কেউ চিনে কি না, পুলিশ এমনটি জানতে চায় এলাকার মধ্যে ঘুরে ঘুরে। কেউ চিনে না মেয়েটিকে। এই প্রথমই দেখেছে তারা। এর আগে কখনো মেয়েটিকে এখানে দেখা যায়নি।



গতকাল রাতে যখন বৃষ্টি হয়েছে তখনই হয়তো লম্পটের দলেরা মেয়েটিকে ধরে জোরপূর্বক ধর্ষণ করেছে। কিন্তু মেয়েটি-ই বা বৃষ্টির মধ্যে কোত্থেকে এলো! এমন অনেক ভাবনা ভীর করতে থাকে মগজে। বাড়ি ফিরে সারারাতই এই ভাবনা। কে এই মেয়েটি? কোত্থেকে এসেছে?



সকালে ঘুম থেকে উঠে পাড়ার দোকানে যাই সিগারেট আনতে। সেখানে বলাবলি হচ্ছিল-রহমানের মেয়েটিকে পাওয়া যাচ্ছে না গেল দু’দিন ধরে। ‘কে রহমান ? জানতে চাইলে একজন বলে-‘কামালের বস্তি ঘরে ভাড়া এসেছে দুই মাস হলো। রিক্সা চালক। তার মেয়ে বুলবুলি। গার্মেন্টসে কাজ করে। গেল পরশু সকালে গার্মেন্টসে গিয়ে আর বাড়ী ফিরে আসেনি’।

‘সে কি কথা! আত্মীয় স্বজনদের কারো বাড়ী যায়নি তো’?

‘এখানে এরা আত্মীয় স্বজন পাবে কোথা থেকে। এরা তো এখানে এসেছে দায়ে ঠেকে। ওদের বাড়ি সিরাজগঞ্জ। যমুনা নদী তাদের বাড়িঘর জমিজমা ভেঙ্গে নেয়ায় উপায়ন্তর না দেখে এইখানে চলে আসে’।

আক্কাছ নামের একজন বলে উঠে ‘আমিই তো মেয়েটিকে গার্মেন্টসে লাগিয়ে দিয়েছি’।



আমার কেমন জানি মনে হলো ‘ওই মেয়েটি নয় তো’? ‘নাহ্ ওই মেয়েটি হলে এরা তো ওইখানে একটি মেয়ের মৃতদেহ পাওয়া গেছে সেটা তো জানে নিশ্চয়’। ‘নাহ না ও তো জানতে পারে। কিংবা জানলেও চোখে দেখেনি কেউ। তাছাড়া আমাদের এই জায়গাটা থেকে মৃতদেহ পাওয়ার স্থানটির দূরত্বও অনেক’।

‘মেয়েটির বয়স কতো হবে’? বলতেই আক্কাছ বলে উঠে-১৪ কি ১৫ হবে।

আমার আর বুঝতে অসুবিধা হলো না ‘ওই মেয়েটিই বুলবুলি’।

মেয়েটির বাবা কোথায় আছে এখন জানতে চাইলে আক্কাছ বলে ‘কামালের সাথে মেয়েটির বাপ থানায় গেছে ডায়েরী করতে’।



আমার ধারণাটাই অবশেষে ঠিক হলো। ওই মেয়েটিই বুলবুলি। পরশু রাতে একটু দেরী করে গার্মেন্টস ছুটি হয়েছিলো। বৃষ্টির জন্য মেয়েটি আটকা পড়ে। কিছুক্ষন অপেক্ষা করার পর বৃষ্টি যে আর কমছিলো না মেয়েটি বৃষ্টিতে ভিজেই বাসার দিকে চলে আসছিল। ঋষিপাড়ার কাছাকাছি আসতেই একদল লম্পট মেয়েটিকে ঝাপটে ধরে। টেনে হিচড়ে নিয়ে যায় পাশের একটি নিমার্ণাধীন বাড়িতে। মেয়েটির আত্মচিৎকার বৃষ্টির ঝড়ো শব্দ ভেঁদ করে কারোর কান পর্যন্ত পৌছাতে পারেনি। পুলিশ ইতোমধ্যে সন্দেহজনকভাবে একজনকে আটক করেছে।



ছেলেটির নাম তোবারক। মাদকাসক্ত। গভীর রাত পর্যন্ত এই ঋষিপাড়ার এই রাস্তাতেই থাকে। দল বেধে আড্ডা দেয় আর মাদক সেবন করে। সে-ই বুলবুলি ধর্ষণ ও হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত। পুলিশের কাছে স্বীকারোক্তি দিয়েছে। তার সাথে আরো ৫জন ছিলো।



বুলবুলি গ্রামের স্কুলে ৮ম শ্রেণীতে পড়া লেখা করতো। নদী ভাঙ্গনের কারনে ওরা সর্বশান্ত হয়ে নারায়ণগঞ্জের হরিহর পাড়ায় চলে আসে। পড়ালেখার প্রতি বুলবুলির আগ্রহটা ছিলো প্রচন্ড। ইচ্ছে ছিলো গর্মেন্টসের ওভারটাইমের টাকা জমিয়ে উন্মক্ততে ভর্তী হবে। মোটামুটি ভালো একটা অফিসে চাকরি করবে। বাবার কষ্ট কিছুটা লাঘব করবে। কিন্তু.....।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.