নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মুক্তমনা, সকল রকমের সংস্কার মুক্ত, আমি ধর্মভীরু হলেও ধর্মান্ধতা আমাকে কখনো গ্রাস করে নিতে পারেনি।আমি সুস্থ্য চিন্তা আর মানবিক মূল্যবোধে বিশ্বাসী। আমার শক্তি আমার আবেগ আবার সে আবেগ-ই আমার বিশেষ দুর্বলতা। নেহায়েত সখের বশে এক আধটু কাব্য চর্চা করি, এই আর কি। প্রিয় বিষয় সাহিত্য, ইতিহাস, ধর্ম, সংগীত, দর্শন, দেশ ভ্রমন আর গোয়েন্দা সিরিজের বই পড়া।ভীষণ ভোজন রসিক আমি। জন্ম যদিও চট্টগ্রামে কিন্তু ঢাকা শহরেই লেখা পড়া আর বেড়ে উঠা। আমার জীবনের গল্প তাই আর দশ জনের মতো খুবই সাদামাটা।
১। হযরত হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কী সাহেব - দেওবন্দীদের সর্বজনমান্য পীর হযরত হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কী সাহেব (১৮১৭ খৃঃ-১৮৯৯ খৃঃ) মাওলানা আশরাফ আলী থানবী ও মৌলভী রশীদ আহমদ গাঙ্গুহী’র পীর মুহাজিরে মক্কী সাহেব তাঁর সুবিখ্যাত কিতাব “ফয়সালা হাফত মাসআলা”তে নিজে মিলাদ-কিয়াম করার কথা লিখেছেন। তাই তাঁর সুদীর্ঘ মক্কী জীবনে এর ছায়া পড়াটাই স্বাভাবিক। ঐ কিতাবের ১ নং মাসাআলা ‘মাওলুদ শরীফ অধ্যায়ে তিনি লিখেছেন, “আমার নীতি হল, আমি মীলাদ মাহফিলে উপস্থিত হই, এমনকি মিলাদ মাহফিলকে বরকতময় করে প্রতি বছর আমি উহা উদযাপন করি এবং কিয়াম করার মাধ্যমে নবী প্রেমের স্বাদ লাভ করি।” উক্ত অধ্যায়ে তিনি আরও বলেন, “রাসুল (দঃ) মিলাদ শরীফে উপস্থিত হন, এ আকীদা বা বিশ্বাসকে কুফুরী ও শিরিক বলা বাড়াবাড়ি। কেননা মীলাদ মাহফিলে রাসুল(দঃ) উপস্থিত হওয়া সম্ভব। এটা যুক্তি সংগত ও কিতাবগত দলীল দ্বারা প্রমানিত। বরং অনেক জায়গায় রাসুল (দঃ) আগমন করেছেন তার প্রমান ও আছে।”
“ইমদাদুল মুশতাক” কিতাবে তিনি বলেছেন, “মিলাদ-কিয়ামকে অস্বীকার করা মূলতঃ
একটা অত্যন্ত উত্তম কাজ থেকে মুসলমানদেরকে বিরত রাখার নামান্তর। মীলাদের সময় সম্মানার্থে দাঁড়িয়ে নবীয়ে করীম (দঃ) এর প্রতি সালাম দেয়াতে কোন ক্ষতি নাই।”
দেওবন্দী মুরুব্বীদের জীবনীমূলক গ্রন্থ “আরওয়াহে ছালাছা”-র ৩২১ নং পৃঃ বর্ণিত একটা ঘটনার কথা এখানে প্রাসংগিক হবে বলে মনে করি। তা হল, “হযরত হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কী সাহেব মক্কা শরীফে থাকাকালীন সময়ে একবার সেখানে রশীদ আহমদ গাঙ্গুহী উপস্থিত ছিলেন। মুহাজিরে মক্কী সাহেব তখন রশীদ আহমদ গাঙ্গুহীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “অমুক জায়গায় মীলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হচ্ছে, তুমি যাবে?” রশীদ আহমদ গাঙ্গুহী সাথে সাথে তাঁর পীর সাহেবের এ অনুরোধ অস্বীকার করে বলে বসলেন, “না। আমি যাবো না। আমি হিন্দুস্থানে এটা নিষেধ করে থাকি।” হায়রে! এ কেমন মুরীদ? যে কীনা নিজের পীরের নির্দেশ মানেনা? উলটা নিজের পীরের আমলের বিরুদ্ধে ফতোয়াবাজী করে! পীরের পূণ্যময় আমলকে হারাম, নাজায়েজ, বিদআত, ইত্যাদি বলার ধৃষ্টতা দেখায়। তাওবা। আস্তাগফিরুল্লাহ!!
২। হযরত শাহ আবদুর রহীম দেহলভী (রহঃ) এর আমল - হযরত শাহ ওয়ালীউল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলভী (রহঃ) তাঁর পিতা হযরত শাহ আবদুর রহীম দেহলভী’ (রহঃ) এর বরাত দিয়ে বলেন, “আমার বুযুর্গ পিতা আমার কাছে ব্যক্ত করেছেন যে, হুযুরে পাকের (দঃ) জন্ম তারিখে আমি তাঁর রূহের সওয়াব রেছানীর জন্য হামেশা খানার আয়োজন করতাম। এক বছর সে তারিখে খানার আয়োজন করতে না পেরে কিছু চনা আমি লোকজনদের মধ্যে বিতরণ করলাম। অতঃপর আমি হুজুরে পাক (দঃ) কে দেখতে পেলাম, অত্যন্ত উজ্জল আর হাসিমাখা মুখ নিয়ে তিনি উপবিষ্ট আর সেই চনাগুলো তাঁর সম্মুখে রাখা। (সূত্র- আদদুররুস সামীন ফি মুবাসশারাতিন নাবীইয়্যিল আমীন) ।
৩। হযরত শাহ ওয়ালীউল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলভী - হযরত শাহ ওয়ালীউল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলভী (রহঃ) (১৭০৩ খৃঃ-১৭৬২ খৃঃ) তাঁর “ফুয়ুযুল হেরেমাইন” কিতাবে মীলাদে শরীক হবার কথা উল্লেখ করে বলেন, “আমি একবার হুজুরে পাক (দঃ) এর জন্মের তারিখে মক্কা মুয়াজ্জমার সেই ঘরে হাজির ছিলাম, যেখানে হযুরের (দঃ) শুভ জন্ম হয়েছিল। লোকজন হযুরের (দঃ) উপর দুরুদ পাঠ করছিলেন, হযুরে পাকের (দঃ) জন্ম সময়কার এবং নবুয়ত প্রকাশের আগেকার আশ্চর্য ও অলৌকিক ঘটনাবলী বর্ণণা করছিলেন, এমন সময় হটাৎ দেখতে পেলাম নুর চমকাচ্ছে। আমি এ নুরগুলোর প্রতি ধ্যান করলে বুঝতে পারলাম, এটা সে সমস্ত ফেরেশতাদের নুর যারা এ ধরণের মজলিসে উপস্থিত হন। আমি আরো দেখতে পেলাম যে, ফেরেশতাদের নুরসমূহ রহমতের নুরের সাথে মিশে যাচ্ছে”। সুবহানাল্লাহ!!
৪। হযরত শাহ্ রফীউদ্দীন মুহাদ্দিস দেহলভী (রহঃ) - হযরত শাহ ওয়ালীউল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলভী’র পুত্র (রহঃ) হযরত শাহ্ রফীউদ্দীন মুহাদ্দিস দেহলভী (রহঃ) কুরআনে পাকের একজন সফল অনুবাদক। তিনি এক ফতওয়াতে বলেন, মীলাদ শরীফের জন্য এবং মানুষদের একস্থানে জড়ো করার জন্য রবিউল আউয়াল মাসে দিন তারিখ ঠিক করা আশুরার দিন অথবা মুহররম মাসে কিংবা অন্য মাসে ঈমাম হুসাঈন রাদিয়াল্লাহু আনহু’র আলোচনার জন্য মাহফিল আয়োজন করা , সালামী বা শরীয়ত সম্মত মর্সীয়া (শোক গাঁথা) শ্রবণ করা শুহাদায়ে কারবালার অবস্থা স্মরণে অশ্রু বিসর্জন ও কান্না করা ইত্যাদি জায়েয ও বৈধ। সূত্র – শামে কারবালা, মাওলানা শফী ঊকারভী, পৃষ্টা- ১৫৩।
এখানে উল্লেখ্য মাওলানা রফীউদ্দীন সাহেব দেওবনদী, ওহাবী, তাবলীগীদের পরম পূজনীয়। তিনি “তারিখে হেরামাইন” কিতাবে লিখেছেন, “যে নবীয়ে করীম (দঃ) এর মীলাদ বা বিলাদাত শরীফ বর্ণনার মুহুর্তে কিয়াম করা ঐ সমস্ত আলেমগন মুসতাহসান বা উত্তম আমল বলেছেন, যারা হলেন যুগের মুহাদ্দিস ও ফকীহ।”
৫। শায়খ আবদুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী রহঃ - শায়খ আবদুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী রহঃ (১৫৫১-১৬৪৩ খৃঃ) তাঁর “মা সাবাতা বিস সুন্নাহ কিতাবে লিখেছেন, “ সর্বদা এ নিয়ম চলে আসছে যে, হুযুরে পাকের (দঃ) জন্ম মাসে মুসলমানগণ মীলাদ অনুষ্ঠান করে মানুষের জন্য দাওয়াতী খানার আয়োজন করেন। ঐ দিন সমূহে বিভিন্ন ধরণের সাদকা-খয়রাত করেন, আনন্দ প্রকাশ করেন, মুক্ত হস্তে দান দক্ষিণা করেন। অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে মীলাদ পাঠ করে তাঁরা আল্লাহ্র দয়া ও বরকত লাভ করে থাকেন। মীলাদ শরীফ পাঠের পরীক্ষিত খাছিয়ত (বৈশিষ্ট্য) এই যে, এতে সারা বছর আল্লাহ্র পক্ষ থেকে আমান বা নিরাপত্তা ও শান্তি লাভ হয় এবং মনের আশা পূর্ণ হয়ে থাকে। আল্লাহ্ রহম করুন, সেই ব্যক্তির প্রতি যিনি হুযুরের জন্ম তারিখকে আনন্দ খুশীর দিন বানিয়ে নেন, যেন এতে রুগ্ন হৃদয় আরো রোগাক্রান্ত হয়।” আর “মাদারিযুন নুবুয়াত” কিতাবে তিনি লিখেছেন, “আবু লাহাবের আযাব লাঘবের হাদিসের মধ্যে বিশেষ করে মীলাদ অনুষ্ঠানকারীদের জন্য দলীল রয়েছে, যারা হুযুরের (দঃ) জন্ম তারিখে খুশী ও উল্লাস প্রকাশ করেন এবং মাল খরচ করে থাকেন।”
৬। মুফতি এনায়েত আহমদ সাহেব - ‘তারীখে হাবীবে ইলাহ’ পুস্তকের লেখক মুফতি এনায়েত আহমদ সাহেব লিখেছেন, “মক্কা-মদীনা শরীফ এবং অধিকাংশ ইসলামী শহরে প্রচলন হলো রবিউল আউয়াল মাসে মীলাদ শরীফের অনুষ্ঠান করা। মুসলমানদেরকে জমায়েত করে হুজুরে পাক (দঃ) এর জন্মের আলোচনা করা, দরুদ শরীফ বেশী বেশী করে পাঠ করা, দাওয়াতী খানা অথবা শিরণী বিতরণ করা। এ কাজটি অনেক বরকতের কারন হয় এবং এর দ্বারা হুজুরে পাক (দঃ) এর সাথে মুহাব্বত বাড়ে। ১২ রবিউল আউয়াল তারিখে মদীনা মুনাওয়ারার মসজিদে নববীতে এ বরকতময় মাহফিলটি অনুষ্ঠিত হয়। আবার মক্কা মুয়াজ্জমায় হুজুরে পাক (দঃ) এর জন্মের স্থানেও। সুতরাং মুসলমানদের উচিত, হুজুরের (দঃ) মু্হাব্বতের তাগিদে যেন মীলাদ অনুষ্ঠান করেন।”
৭। শাহ আবদুল হক এলাহাবাদী - হযরত শাহ আবদুল আযীয মুহাদদিসে দেহলবী (রহঃ) এর শিষ্য ছিলেন শাহ মুহাম্মদ ইসহাক দেহলভী। তাঁর স্থলাভিসিক্ত হন উসতাদুল উলামা হযরত শাহ আবদুল গনী মুহাদদিসে দেহলবী মুহাজিরে মাদানী (রহঃ)। এই মাদানী সাহেবের শিষ্য শাহ আবদুল হক এলাহাবাদী লিখেছেন, “আমাদের শায়খ ও মুরশীদ হযরত মাওলানা শাহ আবদুল গনী সাহেব নাক্সবন্দী, মুজাদ্দেদীকে আমি দেখেছি, মদিনায় রবিঊল আউয়াল মাসের ১২ তারিখে রবিবার দিনে মসজিদে নববীতে মীলাদ শরীফের অনুষ্ঠানে শরীক হন এবং মসজিদে নববীর আঙ্গিনায় মিম্বরে বসে একের পর এক ইমামগণ রওযা শরিফের দিকে মুখ করে হুজুরে পাকের (দঃ) জন্মের যে আলোচনা করছিলেন তা শুনেন। কিয়ামের সময় সবার সাথে কিয়ামও করেন।এ পবিত্র মাহফিলে যে রকম হাল ও বরকত প্রকাশ পেয়েছিল, তা বলার ভাষা নেই।”
৮। হযরত শাহ আবদুল আযীয মুহাদদিসে দেহলবী (রহঃ) –(১৭৪৬- ১৮২৪ খৃঃ) -
তিনি প্রতি বছর মীলাদ শরীফের অনুষ্ঠান করতেন। মুরাদাবাদের সমাজপতি আলী মুহাম্মদ খানের নামে শাহ্ সাহেব যে চিঠি লিখেছিলেন, সেখানে তিনি স্বীয় আস্তানায় বার্ষিক মিলাদ মাহফিলের কথা ব্যক্ত করে লিখেন, “থেকে গেল মীলাদ অনুষ্ঠানের কথা। এর বিবরণ হল এই যে, রবিঊল আউয়াল মাসের ১২ তারিখে পূর্ব আভাসমত লোক জন এসে সমবেত হয়ে দরূদ শরীফ পাঠে রত হন। আমি ফকীর এসে প্রথমে হুজুরে পাকের (দঃ) শান ও মান সম্বলিত কিছু হাদীস তারপর হুযুরের দঃ জন্ম দুধ পান, শরীর মুবারকের গঠন-আকৃতি এবং তাঁর জীবনের অলৌকিক কিছু ঘটনাবলী আলোচনা করি। অতঃপর উপস্থিত খানা বা শিরনীর উপর ফাতিহা পাঠ করে তা উপস্থিত লোকজনের মধ্যে বিতরণ করা হয়। (সূত্র - শাহ আবদুল হক এলাহাবাদী প্রণীত – আদ দুররুল মুনাজ্জম)।
৯। হযরত শাহ্ মুহাম্মদ ইসহাক মুহাদদিসে দেহলবী (রহঃ) - হযরত শাহ আবদুল আযীয মুহাদদিসে দেহলবী (রহঃ) এর স্থলাভিসিক্ত শায়খুস শুয়ুখ হযরত শাহ্ মুহাম্মদ ইসহাক মুহাদদিসে দেহলবী (রহঃ) স্বীয় কিতাব “মিয়াতা মআসায়েল” এর ১৫ নং মাসআলায় লিখেন, “মীলাদ শরীফের উপর উরসের কিয়াস করা ঠিক নয়। কেননা মীলাদ শরীফের মধ্যে হুযুর পাকের (দঃ) জন্মের আলোচনা হয়। ইহা আনন্দ খুশীর কারণ, আর আনন্দ খুশীর জন্য সমবেত হওয়া বিদআত এবং শরীয়ত বিরোধী কাজ থেকে মুক্ত হলে জায়েজ আছে। হুযুরের (দঃ) জন্মের খুশির মত খুশি আর কোন কিছুতেই নেই।”
হযরত শাহ্ মুহাম্মদ ইসহাক মুহাদদিসে দেহলবী (রহঃ) এর শিষ্য মাওলানা ফযলুর রহমান গঞ্জে মুরাদাবাদী (রহঃ) এর উক্তি উল্লেখ করে জনাব খাজা নুরুল হাসান সাহেব “রিসালা আসরারে মুহাব্বাত” এ লিখেছেন, “হযরত কুতুবুল আকতাব মাওলানা ফযলুর রহমান গঞ্জে মুরাদাবাদী (রহঃ) ফরমান, আমি মাওলানা ইসহাক সাহেব দেহলবী (রহঃ) এর সাথে মীলাদ শরীফে যেতাম।” সূত্র – “মখজনে আহমদী” কৃত সৈয়্যদ মুহাম্মদ আলী।
১০। মাওলানা আশরাফ আলী থানবী মাওলানা আশরাফ আলী থানবী’র মতে, “ হুযুরে পুর নূর (দঃ) মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠান অন্যান্য উত্তম কার্যাবলীর মত সাওয়াব ও উত্তম কাজ। যদি তা খারাপ বিদআত থেকে মুক্ত হয় তবে এর চেয়ে ভাল ও উত্তম কাজ আর কীইবা হতে পারে? এ আলোচনার মাহফিল যে উত্তম কাজ তার সমর্থনে তিনি একজন কবির একখানা কবিতার দুটি চরণও উদ্ধৃত করেছেন। তা হলো,
“প্রেমিকের তরে তব আলোচনাই অমৃত,
সে আলোচনাহীন স্থানেই আছে মরীচীকা মূর্ত।“
( সূত্র- ইমদাদুল ফাতাওয়া, চতুর্থ খন্ড, পৃঃ ৫৩)।
১১। মাওলানা কাশেম নানুতুবি – দারুল উলুম দেওবন্দের প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা কাশেম নানুতুবি এর জামাতা মাওলানা আবদুল্লাহ সাহেব, আদ্দুরুল মুনাজ্জাম কিতাবের বিষয়ে অভিমত লিখতে গিয়ে মাওলানা কাশেম নানুতুবি ও দেওবন্দের হেড মুহাদ্দিস মাওলানা ইয়াকুব নানুতুবি সম্পর্কে লিখেছেন, “আলেমকুল শ্রেষ্ট, উস্তাজুল আসাতিজা মাওলানা মাওলানা ইয়াকুব সাহেব (প্রধান শিক্ষা গুরু মাদ্রাসায়ে আরাবিয়া দেওবন্দ) স্বয়ং বহু বার দেওবন্দের মীলাদ মাহফিলে শরীক হয়েছেন। সবাই কেয়াম করার সময় তিনিও কেয়াম করেছেন এবং বলেছেন, যদিও ইহার আসল যেভাবে থাকা উচিত ছিল সেভাবে নেই। তথাপিও হুযুরের জন্ম আলোচনার সম্মানার্থে সারা মজলিস যখন দাঁড়িয়ে যাবে, তখন না দাঁড়িয়ে বসে থাকা বেয়াদবী মুক্ত নয়। মাওলানার এ উক্তি ও আমলের উপর তার অনেক প্রিয় সাগরেদ এবং শহরের অনেক বাসিন্দা সাক্ষী আছেন।
তাছাড়াও খান্দানে মুস্তাফাবীর নির্যাস জামে উস শরীয়ত ওয়াত্বারীকত হাজী সৈয়্যদ মুহাম্মদ আবেদ (মুহতামিম, মাদ্রাসায়ে দেওবন্দ) ও মাওলানাকে নিয়ে নিজ বাড়িতে হুযুরে পাকের জন্মালোচনা ওয়াজের মাধ্যমে করিয়েছেন এবং শিরনিও বিতরণ করেছেন। আলেম কুলের গুরু মাওলানা কাসেম সাহেব (নাজেম উক্ত মাদ্রাসা) এর মুখ থেকেও এ কথাটি বহুবার শোনা গেছে যে, হুযুরের জন্মের আলোচনা হচ্ছে খায়ের ও বরকত লাভের মাধ্যম। মাওলানাও কোন কোন জায়গায় মীলাদ মাহফিলে শরীক হয়েছেন। পীর ওয়াজেদ আলী সাহেব (যিনি মাওলানার মুরীদ এবং মিলাদ পাঠ কারী ছিলেন) এ কথার সাক্ষী।
১২। সৈয়্যদ আহমদ বেরেলভী - সৈয়্যদ আহমদ বেরেলভী (১৮৭৩-১৮৩১ খৃঃ) এর জীবনী গ্রন্থে তাঁর মিলাদ শরীফ পাঠের উল্লেখ পাওয়া যায়। তাঁর মুরীদ সৈয়্যদ মুহাম্মদ আলী “মখজনে আহমদী” কিতাবের মধ্যে বেরেলভী সাহেবের আরব সফরের বিস্তারিত বিবরণ লিখতে গিয়ে উল্লেখ করেছেন যে, যখন সৈয়্যদ সাহেবের জাহাজ লঙ্কা নামক বিপদ সংকুল জায়গায় পৌঁছালো, যেথায় যাত্রীদেরকে ভূত-পেরত, দেও-দানবেরা খুব যাতনা দিতে থাকত। তখন সৈয়্যদ সাহেব সারা রাত্রি জাগ্রত থেকে হিজবুল বাহার ইত্যাদি পড়তে থাকেন। যখন আল্লাহ্ তায়ালার কৃপায় দেও-দানবের হামলা থেকে নাযাত পেলেন এবং ভোর হতে লাগল তখন শুকরিয়া স্বরূপ মীলাদ শরীফ পাঠ করা হয়। সুধী পাঠক-পাঠিকাগণের জ্ঞাতার্থে ঐ কিতাবের লিখিত বর্ণনা এখানে উদ্ধৃত করছি – তিনি লিখেছেন “অবশেষে রাত্রি যখন পোহাতে লাগল আর জাহাজ নিরাপদে বিপদ সংকুল স্থানটি অতিক্রম করে গেল। সকাল বেলায় নাবিকরা কয়েক থালা হালুয়া নিয়ে নিজ নিজ কামরা থেকে বের হল। তখন মিলাদ শরীফ পাঠ করা হল এবং শিরনী বিতরণ করা হল।”
©somewhere in net ltd.