| নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এস.এম. আজাদ রহমান
সংগঠক, অভিনেতা, ব্লগার, স্যোসাল মিডিয়া এক্টিভিস্ট, ডিজাইনার
আন্তর্জাতিক সালিশিতে এস আলম পরিবার: নতুন এক ধাক্কা বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য
বাংলাদেশের ব্যবসায়িক অঙ্গনে নতুন এক ঝড় উঠেছে। দেশের অন্যতম ধনী ও বিতর্কিত ব্যবসায়ী পরিবার এস আলম গ্রুপ এবার দেশীয় আদালত নয়, সরাসরি আন্তর্জাতিক সালিশি আদালতের (ICSID) দ্বারস্থ হয়েছেন। তাঁদের অভিযোগ—বাংলাদেশ সরকার অবৈধভাবে তাঁদের সম্পদ জব্দ করছে, এতে তাঁদের কোটি কোটি ডলার ক্ষতি হচ্ছে।
এই আবেদন জমা পড়েছে বিশ্বব্যাংকের অধীনস্থ ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর সেটেলমেন্ট অব ইনভেস্টমেন্ট ডিসপিউটসে (ICSID)–এ। খবরটি প্রকাশ করেছে লন্ডনভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমস।
অভিযোগ বনাম পাল্টা অভিযোগ
অভিযোগ অনুযায়ী, ২০২৪ সালের আগস্টে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত হয়েছে, তারা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এস আলম পরিবারের বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছে।
এস আলম পরিবারের আইনজীবীরা দাবি করেছেন—
-> ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে
-> সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে
-> ব্যবসায়িক লেনদেনের বিরুদ্ধে “ভিত্তিহীন তদন্ত” চলছে
-> এবং তাঁদের বিরুদ্ধে “প্ররোচনামূলক মিডিয়া প্রচারণা” পরিচালিত হচ্ছে
এসব কারণে নাকি তাঁদের শত কোটি ডলার ক্ষতি হয়েছে।
সরকারের অবস্থান: “আমরা অর্থ ফেরত আনি”
অন্যদিকে, অন্তর্বর্তী সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে—
শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনামলে ২৩৪ বিলিয়ন ডলার (প্রায় ২৩ হাজার ৪০০ কোটি ডলার) দেশ থেকে পাচার হয়েছে।
এই পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার জন্যই বর্তমান সরকার অভিযান শুরু করেছে।
এই অভিযানের নেতৃত্বে আছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর, যিনি আগে আইএমএফে কাজ করেছেন।
তাঁর অভিযোগ অনুযায়ী, শুধু এস আলম গ্রুপই ব্যাংক খাত থেকে ১২ বিলিয়ন ডলার পাচার করেছে।
মনসুর সরাসরি প্রশ্ন তুলেছেন—
“এই টাকা গেল কোথায়?”
‘দখলকৃত ব্যাংক’, ‘জালিয়াতি’ ও ‘বেইলআউট’
আহসান মনসুর আরও দাবি করেছেন, এস আলম পরিবার ছয়টি ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিল সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার সহায়তায়।
ঋণ ও আমদানি জালিয়াতির মাধ্যমে অর্থ বিদেশে পাচার করা হয়েছে বলে তাঁর অভিযোগ।
এমনকি সেই ব্যাংকগুলোর আর্থিক অবস্থা এখন এতটাই নাজুক যে, সরকারকে বেইল আউট দিতে হচ্ছে।
এস আলম পরিবার অবশ্য এসব অভিযোগ সরাসরি অস্বীকার করেছে এবং বলেছে—
“গভর্নরের অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই।”
নাগরিকত্বের প্রশ্নও এসেছে সামনে
ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এস আলম পরিবার ২০২০ সালে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ত্যাগ করে এবং ২০২১-২৩ সালের মধ্যে সিঙ্গাপুরের নাগরিকত্ব গ্রহণ করে।
তাই তাঁরা বলছেন, বাংলাদেশ-সিঙ্গাপুর দ্বিপক্ষীয় বিনিয়োগ চুক্তির (BIT) আওতায় এই সালিশি মামলা করার অধিকার তাঁদের আছে।
অর্থাৎ, তাঁরা এখন বিদেশি বিনিয়োগকারী— ফলে বাংলাদেশের সরকারের কোনো পদক্ষেপ তাঁদের “বিনিয়োগের ক্ষতি” করলে, সেটা আন্তর্জাতিক আইনে বিচারযোগ্য।
সালিশি মামলা: রাজনৈতিক না অর্থনৈতিক?
প্রশ্ন হলো—
এটা কি সত্যিই ব্যবসায়িক বিরোধ, নাকি রাজনৈতিক প্রতিশোধের পরিণতি?
অন্তর্বর্তী সরকার এখন যে শ্বেতপত্র অভিযান চালাচ্ছে, তাতে অনেক প্রভাবশালী ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক পরিবারের সম্পদ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এস আলম মামলা তাই শুধু একটি পারিবারিক বা কর্পোরেট বিষয় নয়—
এটা হতে পারে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম বড় আন্তর্জাতিক পরীক্ষাও।
যদি ICSID এই মামলাকে গ্রহণ করে, তবে বাংলাদেশের অর্থনীতি ও সরকারের ওপর বিশ্বব্যাপী নজরদারি বাড়বে, এবং বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মনে একধরনের শঙ্কাও তৈরি হতে পারে।
শেষ কথা
বাংলাদেশের ইতিহাসে আগে এমন ঘটনা বিরল নয়—কখনো রাজনীতি, কখনো ব্যবসা, কখনো বিদেশি সম্পর্ক—সব একসূত্রে গাঁথা হয়ে যায়।
এস আলম পরিবারের মামলা সেই জটিল সম্পর্কেরই নতুন অধ্যায়।
একদিকে দুর্নীতির দায়মুক্তি না দেওয়া, অন্যদিকে বিদেশি বিনিয়োগ রক্ষা করা—
এই দুই ভারসাম্য রক্ষা করাই এখন ইউনূস সরকারের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
©somewhere in net ltd.