নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মুক্তমনা, সকল রকমের সংস্কার মুক্ত, আমি ধর্মভীরু হলেও ধর্মান্ধতা আমাকে কখনো গ্রাস করে নিতে পারেনি।আমি সুস্থ্য চিন্তা আর মানবিক মূল্যবোধে বিশ্বাসী। আমার শক্তি আমার আবেগ আবার সে আবেগ-ই আমার বিশেষ দুর্বলতা। নেহায়েত সখের বশে এক আধটু কাব্য চর্চা করি, এই আর কি। প্রিয় বিষয় সাহিত্য, ইতিহাস, ধর্ম, সংগীত, দর্শন, দেশ ভ্রমন আর গোয়েন্দা সিরিজের বই পড়া।ভীষণ ভোজন রসিক আমি। জন্ম যদিও চট্টগ্রামে কিন্তু ঢাকা শহরেই লেখা পড়া আর বেড়ে উঠা। আমার জীবনের গল্প তাই আর দশ জনের মতো খুবই সাদামাটা।
ধর্মীয় ক্ষেত্রে বাংলার মুসলমানদের দুরবস্থা ও মাসলাকে আলা হযরতের প্রাসংগিকতা
আরবী শব্দ সুলুক থেকে মাসলাক শব্দের উৎপত্তি। এর অর্থ হচ্ছে অনুসৃত মত বা পথ। যিনি বা যারা কোন নিদৃষ্ট মতাদর্শ অনুসরণ করে থাকেন তাকে/তাদেরকে সালেক বলা হয়ে থাকে।
মাসলাক একটা ব্যাপক অর্থ বোধক শব্দ। এর দ্বারা জীবনাচরণ সম্পর্কে কোন ব্যক্তি বিশেষের সার্বিক দৃষ্টি ভঙ্গির পরিচয় পাওয়া যায়। মাসলাক ধর্ম-সমাজ-রাজনীতি-অর্থনীতি ইত্যাদি জীবন ঘনিষ্ঠ নানা বিষয়ে কোন মানুষের বিশ্বাস ও মতাদর্শকে নির্দেশ করে এবং সেটা তার জীবনাচরণেও প্রতিফলিত হয়। কাজেই মাসলাক কথাটা খুবই identical । যেহেতু এটা একটা সু নিদির্ষ্ট পরিচয়বাহী বা পরিচিতি জ্ঞাপন করে।
তাই মাসলাকে আ'লা হাদ্বরাত শব্দের সরলী কৃত অর্থ দাড়াচ্ছে - আ'লা হাদ্বরাত (রহঃ) কতৃক প্রচলিত ও অনুসৃত মত বা পথ। বড় পীর হযরত গাউসে পাক (রহঃ) তাঁর প্রসিদ্ধ কসীদায়ে গাউসিয়া শরীফে এ সুলুক শব্দ ব্যবহার করেছেন। কসীদায়ে গাউসিয়া শরীফে তিনি লিখেছেন,
“কাযা ইবনুর রিফায়ী কানা মিন্নী, ফাইয়াসলুকু ফী তারীকী ওয়াসতিগালী”
অর্থাৎ - ইবনু রেফায়ী ভক্তি ভরে, মোর দলেতে গেলেন ভীড়ে
মোর তরীকা মেনে নিয়ে, চলেন তিনি আমার পথে ।।
মাসলাকে আলা হযরত কি তা ভালভাবে বুঝতে হলে সবার আগে আলা হযরত (রহঃ) এর ব্যক্তিত্ব ও চরিত্রকে জানতে হবে। তবেই খুব সহজে মাসলাকে আলা হযরতের স্বরূপ ও মর্ম অনুধাবন করা যাবে।
যুগ যুগ ধরে পবিত্র আত্মা সাহাবায়ে কেরামের দ্বারা প্রবর্তিত ইসলামের প্রকৃত চিন্তা-চেতনার অনুসরণ ও সংরক্ষণকারী একমাত্র জান্নাতী কাফেলা “আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত” হিসেবে পরিচিত। বিগত দেড় হাযার শতাব্দী ধরে সারা বিশ্বের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের দ্বারা গৃহীত ও আচরিত সহীহ আকীদা ভিত্তিক জীবন ধারা হিসেবে পালিত হয়ে আসছে “আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত”। পবিত্র এ জান্নাতি জীবন ধারা তখন ওহাবী/লামাযহাবি/দেওবন্দি/খারেজি/কাদিয়ানি/আহলে হাদীস/ সালাফী/তাবলীগি ইত্যাকার নব্য আবিস্কৃত শত বাতিল মত ও পথের বহুমুখী আক্রমণে কোনঠাসা।
হাটাজারী মাদ্রাসা ও তার মোহতামীম মুফতি ফয়জুল্লার নবী-অলী বিদ্বেষী অপপ্রচার ধীরে ধীরে গ্রাস করে নিচ্ছিল সারা চট্টগ্রামের সূন্নী জনতাকে। ১৯৫০ সালে বাঁশখালীর শেখের খিল এলাকায় এক মুরীদের অনুরোধে ওয়াজ মাহফিলে বক্তব্য রাখতে গিয়ে সৈয়্যদুল আউলিয়া হযরত সৈয়দ আহমদ শাহ্ সিরিকোটি’র (রহঃ) অর্জিত তিক্ত অভিজ্ঞতা বাতিল ফিরকা সমূহের দিগন্ত বিস্তারী ঈমান বিধ্বংসী ষড়যন্ত্র ও অপকর্মের প্রমাণও দিয়ে দিল হাতে-নাতে। ঐ মুহূর্তেই তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন বাংলার নিরীহ সাধারণ মানুষের ঈমান বিধ্বংসী এসব ষড়যন্ত্র ও নীল নকশার উচিত জবাব দিতে হবে। রুখে দিতে হবে তাদের নবী-অলী বিদ্বেষী অপপ্রচারের এ অশুভ প্রবাহকে। সবার সামনে উম্মোচন করে দিতে হবে ধর্মের লেবাসধারী অপপ্রচার ও অপকর্মের হোতাদের আসল চেহারা। দিনের আলোয় নিয়ে আসতে হবে এসব নিশাচর ধর্ম ব্যবসায়ী বহুরূপী বাতিল ফিরকা সমুহের জঘণ্য ও ঘৃণিত রূপ । তবেই দৃশ্যমান হবে সত্যের চির জাগ্রত রূপটি। আর তখনি মানুষ অতি সহজে খুঁজে নিতে পারবে সত্যের চির উজ্জল নির্মল নির্ভরতার চিরন্তন ঠিকানা। তিনি বুঝতে পারলেন, অসত্যের এ গাঢ় অমানিশা ভেদ করে সুণ্ণীয়তের মহিমায় উজ্জল সুর্যোদয় রাঙ্গানো সুপ্রভাত আনতে হলে সবার আগে দূর করতে হবে অশিক্ষা। মানুষের মধ্যে জ্বালাতে হবে সঠিক ইসলামী চিন্তা চেতনা ভিত্তিক শিক্ষার আলো। সৃষ্টি করতে হবে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের শিক্ষা–দীক্ষা ও চেতনা সম্পন্ন এক দল আশেকে রাসুলের বিপ্লবী জানিসার বাহিনী। আর এ উদ্দেশ্য সফল করতে হলে প্রয়োজন হবে এমন একটা দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যেখানে ইসলাম ধর্মের মূল ধারা তথা আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের অনুসারী মত ও পথের সঠিক ধারণা ও সে অনুযায়ী ট্রেনিং দেয়া হবে। এখান থেকে সুযোগ্য আলেম হিসেবে তৈরী হয়ে তারা ছড়িয়ে পড়বে সারা দেশ ব্যাপী। আর সমুচিত জবাব দিবে নবী-অলী বিদ্বেষী বাতিল ফিরকার সব অপপ্রচারের। খুলে দেবে ওসব বক ধার্মিক, লেবাসধারী তথাকথিত আলেমদের মুখোশ আর মানুষ পরিচিত হতে পারবে সত্যিকার ইসলামী মূল্যবোধ ও চিন্তা চেতনার সাথে। তাই নিজ মুরীদান ও ভক্তদের কে তিনি নির্দেশ দিলেন, “জামেয়াকি খেদমত কো আপ জুমলা ভাইয়ো! নম্বরে আউয়াল মে রাখখে,বাকী দুনিয়া কী কামও আউর ধান্ধো দুসরে তিসরে নাম্বার মে রাখখে।” “কাম করো, দ্বীন কো বাঁচাও ইসলাম কো বাঁচাও আউর সাচ্চা আলেম তৈয়ার করো। “মুঝসে মুহাব্বাত হ্যায় তো মাদ্রাসা কো মুহাব্বাত করো। মুঝেহ দেখনা হ্যায় তো মাদ্রাসা কো দেখো”। এর ফলে তাঁর প্রতিষ্ঠিত জামেয়া আজ এশিয়ার বৃহত্তম দ্বীনী মারকায ও সুন্নীয়তের কেন্দ্রবিন্দু তথা হৃদস্পন্দনে পরিণত হয়েছে।
ইমামে আহলে সুন্নত হযরত শেরে বাংলা রহঃ জামেয়া প্রসঙ্গে সঠিক ভাবেই তাঁর সুবিখ্যাত দিওয়ানে আযীযে (পৃষ্ঠা নং ১৪৬) মন্তব্য করেছেন যে,
“মৌজায়ে নাজির পাড়া আন্দরা ষোলাশহর
নামে উঁ আন্দর জাঁহা রওশন বমানদ চুঁ বদর
আযবরায়ে আহলে সুন্নত মাদ্রাসা করদা বেনা
বাহরে ইছতীছালে ওহাবী গশত তীরে বেখত্বা।।
অর্থাৎ - পূণ্য ভূমি ষোল শহর, নাযির পাড়া মৌজাতে
জগত হল আলোকিত চন্দ্রসম তার দ্যুতিতে।।
আহলে সুন্নতের মতাদর্শে মাদ্রাসার ভিত্তি দিলে,
আশ্রয়স্থল সব নবী প্রেমীর, বিধ্বংসী তীর ওহাবী তরে।।
*সূত্র দিওয়ানে আযীয বাংলা অনুবাদ (পৃষ্ঠা নং ১৪৬)।
সারা বাংলার অশিক্ষিত-অল্প শিক্ষিত সাধারণ জনগণ যখন এসব বাতিল ফিরকার সৃষ্ট মিষ্ট কথার ধূম্রজালে দিশেহারা হয়ে পুচ্ছধারী কাককেই আসল ময়ূর বলে মেনে নিতে বাধ্য হতে চলেছে, এমনি এক সংকট পূর্ণ মুহুর্তে বাঙলার আপামর মুসলমানদের দ্বীন–ঈমান-আকীদা সংরক্ষণের গুরু দায়ীত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিতে ইশকে রাসুলের ঝান্ডা হাতে বীরদর্পে এগিয়ে এলেন মাসলাকে আ'লা হাদ্বরাতের প্রবক্তা সৈয়্যদুল আউলিয়া হযরত সৈয়দ আহমদ শাহ্ সিরিকোটি রহঃ। বাতিল ফিরকা সমূহের নবী-অলী বিদ্বেষী অপপ্রচারের মুখোশ উম্মোচন করে সাবলীল কণ্ঠে তিনি উচ্চারণ করলেন, “কোন কেহতা হ্যায় রাসুলে পাক সঃ হাযির নাযির নেহি, কোন কাহতা হ্যায় হযরতে গাউসে পাক রহঃ হাযির নাযির নেহি, হামারা হাত পাকড়ো, হাম তুমহে দিখাতেহে কাঁহা রাসুলে কারীম সঃ আউর হযরতে গাউসে পাক রহঃ হাযির হ্যায়”। শুধু কি তাই এরপর তিনি আরও ঘোষণা দিলেন, “নূর নবীজী ও সাহাবায়ে কেরামের প্রতি পরিপূর্ণ ভালবাসা প্রদর্শন ও তাঁদের একনিষ্ট অনুসরণের নামই ঈমান। তাঁদের প্রতি হিংসা পোষণ বা অবজ্ঞা প্রদর্শন করাই প্রকৃত পক্ষে গোমরাহী বা পথ ভ্রষ্টতা। তিনি তাঁর মুরীদান ও ভক্তদেরকে ঈমান হরণ কারী এসব নতুন গজিয়ে উঠা বাতিল ফিরকার সংস্পর্শ থেকে দূরে থাকার কঠোর নির্দেশ দিয়ে বল্লেন, “তোমরা তাদের কাছে যাবে না, আর তাদেরকেও তোমাদের কাছে আসতে দেবে না। তোমদের আয়ের একাংশ দিয়ে আমার স্থাপিত এ মাদ্রাসার উন্নয়ন কাজে সাহায্য সহযোগিতা করতে থাকো।” মুরীদ ও ভক্তদেরকে আশস্ত করে তিনি শোনালেন, “হযরত নুহ আঃ এর বিপদ্গ্রস্থ উম্মতগণ যেমন কিশতীয়ে নূহ এর মধ্যে আরোহণ করে আল্লাহ্র আযাব ও গজব থেকে পরিত্রাণ লাভ করেছিল, তেমনি আমার এ জামেয়া ও কিশতীয়ে নূহ এর মত তোমাদেরকে সকল আসমানী ও জমিনী বালা-মুসীবত ও বিপদআপদ থেকে রক্ষা করবে” ।
সূদীর্ঘ দুই দশক ধরে রেঙ্গুনের প্রবাস জীবনে তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, অনৈক্য ও বিভেদ মুসলমানদের উন্নতির পথে একমাত্র অন্তরায়। তরীকতপন্থী সব সুন্নী মুসলমানদেরকে একতাবদ্ধ করে একটা নিদির্ষ্ট প্লাটফর্মে আনার ঐকান্তিক কামনা থেকে তিনি ১৯২৫ খৃষ্টাব্দে রেঙ্গুনে গড়ে তুললেন, “আঞ্জুমানে শূরায়ে রহমানিয়া”। মুরীদানদের অনুরোধে দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধোত্তর চট্টগ্রামে এসে তিনি এটাকে আরও বৃহত্তর পরিসরে “আঞ্জুমানে রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নীয়া” নামে পূনর্গঠন করলেন। সাথে সাথে বাড়লো এটার সদস্য সংখ্যা ও কর্ম পরিধি। সুন্নীয়তের প্রচার-প্রসার ও খেদমত আঞ্জাম দেওয়াই হল এ নব গঠিত আঞ্জুমানের একমাত্র লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। কাল পরিক্রমায় আঞ্জুমান আজ বাংলাদেশের একক বৃহত্তম সুন্নী দ্বীনী খিদমতগার সংগঠন হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। সারা দেশ জুড়ে আঞ্জুমানের অর্থায়নে পরিচালিত হচ্ছে শতাধিক মাদ্রাসা- মসজিদ-খানকাহ। সঠিক পথের দিশা পেয়ে উপকৃত হচ্ছে হাযার হাযার মানুষ। বাতিল ফিরকার সব আক্রমণ ও অশুভ ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে দিতে একই পতাকার নীচে সংগঠিত হয়েছে লক্ষ লক্ষ সূন্নী জনতার এক বিশাল সংগ্রামী কাফেলা। নূর নবীজীর শান-মান রক্ষার্থে যে কোন ত্যাগ স্বীকারে সদা প্রস্তুত তারা। বাস্তবায়িত হয়েছে এক মহান স্বপ্নদ্রষ্টা মহানায়কের সুন্নীয়ত প্রতিষ্ঠার শুভ প্রয়াস।
হে আল্লাহ্! মাদানী গুলের পবিত্র সুবাসে আলোড়িত, শত সহস্র অলী আওলিয়ার পদধূলি ধন্য, বাংলাদেশে সুন্নীয়ত প্রতিষ্ঠার স্বপ্নদ্রষ্টা সে মহানায়কের প্রতিষ্ঠিত এ সকল সুণ্ণী দ্বীনী প্রতিষ্ঠানের খিদমত আমাদের সকল কে নসীব করুন আমীন। বেহুরমাতে সায়্যিদিল মুরসালিন।
©somewhere in net ltd.
১| ৩১ শে জুলাই, ২০২০ রাত ৯:৩৪
মোহাম্মদ রিদওয়ান আল হাসান বলেছেন: খুব সুন্দর আলোচনা ভাইজান।