নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মুক্তমনা, সকল রকমের সংস্কার মুক্ত, আমি ধর্মভীরু হলেও ধর্মান্ধতা আমাকে কখনো গ্রাস করে নিতে পারেনি।আমি সুস্থ্য চিন্তা আর মানবিক মূল্যবোধে বিশ্বাসী। আমার শক্তি আমার আবেগ আবার সে আবেগ-ই আমার বিশেষ দুর্বলতা। নেহায়েত সখের বশে এক আধটু কাব্য চর্চা করি, এই আর কি। প্রিয় বিষয় সাহিত্য, ইতিহাস, ধর্ম, সংগীত, দর্শন, দেশ ভ্রমন আর গোয়েন্দা সিরিজের বই পড়া।ভীষণ ভোজন রসিক আমি। জন্ম যদিও চট্টগ্রামে কিন্তু ঢাকা শহরেই লেখা পড়া আর বেড়ে উঠা। আমার জীবনের গল্প তাই আর দশ জনের মতো খুবই সাদামাটা।
বিশ্বের সব দেশের মুসলমানেরা আমাদের প্রিয় নূর নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়ালিহি ওয়াসাল্লাম এর পবিত্র জন্ম বার্ষিকী খুবই ধূম ধামের সাথে উদযাপন করে থাকেন। এটা খুবই প্রাচীন রীতি ও ইসলামী সংস্কৃতির গৌরবময় অংশ। সারা বিশ্বের মুসলমানগণ আমাদের নবীজীর প্রতি ভালবাসা প্রকাশের আদর্শ মাধ্যম হিসেবে এ প্রথাকে গ্রহণ করে নিয়েছেন এবং এর মাধ্যমে তাঁরা বিশ্ব মুসলিমের সাথে ঐক্য ও সৌহার্দ্য প্রকাশ করে থাকেন। আজকাল একমাত্র নজদীপন্থী ওহাবীবাদের সমর্থক সালাফীরাই মিলাদুন্নবী পালনের বৈধতা নিয়ে বিভিন্ন অবান্তর প্রশ্ন তুলে মানুষকে বিভ্রান্ত করার প্রয়াস পাচ্ছে। সবগুলো মুসিলম দেশে সারা রবিউল আউয়াল মাসব্যাপী পালিত এ জন্ম উৎসব উপলক্ষে আয়োজিত হয় বিভিন্ন সেমিনার, প্যানেল আলোচনা এবং অন্যান্য অনুষ্ঠানমালা। বিশিষ্ট লেখক-বক্তারা নূর নবীজীর জীবনীর বিভিন্ন দিক নিয়ে মূল্যবান ও সারগর্ভ আলোচনা উপস্থাপনা করে থাকেন। প্রচুর সংখ্যক শ্রোতা এসব আলোচনা শোনার জন্য গভীর আগ্রহ নিয়ে এ সকল অনুষ্ঠানমালায় অংশগ্রহণ করে থাকেন। এবার আমরা ইন্দোনেশিয়ায় মিলাদুন্নবী উদযাপনের ইতিহাস আলোচনা করবো।
বিশ্বের বৃহত্তম মুসলিম দেশ ইন্দোনেশিয়া। ইন্দোনেশিয়ার ৮৮% অর্থাৎ প্রায় ২০ কোটি অধিবাসী মুসলমান। ফলে সরকারী পৃষ্ঠপোষকতায় ইন্দোনেশিয়ায় প্রতি বছর বেশ গুরুত্বের সাথে মিলাদুন্নবী উদযাপিত হয়ে থাকে। জনগনের ব্যাপক অংশগ্রহণের সুবিধার্থে সারা দেশে সেদিন সরকারী ছুটি ঘোষিত হয়। সকল সরকারী-বেসরকারী অফিস ও দোকানপাট সেদিন বন্ধ থাকে। এমনকি কোন সংবাদপত্রও সেদিন প্রকাশিত হয়না। সার দেশের মুসলিম জনগোষ্ঠী খুবই আনন্দ উদ্দীপণার সাথে মিলাদুন্নবী অনুষ্ঠান পালনের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করে থাকেন। জাভায় হাযার হাযার মানুষ নূর নবীজির পবিত্র জন্ম দিবসের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে থাকেন। ইদানিংকালে ইশতিকলাল মসজিদে মিলাদুন্নবী অনুষ্ঠানের প্রধান জমায়েত হয়ে থাকে। রাষ্ট্র প্রধান স্বয়ং এতে উপস্থিত থাকেন। সমবেত মুসলিম জনগণ এদিন আমাদের জন্য নবী হিসেবে হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে পাঠানোর জন্য দু হাত তুলে আল্লাহ্র দরবারে শুকরিয়া জ্ঞাপন করে থাকেন। এসব অনুষ্ঠানে নূর নবীজীর জীবনীর বিভিন্ন উল্লেখযোগ্য দিক আলোচিত হয়।অনুষ্ঠান শেষ উপস্থিত সবাইকে মিষ্টান্ন দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়। আবার অনেক ক্ষত্রে সমবেত অতিথিদের মধ্যে আতর বা সুগন্ধি দ্রব্যাদিও বিতরণ করা হয়। এসব অনুষ্ঠানমালা রাষ্ট্রীয় প্রচার মাধ্যম সমূহে সম্প্রচারিত হয়ে থাকে।
ইন্দোনেশিয়ায় আয়োজিতব্য মিলাদুন্নবী উদযাপন কেন্দ্রিক অনুষ্ঠানমালার সবচাইতে আকর্ষনীয় ও ঐতিহ্যবাহী দিক হচ্ছে আচেহ প্রদেশের শতদিন ব্যাপী একটানা মিলাদুন্নবী উদযাপন অনুষ্ঠান। এটা আচেহ প্রদেশের বহুশত বর্ষ প্রাচীন সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। ঐতিহাসিকদের মতে, তুরস্কের ওসমানী শাসক ২য় সেলিমের সময় কাল থেকে আচেহ প্রদেশে রাজকীয় পৃষ্ঠপোষকতায় এরকম জমকালো মিলাদুন্নবী উদযাপন অনুষ্ঠানমালা আয়োজিত হয়ে আসছে। এই শতদিন ব্যাপী আয়োজিত অনুষ্ঠানে পরিবেশিত খাদ্যের খরচ সমাজের বিত্তবান ব্যক্তিবর্গ ও সাধারণ জনগণ সম্মিলিতভাবে বহন করে থাকেন। সমাজের সকল স্তরের লোকজন একত্রে মিলাদুন্নবী উপলক্ষ্যে আয়োজিত এসব অনুষ্ঠানে স্বতস্ফূর্তভাবে অংশ নিয়ে পরস্পরকে সাদর সম্ভাষণ জানিয়ে উপহার বিনিময় করে থাকেন। অনুষ্ঠানে ধর্মীয় সংগীত গীত হয় এবং মুখরোচক খাদ্য সামগ্রী পরিবেশিত হয়ে থাকে। নূর নবীজীর পবিত্র জন্ম দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত বিশেষ অনুষ্ঠানের নাম “কেন্দুরী” আর এ উপলক্ষ্যে প্রস্তুতকৃত বিশেষ খাদ্য সামগ্রীর নাম “বুকুলাহ”। “বুকুলাহ” হচ্ছে প্রক্রিয়ায় রন্ধনকৃত ভাত যা কলা পাতায় মোড়ানো অবস্থায় সকলকে বিতরণ করা হয়। সকলে নতুন জামা কাপড় পরিধান করে এ সব অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়। ছোট ছোট বাচ্চারা বড়দের কাছ থেকে বিভিন্ন উপহার সামগ্রী লাভ করে থাকে।
©somewhere in net ltd.