নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মুক্তমনা, সকল রকমের সংস্কার মুক্ত, আমি ধর্মভীরু হলেও ধর্মান্ধতা আমাকে কখনো গ্রাস করে নিতে পারেনি।আমি সুস্থ্য চিন্তা আর মানবিক মূল্যবোধে বিশ্বাসী। আমার শক্তি আমার আবেগ আবার সে আবেগ-ই আমার বিশেষ দুর্বলতা। নেহায়েত সখের বশে এক আধটু কাব্য চর্চা করি, এই আর কি। প্রিয় বিষয় সাহিত্য, ইতিহাস, ধর্ম, সংগীত, দর্শন, দেশ ভ্রমন আর গোয়েন্দা সিরিজের বই পড়া।ভীষণ ভোজন রসিক আমি। জন্ম যদিও চট্টগ্রামে কিন্তু ঢাকা শহরেই লেখা পড়া আর বেড়ে উঠা। আমার জীবনের গল্প তাই আর দশ জনের মতো খুবই সাদামাটা।
গাউসে জমান হযরত সৈয়দ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ্ রহঃ এর ঈদ-কুরবানি–হজ্জ
উৎসবের পরিবেশে রোযার ঈদ, কুরবানির ঈদ, হজ্জ-ওমরাহ্ উদযাপন ইসলামের ইতিহাসের অতি পরিচিত ও পুরানো ঐতিহ্য তথা সাংস্কৃতিক নিদর্শন। আত্মীয়-পরিজন, নিকট-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবদের মাঝে আন্তরিক, হৃদ্যতাপূর্ণ পরিবেশে যুগপথ ইবাদাত পালন ও উৎসব মুখর নির্মল আনন্দ উপভোগ করাই এর একমাত্র লক্ষ ও উদ্দেশ্য। তাই শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে মুসলিম বিশ্বে এটা বহুল প্রচলিত পূণ্যময় সুন্নত সম্মত আমল হিসেবে পালন করা একটা বিশেষ রেওয়াজে পরিণত হয়েছে।
পবিত্র নগরী মদিনায় আমাদের নূর নবীজীর (দঃ) ঈদ উৎসব পালনের কথা সুবিদিত। সমাজের ধনী গরীব সকলের সাথে ঈদের আনন্দ ভাগ করে নিতে তিনি চালু করেছিলেন যাকাত ও সাদাকাতুল ফিতরের প্রথা। শিশুদেরকে তিনি ঈদের দিনে নতুন পোষাক ও খাবার দিয়েছেন বহুবার। সকল সাহাবীদের নিয়ে জামাতের সাথে আদায় করেছেন ঈদের নামাজ। আরাফার মাঠে হজ্জের আনুষ্ঠানিকতা শেষে কুরবানী প্রদান করেছেন নিজ নামে ও প্রিয় উম্মতদের পক্ষ থেকে।
একজন আদর্শ আওলাদে রাসুল হিসেবে প্রতিটি ক্ষেত্রে সুন্নত অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করাই ছিল গাউসে জমান হযরত সৈয়দ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ্ রহঃ এর একমাত্র লক্ষ ও উদ্দেশ্য। এ আদর্শ নিজের মুরীদান ও শিষ্যদের মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার মিশন নিয়েই এদেশে তাঁর কর্মসূচীর শুরু। নিজ পরিবার পরিজনকে প্রায় ৪ হাযার কিলোমিটার দূরে নিজের দেশে রেখে এসে প্রবাসে জীবন যাপন করা কতটা কষ্টের তা এক ভূক্তভোগী মাত্রই জানেন। অথচ প্রিয় মুরিদানদের আবদার রাখতে গিয়ে সেই চরম কষ্টকর কাজটাই অবলীলায় করে গেছেন আমাদের প্রিয় মুর্শিদে বরহক গাউসে জমান হযরত সৈয়দ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ্ রহঃ।
প্রিয় মুরিদানদেরকে খুশী করতে গিয়ে নিজের একান্ত ব্যক্তিগত সুখানুভূতিগুলোকে পায়ে দলে দূর প্রবাসে আত্মীয় স্বজনহীন পরিবেশে দিনের পর দিন মাসের পর মাস অবস্থান করেছেন তিনি। কাউকেও ঘুণাক্ষরেও বুঝতে দেননি নিজের কষ্ট ও ত্যাগের কথা।
১৯৫৮ সালে সিলসিলার মিশন নিয়ে তাঁর এদেশ সফরের মাধ্যমে শুরু হয়েছিল যে কর্মসূচী তা ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। এ সময়ে বছরে দুবার করে তিনি এদেশে আসতেন তাঁর প্রিয় মুরীদানদের টানে। প্রতিবারে থাকতেন টানা ২ থেকে ৩ মাস। অনেক সময় মুরীদানদের অনুরোধ রাখতে গিয়ে পুরো রমজান মাস কাটাতে হয়েছে তাঁকে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান তথা বাংলাদেশে।
তারাবীহ নামাজের ইমামতি ঃ ১৯৪২ সালের শাবান মাসে পিতা শাহানশাহে সিরিকোটি রহঃ এর সফর সঙ্গী হিসেবে প্রথম বার বাংলাদেশ সফরে আসেন মুর্শিদে বরহক গাউসে জমান হযরত সৈয়দ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ্ রহঃ। প্রথম দিকে হযরত সিরিকোটি রহঃ শাহী জামে মসজিদের পশ্চিমে নজির আহমদ সড়কে আবদুল খালেক ইঞ্জিনিয়ার সাহেবের ভাড়া বাসায় থাকতেন । এর পর হযরত সিরিকোটি রহঃ আন্দরকিল্লাস্থ আবদুল খালেক ইঞ্জিনিয়ার সাহেবের (রাউজান-১৮৯৮-১৯৬২) নিজ ক্রয় করা ভবন “কুহিনুর মনজিল” তথা কুহিনুর ইলেকট্রিক প্রেসের নীচ তলায় থাকতেন। স্বভাবত মুর্শিদে বরহক গাউসে জমান হযরত সৈয়দ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ্’র রহঃ এর থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থাও করা হয়েছিল সেখানেই। অদুরেই ছিল আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ। সে যাত্রায় আন্দরকিল্লাস্থ শাহী মসজিদে তরুণ হাফেযে কোরআন হিসেবে অভিষেক ঘটে মুর্শিদে বরহক গাউসে জমান হযরত সৈয়দ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ্’র রহঃ। সুন্দর সুললিত ও বলিষ্ঠ কণ্ঠের তিলাওয়াতে ২০ রাকাত খতমে তারাবীহ নামাজের ইমামতি করে উপস্থিত সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন তিনি সেবার। উল্লেখ্য এটাই ছিল এদেশে তাঁর প্রথম ইমামতি। আবার ১৯৫৮ সালের দাদা হুযুর কিবলার সর্বশেষ সফরে পুত্র তাহের শাহ্ মাদ্দাজিল্লুহুল আলীকে নিয়ে পুরো এক মাস ছিলেন তিনি বাংলাদেশে।
১৯৬২ সালে ইঞ্জিনিয়ার সাহেবের ইন্তেকালের পর হুযুর কেবলার খানকাহ শরীফ ঘাট ফরহাদবেগস্থ জনাব আবদুল জলিল চৌধুরী সাহেবের (শিকল বাহা-১৯০৪-১৯৮৯) পাকিস্তান প্রেসে স্থানান্তরিত হয়। এ ভবনের নীচ তলায়ও মুর্শিদে বরহক গাউসে জমান হযরত সৈয়দ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ্’র রহঃ বেশ কয়েক বছর খতমে তারাবীহ নামাজের ইমামতি করে ছিলেন। এখানেও তাঁর সুললিত দরাজ কণ্ঠের সুমিষ্ট কুরআন তিলাওয়াত বিগলিত করে দিয়েছিল সব শ্রোতা/মুসল্লিদের অন্তঃকরণ।
এরপর ১৯৬৮ সালে বলুয়ার দীঘির পাড়স্থ আলহাজ নূর মুহাম্মদ আল কাদেরী সাহেবের (বাকলিয়া -১৯১৭-১৯৭৮) বাসভবনের দ্বিতীয় তলায় মুর্শিদে বরহক হুযুর কেবলার রহঃ জন্য খানকাহ শরীফ নির্মাণ করা হয়। ১৯৭৪ সালে বলুয়ার দীঘির পাড় খানকার ৩য় তলায় হুযুর কেবলার জন্য খাস কামরা ও দরবার নির্মিত হয়। বলুয়ার দীঘির পাড় খানকায় অবস্থানকালে তিনি মুরীদান ও ভক্তদের অনুরোধে খাতুনগঞ্জের হামিদ উল্লাহ্ খান জামে মসজিদে বেশ কয়েক বছর খতমে তারাবীহর নামাজের ইমামতি করেন। বিভিন্ন সময়ে এ মসজিদে হুযুর কিবলা রহঃ অনেকবার জুমার নামাজের ইমামতিও করেছেন।
ঈদের নামাজে ঈমামতি
সিরিকোট শরীফে ১৯৬১ সালে/১৩৮০ হিজরির ১লা শাওয়াল ঈদুল ফিতরের নামাজে ইমামতি করার জন্য তিনি স্বীয় পিতা হযরত সিরিকোটি রহঃ কতৃক নির্দেশ প্রাপ্ত হন।এভাবে শুরু হয় তাঁর ঈদের নামাজের ইমামতি পর্ব।সিরিকোট দরবার শরীফ মসজিদে সাধারণত জুমা ও দুই ঈদের নামাজের ঈমামতি করতেন হযরত শাহানশাহে সিরিকোটি রহঃ। পরে এ গুরু দায়ীত্ব লাভ করেন মুর্শিদে বরহক গাউসে জমান হযরত সৈয়দ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ্’র রহঃ। অবশ্য এর আগে তিনি সিরিকোট দরবার শরীফেরজামে মসজিদে রমজান মাসে খতমে তারাবীর নামাজে ইমামতি করেছেন।
বাংলাদেশেও ঈদুল ফিতেরর নামাজে তিনি বেশ কয়েক বছর ইমামতি করেছেন। নামাজের পরে হুযুর কিবলাহ রহঃ বলুয়ার দীঘীর পাড় খানকায় অবস্থান করতেন। তাঁর ভক্ত মুরীদানরা ঈদের দিনে হুযুর কিবলার রহঃ জন্য সাধ্যমত ফিরণি-পায়েস-পোলাও-সেমাই ইত্যাদি হাদিয়া স্বরূপ পেশ করতেন। উপস্থিত সকল ভাইদেরকে নিয়ে তিনি সেগুলি খুশী মনে আহার করতেন।
প্রিয় মুরীদান ও ভক্তদের অনুরোধ রাখতে গিয়ে বর্তমান জমিয়তুল ফালাহ মাঠে ঈদের নামাজের ঈমামতিও করেছেন তিনি। বস্তুত আজকের জমিয়তুল ফালাহ’র স্থপতিও হচ্ছেন মুর্শিদে বরহক গাউসে জমান হযরত সৈয়দ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ্’র রহঃ কতিপয় ধনাঢ্য মুরীদ ও সাগরীদ। প্রয়োজনীয় অর্থের যোগান ও নৈতিক সমর্থন দিয়ে এ মহতী ইসলামী স্থাপনার গোড়া পত্তনে কার্যকর ভূমিকা পালন
করেছেন তাঁরাই। এদের মধ্যে নেতৃস্থানীয় কয়েক জনের নাম এখানে উল্লেখ করছি - তাঁরা হলেন সর্ব জনাব আলহাজ নূর মোহাম্মদ আল কাদেরী, আলহাজ আমিনুর রহমান আল কাদেরী,আলহাজ ওয়াজির আলী সওদাগর আল কাদেরী, আলহাজ আকরাম আলী খান আল কাদেরী, আলহাজ জাকির হোসেন কন্ট্রাক্টার, আলহাজ সিরজুল ইসলাম সওদাগর, আলহাজ সালেহ আহমদ সওদাগর, আলহাজ মুসলিম ভূঁইয়া প্রমুখ।
মুর্শিদে বরহক হুযুর কেবলা রহঃ এর কুরবানী ঈদ পালন -
মুর্শিদে বরহক গাউসে জমান হযরত সৈয়দ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ্’র রহঃ তাঁর ভক্ত মুরীদানদের এতটা ভালবাসতেন যে, প্রতি সফরে দুই থেকে তিন মাস তিনি এদেশে অবস্থান করেছেন। নিজের অতি প্রিয় পরিবার পরিজনকে ছেড়ে দূর প্রবাসে মুরীদানদের সাথে কষ্ট করে দিন যাপন করেছেন।
বলুয়ার দীঘির পাড় খানকায় থাকাকালীন সময়ে একবার তিনি পবিত্র কোরবানির ঈদও তাঁর ভক্ত মুরীদানদের সাথে উদযাপন করেছিলেন বলে জানা যায়। প্রথম বার যখন তিনি এদেশে কোরবানির ঈদ পালন করেন, সে বছর চট্টগ্রামের পীর ভাইদের মধ্যে সাজ সাজ রব পড়ে যায়। কার আগে কে হুযুর কিবলা রহঃ কে কুরবানীর পশুর মাংস দিয়ে আপ্যায়ন করার সৌভাগ্য লাভ করবেন এটা নিয়ে রীতিমত প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যায়।এদিকে মুর্শিদে বরহক হুযুর কিবলা রহঃ বলুয়ার দীঘি খানকায় বসে তাঁর ভক্ত মুরীদানদের কান্ড দেখে মিটি মিটি হাসছেন। আর উপস্থিত পীর ভাইদেরকে লক্ষ করে বলছেন, “দেখ তোমাদের মত আমারও ঘর সংসার আছে। আজ আমার বাড়ীতেও কুরবানী হচ্ছে। তাদেরকে ছেড়ে এখানে একাকী তোমাদের সাথে কুরবানীর ঈদ পালন করাতে আমার উদ্দেশ্য ছিল, তোমাদেরকে সঙ্গ দেয়া। আর তোমরা কিনা কুরবাণীর পশুর মাংস নিয়ে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়েছ।”
মুর্শিদে বরহক হুযুর কেবলার পাঞ্জেগানা নামাজ মুর্শিদে বরহক হুযুর কেবলা রহঃ দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ তাঁর প্রিয় মুরীদানদের নিয়ে জামাতের সাথে আদায় করতে অভ্যস্থ ছিলেন। এমনকি সফরের সময়ও এর অন্যথা হত না। প্রতিদিন ফজরের নামাজের পর তিনি তাঁর শিষ্যদের হেদায়াতের উদ্দেশ্যে কোরআন ও হাদীসের আলোকে তাফসীর পেশ করতেন। যা শোনার জন্য আলেম ওলামা সহ পীর ভাইগণ সদা উদগ্রীব হয়ে থাকতেন। মাগরিব ও এশার নামাজের সময় তিনি সাধারণত সুরা আম্বিয়ার (১৭ পারা) ১০৫-৭ নং আয়াত আর সুরা যুমার এর (২৪ পারা) ৭১-৭৫ নং আয়াত তিলাওয়াত করতেন। প্রত্যেক ওয়াক্তের নামাজ শেষে তিনি দোয়ায়ে সালাম “আল্লাহুম্মা আন্তাস সালাম ওয়া মিন কাস সালাম ওয়া ইলাইকা ইয়ুরজাউস সালাম। ফাহাইয়ানা রাব্বানা বিস সালাম, ওয়াদখিলনাল জান্নতা দ্বারাকা দ্বারাস সালাম, তাবারাকতা রাব্বানা ওয়াতা আলাইতা এয়া জালজালালি ওয়াল ইকরাম” দিয়ে মুনাজাত করতেন। আর অন্যান্য সময়ে মুনাজাতের বেলায় তিনি “সাহহিল এয়া ইলাহী আলাইনা কুল্লা সাহবিন বেহুরমাতে সায়্যিদিল আবরার” এ দোয়া পড়তেন।
মুর্শিদে বরহক হুযুর কেবলার হজ্জের সফর
মুর্শিদে বরহক গাউসে জমান হযরত সৈয়দ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ্’র রহঃ হজ্জের সফরের কথা আমরা এবার আলোচনা করবো। ৮৭ বছরের সংক্ষিপ্ত জীবনে আমার প্রিয় মুর্শিদে বরহক হুজুর কেবলা রহঃ অনেক বার হজ্জ ও ওমরাহ্ পালনের সৌভাগ্য লাভ করেছিলেন। ১৯৫৬ সালে মাত্র ৪০ বছর বয়সে তিনি তাঁর মাতা সাহেবানীকে সাথে নিয়ে প্রথম বার হজ্জ ব্রত পালন করেন।
এরপর ১৯৬৪ সালে দ্বিতীয় বারের মত মুর্শিদে বরহক হুজুর কেবলা রহঃ হজ্জের সফরে যাত্রা করেন। এবারের সফরে অনেক বিত্তবান মুরীদ তাঁর সফর সঙ্গী হবার গৌরব লাভ করেছিলেন। তাঁরা হলেন চট্টগ্রামের বাকলিয়ার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী জনাব ওয়াজের আলী সওদাগর, তাঁর কনিষ্ঠ ভ্রাতাদ্বয় জনাব নজির আলী সওদাগর এবং জনাব সিরাজুল হক সওদাগর, জনাব নূর মোহাম্মদ সওদাগর, জনাব আমিনূর রহমান সওদাগর, জনাব আকরাম আলী খান সাহেব পাঁচলাইশের তরুণ প্রতিভাবান শিল্পপতি জনাব জাকির হোসেন কনট্রাক্টর, নালা পাড়ার বিশিষ্ট ধনবান ব্যক্তিত্ব জনাব আবদুর রহীম, আন্দরকিল্লাস্থ তাজ লাইব্রেরীর মালিক জনাব মোজাফফর এবং ঢাকা নিবাসী রাউজানের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী জনাব সিরাজুল ইসলাম সওদাগর সহ আরো অনেকে। বিশিষ্ট মুসলিম লীগ নেতা জনাব ফযলুল কাদের চৌধুরী ও সে যাত্রায় হুযুর কেবলার সফর সঙ্গী হয়েছিলেন। সে বছর সবাই ঢাকা থেকে পি আই এ বিমান যোগে করাচী হয়ে মাত্র ৩৫০০ টাকা ব্যায়ে হজ্জের সফর সমাধা করেছিলেন আর জাহাজের ভাড়া ছিল তখন মাত্র ৬০০ টাকা।
স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭৮ সালে তিনি আবার হজ্জের সফরে গমন করেন। ঢাকা ও চট্টগ্রামের প্রায় ২০-৩০ জন পীর ভাই তাঁদের পরিবারসহ হযুর কেবলার সফর সঙ্গী হয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে ঢাকার পীর ভাইদের মধ্য থেকে বিশিষ্ট ব্যবসায়ী জনাব সিরাজুল ইসলাম সওদাগর, জনাব হাজী আশরাফ আলী, জনাব চিনু মিয়া, বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা জনাব মতিউর রহমান, হাজী আবদুল আলীম, বাংলাদেশ বিমানের কর্মকর্তা মিসেস শাহানারা রহমান, আর চট্টগ্রামের ভাইদের মধ্য থেকে সর্বজনাব নূর মোহাম্মদ সওদাগর, আমিনূর রহমান সওদাগর, আকরাম আলী খান সাহেব, জনাব হাজী ওয়াজের আলী সওদাগর, তাঁর কনিষ্ঠ ভ্রাতাদ্বয় নজির আলী সওদাগর এবং হাজী সিরাজুল হক সওদাগর, হোটেল ব্যবসায়ী হাজী ইয়াকুব, আইয়ুব আলী সওদাগর, আঞ্জুমানের তদানিন্তন সেক্রেটারি জেনারেল জাকারিয়া সাহেব, জনাব মুহাম্মদ মহসীন সাহেবসহ আরও অনেকে। এ বছর সিরিকোট দরবার শরীফ থেকে তাঁর নাতি সাহেবজাদা সৈয়্যদ মুহাম্মদ কাশেম শাহ্ হুযুর ও হুযুর কেবলার রহঃ সাথে হজ্জের সফরে যোগদান করেন।
হযুর কেবলার রহ এর অন্যান্য হজ্জের সফরসমূহের কথা বর্ণনা না করে এবার আমি পবিত্র মক্কা ও মদিনা নগরীতে তাঁর অবস্থানকালীন কিছু ঘটনা ও বিষয় বর্ণনা করবো।
হজ্জ ব্যবস্থাপনা ঃ সামগ্রিকভাবে হজ্জ ব্যবস্থাপনার যাবতীয় কাজকর্ম পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকারের তত্বাবধানে পরিচালিত হত। প্রতি বছর কেন্দ্রীয় সরকারের ব্যবস্থাপনায় নিদির্ষ্ট সংখ্যক হজ্জ যাত্রী নির্বাচনের জন্য লটারি অনুষ্ঠিত হত। তখন পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তানের হজ্জ গমনেচ্ছুদের জন্য আলাদা কোটা ব্যবস্থা প্রচলিত ছিল। এতে লটারিতে সফলকাম ব্যক্তিরাই শুধু মাত্র হজ্জে যেতে পারতেন। এ জন্য কোন রকম পাসপোর্ট বা ভিসার প্রয়োজন ছিল না। সরকারের পক্ষ থেকে প্রত্যেক হজ্জ যাত্রীকে একটা করে ছবিযুক্ত পিলগ্রিম পাশ ইস্যু করা হত। যা ঐ যাত্রী হজ্জের সফরের সময় ব্যবহার করতেন। পূর্ব পাকিস্তানী হাজীদের জন্য পাহাড়তলীতে একটা কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ সংস্থা ছিল। এটা হজ্জ মিশন নামে পরিচিত ছিল।
মুয়াল্লিম ঃ তখনকার দিনে বাংলাদেশ থেকে খুব কম সংখ্যক লোকই হজ্জে যাবার সুযোগ লাভ করতেন। তাই যাত্রীর জন্য মুয়াল্লিমগণ আরব মুল্লুক থেকে এদেশে এসে সরাসরি সম্ভাব্য হজ্জ যাত্রীদের সাথে আগাম যোগাযোগ রক্ষা করতেন। বেশীর ভাগ হজ্জ যাত্রীই ছিলেন চট্টগ্রামের অধিবাসী। তাই চট্টগ্রামে গ্রামের বাড়ি আছে এমন মোয়াল্লেমগণের কাছে যেতে যাত্রীরা বেশী স্বাচ্ছন্ধ্য বোধ করতেন। তখনকার দিনে বাংগালীরা সাধারণত তাহের সফিরুদ্দিন,আহমেদ সফিরুদ্দিন, আবদুল লতিফ জমাদার, হাসান মুহাম্মদ মুরাদ প্রমূখ বাঙালী মোয়াল্লেমদের বাসায় অবস্থান করতেন।
মক্কা নগরীতে হুযুর কেবলার রহঃ অবস্থান - পবিত্র মক্কা নগরীতে সাধারনত হুযুর কেবলা রহঃ মোয়াল্লেম হাসান মুহাম্মদ মুরাদ সাহেবের বাসায় অবস্থান করতেন। তাঁর গ্রামের বাড়ি ছিল চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায়। পরে তিনি এক তুর্কী রমণীকে বিবাহ করে আরব দেশে স্থায়ীভাবে থেকে যান। হুযুর কেবলা রহঃ সহ অন্যান্য পীর ভাইগণ সব সময় তাঁর বাসাতেই অবস্থান করতেন। মিসফালায় তাঁর একটা দ্বিতল ভবন ছিল। এটার অবস্থান ছিল বর্তমান মিসফালার নতুন কুবরী বা ফ্লাই ওভার এর বাম পাশে পাহাড়ের উপরে, সাবেক তুর্কি কিল্লার পিছনে। তাঁর বাসায় কেরোসিনের ষ্টোভ এ খাবার রান্না করা হত। সকল পীর ভাইয়েরা মিলে বাজার-সদাই ও রান্না বান্নার কাজ সারতেন।এর মধ্যে কখনো কোন মহিলা পীর বোন থাকলে তাঁরাও রান্নায় সাহায্য করতেন।
পবিত্র মসজিদুল হারামে হুযুর কেবলার রহঃ বসার স্থান ঃ মসজিদুল হারামের ভিতরে রুকনে ইয়ামানী ও হাজরে আসওয়াদ এর মাঝখানের জায়গায় হুযুর কেবলা রহঃ প্রত্যহ আছরের সময় থেকে এশার নামাজের সময় পর্যন্ত অবস্থান করতেন। সকল পীর ভাই ও ভক্তেরা তাঁর সাথে এখানে এসে দেখা করে দোয়া নিয়ে যেতেন। এ মুবারাক জায়গাটার নাম ছিল বাবে উম্মে হানি।হারাম শরীফের প্রধান তোরণ বাবে আবদুল আযীয দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করে কিছুদূর গেলেই পড়ে বাবে উম্মে হানি। তিনি বলতেন, “এটা হল আউলিয়ায়ে কেরামদের রূহ সমূহের জমায়েত ও বসার স্থান।এখান থেকেই নূর নবীজীর দঃ পবিত্র মেরাজ ভ্রমণ অনুষ্ঠিত হয়েছিল।” তাঁর বসার স্থান থেকে মুলতাজাম, হাজরে আসওয়াদ ও মাকামে ইবারহিম স্পষ্ট দেখা যেতো। এটা ছিল বায়তুল্লাহ শরীফের পূর্ব দিকে। হাজীরা তাই পশ্চিম মূখী হয়ে বসতেন।
অকুফে আরাফা ও মিনা - হজ্জের দিনগুলোতে আরাফা-মিনায় মোয়াল্লেমের তাঁবু গুলো ছিল বিশাল আকারের। একসাথে কয়েকশো হাজীর স্থান সংকুলান হত সেখানে। আজকালকার মত পানি ও গোসল খানার এতটা সুব্যবস্থা ছিল না। ছিল না কোন এয়ার কন্ডিশন ভি আই পি তাঁবু। মোয়াল্লেম হাসান মুরাদের বাসায় চট্টগ্রামের বায়তুস শরফের পীর আখতার সাহেব রহঃ ও তাঁর খলিফা মাওলানা আবদুল জব্বার সাহেব থাকতেন। হজ্জের দিন মাওলানা আবদুল জব্বার সাহেব তাঁর পীর আখতার সাহেব রহঃ এর ওরস উপলক্ষে হাজী সাহেবানদেরকে আপ্যায়ন করতেন। আরাফার দিন হুযুর কেবলা রহঃ ও মাওলানা আবদুল জব্বার সাহেব রহঃ এক তাঁবুতে পাশাপাশি বসে দোয়া করেছেন, খানাও খেয়েছেন। তাঁরা উভয়ে পরস্পরকে বেশ সম্মান করতেন। এই ছিল আমার হুযুর কেবলার চরিত্র মাহাত্ম।
মক্কা নগরীতে হুযুর কেবলার রহঃ অবস্থানকালীন একটা শিক্ষনীয় ঘটনা - পবিত্র মক্কা নগরীতে সাধারনত হুযুর কেবলা রহঃ মোয়াল্লেম হাসান মুরাদের মিসফালার বাসাতেই বেশীর ভাগ সময় অবস্থান করতেন। একদিন তিনি আসরের সময় হেরেম শরীফে না গিয়ে মোয়াল্লেমের বাসায় বসে আরাম করছেন। সেবার হুযুর কেবলার রহঃ সফর সঙ্গী ছিলেন প্রায় ৩০-৩৫ জন। দেখা গেল হাতে গোনা কয়েকজন ছাড়া বাকীরা হুযুর কেবলাকে রহঃ ছেড়ে নামাজের জন্য তারাহুড়া করে হেরেম শরীফে চলে গেছেন। ভাইদের এ অবস্থা দেখে হুযুর কেবলা রহঃ কিছুটা মন ক্ষুণ্ণ হলেন। তারপর অনেকটা রাগত স্বরে বললেন, “মাই কিয়া তুমহারে লিয়ে বস নেহি হু?” অর্থাৎ “আমার উপস্থিতি কি তোমাদের জন্য যথেষ্ট নয়?” এ ঘটনা থেকে আমাদের শিক্ষা নেয়া দরকার। পাথরের নির্মিত কাবাঘরকে নয়, বরং সামনে উপস্থিত স্বীয় পীর মুর্শীদই সর্বদা মুরিদদের জন্য কিবলা হওয়া উচিত। এটাই তরীকতের প্রথম ও প্রধান শিক্ষা।
পবিত্র রওজা শরীফ যিয়ারত ও মসজিদে নববীর গুরুত্ব
হজ্জের আগে বা পরে হাজী সাহেবানগণ নূর নবীজীর দঃ পবিত্র মাজার শরীফ জিয়ারত এবং মসজিদে নববী শরীফে ৪০ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করে থাকেন। এটা বহুল প্রচলিত সুন্নত সম্মত একটা নেক আমল। আজকাল একমাত্র ওহাবী/ সালাফীরাই এর গুরত্ব অস্বীকার করে থাকে। অথচ ওহাবিদের অন্ধ সমর্থক দেওবন্দীদের মান্যবর গুরু আশরাফ আলী থানবী নূর নবীজীর দঃ পবিত্র মাজার শরীফ জিয়ারত প্রসঙ্গে তাঁর “বেহেশতী জেওর” বইয়ের ৩০৪-৫ পৃষ্ঠায় লিখেছেন যে, “হজ্জ করতে গেলে, হজ্জের আগে বা পরে মদীনা শরীফে হযরত সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রওজা শরীফ ও মসজিদে নভুবীর যিয়ারত করে আসার জন্যও যথা সাধ্য চেষ্টা করবে।” এরপর নূর নবীজির পবিত্র রওজা শরীফ যিয়ারত ও মসজিদে নববীর গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি বেশ ক’টি হাদীস শরীফও বয়ান করেছেন।
সেগুলি হল- ১। “যে মুসলমান আমার মৃত্যুর পর আমার জিয়ারত করবে, সে- তদ্রূপ বরকতই লাভ করবে,যেরূপ আমার জীবিত অবস্থায় আমার সাথে মুলাকাত করলে লাভ হয়।”
২। “যে হজ্জ করে গেল, অথচ আমার জিয়ারত করল না, তবে সে আমার সাথে বড় অন্যায় করে গেল”।
৩। মসজিদে নভুবী সম্বন্ধে রাসুলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি আমার এ মসজিদে এক রাকাআত নামাজ পড়বে সে পঞ্চাশ হাযার রাকাআত নামাজ আদায়ের সমান সওয়াব পাবে”।
আয় আল্লাহ্! আমাদের সকলকে মদীনা শরীফের জিয়ারত নছিব করুন এবং নেক কাজ করার তওফিক দান করুন। সূত্র - “বেহেশতী জেওর” (বাংলা অনুবাদ) পৃষ্ঠা নং ৩০৪-৫, লেখক- আশরাফ আলী থানবী।
মদীনা শরীফে হুযুর কেবলার রহঃ মুয়াল্লিম - মদীনা শরীফে হুযুর কেবলা রহঃ প্রায়শ সৈয়্যদ হোসনী হামজাহ বা ফকীহ সাহেবের বাসায় থাকতেন। তিনি ছিলেন একজন খাস আওলাদে রাসুল এবং হুযুর কেবলাকে রহঃ তিনি খুব ভক্তি শ্রদ্ধা করতেন। মসজিদে নববীর খুব কাছেই তাঁর বেশ কয়েকটা আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্পন্ন আবাসিক ভবন ছিল।মদিনা শরীফে তাঁর বিরাট ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও ছিল। তিনি ও তাঁর ভাইয়েরা মিলে সেগুলি পরিচালনা করতেন।
মসজিদে নববীতে হুযুর কেবলার রহঃ বসার স্থান ঃ
মদীনা শরীফে থাকাকালীন হুযুর কেবলার রহঃ বেশীর ভাগ সময় জিয়ারত ও ইবাদাত বন্দেগীতে কাটতো। মসজিদে নববীর ভিতরে তিনি খুবই আদবের সাথে প্রবেশ করতেন আর বসতেন রিয়াজুল জান্নাহর পাশে আসহাব উস সুফফার মোকামে। মাঝে মধ্যে সুযোগ মত মাওলানা নঈমী বা জালাল সাহেব কাছে থাকলে হুযুর কেবলা রহঃ তাঁদেরকে মিলাদ শরীফ পড়ার হুকুম দিতেন। গেয়ারবি/বারভী শরীফের অনুষ্ঠানও তিনি সেখানে পালন করেছিলেন বলে জানা যায়।
মসজিদে নবভীতে তাহাজ্জুদের নামাজ আদায়
মক্কার মসজিদুল হারাম ও মদীনার মসজিদে নবভীতে তাহাজ্জুদের নামাজ আদায়ের জন্য শেষ রাতে নিয়মিতভাবে আজান দিয়ে মুসল্লিদের আহ্বান করা হয়। একবার মসজিদে নবভীতে তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করে হুযুর কেবলা রহঃ তাঁর সফর সঙ্গীদের ডেকে বল্লেন, “তাহাজ্জুদ নামাজ আদায়ের পর আপনারা সবাই হুযুরে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দরবারে হাজিরা দেবেন এবং সালামী পেশ করবেন। এটা এমনি এক মহান দরবার যে, এখান থেকেই সারা সৃষ্ট জগতে মান মর্যাদা সব কিছু বন্টন করা হয়ে থাকে। হুযুর কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হায়াতুন্নবী হাজির নাজির এবং সমগ্র বিশ্বের জন্য রহমত স্বরূপ।”
মদীনা শরীফে হযরত জিয়াউদ্দিন মাদানি রহঃ নামে আলা হযরতের একজন শিষ্য বাস করতেন। মসজিদে নববীর খুব কাছেই ছিল তাঁর বাস ভবন ও খানকাহ শরীফ। তাঁর সাথে হুযুর কেবলার রহঃ খুব ঘনিষ্ট যোগাযোগ ছিল। নিজ মুরীদান হজ্জ যাত্রীদের মারফত হুযুর কেবলা রহঃ তাঁর সাথে তোহফা বিনিময়ও করতেন।
হে দয়ালু আল্লাহ্! আপনি আমাদের সকলকে বায়তুল্লাহ’র হজ্জ ও মদীনা শরীফ জিয়ারত নসীব করুন! এবং আপনার নেক বান্দাদের সোহবত হাসিল ও তাঁদের আদেশ-উপদেশ-নির্দেশ মত নেক কাজ করার তওফিক দান করুন। আমীন! সুম্মা আমীন!!
তথ্য সূত্র –
১। শাজারা শরীফ – প্রকাশক –আঞ্জুমানে রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নীয়া, চট্টগ্রাম।
২। স্মরণের আবরণে - হযরত আল্লামা সৈয়দ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ্’র রহঃ স্মারক
৩। বাগে সিরিকোটি - আল্লামা তৈয়্যবিয়া সোসাইটি, বাংলাদেশ
৪। মুর্শিদে বরহক আল্লামা হযরত সৈয়দ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ্’র রহঃ জীবনী গ্রন্থ - সৈয়দ মুহাম্মদ অছিয়র রহমান।
৫। বাগে তৈয়্যবাহ্ - আল্লামা তৈয়্যবিয়া সোসাইটি, বাংলাদেশ
৬। আল্লামা তৈয়্যব শাহ্ রহঃ স্মারক গ্রন্থ -আল্লামা তৈয়্যবিয়া সোসাইটি, বাংলাদেশ
©somewhere in net ltd.