নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

skalam71

Sayed Kaisr Alam

সৈয়দ কায়সার আলম,

Sayed Kaisr Alam › বিস্তারিত পোস্টঃ

সুফিয়া কামাল

০১ লা অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ৮:২৪

সুফিয়া কামাল
বাংলাদেশের একজন প্রথিতযশা কবি, লেখিকা,
নারীবাদীও নারী আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃৎ হিসেবে
অতি পরিচিত ব্যক্তিত্ব। ডাক নামছিল হাসনা বানু। নানী
রেখেছিলেন এই নাম আরব্য উপন্যাসের হাতেমতাইয়ের
কাহিনীশুনে। সুফিয়া খাতুন নাম রেখেছিল দরবেশ নানা।
তিনিই... সুফিয়া কামাল।
সুফিয়া কামাল ১৯১১ সালের ২০ জুন
বরিশালেরশায়েস্তাবাদে মামার বাড়িতে জন্মগ্রহণ
করেন। তাঁর পিতার পিতার নাম সৈয়দ আব্দুল বারী।তিনি
কুমিল্লার বাসিন্দা ছিলেন। যে সময়ে সুফিয়া
কামালের জন্ম তখন বাঙ্গালি মুসলিমনারীদের কাটাতে
হত গৃহবন্দি জীবন। স্কুল কলেজে পড়ার কোনো সুযোগ
তাদের ছিলো না। পরিবারেবাংলা ভাষার প্রবেশ এক
রকম নিষিদ্ধ ছিল। ঐ বিরুদ্ধ পরিবেশে সুফিয়া কামাল
প্রাতিষ্ঠানিকশিক্ষার সুযোগ পাননি। তিনি
পারিবারিক নানা উত্থান পতনের মধ্যে স্বশিক্ষায়
শিক্ষিতহয়েছেন।
যে পরিবারে সুফিয়া কামাল জন্মগ্রহণ করেনসেখানে
নারীশিক্ষাকে প্রয়োজনীয় মনে করা হতোনা। তিনি
তাঁর মা সাবেরা বেগমের কাছে বাংলাপড়তে শেখেন।
মাত্র বার বছর বয়সে তাঁকে সৈয়দ নেহাল হোসেনের
সাথে বিয়ে দেয়া হয়।নেহাল অপেক্ষাকৃত আধুনিকমনস্ক
ছিলেন, তিনি সুফিয়া কামালকে সাহিত্যপাঠে
উৎসাহিতকরেন। সুফিয়া সে সময়ের বাঙালি
সাহিত্যিকদের লেখা পড়তে শুরু করেন। ১৯১৮ সালে
কলকাতায়গিয়েছিলেন সুফিয়া কামাল। সেখানে বেগম
রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের সঙ্গে তাঁর
দেখাহয়েছিলো। সুফিয়া কামালের শিশু মনে বিশেষ
জায়গা করে নিয়েছিলো বেগম রোকেয়ার কথাও কাজ,
সুফিয়াকামালের কাজেকর্মেও ছাপ পাওয়া যায় বেগম
রোকেয়ার।
সুফিয়া কামাল তেমন কোন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষালাভ
করেননি। তখনকার পারিবারিক ও সামাজিক প্রতিবেশে
বাস করেও তিনি নিজ চেষ্টায়হয়ে ওঠেন স্বশিক্ষিত
ওসুশিক্ষিত। বাড়িতে উর্দুর চল থাকলেও নিজেই বাংলা
ভাষা শিখে নেন।পর্দার ঘেরাটোপথেকে বেরিয়ে তিনি
হয়ে ওঠেন একজন আধুনিক মানুষ।
১৯২৩ সালে মাত্র বারো বছর বয়সে মামাত ভাই সৈয়দ
নেহাল হোসেনের সঙ্গেসুফিয়ার বিয়েহয়। তখন তিনি
'সুফিয়াএন. হোসেন' নামেপরিচিত হন। নেহাল হোসেন
ছিলেন একজন উদার প্রকৃতির মানুষ। তিনি
সুফিয়াকেসমাজসেবা ও সাহিত্যচর্চায় উৎসাহ দেন।
সাহিত্য ও সাময়িক পত্রিকার সঙ্গে
সুফিয়ারযোগাযোগও ঘটিয়ে দেন তিনি। এরফলে তিনি
বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে আগ্রহীহয়ে ওঠেন এবং ধীরে
ধীরে তিনি একটি সচেতন মনের অধিকারিণী হয়ে ওঠেন।
তাঁর পক্ষেসম্ভব হয় পশ্চাৎপদ মহিলাদের মধ্যে গিয়ে
সেবামূলক কাজ করা। ১৯২৩ সালেতিনি রচনা করেন তাঁর
প্রথম গল্প'সৈনিক বধূ'যা বরিশালের 'তরুণ'
পত্রিকায়প্রকাশিত হয়।
মহাত্মা গান্ধীর হাতে তুলে দেন নিজ হাতে চরকায়
কাটা সূতা (১৯২৫)।কলকাতায় গেলেন।সওগাত পত্রিকায়
প্রকাশিত হলো প্রথম কবিতা বাসন্তী (১৯২৬)। সামাজিক,
পারিবারিকবাধা ভেঙে বাঙালি পাইলটচালিত
বিমানে চড়লেন (১৯২৮)। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, নজরুলইসলাম,
বেগমরোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন,মোহাম্মদ
নাসিরউদ্দিন প্রমুখেরপ্রভাব ও সহযোগিতায় তাঁর জীবন
বিকশিত হয়েছে কৈশোর থেকে তারুণ্যে।
বহু ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে কবি তারুণ্য পেরিয়েছেন।
২১ বছর বয়সে১৯৩২ সালে তাঁর স্বামীর আকস্মিক মৃত্যু
তাঁকে আর্থিক সমস্যায় ফেলে। তিনি কলকাতা
কর্পোরেশনস্কুলে শিক্ষকতা শুরু করেন এবং ১৯৪২ সাল
পর্যন্ত এ পেশায় নিয়োজিত থাকেন। এর মাঝে১৯৩৯
সালে কামালউদ্দীন আহমেদের সাথে তাঁর বিয়ে হয়।
দেশবিভাগের পূর্বে তিনি নারীদেরজন্য প্রকাশিত
সাময়িকী বেগমের সম্পাদক ছিলেন। পারিবারিক
অর্থনৈতিকঅসহায়ত্ব তাঁকে নিঃশেষ করতে পারেনি।
তিনি মেরুদ- সোজা করে জয় করেছেনমানবসত্বা।
অনেকেই তাঁকে সহযোগিতা করেছেন। সর্বাগ্রে বলতে
হয় কামালউদ্দিনখানের নাম, যিনি১৯৩৯-এ সুফিয়া
কামালের করকমল হাতে তুলে নিয়ে ৩৮ বছরসুফিয়া
কামালের দাম্পত্যজীবনের সঙ্গী হয়েছিলেন। মাকে
হারালেন ১৯৪১-এ।পুত্র শোয়েবকে হারালেন ১৯৬৩-তে।
স্বামী কামালউদ্দিন খানকে হারালেন ১৯৭৭-এ।
সুফিয়া কামালের জন্ম হয়েছিল আলোর জন্যে
প্রতীক্ষারতঅন্ধকারাচ্ছন্নউপনিবেশে।
ঔপনিবেশিকতার ওই অন্ধকার ঘিরে রেখেছিল কেবল
নারীকে নয়, পুরুষকেও। অন্ধকারঘিরতে চেয়েছিল
সুফিয়াকেও। যদিও অভিজাত পরিবারের কন্যা ছিলেন,
আর সাতবছর বয়সে উকিল বাবাকে হারানোর পর বারো
বছর বয়সে যাঁর সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল সেইসৈয়দ নেহাল
হোসেন ছিলেন উদার মানুষ। সাহিত্যচর্চা আর
সমাজসেবায় সুফিয়াকেতিনি প্রেরণা যুগিয়েছিলেন।
সুফিয়া বেরিয়ে আসতে চেয়েছিলেন
আভিজাত্যেরঅন্ধকার থেকে, তিনিতাঁর সেই
আকাঙ্ক্ষার সহযোগী হয়েছিলেন। কিন্তু
পারিপার্শ্বিকতা তাঁকে যত অনুপ্রাণিতইকরুক না কেন,
সমাজও রাজনীতিতেরাজত্ব করছিল অন্ধকারই —সে
রাজত্বে গড়পড়তা সব মেয়েরই বিয়ে হত বাল্যকালেই,
ব্যতিক্রমছিলেন না সুফিয়াও। তবে তিনি সৌভাগ্যবতী,
বাল্যবিয়ে হলেওশিক্ষার সংস্পর্শে থাকতে
পেরেছিলেন,বাড়িতে উর্দুর চল থাকলেও বাংলা
শিখেছিলেন, স্বামীতাঁকে বাংলা ভাষা আর
সাহিত্যের প্রতি উৎসাহী করে তুলেছিলেন, সাহিত্যও
সাময়িক পত্রপত্রিকার সঙ্গে তাঁকে পরিচিত করে
তুলেছিলেন, তিনিএই সহমর্মিতার পূর্ণ সদ্ব্যবহার
করেছিলেন এবং নিজেকে প্রস্তুতকরেছিলেন এমন এক
রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগ্রামের জন্যে, যে-সংগ্রাম
নারীকেশৃঙ্খল থেকে মুক্তি দেবে।
সুফিয়া কামাল যে অন্যরকম একজন মানুষ হয়েউঠলেন,
তারএকটি অন্যতর কারণ এই —
পারিপার্শ্বিকসহমর্মিতাকে তিনি তাঁর মহৎ কর্মযোগে
কাজে লাগিয়েছিলেন। তিনিজানতেন সবার জীবন তাঁর
মতো নয়,এরকম সহমর্মিতা কোনও নারীর জীবনে বিরল,
তাদেরজীবন ও ভাগ্য বাঁধা গড়পড়তা অন্ধকারে, সেই
অন্ধকারে দু’-একজনের চারপাশথেকে যত দ্যুতিই
বিচ্ছুরিত হোক না কেন, তাতে কিছু আসে যায় না,
সবচেয়েগুরুত্বপূর্ণ তাই সবাই মিলে আলোর দিকে যাত্রা
করা, আলোর অভিযাত্রী হওয়া।তিনি যত বড় হয়েছেন,
নিজেকেততই নিয়োজিত করেছেন আলোর অভিযাত্রায়,
অন্যান্যদেরও আহ্বান করেছেন আলোর অভিযাত্রীহতে।
নিজের জীবনে পাওয়াসহমর্মিতার ওই মাধুর্যকে তিনি
সর্বজনীন করে তোলার অভিপ্রায়ে কাজকরে গেছেন।
প্রায়উপনিবেশিক পাকিস্তানি শাসনামল থেকে শুরু করে
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ আরমুক্তিযুদ্ধউত্তর কি সামরিক
কি বেসামরিক অগণতান্ত্রিকতার যে-নগ্ন শাসনে
সবখানেইতিনি উচ্চকিত হয়েছেন আর তাঁকে
কেন্দ্রভূমিতে রেখে উচ্চকিত হয়েছে বাংলারনারীরাও।
এইভাবে সুফিয়া কামাল পথিকৃৎ হয়েছেন, হয়েছেন
প্রেরণাদায়ী, এমনকিতিনি যখন আর সক্রিয়ভাবে
রাজপথে নামতে পারেন না, তখনও আন্দোলনকারীরা
জানতেন, ধানমন্ডিরএকটি বাড়িতে একজন মানুষ
আছেন,তিনিও তাঁদের সঙ্গে আছেন, তাঁর সেই বাড়ি ছিল
আন্দোলনকারীদের খোলা প্রান্তর।
বাঙালি মুসলমান নারীর জন্যে শিক্ষার দরজাখুলে
দিয়েছিলেন বেগম রোকেয়া সাখাওয়াৎ হোসেন।
সুফিয়া কামাল সেই দরজা পেরিয়েনেমে পড়েন
সামাজিক ওরাজনৈতিক সংগ্রামে। প্রায় ঔপনিবেশিক
পাকিস্তানি শাসনামলে বাঙালি যে-সংগ্রামেরমধ্যে
দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের দিকে এগুতে থাকে, সে সংগ্রামে
সুফিয়াকামাল সত্যি বলতে বাঙালি নারীর রাজনৈতিক
ও সামাজিক অভ্যুদয়ই ঘটান। মধ্যবিত্তনারীর
আধুনিকতাকে তিনি যুক্ত করেন যৌথীকরণচিন্তার সঙ্গে
এবং তার ফলেমধ্যবিত্ত শিক্ষিত নারীরা প্রান্তিক
নারীদের মুক্তির কথাও ভাবতে শেখেন, তাদেরমুক্তির
সংগ্রামে যুক্ত হতে এবং যুক্ত করতে প্রয়াসী হন। নারীর
রাজনৈতিকও সামাজিক কার্যক্ষমতাকে তিনি উন্নীত
করেন নতুন এক স্তরে, ফলে বাঙালিনারী খুঁজে পায়
জীবনবোধের নতুন এক সংজ্ঞা, ব্যক্তিত্বের নতুন এক
সংজ্ঞা।নারীর জন্যে তাঁর নেতৃত্বে সৃষ্টি হয়
ক্ষমতায়নের নতুন এক পরিধি, ফলে
নারীরসামাজিকীকরণের প্যাটার্নও পাল্টে যায়,
পাল্টে যায় পারিবারিক সম্পর্কেরএবং আত্ম-ভাবমূর্তি
সৃষ্টির প্যাটার্ন। এখন অবশ্য অনেকেই এইসব
কাজেরকৃতিত্ব বিভিন্ন দারিদ্র্যবণিক ও তাদের
দোকানপাটগুলোকে দিতে পারলেই খুশিতেআত্মহারা
হন। কিন্তু সামাজিক বিজ্ঞানের সবচেয়ে নিকৃষ্ট
শিক্ষার্থীও জানেন, রাজনীতিপথ বেঁধে না দিলে
ক্ষমতায়নের পথ কখনোই খোলে না। সুফিয়া কামালএই
কাজটিই করেছিলেন, তিনিনারীদের রাজনৈতিক
অভ্যুদয়ের কাজে নিজেকে যুক্ত করেছিলেন, নারীকে,
বিশেষতগার্হস্থ্য মধ্যবিত্ত নারীকে রাজনৈতিকভাবে
সক্ষমকরে তুলেছিলেন।
বাবা সৈয়দ আবদুল বারী মারা যাওয়ার পর
সুফিয়াকামাল বড় হয়েছেন বরিশালের শায়েস্তাগঞ্জে,
নানাবাড়িররক্ষণশীল কিন্তু অভিজাত পরিবেশে। কিন্তু
১৯১৮ সালে, সাত বছরবয়সে মায়ের সঙ্গে কলকাতায়
যাওয়ার পর রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের
সঙ্গেপরিচয় ও সাক্ষাতের ঘটনা খুব গভীর থেকে তাঁকে
পাল্টে দিতে শুরু করে, কলকাতাথেকে শায়েস্তাগঞ্জে
ফিরে আসেন তিনি,ফের ছন্দোবদ্ধ রক্ষণশীল পরিবেশে
বড় হতেথাকেন, কিন্তুনিজেকে পাল্টে ফেলার যে-
আকাঙ্ক্ষা তাঁর মধ্যে দুর্মর হয়ে উঠেছিলতা বেঁচে থাকে
সঙ্গোপনে এবং পাল্টে যাওয়ার পালে হাওয়া লাগে
বিয়েরপরে। উর্দু ভাষায় অভ্যস্ত এক পারিবারিক
পরিবেশে থেকেও তাঁর মেলবন্ধন ঘটেবাংলার সঙ্গে,
বাংলারসাহিত্যের সঙ্গে, তাঁরকথ্যজীবনে আগমন ঘটে
বাংলা ভাষার এবং এইভাবে ভেঙে পড়ে, সুফিয়াভেঙে
ফেলেন রক্ষণশীলতার একটি দেয়াল। উর্দু ভাষা
বনেদিয়ানার একটি সুরম্য দেয়ালতোলার চেষ্টা
করেছিল তাঁর চারপাশে, ভাষাগত দূরত্ব তৈরির মধ্যে
দিয়ে বাঙালি নারীরথেকে দূরবর্তী করেতুলতে
চেয়েছিল,এবং এইভাবে তাঁকে ডুবিয়ে দিতে চেয়েছিল
মূলত রক্ষণশীলতার আভিজাত্যে।কিন্তু তিনি সেই
রক্ষণশীলতার আভিজাত্য ভেঙে বেরিয়ে আসেন,
বেরিয়ে আসেনপর্দার ঘেরাটোপ থেকে। ১৯৩২ সালে
রোকেয়ার যখন মৃত্যু ঘটছে, সুফিয়ার বয়সতখন মাত্র ২১।
কিন্তু ততদিনে রোকেয়ার পথ ধরে এগিয়ে যাওয়ার জন্যে
নিজেকে অনেকটাইপ্রস্তুত করেছেন তিনি। ১৯২৩
সালে,তাঁর লেখা প্রথম গল্প ‘সৈনিক বধূ’ ছাপাহয়েছে
বরিশালেরতরুণ পত্রিকাতে আর ১৯২৬ সালে ছাপা হয়েছে
সওগাত-এ প্রথমকবিতা ‘বাসন্তী’। পরেতিনি আরও অনেক
কিছুই লিখেছেন,কিন্তু শুরুর এই সাফল্যগুলিই ছিল তাঁর
নিজের জন্যে মহাপ্রাপ্তি, প্রতিটিসাফল্যের
মধ্যেদিয়ে তিনি আস্থা খুঁজে পেয়েছেন নিজের ওপর,
সবারওপর। ১৯২৫ সালে মহাত্মাগান্ধী বরিশাল গেলে
তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎও ঘটে সুফিয়ার। এই সাক্ষাতেরআগেই
সুফিয়াকিছুদিন চরকায় সুতা কেটেছেন,বর্জন করেছেন
জাঁকালো মুগল পোশাক, সেসবেরবদলে পরতে শুরু
করেছেন সাধারণ তাঁতের শাড়ি — আর একটাই ছিল এসব
কিছুর কারণ— স্বাধীনতাচেয়েছিলেন তিনি,
ঔপনিবেশিকশাসনের অবসান চেয়েছিলেন,চেয়েছিলেন
সাম্রাজ্যবাদের প্রভাবমুক্ত স্বাধীন একটি দেশ।
মহাত্মাগান্ধীর সঙ্গেসাক্ষাৎ তাঁর ওই আকাঙ্ক্ষাকে
আরও বাড়িয়ে দিয়েছিল। স্বাধীনতার
আন্দোলনেজন্মভূমির অর্ধেক জনশক্তিকে বাইরে রেখে
সাফল্য দুরাশা — রাজনৈতিক দলেরবাইরে থেকেও
সুফিয়া তাই রাজনৈতিক হয়ে উঠছিলেন, নারীদের
রাজনৈতিক করে তুলছিলেন।এক অর্থে শূন্য থেকেই শুরু
করতে হয়েছিল তাঁকে। নারীকল্যাণমূলক
সংগঠন‘মাতৃমঙ্গল’-এ যুক্তহয়েছিলেন তিনি,
যুক্তহয়েছিলেন ১৯২৯ সালে রোকেয়া প্রতিষ্ঠিত মুসলিম
নারী সংগঠন ‘আঞ্জুমান-ই-খাওয়াতিন-ই-ইসলাম’-এর
সঙ্গে। এইসবসংগঠনের কার্যক্রমের ধরণ সীমিত ছিল —
মাতৃসেবা, নারী শিক্ষা, বড়জোর সামাজিকসংস্কারের
বেশি কার্যক্রমে যুক্ত ছিল না এসব। রাজনৈতিক
প্রত্যয়ের ভারীভারী সংজ্ঞা শেখানোর বদলে তিনি
চেয়েছিলেন রাজনৈতিক চেতনাকে নারীদের
মনেসঞ্চারিত করতে। তিনি তাই যুক্ত হয়েছিলেন নারীর
প্রাত্যহিক জীবনযাপনকে ব্যবহারিকভাবেকার্যকর করে
তুলতে এবং ব্যবহারিক জীবনের সূত্র ধরে নারীকে
রাজনৈতিকজীবনবোধে উপনীত করতে।
এই কাজ এখনও কঠিন, আর তখনসাম্রাজ্যবাদী শাসনামলে
কিংবা প্রায়-ঔপনিবেশিক পাকিস্তানিশাসনামলে
ছিল আরও কঠিন। হিন্দু-মুসলমানে ভেদ তৈরি করা
হয়েছিল ঔপনিবেশিকশাসনের স্বার্থে,
ভেদেরসামাজিক ভিতও তৈরি করা হয়েছিল সুদূরপ্রসারী
রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে। রাজনীতিতেসম্পৃক্ত ছিল না
বাঙালিনারী। দৃষ্টান্ত হিসেবে কেউ কেউ অবশ্য এগিয়ে
এসেছিলেন, প্রীতিলতাআত্মাহুতি দিয়েপথিকৃৎও হয়ে
উঠেছিলেন —কিন্তু দৃষ্টান্তের দৃষ্টি যতদিন সবার দৃষ্টি
নাহয়ে ওঠে, ততদিনতা সর্বচেতনস্পর্শী হয়ে ওঠে না।
সুফিয়া সংগঠনে যুক্ত হয়েছেনওই চেতন-সঞ্চরণ
প্রক্রিয়াকে সর্বজনগামী করে তুলতে, প্রত্যাশার পরিধি
ক্রমাগতবাড়িয়ে তুলতে, যাতেপ্রত্যাশাই নারীদের
নিয়ে যায় রাজনৈতিক প্রান্তরে। ১৯৩১ সালে
‘ভারতীয়মহিলা ফেডারেশন’-এরসদস্য নির্বাচিত হন
তিনি এবং এও ছিল এক বড় ঘটনা, কেননাওই ফেডারেশনে
তিনিই ছিলেন প্রথম নির্বাচিত বাঙালিমুসলিম নারী।
তিনি যে বিস্তৃত হচ্ছেন, রাজনৈতিক চেতনা ও
সাংগঠনিক দক্ষতায়সর্বশ্রেণির ও সর্বধর্মের নারীদের
কাছেই গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠছেন সেসবেরইপ্রতিফলন
ঘটেছিল এ ঘটনার মধ্যে দিয়ে।
জীবনের পরবর্তী সময়ে সমাজসেবা ও
সংগঠনমূলককাজের বিবরণ সুফিয়া কামাল এভাবে বর্ণনা
করেন-'প্রথমজীবনে কাজ করার পর আঠার থেকে বিশ বছর
বয়স পর্যন্ত আমি বেগমরোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের
প্রতিষ্ঠিত কলকাতার 'আঞ্জুমান মাওয়াতিনে' কাজ
করি।এই প্রতিষ্ঠানের কাজ ছিল কলকাতার বস্তি
এলাকার মুসলমান মেয়েদের মনোভাবেএকটু শিক্ষিত
করে তোলা। মিসেস হামিদা মোমেন, মিসেস
শামসুন্নাহার মাহমুদ, সরলারায়, জগদীশবাবুর স্ত্রী অবলা
বসু,ব্রহ্মকুমারী দেবী এরা সকলেইছিলেন এই
প্রতিষ্ঠানে। আমার স্বামী ছিলেন উদার প্রকৃতির মানুষ,
এসবকাজেতাঁর কাছ থেকে প্রচুর উৎসাহ পেয়েছি আমি।
এর পর ১৯৪৩ এর দুর্ভিক্ষের সময়বর্ধমানে এবং '৪৬এর
'ডাইরেক্টএ্যাকশন ডে'রহিন্দু মুসলমানসামপ্রদায়িক
দাঙ্গার পর বিপন্ন এবং আহতদের মধ্যে কাজ করেছি।
এইসময়ই তো হাজেরামাহমুদ, রোকেয়াকবীর, হোসনারশীদ
ও তোমার (নূরজাহান মুরশিদ) সঙ্গে আমার পরিচয় হল।
১৯৪৭ এর পরই ঢাকায় এলাম।প্রথমে ওয়ারি মহিলা সমিতি
প্রতিষ্ঠিত করি এবং এই সমিতির মাধ্যমেই কাজশুরু করি।
প্রখ্যাত নেত্রী লীলা রায় আমাকে সমাজ কল্যাণের
কাজে এগিয়ে আসতেআহ্বান জানান। এর পর পর্যায়ক্রমে
ভাষা আন্দোলন, গণআন্দোলনও মুক্তিযুদ্ধে আমি
বিশেষভাবে জড়িয়ে পড়ি।'
১৯৩১ সালে সুফিয়া মুসলিম মহিলাদের মধ্যে প্রথম
'ভারতীয়মহিলা ফেডারেশন'-এর সদস্যনির্বাচিত হন।
১৯৩৩-৪১ পর্যন্ত তিনি কলকাতা করপোরেশন প্রাইমারি
স্কুলেশিক্ষকতা করেন। এই স্কুলেই তাঁর পরিচয় হয়
প্রাবন্ধিক আবদুল কাদির (১৯০৬-১৯৮৪)এবং কবি জসীম
উদ্দীন (১৯৩৩-১৯৭৬) এর সঙ্গে। ১৯৪৮ সালে সুফিয়া
ব্যাপকভাবেসমাজসেবা ও রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হয়ে
পড়েন। তিনি হিন্দু-মুসলিম সমপ্রীতিরক্ষার উদ্দেশ্যে
শান্তি কমিটিতে যোগ দেন। এ বছরই তাঁকে সভানেত্রী
করে'পূর্বপাকিস্তান মহিলা সমিতি'গঠিত হয়। ১৯৪৯ সালে
তাঁর যুগ্ম সম্পাদনায়প্রকাশিত হয় সুলতানা পত্রিকা,যার
নামকরণ করা হয় বেগম রোকেয়ার সুলতানারস্বপ্ন গ্রন্থের
প্রধান চরিত্রের নামানুসারে।
১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে সুফিয়া কামাল সরাসরি
অংশগ্রহণ করেন। শুধুতা-ই নয়, পাকিস্তানসরকার বাংলা
ভাষা ও বাঙালি সংস্কৃতির ওপর দমননীতির অঙ্গ
হিসেবেরবীন্দ্রনাথকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করলে তিনি তার
বিরুদ্ধেও তীব্র প্রতিবাদজানান। ১৯৬১ সালে
রবীন্দ্রনাথের জন্মশতবর্ষে তিনি 'সাংস্কৃতিক
স্বাধিকারআন্দোলন' পরিচালনাকরেন। ১৯৬৯ সালে
'মহিলাসংগ্রাম পরিষদ' (বর্তমানে-বাংলাদেশমহিলা
পরিষদ) গঠিত হলে তিনি তার প্রতিষ্ঠাতা- প্রধান
নির্বাচিতহন এবং আজীবন তিনি এর সঙ্গে জড়িত
ছিলেন। স্বাধীনতার পরও সুফিয়া কামালঅনেক সংগঠন
প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনা করেন। তিনি যে সব সংগঠনের
প্রতিষ্ঠা-প্রধানেরদায়িত্ব পালন করেন সেগুলো হলো :
বাংলাদেশ মহিলা পুনবার্সনবোর্ড, বাংলাদেশপল্লী
উন্নয়ন কমিটি এবং দুঃস্থ পুনর্বাসন সংস্থা।এছাড়াও
তিনি ছায়ানট, বাংলাদেশপ্রতিবন্ধী ফাউন্ডেশন এবং
নারী কল্যাণ সংস্থার সভানেত্রী ছিলেন।
১৯৩৮ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর সাঁঝের মায়া
কাব্যগ্রন্থটি। এর ভূমিকা লিখেছিলেননজরুল এবং
রবীন্দ্রনাথ এটি পড়ে উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছিলেন।
রবীন্দ্রনাথএকটি চিঠিতে সুফিয়া এন. হোসেনকে (তাঁর
তখনকার পরিচয়) লেখেন, 'তোমারকবিত্ব আমাকে
বিস্মিত করে। বাংলা সাহিত্যে তোমার স্থান উচ্চে
এবং ধ্রুবতোমার প্রতিষ্ঠা।' শুধুসাহিত্যে নয়,
বাংলাদেশেরজনগণের মনে বেগমসুফিয়া কামাল ধ্রুব
প্রতিষ্ঠা লাভ করেছেন তাঁর স্বকীয় স্বভাবগুণে।
সুফিয়া কামাল একালে আমাদের কাল নামে একটি
আত্মজীবনী রচনা করেছেন।তাতে তাঁর ছোটবেলারকথা
এবং রোকেয়া-প্রসঙ্গ স্থান পেয়েছে। তিনি অনেক
ছোটগল্প এবং ক্ষুদ্রউপন্যাসও রচনা করেছেন। কেয়ার
কাঁটা (১৯৩৭) তাঁর একটি উল্লেখযোগ্য গল্পগ্রন্থ। তাঁর
আরও কয়েকটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হলো : মায়া কাজল
(১৯৫১), মন ওজীবন (১৯৫৭), উত্তপ্তপৃথিবী (১৯৬৪),
অভিযাত্রিক(১৯৬৯) ইত্যাদি। তাঁরকবিতা
চীনা,ইংরেজি,জার্মান,ইতালিয়ান,পোলিশ,রুশ,ভিয়েতনামিজ,হিন্দি
ও উর্দু ভাষায় অনূদিত হয়েছে। ১৯৮৪ সালে রুশভাষায় তাঁর
সাঁঝের মায়া গ্রন্থটি সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে
প্রকাশিত হয়। মার্কিনযুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্নপত্র-
পত্রিকায়ও তাঁর বেশ কিছু কবিতা প্রকাশিত হয়। ২০০১
সালে বাংলাএকাডেমী তাঁরকিছু কবিতার ইংরেজি
অনুবাদ দিয়ে গড়ঃযবৎ ড়ভ চবধৎং ধহফ ড়ঃযবৎ ঢ়ড়বস এবং
২০০২সালে সুফিয়া কামালের রচনা সমগ্র প্রকাশ
করেছে।
কেয়ার কাটা সমেত সুফিয়া কামালের মোট প্রকাশিত
গদ্যগ্রন্থ সংখ্যাচার। অন্য তিনটিহল,
সোভিয়েতেরদিনগুলো (ভ্রমণ, ১৯৬৮), একালেআমাদের
কাল (আত্মজীবনীমূলকরচনা, ১৯৮৮)এবং একাত্তরের
ডায়রি (১৯৮৯)। অগ্রন্থিত গদ্যের মধ্যেরয়েছে একটি
অসম্পূর্ণ উপন্যাস অন্তরা। বৈশাখ ১৩৪৫ থেকে পাঁচ
কিস্তিতে অন্তরাপ্রকাশিত হয় কলকাতার মাসিক
মোহাম্মদী পত্রিকায়। এর পরে আছে আর একটি
ছোট্টউপন্যাস (ঘড়াবষষধ) জনক। সোভিয়েট ইউনিয়নের
ক্রিমিয়ায় স্বাস্থ্য নিবাসে১৯৭৭ সালে ৬ থেকে ২০
জানুয়ারির মধ্যে মাত্র ১৫ দিনে সুফিয়া কামাল
জনকরচনা করেন। ঢাকা থেকে প্রকাশিত নূরজাহান বেগম
সম্পাদিত সাপ্তাহিক বেগম পত্রিকায়১২ সংখ্যায়
ধারাবাহিকভাবে উপন্যাসটি প্রকাশিত হয় (৩০ বর্ষ ৩৭
থেকে ৪৮সংখ্যা, ১৯মার্চ, ১৯৭৬থেকে ৪ জুন, ১৯৭৮)।
উপন্যাস দুটি সংগ্রহের কাজ চলছে।
সাহিত্যচর্চার জন্য সুফিয়া কামাল অসংখ্য পুরস্কার ও
সম্মাননা লাভকরেছেন। ১৯৬১সালে তিনি পাকিস্তান
সরকার কর্তৃক 'তঘমা-ই-ইমতিয়াজ' নামকজাতীয
পুরস্কারলাভ করেন; কিন্তু১৯৬৯ সালে বাঙালিদের ওপর
অত্যাচারের প্রতিবাদে তিনিতা বর্জন করেন।
উল্লেখযোগ্য আরও কয়েকটি পুরস্কার ও পদক হলো :
বাংলা একাডেমীপুরস্কার (১৯৬২), একুশেপদক (১৯৭৬),
জাতীয়কবিতা পরিষদ পুরস্কার (১৯৯৫),
ডড়সবহ্থংঋবফবৎধঃরড়হ ভড়ৎ ডড়ৎষফ চবধপব ঈৎবংঃ
(১৯৯৬), বেগম রোকেয়া পদক(১৯৯৬), দেশবন্ধুচিত্তরঞ্জন
দাশ স্বর্ণপদক (১৯৯৬),স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার (১৯৯৭)
ইত্যাদি। তিনি সোভিয়েত ইউনিয়নেরখবহরহ ঈবহঃবহধৎু
ঔঁনরষবব গবফবষ (১৯৭০) এবং ঈুবপযড়ংষড়াধশরধ গবফধষ-সহ
(১৯৮৬) বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক পুরস্কারও লাভ
করেন। ১৯৯৯ সালে ২০ নভেম্বরঢাকায় সুফিয়া কামালের
জীবনাবসান ঘটে।
সুফিয়া কামাল কবি হিসেবে সমধিক পরিচিত কিন্তু
গদ্যলেখক হিসেবেওতাঁর অবদান রয়েছে।বুদ্ধিজীবী,
সমাজকর্মীও সচেতন নাগরিক হিসেবে তাঁর ভূমিকা ছিল
বিশেষভাবে উজ্জ্বল। তাঁর সময়কালে পশ্চাৎপদমুসলিম
সমাজের একজন মহিলা হিসেবে সীমাবদ্ধ গণ্ডি পেরিয়ে
ভূমিকা রাখা ছিল শুধু গৌরবের নয়,
বিশেষভাবেঅসাধারণ বিষয়।সুফিয়া কামাল এক
সাক্ষাৎকারে তাঁর বেড়ে ওঠা সময়কালের সামাজিক
অবস্থা এভাবেবর্ণনা করেন- 'তখনকারসময়টাতে
শ্রেণীভেদ একটা বড় ব্যাপার ছিল। বড়লোক, ছোটলোক,
সম্ভ্রান্ত লোক, চাষী-কৃষক, কামার-কুমারইত্যাদি
সমাজে বিভিন্নধরনের বংশ ছিল এবং এইসব বংশে
শ্রেণীবিভেদ ছিল। সেই শ্রেণীভেদ অনুসারেবলা যায়,
তখন মধ্যবিত্তবা নিম্নবিত্তদের ঘরের মেয়েরা
পড়ালেখা বেশি জানতো না। তারাবড়জোর কুরআন শরিফ
পড়া শিখতো। আর হয়তো বাবা-মায়ের কাছে দোয়া-দরুদ
নামাজ পড়াশিখতো। এই ছিল তাদের শিক্ষা। স্কুল-
কলেজের বালাই তো ছিলই না। তবে ধর্মীয়শাসনের
একটি প্রক্রিয়া ছিল। সেটা ছেলেমেয়ে সকলের ওপরই
কার্যকর থাকতো।' (আহমদকবির, সুফিয়াকামাল,
বাংলাপিডিয়া, বাংলাদেশএশিয়াটিক সোসাইটি,
ঢাকা, ২০০৪, পৃ. ২২২)
সুফিয়া কামাল পর্দাযুগের মেয়েদের সঙ্গে এখনকার
সময়কালের মেয়েদেরতুলনা করেন এভাবে, যাতেতাঁর
দৃষ্টিভঙ্গি ও বিবেচনা লক্ষ্য করা যায়- 'আগে মেয়েরা
ষোলআনানির্ভরশীল ছিল পুরুষের ওপর। স্ত্রীকন্যার কি
প্রয়োজন না প্রয়োজন তা স্বামীবা পিতাই নির্ধারণ
করতেন। যেখানে পুরুষ মানুষটি এসব ব্যাপার তেমন
মাথাঘামাতো না সেখানে স্ত্রীকন্যা নীরবে কষ্ট সহ্য
করতো এবং সেই পরিস্থিতিতেইনিজেকে খাপ খাইয়ে
নিতো। এখন আবার যে সব মেয়েদের রোজগার আছে-
স্বামীরাতাদের রোজগার কেমন করে খরচ হবে তাও বলে
দিতে চায়। আর টাকা পয়সার ব্যাপারেদেখা গেছে
মেয়েরা নিজের টাকা যত খরচ করে স্বামীরা ততই হাত
গুটোয়। পুরুষদেরসম্পর্কে উক্তি আছে 'তারাহাতে মারে,
ভাতেমারে, দাঁতেমারে' এই অবস্থায়একজন মানুষ সুখী
কেমন করে হবে?আর মেয়েদের ক্ষেত্রে কত স্তরের দুঃখ
যে আছেতার ঠিক নেই। তাই তুলনামূলকভাবে কাউকে
কাউকে একটু বেশি সুখী মনে হয়।পর্দার যুগে কোনো
অবস্থাতেই মেয়েটি বাড়ি ছেড়ে পালাতে পারতো না-
আজকাল পারে।মেয়েদের স্বামী পরিত্যাগ করার ঘটনাও
বিরল নয়। আজকাল মেয়েদের স্বাধীনতাবেশি এবং সেই
অনুপাতে নিশ্চয়ই সুখও বেশী।' (কুররাতুল আইন তাহমিনা,
শুভ জন্মদিনসুফিয়া কামাল, অবসর(৪২), ভোরেরকাগজ,
ঢাকা, ২০ জুন ১৯৯৮, পৃ. ৫)
সুফিয়া কামাল নারীর সামাজিক শৃঙ্খল ভেঙে মুক্তির
দিগন্ত উন্মোচনকরার জন্য নিবেদিতছিলেন। নারীর
সামগ্রিক মুক্তির জন্য তাঁর ভূমিকা ছিল সমসময়ের জন্য
উদ্দীপনামূলকও আগ্রহউদ্দীপক, সেকারণে তাঁর অনুভব
এমন- 'আমারকাছে সবচেয়েভালো লাগে এই দেখে যে,
মেয়েরা আগের তুলনায় এখন অনেক সাহসী হয়েছে।
মেয়েরা এখনরাস্তায় বেরিয়ে অন্তত নিজেদের কথা
বলতে শিখেছে। আমরা চেয়েছিলাম, মেয়েরা কথাবলতে
শিখুক, সাহসীহয়ে উঠুক, নিজেদেরঅধিকার তারা বুঝতে
পারুক। এটা এখন হয়েছে। এটা বড়
আনন্দের।' (নূরজাহানমুরশিদ, বেগমসুফিয়া
কামালেরমুখোমুখি,একাল,ঢাকা,দ্বিতীয়
সংখ্যা,সেপ্টেম্বর-অক্টোবর, ১৯৮৬, পৃ. ৩৫)
তবে নারীর স্বাধীনতা সম্পর্কে সুফিয়া কামালের
নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গিও মূল্যবোধগতবিবেচনা ছিল, একারণে
তিনি নারী স্বাধীনতার সাথে সাথে নীতি-আদর্শ-
ঐতিহ্যকে গুরুত্ব দিয়েছেন, এমনিপ্রতিভাস তাঁর বক্তব্য
থেকে জানা যায়- 'মেয়েরাস্বাধীনতা পেয়েছে। কিন্তু
অনেকেই সেই স্বাধীনতার ব্যবহার সব সময়সঠিকভাবে
করতে শেখেনি। অনেক সময় অপব্যবহার করছে। এটা
আমার কাছে খুব খারাপলাগে। এই যে মেয়েরা
অপ্রয়োজনে বিদেশের ফ্যাশনের হুজুগে নিজেদের
সংস্কৃতিবিরোধী কাপড় পরছে, ব্যবসায়ীমহল তাদেরকে
ব্যবহার করছে নানাভাবে,মেয়েরা ভাবছে এটাই
স্বাধীনতা। এটাই অপব্যবহার। মেয়েরামডেলিং করুক,
অভিনয় করুক, কিন্তুতা যেন মর্যাদা হারাবার মাধ্যম না
হয়। অযথা অশালীন অভিনয়, যাত্রা, নাচগানেরকোনো
দরকার নেই। নারীদের যেন কোনো পণ্য না করা হয়,
সেদিকে খেয়ালরাখতে হবে। বিজ্ঞাপনে মেয়েদের
শরীর প্রদর্শন করিয়ে কোটি কোটি টাকা অর্জনকরা
হচ্ছে। এটা বন্ধ করতে হবে। পর্ণো ম্যাগাজিনের পণ্য
হওয়া মেয়েদের বন্ধকরতে হবে।' (কুররাতুলআইন তাহমিনা,
শুভজন্মদিন সুফিয়া কামাল, অবসর (৪২), ভোরেরকাগজ,
ঢাকা, ২০ জুন১৯৯৮, পৃ.৮)
সুফিয়া কামাল রাজনৈতিক বিবেচনা থেকে দেশের
উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির কথাভেবেছেন, অন্যদিকেবৈজ্ঞানিক
দৃষ্টিভঙ্গির মাধ্যমে প্রগতির পথে এগিয়ে যাওয়ার
বাসনা অনুভবকরেছেন। মানুষে মানুষে ভালোবাসা ও
সাম্য তাঁর লেখা ও কর্মকা-ে ভিত্তিমূলহিসেবে কাজ
করেছে। দার্শনিক বিবেচনাবোধ থেকে এভাবে তিনি
ইতিহাস ও সমাজবিশেষণ করেছেন- 'ইতিহাসেবার বার
দেখা গেছে, মূঢ়তাএবং হিংস্রতা যখনসীমা অতিক্রম
করেছে তখনই তার ধ্বংস অনিবার্য হয়ে উঠেছে- সে
নিজেকেইনিজে ধ্বংসকরেছে। হয়তো অনেক সুন্দর ও
শুভকে এজন্য আত্মাহুতি দিতে হয়, কিন্তুভয় এবংহতাশায়
নিষ্কৃতি কোথায়?...আরও একটা কথা মানি, আমাদের
দারিদ্র্য এবং হতাশারঅন্যতম কারণ;
জনসংখ্যারঅনুপাতে আমাদের সম্পদের অভাব;মানুষের
ক্ষুধায় এবং লোভে প্রকৃতি লুণ্ঠিত, শূন্যহয়ে যাচ্ছে।
কিন্তু প্রতিকারের পথ একটাই : দুঃখের অন্ন সবাইকে
একসাথে ভাগ করতেখেতে হবে, তারপরমানুষ ও
প্রকৃতিরভারসাম্য রক্ষার জন্যে বিজ্ঞানকে কাজে
লাগাতে হবে। মানুষের প্রতি মানুষেরভালোবাসাই সব
সমস্যা দূর করতে সক্ষম।' (কুররাতুল আইন তাহমিনা, শুভ
জন্মদিনসুফিয়া কামাল, অবসর(৪২), ভোরেরকাগজ, ঢাকা,
২০ জুন১৯৯৮, পৃ.৮)
'তাঁর ব্রত মানুষের কল্যাণ। তাঁর ছিল সত্যের সাধনা।
কঠিন দুঃকীর্ণসত্যের। সততারসাধনায় মেলে সাহস,
অর্জিতহয় চারিত্রিক দৃঢ়তা। তার ব্যক্তিত্বের শিরদাঁড়া
এই চরিত্র- ঋজু ব্যক্তিত্ব, দৃঢ় চরিত্রআর স্বচ্ছ মানস জন্ম
দেয় সুন্দরের। যে সুন্দর সাহসী এবং ওজস্বী।
আত্মবিশ্বাসও আত্মমর্যাদায়পরিপক্ক। সুফিয়া কামাল
সংসারকে কখনও প্রাধান্য পেতে দেননি,
এমনকিকাব্যকেও জীবনজুড়ে দাঁড়াতে দেননি, খ্যাতিবা
প্রতিষ্ঠা গ্রাস করতে পারেনি জীবন। তাঁর পটভূমি ও
ক্ষেত্র হয়ে উঠেছিল দেশ ওইতিহাস। দেশের কাজ এবং
ইতিহাসের দায় সুফিয়া কামালকে সবসময়ে রেখেছে
ব্যস্ত।কঠিন এবং অবশ্যই সঠিক সিদ্ধান্ত তাঁকে নিতে
হয়েছে বারংবার। ইতিহাসের কী সবর্ঘূর্ির্ণপাক,
বাঁকতিনি পেরিয়েছেনসাবলীল স্বচ্ছতায় যখন বহু
মনীষীও হোঁচট খেয়েছেন, বোকা হয়েছেন।
এভাবেসুফিয়া কামাল যেন হয়ে উঠেছিলেন সত্য পথের
ধ্রুবতারা। প্রজ্ঞার মাধুর্যেস্থির আর চিত্তের জৌলুসে
উজ্জ্বল।'(নূরজাহান মুরশিদ, বেগম সুফিয়াকামালের
মুখোমুখি, একাল, ঢাকা, দ্বিতীয়সংখ্যা, সেপ্টেম্বর-
অক্টোবর, ১৯৮৬, পৃ. ৩৫)
'আমরা তাঁকে বলি জননী সাহসিকা। এই জননী-প্রতিমা
জাতি, ধর্ম-বর্ণঅতিক্রম করেতার স্বতঃস্ফূর্ত স্বাভাবিক
কল্যাণময়তায় সবাইকে নাড়া দেয়। সেখানে
ছেলেমেয়েরবৈষম্যও থাকে না। জননীত্ব স্বয়ং
সার্বভৌমত্ব পায়। তা শুধু আগলেই রাখেনা,
বাড়তেওদেয়। জীবনের শোভন সুন্দর বিকাশের মানসিক
আশ্রয় হয়ে থাকে। ব্যাপ্তচরাচরে প্রকৃতি যেমন তেমনই।
একই রকম স্বয়ংক্রিয় সুষমা। একই রকম
প্রত্যয়দৃঢ়আত্মগরিমা। অহঙ্কারের আস্ফালন নেই,কিন্তু
সঙ্কোচ বা আপসও নেই। মৃদুমাধুর্যে অন্তরাত্মার সত্য ছবি
আঁকে।মুক্ত প্রাণের অবাধ মহিমাকে অকুণ্ঠে ফুটিয়ে
তোলে। শুধু নিজের ভেতরে নয়।জাগিয়ে তোলে তা আর
সবার ভেতরেও। তাই শুধু জননী নন, তিনিজননী সাহসিকা।
প্রকৃতি যে নারীত্বের সমার্থক, তারই
প্রাণশক্তিকেপরিপূর্ণ ধারণ করে তার সর্বোত্তম প্রকাশ
ঘটান তিনি আপন জীবন ধারায়।কোন অশুভ বাধাই তিনি
মানেন না কায়েমি স্বার্থের পিছুটানকেও স্বীকার
করেননা। 'সর্বখর্ব তারে দহে' সবপ্রতিকূলতা উপেক্ষা
করে জীবনের ইতিবাচক পরিবর্তনের প্রক্রিয়ায় প্রকৃতির
সহজতায় নিজেকেমিলিয়ে জননীর অনপেক্ষসমদৃষ্টি
নিয়ে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবার জন্যে মঙ্গল দীপ
জ্বেলে সর্বাত্বকশুভকামনা নিয়ে সামনে থেকে পথ
দেখিয়ে তিনি এগিয়ে চলেন। অন্যায়ের সুস্পষ্টপ্রতিবাদ
তাতে মেশে। মেশে দুঃশাসনের প্রতিরোধ। নারী তার
পূর্ণতায় পরমাহয় বুঝি এভাবেই। অখ- মনুষ্যত্বের
চরিতার্থও তার এখানেই।'
এখন তাঁর বয়স একশ’ পেরিয়েগেল। বেঁচে থাকলে বয়সের
ভারে তিনি হয়তো আরও নুয়ে পড়তেন— কিন্তুসময়ের
আহ্বানে নিশ্চয়ই সামনের দিকে ঋজু মাথা তুলে
তাকাতেন। এখন, এই একবিংশশতাব্দীতে রাজনীতিতে
নারীর অংশগ্রহণ বেড়েছে, নারীর ক্ষমতায়নেরপরিধিও
বেড়েছে, কিন্তুযে-শক্তি নারীকে সংঘবদ্ধ করে তা
অনেকটাই হারিয়ে গেছে নেতৃত্বের দুর্বলতায়। এই
শক্তিনারীকে খুঁজে নিতে হয়, যেমনটি আমরাদেখি
সুফিয়া কামালের ক্ষেত্রে,সাংগঠনিক হয়ে উঠে,
প্রতিদিনকার সামাজিক ওরাজনৈতিক আন্দোলনের
সঙ্গে যুক্ত থেকে, যদিও সেই সংযুক্তির লক্ষ্য
চূড়ান্তঅর্থে বিযুক্তির নতুন রসায়নও তৈরি করা। এই
ধরণের সংযুক্তি নারীর রাজনৈতিকও সামাজিক
অংশগ্রহণ বাড়ায় এবং তার পক্ষ থেকে বিরোধিতা
করার ক্ষমতা এবংপরিসরও বাড়ায়। কিন্তু এই ধরণের
সংযুক্তি কমে গেছে, কমে আসছে — তাই, যেমনটিআমরা
দেখছি নারীনীতির ক্ষেত্রে,একে সমতাপূর্ণ ও কার্যকর
করে তোলার দাবিতেরাজনৈতিক সক্রিয়তা আমাদের
নেই বললেই চলে; এমনকি একে ঘিরে মৌলবাদীদের যে-
অশুভদাপট, তারসক্রিয় প্রতিবাদও ঘটছে না ওই সংযুক্তির
অভাবে। ব্যক্তির দায়িত্বহীনপ্রতিবাদ সমাজে
চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করতে পারে, ব্যক্তির পরিচিতি
তৈরিকরতে পারে — কিন্তুযাঁরা সত্যিই পরিবর্তন
চান,তাঁদের এগিয়ে যেতে হয় সংগঠননির্মাণ ও বিকাশের
মতো শক্তিশালী ও নিরবচ্ছিন্ন প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে,
এগিয়েযেতে হয় সমাজের আরও অনেককে সঙ্গে নিয়ে,
বিশেষত পশ্চাৎপদ ধ্যানধারণারমানুষকে সঙ্গে নিয়ে
এবং ক্রমান্বয়িক যাত্রায় এই পশ্চাৎপদ
মানুষগুলিরচেতনার পরিধি বাড়িয়ে চলার মধ্যে দিয়ে।
সুফিয়া কামাল ছিলেন দ্বিতীয়ধারার মানুষ। এ সময়কে
আমরা অন্যরকম হয়ে উঠতে দেখতাম তিনি থাকলে,
তাঁরমতো কেউ থাকলে। বিশ্বায়ন নারীকে যে-
প্রান্তিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে, নারীরপণ্য হয়ে ওঠার
যে-ক্ষমতায়ন ঘটিয়েছে,বিশ্বায়িত মৌলবাদ নারীকে
যে-প্রান্তিকেস্থাপন করতে চাইছে সে-সবের মধ্যে
থেকে বেরিয়ে আসার যে-প্রত্যাশাতা আরও ঘনীভূত হতে
পারত তিনি থাকলে। পুঁজির এই কর্পোরেট-যুগ
ব্যক্তিনারীরঅবয়ব নির্মাণ ও প্রতিষ্ঠার পক্ষপাতি
হলেও তার জন্যে নারীর কাছ থেকেআদায় করে চড়া
মূল্য, নারীকেসে নিঃসঙ্গ করে, নারীরকাছ থেকে
সেসংঘবদ্ধতার চেতনা হরণ করেন, নারীর ভুবন হয়ে ওঠে
বিলবোর্ডের ভুবন। সমাজের প্রচলিতধারণাগুলি চূর্ণ করে
কর্পোরেট-যুগ ব্যক্তিনারীর এই অবয়ব নির্মাণ করছেনা,
বরংপ্রচলিত ধারণাগুলি জিইয়ে রাখার কাজে ইন্ধন
দিয়েই চেষ্টা করছে এইঅবয়বনির্মাণযজ্ঞ।
দারিদ্র্যবণিকদের পক্ষেও সম্ভব নয় ওইসব ধারণা চূর্ণ
করা।ফলে পুঁজিতন্ত্র যে-ব্যক্তিবাদী নারীমনন তৈরি
করতে সক্ষম সে-কাজও রক্ষণশীলতায়বাঁধা পড়ছে।
মহাপ্রয়াণ
১৯৯৯ সালের ২০ নভেম্বর ঢাকায় সুফিয়া কামালমৃত্যুবরণ
করেন। তাঁকে পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হয়।
বাংলাদেশী নারীদেরমধ্যে তিনিই প্রথম এই সম্মান
লাভ করেন।
রচনা
কাব্যগ্রন্থ
সাঁঝের মায়া (১৯৩৮)
মায়া কাজল (১৯৫১)
মন ও জীবন (১৯৫৭)
শান্তি ও প্রার্থনা (১৯৫৮)
উদাত্ত পৃথিবী (১৯৬৪)
দিওয়ান (১৯৬৬)
মোর জাদুদের সমাধি পরে (১৯৭২)
গল্প
কেয়ার কাঁটা (১৯৩৭)
ভ্রমনকাহিনী
সোভিয়েতে দিনগুলি (১৯৬৮)
স্মৃতিকথা
একাত্তরের ডায়েরি (১৯৮৯)
পুরস্কার
সুফিয়া কামাল ৫০টির বেশী পুরস্কার লাভ করেছেন।এর
মাঝে কয়েকটিঃ
বাংলা একাডেমী পুরস্কার (১৯৬২)
সোভিয়েত লেনিন পদক (১৯৭০)
একুশে পদক (১৯৭৬)
বেগম রোকেয়া পদক

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ৮:২৪

Sayed Kaisr Alam বলেছেন: এটা কালেক্টেড

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.