নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নতুনভাবে নিজের চিন্তার শক্তি আর ভাবনার বিশ্লেষণ করার সামর্থ অর্জনের জায়গা হল ব্লগ। বিচিত্র ভাবনারাশির আলোয় নিজেকে আলোড়িত আর আলোকিত করার উদ্দেশেই আমরা ব্লগে আসি। অবসর সময়টাকে ভালোভাবে কাটানোর জন্য এর চেয়ে মোক্ষম উপায় আর নেই। তদুপরি বিনোদন এখানে উপরি পাওনা

এস এম ইসমাঈল

মুক্তমনা, সকল রকমের সংস্কার মুক্ত, আমি ধর্মভীরু হলেও ধর্মান্ধতা আমাকে কখনো গ্রাস করে নিতে পারেনি।আমি সুস্থ্য চিন্তা আর মানবিক মূল্যবোধে বিশ্বাসী। আমার শক্তি আমার আবেগ আবার সে আবেগ-ই আমার বিশেষ দুর্বলতা। নেহায়েত সখের বশে এক আধটু কাব্য চর্চা করি, এই আর কি। প্রিয় বিষয় সাহিত্য, ইতিহাস, ধর্ম, সংগীত, দর্শন, দেশ ভ্রমন আর গোয়েন্দা সিরিজের বই পড়া।ভীষণ ভোজন রসিক আমি। জন্ম যদিও চট্টগ্রামে কিন্তু ঢাকা শহরেই লেখা পড়া আর বেড়ে উঠা। আমার জীবনের গল্প তাই আর দশ জনের মতো খুবই সাদামাটা।

এস এম ইসমাঈল › বিস্তারিত পোস্টঃ

পীর বদর শাহ্‌ (রহঃ)

০৯ ই এপ্রিল, ২০১০ রাত ৮:২২

পীর বদরউদ্দীন আল্লামা ওরফে বদরে আলম বা বদর পীর (রহঃ)

বারো আউলিয়ার মধ্যে পীর বদরউদ্দীন আল্লামা ওরফে বদরে আলম বা বদর পীর (রহঃ) সবচেয়ে প্রসিদ্ধ। তাঁকে বারো আউলিয়ার নেতা এবং অভিভাবক সথানীয় ব্যক্তিত্ব(Patron Saint)হিসেবে গন্য করা হয়ে থাকে। শুধু চট্টগ্রামেই নয়, নদী মাতৃক বাংলাদেশের সব জায়গাতেই হযরত বদর পীর (রহঃ) সমানভাবে সম্মানিত ও পরম পূজনীয়। তবে তাঁকে ছাড়াও এ নামে আরো বেশ কয়েকজন অলী আল্লাহর নাম পাওয়া যায়। যেমন- হযরত পীর বদরউদ্দীন মাদার (রহঃ)-মাদারীপুর, হযরত বদর শাহ্ (রহঃ)- রাজশাহী, হযরত বদরউদ্দীন শাহ্ (রহঃ) - বদরগঞ্জ,পীরগঞ্জ (রংপুর) এবং হযরত বদরে আরেফীন (রহঃ) -দিনাজপুর। কিন্তু এঁদের মধ্যে চট্টগ্রামের কোতোয়ালী থানার বক্সীর হাটের বদরপাতিতে সমাহিত হযরত শাহ্ বদর আউলিয়ার (রহঃ) মাজারই সবাপেক্ষা প্রসিদ্ধ। ইনি সাধারণতঃ বদর পীর(রহঃ), বদর শাহ্ (রহঃ), পীর বদর (রহঃ) বা বদর (রহঃ) নামে পরিচিত। তাঁর প্রকৃত নাম আজো অপরিজ্ঞাত। তবে ঐতিহাসিকগণ তাঁকে হযরত শাহ্ বদরউদ্দীন আল্লামা বা পীর বদরে আলম বা বদর পীর (রহঃ) হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।



“ঐতিহাসিকদের মতে আরবেরা সম্ভবতঃ অষটম শতাব্দীর মধ্যভাগে চট্টগ্রামে এসে পৌঁছান। চট্টগাম রেল ষেটশনের উত্তর পাশ্বস্থ কুমাদান পাহাড়ের উপর বহু প্রাচীন আরবীয় অলী দরবেশের সমাধি আছে বলে জানা যায়’’ ; এ তথ্য জনাব মাহবুব উল আলম (১৮৯৮-১৯৭৬) তাঁর ‘চট্টগ্রামের অলী দরবেশগণ’ শীষক গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেছেন, ‘‘বদরউদ্দীন বদরে আলম- বদরউদ্দীন আল্লামা ও বদর পীর নামে পরিচিত। মীরাটে জন্ম, হযরত শাহজালাল এর সমসাময়িক। তরফের রাজা আচক নারায়ণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন।হাজী খলীলকে সঙ্গে নিয়ে চট্টগ্রামে আসেন। ১৩৪০ খৃঃ ইন্তেকাল করেন। বিহারের ছোট দরগায় সমাহিত।’’



‘‘বাংলাদেশের সমস্ত অঞ্চলের মাঝি-মাল্লারা নদী পারাপারের সময় এই পীরের উদ্দেশ্যে প্রণতি জানায়। নদীপথে আসন্ন বিপদের সময় হিন্দু ধমাবলম্বী মাঝি-মাল্লারা তাদের জান-মালের নিরাপত্তা বিধানের জন্য এ পীর বদরের (রহঃ) কথা স্মরণ করে সমস্বরে বলে ওঠে,

‘‘আমরা আছি পোলাপান,

গাজী আছেন নিগাবান;

শিরে গঙ্গা দরিয়া,

পাঁচ পীর বদর; বদর’’।



আর মুসলমান মাঝিরা সমস্বরে গেয়ে ওঠে,

‘‘আমরা আছি পোলাপান,

আল্লাতালা নিগাবান;

আল্লা, নবী, পাঁচ পীর;

বদর; বদর’’। তথ্যসূত্রঃ বাংলাদেশের সুফী সাধক-

ডঃ গোলাম সাকলায়েন পৃঃ১৩৪।



চট্টগ্রামের মুসলমান খেলোয়াড়েরা জমায়েত হয়ে যে বদর ধ্বনি করে এবং সমুদ্রে মাঝি-মাল্লারা যে বদর ধ্বনি করে এগুলো পীর বদরউদ্দীনের (রহঃ) স্মৃতির সূচক।



বাংলার গণ মানসে বদর পীর এর অতুলনীয় প্রভাব-প্রতিপত্তির বর্ণনা প্রসঙ্গে ঐতিহাসিক আহমদ হাসান দানী বলেন,

''... .. ... কতক লৌকিক দেবদেবীর পূজা উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রচলিত যা সাম্প্রদায়ীক সম্প্রীতির সহায়ক ছিল।এরকম একজন দেবতা হচ্ছেন বদর। যাকে নদীর অধিষ্ঠাত্রী তথা রক্ষক দেবতা হিসেবে নদীমাতৃক বাংলাদেশের মানুষ হিন্দু-মুসলমান নিবিশষে প্রত্যেক দিন পূজা করত। তবে শেষোক্ত সম্প্রদায়ের নিম্নস্তরের (যারা নদীভিত্তিক জীবন যাপনে অভ্যস্থ) মানুষের মধ্যে এটির প্রচলন ছিল বেশী।'' দানী, পৃঃ-৬৩।



তথ্য সুত্রঃ ঐতিহাসিক ঢাকা মহানগরী : বিবর্তন ও সম্ভাবনা, সম্পাদক, ইফতিখার-উল-আউয়াল। প্রকাশকালঃ ঢাকা-২০০৩, পৃঃ নং-৮৩।



‘‘জনশ্রুতি আছে যে, প্রায় পাঁচ-ছশ বছর আগে বদর পীর (রহঃ) একটা প্রকান্ড পাথরের উপর বসে চট্টগ্রামে আসেন।তৎকালে ঐ অঞ্চলে ভূত প্রেতের বসবাস ছিল। হযরত বদর শাহ্ পীর (রহঃ) এসে জ্বীনদের কাছ থেকে একটা চাটি (মাটির প্রদীপ) রাখার সম পরিমান জায়গা চেয়ে নেন। চাটি জ্বালাবার পর সেটির আলো চারিদিকে ছড়ি্যে পড়ে এবং জ্বীনরা সে জায়গা থেকে বিতাড়িত হয়।এভাবে হযরত বদর শাহ্ পীর (রহঃ) ঘন জঙ্গলে ঘেরা চট্টগ্রামের পাহাড়ী অঞ্চলকে মনুষ্য বসবাসের উপযোগী করে তোলেন। এইরুপে, চট্টগ্রাম শহর বদর পীরের চাটি দিয়ে আলোশিখা বিকিরণ করায় এবং এই জেলাকে সবপ্রথম মানুষের বাসোপযোগী স্থানে পরিণত করায় একে ‘চাটিগ্রাম’ বা ‘চাটগাঁও’ নামে অভিহিত করা হয়। ....................................। পূবের্ চট্টগ্রামের পাহাড় প্রভৃতি অঞ্চলে জ্বীন ভূতপ্রেতের বসতি ছিল। সেহেতু চট্টগ্রামের অধিবাসীগণ এখনও কোন কোন পাহাড়ের উল্লেখ করতে গিয়ে তাকে ‘পরীর পাহাড়’ নামে অভিহিত করেন। পীর বদরের ভক্তগণ তাঁকে চট্টগ্রাম শহরের ‘অভিভাবক দরবেশ’ বলে থাকেন। তথ্যসূত্রঃ বাংলাদেশের সুফী সাধক- ডঃ গোলাম সাকলায়েন পৃঃ১৩৪।



‘বদর পীরের চাটির’ কথা আজও চট্টগ্রামে কিংবদন্তি হয়ে আছে। ‘বদর শাহের চাটি’ থেকে চাটিগ্রাম> চট্টগ্রাম নামের উৎপত্তি হয়েছে মমে বিশেষজ্ঞগণের বেশ জোরালো অভিমত রয়েছে।‘‘চট্টগ্রামের মোমিন রোডের কদম মুবারক মসজিদের উত্তর দিকে অবস্থিত যে পাহাড়ের উপর তিনি প্রথম চাটি প্রজ্বলন করেছিলেন সেটি বতমানে চেরাগীর পাহাড় নামে পরিচিত। হিন্দু-মুসলমান ও খৃষটান জনসাধারণ এখনো মনোস্কামনা পূরণের জন্য এ স্থানে প্রতি সন্ধ্যায় আলো জ্বেলে থাকে’’। তথ্যসুত্রঃ বাংলাদেশের সুফী সাধক- ডঃ গোলাম সাকলায়েন পৃঃ ১৩৪।



কৃতজ্ঞ চট্টলার জনসাধারণের পক্ষে, হযরত বদর পীরের (রহঃ) পূণ্য স্মৃতির স্মরণে শ্রদ্ধাঘ নিবেদনাথে, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে, জামাল খান ও মোমিন রোডের সংযোগস্থলে অবস্থিত যে পাহাড়ের উপর তিনি প্রথম চাটি প্রজ্বলন করেছিলেন, সেখানে ৫৪ ফুট উঁচু এবং ৪৬ ফুট ব্যাসের চেরাগ আকৃ্তির একখানা সুদৃশ্য স্তম্ভ নিমাণ করা হয়েছে। এ পাহাড়টি প্রাচীনকালে ডিসি হিলের অংশ ছিল। চট্টগ্রামের পরিচয়বাহী এ স্থানটি একটা দশনীয় স্থান রুপে খ্যাত। কথিত আছে যে, আজ থেকে প্রায় ছয়শ পঞ্চাশ বছর আগে হযরত বদর পীর(রহঃ)একটা প্রকান্ড পাথরের উপর বসে সমুদ্র পাড়ি দিয়ে ইসলাম প্রচারের জন্য চট্টগ্রামে আসেন। শহরের যে স্থানে এসে তাঁকে বহনকারী পাথরখানা থেমে গিয়েছিল, সে জায়গাটি বতমানে পাথরঘাটা নামে পরিচিতি পেয়েছে।



হযরত বদর পীর (রহঃ) শুধু চট্টগ্রামেই নয় বামা থেকে মালয় অবধি সুবিস্তৃত অঞ্চলে তিনি সুপরিচিত ছিলেন। হযরত বদর শাহ্ পীর (রহঃ) এতই খ্যাতি লাভ করেছিলেন যে, তাঁর দশনের জন্য ব্যাকুল হয়ে চতুদশ শতকের মরক্কো দেশীয় পযটক ইবনে বতুতা ১৩৪৬ খৃষটাব্দে চট্টগ্রামে আসেন। কিন্তু ইতিপূবে এ দরবেশের ইন্তেকাল ঘটলে ইবনে বতুতার সে আশা আর পূরণ হয়নি।



বাংলার সুলতান ফখরুদ্দিন মুবারাক শাহের (১৩৩৮খৃঃ-১৩৪১খৃঃ) বীর সেনাপতি কদল খাঁ গাজীর চট্টগ্রাম অভিযানকালে (১৩৪০খৃঃ)হযরত বদর শাহ্ পীরের সাথে সাক্ষাত হয়েছিল বলে জানা যায়। সপ্তদশ শতকের কবি মুহাম্মদ খান তাঁর বংশ পরিচয় দিতে গিয়ে বারো আউলিয়া ও হযরত বদর শাহ্ পীরের কথা উল্লেখ করেছেন। কবি ‘মকতুল হোসেন’ (১৬৪৬খৃঃ) কাব্যে বলেন, ‘‘তাঁর পূব পুরুষ মাহি আছেয়ার যখন হাজী খলীল পীরকে সঙ্গে নিয়ে আরব দেশ থেকে চট্টগ্রাম আগমন করেন, তখন কদল খাঁ গাজী পীর, তাঁর প্রাণের সখা শায়খ শরফুদ্দিন এবং শাহ্ বদরে আলম এর সঙ্গে তাঁর সাক্ষাত হয়’’। কবি আরো বলেন, ‘‘কদল খাঁ গাজী পীর অসংখ্য রিপুদল পরাস্ত করে চট্টগ্রামে এক আল্লাহর মহিমা প্রকাশ করেন। কদল গাজী খাঁনের পীরের সংগে তাঁর একাদশ মিত্র ছিল। কিন্তু পুস্তক বাড়ন্ত হেতু কবি এদের নাম উল্লেখ করেননি’’। যাদের কারণে চট্টগ্রামকে বার আউলিয়ার দেশ বলা হয়ে থাকে।



‘‘এ তথ্যের ঐতিহাসিক সত্যতার প্রমান পাওয়া যায়। পূববঙ্গ গীতিকায় তাঁর নাম পাওয়া যায়।

‘‘চাইর দিক মানি আমি মন কৈলাম স্থির।

মাথার উপর মানম আশী হাজার পীর ।।

আশী হাজার পীর মানম ন লাখ পেকাম্বর।

শিরের উপরে মানম চাটিগার বদর’’।।

তথ্যসুত্রঃ বাংলাদেশের সুফী সাধক- ডঃ গোলাম সাকলায়েন পৃঃ ১৩৪ ।



চট্টগ্রাম শহরের বদরপাতিতে এ মহান সূফী সাধকের সমাধি রয়েছে। হিন্দু-মুসলমান, বৌদ্ধ-খৃষটান জাতি ধম নিবিশেষে সবাই এ মহাপূরুষের পবিত্র কবরগাহের প্রতি সম্মান দেখিয়ে থাকেন। ‘চট্টগ্রামের ইসলামী ঐতিহ্য’ গ্রন্থে বিশিষ্ট ঐতিহাসিক ডঃ আবদুল করিম সাহেব বলেন, ‘‘চট্টগ্রামের বদরপাতিস্থ বদর শাহের সমাধি ভবন পরীক্ষা করে আমাদের মনে হয়, বদর শাহ চট্টগ্রামেই সমাহিত আছেন। বদরপাতিস্থ বদর শাহের মাজার নিহায়েত জওয়াব বা কৃ্ত্রিম সমাধি নয়।’’ প্রতি বছর ২৯শে রমজান তারিখে হযরত পীর বদর শাহ’র (রহঃ)মাজারে তাঁর গুনমুগ্ধ ভক্তগণ বিপুল আয়োজ়নের সাথে তাঁর বাষিক ওরস শরীফ পালন করে থাকেন। এতে দেশ-বিদেশের বহু লোকের সমাবেশ হয়।





মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.