নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মুক্তমনা, সকল রকমের সংস্কার মুক্ত, আমি ধর্মভীরু হলেও ধর্মান্ধতা আমাকে কখনো গ্রাস করে নিতে পারেনি।আমি সুস্থ্য চিন্তা আর মানবিক মূল্যবোধে বিশ্বাসী। আমার শক্তি আমার আবেগ আবার সে আবেগ-ই আমার বিশেষ দুর্বলতা। নেহায়েত সখের বশে এক আধটু কাব্য চর্চা করি, এই আর কি। প্রিয় বিষয় সাহিত্য, ইতিহাস, ধর্ম, সংগীত, দর্শন, দেশ ভ্রমন আর গোয়েন্দা সিরিজের বই পড়া।ভীষণ ভোজন রসিক আমি। জন্ম যদিও চট্টগ্রামে কিন্তু ঢাকা শহরেই লেখা পড়া আর বেড়ে উঠা। আমার জীবনের গল্প তাই আর দশ জনের মতো খুবই সাদামাটা।
হেদায়েতে তাবলীগ -১
আমাদের মুসলমানদের ইসলামের উসুল ৫ টি ... যেখানে তাবলিগী মোল্লাদের উসুল ৬ টি... এই ভণ্ড নামধারী তাবলীগ এর প্রচলন হয় আজ থেকে ৬৫ বছর আগে ... লেংরা ইলিয়াস মেওাতি দাবি করেছিল সে নাকি স্বপ্নে প্রাপ্ত হয়েছে এগুলা সে এটাও দাবি করেছে তাকে স্বপ্নে আল্লাহপাক বলেছেন তোমাকে নবিদের মত করে পাঠানো হয়েছে। (নাউযুবিল্লাহ)... একমাত্র নবির স্বপ্ন ছাড়া আর কারো স্বপ্ন দলীল নয় শরিয়ত হতে পারেনা... দেখুন ইসলামের ৫ উসুল কি আর তাবলীগের ৬ উসুল কি ...
ইসলামের ৫ উসুল---
১) কালেমা, ২) নামাজ, ৩) রোজা , ৪) হাজ্জ, ৫) যাকাত
তাবলীগের ৬ উসুল ---
১) কালেমা, ২) নামাজ, ৩) এলেম ও যিকির, ৪) একরামুল মুসলেমিন, ৫) তাসহিহে নিয়ত, ৬) নফর ফি সাবিলিল্লাহ
এরপর কে ইসলাম কে তাবলীগ নামক ভণ্ড দাওয়াত মেনে নিবে তার তার ব্যাপার...
বিশ্ব ওহাবি ইজতেমা
গাট্রিওয়ালা, গাট্রিওয়ালা যাচ্ছো কোথায় ভাই,
বেশী কথা বলোনা আর, সময় যে মোর নাই।
গাট্রি নিয়ে যাচ্ছি আমি ঐ দূর মসজিদে,
খাবো দাবো দাওয়াত দিব, রাত কাঠাবো তাতে ।
চলো ভাই চলো ভাই বহুত ফায়দা হবে,
এই কাজেতে হর কদমে লক্ষ্য নেকি পাবে,
হজরতজ্বীর কথা শুনলে দিলটা নরম হয়,
জামাতের চিল্লায় গেলে, জান্নাত নসিব হয়।
তুনি কি ভাই আমার সাথে যাবে চিল্লায় ?
দাওয়াত দিব ঘরে ঘরে প্রতি মহল্লায়।
এত কন চিন্তা করছ? চলনা ভাই চল
তাবলীগেতে গেলে তুমি করবে অতি ভাল ।
গাট্রিওয়ালা, গাট্রিওয়ালা ভাবছি আমি ভাই
হাদিছে কয় মসজিদেতে রাত কাঠাতে নাই।
তোমরা তো ভাই সব মসজিদকে- করেছ হোটেল
হান্ডি, পাতিল, লাকডী চুলা রাখিবে অঢেল।
খাও দাও কাপড় শুকাও নামাজর জায়গায়,
মসজিদ হল নামাজের জায়গা এসব কি মানায় ?
গাট্রিওয়ালা, গাট্রিওয়ালা! মূখটা কেন কালো ?
আমার কথা শুনে কি ভাই লাগেনিকো ভাল ?
শোন তবে আসল কথা- বলছি আমি ভাই
ইলিয়াছ সাহেব এই তাবলীগ- স্বপ্নে পেয়েছে ভাই।
ইসলামের পাচঁ উছুলকে বাদ দিয়েছে সে
ছয় উছুলের স্বপ্নের তাবলীগ সে বানিয়ে নিয়েছে।
স্বপ্নটাতো শরিয়ত হয়- নবিদের বেলায়
উম্মতের এসব কিছু শয়তানে দেখায় ।
সাহাবিরা তাবলীগ করতেন বিধমিদের কাছে
তোমরাতো ভাই তাবলিগ কর মুসলমানদের মাঝে ।
উছুল, বেনা বিভিন্ন জিনিষ মানুষকে বুঝাও
তলে তলে নবির শানে বিয়াদবী শিখাও।
উছুল, বেনা একই জিনিষ কেও বুঝেনা তা
জল-আর পানি একই শব্দ, উছুল, বেনা ও তা ।
চলে ফেরায় বুঝাও তোমরা খাটিঁ মুসলমান
মনের মাঝে আছে তোমার বেঈমানি শয়তান।
নবির কথা শেষ জামানায় দাগাবাজ দল হবে
ঘন ঘন সবাই যারা মাথা নেড়া করবে ।
তারা তো সব ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে যাবে
নবির কথায় প্রমান দেখো গাট্রিওয়ালার মাঝে ।
আরফাত আর হজ্জের সাথে ইজতেমার তুলনা
নাম দিয়েছে তাবলীগ জামাত মূলত ছলনা ।।
তাবলীগের অন্তরালে চলছে শয়তানি
ইসলামকে ধংস করছে নিয়ে ইহুদির মা’নী।
কুরান সুন্নায় ছয় উছুলের কোন উল্লেখ নাই
তোমরা যে ভন্ড শয়তান- প্রমান দেখ ভাই ।।
গাট্রিওয়ালা, গাট্রিওয়ালা! তাবলিগ কেন কর ?
ইলিয়াছি তাবলিগ ছেড়ে দিয়ে নবির তাবলিগ ধর ।।
মসজিদে ইমাম সাহেব- মাঠে ওয়ায়েজগন
নবির তাবলিগ করছন তাঁরা- শুন সবক্ষন
মাদ্রাসাতে হুজুরেরা - পড়ান দিন রাত
পীর বুজগ দিন রাত শিখান মারেফত ।।
এর ছেয়ে বড় তাবলিগ আর কি আছে ভাই?
অতিতের পীর বুজগ করতেন সবাই তাই ।
তোমরা কেন নতুন ধম করেছ পত্তন ?
স্বপ্নে প্রাপ্ত ছয় উছুলকে করিয়া যতন ?
ছেড়ে দে ভাই স্যায়িয়াহ বিদাত, বলি শুন ভাই
ঘরের তাবলিগ আগে কর কোরানে বলে তাই ।।
(১) প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকদের লিখিত কিতাবে একথা উল্লেখ আছে যে, “মুর্খ হোক, আলেম হোক, ধনী হোক, দরিদ্র হোক, সকল পেশার সকল মুসলমানের জন্য তাবলীগ করা ফরজে আইন |”
দলীল-হযরতজীর মালফূযাত-৪ পৃষ্ঠা-৭, তাবলীগ গোটা উম্মতের গুরু দায়িত্ব পৃষ্ঠা-৫৩, তাবলীগে ইসলাম পৃষ্ঠা-৩, পস্তী কা ওয়াহেদ এলাজ পৃষ্ঠা-২২
(২) প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকরা বলে থাকে, “বিদায় হজ্বের সময় রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সমস্ত উম্মতের উপর দাওয়াতের কাজকে ফরজ বলে ঘোষণা করেছেন।”
(৩) তারা আরো বলে থাকে, “নামায, রোজা ইত্যাদির মত দাওয়াতের কাজও ফরজ।”
তাদের উপরোক্ত বক্তব্য কতটুকু সঠিক তা এখন আমরা শরীয়তের উছূল পবিত্র কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস উনার দৃষ্টিতে আলোচনা করে দেখবো |
মূলতঃ তাদের উপরোক্ত বক্তব্য অশুদ্ধ ও বিভ্রান্তিকর | কারণ নামায, রোজা, হজ্ব, যাকাত ইত্যাদি হলো প্রত্যেক বালেগ মুসলমানের জন্য ফরজে আইন | আর দাওয়াতে তাবলীগের কাজ আমভাবে ফরজে কেফায়া | মূলতঃ প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকেরা তাবলীগের অর্থ, প্রকারভেদ ও উহার প্রয়োগক্ষেত্র সম্পর্কে নেহায়েত অজ্ঞ ও জাহেল হওয়ার কারণেই উপরোক্ত বক্তব্য পেশ করে থাকে |
তাবলীগের অর্থ ও প্রকার
~~~~~~~~~~~~~~
মূলতঃ তাবলীগ সম্পর্কে বুঝতে হলে প্রথমে তা কত প্রকার ও কি কি এবং তার অর্থ কি, তা জানতে হবে | তাবলীগ শব্দের অর্থ হলো- প্রচার করা | তাবলীগ দু’প্রকার অর্থাৎ সাধারণতঃ ইসলাম দু’ভাবে প্রচার করা হয়ে থাকে- (১) তাবলীগে ‘আম’ বা সাধারণভাবে, (২) তাবলীগে ‘খাছ’ বা বিশেষভাবে | আবার দ্বীন প্রচারকারী মুবাল্লিগ ও দু’প্রকার- (১) মুবাল্লিগে আম (সাধারণ দ্বীন প্রচারক) ও (২) মুবাল্লিগে খাছ (বিশেষ দ্বীন প্রচারক) |
মুবাল্লিগে আম ও তার দ্বীন প্রচারের ক্ষেত্র
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
মুবাল্লিগে আম অর্থাৎ সাধারণ মুবাল্লিগ (দ্বীন প্রচারকারী)- তার বিশেষ কোন যোগ্যতার প্রয়োজন নেই | শুধু দ্বীনী সমঝ বা বুঝ থাকলেই চলবে | সে খাছ বা বিশেষভাবে যেমন ছেলে-মেয়ে, স্ত্রী, ভাই-বোন, ভাতিজা-ভাতিজী ও কর্মচারী তথা তার অধীনস্থ সকলকে দ্বীনী আমলের জন্য তথা দ্বীনদারী হাছিলের জন্য তাকীদ বা উৎসাহিত করবে |
এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ্ পাক উনার পবিত্র কুরআন শরীফ-এর সূরা তাহরীমের ৬নং আয়াত শরীফে বলেন, “হে ঈমানদারগণ! তোমরা তোমাদেরকে এবং তোমাদের পরিবারবর্গকে আগুণ (জাহান্নাম) থেকে বাঁচাও |”
আর বুখারী শরীফ উনার পবিত্র হাদীস শরীফে আল্লাহ্ পাক উনার রসূল সাইয়্যিদুল মুরসালিন, ইমামুল মুরসালিন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “সাবধান! তোমারা প্রত্যেকেই (নিজের অধীনস্থদের ব্যাপারে) রক্ষক এবং প্রত্যেকেই তার রক্ষিত বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে |”
আল্লাহ্ পাক উনার রসূল সাইয়্যিদুল মুরসালিন, ইমামুল মুরসালিন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বুখারী শরীফ উনার পবিত্র হাদীস শরীফে আরো বলেন, “তোমরা আমার থেকে একটি আয়াত (হাদীস) হলেও তা (মানুষের নিকট) পৌছে দাও |”
অন্য হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে- হযরত সাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণ আরজ করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! যতক্ষণ পর্যন্ত না আমরা নিজেরা পুরোপুরিভাবে আমল করবো, ততক্ষণ পর্যন্ত কি আমরা সৎ কাজের আদেশ দিব না? অথবা যতক্ষণ পর্যন্ত না আমরা সমস্ত খারাবী হতে ক্ষান্ত হবো, ততক্ষণ পর্যন্ত কি অসৎ কাজে নিষেধ করবো না? সাইয়্যিদুল মুরসালিন, ইমামুল মুরসালিন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “না বরং তোমরা সৎকাজের আদেশ দান করবে, যদিও তোমরা নিজেরা পুরোপুরিভাবে আমল করতে না পার | তদ্রুপ মন্দ কাজে নিষেধ করবে, যদিও তোমরা নিজেরা পুরোপুরিভাবে তা থেকে বেঁচে থাকতে না পার |” (তিবরানী শরীফ)
সাইয়্যিদুল মুরসালিন, ইমামুল মুরসালিন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেন, “দ্বীন হচ্ছে নছীহত স্বরূপ |”
হযরত সাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণ জিজ্ঞাসা করলেন, কাদের জন্য? নবীজী (ছল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, “আল্লাহ্ পাক উনার জন্য আল্লাহ্ পাক উনার প্রিয় রসূল সাইয়্যিদুল মুরসালিন, ইমামুল মুরসালিন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্য এবং মুসলমানের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের জন্য এবং সাধারণ মুসলমানদের জন্য |” (মুসলিম শরীফ)
উপরোক্ত আয়াত শরীফ ও হাদীস শরীফসমূহ মুবাল্লিগে আম ও মুবাল্লিগে খাছ উভয়ের জন্যই প্রযোজ্য | অর্থাৎ এর হুকুম কারো জন্য নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়নি |
কাজেই যারা মুবাল্লিগে আম, তারা তাদের দায়িত্ব ও ক্ষেত্র অনুযায়ী উপরোক্ত হাদীস শরীফ-এর আমল করবেন | আর যারা মুবাল্লিগে খাছ, তারাও তাদের দায়িত্ব ও যোগ্যতা এবং ক্ষেত্র অনুযায়ী উপরোক্ত হাদীস শরীফ-এর উপর আমল করবেন |
অতএব প্রত্যেক মুবাল্লিগে আম-এর জন্য তার ক্ষেত্র হচ্ছে তার অধীনস্থগণ | যাদেরকে তার তরফ থেকে দ্বীনের জন্য তা’লীম দেয়া ও তাকীদ করা দায়িত্ব ও কর্তব্য | অর্থাৎ এটা হচ্ছে তাবলীগে খাছ যা করা-মুবাল্লিগে আম-এর জন্য ফরজে আইনের অন্তর্ভূক্ত | (তাফসীরে মাযহারী, রুহুল বয়ান, রহুল মায়ানী)
মুবাল্লিগে খাছ ও তার দ্বীন প্রচারের ক্ষেত্র
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
মুবাল্লিগে খাছ (বিশেষ দ্বীন প্রচারক), মুবাল্লিগে আম-এর মত নয় | অর্থাৎ তিনি কেবল তার অধীনস্থদেরই নয় বরং তিনি আমভাবে সকল উম্মতকেই হিদায়েত করার উপযুক্ত | পক্ষান্তরে মুবাল্লিগে আম কেবল তার অধীনস্থদেরই বলার যোগ্যতা রাখেন |
আর যারা খাছ মুবাল্লিগ অর্থাৎ বিশিষ্ট প্রচারক, উনাদের প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ্ পাক বলেন, “তোমাদের মধ্যে এমন একটি সম্প্রদায় হওয়া জরুরী, যারা (মানুষকে) কল্যাণের (কুরআন শরীফ-সুন্নাহ্ শরীফ তথা ইসলামের) দিকে ডাকবে এবং সৎ কাজের আদেশ করবে এবং বদ্ কাজ থেকে নিষেধ করবে, আর তারাই মূলতঃ কামিয়াব |” (সূরা ইমরান/১০৪)
অর্থাৎ তাকে অবশ্যই দ্বীনী বিষয়ে বিশেষ যোগ্যতার অধিকারী হতে হবে এবং ইলমে ফিক্বাহ্ ও ইলমে তাসাউফে বিশেষ দক্ষতা তথা ফরজ, ওয়াজিব ও সু্ন্নত পরিমাণ ইলম, আমল এবং ইখলাছ হাছিল করতে হবে | এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ্ পাক বলেন, “কেন তাদের প্রত্যেক ক্বওম বা ফেরক্বা থেকে একটি দল বের হয়না এজন্য যে, তারা দ্বীনী ইলমে দক্ষতা অর্জন করবে এবং তাদের ক্বওমকে ভয় প্রদর্শন করবে, যখন তারা তাদের নিকট প্রত্যাবর্তন করবে | আশা করা যায়, তারা বাঁচতে পারবে |” (সূরা তওবা/১২২)
(তাফসীরে মাজহারী, রুহুল মা’য়ানী, রুহুল বয়ান, কবীর, ইবনে কাছীর ইত্যাদি)
আর মহান আল্লাহ্ পাক উনার রসূল সাইয়্যিদুল মুরসালিন, ইমামুল মুরসালিন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “তোমরা দ্বীনী ইলম শিক্ষা কর এবং মানুষকে তা শিক্ষা দাও |” (দারেমী, দারে কুতনী, মিশকাত)
মূলতঃ যাঁরা মুবাল্লিগে খাছ, উনাদেরকে অবশ্যই উলামায়ে হক্কানী-রব্বানী হতে হবে | আর হক্কানী-রব্বানী আলেমগণের প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র কুরআন শরীফে ইরশাদ করেন, “নিশ্চয়ই বান্দাদের মধ্যে আলেমরাই আল্লাহ্ পাককে ভয় করেন |” (সূরা ফাতির/২৮)
এ আয়াত শরীফ-এর তাফসীরে হযরত ইমাম আহম্মদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহিকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, “যার মধ্যে যতবেশী আল্লাহ্ ভীতি রয়েছে, তিনি তত বড় আলেম |”
আর পবিত্র হাদীস শরীফে রয়েছে, “(জিজ্ঞাসা করা হলো) আলেম কে? উত্তরে বললেন, যাঁরা ইলম অনুযায়ী আমল করেন | পুণরায় জিজ্ঞাসা করলেন, কোন জিনিস আলেমের অন্তর থেকে ইলমকে বের করে দেয়? তিনি বললেন, লোভ (দুনিয়ার সম্পদ, সম্মান ইত্যাদি হাছিলের আকাঙ্খা) |” (দারেমী, মেশকাত)
অর্থাৎ যিনি ইলম, আমল ও ইখলাছ হাছিল করেছেন, তিনিই হাক্কানী আলেম, আর তিনিই নবী আলাইহিমুস সালামগণের ওয়ারিছ | যাঁদের শানে সাইয়্যিদুল মুরসালিন, ইমামুল মুরসালিন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “আলেমগণ হলেন-নবীগণের ওয়ারিছ বা উত্তরাধিকারী |” (আহমদ, তিরমিযী, আবূ দাউদ, ইবনে মাযাহ, মিশকাত শরীফ)
অর্থাৎ নবী আলাইহিমুস সালামগণের দাওয়াত ও তাবলীগ, তা’লীম ও তালক্বীন এবং হিদায়েতের ক্ষেত্র যেমন আম বা ব্যাপকভাবে উম্মতদের প্রতি প্রযোজ্য, তদ্রুপ উনারা মুবাল্লিগে খাছ, উনারা নবী আলাইহিমুস সালামগণের ওয়ারিছ হওয়ার কারণে তাঁদেরও দাওয়াত ও তাবলীগ, তা’লীম ও তালক্বীন এবং হিদায়েতের ক্ষেত্র আম বা ব্যাপকভাবে উম্মতদের প্রতি প্রযোজ্য | আর এ আম তা’লীম ফরজে কেফায়ার অন্তর্ভূক্ত | যা অতীতে ও বর্তমানে উলামায়ে হক্কানী-রব্বানীগণ তাসাউফ শিক্ষা দিয়ে, মাদ্রাসায় পড়িয়ে, মসজিদে ইমামতি করে, কিতাবাদি লিখে, ওয়াজ-নছীহত করে ইত্যাদিভাবে দাওয়াত ও তা’লীম-তালক্বীন দিয়ে হিদায়েতের কাজ করে মুবাল্লিগে খাছ-এর দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে, তাবলীগে আম-এর (ফরজে কেফায়ার) ও তাবলীগে খাছ-এর (ফরজে আইনের) খেদমতের আঞ্জাম দিয়ে যাচ্ছেন |
মুবাল্লিগে আম-এর জন্য তাবলীগে আম করার হুকুম
এবং মুবাল্লিগে খাছ-এর যোগ্যতা ও তাবলীগে আম-এর শর্ত
--------------------------------------------------------
স্মরণীয় যে, যারা মুবাল্লিগে আম এবং যাদের জন্য শুধু তাবলীগে খাছ করা ফরজে আইন, তাদের জন্য কোন ক্রমেই এবং কশ্মিসকালেও তাবলীগে আম বা ব্যাপকভাবে দ্বীন প্রচার করা (যা মুবাল্লিগে খাছ তথা উলামায়ে হক্কানী-রব্বানীগণের জন্য নির্দিষ্ট তা) জায়েয নেই |
এ প্রসঙ্গে হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত রয়েছে যে, একদিন এক লোক উনার সাক্ষাতে আসলে তিনি তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, “তুমি কি কর? সে জাওয়াব দিল, দ্বীন প্রচার করি | তখন তিনি তাকে বললেন, “তুমি কি ঐ সকল আয়াত শরীফের আমল করেছ? যা পবিত্র কুরআন শরীফে উল্লেখ করা হয়েছে-
(১) সূরা সফের ২নং আয়াত শরীফে মহান আল্লাহ্ পাক বলেন, “হে ঈমানদারগণ! তোমরা যা করনা, তা কেন বল?”
“তুমি কি এ আয়াত শরীফ-এর আমল করেছ?” সে জাওয়াব দিল, না |
(২) তিনি আবার বললেন যে, মহান আল্লাহ্ পাক সূরা বাক্বারার ৪৪নং আয়াত শরীফে বলেছেন, “তোমরা কি মানুষকে সৎ কাজের আদেশ কর, আর নিজেদের ব্যাপারে ভুলে যাও? অথচ তোমরা কিতাব তিলাওয়াত করে থাক |”
“তুমি কি এ আয়াত শরীফ-এর আমল করেছ?” সে জাওয়াব দিল, না |
(৩) পূণরায় তিনি বললেন, “তুমি কি ঐ আয়াত শরীফ-এর আমল করেছ? যা হযরত শোয়াইব আলাইহিস সালাম উনার ক্বওমকে বলেছিলেন, “আমি এটা চাইনা যে, তোমাদেরকে যে কাজ থেকে নিষেধ করি, আমি তার খিলাফ করি | অর্থাৎ আমি যা বলি, তা করি আর যা বলিনা, তা করিনা |” (সূরা হুদ/৮৮)
তুমি কি এ আয়াত শরীফ-এর আমল করেছ? সে জাওয়াব দিল, না |
তখন হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বললেন, “তুমি প্রথমে এ আয়াত শরীফসমূহের আমল কর, অতঃপর তুমি দ্বীন প্রচারের কাজে নিজেকে নিয়োজিত কর |” অর্থাৎ উপরোক্ত আয়াত শরীফ উনার আমল ব্যতিরেকে তাবলীগে আম করা জায়েয নেই |
উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা এটাই প্রমাণিত হলো যে, তাবলীগে খাছ মুবাল্লিগে আম ও খাছ উভয়ের জন্যেই ফরজে আইন | আর তাবলীগে আম শুধুমাত্র মুবাল্লিগে খাছ তথা হক্কানী আলেমগণের জন্যই প্রযোজ্য, যা উনাদের জন্যে ফরজে কেফায়ার অন্তর্ভূক্ত | অতএব, মুবাল্লিগে আম বা সাধারণ লোকদের জন্যে তাবলীগে আম করা কখনো শুদ্ধ হবেনা বরং তাদের জন্যে তা করা সম্পূর্ণ নাজায়েয ও হারাম হবে |
বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য যে, বর্তমানে প্রচলিত ছয় উছূল ভিত্তিক তাবলীগ যাকে তাবলীগ জামায়াতের লোকেরা তাবলীগে আম বলে থাকে, (যা প্রকৃতপক্ষে মক্তবী শিক্ষার অন্তর্ভূক্ত যদি আক্বীদা শুদ্ধ হয়ে থাকে) যদি তাদের কথা মোতাবেক সেটাকে তাবলীগে আম ধরা হয়, তাহলে তো অবশ্যই সেটা মুবাল্লিগে খাছ-এর জন্য করা উচিৎ ছিল | অথচ তা এমন সব লোকেরা করে থাকে যারা মুবাল্লীগে খাছ তো নয়ই, বরং তাদের মধ্যে অনেকেই মুবাল্লিগে আম-এরও উপযুক্ত নয় | যদিও কিছু সংখ্যক মুবাল্লিগে আম রয়েছে |
অতএব তাবলীগে আম মুবাল্লিগে খাছ-এর জন্যই করা ফরজে কেফায়া | যা মুবাল্লিগে আম-এর জন্য করা সম্পূর্ণ নাজায়েয ও হারাম | আর সাধারণ লোকদেরতো প্রশ্নই উঠেনা |
এখন হয়তো কেউ প্রশ্ন করতে পারে যে, অনেক সময় দেখা যায় এমন কতক লোক, যারা মুবাল্লিগে খাছ ও আম কোনটাই নয়, তারা অনেকেই নামাজের জামায়াতে যাওয়ার সময় বা নামাজ পড়ার সময় অন্যকে নামাজে ডেকে নিয়ে যায়, রোজার মাসে রোজা রাখার কথা বলে, ইত্যাদি অনেক নেক কাজের কথাই বলে থাকে, যা তাদের দায়িত্বের অন্তর্ভূক্ত ছিলনা তবে সেটার ফায়সালা কি?
এর ফায়সালা হলো, ঐ সকল লোক মুসলিম শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত হাদীস শরীফ, “দ্বীন হচ্ছে অপরের ভাল কমনা করা |”-এর মেছদাক বা নমুনা | অর্থাৎ এদেরকে কেউ হিদায়েতের দায়িত্ব দেয়নি বা এরা হিদায়েতের ব্যাপারে কোন দায়িত্ব গ্রহণ করেনি | এরা হচ্ছে মানুষের খয়েরখাঁ বা হিতাকাঙ্খী |
এখানে উল্লেখ্য যে, ১ম পর্বে উল্লেখিত তিবরানী শরীফ উনার হাদীস শরীফে দেখা যাচ্ছে যে, সৎকাজ না করলেও অপরকে সৎ কাজ করতে বলা হয়েছে | অথচ পবিত্র কুরআন শরীফে মহান আল্লাহ্ পাক বলেন, “তোমরা ঐ কথা বল কেন, যা তোমরা নিজেরা করোনা |”
তাহলে এই আয়াত শরীফ ও হাদীস শরীফ উনার বক্তব্যের মধ্যে ফায়সালা কি?
মূলতঃ এর ফায়সালা উলামায়ে মুহাক্কিক, মুদাক্কিকগণ দিয়েছেন | উনাদের মতে তিবরানী শরীফ উনার হাদীস শরীফে সৎ কাজ না করলেও সৎ কাজের দাওয়াত দেয়ার যে কথা বলা হয়েছে, তা মুবাল্লিগে আম-এর জন্য | যেমন কোন বাবা নিজে নামাজ বা অন্যান্য নেক কাজ না করা সত্বেও তার সন্তান ও অধীনস্থদের নামাজ বা অন্যান্য নেক কাজের জন্য বলতে পারেন |
আর পবিত্র কুরআন শরীফ উনার উক্ত আয়াত শরীফে নিজে সৎ কাজ না করে অপরকে তা বলার জন্য যে নিষেধবাণী করা হয়েছে, তা হলো- মুবাল্লিগে খাছ-এর জন্য | অর্থাৎ মুবাল্লিগে খাছ-এর জন্য নিজে কোন সৎ কাজ না করে অপরকে তা করতে বলা জায়েয নেই |
এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীস শরীফে উল্লেখ আছে যে, “সাইয়্যিদুল মুরসালিন, ইমামুল মুরসালিন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন মি’রাজ শরীফে যান, তখন দেখলেন কিছু লোকের জিহ্বা আগুনের কেঁচি দ্বারা কাটা হচেছ | তখন জিজ্ঞাসা করা হলো- এরা কারা? হযরত জিব্রাঈল আলাইহিস সালাম বললেন, এরা ঐসকল লোক, যারা অন্যকে নেক কাজের উপদেশ দিতো কিন্তু নিজেরা তা করতো না |”
ওতএব প্রমাণিত হলো যে, যারা মুবাল্লিগে আম, তারা তিবরানী শরীফ উনার বর্ণনা মোতাবেক সৎকাজ না করেও অপরকে সৎকাজ করার কথা বলতে পারবেন | আর যারা মুবাল্লিগে খাছ, তারা পবিত্র কুরআন শরীফ উনার উক্ত আয়াত শরীফ মোতাবেক নিজে সৎকাজ না করে অপরকে সৎকাজ করার কথা বলতে পারবেন না | কারণ যদি সকলের জন্যে আমভাবে একথা বলা হয় যে, সৎকাজ না করেও অপরকে সৎকাজের কথা বলা জায়েয, তবে মি’রাজ শরীফ উনার হাদীস শরীফে বর্ণিত লোকদের জিহ্বা কাটা হলো কেন? এতে বুঝা গেল যে, তিবরানী শরীফ উনার উক্ত হুকুম সকলেন জন্যে প্রযোজ্য নয় | বরং যারা মুবাল্লিগে আম, তাদের জন্যেই প্রযোজ্য | আর পবিত্র কুরআন শরীফ উনার উক্ত আয়াত শরীফ ও মি’রাজ শরীফ সম্পর্কিত হাদীস শরীফখানা যারা মুবাল্লিগে খাছ, তাদের জন্যে প্রযোজ্য |
সুতরাং হাক্বীক্বতে উক্ত হাদীস শরীফ ও আয়াত শরীফ উনার মধ্যে কোন দ্বন্দ্ব নেই | অনেকে ব্যাখ্যা না জানার কারণে এ ব্যাপারে বিভ্রান্তিমূলক কথাবার্তা বলে থাকে | মূলতঃ উক্ত আয়াত শরীফ ও হাদীস শরীফ যার যার ক্ষেত্র অনুযায়ী প্রযোজ্য ও অনুসরণীয় |
এছাড়া নিজের অধীনস্থ পরিবার পরিজনের উপরে মুবাল্লিগে আম হিসেবে দ্বীনের তাবলীগ করা ফরজ কিন্তু আত্মীয়-স্বজনদের উপরে আমভাবে দ্বীনের তাবলীগ করা ফরজ নয় | বরং কেবল মাত্র মুবাল্লিগে খাছ হলেই তার জন্য আত্মীয়-স্বজন ও অন্যান্যদেরকে দ্বীনের তাবলীগ করা ফরজে কেফায়াহ
এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ্ পাক সূরা তওবার ১২২নং আয়াত শরীফে বলেন, “সকল মু’মিনদের জন্য একসাথে কোন কাজে বের হওয়া উচিৎ নয় |”
ইমাম, মুজতাহিদগণ এই আয়াত শরীফ থেকে উছূল বের করেছেন যে, মু’মিনদের জন্য সমষ্টিগতভাবে কোন কাজ করা ফরজে আইন নয় বরং তা ফরজে কেফায়ার অন্তর্ভূক্ত | (তাফসীরে মাজহারী, রুহুল মা’য়ানী, রুহুল বয়ান, ফাতহুল ক্বাদীর ইত্যাদি)
অর্থাৎ মুসলমানদের জন্য যেসব কাজ সমষ্টিগতভাবে করতে হয়, সেটা ফরজে কেফায়ার অন্তর্ভূক্ত | তা কখনো ফরজে আইন নয়, যা উপরোক্ত আয়াত শরীফে উল্লেখ করা হয়েছে |
অতএব যদি কেউ বলে- মূর্খ হোক, আলেম হোক, ধনী হোক, দরিদ্র হোক, সকল পেশার সকল মুসলমানের জন্য তাবলীগ করা ফরজে আইন | তবে তা সম্পূর্ণই কুরআন শরীফ-সুন্নাহ্ শরীফ ও ইজমা-ক্বিয়াসের খিলাফ বা পরিপন্থী হবে | আর ফরজে কেফায়াকে ফরজে আইন বলাও হারাম ও কুফরীর নামান্তর, যা থেকে বেঁচে থাকা প্রত্যেক মুসলমানের জন্যই ওয়াজিব |
আর বিদায় হজ্বের ভাষণে সাইয়্যিদুল মুরসালি, ইমামুল মুরসালিন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে বক্তব্য প্রদান করেছেন, প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকদের ইলম বকদরে নেছাব হওয়ার কারণে, তাদের অজ্ঞতা ও জেহালতের জন্য সে হাদীস শরীফ যথাযথভাবে বুঝতে না পেরে তার অপব্যাখ্যা করছে | যেমন তারা বলে থাকে যে, “সমস্ত উম্মতের উপরে দাওয়াতের কাজকে ফরজ করেছেন |”
মূলতঃ বিদায় হজ্বের ভাষণে হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন- “তোমরা যারা উপস্থিত রয়েছ, তারা অনুপস্থিত ব্যক্তিদেরকে আমার কথা পৌছে দিবে |”
আলোচ্য হাদীস শরীফে আল্লাহ পাক উনার রসূল সাইয়্যিদুল মুরসালিন, ইমামুল মুরসালিন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিশেষ করে হযরত সাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের মধ্যে যাঁরা তখন আরাফার ময়দানে উপস্থিত ছিলেন, কেবলমাত্র উনাদেরকে লক্ষ্য করেই একথা বলেছেন, এর দ্বারা সমস্ত উম্মতদেরকে বুঝায় না | কারণ যাঁরা সেখানে অনুপস্থিত ছিলেন, উনাদের প্রতি উক্ত নির্দেশ বর্তায় না | এছাড়া সমস্ত সাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালাগণই হলেন মুবাল্লিগে খাছ এবং সে দায়িত্ব উনারা যথাযথ ভাবেই পালন করেছেন | কাজেই হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বানী দ্বারা সমস্ত উম্মতের উপরে দাওয়াতের কাজকে ফরজ করা হয়নি বরং এ হুকুম শুধুমাত্র হযরত সাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণ ও মুবাল্লিগে খাছদের উপরে বর্তায় |
৬ (ছয়) উছূলী ভিত্তিক তাবলীগ জামায়াতের বক্তব্যের খন্ডনমূলক জবাব-
হযরতজীর মলফূজাত, পৃষ্ঠা-৪৭, ৫০নং মলফূয, শরীয়তের দৃষ্টিতে তাবলীগী নেছাব পৃষ্ঠা ১৫, হযরতজী ইনয়ামের তর্ক ও বাহাছ পৃষ্ঠা-১২, তাবলীগ পরিচয় পৃষ্ঠা-১৭, তাবলীগ দর্পণ পৃষ্ঠা-৬২ ইত্যাদি কিতাব সমূহের বর্ণনা অনুযায়ী “ইলিয়াস ছাহেব বিশেষ স্বপ্নের মাধ্যমে এ তাবলীগের নির্দেশ পেয়েছেন |” আবার কারো কারো মতে “হিন্দু জমিদারদের কারণে মুসলমানগণ প্রায় হিন্দু হয়ে পড়লে, ইলিয়াস ছাহেব এ তাবলীগের উদ্যোগ নেন | তাবলীগের কাজ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পর ইলিয়াস ছাহেবই পূনরুজ্জীবিত করেন |”
আমাদের জবাব-
উল্লেখ্য ইলিয়াস ছাহেব যদি স্বপ্নের মাধ্যমে ছয় উছূলী তাবলীগ জামায়াতের কাজের নির্দেশ পেয়ে থাকেন, তবে তা তার জন্য নিতান্ত ব্যক্তিগত ব্যাপার হিসেবে গণ্য হবে, যা অপরের জন্য আদৌ দলীল নয় | কারণ স্বপ্ন আরেকজনের জন্য দলীল নয়, এর উপরই ফতওয়া |
আর ইলিয়াস ছাহেব যদি তার এলাকার মুসলমানের দুরাবস্থার কারণে ছয় উছূলী তাবলীগ জামায়াতের কাজের ব্যবস্থা করে থাকেন, তবে তাও তার ব্যক্তিগত উদ্যোগ মাত্র | কিন্তু যখনই বলা হবে যে, তাবলীগের কাজ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পর ইলিয়াস ছাহেবই পূনরুজ্জীবিত করেছে, তবে তা হবে সম্পূর্ণই অশুদ্ধ, নাজায়েয ও কুফরী |
কারণ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যামানায় প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগ জামায়াতের কোন অস্তিত্বই ছিলনা | বরং তা মাওলানা ইলিয়াস ছাহেব কর্তৃক উদ্ভাবিত একটি বিদয়াত বা নতুন উদ্ভাবিত পন্থা | সুতরাং তার পূনরুজ্জীবনের কোন প্রশ্নই আসেনা |
উল্লেখ্য, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনি করেছেন পরিপূর্ণ ইসলামের তাবলীগ | যার অন্তর্ভূক্ত ছিল সম্পূর্ণ শরীয়ত তথা ইলমে ফিক্বাহ্, ইলমে তাসাউফ, দাওয়াত, তাবলীগ, জ্বিহাদ, হুকুমাত ইত্যাদি সব কিছুই |
অতএব ইলিয়াস ছাহেব যে তাবলীগ করেছেন, তা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনি যে তাবলীগ করেছেন তার পূনরুজ্জীবন তো নয়ই, এমনকি তার পূর্ণ অনুসরণ পর্যন্ত নয় |
আরো উল্লেখ্য যে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনি যে তাবলীগ করেছেন, তার অনুসরণ পূর্ণভাবে করেছেন- হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ থেকে শুরু করে তাবেয়ীন, তাবে-তাবেয়ীন, ইমাম-মুজতাহিদ ও প্রত্যেক যামানার আওলিয়া-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ |
মূলতঃ তাবলীগের কাজ কোনদিনই থেমে থাকেনি | হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের ধারাবাহিকতায় অতীতেও চলেছে এবং এখনও চলছে, এর বিরতি কোনদিনই হয়নি | অতএব যে কাজের গতিধারা সবসময়েই প্রবাহমান বা বিরাজমান, তার আবার পূনরুজ্জীবন কি করে হতে পারে? তাই কেউ যদি বলে যে, ইলিয়াস ছাহেব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পর তাবলীগের পূনরুজ্জীবন দান করেছেন, তাহলে সে কথা কুফরী হবে | কারণ এ কথার অর্থ তাহলে এই দাঁড়ায় যে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও প্রচলিত ছয় উছূল ভিত্তিক তাবলীগ করেছেন | অথচ প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের তর্জ-তরীক্বা মাত্র প্রায় ৯০ বছর পূর্বে উদ্ভাবন করা হয়েছে | কাজেই তাদের এ বক্তব্য হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নামে মিথ্যারোপ করার শামিল, যা স্পষ্টতঃ কুফরী |
এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
من كذب على متمدا فاليتبؤا مقعده من النار
অর্থঃ- “যে স্বচ্ছায় আমার নামে মিথ্যা কথা বলে, সে যেন দুনিয়ায় থাকতেই তার স্থান জাহান্নামে নির্ধারণ করে নেয় |” (তিরমিযী শরীফ, ইবনে মাজাহ শরীফ, মেশকাত শরীফ, মেরকাত শরীফ ইত্যাদি)
এখানে উল্লেখ্য যে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পরে ইলিয়াস ছাহেব তাবলীগ পূনরুজ্জীবিত করেছে, এই কথা যদি বলা হয়, তাহলে প্রশ্ন উঠে যে, খোলাফা-ই-রাশেদীন, হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ, তাবেয়ীন, তাবে-তাবেয়ীন, ইমাম-মুজতাহিদ, মুজাদ্দিদ, আওলিয়া-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ কি দ্বীনের প্রচার-প্রসার, তা’লীম-তালক্বীন, দাওয়াত-তাবলীগ, দর্স-তাদরীস, ইজতিহাদ-তাজদীদ, জ্বিহাদ, হুকুমত পরিচালনা ইত্যাদি করেননি? অথচ পবিত্র হাদীছ শরীফে রয়েছে,
ان الله يبعث لهذه الامة على رأس كل مأة سنة من يجددلها دينها
অর্থঃ- “নিশ্চয়ই আল্লাহ্ পাক প্রত্যেক হিজরী শতকের শুরুতে এই উম্মতের (ইসলাহর) জন্য একজন মুজাদ্দিদ প্রেরণ করেন, যিনি দ্বীনের তাজদীদ করবেন |” (আবূ দাউদ শরীফ, বজলুল মাজহুদ, মেশকাত, মেরকাত ইত্যাদি)
প্রদত্ত হাদীছ শরীফের প্রেক্ষিতে তাহলে এ যাবত যাঁরা মুজাদ্দিদ হিসেবে এসেছেন, উনারা কি তাজদীদ-ইজতিহাদ, তাবলীগ ও দাওয়াতের কাজ করেননি?
মূলতঃ উনারা সকলেই হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুন্নত মুতাবেক বর্ণিত দ্বীনের দাওয়াত বা কার্যাবলী যথাযথভাবে আঞ্জাম দিয়েছেন |
অতএব, কি করে এটা বলা যেতে পারে যে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পরে ইলিয়াস ছাহেব তাবলীগ পূনরুজ্জীবিত করেছেন | বস্তুতঃ তাদের এ বক্তব্য সম্পূর্ণ মনগড়া, বিভ্রান্তিকর, কল্পনাপ্রসূত ও কুফরীর অন্তর্ভূক্ত |
অতএব প্রচলিত ৬(ছয়) উছূল ভিত্তিক তাবলীগ জামায়াতের লোকদের উপরোক্ত আক্বীদা পোষণ করা হতে বিরত থাকা ওয়াজিব |
৬ (ছয়) উছূল ভিত্তিক প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের বক্তব্যের খন্ডনমূলক জবাব
মাওলানা ইসমাইল হোসেন দেওবন্দী লিখিত “তাবলীগ গোটা উম্মতের গুরু দায়িত্ব” নামক কিতাবের ৯৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে যে, “লক্ষাধিক ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের মধ্যে অধিকাংশই মূর্খ ছিলেন |” (নাউযুবিল্লাহ) (অনুরূপ শরীয়তের দৃষ্টিতে তাবলীগী নেছাব, যার মূল হযরত জাকারিয়া প্রণীত- ১৩ পৃষ্ঠা, তাবলীগী জামায়াতের প্রধানের তর্ক ও ইচ্ছা নামক কিতাবের ৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে)
আমাদের জবাব-
হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণকে মূর্খ বলা শক্ত হারাম ও কুফরী | মূর্খ শব্দটি হচ্ছে- একটি অশালীন শব্দ ও গালি, যা হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের শানের সম্পূর্ণ খেলাফ | মূলতঃ এরূপ শব্দ উনাদের শানে ব্যবহার করা, উনাদেরকে এহানত করার শামিল | এ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআন শরীফে মহান আল্লাহ্ পাক ইরশাদ মুবারক করেন, “তোমরা পরষ্পর পরষ্পরকে দোষারোপ করোনা এবং পরষ্পর পরষ্পরকে অশোভনীয় লক্বব (উপাধি) দ্বারা সম্বোধন করোনা | (কেননা) ঈমান আনার পর অশ্লীল নাম দ্বারা ডাকা গুণাহ্ এবং যারা এটা হতে তওবা করলো না তারা জালিমের অন্তর্ভূক্ত |” (সূরা হুজরাত/১১)
উপরোক্ত আয়াত শরীফে মহান আল্লাহ্ পাক আমাদের একে অপরকে দোষারোপ করতে এবং অশ্লীল, খারাপ শব্দ দ্বারা সম্বোধন করতে নিষেধ করেছেন | আর এও বলেছেন যে, ঈমান গ্রহণের পর খারাপ নামে সম্বোধন করা গুণাহের কাজ | (খাযেন, বাগবী, ইবনে কাছীর, ইবনে আব্বাস ইত্যাদী সকল তাফসীর সমূহ)
আর মহান আল্লাহ্ পাক উনার রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “আমার ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ এক মুদ বা অর্ধ মুদ গম আল্লাহর রাস্তায় দান করে যে ফযীলত অর্জন করেছেন, তোমরা উহুদ পাহাড় পরিমাণ স্বর্ণ দান করেও তার সমান ফযীলত হাছিল করতে পারবে না |” (বুখারী শরীফ, ফতহুল বারী, ওমদাতুল ক্বারী ইত্যাদী)
এ হাদীছ শরীফে হুযূর পাক ছল্লাল্লহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণকে গালী দেয়াকে সম্পূর্ণরূপে নিষেধ করে দিয়েছেন |
উপরোক্ত আয়াত শরীফ ও হাদীছ শরীফ দ্বারা এটাই প্রমাণিত হয় যে, হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণকে কোন অবস্থাতে গালী দেয়া তো যাবেইনা বরং কোন প্রকার অশোভণীয়, অপছন্দনীয় শব্দ দ্বারাও সম্বোধন করা যাবেনা | এরূপ করলে আল্লাহ্ পাক ও উনার রসূল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কষ্টের কারণ হবে | আর যে তা করবে সে লা’নতের উপযুক্ত হবে |
এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ্ পাক পবিত্র কালামুল্লাহ্ শরীফে ইরশাদ মুবারক ফরমান, “নিশ্চয় যারা আল্লাহ্ পাক এবং উনার রসূল (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উনাকে কষ্ট দেয়, তাদের জন্য দুনিয়া এবং আখেরাতে আল্লাহ্ পাক উনার পক্ষ থেকে অভিসম্পাত এবং তাদের জন্য রয়েছে লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি |” (সূরা আহযাব/৫৭)
এ আয়াত শরীফের ব্যাখ্যায় সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “আল্লাহ্ পাককে ভয় কর, আল্লাহ্ পাককে ভয় কর, আমার ছাহাবা-ই-কিরাম সম্পর্কে | আমার পরে উনাদেরকে তিরস্কারের লক্ষ্যস্থল করোনা | উনাদেরকে যারা মহব্বত করলো, তা আমাকে মহব্বত করার কারণেই | এবং উনাদের প্রতি যারা বিদ্বেষ পোষণ করলো, তা আমার প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করার কারণেই | উনাদেরকে যারা কষ্ট দিল, তারা আমাকেই কষ্ট দিল | আর আমাকে যারা কষ্ট দিল, তারা আল্লাহ পাক উনাকেই কষ্ট দিল | আর যারা আল্লাহ্ পাক উনাকে কষ্ট দিল, তাদেরকে আল্লাহ্ পাক অতি শিঘ্রই পাকড়াও করবেন |” (বুখারী শরীফ, ফতহুল বারী, ওমদাতুল ক্বারী ইত্যাদী)
উপরোক্ত আলোচানা দ্বারা এটাই প্রতীয়মান হয় যে, হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণকে গালী-গালাজ করা, তিরস্কারের লক্ষ্যস্থল করা ইত্যাদি সবকিছুই নাজায়েয, হারাম, কুফরী ও লা’নতের কারণ | কাজেই প্রত্যেক হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের প্রতি সুধারণা ও সঠিক আক্বীদা পোষণ করা এবং উনাদেরকে মহব্বত করা ঈমাণের অঙ্গ | কারণ আল্লাহ্ পাক স্বয়ং হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ সম্পর্কে পবিত্র কুরআন শরীফের একাধিক স্থানে বলেন, “আল্লাহ্ পাক ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের উপর সন্তুষ্ট, উনারাও আল্লাহ্ পাক উনার উপর সন্তুষ্ট |” (সূরা মায়েদা/১১৯, সূরা তওবা/১০০, সূরা বাইয়্যনাহ্/৮)
আর তাই হযরত ইমামে আযম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি, উনার বিশ্ব বিখ্যাত আক্বাইদের কিতাবে উল্লেখ করেন, “আমরা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রত্যেক হযরত ছাহাবা-ই-কিরামগণকেই সুধারণার সাথে স্মরণ করি |” (ফিক্বহুল আকবর)
মূলতঃ সকল ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণই দ্বীন সম্পর্কে গভীর ইলমের অধিকারী ছিলেন | তাই পবিত্র কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফের অসংখ্য স্থানে হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের অনুসরণ করাকে আল্লাহ্ পাক উনার সন্তুষ্টি লাভের পূর্ব শর্ত বলে উল্লেখ করা হয়েছে | তা সর্বজন স্বীকৃত যে, মূর্খ লোক কখনো অনুসরণীয় ও আল্লাহ্ পাক উনার সন্তুষ্টি লাভের মাধ্যম হতে পারেনা |
এখানে উল্লেখ্য যে, হাদীছ শরীফ দ্বারা সুস্পষ্টভাবেই প্রমাণিত যে, হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের প্রত্যেকেই গভীর ইলমের অধিকারী ছিলেন, যেমন হাদীছ শরীফে উল্লেখ আছে, “হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহ্ তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত, “যে ব্যক্তি শরীয়তের সঠিক তরীকা অনুসরণ করতে চায়, তার উচিত যাঁরা অতীত হয়েছেন, অর্থাৎ হযরত মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রিয় ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের অনুসরণ করা | কেননা জীবিত লোকেরা ফিৎনা হতে নিরাপদ নয় | আর হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণই উম্মতের মধ্যে সর্বোত্তম, উনারা আত্মার দিক দিয়ে অধিক পবিত্র, ইলমের দিক দিয়ে গভীর ইলমের অধিকারী, উনারা লোক দেখানো কোন আমল করতে জানেন না | আল্লাহ্ পাক উনাদেরকে দ্বীন প্রতিষ্ঠার জন্যে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথী হিসাবে মনোনীত করেছেন |
সুতরাং উনাদের মর্যাদা-মর্তবা, ফাযায়েল-ফযীলত, শান-শওকত সম্পর্কে অবগত হও এবং উনাদের কথা ও কাজের অনুসরণ কর এবং যথাসম্ভব উনাদের সীরত-ছুরতকে গ্রহণ কর, কারণ উনারা হিদায়েত ও “সিরাতুল মুস্তাকীম”-এর উপর দৃঢ় ছিলেন |” (রযীন, মেশকাত, মেরকাত, আশয়াতুল লুময়াত ইত্যাদি)
এখানে লক্ষণীয় বিষয় এই যে, উক্ত হাদীছ শরীফে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহ্ আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ গভীর ইলমের অধিকারী |” আর ছয় উছূলী তাবলীগ ওয়ালারা বলছে, উনাদের মধ্যে অনেকেই মূর্খ ছিলেন | তাদের এ বক্তব্য সম্পূর্ণ হাদীছ শরীফের বিপরিত, যা কুফরীর অন্তর্ভূক্ত |
প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ করা যেতে পারে যে, হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের পক্ষে কি করে মূর্খ থাকা সম্ভব হতে পারে? যেখানে সাধারণ মানুষ যখন আল্লাহ্ পাক উনার ওলী হন, তখন উনার পক্ষে মূর্খ থাকা সম্ভব হয়না | কারণ তিনি আল্লাহ্ পাক উনার তরফ থেকে খোদায়ী ইলম বা ইলমে লাদুন্নী প্রাপ্ত হয়ে আলেম হন |
এর হাজারো উদাহরণ রয়েছে | তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- হযরত আবুল হাসান খারকানী রহমতুল্লাহি আলাইহি | যিনি প্রথম জীবনে কোথাও তেমন লেখাপড়া করেননি এবং ক্ষেত-খামারে কাজ করে দিন যাপন করতেন | কিন্তু উনার ভেতরে আল্লাহ্ পাক উনার মহব্বত থাকার কারণে তিনি প্রতিদিন ইশার ওয়াক্তে সুলতানুল আরেফীন, হযরত বায়েযীদ বোস্তামী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মাজার শরীফে গিয়ে সারা রাত্র অবস্থান করে যিকির-আযকার, মুরাকাবা-মুশাহাদা ইত্যাদিতে সময় কাটাতেন | আর দোয়া করতেন, “আয় আল্লাহ্ পাক! আপনার ওলী, সুলতানুল আরেফীন, হযরত বায়েযীদ বোস্তামী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার খাঞ্চা থেকে আমাকে উনার উসীলায় কিছু নিয়ামত দান করুন |
এভাবে প্রায় বিশ বছর অতিবাহিত হয়ে গেল | যেদিন বিশ বছর পূর্ণ হলো, সেদিন যখন তিনি বাড়ী ফিরছিলেন, তখন মাজার শরীফে বিকট এক আওয়াজ হলো | তিনি মাজার শরীফের দিকে লক্ষ্য করলেন যে, মাজার শরীফ দু’ভাগ হয়ে তার মাঝে একজন নূরানী ছূরতের লোক দাঁড়িয়ে আছেন | তিনি উনাকে নিজের দিকে ডাকলেন | তিনি জিজ্ঞেস করলেন, “তোমার নাম কি?” তিনি বললেন, “আবুল হাসান |” “থাকো কোথায়?” “খারকান শহরে |” “কি কর?” “ক্ষেত-খামারে কাজ করি |” “এখানে কি কর?” “এখানে প্রতিদিন ইশার পরে আসি, মাজার শরীফ যিয়ারত করি, কিছু যিকির-আযকার, তাসবীহ-তাহলীল ও দোয়া পাঠ করি, অতঃপর ফজর পড়ে চলে যাই |” “কি বল এখানে তুমি?” আমি এখানে বলি, “আল্লাহ্ পাক! আপনার ওলী সুলতানুল আরেফীন, হযরত বায়েযীদ বোস্তামী রহমতুল্লাহি আলাইহি এখানে শায়িত আছেন, উনার উসীলায় আমাকে কিছু নিয়ামত দান করুন |” “এভাবে কতদিন হলো?” “আজকে প্রায় ২০ বৎসর |” শুনে নূরানী ছূরতধারী ব্যক্তি আশ্চার্যান্বিত হয়ে বললেন, “বিশ বছর!” অতঃপর নিজের পরিচয় দিয়ে বললেন, “আমিই বায়েযীদ বোস্তামী রহমতুল্লাহি আলাইহি |” এরপর তিনি নিজের হাত দিয়ে উনার পিঠের মধ্যে আস্তে করে থাপ্পর দিয়ে বললেন- “যাও আমিও সুলতানুল আরেফীন, আর আজ থেকে তুমিও সুলতানুল আরেফীন |” (সুবহানাল্লাহ্) (তাজকেরাতুল আওলিয়া)
এ ঘটনার পর হযরত আবুল হাসান খারকানী রহমতুল্লাহি আলাইহি বাড়ী ফিরে আসলেন এবং এরপরে আস্তে আস্তে করে উনার ভেতরে ইলমে লাদুন্নীর মাধ্যমে উনার ইলম বৃদ্ধি পেতে লাগলো | এভাবে আস্তে আস্তে তিনি আল্লাহ্ পাক উনার খালেছ ওলী হয়ে গেলেন এবং পরবর্তীতে লোকজনকে বাইয়াত করাতে লাগলেন |
এদিকে সে এলাকায় ছিল একটা বড় মাদ্রাসা | সেখানে কিছু উলামায়ে হক্ব ছিলেন | উনারা মনে মনে চিন্তা করলেন- আবুল হাসান খারকানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তো কোন লেখাপড়া জানতেন না, তিনি লোক বাইয়াত করান, উনাকে একটু পরীক্ষা করতে হবে | এজন্য উনারা একশ’টা মাসয়ালা জিজ্ঞাসা করার জন্য রওয়ানা হলেন | তখন আবুল হাসান খারকানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ঘরের বারান্দায় পায়চারী করতে ছিলেন | ঘরের সামনে ছিল একটা বাগান, আর বাগানের মধ্যে একজন মালি কাজ করছিল | যখন সেই সমস্ত আলেম সম্প্রদায় মাসয়ালা জিজ্ঞাসা করার জন্য আসছিলেন, হযরত আবুল হাসান খারকানী রহমতুল্লাহি আলাইহি সেই মালীর প্রতি একটা দৃষ্টি দিলেন | দৃষ্টি দেয়ার সাথে সাথে মালি মস্তান হয়ে গেল, মজ্জুব হয়ে গেল | সে লাফাতে লাগলো | লাফাতে লাফাতে বলতে লাগলো, হুযূর বেয়াদবী মাফ করবেন | এই যে আলেম সম্প্রদায় আসছেন, উনারা আপনাকে মাসয়ালা জিজ্ঞাসা করবেন | আপনি কি জবাব দিবেন, আমিই জবাব দিয়ে দেই | সেই মালি এক এক করে সেই একশ’জন আলেমের নাম বলে উনাদের মাসয়ালার জবাব বলে দিলেন | (সুবহানাল্লাহ্) তখন সেই সমস্ত আলেম উনার কাছে দিয়ে বাইয়াত হয়ে গেলেন | (সুবহানাল্লাহ) (তাজকেরাতুল আওলিয়া) বর্ণিত ঘটনা সাপেক্ষে দু’টি বিষয় বিশেষভাবে ফিরিকযোগ্য যে, হযরত আবুল হাসান খারকানী রহমতুল্লাহি আলাইহি যেমন ওলী আল্লাহর ছোহবতের কারণে ইলমে লাদুন্নী প্রাপ্ত হয়ে ছিলেন, তেমনি উনার নেক দৃষ্টির কারণে বা ছোহবতের কারণে উনার বাগানের মালীও ইলমে লাদুন্নী প্রাপ্ত হয়ে, গভীর ইলমের অধিকারী হয়ে, আলেম সম্প্রদায়ের একশত মাসয়ালার সঠিক, সম্পূর্ণ ও উত্তম জবাব দিয়েছিলেন |
সুতরাং এখানে প্রশ্ন দাঁড়ায়, ওলী আল্লাহর ছোহবতের কারণেই যদি ইলমে লাদুন্নী প্রাপ্ত হয়ে আলেম হওয়া যায়, তবে হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগন কি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছোহবত পেয়ে ইলমে লাদুন্নী প্রাপ্ত হননি? অবশ্যই হয়েছেন, বরং উনারা দ্বীনের গভীর ইলম অর্জন করে উম্মতের মধ্যে শ্রেষ্ঠত্ব ও অশেষ ফযীলত অর্জন করেছেন | বস্তুতঃ উনাদের হাক্বীক্বী ফযীলত না জানার কারণেই উনাদের শানে এরূপ কথা বলে থাকে | হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগনকে যে আল্লাহ্ পাক কত ফযীলত দান করেছেন, তা নিন্মোক্ত বর্ণনা দ্বারা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় |
আমীরুল মু’মিনীন ফিল হাদীছ হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে মুবারক রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে জিজ্ঞাসা করা হলো যে, “হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু শ্রেষ্ঠ, না হযরত উমর ইবনে আব্দুল আযীয রহমতুল্লাহি আলাইহি শ্রেষ্ঠ? তিনি বলেন, খোদার কসম! হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু যখন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে ঘোড়ায় চড়ে জিহাদে যেতেন, তখন ঘোড়ার নাকে যে ধুলাবালিগুলো প্রবেশ করতো, সে ধুলাবালিগুলোও শত শত হযরত উমর ইবনে আব্দুল আযীয রহমতুল্লাহি আলাইহি হতে বহুগুণে শ্রেষ্ঠ | (ফতওয়ায়ে হাদীসিয়াহ)
উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের সকলেই অশেষ ও গভীর ইলমের অধিকারী ছিলেন | অর্থাৎ প্রত্যেকেই দ্বীনের প্রকৃত আলেম ছিলেন | উনাদের কোন একজনকেও মূর্খ বলা, পবিত্র কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফের বিরোধিতারই শামিল, যা সম্পূর্ণই হারাম, নাজায়েয ও কুফরী |
অতএব, ছয় উছূলী তাবলীগ জামায়াতের লোকদের জন্য ওয়াজিব হবে- হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের প্রতি অশালীন শব্দ প্রয়োগ করা ও কুফরী ধারণা পোষণ করা থেকে বিরত থাকা |
৬ (ছয়) উছূল ভিত্তিক প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের বক্তব্যের খন্ডনমূলক জবাব ..........................................................
মাওলানা ইলিয়াছ ছাহেবের মলফুযাতের ১৮ পৃষ্ঠার ২৯নং মলফুযে একথা উল্লেখ আছে যে, “নামায-রোযা উচ্চাঙ্গের ইবাদত কিন্তু দ্বীনের সাহায্যকারী নয় |” উল্লেখ্য এ ধরণের কথা ছয় উছূলী তাবলীগ জামায়াতেরও অনেক লোকদের মুখে শোনা যায় |
বর্ণিত মন্তব্যটি জেহালতপূর্ণ ও গোমরাহীমূলক, যা বিভ্রান্তির কারণও বটে | মূলতঃ সব ইবাদত দ্বীনের সাহায্যকারী | যার কারণে হাদীছ শরীফে “কোন ইবাদতকেই ছোট মনে করোনা, তা যদি তোমার ভাইয়ের সাথে হাসিমুখে সাক্ষাতও হয় |”
আবার দ্বীনের সাহায্যকারী সব কাজই ইবাদত |
বর্ণিত আছে, হযরত শোয়াইব আলাইহিস সালাম যখন উনার জাতিকে তাওহীদের আহ্বানসহ সকল পাপাচার থেকে বিরত হওয়ার দাওয়াত দিলেন, তখন তারা বিস্ময়ে ভাবতো, কোন জিনিস উনাকে এভাবে উৎসাহিত করলো | তারা দেখলো যে, তিনি সালাত আদায় করেন | অতঃপর তাদের প্রশ্নটা পবিত্র কুরআন শরীফের ভাষায় বর্ণিত হয়েছে এভাবে-
“আপনার ছালাত কি আমাদের এ নির্দেশই দেয় যে, আমরা আমাদের পূর্ব পুরুষদের পূজনীয় বিষয়গুলো ত্যাগ করবো? কিম্বা আমরা বিরত থাকবো আমাদের ধন-সম্পদ নিয়ে যা ইচ্ছা তাই করা থেকে? আপনি তো বেশ বুদ্ধিমান, ধার্মিক হে?” (সূরা হুদ/৮৭)
পবিত্র হাদীছ শরীফে বর্ণিত আছে | ইসলাম-এর পাঁচটি ভিত্তি বা খুঁটি |
“হযরত ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূল পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ইসলাম পাঁচটি ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত- (১) স্বাক্ষ্য দেয়া আল্লাহ পাক ব্যতীত কোন ইলাহ নেই ও হযরত মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বান্দা ও রসল, (২) নামায কায়েম করা, (৩) যাকাত দেয়া, (৪) হজ্ব করা, (৫) রমাদ্বান শরীফের রোযা রাখা |” (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, মেশকাত শরীফ)
হাদীছ শরীফে আরো বর্ণিত আছে, “নামায দ্বীনের খুঁটি | যে নামায কায়েম রাখলো, সে দ্বীন কায়েম রাখলো এবং যে নামায তরক করলো, সে দ্বীন ধ্বংস করলো |”
উপরোক্ত আয়াত শরীফ ও হাদীছ শরীফসমূহ দ্বারা এ কথাই স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় যে, নামায ও রোযা দ্বীনের স্তম্ভ বা খুঁটি | খুঁটি বা স্তম্ভই হচ্ছে দ্বীনের মূল সাহায্যকারী |
অতএব, নামায, রোযা উচ্চাঙ্গের ইবাদত, কিন্তু দ্বীনের সাহায্যকারী নয়, একথাটি সম্পূর্ণ ভূল | মূলতঃ নামায, রোযা উচ্চাঙ্গের ইবাদতের সাথে সাথে দ্বীনের মূল সাহায্যকারীও বটে |
যে প্রসঙ্গে সূরা বাক্বারার ১৫৩নং আয়াত শরীফে আল্লাহ্ পাক বলেন, “হে ঈমানদারগণ! তোমরা ধৈর্য্য ও ছালাতের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা কর |”
এই আয়াত শরীফের তাফরীরে আমরা দেখতে পাই স্বয়ং হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, বদরের জ্বিহাদে এবং অন্যান্য জিহাদে দ্বীনকে বিজিত করার জন্য এবং দ্বীনের সাহায্যকারীদেরকে (হযরত ছাহাবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণকে) হিফাযতের জন্য আল্লাহ্ পাক উনার নিকট নামাযের ও সবরের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা করেছেন | (সিরাতুন্নবী, মাদারেজুন নুবুওওয়াত, সিরাতে হালবীয়া, যাদুল মায়াদ, ইবনে হিশাম ইত্যাদি)
তাহলে একথা কি করে শরীয়তস্মত হতে পারে যে, “নামায রোযা দ্বীনের সাহায্যকারী নয়?”
সূরা আনকাবুতে ৪৫নং আয়াত শরীফে আল্লাহ্ পাক বলেন, “নিশ্চয়ই সালাত, অশ্লীল এবং অশোভনীয় কাজ থেকে মানুষকে বিরত রাখে |”
এই আয়াত শরীফের ব্যাখ্যায় হাদীছ শরীফে রয়েছে- একজন ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এসে একদিন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছে বললেন, “ইয়া রাসূলল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, “অমুক ব্যক্তি সারা রাত নামায পড়ে কিন্তু সকাল হলেই চুরি করে |” তখন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “নিশ্চয়ই নামায অতি শীঘ্রই তাকে ফিরিয়ে রাখবে তুমি যা বলতেছ তা থেকে অর্থাৎ চুরি থেকে |” (আহমদ, বায়হাক্বী, মেশকাত, মেরকাত)
আর রোযা সম্পর্কে আল্লাহ্ পাক পবিত্র কুরআন শরীফে বলেন, “তোমাদের উপর রোযা ফরয হলো যেমন পূর্ববর্তীদের উপর করা হয়েছিল | আশা করা যায় (রোযা দ্বারা), তোমরা তাক্বওয়া হাছিল করতে পারবে | (সূরা বাক্বারা-১৮৭)
অর্থাৎ রোযার দ্বারা তাক্বওয়া হাছিল হয় | হাদীছ শরীফে রয়েছে, “তাক্বওয়া হচ্ছে- সমস্ত ইবাদতের মূল |”
আর কুরআন শরীফে সূরা হুজরাতের ১৩নং আয়াত শরীফে আল্লাহ্ পাক বলেন, “নিশ্চয়ই তোমাদের মধ্যে ঐ ব্যক্তি আল্লাহ্ পাক উনার কাছে সবচেয়ে বেশী সম্মানিত, যে সবচেয়ে বেশী পরহেজগার অর্থাৎ তাক্বওয়াধারী |”
আর হাদীছ শরীফে রয়েছে, “রোযা হচ্ছে মু’মিনের জন্য (পাপাচার) থেকে বেঁচে থাকার ঢাল স্বরূপ |” (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, ফতহুল বারী)
হাদীছ শরীফে আরো বর্ণিত আছে, “যে মিথ্যা কথা ত্যাগ করলো না এবং অনুরূপ আমল (অশ্লীল, অশালীন, খেলাফে শরা) থেকে বিরত থাকলনা, এ প্রকার লোকেরা খাদ্য, পানীয় থেকে বিরত থাকার কোন জরুরতই আল্লাহ্ পাক উনার কাছে নেই | অর্থাৎ যারা রোযা রেখে তাক্বওয়া হাছিল করতে পারেনা তাদের রোযার, আল্লাহ্ পাক উনার কোন দরকার নেই | (বুখারী শরীফ, মেশকাত, ফতহুল বারী)
অর্থাৎ রোযা, রোযাদারের সমস্ত পাপাচার থেকে বিরত রাখবে | অর্থাৎ ছালাত বা রোযা সকল প্রকার পাপাচার বা অশ্লীল, অশোভনীয় কাজ থেকে বিরত রেখে মানুষের চরিত্রকে সুন্দর করে তোলে এবং তাঁর চারিত্রিক সৌন্দর্য্য দ্বারা মুগ্ধ হয়ে মুসলমান, অমুসলমান সকলেই তার মাধ্যমে ইসলামের পরিচয় পেয়ে ও ইসলাম বা দ্বীনের প্রতি আকৃষ্ট হয় | এবং তারাও পাপাচার থেকে বিরত হয়ে নেক কাজে লিপ্ত হয় | এভাবে তার দ্বারা প্রকারান্তরে দ্বীনের প্রচার-প্রসারের কাজ হয় বা দ্বীনের বড় ধরণেরে সাহায্য হয় | অর্থাৎ দ্বীনের কাজের সাহায্য করার তৌফিক সে প্রাপ্ত হয় এবং তার দ্বারা দ্বীনের সাহায্য হয় |
তাহলে কেন একথা বলা শরীয়তের খেলাফ হবেনা যে, নামায রোযা দ্বীনের সাহায্যকারী নয় | মূলতঃ তাদের উপরোক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণরূপে জেহালতপূর্ণ, বিভ্রান্তিকর ও শরীয়ত বিরোধী, যার থেকে বিরত থাকা সকলের জন্যেই ফরয/ওয়াজিবের অন্তর্ভূক্ত |
৬ (ছয়) উছূল ভিত্তিক প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের বক্তব্যের খন্ডনমূলক জবাব ----------------------------------------------------------->
মলফূযাতের ৪৩ পৃষ্ঠার ৪২নং মলফূযে এবং নবুওয়ত ও মাওঃ ইলিয়াছ নামক কিতাবের ৩০-৩২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে যে, “মুসলমান দু’প্রকার- একদল প্রচলিত তাবলীগের জন্য হিজরত করবে, দ্বিতীয় দল নুছরত বা সাহায্য করবে, এ দু’দলই মুসলমান | অর্থাৎ যারা প্রচলিত তাবলীগও করবেনা আর তাবলীগকারীদেরকে সাহায্যও করবেনা, তারা মুসলমান নয় |” (অনুরূপ তাবলীগ গোটা উম্মতের গুরু দায়িত্ব, লেখক- মোঃ ইসমাইল হোসেন দেওবন্দী ১৭৪ পৃষ্ঠা, দাওয়াতে তাবলীগ কি ও কেন? লেখক- ওবায়দুল হক ২১ পৃষ্ঠা, হযরতজীর কয়েকটি স্বরণীয় বয়ান, ২য় খন্ড ১১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে |)
ছয় উছূলী তাবলীগের উল্লিখিত কিতাবের উপরোক্ত বক্তব্যটি দলীল-আদিল্লা বিহীন, মনগড়া, যা সম্পূর্ণ শরীয়তের খেলাফ | মুসলমান হওয়ার জন্য ঈমাণের যে শর্ত দেয়া হয়েছে, তাতে হিজরত বা নুছরতের কোন শর্ত দেয়া হয়নি | অর্থাৎ মুসলমান হতে হলে হিজরত করতেই হবে, এমন কোন শর্ত নেই | মূলতঃ তারা হিজরত ও নুছরতের সঠিক অর্থ না জানা ও না বুঝার কারণেই এরূপ লিখেছে |
“হিজরত” শব্দের আভিধানিক অর্থ হলো- পরিত্যাগ করা, ছেড়ে যাওয়া, বিরত থাকা |
আর শরীয়তের পরিভাষায় হিজরতের অর্থ হলো- দ্বীন ও ঈমান হেফাযতের উদ্দেশ্যে স্বীয় মাতৃভূমি স্থায়ীভাবে পরিত্যাগ করে দূরে কোথাও দ্বীন ও ঈমানের সাথে নিরাপদে বসবাসের ব্যবস্থা করা |
শরীয়তের পরিভাষায় মুহাজির হচ্ছেন ঐসকল হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ, উনারা আল্লাহ্ পাক উনার রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নির্দেশে আল্লাহ্ পাক উনার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে বাড়ী-ঘর ছেড়ে পবিত্র মদীনা শরীফ বা অন্যান্য স্থান যেমন- আবিসিনিয়াহ ইত্যাদিতে হিজরত করে সেখানে বসবাস করেছিলেন |
“নুছরত” শব্দের অর্থ হলো- সাহায্য করা | আর নুছরতের জন্য মুছাফির, মুক্বীম বা মুহাজির হওয়া শর্ত নয় | বরং এক মুসলমান অপর মুসলমানকে সাহায্য করাটাই হচ্ছে নুছরত করা |
“আনছার” শব্দের শাব্দিক অর্থ হলো- “সাহায্যকারীগণ|” শরীয়তের পরিভাষায় “আনছার” হলেন, ঐসকল হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ, উনারা আল্লাহ্ পাক উনার রসূল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পবিত্র মদীনা শরীফ হিজরত করার পর সাহায্য সহযোগীতা করেছিলেন |
(আল কামুস আল মুহীত্ব, লিসানুল আরব, তাজুল উরুস, আসাসুল বালাগাহ, আল মিসবাহুল লোগাত, আল কামুস আল জাদীদ, আল কামুস আল ইসতিলাহী, আল মু’জামুল ওয়াসীত, বয়ানুল লিসান)
মূলতঃ ছয় উছূলী তাবলীগ জামায়াতের লোকেরা যা করে থাকে, তা হচ্ছে- ছফর | আর ছফরকারীকে বলা হয় মুছাফির |
মুছাফির হচ্ছে- দু’প্রকার | (১) উরফী, (২) শরয়ী | (সমূহ ফিক্বাহের কিতাব)
(১) উরফী মুছাফির হচ্ছে- যারা ৪৮ মাইলের কম দুরত্বের স্থান সফর করে | আর (২) শরয়ী মুছাফির হচ্ছে তারা- যারা ৪৮ মাইল বা তার চেয়ে বেশী দুরবর্তী স্থান ছফর করে |
উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা বোঝা যায়, ছয় উছূলী তাবলীগ জামায়াতের লোকেরা যা করে থাকে, তা প্রকৃতপক্ষে হিজরত নয় | তারা যা করে, মূলতঃ তা হলো ছফর | অর্থাৎ তারা মুহাজির নয় বরং মুছাফির | আর যেহেতু তারা শরয়ী মুহাজির নয়, সেহেতু তাদেরকে যারা সাহায্য করে থাকে তারাও শরয়ী আনসার নয় | অর্থাৎ আনসারদের ন্যায় নুছরতকারী নয় | বরং তারা মুসলমান হিসেবে অপর মুসলমানকে সাহায্য করার ন্যায় সাধারণ নুছরত বা সাহায্য করে থাকে |
আর তাদের একথা যদি ধরেও নেয়া হয় যে, মুসলমান দু’প্রকার, একদল হিজরত করবে এবং অপর দল তারা যারা হিজরতকারীদেরকে নুছরত বা সাহায্য করবে | তবে এ কথা অনুযায়ী ছয় উছূলী তাবলীগ জামায়াতের লোকেরাও মুসলমানের আওতায় পড়েনা | কারণ শরীয়তের দৃষ্টিতে তারাও মুহাজির বা আনসার উভয়টার কোনটাই নয় |
অতএব, এ ব্যাপারে তাদের উপরোক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণ মনগড়া, বিভ্রান্তিকর, আপত্তিকর ও কুফরী | এরূপ বক্তব্য থেকে বিরত থাকা সকলের জন্যেই ফরয/ওয়াজিবের অন্তর্ভূক্ত |
৬ (ছয়) উছূল ভিত্তিক প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের বক্তব্যের খন্ডনমূলক জবাব ...
টঙ্গীর ইজতেমা এলে ছয় উছূলী তাবলীগ জামায়াতের প্রায় লোক সাধারণ লোকদের মাঝে একথা প্রচার করে থাকে যে, “বিশ্ব ইজতেমাই হচ্ছে- গরীবের হজ্ব | কেননা টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমায় গেলে হজ্বের সওয়াব পাওয়া যায় |” (নাউযুবিল্লাহ্)
ছয় উছূলী তাবলীগ জামায়াতের বার্ষিক সমাবেশ বা ইজতেমাকে গরীবেরর হজ্ব ও হজ্বের সাওয়াবের সাথে তুলনা করা নিতান্তই অজ্ঞতাসূচক, বিভ্রান্তিমূলক ও কুফরীর শামিল | যে ব্যক্তি এরূপ আক্বীদা পোষণ করবে এবং এ আক্বীদা পোষণ করা অবস্থায় মারা যাবে, সে ঈমান হারা হয়ে চির জাহান্নামী হবে | কারণ হজ্ব হলো ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভ বা ভিত্তির মধ্যে একটি বিশেষ ভিত্তি | এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরফে ইরশাদ হয়েছে, “হযরত ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূল পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ইসলাম পাঁচটি ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত- (১) স্বাক্ষ্য দেয়া আল্লাহ পাক ব্যতীত কোন ইলাহ নেই ও হযরত মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বান্দা ও রসল, (২) নামায কায়েম করা, (৩) যাকাত দেয়া, (৪) হজ্ব করা, (৫) রমাদ্বান শরীফের রোযা রাখা |” (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, মেশকাত শরীফ)
অতএব, প্রমাণিত হলো যে, হজ্ব ইসলামের একটি বিশেষ ভিত্তি | শুধু তাই নয়, হজ্বকে “জামিউল ইবাদত” ও বলা হয় | এ হজ্ব মালেকে নেছাবদের জন্যে জীবনে একবার আদায় করা ফরযে আইন | যে ব্যক্তি হজ্ব ফরয হওয়া সত্বেও বিনা শরয়ী ওজরে হজ্ব করা থেকে বিরত থাকে, হাদীছ শরীফের বর্ণনা মোতাবেক সে ইহুদী-নাছারা অর্থাৎ বেদ্বীন হয়ে মারা যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে |
কাজেই যেখানে হজ্ব একটি ফরয ইবাদত, অশেষ ফযীলত লাভের মাধ্যম ও ইসলামের একটি গুরুত্ব ও তাৎপর্যপূর্ণ আমল, সেখানে একটি বাৎসরিক সমাবেশ বা ইজতেমাকে কি করে হজ্বের সাথে তুলনা করা যেতে পারে? যেখানে শরীক হওয়া ফরয, ওয়াজিব, সুন্নতে মুয়াক্বাদাহ্, সুন্নতে যায়েদাহ্, মুস্তাহাব, নফল কোনটাই নয় | মূলতঃ হজ্বের সাথে ইজতেমাকে তুলনা করা বা ইজতেমাকে গরীবের হজ্ব বলা, ইসলামের ভিতর প্রকাশ্য তাফরীত ও ইফরাতের অর্থাৎ কমানো, বাড়ানোর শামিল, যা শরীয়তের দৃষ্টিতে সুস্পষ্ট কুফরী | যেমন কাদিয়ানী সম্প্রদায় ও ৭২টি বাতিল ফেরকার লোকরা ইসলামের ভিতর তাফরীত ও ইফরাত অর্থাৎ কমানো, বাড়ানোর কারণে কুফরীতে নিপতিত হয়ে কাফের বা অমুসলিম হিসাবে চিহ্নিত হয়েছে |
এখানে উল্লেখ্য যে, হাদীছ শরীফে এমন অনেক আমলের কথাই বলা হয়েছে, যা পালন করলে হজ্ব ও ওমরার সওয়াব পাওয়া যায় | যেমন-
“ফযর নামাযের পর যিকির-আযকার করে এশরাক্ব নামায আদায় করলে এক হজ্ব ও ওমরার সওয়াব পাওয়া যায় |” (মালা-বুদ্দা মিনহু)
অনুরূপ পিতা-মাতার চেহারার দিকে নেক দৃষ্টিতে তাকালেও হজ্বের সাওয়াব পাওয়া যায় | এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে যে, “সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, কোন নেক সন্তান যখন পিতা-মাতার দিকে রহমতের দৃষ্টি দেয়, তখন আল্লাহ্ পাক তার প্রত্যেক দৃষ্টির বিণিময়ে একটি করে কবুল হজ্বের সওয়াব তার আমলনামায় লিখে দেন |” হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ বললেন, যদি প্রতিদিন একশতবার দৃষ্টি দেয়, তবে? হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “আল্লাহ্ পাক মহান ও পবিত্র | (আল্লাহ্ পাক একশতটি হজ্বের সওয়াবও দিতে পারেন) |” (শো’বুল ঈমান, মেশকাত, মেরকাত)
কাজেই প্রমাণিত হলো যে, যে সকল আমল করলে হজ্ব বা ওমরার ফযীলত পাওয়া যায়, তা হাদীছ শরীফে স্পষ্ট বর্ণিত হয়েছে | কিন্তু কুরআন শরীফ, সুন্নাহ্ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসের কোথাও উল্লেখ নেই যে, টঙ্গীর ইজতেমা গরীবের হজ্ব বা ইজতেমায় গেলে হজ্বের সওয়াব পাওয়া যায় |
মূলতঃ এরূপ বক্তব্যের কারণে সাধারণ মানুষ, ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ বুনিয়াদী ফরযের গুরুত্ব ও তাৎপর্য অনুধাবনে চরমভাবে ব্যর্থ হবে | যার কারণে যে কেউ যেকোন স্থানকে হজ্বের জন্যে নির্ধারন করে নিবে | যেমন সুরেশ্বর ভন্ডদের আস্তানায় কৃত্রিম কা’বা শরীফ নির্মাণ করা হয়েছে এবং তাতে হাজরে আসওয়াদও স্থাপন করা হয়েছে | তাদের বক্তব্য হলো- হজ্ব করার জন্যে মক্কা শরীফে যাওয়ার কোন প্রয়োজন নেই বরং এখানে হজ্ব করলেই হজ্বের সওয়াব পাওয়া যাবে | (নাউযুবিল্লাহ)
কাজেই নতুন করে কোন আমলকে হজ্ব হিসাবে সাব্যস্ত করা বা কোন আমলের জন্যে হজ্বের সওয়াব নির্ধারণ করা অথবা নফলকে ফরয বলা হারাম, নাজায়েয ও কুফরী | (সমূহ আক্বায়েদের কিতাব)
অতএব, ইসলামের জন্যে ক্ষতিকর এরূপ কোন বক্তব্য পেশ করা সম্পূর্ণ হারাম ও নাজায়েয |
৬ (ছয়) উছূল ভিত্তিক প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের বক্তব্যের খন্ডনমূলক জবাব ...
মুহম্মদ মুযাম্মিলুল হক লিখিত- “তাবলীগ জামায়াত প্রসঙ্গে ১৩ দফা” নামক কিতাবের ১৪ পৃষ্ঠায় লেখা আছে যে, “প্রচলিত তাবলীগ হচ্ছে নবীওয়ালা কাজ |”
প্রচলিত তাবলীগকে তারা যেজন্য নবীওয়ালা কাজ বলতে চায়, সেটা হলো- তারা মনে করে যে, নবী আলাইহিমুস সালামগণ যেভাবে ইসলামের দাওয়াত দিয়েছেন, তারাও বুঝি সেভাবেই ইসলামের দাওয়াত দেয় | কিন্তু হাক্বীক্বতে এ দু’য়ের মধ্যে আকাশ পাতাল ফারাক (পার্থক্য)| কারণ নবী আলাইহিমুস সালামগণ সকলেই মা’রিফাতে পূর্ণ হয়ে ইসলামের দাওয়াত দিয়েছেন এবং তা দেয়া হয়েছে কাফেরদেরকে | সে কারণে বলা হয় যে, সকল নবী আলাইহিমুস সালামগণের তাসাউফ এক, কিন্তু শরীয়ত আলাদা | কিন্তু প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের প্রায় সবাই একেবারেই তাসাউফ শুন্য হয়ে তাদের ছয় উছূল ভিত্তিক দাওয়াত দেয় | সে দাওয়াতটা কিনা মুসলমানদেরই মুখ্যতঃ দেয়া হয় |
কাজেই প্রচলিত তাবলীগ জামায়াত যা করে, তা মুসলমানকে সাধারণ তা’লীম-তালক্বীন দেয়া ব্যতীত কিছুই নয় |
প্রসঙ্গক্রমে এখানে আরো কথা এসে যায়, সেটা হচ্ছে এই যে, মাদ্রাসা-মক্তবে কিতাবী দর্স ও তা’লীম দেয়া, মসসিদে, জনসমাবেশে ওয়াজ-নছীহত করা, দ্বীনী ইলমের জন্য কিতাব প্রনয়ণ করা, সর্বোপরি, হক্বানী রব্বানী আওলিয়া-ই-কিরামগণের তরীক্বত এবং উনাদের খানকা শরীফে ও দরগায় এই ইলমে তাসাউফ ও ইলমে ফিক্বাহ শিক্ষা দেয়া কি তাহলে নবীওয়ালা কাজ নয়? তবে কি ইহা শয়তানওয়ালা কাজ? (নাউযুবিল্লাহ মিন যালিক)
যদি কোন ব্যক্তি উপরোক্ত আক্বীদা পোষণ করে, তাহলে সে ঈমান হারা হয়ে কুফরীতে নিপতিত হবে |
উল্লেখ্য যে, যদিও প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকেরা সুরতান নবীওয়ালা কাজ করে বলে দাবী করে, কিন্তু হাক্বীক্বতান তারা নবীওয়ালা কাজ করেনা | কারণ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “নিশ্চয়ই আলেমগণ নবী আলাইহিমুস সালামগণের ওয়ারিছ এবং নিশ্চয়ই নবী আলাইহিমুস সালামগণ কোন দিনার-দিরহাম রেখে যাননি বরং উনারা ইলমে দ্বীন রেখে গিয়েছেন | সুতরাং যে ব্যক্তি তা গ্রহণ করলো , সে পূর্ণ অংশ (বিরাট সফলতা) লাভ করলো | (আহমদ, তিরমীযী শরীফ)
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
العلم علمان علم فى اقلب فذاك علم النافع وعلم على اللسان فذالك حجة الله عزوجل على ابن ادم
অর্থঃ- “ইলম দু’প্রকার, একটি হচ্ছে- ক্বলবী ইলম (ইলমে তাসাউফ)- যা উপকারী ইলম | অপরটি হচ্ছে- জবানী ইলম (ইলমে ফিক্বাহ)- যা আল্লাহ্ পাক উনার তরফ থেকে বান্দার প্রতি দলীল স্বরূপ |” (দারেমী মেশকাত, মেরকাত)
মেশকাত শরীফের শারেহ, হযরত মোল্লা আলী ক্বারী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মেরকাত শরীফে এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করেন, মালেকী মাযহাবের ইমাম, হযরত ইমাম মালেক রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন,
من تفقه ولم يتصوف فقد تفسق ومن تصوف ولم يتفقه فقد تزندق ومن جمع بينهما فقد تحفق
“যে ব্যক্তি ইলমে ফিক্বাহ শিক্ষা করলো, কিন্তু ইলমে তাসাউফ শিক্ষা করলো না, সে ব্যক্তি ফাসেকের অন্তর্ভূক্ত | আর যে ব্যক্তি তাসাউফ করে অর্থাৎ মা’রিফাত চর্চা করে অথচ ইলমে ফিক্বাহ শিক্ষা করেনা অর্থাৎ শরীয়ত মানেনা বা অস্বীকার করে, সে কাফেরের অন্তর্ভূক্ত | আর যে উভয়টিই শিক্ষা করলো, সেই মুহাক্কিক অর্থাৎ সে ব্যক্তিই নবী আলাইহিমুস সালামগণের ওয়ারিছ বা হাক্বীক্বী আলেম |
উল্লেখ্য যে, যিনি ইলমে ফিক্বাহ ও ইলমে তাসাউফ হাছিল করেছেন, তিনিই হচ্ছেন- নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের ওয়ারিছ বা নায়েবে নবী | যাঁহারা নবী আলাইহিমুস সালামগণের ওয়ারিছ বা নায়েবে নবী, উনাদের পক্ষেই একমাত্র নবীওয়ালা কাজ পূর্ণভাবে করা সম্ভব | অথচ প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতে উছূলের মধ্যে তাসাউফের কোন শিক্ষাই নেই | শুধু ইলমে ফিক্বাহর শিক্ষা যৎসামান্য যা পূর্ণ ইসলামি শিক্ষার ৫% শিক্ষাও দেয়না, (যদিও তাদের মধ্যে অনেক ভ্রান্ত আক্বীদা রয়েছে) তাহলে কি করে প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকদের পক্ষে হাক্বীক্বতান নবীওয়ালা কাজ করে বলে দাবী করা সম্ভব?
অতএব, প্রমাণিত হলো যে, তাদের উপরোক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণ মনগড়া, বানোয়াট ও বিভ্রান্তিকর, যার থেকে বেঁচে থাকা সকলের জন্যেই দায়িত্ব ও কর্তব্য |
৬ (ছয়) উছূলী ভিত্তিক তাবলীগ জামায়াতের বক্তব্যের খন্ডনমূলক জবাব-
প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকেরা মনে করে যে, তাদের ছয় উছূল ভিত্তিক তাবলীগ জামায়াতের লোকদের অনুসরণ করা উচিৎ, কেননা তারা বড় জামায়াত | কারণ হাদীছ শরীফে রয়েছে, “তোমরা বড় জামায়াতের অনুসরণ কর |”
আমাদের জবাব-
উল্লিখিত হাদীছ শরীফের দোহাই দিয়ে প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের উপরোক্ত কথা প্রচার করা সম্পূর্ণই হাদীছ শরীফের অপব্যাখ্যা | কারণ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন এই হাদীছ শরীফ বলেছেন, তখন থেকে শুরু করে মাত্র ৯০ বছর পূর্ব পর্যন্ত প্রচলিত ছয় উছূল ভিত্তিক তাবলীগ জামায়াতের কোন অস্তিত্বই ছিলনা | তাহলে কি মধ্যবর্তী প্রায় সাড়ে ১৩শত বছর যাবত কোন বড় জামায়াত ছিলনা? আর যদি থেকেও থাকে, তবে কি প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের প্রবর্তনের পর সেই বড় জামায়াতের সম্পূর্ণরূপে বিলুপ্তি ঘটেছে? (নাউযুবিল্লাহ্)
হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, “তোমরা বড় দলের অনুসরণ করো |” (মিশকাত, মেরকাত ইত্যাদি)
উল্লেখ্য, উপরোক্ত হাদীছ শরীফখানা বর্ণিত আছে ইবনে মাজাহ শরীফে | এই হাদীছ শরীফের ব্যাখ্যায় মেরকাত, আশয়াতুল লোমায়াত, শরহুত ত্বীবী, তালীক, মোজাহেরে হক্ব ইত্যাদি কিতাবে বলা হয়েছে যে, বড় জামায়াত হলো- “আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত |”
এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ্ পাক উনার রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “যার মধ্যে আমি এবং আমার ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম রয়েছি |” (তিরমিযী শরীফ, আহমদ, আবূ দাউদ শরীফ, মেশকাত ইত্যাদি)
কাজেই ৬(ছয়) উছূল ভিত্তিক তাবলীগ জামায়াতের উপরোক্ত কথা সম্পূর্ণই মিথ্যা বানোয়াট ও গোমরাহী যে, হাদীছ শরীফে বর্ণিত বড় জামায়াত বলতে তাদের জামায়াতকেই বোঝায় |
৬ (ছয়) উছূলী ভিত্তিক তাবলীগ জামায়াতের বক্তব্যের খন্ডনমূলক জবাব-
“আল্লাহর রাস্তায় বের হলে ঘর সংসার আল্লাহ্ পাকই দেখবেন |” একথা বলে প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকেরা অন্য লোকদেরকে প্ররোচিত করে | যার কারণে অনেক লোকই ঘর-সংসারের যথাযথ ব্যবস্থা না করে প্রচলিত তাবলীগে বের হয়ে যায় | অথচ এর ফলে তাদের বাড়ীর লোকজন প্রায়ই বিভিন্ন বর্ণনাতীত অসুবিধায় ভোগে | উল্লেখ্য আত্ তুরাগ, সম্পাদক হামীদ রশীদ মে/১৯৯৩ পৃষ্ঠা, দাওয়াতে তাবলীগ কি ও কেন নামক কিতাব, (লেখক- ওবায়দুল হক) ১৭ থেকে ২৬ পৃষ্ঠার বর্ণনা দ্বারাও এই বক্তব্যের প্রমাণ পাওয়া যায় |
আমাদের জবাব-
প্রচতিত তাবলীগ জামায়াতের লোকদের উপারোক্ত কথা বা কাজ শুদ্ধ ও শরীয়তসম্মত নয় | কারণ ঘর-সংসারের অভিভাবকের জন্যে তার অধীনস্থ লোকজনের যাবতীয় প্রয়োজনাদী মেটানো ফরয/ওয়াজিবের অন্তর্ভূক্ত |
এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “প্রত্যেকেই রক্ষক, তাকে তার রক্ষিত বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে | ইমাম বা আমীর হলেন তাঁর অধীনস্থ লোকদের রক্ষক, তিনি তাঁর রক্ষিত বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবেন | প্রত্যেক ব্যক্তিই তার আহলে বাইত বা পরিবারের রক্ষক এবং তিনি তার রক্ষিত বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবেন | একজন স্ত্রী তার স্বামীর বাড়ীর রক্ষক | তিনি তার রক্ষিত বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবেন | আর গোলাম তার মনিবের মালের রক্ষক | সে তার রক্ষিত বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে |” (বুখারী শরীফ, ফতহুল বারী, ওমদাতুল ক্বারী ইত্যাদি)
কাজেই দেখা যাচ্ছে যে, স্বামী তার স্ত্রীর রক্ষক বা তার যাবতীয় প্রয়োজনাদি মেটানোর ব্যাপারে জিম্মাদার | তাই সে যদি তার পরিবার-পরিজনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাদি না করেই প্রচলিত তাবলীগে বের হয়ে যায়, তবে উপরোক্ত হাদীছ শরীফের খেলাফ কাজ করে কঠিন গুণাহে গুণাহগার হবে | এখানে উল্লেখ্য যে, কোন স্বামী যখন বিয়ে করে, তখন তার স্ত্রীর যাবতীয় প্রয়োজনাদি বা তার সংসারের যাবতীয় ব্যবস্থাদি মিটানোর ওয়াদা দিয়েই বিয়ে করে থাকে |
এ প্রসঙ্গে বিদায় হজ্বের ভাষণে আল্লাহ্ পাক উনার রসূল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “তোমরা তোমদের স্ত্রীদের ব্যাপারে সতর্ক থাক | কারণ আল্লাহ্ পাককে সাক্ষী রেখেই তোমরা তাদেরকে গ্রহণ করেছ |” (সিহাহ্ সিত্তাহ্ ও সীরাত কিতাব সমূহ)
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেন, “তোমরা নামায এবং তোমাদের দক্ষিন হস্তের অধিকারীনী অর্থাৎ তোমাদের স্ত্রী-দাসী ইত্যাদির ব্যাপার সতর্ক থাক |” (সিহাহ্ সিত্তাহ্ ও সীরাত কিতাব সমূহ)
আবার কুরআন শরীফে ইরশাদ হয়েছে, “নারীদের তেমনি ন্যায় সঙ্গত অধিকার আছে, যেমনি আছে তাদের উপর পুরষদের |” (সূরা বাক্বারা/২২৮)
আবার সূরা তালাক-এর ৬নং আয়াত শরীফে বলা হয়েছে, “তোমরা তোমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী যেমন বাড়ীতে বাস কর, তাদেরও তেমনি বাড়ীতে বাস করতে দাও | তাদের উত্যক্ত করে বিপদে ফেলোনা |”
তাই আমরা হাদীছ শরীফে দেখতে পাই যে, স্বয়ং হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কখনো কখনো উম্মুল মু’মিনীনগণের জন্য বছরের চেয়েও বেশী সময়ের জন্য খাদ্য ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের ব্যবস্থা করে দিতেন | (সীরাত কিতাব সমূহ)
আরো উল্লেখ্য যে, এ ক্ষেত্রে পরিবার-পরিজনের মধ্যে যদি মা-বাবা বিদ্যমান থাকে, তবে সেক্ষেত্রে মা-বাবাকে অন্তর্ভূক্ত রেখে বা তাদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাদি সম্পন্ন না করে প্রচলিত তাবলীগে যাওয়া হবে কঠিন গুণাহের কাজ | কারণ পবিত্র কুরআন শরীফে রয়েছে, “তোমারা আল্লাহ্ পাক উনার শোকর গোজারী কর এবং পিতা-মাতার শোকর গোজারী কর |” (সূরা লোকমান/১৪)
কাজেই দেখা যাচ্ছে যে, অধীনস্থ পিতা-মাতা বা স্ত্রী-পুত্র পরিবার-পরিজনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাদি সম্পন্ন না করে তাবলীগে যাওয়াই হারাম | (কুরতুবী, মায়ারেফুল কুরআন)
তাই শরীয়তের ফায়সালা হলো- ঘর-সংসারের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাদির যোগান দেয়া বা তার জন্য কোশেশ করা ফরয | যে প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক পবিত্র কুরআন শরীফে ইরশাদ মুবারক করেন, “যখন নামায শেষ হয়ে যায়, তোমরা যমীনে ছড়িয়ে পড় এবং আল্লাহ্ পাক উনার ফজল-করম তালাশ কর | (রিযিকের সন্ধান কর)” (সূরা জুমুয়া/১০)
আবার হাদীছ শরীফে রয়েছে, “অন্যান্য ফরয আদায়ের পর হালাল রিযিকের জন্য কোশেশ করা ফরজের অন্তর্ভূক্ত |” (বায়হাক্বী, শো’বুল ঈমান, মেশকাত ইত্যাদি)
কাজেই সে হালাল রিযিকের কোশেশ না করে বা ঘর-সংসারের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাদি সম্পন্ন না করে- সে ব্যবস্থা আল্লাহ্ পাক করবেন, এ কথার উপর থেকে প্রচলিত তাবলীগে যাওয়া শরীয়তে গ্রহণযোগ্য নয় | কারণ শরীয়তের ফায়সালা হলো- হক্কুল ইবাদ যথাযথভাবে আদায় করে হক্কুল্লাহ্ বা ফরযে আইন আদায়ের পর, ফরযে কেফায়া বা ইসলামের তাবলীগের কাজ বা প্রচলিত তাবলীগ হতে অনেক ব্যাপক, তার জন্য সামর্থ অনুযায়ী কাজ করা | কারণ আল্লাহ্ পাক কাউকে তার সামর্থ্যের বাইরে পাকড়াও করেন না |
আবার হাক্বীক্বত ইসলাম বান্দার খেদমতের মুখাপেক্ষী নয় | ইসলামের হিফাযতকারী হলেন, স্বয়ং আল্লাহ্ পাক | বান্দা তাতে খেদমতগার হিসেবে শরীক থাকতে পারে |
অতএব, যারা ঘর-সংসারের জিম্মাদারী আল্লাহ্ পাক উনার উপর দিয়ে প্রচলিত তাবলীগ জামাতে তাদের ধারণা মোতাবেক দ্বীনের খেদমত করতে যায় বা তাদের ধারণা মোতাবেক তাদের প্রতি দ্বীনের যে জিম্মদারী দেয়া হয়েছে তা আদায় করতে যায় তাদেরকে বলতে হয় যে, প্রত্যেকেরই ঘর-সংসারের দায়িত্ব যার যার নিজের উপরই দেয়া হয়েছে | এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ্ পাক বলেন, “আমি (আল্লাহ্ পাক) তাদের মধ্যে তাদের দুনিয়াবী জিন্দেগীর যা জরুরত, তা বন্টন বা নির্ধারণ করে দিয়েছি |” (সূরা যুখরুফ/৩২)
আর মহান আল্লাহ্ পাক উনার রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ প্রসঙ্গে বলেন- “সাবধান! তোমরা প্রত্যেকেই রক্ষক (তোমাদেরকে যে বিষয়ে জিম্মাদারী দেয়া হয়েছে, সে বিষয়ে) এবং প্রত্যেকেই তার রক্ষিত (জিম্মাদারী) বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে | ইমাম বা আমীর হলেন তাঁর অধীনস্থ লোকদের রক্ষক, তিনি তাঁর রক্ষিত (জিম্মাদারী) বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবেন | প্রত্যেক ব্যক্তিই তার আহলে বাইত বা পরিবারের রক্ষক বা জিম্মাদার এবং তিনি তার রক্ষিত (জিম্মাদারী) বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবেন | একজন স্ত্রী তার স্বামীর বাড়ীর রক্ষক বা জিম্মাদার, তিনি তার রক্ষিত (জিম্মাদারী) বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবেন | আর গোলাম তার মনিবের মালের রক্ষক বা জিম্মাদার, সে তার রক্ষিত (জিম্মাদারী) বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে |” (বুখারী শরীফ, ফতহুল বারী, ওমদাতুল ক্বারী ইত্যাদি)
আর দ্বীনের জিম্মদারী তো স্বয়ং আল্লাহ্ পাক উনি নিজেই গ্রহণ করেছেন যেটা পবিত্র কুরআন শরীফে উল্লেখ করেন, “আর আল্লাহ্ পাক উনার নূর বা দ্বীনকে পূর্ণ করবেন যদিও কাফেররা পছন্দ করেনা |”
অর্থাৎ মহান আল্লাহ্ পাক প্রত্যেকেরই ঘর-সংসারের জিম্মাদারী তার নিজের উপর দিয়েছেন আর দ্বীনের জিম্মাদার স্বয়ং মহান আল্লাহ্ পাক উনি নিজেই |
এখন কেউ হয়ত প্রশ্ন করতে পারে যে, তাহলে প্রত্যেকেই তার ঘর-সংসার নিয়ে ব্যস্ত থাকবে আর আল্লাহ্ পাক স্বয়ং নিজেই দ্বীনের খেদমতে আঞ্জাম দিবেন?
মূলতঃ ব্যাপারটি তদ্রুপ নয় | প্রত্যেকেই তার ঘর-সংসারের দায়িত্ব, হক্ব বা জিম্মাদারী পরিপূর্ণভাবে আদায় করার সাথে সাথে যোগ্যতানুযায়ী দ্বীনের খেদমতের আজ্ঞাম দিবে | অর্থাৎ ঘর-সংসারের হক্ব আদায় করতে গিয়ে দ্বীনের খেদমতের ত্রুটি করতে পারবেনা আর দ্বীনের খেদমত করার নাম দিয়ে ঘর-সংসারের হক্ব বা জিম্মাদারীতে ত্রুটি বা গাফলতী করতে পারবেনা | করলে তা শরীয়তের দৃষ্টিতে আদৌ গ্রহণযোগ্য হবেনা | উপরন্ত গুণাহর কারণ হবে | কারণ যারা মনে করে প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতে গেলে তাদের ঘর-সংসার আল্লাহ্ পাক দেখবেন, তাদের সে কথা অনুযায়ী বলতে হয় যে, দ্বীনের তাবলীগ যা প্রচলিত ৬(ছয়) উছূল ভিত্তিক তাবলীগ জামায়াতের থেকে অনেক উর্ধ্বে, তাও তো তাহলে আল্লাহ্ পাকই দেখবেন | কারণ মহান আল্লাহ্ পাক যেহেতু নিজেই দ্বীনের জিম্মদারী নিয়েছেন | এবং ঘর-সংসার দুনিয়াবী কাজের চেয়ে দ্বীনের কাজকেই মহান আল্লাহ্ পাক বেশী পছন্দ করেন |
উল্লেখ্য ইসলাম একটি পরিপূর্ণ দ্বীন | পবিত্র হাদীছ শরীফে রয়েছে,
لا رهبانية فى الاسلام
অর্থঃ- “বৈরাগ্য ইসলামের অন্তর্ভূক্ত নয় |”
তাই পরিবার-পরিজনের প্রয়োজন না মিটিয়ে প্রচলিত তাবলীগে যাওয়াও ইসলামের অন্তর্ভূক্ত নয় | এজন্য পবিত্র কুরআন শরীফে বলা হয়েছে, “তারা আপনাকে জিজ্ঞেস করে যে, কি দান করবো? আপনি বলেন, যে উদ্বৃত্ত |” (সূরা বাক্বারাহ/২১৯)
উল্লেখ্য পবিত্র হাদীছ শরীফে রয়েছে যে, “একবার একজন ছাহাবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উটের রশি না বেঁধেই বললেই যে, আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করলাম |” তখন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “আগে উটের রশি বাঁধ, পরে তাওয়াক্বুল কর |”
মূলতঃ বর্ণিত হাদীছ শরীফে সাধারণভাবে একটি নছিহত পেশ করা হয়েছে যে, সাধারণ জীবন-যাপন বা প্রয়োজনীয় কার্যাদি সমাপনের পরই তাওয়াক্কুল করা উচিৎ |
এক্ষেত্রে প্রশ্ন হতে পারে যে, যিনি ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার ক্ষেত্রে রশি বাঁধার পর তাওয়াক্কুলের প্রসঙ্গ আসল অথচ অনেক ওলি আল্লাহর জীবনীতেই দেখা যায় যে তারা কোন চেষ্টা বা উপকরণ ও কাজ ছাড়াই তাওয়াক্কুল করেছেন এবং উনাদের সেই তাওয়াক্কুল বাস্তবে রূপায়িত হয়েছে |
এর ফায়সালা হচ্ছে- হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম হলেন চরম স্তরের ছিদ্দীক বা পরিপূর্ণ সুস্ত হালতের লোক | উনারা এ উম্মতের জন্য অনুকরণীয় আদর্শ | পক্ষান্তরে অনেক ওলী আল্লাহ্ নিজ নিজ হাল অনুযায়ী তাওয়াক্কুল করেছেন | যা উনার বাতেনী বিষয়ের অন্তুর্ভূক্ত | কিন্তু এই হাল শরীয়তে অনুসরণযোগ্য নয় | কারণ শরীয়তের ফতওয়া হলো- জাহেরের উপর, বাতেনের উপর নয় | অর্থাৎ সুন্নত মোতাবেক জীবন যাপন করতে হবে এবং তার সাথে সাথে তাওয়াক্কুলও করতে হবে |
এক্ষেত্রে আরো উল্লেখযোগ্য যে, প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের যে ৬(ছয়) উছূল রয়েছে, তা নিতান্ত মক্তবী মানের শিক্ষা, এ মক্তবী মানের শিক্ষা হাছিল করে কখনও ওলী আল্লাহ্ হওয়া সম্ভব নয় এবং উঁচুস্তরের তাওয়াক্কুলও হাছিল করা সম্ভব নয় | তবে যাঁরা ওলী আল্লাহ্, উনারা হক্কুল ইবাদ পূর্ণ করেই তাওয়াক্কুল করে থাকেন |
অতএব প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকেরা যদি নিজেদের ঘর-সংসারের ব্যবস্থাদি না করে সময় ব্যয় করে এবং অন্যকেও তার জন্য প্ররোচিত করে, তাবে তা হবে সম্পূর্ণরূপে পবিত্র কুরআন শরীফ-সুন্নাহ শরীফের খিলাফ ও হক্কুল ইবাদ নষ্ট করার শামিল | যে হক্কুল ইবাদ নষ্ট করা সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, অন্য সব গুণাহ্ মাফ হবে কিন্তু হক্কুল ইবাদ মাফ করা হবেনা, যতক্ষণ পর্যন্ত তা বান্দার পক্ষ থেকে মাফ না করা হয় | (মেশকাত, মেরকাত শরীফ)
অতএব প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকদের উচিৎ পবিত্র কুরআন শরীফ-পবিত্র সুন্নাহ শরীফের খিলাফ বান্দার হক্ব নষ্টকারী এসব কথাবার্তা ও কাজ পরহেজ করা |
৬ (ছয়) উছূলী ভিত্তিক তাবলীগ জামায়াতের বক্তব্যের খন্ডনমূলক জবাব--
“প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকেরা বলে থাকে যে, টঙ্গীর ইজতেমায় অনেক বেশী লোক হয়, তাই নামাযে বড় জামায়াত হয় | আর বড় জামায়াতের ফযীলত বেশী এবং সেই উদ্দেশ্যেও টঙ্গীর ইজতেমায় হাজির হওয়া উচিৎ |”
আমাদের জবাব-
প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের উপরোক্ত কথা সম্পূর্ণই শরীয়তের খেলাফ | কারণ কোথায় নেকী বেশী হবে বা কোথায় ফযীলত বেশী হবে, সে বিষয়ে মহান আল্লাহ্ পাক এবং উনার রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনি বেশী অবগত | যার কারণে আল্লাহ্ পাক বলেন, “আমার রসূল (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যা এনেছেন বা বলেছেন, তা আঁকড়িয়ে ধর, আর যা থেকে বিরত থাকতে বলেছেন, তা থেকে বিরত থাক, অন্যথায় নিশ্চয়ই আল্লাহ্ পাক কঠিন শাস্তিদাতা |” (সূরা হাশর/৭)
আর কোন মসজিদে বা কোন স্থানে যাওয়া যাবে বা যাবেনা কোথায় গেলে ফযীলত বেশী পাওয়া যাবে, সে প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফে হযরত আবু সাঈদ খুদরী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “তিন মসজিদ ছাড়া সফর করোনা, মসজিদুল হারাম, মসজিদুল আক্বসা, ও আমার মসজিদ |” (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, মেশকাত, ফতহুল বারী ইত্যাদি)
আর এই হাদীছ শরীফের ব্যাখ্যায় অন্য হাদীছ শরীফে বলা হয়েছে যে, “ক্বাবা শরীফে নামায পড়লে এক রাকায়াতে এক লক্ষ রাকায়াতের সওয়াব, মসজিদে নববী ও মসজিদে আক্বসায় ৫০ হাজার রাকায়াতের সওয়াব পাওয়া যায় |” (ইবনে মাজাহ, মেশকাত, মেরকাত ইত্যাদি)
উল্লেখ্য এই তিন মসজিদ ছাড়া হাদীছ শরীফে আরো একটি মসজিদের ফযীলতের কথা বলা হয়েছে, তাহলো মসজিদে ক্বোবা | জমহুর ওলামাদের মতে তাক্বওয়ার উপর প্রতিষ্ঠিত মসজিদ হিসেবে ক্বোবাকে সাব্যস্ত করা হয়েছে এবং হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সর্বপ্রথম যে মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেন, তাহলো মসজিদে ক্বোবা | এই মসজিদের ফযীলত সম্পর্কে হাদীছ শরীফে বলা হয়েছে
“মসজিদে ক্বোবায় নামায পড়লে ওমরার ফযীলত পাওয়া যায় |”
এই মসজিদের ফযীলত সম্পর্কে হযরত ছায়াদ ইবনে আক্বাছ হতে বর্ণিত আছে যে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “বায়তুল মুকাদ্দাসে দু’বার যাওয়ার চেয়ে ক্বোবার মসজিদে দু’রাকায়াত নামায পড়া আমার নিকট অতি প্রিয় |”
আরো ইরশাদ হয়েছে, “লোকজন যদি জানত যে, ক্বোবাতে কি ফযীলত রয়েছে, তবে তারা অবশ্যই সেখানে যেত |” (ফতহুল মুলহিম)
আর তাই সওয়াবের নিয়তে উপরোক্ত তিন মসজিদ এবং মসজিদে ক্বোবা সফর করার আদেশ আছে | এছাড়া পৃথিবীর সকল জামে মসজিদে পাঁচশত রাকায়াত, পাঞ্জেগানা মসজিদে পঁচিশ বা সাতাশ রাকায়াত, এছাড়া দুনিয়ার সমস্ত স্থানে এক রাকায়াতে এক রাকায়াত ফযীলত |
তাহলে উপারোক্ত হাদীছ শরীফের দ্বারা এ কথাই প্রমাণিত হলো যে, অধিক সওয়াব বা ফযীলত হাছিলের উদ্দেশ্যে বর্ণিত মসজিদসমূহ ছাড়া অন্য কোন স্থানে বড় জামায়াতে শামিল হওয়ার জন্য যাওয়া বা সফর করা জায়েয নেই | আর এরূপ সফরে গেলে তা স্পষ্টতঃ মহান আল্লাহ্ পাক উনার রসূল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আদেশকে অমান্য করা হবে এবং গুণাহের কারণ হবে |
উল্লেখ্য যে, মহান আল্লাহ্ পাক উনার রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “ফযীলতের জন্য তিন মসজিদ ছাড়া অন্য কোথাও সফর করা যাবেনা |” আর প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকেরা বলছে, টঙ্গীতে ফযীলতের জন্য সফর করা যাবে | তাহলে এখন কার কথা মান্য করা উচিৎ?
অতএব প্রচিলত তাবলীগ জামায়াতের লোকদের উপরোক্ত কথা পরহেজ করা ওয়াজিব | কারণ তা আল্লাহ্ পাক উনার রসূল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হুকুমের খেলাফ | যা আল্লাহ্ পাক উনার তরফ থেকে শাস্তির কারণও বটে |
৬ (ছয়) উছূলী ভিত্তিক তাবলীগ জামায়াতের বক্তব্যের খন্ডনমূলক জবাব-- >
মৌলভী মুহম্মদ ইব্রাহীম কর্তৃক লিখিত- “তাবলীগ জামায়াতের অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যত” নামক কিতাবের ১ম খন্ড ৩৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে যে, খ্রীষ্টান মিশনারীদের ন্যায় প্রচলিত তাবলীগ জামায়াত কৃতিত্বের দাবীদার |
আমাদের জবাব-
উপরোক্ত কথাটি নেহায়েত মূর্খতা সূচক ও জেহালতপূর্ণ | খ্রীষ্টান মিশনারীরা কখনই প্রকৃতপক্ষে কৃতিত্বের দাবীদার নয় | যদিও তারা অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা ও শিক্ষা ইত্যাদির ব্যবস্থা করে মানুষকে তাদের ধর্মীয় মত-পথের প্রতি আকৃষ্ট করে | কিন্তু মূলতঃ তারা মুসলমানের ঈমান হরন করে তাদেরকে গোমরাহী ও কুফরীতে নিমজ্জিত করে |
আর শরীয়তের দৃষ্টিতে এই বেদ্বীন, গজব প্রাপ্ত খ্রীষ্টান মিশনারীর সাথে মিল রেখে, তাদের অনুসরণ করে গর্ব করা সম্পূর্ণই নাজায়েয | কারণ মহান আল্লাহ্ পাক সূরা ফাতিহা শরীফের ৫-৬নং আয়াত শরীফে বলেন, “(তোমরা আমার কাছে দোয়া চাও, হে আল্লাহ্ পাক) আপনি আমাদের সরল পথ প্রদর্শন করুন | উনাদের পথ, যাঁদেরকে আপনি নিয়ামত দিয়েছেন |”
আর আল্লাহ্ পাক যাঁদেরকে নিয়ামত দিয়েছেন, উনাদের প্রসঙ্গে সূরা নিসার ৬৯নং আয়াত শরীফে বলেন, “আল্লাহ্ পাক নি’য়ামত দান করেছেন, যাঁরা নবী, ছিদ্দীক, শহীদ, ছলেহ্ উনাদেরকে |”
এরপর সূরা ফাতিহা শরীফের ৭নং আয়াত শরীফে আল্লাহ্ পাক বলেন, “(তোমরা দোয়া চাও) হে আল্লাহ্ পাক তাদের পথ দান করবেন না, যারা গযব প্রাপ্ত (খ্রীষ্টান) এবং পথভ্রষ্ট (ইহুদী)|”
আর হাদীছ শরীফে রয়েছে যে, “যে যেই সম্প্রদায়ের সাথে মিল রাখে, সে সেই সম্প্রদায়ের অন্তর্ভূক্ত |” (মসনদে আহমদ, আবূ দাউদ শরীফ)
উপরোক্ত আয়াত শরীফ ও হাদীছ শরীফের দ্বারা একথাই প্রতীয়মান হয় যে, তাদের (বেদ্বীনদের) পথ পাওয়া, তাদের সাথে মিল রেখে তাদেরকে অনুসরণ করে গর্ব করা সম্পূর্ণই হারাম ও কুফরী |
এরপরও, যদি আমরা দুনিয়াবী দৃষ্টিতে খ্রীষ্টান মিশনারী ও প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের কার্যকলাপ পর্যালোচনা করি, তাহলেও দেখা যাবে যে, খ্রীষ্টান মিশনারীরা নিজেদের গৃহের, অন্ন, বস্ত্রের সংস্থান তো করেই, শুধু এতটুকু নয় বরং সাথে সাথে যাদেরকে তাদের মত-পথের প্রতি আকৃষ্ট করতে চায়, তাদেরও অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা ইত্যাদির ব্যবস্থা করে দেয় |
আর প্রচলিত তাবলীগ জামায়াত সম্পূর্ণই তার বিপরীত |
অতএব খ্রীষ্টান মিশনারীর সাথে মিল রেখে এবং তাদেরকে অনসরণ করে প্রচলিত তাবলীগ জামায়াত যে নিজেদেরকে কৃতিত্বের দাবীদার মনে করে, তা সম্পূর্ণই অবৈধ, যা শরীয়তের খেলাফ ও কুফরী | তাই তাদের পরহেজ করা ওয়াজিব |
৬ (ছয়) উছূলী ভিত্তিক তাবলীগ জামায়াতের বক্তব্যের খন্ডনমূলক জবাব->
প্রচলিত ছয় উছূল ভিত্তিক তাবলীগ জামায়াতের সমর্থনপুষ্ট প্রায় কিতাবেই একথা লেখা আছে যে, নবী আলাইহিমুস সালামগণ কোন কোন ক্ষেত্রে ভুল করেছিলেন | যেমন- হযরত আদম আলাইহিস সালাম গন্দম খেয়ে ভুল করেছিলেন ও হযরত ইউনুস আলাইহিস সালাম দাওয়াত না দিয়ে ভুল করেছিলেন ইত্যাদি |
দলীল- মালফুযাতে শায়খুল হাদীছ পৃষ্ঠা ২৩১, তাবলীগ গোটা উম্মতের গুরু দায়িত্ব, লেখক- মাওলানা ইসমাইল হোসেন, দেওবন্দী পৃষ্ঠা ৬১
আমাদের জবাব-
এরূপ আক্বীদা পোষণ করা গোমরাহী ও কুফরীর অন্তর্ভূক্ত | কারণ সকল নবী-রসূল আলাইহিমুস সালামগণই ছিলেন আল্লাহ্ পাক উনার খাছ ও মনোনীত বান্দাহগণের অন্তর্ভূক্ত | উনারা প্রত্যেকেই ছিলেন ওহীর দ্বারা নিয়ন্ত্রিত | পবিত্র কুরআন শরীফের একাধিক স্থানে ইরশাদ হয়েছে- “আমি উনাদের (নবী-রসূল আলাইহিমুস সালামগণের) প্রতি ওহী পাঠাতাম |” (সূরা ইউনুস/১০৯, নহল/৪৩, আম্বিয়া/৭)
অর্থাৎ নবী-রসূল আলাইহিমুস সালামগণের যাবতীয় কার্যাবলীই ওহীর দ্বারা (আল্লাহ্ পাক কর্তৃক) পরিচালিত হতো | যার পরিপ্রেক্ষিতে আক্বায়েদের কিতাবে বর্ণিত হয়েছে- “সকল আম্বিয়া আলাইহিমুস সালামগণ মাছূম বা নিস্পাপ |”
আরো উল্লেখ করা হয়েছে যে, “সকল আম্বিয়া আলাইহিমুস সালামগণই ছগীরা, কবীরা, কুফরী এবং অপছন্দনীয় কাজ হতে পবিত্র |”
এ উছূলের ভিত্তিতে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদা হলো- কোন নবী-রসূল আলাইহিমুস সালামগণ কখনও ভুল করেননি | ইচ্ছাকৃত তো নয়ই, অনিচ্ছকৃতও নয় | অর্থাৎ নবী আলাইহিমুস সালাম গণ কোন ভুলই করেননি | (শরহে আক্বাইদে নসফী, ফিক্বহে আকবর, তাকমীলুল ঈমান, আক্বাইদে হাক্বাহ)
অতএব, যারা নবী আলাইহিমুস সালামগণের ভুল সম্পর্কে বলে থাকে, আক্বাইদ সম্পর্কে অজ্ঞতার কারণেই তারা তা বলে থাকে | যেমন তারা বলে থাকে যে, হযরত আদম আলাইহিস সালাম গন্দম খেয়ে ভুল করেছিলেন | (নাউযুবিল্লাহ্)
মূলতঃ তাদের একথা সঠিক নয় | প্রকৃত ঘটনা হলো- যখন আল্লাহ্ পাক হযরত আদম আলাইহিস সালাম ও হযরত হওয়া আলাইহাস সালাম উনাকে আদেশ করেছিলেন যে, “তোমরা এই (গন্দমের) গাছের নিকটবর্তী হয়ো না |” (সূরা বাক্বারা/৩৫)
তখন উনারা মহান আল্লাহ্ পাক উনার এ আদেশ অনুযায়ী সে গাছের নিকটবর্তী হননি | বরং উক্ত গাছের অনুরূপ বিপরীত দিকের অন্য একটি গাছ দেখিয়ে, ইবলিস শয়তান এসে হযরত হাওয়া আলাইহাস সালাম উনাকে মিথ্যা কছম খেয়ে বলেছিল যে, যদি আপনারা এ গাছের ফল খান, তবে আপনারা ফেরেস্তা হয়ে যাবেন অথবা স্থায়ীভাবে বেহেশতে বসবাস করতে পারবেন | কোন বর্ণনা মোতাবেক তখন হযরত হাওয়া আলাইহাস সালাম উনি সে গাছ হতে ফল এনে শরবত বানিয়ে হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকে খাইয়েছিলেন | অপর বর্ণনায় ফল কেটে খাইয়েছিলেন | এ ঘটনা হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনার অজান্তেই সংঘটিত হয়েছিল | সুতরাং যা অজান্তে সংঘটিত হয়, তা কি করে ভুল বা অপরাধ হতে পারে? বাস্তবিক তা কখনই ভুল হতে পারেনা | (সমূহ তাফসীরের কিতাব)
এর মেছালস্বরূপ উল্লেখ করা যায়- হযরত ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম উনার শাহাদাতের ঘটনা | তিনি যে শাহাদাত বরণ করেছিলেন, এ ব্যাপারে কারো দ্বিমত নেই |
উনাকে ইসলামের শত্রুরা শহীদ করার জন্য একে একে পাঁচবার বিষ পান করায় | কিন্তু মহান আল্লাহ্ পাক উনার রহমতে তিনি প্রত্যেক বারই বেঁচে যান | ষষ্ঠবার উনাকে শহীদ করার জন্য উনার পানির কলসিতে, যে কলসির মুখ কাপড় দিয়ে বেঁধে রাখতেন, যেন তার ভিতর কিছু ফেলা না যায়, সেই কাপড়ের উপর শত্রুরা হিরক চূর্ণ বিষ উনার অজান্তে মিশিয়ে দিয়েছিল | তিনি গভীর রাত্রে হিরক চূর্ণ বিষ মিশ্রিত পানি কলসি থেকে ঢেলে পান করেন, যার ফলশ্রুতিতে তিনি শাহাদাত বরণ করেন | যা উনার অজান্তেই সংঘটিত হয়েছিল | (সিররুশ্ শাহাদাতাঈন, শুহাদায়ে কারবালা, সীরতে ইমাম হাসান ও ইমাম হুসাইন আলাইহিমুস সালাম)
এখন প্রশ্ন উঠে, শরীয়তে দৃষ্টিতে উনার শাহাদাতকে আত্মহত্যা বলতে হবে, না ভুল করার কারণে ইন্তেকাল করেছে, তা বলতে হবে?
মূলতঃ উপরোক্ত দু’টির কোনটিই বলা যাবেনা | যদি কেউ কোন একটিও বলে, তবে সে মিথ্যা তোহমত দেয়ার গুণাহে গুণাহগার হবে, যা কুফরীর শামিল হবে | তদ্রুপ হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনার ঘটনাও | যা উনার অজান্তে সংঘটিত হয়েছিল | অনুরূপ অন্যান্য নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের ঘটনাও | মানুষ সঠিক ইতিহাস না জানার কারণে এবং পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ-এর সঠিক ব্যাখ্যা না বুঝার কারণে, নবী আলাইহিমুস সালামগণের শানে বেয়াদবী মূলক কুফরী কথাবার্তা বলে থাকে |
হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালামগণের সাথে কতটুকু আদব রক্ষা করতে হবে, সে প্রসঙ্গে কিতাবে, হযরত ইমাম সাররী সাকতী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ঘটনা উল্লেখ করা হয়, যিনি উনার যামানায় আল্লাহ্ পাক উনার লক্ষ্যস্থল ছিলেন | যিনি ইমামুশ শরীয়ত ওয়াত্ব তরীক্বত ছিলেন | তিনি একবার স্বপ্নে দেখেন মহান আল্লাহ্ পাক উনার নবী হযরত ইয়াকুব আলাইহিস সালাম উনাকে | দেখে প্রশ্ন করেছিলেন, হে আল্লাহ্ পাক উনার নবী হযরত ইয়াকুব আলাইহিস সালাম | আপনার অন্তরে যদি মহান আল্লাহ্ পাক উনার মহব্বত সত্যিকার ভাবেই প্রবল হতো, তাহলে আপনি কি করে আপনার ছেলে হযরত ইউসুফ আলাইহিস সালাম উনার জুদাইয়ের (বিচ্ছেদের) কারণে উনার মহব্বতে চল্লিশ বছর যাবত কেঁদে কেঁদে আপনার চক্ষু মুবারক নষ্ট করেছিলেন? একথা বলার সাথে সাথে গায়েব থেকে নেদা (আওয়াজ) হলো, “হে সাররী সাকতী! মুখ শামলিয়ে নবীদের শানে কথা বল |” এরপর হযরত ইউসুফ আলাইহিস সালাম উনাকে উনার (হযরত সাররী সাকতী রহমতুল্লাহি আলাইহি) সামনে পেশ করা হলে তিনি বেহুশ হয়ে পড়ে যান এবং এভাবে একাধারে তের দিন, তের রাত বেহুশ থাকার পর হুঁশ ফিরে পান | তখন গায়েব থেকে নেদা হয়, “আল্লাহ্ পাক উনার নবীদের শানে আদবের খেলাফ কথা বললে এরূপই শাস্তি হয়ে থাকে |” (তাজকেরাতুল আওলিয়া)
উপরোক্ত ওয়াকিয়ার আলোকে প্রতিভাত হয় যে, আদব কত সুক্ষ্ম জিনিস এবং হযরত নবী আলাইহিমুস সালামগণের ক্ষেত্রে কত আদবের সাথে কথা বলতে হবে এবং উনাদের সাথে বেয়াদবির কি পরিণতি? বেয়াদব সম্পর্কে হযরত জালালুদ্দীন রুমী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, “বেয়াদব আল্লাহ্ পাক উনার রহমত থেকে বঞ্চিত |” (মসনবী শরীফ)
অতএব, প্রতীয়মান হয় যে, হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালামগণের প্রতি কতটুকু আদব রক্ষা করা দরকার |
উল্লেখ্য যে, হযরত সাররী সাকতী রহমতুল্লাহি আলাইহি ইমামুজ্জামান, ইমামুশ্ শরীয়ত ওয়াত্ব তরীক্বত ও আল্লাহ্ পাক উনার লক্ষ্যস্থল হওয়া সত্বেও উনার প্রতি সমর্কবাণী ও সাবধানবানী উচ্চারিত হয়েছে | মূলতঃ নবী-রসূল আলাইহিমুস সালামগণ ভুল করা তো দুরের কথা, কোন প্রকার অপছন্দনীয় কাজও উনারা করতেন না | বরং সর্ব প্রকার অপছন্দনীয় কাজ থেকেও বেঁচে থাকতেন বা পবিত্র থাকতেন, সে প্রসঙ্গে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র সীরাত মুবারক থেকে একটি ঘটনা উল্লেখ করা যায়-
“একবার মহান আল্লাহ্ পাক উনার রসূল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হুজরা শরীফে বসা ছিলেন | এমতাবস্থায় এক ব্যক্তি এসে আল্লাহ্ পাক উনার রসূল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে সাক্ষাত করার অনুমতি চাইলেন | এ সংবাদ উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়েশা সিদ্দিকা আলাইহাস সালাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট পৌছালেন | তখন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, সে ব্যক্তিকে অপেক্ষা করতে বল | একথা বলে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পাগড়ী মুবারক, জামা বা কোর্তা মুবারক ইত্যাদি গুছগাছ করে নিলেন | এমন কি হুজরা শরীফ থেকে বের হওয়ার মূহুর্তে পানির গামলাতে নিজের চেহারা মোবারক দেখে গুছিয়ে নিচ্ছিলেন | তা দেখে সে সময় হযরত আয়েশা ছিদ্দিকা আলাইহাস সালাম বললেন, “ইয়া রাসূলুল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনিও কি এরূপ করেন?
তখন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “কিরূপ করি?” তখণ হযরত আয়েশা ছিদ্দীকা আলাইহাস সালাম বললেন, “এরূপ পরিপাটি |” এর জবাবে আল্লাহ্ পাক উনার রসূল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “আমরা আল্লাহ্ পাক উনার নবী | আমাদের কোন কাজ কারো অপছন্দ হলে, সে ঈমান হারা হয়ে যাবে |” (আল্ মুরশিদুল আমীন)
অতএব, নবী-রসূল আলাইহিমুস সালামগণ যে, কতটুকু অপছন্দনীয় কাজ থেকে বেঁচে থাকতেন, এ হাদীছ শরীফের বর্ণিত ঘটনা তারই প্রমাণ | তাহলে কি করে এ কথা বলা যেতে পারে বা বিশ্বাসযোগ্য হতে পারে যে, নবী-রসূল আলাইহিমুস সালামগণ ভুল-ত্রুটি করেছিলেন? বস্তুতঃ এরূপ আক্বীদা পোষণ করা সম্পূর্ণই হারাম ও কুফরী |
তদ্রুপ নবী-রসূল আলাইহিমুস সালামগণের সম্পর্কে ও উনাদের শানের খেলাফ কোন অর্থ গ্রহণ করা যাবেনা বরং এমন অর্থ ব্যবহার বা গ্রহণ করতে হবে, যাতে উনাদের শান সমুন্নত থাকে |
উল্লেখ্য যে, মহান আল্লাহ্ পাক উনার রসূল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হাদীছ শরীফ বর্ণনা কারীদেরককে রাবী বলা হয় | এই রাবীগণের মধ্যে যাঁরা প্রথম শ্রেণীর, উনাদেরকে বলা হয় ছেক্বাহ্ রাবী |
হাদীছ শরীফ বিশারদগণ, ছেক্বাহ্ রাবী হওয়ার জন্য যে মানদন্ড নির্ধারণ করেছেন, তার মধ্যে মূল বিষয় হচ্ছে- (১) আদলত ও (২) জবত |
জবত হচ্ছেঃ-
প্রখর স্বরণশক্তি | তা এমন যে, একবার শুনলে আর ভুলেনা |
আর আদলতঃ-
এর মধ্যে চারটি শর্ত রয়েছে | তার মধ্যে প্রধান হলো- দু’টি | যথা- (ক) তাক্বওয়া, (খ) মুরুওওয়াত |
(ক) তাক্বওয়া হচ্ছে-
কুফরী, শেরেকী, বিদয়াতী, ফাসেকী কাজ থেকে বেঁচে থাকার সাথে সাথে কবীরাহ্ গুণাহ্ থেকে, এমনকি ছগীরাহ্ গুণাহও বার বার করা থেকে বেঁচে থাকা |
(খ) আর মুরুওওয়াত হচ্ছে-
অশালীন, অশোভনীয়, অপছন্দনীয়, এমনকি দৃষ্টিকটু কাজ থেকে বিরত থাকা | যেমন- রাস্তায় হেঁটে হেঁটে খাদ্য খাওয়া, রাস্তায় অট্টহাস্য করা, চিৎকার করা ইত্যাদি | (তাদরীবুর রাবী, মুকাদ্দামাতুশ শায়খ, মীযানুল আখবার)
এখন ফিরিরের বিষয় এই যে, পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণনাকারী ছেক্বাহ্ রাবী যদি এত গুণ ও যোগ্যতাসম্পন্ন এবং তাক্বওয়াধারী হন অর্থাৎ হাদীছ বিশারদ উম্মতে মুহম্মদীর নিকট যদি ছেক্বাহ্ রাবী হিসেবে হাদীছ বর্ণনাকারী হওয়ার জন্য ছগীরাহ্ গুণাহ বার বার না করা ও দৃষ্টিকটু সাধারণ অপছন্দনীয় কাজও না করা শর্ত হয়, তাহলে যাঁরা মহান আল্লাহ্ পাক উনার নবী হবেন এবং আল্লাহ্ পাক উনার কালাম বর্ণনা করবেন, উনাদের জন্য আল্লাহ্ পাক কি মানদন্ড নির্ধারণ করেছেন বা উনাদের ক্ষেত্রে কতটুকু মা’ছুম ও মাহফুজ হওয়া নির্দিষ্ট করেছেন তা অনুধাবনীয় |
অতএব প্রচলিত ৬ (ছয়) উছূল ভিত্তিক তাবলীগ জামায়াত এবং অন্যান্য যে কোন লোকের জন্যই নবী-রসূল আলাইহিমুস সালামগণের শানের বিন্দুমাত্র খেলাফ কথাবার্তা বলা সম্পূর্ণ নাজায়েয ও হারাম ও কুফরী | এ ধরণের কুফরী আক্বীদা থেকে বেঁচে থাকা সমস্ত মুসলমান নর-নারীর জন্য ফরয |
৬ (ছয়) উছূলী ভিত্তিক তাবলীগ জামায়াতের বক্তব্যের খন্ডনমূলক জবাব--- >
তাবলীগ জামায়াতের লোকেরা বলে- মূর্খ লোক চিল্লা দিলে আলেমের চেয়ে বেশী ফযীলত প্রাপ্ত হয়, আর মূর্খ লোক ইছলাহ্ প্রাপ্ত হওয়ার জন্য তিন চিল্লা দরকার এবং তাবলীগ জামায়াত প্রসঙ্গে “তেরো দফা” নামক কিতাবে ৭ পৃষ্ঠায় যা মুযাম্মিলুল হক উল্লেখ করেছেন, “মূর্খ লোক আমীর হওয়ার জন্য তিন চিল্লাহ্ যথেষ্ট, আর আলেমের জন্য প্রয়োজন সাত চিল্লার |”
আমাদের জবাব-
মূর্খ লোক চিল্লা দিলে আলেমের চেয়ে মর্যাদা বেশী, একথা সম্পূর্ণ শরীয়তের খেলাফ, যা কুফরীর শামিল | কারণ আক্বাইদের কিতাবে উল্লেখ করা হয়েছে, “আলেমগণকে এহানত (তুচ্ছ-তাচ্ছিল্ল্য বা অবজ্ঞা) করা কুফরী |” (আক্বায়েদের কিতাব)
আলেমের ফযীলত সম্পর্কে পবিত্র কুরআন শরীফে অনেক আয়াত শরীফ এবং অসংখ্য হাদীছ শরীফ উল্লেখ করা হয়েছে | আলেমদের ফযীলত সম্পর্কে মহান আল্লাহ্ পাক বলেন, “যারা জানে আর যারা জানেনা, উভয়ে কি সমান হতে পারে?” (সূরা যুমার/৯)
মহান আল্লাহ্ পাক আলেমদের মর্যাদা ও ফযীলত বর্ণনা করতে গিয়ে পবিত্র কুরআন শরীফের সূরা মুজাদেলার ১১নং আয়াত শরীফে ইরশাদ মুবারক করেন, “যারা আলেম, তাদেরকে অনেক মর্যাদা দেয়া হয়েছে |”
আর পবিত্র হাদীছ শরীফে বর্ণিত হয়েছে, “আলেমগণ হলেন নবীগণের ওয়ারিছ |” (তিরমিযী শরীফ, আবূ দাউদ শরীফ, ইবনে মাযাহ্ ইত্যাদি)
আলেমের ফযীলত ও মর্যাদা সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফে বর্ণিত হয়েছে, “হযরত আবূ উমামাতুল বাহেলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট দু’জন ব্যক্তির কথা উল্লেখ করা হয়েছে | প্রথম জন আবেদ, আর দ্বিতীয় জন আলেম | (এ কথা শুনে) সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আলেমের মর্যাদা আবেদের উপর তদ্রুপ, যেমন তোমাদের মধ্যে সাধারণ ব্যক্তির উপর আমার ফযীলত | অতঃপর আরো বলেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ্ পাক ও উনার ফেরেস্তাগণ এবং আসমান ও যমীনবাসী, এমনকি গর্তের ভিতর পিপীলিকা ও মাছ পর্যন্ত আলেমের প্রতি ছালাত পাঠ করেন |” (তিরমিযী শরীফ, দারেমী শরীফ, মেশকাত ইত্যাদি)
আলেমের ফযীলত সম্পর্কে হাদীছ শরীফে আরো উল্লেখ আছে যে, “হযরত আবূ দারদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, আমি রাসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, “নিশ্চয় আলেমের জন্যে আসমান ও যমীনে যা কিছু রয়েছে, এমন কি পানির মাছ পর্যন্ত ইস্তেগফার (ক্ষমা) প্রার্থণা করে | আর নিশ্চয় আলেমের মর্যাদা আবেদের উপর এরূপ, যেরূপ পূর্ণিমার চাঁদের মর্যাদা অন্যান্য তারকারাজীর উপর |” (তিরমিযী শরীফ, আবূ দাউদ শরীফ, ইবনে মাযাহ্ শরীফ ইত্যাদি)
পবিত্র হাদীছ শরীফে আলেমের মর্যাদা সম্পর্কে আরো উল্লেখ আছে যে, “হযরত ইবনে আব্বাস আলাইহিস সালাম হতে বর্ণিত, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, একজন ফক্বীহ (হাক্কানী আলেম) শয়তানের নিকট এক হাজার আবেদের চেয়েও বেশী ভয়ঙ্কর |” (তিরমিযী শরীফ, ইবনে মাযাহ্ শরীফ, দারেমী ইত্যাদি)
অতএব, উলামায়ে হক্কানী-রব্বানীগণ নবী আলাইহিমুস সালামগণের পর আল্লাহ্ পাক উনার যমীনে শ্রেষ্ঠ মানুষ | যার কারণে উনাদের নিদ্রাকে জাহেল বা মূর্খ ব্যক্তির ইবাদতের চেয়েও শ্রেষ্ঠ বলে উল্লেখ করা হয়েছে |
পবিত্র হাদীছ শরীফে বর্ণিত হয়েছে,
نوم العالم خير من عبادة الجاهل
অর্থঃ- “আলেমের নিদ্রা মূর্খ লোকের ইবাদত হতে উত্তম |”
স্মরণীয় যে, উপরে আলেমদের যে মর্যাদা বর্ণনা করা হয়েছে, তা শুধুমাত্র ইলমে ফিক্বাহ্ ও ইলমে তাসাউফ অর্জনকারী, ইলম অনুযায়ী আমলকারী অর্থাৎ উলামায়ে হক্কানী-রব্বানীগণের জন্যেই প্রয়োজ্য |
অতএব, মহান আল্লাহ্ পাক ও উনার রাসূল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেখানে আলেমদেরকে মূর্খ লোকের উপর এত ফযীলত দিয়েছেন, সেখানে বিনা দলীল-আদীল্লায় একথা বলা কি করে জায়েয ও শরীয়তসম্মত হতে পারে যে, মূর্খ লোক চিল্লা দিলে আলেমের চেয়ে বেশী ফযীলত প্রাপ্ত হবে | অথচ ছয় উছূল ভিত্তিক প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের মাত্র মক্তবী শিক্ষা দেয়া হয় | যে মক্তবী শিক্ষার মাধ্যমে কখনো হাক্বীক্বী আলেম হওয়া সম্ভব নয় | আর যেখানে আলেম হওয়াই সম্ভব নয় | সেখানে চিল্লা দিলে কি করে আলেমের চেয়ে বেশী ফযীলত প্রাপ্ত হবে?
আর উল্লেখ্য যে, মূর্খ লোক ইছলাহ্ প্রাপ্ত হওয়ার জন্য তিন চিল্লা দিতে হয়, কিন্তু আলেমের ইছলাহ্ প্রাপ্ত হওয়ার জন্য সাত চিল্লার প্রয়োজন |
তাদের এ কথাটাও জেহালতপূর্ণ ও কুফরীর অন্তর্ভূক্ত | কারণ একথাও আলেম সম্প্রদায়কে এহানত করার শামিল |
তবে এখানে বিশেষভাবে স্মরণীয় যে, শুধু মাদ্রাসা হতে ফারেগ হলে অর্থাৎ টাইটেল বা দাওরা পাশ করলে মাওলানা হওয়া যায়, হাক্বীক্বী আলেম হওয়া যায়না | কারণ মাদ্রাসায় শুধুমাত্র ইলমে ফিক্বাহ্ শিক্ষা দেয়া হয়, ইলমে তাসাউফ শিক্ষা দেয়া হয়না | অথচ ইলমে ফিক্বাহের সাথে সাথে ইলমে তাসাউফ অর্জন করাও ফরযে আইন | অতএব যে ব্যক্তি ইলমে ফিক্বাহ ও ইলমে তাসাউফ উভয়টি অর্জন করলো, সে ব্যক্তিই হাক্বীক্বী আলেম বা নায়েবে রাসূল | এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “নিশ্চয় আলেমগণ নবী আলাইহিমুস সালামগণের ওয়ারিছ এবং নিশ্চয় নবী আলাইহিমুস সালাম গণ কোন দীনার-দিরহাম রেখে যাননি | রবং ইলম (ইলমে জাহের ও বাতেন) রেখে গেছেন | সুতরাং যে ব্যক্তি তা গ্রহণ বা অর্জন করলো, সে পূর্ণ অংশ লাভ করলো |” (তিরমিযী শরীফ, আবূ দাউদ শরীফ, ইবনে মাযাহ্ শরীফ ইত্যাদি)
অর্থাৎ সে ব্যক্তিই হাক্বীক্বী আলেম বা নায়েবে রাসূল |
উপরোক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ দ্বারা বুঝা গেল যে, নবী আলাইহিমুস সালামগণ ওয়ারিছ স্বত্ব হিসাবে শুধুমাত্র ইলম রেখে গেছেন | আর এই ইলম সম্পর্কে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
العلم علمان علم فى القلب فذاك علم النافع وعلم على اللسن فذلك حجة الله عزوجل على ابن أدم
অর্থঃ- “ইলম দু’প্রকার | (১) ক্বালবী ইলম (ইলমে তাসাউফ), যা উপকারী ইলম, (২) জবানী ইলম (ইলমে ফিক্বাহ্), যা আল্লাহ্ পাক উনার তরফ থেকে বান্দার জন্য দলীল স্বরূপ |” (দারেমী, মেশকাত, মেরকাত, মোজাহেরে হক্ব ইত্যাদি)
অতএব, প্রমাণিত হলো যে, নবী আলাইহিমুস সালামগণ ওয়ারিছ স্বত্ব হিসেবে ইলমে ফিক্বাহ্ ও ইলমে তাসাউফ উভয়টিই রেখে গেছেন | কাজেই যে ব্যক্তি উভয়টিই শিক্ষা করলো, সে ব্যক্তিই নায়েবে রাসূল বা হাক্বীক্বী আলেম |
প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ্য যারা ইলমে ফিক্বাহ্ অর্জন করে মাওলানা হয়েছে, তাদের উচিৎ হবে, মাশায়েখগণের তরীক্বত বা আল্লাহ্ ওয়ালাগণের ছোহবত এখতিয়ার করে, ইলমে তাসাউফ অর্জন করার মাধ্যমে ইছলাহ্ প্রাপ্ত হয়ে হাক্বীক্বী আলেম বা নায়েবে রাসূল হওয়া | তাই আল্লাহ্ পাক পবিত্র কালামে পাকে ইরশাদ মুবারক করেন, “হে ঈমানদারগণ! আল্লাহ্ পাককে ভয় কর এবং সত্যবাদী বা আল্লাহ্ ওয়ালাগণের ছোহবত এখতিয়ার কর |” (সূরা তওবা/১১৯)
অতএব উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, যারা ইলমে তাসাউফ অর্জন করেনি, তারা হাক্বীক্বী আলেম নয় | কারণ তাদের অন্তর ইছলাহ্ প্রাপ্ত নয় | কাজেই তাদের তো ইছলাহ্ প্রাপ্ত হওয়ার জন্যে মুর্শীদ-মাশায়েখগণের তরীক্বত বা আল্লাহ্ ওয়ালাগণের নিকট বাইয়াত হয়ে ইলমে তাসাউফ অর্জন করতে হবেই | সাথে সাথে যারা মূর্খ বা জাহেল, তাদেরকেও ইছলাহ্ প্রাপ্ত হওয়ার জন্য আল্লাহ্ ওয়ালাগণের নিকট বাইয়াত হয়ে ইলমে তাসাউফ চর্চা করতে হবে | আর যাঁরা হাক্বীক্বী আলেম, উনারা তো অবশ্যই ইছলাহ্ প্রাপ্ত | স্বরণীয় যে, তিন চিল্লা, সাত চিল্লা, দশ চিল্লা কেন, শত-সহস্র চিল্লা দিলেও কেউ ইছলাহ প্রাপ্ত হবেনা | কারণ পবিত্র কুরআন শরীফ-পবিত্র সুন্নাহ শরীফের কোথাও চিল্লাকে ইছলাহ্ প্রাপ্ত হওয়ার জন্য শর্ত করা হয়নি | আর এটাও বলা হয়নি যে, চিল্লা দিলে মানুষ ইছলাহ্ প্রাপ্ত হবে | বরং শর্ত করা হয়েছে, ইছলাহ্ প্রাপ্ত হওয়ার জন্য ইলমে তাসাউফ শিক্ষা করাকে |
মূর্খ লোক ৩ চিল্লা দিলে আমীর হতে পারে, আর আলেম আমীর হওয়ার জন্য ৩ চিল্লার প্রয়োজন, তাদের এ কথাও আলেম ও ইলমকে এহানত করার শামিল | কারণ ইতিপূর্বে পবিত্র কুরআন শরীফ-পবিত্র সুন্নাহ্ শরীফের দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে যে, আলেমের মর্যাদা মূর্খ লোকের উপর অনেক বেশী |
অতএব যে সমস্ত কথাবার্তা শরীয়তের খেলাফ ও যার কোন শরয়ী দলীল নেই, এ ধরণের কথাবার্তা থেকে বেঁচে থাকা বা বিরত থাকা প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর জন্য ওয়াজিব |
৬ (ছয়) উছূল ভিত্তিক প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের বক্তব্যের খন্ডনমূলক জবাব-- ------------------------------------------------------------
“দাওয়াতে তাবলীগ কি ও কেন” (লেখক- ওবায়দুল হক) নামক কিতাবের ৪৮ ও ৪৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে যে, “তাবলীগের কাজ করার কারণেই মাত্র দশ হাজার ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের মাজার শরীফ মক্কা শরীফ ও মদীনা শরীফে আছে |” উল্লেখ্য প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের অনেক লোকও এই কথা বলে থাকে |
আমাদের জবাব-
তাদের উপারোক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট | এর দ্বারা ইসলামের ইতিহাসকে বিকৃত করা হয়েছে |
উল্লেখ্য দ্বীনের খেদমত করতে হবে সততার সহিত | ইতিহাসের বিকৃতি ঘটিয়ে মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে দ্বীনের খেদমত করলে, প্রকৃতপক্ষেই তা দ্বীনের খেদমত হবেনা বরং তা মিথ্যার মত হারাম কাজ প্রচার-প্রসারেই সাহায্য করা হয় | তাদের পরিণতি সম্পর্কে মি’রাজ শরীফ সম্পর্কিত পবিত্র হাদীছ শরীফে এসেছে- “হযরত জীব্রাইল আলাইহিস সালাম বলেন, আপনি যে ব্যক্তিকে দেখেছেন যে, তার গলা কর্তন করা হচ্ছে, সে মিথ্যাবাদী | যে এমন অমূলক কথা প্রচার করতো যে, তা তার দ্বারা প্রচারিত হয়ে পৃথিবীর প্রান্ত পর্যন্ত পৌছতো | (বুখারী শরীফ, ফতহুল বারী ইত্যাদি)
নির্ভরযোগ্য ঐতিহাসিক তথ্য অনুযায়ী পবিত্র মদীনা শরীফের জান্নাতুল বাক্বীতেই কেবল দশ হাজার হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের মাজার শরীফ রয়েছে | (তারীখে মদীনাতুল মুনাওওয়ারা)
এরপর মক্কা শরীফের জান্নাতুল মুয়াল্লাতে বেশ কয়েক হাজার হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহা তায়ালা আনহুমগণের মাজার শরীফ রয়েছে | (তারীখে মক্কাতুল মুকাররমাহ্)
উল্লেখ্য, নির্ভযোগ্য রেওয়ায়েত মোতাবেক মোট হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের সংখ্যা ছিল প্রায় সোয়া লক্ষ | আর ৮ম হিজরীতে মক্কা বিজয়ের সময় হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের সংখ্যা ছিল প্রায় দশ হাজার | তবে উনারা কেবল পবিত্র মদীনা শরীফের অধিবাসীই ছিলেন না, আশে-পাশের বহু এলাকারও অনেক হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ ছিলেন |
বিশেষ করে বিদায় হজ্বের সময় প্রায় সোয়া লক্ষ হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উপস্থিত ছিলেন এবং উনারা আবিসিনিয়া, ইয়েমেন, সিরিয়া, মিশর, ইরাক, ও পৃথিবীর অন্যান্য বহু স্থান থেকে এসে বিদায় হজ্বে শরীফ হন | এবং হজ্ব সমাপনের পর প্রত্যেকেই উনাদের গন্তব্য স্থলের দিকে প্রত্যাবর্তন করেন | (সীরাত কিতাব সমূহ)
হ্যাঁ একথা ঠিক যে, হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণও তাবলীগ করেছেন | তবে উনাদের তাবলীগ আর বর্তমানে প্রচলিত ৬ (ছয়) উছূল ভিত্তিক তাবলীগের মধ্যে আসমান-যমীন ফারাক (পার্থক্য) বিদ্যমান | কারণ উনাদের তাবলীগের অন্তর্ভূক্ত ছিল সম্পূর্ণ ইসলাম | সে হিসেব মতে বর্তমানে প্রচলিত ছয় উছূল ভিত্তিক তাবলীগের লোকেরা যৎসামান্য মাত্র শিক্ষা দিয়ে থাকে, যা কেবল মক্তবী শিক্ষার সাথেই তুলনীয় |
উল্লেখ্য যে, ৬ষ্ঠ হিজরী থেকে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে বা দেশে হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণকে প্রতিনিধি বা দূত হিসেবে প্রেরণ করেছিলেন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে এবং সেখানে শর্তারোপ করেছিলেন তিনটি |
যথা- (ক) ইসলামের দাওয়াত গ্রহণ, (খ) আনুগত্যতা স্বীকার করে জিযিয়া কর প্রদান, (গ) অন্যথায় জ্বিহাদের মোকাবেলা | অর্থাৎ হয় ইসলামের দাওয়াত গ্রহণ করে মুসলমান হওয়া অথবা জিযিয়া কর দিয়ে ইসলামী খিলাফতের নিরাপত্তালাভী বাসিন্দা হওয়া | আর এ দু’টো শর্তের কোনটি গ্রহণ না করলে জ্বিহাদের জন্য প্রস্তুত হওয়া |
বর্ণিত ক্ষেত্রে যাহারা ইসলামের দাওয়াত গ্রহণ করেছেন, উনাদের তা’লীম-তালক্বীনের জন্য হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অনেক ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণকে প্রেরণ করেছেন |
আবার যারা আনুগত্যতা স্বীকার করে জিযিয়া কর প্রদান করেছে, তাদেরকে ইসলামের দাওয়াত পৌছানোর জন্যও হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণকে পাঠিয়েছেন |
আর জ্বিহাদের ফলে বিজিত অঞ্চলে হুকুমত বা প্রশাসন পরিচালনার জন্য হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণকে প্রেরণ করেছেন | এবং পরবর্তীতে তাদের তা’লীম-তালক্বীনের জন্যও হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণকে প্রেরণ করেছেন |
এর পরবর্তীতে খুলাফা-ই-রাশেদীন আলাইহিস সালাম, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এই সুন্নত জারী রেখেছিলেন এবং সেই সুন্নত মোতাবেক পরবর্তীতে তাবেয়ীন, তাবে-তাবেয়ীন, ইমাম-মুজতাহিদ, আওলিয়া-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ দ্বিনের খেদমতের আঞ্জাম দিয়েছেন, দিয়ে যাচ্ছেন এবং ভবিষ্যতেও দিবেন | যার নজীর আমরা দেখতে পাই পৃথিবীর প্রত্যেক দেশেই | অর্থাৎ পৃথিবীর প্রায় প্রত্যেক দেশেই আওলিয়া-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের মাজার শরীফ দেখতে পাই | উনারা দ্বীনের খেদমতের আঞ্জাম দিতে গিয়ে সেখানে ইন্তেকাল করেছেন এবং উনাদের মাজার শরীফও সেখানে রয়ে গেছে |
উদাহরণ স্বরূপ পাক ভারত উপমহাদেশের কথাও যদি আমরা ধরি, তাহলে দেখতে পাই, এদেশে অসংখ্য আওলিয়া-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের মাজার শরীফ প্রায় প্রত্যেক এলাকাতেই রয়েছে |
যেমন- (১) পাকিস্তানের লাহোরে রয়েছে, দাতা গঞ্জে বখশ রহমতুল্লাহি আলাইহি, (২) ভারতের আজমীরে রয়েছে, হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন চিশতী সানজীরি আলাইহিস সালাম, (৩) রাজশাহীর হযরত শাহ্ মাখদুম রহমতুল্লাহি আলাইহি, (৪) সাভারে হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন চিশতী আজমিরী আলাইহিস সালাম উনার ছেলে হযরত হুসসামুদ্দীন আলাইহিস সালাম, (৫) ঢাকায় হযরত শরফুদ্দীন চিশতী রহমতুল্লাহি আলাইহি, (৬) খুলনার হযরত খানজাহান আলী রহমতুল্লাহি আলাইহি, (৭) সিলেটের হযরত শাহ্ জালাল রহমতুল্লাহি আলাইহি, (৮) পীর ইয়ামেনী রহমতুল্লাহি আলাইহি, (৯) বগুড়ায় হযরত ইব্রাহীম বলখী রহমতুল্লাহি আলাইহি, (১০) হযরত শাহ্ আলী বাগদাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি, (১১) চট্টগ্রামের নূর মুহম্মদ নিজামপুরী রহমতুল্লাহি আলাইহি ও বারো আওলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহিম, (১২) রংপুরে হযরত কারামত আলী জৌনপুরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মাজার শরীফ | উনারা প্রত্যেকেই দ্বীনের পূর্ণ আঞ্জাম দিয়েছেন, জ্বিহাদ করেছেন, মানুষকে তা’লীম-তালক্বীন দিয়েছেন, ইলমে ফিক্বাহ-ইলমে তাসাউফ উভয়টিই শিক্ষা দিয়েছেন | এমনকি ইসলামী আইন প্রনয়ন তথা প্রশাসনও চালিয়েছেন | হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেভাবে দ্বীনের আঞ্জাম দিয়েছেন বা তাবলীগ করেছেন, প্রকৃতপক্ষে আওলিয়া-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণও সেভাবে দ্বীনের আঞ্জাম দিয়েছেন বা তাবলীগ করেছেন | এবং বর্তমানেও যাঁরা রয়েছেন, উনারাও একইভাবে দ্বীনের আঞ্জাম দিচ্ছেন বা তাবলীগ করছেন |
আর এভাবে করলেই হাক্বীক্বী তাবলীগের হক্ব আদায় হবে | পক্ষান্তরে প্রচলিত ৬ (ছয়) উছূল ভিত্তিক তাবলীগ করলে কস্মিনকালেও হাক্বীক্বী তাবলীগের হক্ব আদায় হবেনা |
অতএব, প্রমাণিত হয় যে, পবিত্র মক্কা শরীফ ও পবিত্র মদীনা শরীফে দশ হাজারের চেয়ে অনেক অনেক বেশী হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের মাজার শরীফ রয়েছে | আর হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ জ্বিহাদ বা তাবলীগের জন্য একমাত্র গিয়েছেন এবং অন্য স্থানেও উনাদের মাজার শরীফ রয়েছে | কিন্তু উনারা যে তাবলীগী কাজের জন্য বেরিয়েছিলেন, তা প্রচলিত ৬ (ছয়) উছূল ভিত্তিক তাবলীগের জন্য নয় বরং যা ছিল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুন্নত অনুযায়ী দ্বীনের পূর্ণ তাবলীগ | যা পরিপূর্ণ ইলমে ফিক্বাহ্ ও ইলমে তাসাউফের গুণে গুণান্বিত হয়ে উনারা করতেন | আর সে ধারাবাহিকতায় এখন পর্যন্ত হাক্বীক্বীভাবে আঞ্জাম দিয়ে যাচ্ছেন উলামায়ে হক্বানী-রব্বানীগণ অর্থাৎ ওলী আল্লাহগণ |
সুতরাং প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের উপরোক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণ মিথ্যা, মনগড়া, বিভ্রান্তিকর ও ইতিহাস বিকৃতির অন্তুর্ভূক্ত | এ ধরণের লেখা বা বক্তব্য প্রদান থেকে বিরত থাকা সকলের জন্যেই অপরিহার্য্য |
৬ (ছয়) উছূল ভিত্তিক প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের বক্তব্যের খন্ডনমূলক জবাব --------------------------------------------------------------
মাওলানা জাকারিয়া প্রণীত- তাবলীগ জামায়াতের সমালোচনা ও জবাব ৪৪ পৃষ্ঠায়, হযরতজীর মালফূযাত ২২ পৃষ্ঠা, মলফূয ২৯ পৃষ্ঠা, তাবলীগ গোটা উম্মতের গুরু দায়িত্ব (লেখক- মাওলানা ইসমাইল হোসেন দেওবন্দী) ১১৫ পৃষ্ঠার বক্তব্য সমূহ দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, “প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকেরা মাদ্রাসা কিতাবের প্রচার-প্রসার পছন্দ করেনা, খানকা শরীফ সম্পর্কেও ভাল ধারণা রাখেনা এবং মনে করে যে, সেগুলোর দ্বারা কমই ইসলামের খেদমত হয়ে থাকে |”
আমাদের জবাব-
৬ (ছয়) উছূল ভিত্তিক প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের উপরোক্ত ধারণা বা মন্তব্য ও বক্তব্য বিভ্রান্তিমূলক ও শরীয়তের খেলাফ | কারণ শরীয়তের মূল বিষয় হচ্ছে- দ্বীনী ইলম | যে ইলম অর্জন করার জন্য আল্লাহ্ পাক উনার রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর জন্য ইলম অর্জন করা ফরয |” (বায়হাক্বী শরীফ, মেশকাত শরীফ ইত্যাদি)
আর এ ইলম হলো দু’প্রকার | যেটা অন্য হাদীছ শরীফে বর্ণিত হয়েছে,
العلم علمان علم فى القلب فذاك علم النافع وعلم على اللسن فذلك حجة الله عزوجل على ابن أدم
অর্থঃ- “ইলম দু’প্রকার | (১) ক্বালবী ইলম (ইলমে তাসাউফ), যা উপকারী ইলম, (২) জবানী ইলম (ইলমে ফিক্বাহ্), যা আল্লাহ্ পাক উনার তরফ থেকে বান্দার জন্য দলীল স্বরূপ |” (দারেমী, মেশকাত, মেরকাত, মোজাহেরে হক্ব ইত্যাদি)
এ হাদীছ শরীফের ব্যাখ্যায় হযরত মোল্লা আলী ক্বারী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মিশকাত শরীফের বিখ্যাত শরাহ্ “মেরকাত শরীফে” উল্লেখ করেন যে, মালেকী মাযহাবের ইমাম হযরত ইমাম মালেক রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, “যে ব্যক্তি ইলমে ফিক্বাহ্ শিক্ষা করলো, কিন্তু ইলমে তাসাউফ শিক্ষা করলো না, সে ফাসেক | আর যে ব্যক্তি ইলমে তাসাউফ শিক্ষা করলো কিন্তু ইলমে ফিক্বাহ্ শিক্ষা করলো না, সে যিন্দিক (কাফের)| আর যে ব্যক্তি উভয়টি শিক্ষা করলো, সে মুহাক্কিক তথা হক্কানী আলেম |”
অর্থাৎ যে ইলমে ফিক্বাহ্ শিখলো, কিন্তু ইলমে তাসাউফ শিখলোনা, সে হচ্ছে ফাসেক | আর যে বলে আমি মা’রিফাত করি বা ইলমে তাসাউফ করি কিন্তু শরীয়ত বা ফিক্বাহ্ স্বীকার করেনা, সে হচ্ছে যিন্দীক | আর যিনি উভয়টিই শিক্ষা করলেন, তিনি হচ্ছেন মুহাক্কিক অর্থাৎ হাক্বীক্বী আলেম | কাজেই উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা এ কথাই সাবেত হয় যে, সকল মুসলমান পুরুষ ও মহিলার জন্য জরুরত আন্দাজ ইলমে ফিক্বাহ্ ও ইলমে তাসাউফ শিক্ষা করা ফরয | শুধু এ ফরয পরিমাণ ইলম শিক্ষার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকলে চলবেনা | কেননা ফতওয়া দেয়া হয়েছে যে, ইলমে ফিক্বাহ্ ও ইলমে তাসাউফে দক্ষতা অর্জন করা ফরযে কেফায়ার অন্তর্ভূক্ত | এ ফরযে কেফায়াহ যদি আদায় না করা হয়, তাহলে সকলেই ফরয তরকের গুণাহে গুণাহগার হবে | এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ্ পাক ইরশাদ মুবারক করেন, “কেন তাদের প্রত্যেক ক্বওম বা ফেরকা থেকে একটি দল বের হয়না এজন্য যে, তারা দ্বীনী ইলমে দক্ষতা অর্জন করবে এবং তাদের ক্বওমকে ভয় প্রদর্শন করবে, যখন তারা তাদের নিকট প্রত্যাবর্তন করবে | আশা করা যায়, তারা বাঁচতে পারব |” (সূরা তওবা/১২২)
অতএব, কিছু লোককে অবশ্যই দ্বীনী ইলমে বিশেষ দক্ষতা অর্জন করতে হবে, নচেৎ সকলেই ফরযে কেফায়া তরকের গুণাহে গণাহগার হবে | (তাফসীরে মাজহারী, রুহুল মায়ানী, রুহুল বয়ান, ইবনে কাছির ইত্যাদি)
তাই এ আয়াত শরীফের তাফসীরে আল্লাহ্ পাক উনার রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “তুমি আলেম হও অথবা ইলম শিক্ষার্থী হও অথবা শ্রবণকারী হও অথবা মহব্বতকারী হও, পঞ্চম হয়োনা, তাহলে ধ্বংস হয়ে যাবে |” (মেশকাত শরীফ, মেরকাত শরীফ মোজাহেরে হক্ব ইত্যাদি)
এ হাদীছ শরীফের বর্ণনা দ্বারা আলেম ও ইলম অন্বেষণকারীদের বিশেষ ফযীলত দেয়া হয়েছে | অর্থাৎ আলেম না হতে পারলে, ইলম অন্বেষণকারী হতে হবে, তা হতে না পারলে আলেমদের কাছে ইলমের কথা শুনতে হবে, আর তাও না পালে আলেমগণকে মহব্বত করতে হবে | অন্যথায় হালাকী বা ধ্বংস ছাড়া গত্যন্তর নেই |
প্রকাশ থাকে যে, ইলমে ফিক্বাহ্ শিক্ষা দেয়া হয়- মাদ্রাসা তথা দ্বীনী প্রতিষ্ঠানে কিতাবাদীর মাধ্যমে | আর ইলমে তাসাউফ শিক্ষা করতে হয়- মুর্শীদ তথা পীর ছাহেবগণের খানকা শরীফে গিয়ে, উনাদের কাছে বাইয়াত গ্রহণ করে, ছোহবত এখতিয়ারের মাধ্যমে | তবে মুর্শীদ শুধু ইলমে তাসাউফ শিক্ষা দেননা, বরং ইলমে তাসাউফের সাথে সাথে ইলমে ফিক্বাহও শিক্ষা দিয়ে থাকেন |
এখানে উল্লেখ্য যে, যদি মাদ্রাসা না থাকে ও কিতাবাদি প্রচার-প্রসার না করা হয় অথবা খানকা শরীফ না থাকে, যেখানে ইলমে ফিক্বাহ্ ও ইলমে তাসাউফ শিক্ষা দেয়া হয় অর্থাৎ পূর্ণ ইসলামী শিক্ষা বা ইসলামী শিক্ষার একশত ভাগই শিক্ষা দেয়া হয়, তাহলে ইলমে দ্বীন কি করে থাকবে? আর ইলমে দ্বীন যদি না থাকে, তাহলে ইসলাম কি করে থাকেব?
আর ইসলাম যদি না থাকে, তাহলে কি করে আল্লাহ্ পাক ও উনার রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার রেজামন্দী হাছিল করা সম্ভব? মূলতঃ রেজামন্দী হাছিল করা তো যাবেই না বরং মুসলমান হওয়াও যাবেনা |
আর মাদ্রাসা, কিতাবাদি ও খানকা শরীফ ইত্যাদি দ্বারা (যেখানে পূর্ণ ইসলামী শিক্ষা বা ইসলামী শিক্ষার একশত ভাগই শিক্ষা দেয়া হয়) “দ্বীনের খেদমত কম হয়”, এ কথাই বা কি করে শুদ্ধ হতে পারে?
কারণ ইসলামের শুরু থেকেই উলামায়ে হক্কানী-রব্বানীগণ ইলমে ফিক্বাহ্ ও ইলমে তাসাউফ শিক্ষা দিয়ে আসছেন | এই ইলমে ফিক্বাহ্ শিক্ষা দেয়ার পদ্ধতিই পরবর্তীতে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ ধারণ করে মাদ্রাসায় পরিণত হয়, যার ধারাবাহিকতা তখন থেকে এ পর্যন্ত চলে আসছে | ইলমে তাসাউফ শুরু থেকেই আওলিয়া-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ উনাদের খানকা শরীফে শিক্ষা দিয়ে আসছেন যা এখন পর্যন্ত বিদ্যমনা রয়েছে |
আর এ যাবত যত আওলিয়া-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম, ইমাম-মুজতাহিদ হয়েছেন | উনারা সকলেই মাদ্রাসার ওস্তাদ ও খানকা শরীফ থেকে ইলমে ফিক্বাহ্ ও ইলমে তাসাউফ শিক্ষা করে ইমাম-মুজতাহিদ, আওলিয়া, বুজুর্গ এবং মুহাক্কিক ও মুদাক্কিক আলেম হয়েছেন |
তাহলে একথা কি করে শুদ্ধ হতে পারে যে, মাদ্রাসা, কিতাবাদি ও খানকা শরীফের মাধ্যমে দ্বীনের খেদমত কমই হয়ে থাকে?
অতএব, প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের উল্লেখিত মন্তব্য ও বক্তব্য দ্বীনী শিক্ষার প্রতি তোহমত ও এহানতের শামিল, যা সম্পূর্ণরূপে কুফুরীর অন্তর্ভূক্ত |
উল্লেখ্য যে, তাবলীগ জামায়াতের লোকেরা যে ছয় উছূল ভিত্তিক তাবলীগ করাটাকে ইসলামের ব্যাপক খিদমত বলে ধারণা করে, তা আমাদের নিকট মক্তবী শিক্ষার অন্তর্ভূক্ত | মূলতঃ তা তো সেই মাদ্রাসা ও খানকা শরীফেরই ফল | কেননা উক্ত ছয় উছূল ভিত্তিক তাবলীগ জামায়াতের যিনি বাণী বা প্রতিষ্ঠাতা- মাওলানা ইলিয়াস ছাহেব, তিনি তো মাদ্রাসাই লেখা পড়া করেছে এবং মাওলানা রশীদ আহমদ গাঙ্গুহী ছাহেবের হাতে বাইয়াত হয়ে, তার খানকায় যাতায়াতের মাধ্যমে, ইলমে তাসাউফ চর্চা করে খিলাফত হাছিল করেছে | তদ্রুপ মাওলানা জাকারিয়া ছাহেব, যিনি তাবলীগী নেছাব ও অন্যান্য তাবলীগী কিতাবাদি প্রনয়ণ করেছে, তিনিও মাদ্রাসায় লেখা পড়া শিক্ষা করেছে এবং মাওলানা খলীল আহমদ সাহরানপুরী ছাহেবের হাতে বাইয়াত হয়ে ইলমে তাসাউফ চর্চা করে খিলাফত লাভ করে নিজেই পীর ছাহেব হয়েছিল এবং লোকদের বাইয়াতও করেছিল | আর প্রচলিত তাবলীগ জামায়াত, যার কার্যক্রম মাত্র প্রায় ৯০ বছর যাবত চলে আসছে | যা আমাদের নিকট মক্তবী শিক্ষার অন্তর্ভূক্ত, যদি আক্বীদা শুদ্ধ থাকে | তাহলে এই মক্তবী শিক্ষা দ্বারা ইসলামে কতটুকু খিদমত করা সম্ভব?
আর বলার অপেক্ষাই রাখেনা যে, প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের সকল লোকদের জন্যে ওয়াজিব-আক্বীদা শুদ্ধ রেখে মক্তবী শিক্ষা সমাপন করে মাদ্রাসার ওস্তাদের নিকট কিতাবাদি পাঠ করে ও হক্বানী-রব্বানী পীর ছাহেবগণের খানকা শরীফে গিয়ে কমপক্ষে ইলমে ফিক্বাহ্, ইলমে তাসাউফের ফরয পরিমাণ ইলম অর্জন করা ও খালেছ মুসলমান অর্থাৎ মু’মিনে কামেল হওয়া | যেহেতু মহান আল্লাহ্ পাক বলেন, “হে ঈমানদারগণ ঈমান আন, অর্থাৎ মু’মিনে কামেল হয়ে যাও |” (সূরা নিসা/১৩৬)
অন্যথায় ক্বিয়ামত পর্যন্ত প্রচলিত ছয় উছূল ভিত্তিক তাবলীগ জামায়াতের মক্তবী শিক্ষায় রত থাকলেও কখনই পরিপূর্ণ মুসলমান বা মুমিনে কামেল হওয়া সম্ভব নয় |
অতএব, প্রমাণিত হলো যে, “মাদ্রাসা ও খানকা শরীফ দ্বারা দ্বীনের খিদমত কমই হয়” প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের এ বক্তব্য বা ধারণা সম্পূর্ণই মিথ্যা, যা বিভ্রান্তিকর, অবান্তর ও অজ্ঞতামূলক, শরীয়তের খিলাফ | এধরণের বক্তব্য বা ধরণা ত্যাগ করা সকলের জন্যই অবশ্য কর্তব্য |
©somewhere in net ltd.