নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মুক্তমনা, সকল রকমের সংস্কার মুক্ত, আমি ধর্মভীরু হলেও ধর্মান্ধতা আমাকে কখনো গ্রাস করে নিতে পারেনি।আমি সুস্থ্য চিন্তা আর মানবিক মূল্যবোধে বিশ্বাসী। আমার শক্তি আমার আবেগ আবার সে আবেগ-ই আমার বিশেষ দুর্বলতা। নেহায়েত সখের বশে এক আধটু কাব্য চর্চা করি, এই আর কি। প্রিয় বিষয় সাহিত্য, ইতিহাস, ধর্ম, সংগীত, দর্শন, দেশ ভ্রমন আর গোয়েন্দা সিরিজের বই পড়া।ভীষণ ভোজন রসিক আমি। জন্ম যদিও চট্টগ্রামে কিন্তু ঢাকা শহরেই লেখা পড়া আর বেড়ে উঠা। আমার জীবনের গল্প তাই আর দশ জনের মতো খুবই সাদামাটা।
নাতে রাসুল – “সবছে আওলা ও আলা হামারা নবী”
রচনায়- ইমামে আহলে সুন্নাত আলা হযরত আহমদ রেযা খান বেরলভী(রহঃ)
কাব্যানুবাদ – শাহজাহান মোহাম্মদ ইসমাঈল
প্রসঙ্গ কথা- আলা হযরত আহমদ রেযা খান বেরলভী’র(রহঃ)(১৮৫৬খৃঃ-১৯২১খৃঃ) বিখ্যাত এ কসীদাটি এ দেশের আপামর সুন্নী জনগনের মাঝে খুবই জনপ্রিয়।ইতিহাস বলে, এ দেশবাসীর সাথে আলা হযরত আহমদ রেযা খান বেরলভী(রহঃ)কে পরিচিত করেছেন, সীমান্ত পীর, পেশোয়ারী সাহেব এবং শাহানশাহে সিরিকোটি নামে খ্যাত হযরত আলহাজ হাফেজ সৈয়্যদ আহমদ শাহ সিরিকোটি(রহঃ)(১৮৫৬খৃঃ-১৯৬১খৃঃ)।১৯৫৪ সালে এশিয়ার অন্যতম সুবৃহৎ দ্বীনী শিক্ষাকেন্দ্র জামেয়া আহমদিয়া সুন্নীয়া প্রতিষ্ঠাকালে তিনি বলেছিলেন, “ইস জামেয়া কা বুনিয়াদ মসলকে আলা হযরত প্র দিয়া যাতা হ্যায়”।অর্থাৎ “এ জমেয়ার ভিত্তি আলা হযরতের মতাদর্শের উপর দেয়া গেলো”।
১৯২৫ খৃষ্টাব্দে তিনি বার্মার(বর্তমানে মায়ানমার)রাজধানী রেঙ্গুনে উপমহাদেশের প্রাচীনতম স্বেচ্ছাসেবী দ্বীনী প্রতিষ্ঠান আনজুমানে শুরায়ে রহমানিয়া প্রতিষ্ঠা করেন।যা পরে ইষৎ পরিবর্তিত হয়ে আনজুমানে রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নীয়া নাম পরিগ্রহ করেছে।তাঁর প্রতিষ্ঠিত এ আনজুমান বর্তমানে বাংলাদেশে একটি একক, বৃহত্তম সেবামুলক প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃ্তি ও প্রতিষ্টা পেয়েছে এবং অদ্যাবধি অত্যন্ত সফল ও সুচারুভাবে দ্বীনী খিদমত আঞ্জাম দিয়ে যাচ্ছে।তাঁদের কর্মকান্ড সমুহের মধ্যে রয়েছে সুন্নীয়ত ভিত্তিক একটি মাসিক পত্রিকার প্রকাশনা, দরুদ শরীফের সর্ববৃহৎ কিতাব ‘মজমুয়ায়ে সালাওয়াতে রাসুল’ এর সফল প্রকাশনা, ‘সাজরা শরীফ’, আওলিয়ায়ে কিরামদের অযীফার কিতাব ‘আওরাদে কাদেরিয়া রহমানিয়া’ ‘মাসলা মাসায়েল ও নামাজ শিক্ষা’ হযরত তৈয়্যব শাহ (রহঃ) এর জীবনী’, ‘আমলে শরীয়ত’ ‘মজমুয়ায়ে সালাওয়াতে রাসুল’ এর প্রথম কয়েকটি পারার বঙ্গানুবাদ প্রকাশ।বিভিন্ন ধর্মীয় পুস্তকাদির প্রকাশনা ও প্রচারের দায়িত্ব নিয়ে আনজুমানে রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নীয়া এক অসাধারন দ্বীনি খেদমত করে যাচ্ছে।এছাড়া আনজুমানের পরিচালনাধীন প্রায় শতাধিক মাদ্রাসায় সক্রিয় পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে আঞ্জুমান সুন্নীয়তের জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
বাংলাদেশে আনজুমানে রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নীয়ার অধীনস্থ সবকটি মাদ্রাসায় প্রতিদিন জাতীয় সংগীতের পাশাপাশি আলা হযরতের উপরোক্ত নাত শরীফটি গীত হয়। এছাড়া মিলাদ মাহফিল, খতমে গাউসিয়া, গিয়ারভী শরীফ ও সিলসিলার মাহফিল সমুহে এ নাতটি পরিবেশিত হয়ে থাকে।উল্লেখ্য যে, আলা হযরতের নাত সম্পর্কে বিংশ শতকের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সুফী সাধক ও সংস্কারক হযরত শাহ সূফী তৈয়্যব শাহ (রহঃ)(১৯১৬খৃঃ-১৯৯৬খৃঃ) ‘পয়গামাতে ইয়াওমে রেযা’ নামক পাকিস্তান থেকে প্রকাশিত এক সাময়িকীতে মন্তব্য করেছেন যে, “আলা হযরত কা নাতিয়া কালাম সুন নে সে ঈমান তাজা হোতা হ্যায়’’।আলা হযরত সম্পর্কে তিনি অতি উচ্চ ধারণা পোষন করতেন।তাই ৭০ এর দশকে এক পত্র মারফত তিনি বাংলাদেশস্থ আনজুমানে রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নীয়ার কর্মকর্তাদের এ মর্মে নির্দেশ দেন যে, “আনজুমানের অধীনস্থ প্রতিটি মাদ্রাসায় যেন প্রতিদিন আলা হযরতের নিম্নোক্ত নাত শরীফটি পাঠ করা হয়।”
কাব্যানুবাদঃ
“সবছে আওলা ও আলা, হামারা নবী”
১।সবছে আওলা ও আলা, হামারা নবী,
সবছে বালা ও আলা, হামারা নবী।।
সবার সেরা, রবের পেয়ারা, সে আমাদের নূর নবীজী,
ভালোর চেয়ে ভালো, সেরাদের সেরা, আমাদের নূর নবীজী।।
২।আপনে মাওলাকা পেয়ারা, হামারা নবী,
দোনো আলমকা দুলহা, হামারা নবী।।
আপন প্রভূর প্রিয়ভাজন, আমাদের নূর নবীজী,
দুই ভূবনের অতিথি, সে আমাদের নূর নবীজী।।
৩।বজমে আখেরকা শামা, ফেরুজা হুয়া,
নুরে অয়াউয়ালকা জলওয়া, হামারা নবী।।
সবার শেষে ধরার মাঝে, জ্বললো যে তাঁর নুরের বাতি।
সবার আগে যে নুর পয়দা, নবীজী তাঁর প্রতিচ্ছিবি।।
৪।জিসকা শায়া হ্যায়, আরশে খোদা পর জুলুছ,
হ্যায় উয়হ সুলতানে, ওয়ালা, হামারা নবী।।
খোদার পাক আরশ জুড়ে, যাঁর ছায়া বিরাজে,
তেমনি এক মহান রাজন, আমাদের নূর নবীজী।।
৫।বুঝগেয়ী জিসকে আগে সবহি মশয়েলে,
শামা উয়হ লেকর আয়া, হামারা নবী।।
আগমনে যাঁর নিস্প্রভ, সব দীপ শিখার বাতি,
এমনি এক নুরের বাতি, নিয়ে এলেন নুর নবীজী।।
৬।জিনকা তলউকা দো বুন্দ হ্যায় আবে হায়াত,
হ্যায় উয়হ জানে মসীহা, হামারা নবী।
যাঁর দু’হাতের তালুর মাঝে, আবে হায়াত লুকিয়ে আছে,
তেমনি এক প্রাণসঞ্চারী প্রস্রবণ, আমাদের নূর নবীজী।।
৭।আরশ কুরছি কি থি, আয়না বনদিয়া
ছোয়ে হক যব, সুদহারা হামারা নবী।।
আরশ কুরছির প্রতিচ্ছিবি, আমাদের নূর নবীজী,
সত্য যখন লুক্কায়িত, উদ্ধারিলেন মোর নবীজী।
৮।খলক সে আউলিয়া, আউলিয়া সে রাসুল,
আউর রাসুলুছে আলা হামারা নবী।।
সৃষ্টি থেকে আউলিয়া, আউলিয়া থেকে রাসুল বড়
আর রাসুলগণের মাঝে সেরা, আমাদের নূর নবীজী।।
৯।আসমানোহি পর সব নবী রাহ গেয়ে,
আরশ আযমপে পৌঁহছা হামারা নবী।।
সকল নবী রয়ে গেলেন, আকাশেরি এক কোনে,
আরশে গিয়ে মোর নবীজী, দেখা করেন প্রভূর সনে,
১০।হুসন খাতা হ্যায় জিসকে, নিমক কি কসম
হ্যায় উয়হ মলিহে দিলারা,হামারা নবী।।
সৌন্দর্য সুধা করে কসম, সে মহান প্রতিপালকের,
সে প্রেমাস্পদ, মনের মানুষ, আমাদের নূর নবীজী।।
১১।জিকর সব ফিকে জবতক না-মজকুর হো,
নমকিন হুসনেওয়ালা, হামারা নবী,
সবার কথা ব্যর্থ জানি, যদি না নাও তাঁর পাক নাম খানি,
মাধুর্য্যমন্ডিত সৌন্দর্যে ভরা, আমাদের নূর নবীজী।।
১২।জিসকি দো বোন্দ হ্যায় কাওসার ও সাল সাবিল,
হ্যায় উয়হ রহমতকা দরিয়া, হামারা নবী।।
যার দু’টি দয়ার ফোটা, কাওসার ও সাল সাবিল,
সে রহমতের মহাসাগর, আমাদের নূর নবীজী।।
১৩।যেয়ছে ছবকা খোদা এক হ্যায় ওয়ছে হি,
ইনকা উনকা তোমহারা, হামারা নবী।।
মহান প্রভূ, আল্লাহ মোদের, সবার তরে এক যেমনি,
তেমনি ও ভাই, তোমার আমার সর্বজনার নূর নবীজী।।
১৪।করনো বদলি রাসুলোকি হোতি রাহি,
চাঁদ বদলিকা নিকলা, হামারা নবী।।
একের পর এক, রাসুলগনের আসাযাওয়া ধরণী পরে
মোর নবীজী পূর্ণিমার চাঁদ, দীপ্তি ছড়ান সবার মাঝে।।
১৫।কওন দেতা হ্যায় দেনেকো মু চাহিয়ে,
দেনেওয়ালা হ্যায় সাচ্ছা হামারা নবী।।
কে আছে ভাই এমন দাতা, পাবে তুমি, যা চাহ তা,
সত্যিকারের দাতা সে যে, আমাদেরি নূর নবীজী।।
১৬।কেয়া খবর কিতনে তারে খিলে, ছুপ গেয়ে,
পর না ডুবে, না ডুবা হামারা নবী।।
আকাশেতে কত তারা, ডুবলো যে তার হিসাব কোথা?
আমার নবী নক্ষত্র এক, ডুবে না সে, ডুবলে ধরা।।
১৭।মুলকে কাওনাইন মে আম্বিয়া তাজেদার
তাজেদারো কা আঁকা হামারা নবী।।
সুবিশাল এ জগত মাঝে, নবীগণই মুকুটধারী,
মুকুটধারী সর্বজনার শিরোমনি মোর নবীজী।।
১৮।লা মঁকা তক উজলা হ্যায় জিসকো উয়হ হ্যায়,
হার মঁকা কা উজালা হামারা নবী।।
লা মকানে আলো ছড়ায়, সে আমারি নূর নবীজী,
সর্বস্থানে, সবার হৃদে দ্যুতি ছড়ান, মোর নবীজী।
১৯।ছারে আচ্ছো মে আচ্ছা, ছমজিয়ে জিছে,
হ্যায় উছ আচ্ছে ছে আচ্ছা হামারা নবী।।
ভালো সে যতই ভালো, হোক না গিয়ে,
জগতের সব ভালোর মাঝে অনন্য, সে আমার নবী।।
২০।ছারে উঁচুমে উঁচা, ছমজিয়ে জিছে,
হ্যায় উছ উঁচোসে উঁচা, হামারা নবী।।
জগতের সব উঁচুর মাঝে, এভারেষ্ট যে ঐ বিরাজে,
মোর নবীজীর শানটি সদাই, তেমনি সকল উঁচুর ‘পরে।
২১।আম্বিয়াসে করো আরজ কেঁউ মালেকো,
কেয়া নবী হ্যায় তোমহারা হামারা নবী।।
নবীর কাছে ফেরেশতারা, পেশ করেন না আরজিনামা,
বড়ই মহান, উঁচুতে তাঁর শান, আমাদেরি নূর নবীজীর।।
২২।জিছনে টুকড়ে কিয়ে হেঁ ক্কমরকো উয়হ হ্যায়,
নুরে ওয়াহাদাত কা টুকড়া হামারা নবী।।
চাঁদকে দুই টুকরা করেন, আঙ্গূলের এক ঈশারাতে।।
একক সত্তার টুকরা যে এক, আমাদেরি নূর নবীজী।।
২৩।ছব চমক ওয়ালে, উজলুঁমে চমকা কিয়ে,
আন্ধে শিশো মে চমকা হামারা নবী।।
সকল প্রদীপ আলো বিলায়, আলোকিত ঐ সদনে,
আঁধার রাতে পূর্ণ শশী আমাদেরি নূর নবীজী।।
২৪।জিসনে মুরদা দিলোঁকো দি, উমরে আবদ,
হ্যায় উয়হ জানে মসীহা হামারা নবী।।
মৃতবৎ অন্তরে যিনি, সঞ্চারিলেন জীবন সুধা,
তেমনি এক সঞ্জীবণী, প্রসবন সে আমারি নবী।।
২৫।গমজদোঁকো রেজা মুশদা দি’জে কেহ হ্যায়,
বে কঁছুকা ছাহারা, হামারা নবী।
বিপদাপন্ন আর দুঃখীজনে, সঞ্চারিলেন স্বস্তিবাণী,
সাথীহারা নিরাশ্রয়ের সাথী, সে যে আমার নবী।।
-শেষ -
©somewhere in net ltd.