![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
তোফাজ্জলের সাথে আমার কোনদিন দেখা হয়নি, এই জীবনে সে সুযোগও আর নেই। তবুও আমি তাকে দেখেছি এবং বার বার দেখি। তোফাজ্জল সদা বর্তমান কখনো মায়ের স্মৃতিতে, বোনের ভালোবাসায়, বাবার আদরে, ভাইয়ের স্নেহে। মৃত্যুর এত বছর পরও তোফাজ্জল এখনো তাদের কাছে প্রাসঙ্গিক। যেকোনো বিষয়ে কথা উঠতে এটা তোফাজ্জল করেছিলো, ওটা তোফাজ্জল করতো, সবসময় তোফাজ্জল সামনে এসে যায়।
তোফাজ্জল আবুতোরাব উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়তো। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ক্ষুদে ফুটবলারদের আন্তঃস্কুল ফুটবল প্রতিযোগিতায় সেদিন ঐ স্কুলের খেলা ছিলো যে স্কুলে সে নিজেও পড়েছিল। বন্ধুরা সবাই খেলা দেখতে যাবে, আর সে যাবেনা, তা কি হয়! মায়ের বারণ বাবার শাসন উপেক্ষা করে সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে সেও উঠে বসে সে ঘাতক ট্রাকটিতে। সে যে সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে গেল, আর ফিরেনি তোফাজ্জল।
কখনো আর ফিরবেনা সে এবং তার আরও ৪৩ জন সঙ্গী সাথী। সবাই একসাথে খেলা দেখে হৈহল্লা করে যখন বাড়ি ফিরছিলো ট্রাকচালকের বেপরোয়া গাড়ি চালানো এবং স্বেচ্ছাচারিতার বলি হতে হয় আবুতোরাব বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়, আবুতোরাব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং আবুতোরাব প্রফেসর কামাল উদ্দিন চৌধুরী কলেজের ৪০ জন ছাত্র সহ মোট ৪৪টি তাজা প্রাণের। যে ঘটনা পুরো দেশকে নয় শুধু পুরো বিশ্বকে নাড়িয়ে দিয়েছিলো। শোকের চাদরে ঢেকে যায় পুরো দেশ।
খুবই ডানপিটে আর দুরন্ত ছিলো তোফাজ্জল। গাছে চড়তে, সাইকেল চালাতে পছন্দ করতো অনেক। ছিলো খেলাধুলা প্রিয়। তোফাজ্জল মাঝে মাঝে বলতো তার খুব ইচ্ছা পত্রিকায় তার ছবি উঠবে, তাকে সবাই দেখবে, আলোচনা হবে। কিন্তু কে জানতো তার ইচ্ছাটা এত মর্মান্তিকভাবে বাস্তবায়ন হয়ে যাবে!
তোফাজ্জলের ব্যবহারের যাবতীয় জিনিসগুলো এখনো সযত্নে রাখা। তার স্কুলের ব্যাগটি, তার বই-খাতাগুলো সে যেভাবে রেখেছিলো সেভাবেই আছে সব। একটি খাতার মধ্যে সে একটা দরখাস্ত লিখেছিলো, দরখাস্তের বিষয়: "গুরুত্বপূর্ণ খেলা দেখার জন্য ৪র্থ ঘন্টার পর ছুটির আবেদন।" তোফাজ্জলের সে ছুটি মঞ্জুর হয়েছিল কিনা জানা হয়নি, তবে তোফাজ্জল ও তার বন্ধুরা এই ইহজগৎ থেকে চিরদিনের জন্য ছুটি নিয়ে চলে যায় না ফেরার দেশে।
আজ মিরসরাই ট্রাজেডির নয় বছর। এখনও প্রতিবছর এই দিনটিতে তোফাজ্জলদের জন্য অশ্রু বিসর্জন করে তাদের স্বজনরা, মায়ানী, মগাদিয়া, মিরসরাই তথা সারা দেশের মানুষ। তোফাজ্জলরা আজ হয়তো সামনে নেই, তবুও তারা আছে দুর আকাশের তারা হয়ে। মৃত্যুর পর মানুষের বয়স আর বাড়েনা, কিছু কিছু মৃত্যু মানুষকে চিরদিনের জন্য অমর করে দেয়। তোফাজ্জলরা আছে, তারা থাকবে; তারা সদা নবীন, সদা সবুজ।
আজও কানে ভাসে সেই কথাগুলো
কে জানে যে হবে শেষ কথা
নিয়তির ডাকে দিলি যে সাড়া
ফেলে গেলি শুধু নীরবতা
যার চলে যায় সেই বোঝে যে হায়
বিচ্ছেদে কি যন্ত্রণা
যার চলে যায় সেই বোঝে যে হায়
বিচ্ছেদে কি যন্ত্রণা
অবুঝ শিশুর অবুঝ প্রশ্ন
কি দিয়ে দেব সান্ত্বনা
আজ মিরসরাই ট্রাজেডির নবম বার্ষিকীতে তোফাজ্জল এবং তার সাথে নিহত সবার আত্মার মাগফিরাত কামনা করি। মহান আল্লাহপাক তাদেরকে বিনা হিসাবে জান্নাতুল ফেরদাউস দান করুন, আসুন সবাই এই দোয়া করি। আমীন।
©somewhere in net ltd.