নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মুক্তমনা, সকল রকমের সংস্কার মুক্ত, আমি ধর্মভীরু হলেও ধর্মান্ধতা আমাকে কখনো গ্রাস করে নিতে পারেনি।আমি সুস্থ্য চিন্তা আর মানবিক মূল্যবোধে বিশ্বাসী। আমার শক্তি আমার আবেগ আবার সে আবেগ-ই আমার বিশেষ দুর্বলতা। নেহায়েত সখের বশে এক আধটু কাব্য চর্চা করি, এই আর কি। প্রিয় বিষয় সাহিত্য, ইতিহাস, ধর্ম, সংগীত, দর্শন, দেশ ভ্রমন আর গোয়েন্দা সিরিজের বই পড়া।ভীষণ ভোজন রসিক আমি। জন্ম যদিও চট্টগ্রামে কিন্তু ঢাকা শহরেই লেখা পড়া আর বেড়ে উঠা। আমার জীবনের গল্প তাই আর দশ জনের মতো খুবই সাদামাটা।
মিলাদের ফতোয়া
যারা বলেন সউদী আরেবর পবিত্র হারামাইনিস শরীফাইন তথা মক্কা মুয়াজ্জমা ও মদীনাতুল মুনাওয়ারাতে মিলাদ মাহিফল এর অনুষ্ঠান উদযাপিত হয় না, এটা বিদআত ও হারাম তারা হয় মিথ্যা কথা বলেন না হয় জেনে শুনে সত্য গোপন করেন।
সবার আগে জেনে নিন মিলাদের ব্যাপারে ওহাবীদের গুরুরা কী বলেছেন?
১।ওহাবীদের গুরু হাফিয ইবনে তাইমিয়া (১২৬৩খৃঃ - ১৩২৮খৃঃ)তার বিখ্যাত কিতাব “ইক্তিদায়ে সিরাতে মুস্তাকীম” এ লিখেছেন, “আর কিছু লোক নাসারাদের অনুকরণে মীলাদুন্নবী মাহফিলের নামে বাড়িয়ে দিয়েছে, যেমন তারা ঈসা (আঃ) এর জন্মদিনে করে থাকে। আর যদি মিলাদ মাহফিল নবী (দঃ) এর প্রতি ভালবাসা ও সম্মান প্রদর্শনের জন্য করা হয়ে থাকে তবে আল্লাহ এ মুহাব্বত ও সম্মান প্রদর্শনের কারণে সওয়াব বা প্রতিদান দেবেন।” (পৃঃ ৩১৩)। একই কিতাবের অন্যত্র তিনি লিখেছেন, “বরং ঐ দিনে (রাসুলের (দঃ) জন্মদিনে) পরিপূর্ণরূপে অনুষ্ঠান করা এবং এ দিনের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা, উত্তম নিয়ত এবং হুজুরে পাক (দঃ) এর প্রতি মুহাব্বত প্রদর্শন বড় প্রতিদানের কারন হবে।” (পৃঃ ৩১৫)।
২।ওহাবীদের ধর্মীয় নেতা মুহাম্মদ ইবনে আবদুল ওহাব নজদী’র(১৭০৩খৃঃ-১৭৯২খৃঃ)পুত্র শায়খ আবদুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ ইবনে আবদুল ওহাব নজদী তার কিতাব “মুখতাসার সিরাতে রাসুল” এ লিখেছেন, “কট্টর কাফির আবু লাহাব রাসুলে কারিমের(দঃ)পবিত্র জন্মের সুসংবাদ শুনে মনের খুশীতে নিজ দাসী সুয়ায়বাহকে মুক্তি দেয়ার কারনে সে প্রতি সোমবার(নবীজীর বেলাদত শরীফের দিন)দোযখে শান্তিদায়ক পানীয় পেয়ে থাকে।তিনি আবু লাহাবের শাস্তি হ্রাসের বিষয় উল্লেখ করে মিলাদুন্ননবী পালনের গুরুত্বের কথা স্বীকার করেন।এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য যে, তিনি শামসুদ্দীন নাসের দামিস্কির কিতাব ‘মওরদুস সাদী ফি মওলদিল হাদী’ থেকে এ ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন এবং সেখানে দামিস্কির (রহঃ) রচিত শেরটিও হুবহু উদ্ধৃত করেছেন।
৩।মক্কার পবিত্র মসজিদুল হারাম শরীফের সাবেক খতীব, উম্মুল কুরা বিস্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও বরেণ্য আলেমে দ্বীন আল্লামা সাইয়েদ মুহাম্মদ বিন আলভী আল মালেকী আল হাসানী সাহেবও মিলাদ শরীফ পালনের বৈধতা ও বরকত প্রসঙ্গে স্বীয় জোরালো অভিমত ব্যক্ত করেছেন।নিয়মিত মক্কার রুসাইফাস্থ তাঁর নিজ বাসভবনে মিলাদ শরীফের অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়ে থাকে।
৪।হযরত শাহ ওয়ালীউল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলভী(রহঃ)(১৭০৩খৃঃ-১৭৬২খৃঃ)তাঁর ‘ফুয়ুযুল হেরেমাইন’ কিতাবে মক্কা নগরীতে মীলাদে শরীক হবার কথা উল্লেখ করে বলেন, “আমি একবার হুজুরে পাক (দঃ)এর জন্মের তারিখে মক্কা মুয়াজ্জমার সেই ঘরে হাজির ছিলাম, যেখানে হযুরের (দঃ) শুভ জন্ম হয়েছিল। লোকজন হযুরের (দঃ) উপর দুরুদ পাঠ করছিলেন, হযুরে পাকের (দঃ) জন্ম সময়কার এবং নবুয়ত প্রকাশের আগেকার আশ্চর্য ও অলৌকিক ঘটনাবলী বর্ণণা করছিলেন, এমন সময় হটাৎ দেখতে পেলাম নুর চমকাচ্ছে।আমি এ নুরগুলোর প্রতি ধ্যান করলে বুঝতে পারলাম এটা সে সমস্ত ফেরেশতাদের নুর যারা এ ধরণের মজলিসে উপস্থিত হন।আমি আরো দেখতে পেলাম যে, ফেরেশতাদের নুরসমূহ রহমতের নুরের সাথে মিশে যাচ্ছে”। পৃঃ৮০-৮১
৫।‘তারীখে হাবীবে ইলাহ’ পুস্তকের লেখক মুফতি এনায়েত আহমদ সাহেব লিখেছেন, “মক্কা-মদীনা শরীফ এবং অধিকাংশ ইসলামী শহরে প্রচলন হলো রবিউল আউয়াল মাসে মীলাদ শরীফের অনুষ্ঠান করা।মুসলমানদেরকে জমায়েত করে হুজুরে পাক (দঃ) এর জন্মের আলোচনা করা, দরুদ শরীফ বেশী বেশী করে পাঠ করা, দাওয়াতী খানা অথবা শিরণী বিতরণ করা।এ কাজটি অনেক বরকতের কারন হয় এবং এর দ্বারা হুজুরে পাক (দঃ) এর সাথে মুহাব্বত বাড়ে।১২ রবিউল আউয়াল তারিখে মদীনা মুনাওয়ারার মসজিদে নববীতে এ বরকতময় মাহফিলটি অনুষ্ঠিত হয়।আবার মক্কা মুয়াজ্জমায় হুজুরে পাক (দঃ) এর জন্মের স্থানেও।সুতরাং মুসলমানদের উচিত, হুজুরের (দঃ) মু্হাব্বতের তাগিদে যেন মীলাদ অনুষ্ঠান করেন।”
৬। দেওবন্দীদের সর্বজনমান্য পীর হযরত হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কী সাহেব (১৮১৭ খৃঃ -১৮৯৯ খৃঃ) তাঁর সুবিখ্যাত কিতাব “ফয়সালা হাফত মাসআলা”তে নিজে মিলাদ-কিয়াম করার কথা লিখেছেন। তিনি আশমাম ই ইমদাদিয়া নামক বইয়ে লিখেছেন, “মওলেদ শরীফ সমস্ত হেরেমাঈন শরীফাঈনবাসীই উদযাপন করেন। আমাদের জন্য এতটুকু দলীলই যথেষ্ট।
৭।আল্লামা মু্হাম্মদ সালেহ(রহঃ)বলেন, “আরব, মিসর, সিরিয়া, রুম, আন্দালুস ও সকল মুসিলম দেশসমুহে নবীজীর সকল উম্মত ঐক্যমত পোষণ করেছন যে, মিলাদ শরীফ পাঠে কিয়াম করা মুসতাহাব ও মুসতাহসান।” ‘ইকামাতুল কিয়ামাহ আলা তা-ইিনল কিয়াম’।
৮। দেওবনদী, ওহাবী, তাবলীগীদের পরম পূজনীয় মাওলানা রফীউদ্দীন সাহেব “তারিখে হেরামাইন” কিতাবে লিখেছেন, “নবী করীম (দঃ) এর মিলাদ বা বিলাদাত শরীফ বর্ণনার মুহুর্তে কিয়াম করা ঐ সমস্ত আলেম মুসতাহসান বা উত্তম আমল বলেছেন যারা হলেন যুগের মুহাদ্দিস ও ফকীহ।”
৯। পবিত্র মদিনা মুনাওয়ারার বিখ্যাত আলেম ও ওয়াকফ মন্ত্রণালয়ের প্রধান শায়খ শরীফ ফুয়াদ মারয়ী বিগত ১০-১২-২০০১ ইং তারিখে এশিয়ার বৃহত্তম দ্বীনী শিক্ষাকেন্দ্র জামেয়া আহমদীয়া সুন্নীয়ার প্রধান ফকীহ মাওলানা মুফতি সৈয়দ অছিয়র রহমান সাহেবকে এক একান্ত সাক্ষাতকারে আমাদের দেশসহ অন্যান্য অনেক মুসলিম দেশে নুর নবীজীর শুভাগমনের মাসে অনুষ্ঠিত মিলাদ মাহফিল, খানা-পিনার আয়োজন ইত্যাদির বৈধতার ব্যাপারে আভিমত ব্যক্ত করে বলেন, “এগুলো উত্তম ও ভাল, আমি নিজেই আপনাদের দেশে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাহফিলে যোগদান করেছি।” সূত্র- মাসিক তরজুমান, ডিসেম্বর ২০০১ সংখ্যা।
©somewhere in net ltd.