![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মুক্তমনা, সকল রকমের সংস্কার মুক্ত, আমি ধর্মভীরু হলেও ধর্মান্ধতা আমাকে কখনো গ্রাস করে নিতে পারেনি।আমি সুস্থ্য চিন্তা আর মানবিক মূল্যবোধে বিশ্বাসী। আমার শক্তি আমার আবেগ আবার সে আবেগ-ই আমার বিশেষ দুর্বলতা। নেহায়েত সখের বশে এক আধটু কাব্য চর্চা করি, এই আর কি। প্রিয় বিষয় সাহিত্য, ইতিহাস, ধর্ম, সংগীত, দর্শন, দেশ ভ্রমন আর গোয়েন্দা সিরিজের বই পড়া।ভীষণ ভোজন রসিক আমি। জন্ম যদিও চট্টগ্রামে কিন্তু ঢাকা শহরেই লেখা পড়া আর বেড়ে উঠা। আমার জীবনের গল্প তাই আর দশ জনের মতো খুবই সাদামাটা।
মাওলানা আবদুর রহমান জামী (রহঃ) – এক সত্যিকার আশেকে রাসুলের প্রতিচ্ছবি
আরবের নবী, করুণার ছবি, ইসলাম রবি, মহান রবের প্রেমী, হযরত মুহাম্মদ সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শুধুমাত্র একটা বাস্তবধর্মী ও বিজ্ঞানসম্মত ধর্মের প্রবর্তকই নন, বরং তিনি এনেছেন বিশ্বপালক মহান রাব্বুল আলামীনের মনোনীত, মানব জাতির জন্য অবশ্য অনুসরণীয়, কল্যাণকর একটা পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান।তাঁর পূত শুভাগমন ছিল সারা মানব জাতি তথা বিশ্ববাসীর জন্য স্রষ্টার পরম আর্শীবাদ স্বরুপ।তাই তখন থেকেই বিশেষতঃ নুর নবীজীর (সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)মদীনায় গমনের পর থেকেই বিশ্বের তাবৎ ভাষার কবিকূল তাঁর গুনগানে মশগুল হয়ে বিশ্ব সাহিত্যের ভান্ডারকে করেছেন সুসমৃদ্ধ।জগতবাসীকে উপহার দিয়েছেন অসাধারণ সব জীবনী গ্রন্থ,কবিতামালা।যেগুলোর প্রতিটা ছত্রে ছত্রে অনুরণিত হয়েছে নুর নবীজীর (সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)প্রশস্তি গাঁথা।শুধু কি তাই বিভিন্ন অমুসলিম লেখক-ঐতিহাসিক-জীবনীকারগণ ও মহানবীর পূত জীবনালেখ্যের বিভিন্ন দিক নিয়ে বহুসংখ্যক প্রামাণ্য পুস্তকাদি রচনা করেছেন; যার ধারা আজো সচল রয়েছে।এ সকল মহাসৌভাগ্যবান ব্যক্তিত্বগণের মধ্যে পারস্যের বিখ্যাত মরমী কবি মাওলানা আবদুর রহমান জামী (রহঃ)(১৪১৪খৃঃ-১৪৯২খৃঃ) অন্যতম।
জন্ম ও শিক্ষাজীবন- নুরুদ্দীন আবদুর রহমান জামী শুধু পঞ্চদশ শতকের শ্রেষ্ঠতম ফারসী কবিই নন, বরং তিনি হলেন পঞ্চদশ শতকের মরমীবাদী সুফী কবিগণেরও সর্বশেষ প্রতিনিধিত্বকারী ব্যক্তিত্ব।বর্তমান আফগানিস্তানের(খোরাসান)ঘুর প্রদেশের ‘জাম’ নামক স্থানে ১৪১৪ খৃষ্টাব্দে তাঁর জন্ম হয়।জামী’র জন্মের কিছুকাল পরেই তাঁর পিতা সপরিবারে তৎকালীন শিক্ষা-সংস্কৃতির অন্যতম পীঠস্থান ‘হিরাত’ শহরে হিযরত করে সেখানকার স্থায়ী বাসিন্দায় পরিণত হন। জামী হিরাতের প্রখ্যাত নিযামিয়া মাদ্রাসায় পড়াশুনার সুযোগ লাভ করেন। তাঁর অধীত বিষয়গুলোর মধ্যে ছিল- আরবী ও ফারসী সাহিত্য,গনিতশাস্ত্র, প্রাকৃ্তিক বিজ্ঞান, মুসলিম দর্শন, এরিষ্টটলীয় দর্শন ও যুক্তিবিদ্যা ইত্যাদি।অতঃপর জামী সমরখন্দ গমন করেন।সমরখন্দ ছিল তখনকার যুগের মুসলিম বিশ্বের বিজ্ঞানচর্চার কেন্দ্রভূমি।সেখানেও তিনি দু’বছর অধ্যয়ন করেন।
জামী’র সাহিত্যচর্চা- জামীর পিতা ‘দাশত’ এলাকার অধিবাসী ছিলেন বিধায় জামী প্রথম দিকে ‘দাশতী’ নামে লিখতে শুরু করেন।কিন্তু পরে তিনি ‘জামী’ নামটিকেই নিজের কলমী নাম হিসেবে বেছে নেন। নিজের কলমী নাম নির্বাচনের পিছনে জামী দু’টি কারন দেখিয়েছেন।কারন দুটো হচ্ছে- তাঁর ভাষায়,
“জাম আমার জন্মস্থান, কলম আমার করেছে পান
‘আহমদ’ এর জ্ঞানসুধা অবিরাম; (শায়খুল ইসলাম)
হয়েছে নেশা,পুরিল আশা;
তাইত কবিতার ভূবনে হলাম নামী,
তাখলীস(কলমী নাম)আমার রেখেছি ‘জামী’।
আর তার কারন হচ্ছে এ দু’টি।”
জামী’র রচনাবলী- কবিতা/গ্রন্থ/চিঠি মিলিয়ে জামী’র রচনাবলীর সংখ্যা প্রায় ৮৭টি।গদ্য-পদ্য, ইহজীবন-পরজীবন, ধর্ম, এমনকি ইতিহাসশাস্ত্রও ছিল তাঁর লেখার বিষয়বস্তু।যেগুলোর মধ্যে বেশ কতগুলি কাব্যগ্রন্থ ইংরেজী ভাষায় অনুদিত হয়েছে।জামী’র কাব্যরচনার ধারা অপর বিখ্যাত ফারসীভাষী কবি হাফিজ সিরাজীর গজল দ্বারা বহুলাংশে অনুপ্রাণিত হয়েছিল।কবি নিজেই স্বীকার করেছেন যে, তাঁর প্রধান কাব্য ‘হাপ্ত আওরংগ’(সপ্ত সিংহাসন)গ্রন্থখানায় নিযামী গঞ্জুভীর রচনার প্রত্যক্ষ প্রভাব রয়েছে।জামী’র উল্লেখযোগ্য রচনাবলীর মধ্যে রয়েছে- ‘বাহারিস্তান’(শেখ সাদী’র ‘গুলিস্তা’কাব্য গ্রন্থের অনুকরণে রচিত), ‘নাফহাতুল উনুস’(সুফীগণের জীবনী), ‘লাওয়াইহ’(সুফীবাদ বিষয়ক প্রবন্ধমালা),’দিওয়ানে সেহ্ গানেহ’(ত্রিপদী কাব্য), ‘তাজনীস আল লুগাত’(আরবী-ফারসী শব্দের অভিধান)।
জামী’র আধ্যাত্মিক সাধনা- রাসুলে কারীমের(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) প্রবর্তিত জীবন বিধানের রয়েছে দু’টি দিক- এদের একটা হল প্রকাশ্য, যা সাধারণের কাছে ‘শরীয়ত’ নামে পরিচিত।অপরটা হল অপ্রকাশ্য বা গুপ্ত, যা সাধারণ্যে কাছে ‘তরীকত’ নামে অভিহিত।ইসলামের প্রকাশ্য বিধিবিধান ‘শরীয়ত’ এর অধীনে থেকে আত্মশুদ্ধির প্রচেষ্টা চালানোর নামই হচ্ছে ‘তরীকত’।মাওলানা জামীও সে যুগের অপরাপর মুসলিম ব্যক্তিত্বের মত তাসাউফের চর্চা ও অনুসরণকারী ছিলেন।জামী ছিলেন নাক্সবান্দিয়া তরীকার একনিষ্ঠ অনুসারী একজন সূফী সাধক।
একজন নিবেদিতপ্রাণ সূফী সাধক হিসেবে সূফী সাধনার জন্য তিনি বেশ কিছু নীতিমালা অনুসরণ করে চলতেন।জামী ছিলেন একজন প্রকৃত রাসুল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)প্রেমিক।তিনি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করতেন যে, “রাসুলের(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)প্রতি অকৃ্ত্রিম ভালবাসাই হচ্ছে একজন সূফী সাধকের আধ্যাত্মিক সাধনাপথের মূল ভিত্তি ও চালিকাশক্তি”।কথিত আছে, একদা তাঁর নিকট শিষ্যত্ব গ্রহন করার মানসে কোন একজন যুবক এলে, জামী তাকে প্রশ্ন করেছিলেন, “হে যুবক!তুমি কি কখনো কাউকে ভালবেসেছ?” প্রশ্নের আকস্মিকতায় বিস্ময় বিমুঢ় যুবকের উত্তর ছিল, “না।” তখন জামী তাকে বলেছিলেন, “যাও, আগে কারো সাথে গিয়ে ভালবাসা করো। তারপর আমার কাছে এসো, আমি তখন তোমাকে পথ দেখিয়ে দেবো”।
কবির পরিবারবর্গ - মাওলানা মুহাম্মদ নামে জামীর একজন ভাই ছিলেন।যিনি ছিলেন একজন প্রাজ্ঞ ব্যক্তিত্ব ও বিশিষ্ট সংগীতজ্ঞ।তাঁর মৃত্যুতে শোকার্ত কবি জামী একখানা স্মারক কবিতাও লিখেছিলেন।জামীর চার সন্তানের মধ্যে তিনজনই তাদের বয়স একবছর হবার আগেই মারা যান। শুধুমাত্র বেঁচে ছিলেন ‘জিয়াউদ্দীন ইউসুফ’। এ ছেলের জন্য জামী তাঁর ‘বাহারিস্তান’ গ্রন্থখানা রচনা করেছিলেন।
কবির জীবনাবসান - জীবনের শেষদিকে জামী হিরাত গমন করেন এবং সেখানেই ১৪৯২ খৃষ্টাব্দে কবির শেষশয্যা রচিত হয়েছে।তাঁর কবরগাহের এপিটাফের পাথরে খেদাই করা অবস্থায় কবির রচিত খুবই বিখ্যাত একখানা রুবাই আজো শোভা পাচ্ছে।
“যখন তোমার মুখচ্ছবি
আমা হ’তে ছিল লুক্কায়িত,
আঁধার রাতের ঐ চাঁদের মত,
তখন তোমার স্মরণে ব্যাকুল আমি,
ফেলেছি কত আঁখিজল, তারার সম,
আজো আমার রাত্রিগুলো আঁধারে ভরা,
যদিও আকাশের বুক জুড়ে
শোভিছে অগনন তারা।”
এবার আমরা জামীর একটা বিখ্যাত কাসীদার পদ্যানুবাদ পড়বো।উল্লেখ্য, এ কাসীদাখানার দুটি চরণ আমাদের প্রাণপ্রিয় হুজুর কিবলা, হযরত সৈয়্যদ তৈয়্যব শাহ্(রহঃ)এর লেটার প্যাডের শীর্ষদেশে ছাপানো আছে। চরণ দুটি হল- “ওয়াসাল্লাহু আলা নুরীন, কাজুসুদনু রাহা পয়দা, জমী আজ হোব্বেও সাকিন, ফলক দর ইশক কেও শয়দা।”প্রবীন পীর ভাই, বর্তমানে আঞ্জুমানের অর্থ সম্পাদক জনাব আলহাজ সিরাজুল হক সওদাগর সাহেবের কাছে শুনেছি যে, “শাহানশাহে সিরিকোট হযরত সৈয়্যদ আহমদ শাহ্(রহঃ)এ দুটি চরণ মাঝে মধ্যে ফজর নামাজের পর গুন গুন করে আবৃত্তি করতেন”।
১।Wasallallah Ala Noorin Kazusudno Rahaa Paida,
Zameen Az Hubbbe O Sakin, Falak Dar Isqke O Shaida,
জানাই অযুত সালাম,
নুর নবীজীর (দঃ) ধাম;
নুরের বরকতে যাঁর,
খূলে গেল হিদায়েতের দ্বার।।
স্রষ্টা আশিক যে জনাতে,
বিভোর হয়ে তাঁর প্রেমেতে;
স্থিরতা দেন এ ধরাতে,
আকাশ রাখেন ঐ উঁচুতে ।।
২।Muhammad Ahmedo Me Hai, Mutbera Khalikashbis Tud,
Kazusudbud Har Mouzud, Azusuddi Dahaa Beena,
মুহাম্মদ, আহমদ দু'টি নামে,
স্রষ্টার গোপন ভেদ বিরাজে;
ভালবাসার সিক্ত রসে,
রাখেন প্রভূ সদা যারে।।
তাঁর অস্তিত্বের বরকতে,
সৃষ্ট জগত আছে টিকে;
সৃষ্টি হলো মানব জাতি,
নাসা-নয়নে মনোহর অতি।।
৩।Agar Name Muahmmad Ra Naya Burde Safi Adam,
Na Adam Yafte Tawba, Na Nooh Asgar Ke Nazzaina
আদম সফি(আঃ)প্রথম নবী,
কতনা করলেন রোনাজারী;
দোহাই দিলেন ঐ নামেরি;
কবুল হলো তাওবা তাঁরি।।
যেমন করে নুহ(আঃ)নবী;
ভাসিয়ে চলেন কিশতিখানি;
নাজাত পেলেন প্লাবন থেকে,
ঐ নামেরি উসিলাতে।।
৪।Do Chasme Nargisee Nashrah Ke Madagal Basr Fanan
Du Zulfe Ambari Nashrah, Kewal Laile Iza Yaghsa,
অনিন্দ্য সুন্দর ওদু'টি চোখে,
আহা! নারগিস ফুল, সে যেন শোভে;
দু’নয়নের রূপ সুষমায়,
সৃষ্ট জগত অবাক তাকায়!
তাঁর সুশোভন ঐ নয়ন দু'টি,
প্রভূর প্রেমের অমর জ্যোতি;
ভক্ত-অনুগত প্রাণে,
ভালবাসার বৃষ্টি হানে।।
নিকষ কালো কেশরাশি,
শিরোপরি থাকতো ভাসি;
রাজমুকুটও মানবে যে হার,
কি মনোহর!তাঁর চুলের বাহার।।
দিবাশেষে আধাঁর রাতি,
ছড়ায় যেমন অরূপ জ্যোতি;
তেমনি তাঁরই কেশের শোভা,
ছড়ায় অশেষ রুপের আভা।।
৫।Ze Sirre Sina As Zami Alam Nashrah, Lata Barkah
Ze Mera Zas Che Me Kursi, Ke Subhanallazi Asrah
বক্ষে যে তাঁর লুকায়িত,
প্রভূর গোপন ভেদ নিহিত;
সে রহস্যেরি বরকতে,
বিশ্ব-নিখিল টিকে আছে।।
আকাশের ঐ চন্দ্র-তারা,
তাঁর নুরেতেই হয় উজালা;
বরকতময় তাঁর স্বত্তাখানা,
ত্রিভূনে যাঁর নাই উপমা।।
মধ্যরাতে এক পলকে,
সফর করেন উর্ধলোকে;
চলার পথে সোপাণ সনে,
আলাপ করেন সংগোপণে।।
শুনতে পেলেন প্রভূর বাণী,
''স্বাগতম, হে প্রিয় নবী!"
আরো শোনেন, প্রশংসা গান,
"প্রভূ আমার, মহা গরীয়ান"।।
©somewhere in net ltd.