নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সৈয়দ জাওয়াদুম মুনীর

আমি একাকী মানসিকতার এক সাধারন মানুষ।

সৈয়দ জাওয়াদুম মুনীর

আমি একাকী মানসিকতার এক সাধারন মানুষ।

সৈয়দ জাওয়াদুম মুনীর › বিস্তারিত পোস্টঃ

সৈয়দপুর গ্রাম

০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ৯:০৭

সৈয়দপুর গ্রাম,ইংরেজিতে Syedpur, বাংলাদেশের সিলেট বিভাগের সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুর উপজেলার ৭নং সৈয়দপুর শাহারপাড়া ইউনিয়নের অন্তর্গত একটি গ্রাম। বানিয়াচঙ্গের পর সিলেট বিভাগের দ্বিতীয় বৃহত্তম গ্রাম এটি।



== অবস্থান ==

জগন্নাথপুর উপজেলার সদর দপ্তরের প্রায় পাঁচ-ছয় কিলোমিটার পূর্ব-দক্ষিণে, সিলেট শহর থেকে ৪০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং সিলেট-জগন্নাথপুর সড়কের এক কিলোমিটার দক্ষিণে গ্রামটি অবস্থিত।এই গ্রামটির দৈর্ঘ্য প্রায় আড়াই মাইল,প্রস্থ প্রায় দেড় মাইল।



== ইতিহাস ==

সৈয়দপুর গ্রামের পুর্ব নাম ছিল কৃষ্ণপুর। পরবর্তীতে হযরত শাহ জালাল (রহ) এর অন্যতম সহচর সৈয়দ শাহ শামসুদ্দিন (রহ) যিনি চিরনিদ্রায় শায়িত এই গ্রামে তাঁরই নামানুসারে এই গ্রামের নামকরণ করা হয় সৈয়দপুর। তখনকার সৈয়দপুরের সাথে কৃষ্ণপুর ছাড়াও একত্রিত হয় গোয়ালগাঁও, হীরণপুর, গয়গড় ও একাকামলক্ষ্মী।

১৩০৩ সালে হযরত শাহ জালাল (রহ) এর সিলেট আগমন কালে তাঁর সাথে ৩৬০ আউলিয়ার মধ্যে উল্লেখযোগ্য বয়োবৃদ্ব্ব সহচর ছিলেন সৈয়দ আলাউদ্দিন (রহ)। হযরত সৈয়দ আলাউদ্দিন (রহ) এর চারপুত্র ছিলেন। তারা তাঁর সাথে সিলেটে আসেন। তাদের মধ্যে একজন হযরত সৈয়দ শাহ শামসুদ্দিন (রহ) আতুয়াজান পরগণার কৃষ্ণপুর আগমন করেন। যা আজকের সৈয়দপুর।

কথিত আছে, হযরত শাহজালাল (রহ) এর নির্দেশে হযরত সৈয়দ শাহ শামছুদ্দিন (রহ) সিলেট থেকে পশ্চিম দিকে তাঁর যাত্রা শুরু করেন। তাঁর মূর্শিদের নির্দেশ ছিল, যেখানে মাগরিবের নামাজের সময় হবে সেখানে যেন তিনি অবস্থান গ্রহন করেন। সৈয়দ শাহ শামছুদ্দিন (রহ) মাগরিবের নামাজের কিছুক্ষণ পুর্বে একটি ছোট খালে ওজু করেন। তাই ঐ খালের নাম হয় ওজুর খাল। বর্তমানে যা ওজার খাল নামে পরিচিত। তার পর মাগরিবের নামাজের সময় তিনি একটি ছোট নদীর তীরে এসে উপস্থিত হয়েছিলেন বলে নদীর নাম পড়ে যায় মাগরেবা নদী। যা বর্তমানে মাগুরা নদী নামে খ্যাত। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় এখানে বসবাস করেই তিনি ইসলামের বাণী প্রচারে ব্রত হন।

প্রকাশ থাকে যে, হযরত শাহ শামছুদ্দিন (রহ) প্রথমে দাউদপুরের দাউদ কোরেশী (রহ) এর মেয়েকে বিবাহ করেন। তাঁরই ঔরসজাত সন্তান ছিলেন সৈয়দ শাহ হোসেন (রহ)। তাঁর দুই ছেলে সৈয়দ শাহ আহমদ (রহ) ও সৈয়দ শাহ মহমুদ (রহ)। তাদের বংশধরগণই বর্তমান সৈয়দপুরে অধিকাংশ অধিবাসী।

এছাড়া সৈয়দ শাহ শামছুদ্দিন (রহ) স্থানীয় রাজার মেয়ে মালতিকে বিয়ে করেন। যার ইসলামী নাম মালেকা। কথিত আছে যে, মালতি পীরসাহেবের আগমন বার্তা ও আযানের ধ্বনি শুনে ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হওয়ার জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠেন। এ সংবাদে রাজা ক্ষুদ্ব হয়ে তাকে কাষ্ঠে পুড়ানোর জ়ন্য আগুনে ফেলে দেন এবং ঠিক তখনই সৈয়দ শাহ শামছুদ্দিন (রহ) সেখানে আলৌ্কিকভাবে উপস্থিত হলে এবং সাথে সাথে মালতি “লা-ইলা-হা ইল্লাল্লাহু” আওয়াজ তুলেন। ফলে আগুন তাকে স্পর্শ করতে পারেনি। এ ঘটনায় সৈয়দ শাহ শামছুদ্দিন (রহ) এর একটি কেরামতি প্রকাশ পায়।

হযরত শাহ শামছুদ্দিন (রহ) এর বংশধরগণ ছাড়াও সৈয়দপুর গ্রামে আরো কয়েকটি বংশের বসতি রয়েছে। তাদের মধ্যে সৈয়দ শাহ তাজ উদ্দিন, সৈয়দ শাহ রুকন উদ্দিন, হযরত দাউদ কোরেশী, সৈয়দ ফুল, শেখ লেদু ও করম আলী আকঞ্জীর বংশধরগণ উল্লেখযোগ্য। এ ছাড়া ও মল্লিক বংশ, খান বংশ, শেখ বংশ, শিকদার বংশ, মীর্জা বংশের বংশধরদের আবাস রয়েছে সৈয়দপুর গ্রামে।



== বংশ উপাত্ত ==

১৭৮৮-১৭৯৩ খ্রীস্টাব্দে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রবর্তিত হয়,তখন সৈয়দপুর মৌজা,কিসমৎ আতুয়াজান পরগনার ১১টি তালুকে ভাগ করা হয়।এর প্রথম দশটি তালুকই সৈয়দ শাহ শামছুদ্দিনের বংশধরের নামে।তালুকগুলি হল- ১। ২৩নং তালুক সৈয়দ আমীন, ২। ২৪নং তালুক সৈয়দ গাজী, ৩। ২৫নং তালুক সৈয়দ কুতুব রুকন, ৪। ২৬নং সৈয়দ মরতুজা আব্দুল, ৫। ২৭নং তালুক সৈয়দ রাজা মনসুর, ৬। ২৮নং সৈয়দ মারুফ মুনায়েম, ৭। ২৯নং তালুক সৈয়দ রবী,হবীব ও ছইফ, ৮। ৩০নং তালুক সৈয়দ মঘুবাকর নূর, ৯। ৩১নং তালুক সৈয়দ উজিয়াল চান্দ, ১০। ৩২নং তালুক সৈয়দ পীর কবির, ১১। ৩৩নং তালুক শফী বেগ।



== শিক্ষা, প্রতিষ্ঠান ও অন্যান্য ==



== জনসংখ্যা উপাত্ত ==

সৈয়দপুর গ্রামের লোকসংখ্যা প্রায় বিশ হাজার। অধিবাসীদের সবাই মুসলমান।



== কৃতি ব্যক্তিত্ব ==

এ গ্রামের ক্ষণজন্মা কৃ্তিপুরুষদের মধ্যে দরগাহ মসজিদ ও তৎসংলগ্ন ঈদ গাহের ঈমাম মাওলানা সৈয়দ ফখরুল্লাহ, নবাব মুর্শিদ কুলী খাঁ’র গৃহ শিক্ষক বিশিষ্ট আলেম সৈয়দ হাফিজ আলী, বানিয়াচং রাজপরিবারের গৃহ শিক্ষক মোঃ শুকুর উল্লাহ, বর্ধমান উচ্চতর আদালতের সাবেক প্রধান বিচারপতি দেওয়ান সৈয়দ ওয়াছিল আলী, সিপাহী বিপ্লবপুর্ব বৃটিশ খেদাও আন্দোলনের বিপ্লবী নেতা পীর কেরামত আলী জৈনপুরীর অন্যতম খলিফা মীর সৈয়দ অজি উল্লাহ, বিশিষ্ট ধনাট্য ব্যক্তি মিয়া সৈয়দ আজমল আলী চৌধুরী, ফরাজী আন্দোলনের কারাবরণকারী মজলুম নেতা কাজী সৈয়দ শরাফত আলী, দেওয়ান হাসন রাজার ওস্তাদ মৌলভী মহাম্মদ গোলাম হায়দার, জাতীয় অধ্যাপক দেওয়ান আজরফের ওস্তাদ মৌলভী সৈয়দ এমদাদ আলী, খ্যাতিমান মরমী কবি ও ছুফি সাধক পীর সৈয়দ শাহনুর, শিক্ষানুরাগী হাজী মৌলভী সৈয়দ আমতর আলী, স্বনামখ্যাত কবি সৈয়দ আশহর আলী চৌধুরী, বিশিষ্ট সাধক ও মরমী কবি পীর মজির উদ্দিন, বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী মৌলভী সৈয়দ মোহাম্মদ আহমদ, প্রখ্যাত আলেম মাওলানা কাজী সৈয়দ আব্দুর রউফ, হোসাইন আহমদ (রহ) প্রথম খলিফা মাওলানা সৈয়দ তখলিছ হোসেন, সৈয়দপুর দারুল হাদীস মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা আজাদী আন্দোলনের অন্যতম নেতা মাওলানা সৈয়দ আব্দুল খালিক, খেলাফত ও আজাদী আন্দোলনের আসাম প্রাদেশিক শীর্ষস্থানীয় নেতা একাধিকবার কারাবরণকারী মাওলানা সৈয়দ জমিলুল হক, জগন্নাথপুর উপজেলার মুসলমানদের মধ্যে বি.এ.বি.টি মাস্টার সৈয়দ হাফিজুর রহমান এবং প্রথম মুন্সেফ সৈয়দ আওলাদ হোসেন, মাওলানা সৈয়দ হাবিবুর রহমান প্রমুখ। উল্লেখ্য কৃ্তিমান মরমী কবি ও বিশিষ্ট তাপস সৈয়দ শাহনুর এর বাড়ী রয়েছে এই গ্রামেই। তাঁর কবিতা থেকে প্রমান মিলে যে, উপরোল্লিখিত সৈয়দ অজি উল্লাহ সৈয়দ শাহনুর এর মুর্শিদ ছিলেন।

এছাড়া সৈয়দপুর গ্রামবাসীদের মধ্যে পরবর্তীকালে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সুখ্যাতি অর্জনকারী ব্যক্তিত্য যারা ইতিমধ্যে আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন তাদের নামও ভুলার নয়। এই সমস্ত মরহুম ব্যক্তিবর্গের মধ্যে রয়েছেন বিশিষ্ট সাহিত্যসেবিগণ যথা পীর সৈয়দ আব্দুল জব্বার, সৈয়দ শাহাদত হোসেন,ডঃ সৈয়দ শাহ আনোয়ার চৌধুরী ও মাওলানা সৈয়দ রফিকুল হক প্রমুখ। বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিবর্গ যথাঃ মাস্টার সৈয়দ হাফিজ়ুর রহমান, মাস্টার সৈয়দ ছিবতুল আমীন, মৌলভী সৈয়দ নোমান আলী, সৈয়দ আব্দুল জহুর (পণ্ডিত সাহেব), সৈয়দ মাহতাব আলী,হাফিজ সৈয়দ আফতাব আলী, সৈয়দ আব্দুল মুহিত, সৈয়দ আলী আহমদ (মেম্বার), হাফিজ সৈয়দ আবু সাইদ, হাফিজ মাওলানা সৈয়দ মঞ্জুর আহমদ ও ক্বাজী সৈয়দ মুশতাক আহমদ।

রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের মধ্যে রয়েছেনঃ মাওলানা সৈয়দ জমিলুল হক, শহীদ সৈয়দ শাহ জামাল চৌধুরী ও সৈয়দ আহবাব আলী (আবুল) প্রমুখ। পেশাজীবীদের মধ্যে রয়েছেনঃ সৈয়দ মুনছিফ আলী (অডিটর), সৈয়দ ইনছাফ আলী (অডিটর), মোঃ মতিউর রহমান (অডিটর), মাওলানা সৈয়দ আব্দুল ওয়াহিদ, সৈয়দ শাহ আলম চৌধুরী (জেলা শিক্ষা অফিসার), মল্লিক জহির উদ্দীন (কাজী), সৈয়দ নেছার হোসেন, সৈয়দ আহবাব হোসেন, সৈয়দ সিদ্দিক আহমদ (চা বাগানের সুপারিনটেনডেন্ট)।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.