নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মুক্তমনা, সকল রকমের সংস্কার মুক্ত, আমি ধর্মভীরু হলেও ধর্মান্ধতা আমাকে কখনো গ্রাস করে নিতে পারেনি।আমি সুস্থ্য চিন্তা আর মানবিক মূল্যবোধে বিশ্বাসী। আমার শক্তি আমার আবেগ আবার সে আবেগ-ই আমার বিশেষ দুর্বলতা। নেহায়েত সখের বশে এক আধটু কাব্য চর্চা করি, এই আর কি। প্রিয় বিষয় সাহিত্য, ইতিহাস, ধর্ম, সংগীত, দর্শন, দেশ ভ্রমন আর গোয়েন্দা সিরিজের বই পড়া।ভীষণ ভোজন রসিক আমি। জন্ম যদিও চট্টগ্রামে কিন্তু ঢাকা শহরেই লেখা পড়া আর বেড়ে উঠা। আমার জীবনের গল্প তাই আর দশ জনের মতো খুবই সাদামাটা।
শাহানশাহে সিরিকোটি (রাহঃ) এর পূর্ব পুরুষ হযরত সৈয়্যদ মুহাম্মদ গিছু দরাজ আউয়াল (রাহঃ) এর সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
তাঁর পূর্ণ নাম – হযরত মীর সৈয়্যদ মুহাম্মদ কালান বিন কাফ আল হুসাইনী (রাহঃ)। কিন্তু ইতিহাসে তিনি গিছু দরাজ আউয়াল (রাহঃ) নামে বহুল পরিচিত। বংশ লতিকা অনুসরণে দেখা যায় যে, তিনি আমাদের মহা নবীর দশম বংশধর।
তাঁর পবিত্র বংশ লতিকা নিম্নরূপ –
প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ মুসতাফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
১। হযরত সৈয়্যদা ফাতিমাতুয যাহ্রা রাদি আল্লাহু তায়ালা আনহা
২। ইমামুস শুহাদা হযরত সৈয়্যদ ঈমাম হুসাঈন রাদি আল্লাহু তায়ালা আনহু
৩। ইমামুস সাজ্জাদ হযরত সৈয়্যদ জয়নুল আবিদিন রাদি আল্লাহু তায়ালা আনহু
৪। হযরত সৈয়্যদ মুহাম্মদ বাকির রাহমাতুল্লাহি আলাইহি
৫। হযরত সৈয়্যদ ঈমাম জাফর আস সাদিক রাহমাতুল্লাহি আলাইহি
৬। হযরত সৈয়্যদ ইসমাইল বিন জাফর রাহমাতুল্লাহি আলাইহি
৭। হযরত সৈয়্যদ আলী বিন ইসমাইল রাহমাতুল্লাহি আলাইহি
৮। হযরত সৈয়্যদ ফাতেহ বিন ইসমাইল রাহমাতুল্লাহি আলাইহি
৯। হযরত সৈয়্যদ ক্বাফ রাহমাতুল্লাহি আলাইহি
১০। হযরত সৈয়্যদ মুহাম্মাদ ক্বালান ওরফে গিছুদারাজ রাহমাতুল্লাহি আলাইহি (৯০৭-৯৯৯ খৃষ্টাব্দ)। কিন্তু আমাদের হুযুর কেবলার(রাহঃ)বংশ তালিকায় তাঁকে দ্বাদশ হিসাবে উলেখ করা হয়েছে।
ভারতীয় ইতিহাসে এরকম মোট তিন জন গিছুদারাজের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়।
মজার ব্যাপার যে এঁদের একজনের মাজার পাকিস্তানের কোহে সুলাইমানীতে, অপর জনের মাজার ভারতের গুলবারগায় এবং আর একজনের মাজার বাংলাদেশের আখাউড়া-তে অবস্থিত।ফারসী ভাষায় গিছু শব্দের অর্থ চুল আর দরাজ শব্দের অর্থ লম্বা বা দীর্ঘ। উল্লেক্ষ্য যে, তাঁদের সকলের মাথায় দীর্ঘ বাবরি চুল ছিল। তাই তাঁদেরকে ‘গিছুদারাজ’ নামে ডাকা হতো।
১। হযরত সৈয়্যদ কামালুদ্দীন বিন মুহাম্মদ বিন ইউসুফ আল হুসাইনী রহঃ ওরফে হযরত খাজা বান্দা নওয়াজ গিছু দরাজ (রাহঃ)। ইনি ছিলেন চিশতিয়া নিযামিয়া তরীকার একজন বিখ্যাত সূফী সধক। দিল্লীতে ১৩২১ খৃষ্টাব্দে তাঁর জন্ম হয়।তিনি ছিলেন হযরত নয়াসিরুদ্দিন চেরাগে দেহলভী (রাহঃ) এর মুরীদ ও বিশিষ্ট খলীফা। ১৪২২ খৃষ্টাব্দে গুলবারগায় তাঁর দেহান্তর ঘটে এবং সেখানেই তাঁকে সমাধিস্থ করা হয়েছে।
২। হযরত সৈয়্যদ আহমদ গিছু দরাজ (রাহঃ)ছিলেন সিলেট বিজয়ী হযরত শাহ্ জালাল ইয়ামেনী (রাহঃ) এর একজন শিষ্য ও বীর মুজাহিদ।ইতিহাস অনুসরণে দেখা যায় যে তিনি চচতুর্দশ শতকের একজন বিশিষ্ট সূফী সাধক ও বীর যোদ্ধা।এক বিধর্মী জমিদারের বিরুদ্ধে জিহাদ করতে গিয়ে তিনি শহীদ হন। সিলেটের হবিগঞ্জে তাঁর পবিত্র দেহ মুবারাক সমাহিত করা হয়েছে। আর তিতাস নদীর তীরে আখাউরার খড়মপুরে এ মহান সাধক ও বীর যোদ্ধার পবিত্র মস্তক মুবারক সমাধিস্থ করা হয়েছে।
এবার আমরা হযরত মীর সৈয়্যদ মুহাম্মদ কালান বিন কাফ আল হুসাইনী (রহঃ) ওরফে গিছু দরাজ আউয়াল (রাহঃ এর পবিত্র জীবন কথা আলোচনা করবো।তাঁর শিরোপরি সূদীর্ঘ বাবরি চুল শোভা পেত বিধায় তাঁকে ‘গিছুদারাজ’ নামে ডাকা হতো। চেনার সুবিধার্থে ঐতিহাসিকগণ তাঁকে গিছুদারাজ আউয়াল নামে চিহ্নিত করেছেন।তিনি ইরান তথা তৎকালীন পারস্যের কোলান শহরে ২৯৫ হিযরী সনে জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন পারস্যের যুবরাজ ও বিখ্যাত সূফী সাধক। তাঁর স্বমামধন্য পিতা হযরত সৈয়্যদ ক্বাফ আল হুসাইনী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি ছিলেন ইমাম জাফর আস সাদিক রাহমাতুল্লাহি আলাইহির বংশের চতুর্থ অধঃস্তন পুরুষ।বাল্যকালেই তাঁর মধ্যে সূফী সূলভ চেতনার উম্মেষ ঘটেছিল।পরিণত বয়সে তাই তিনি সকল রাজকীয় আরাম-আয়েশ ও বিলাস ব্যসন অবলীলায় ত্যাগ করে ফকীরী জীবন গ্রহন করেন।পরম সত্যের অন্বেষায় জনহীন পাহাড়ী এলাকায় কঠোর আধ্যাত্মিক সাধনায় জীবন অতিবাহিত করেন। একসময়ে তিনি কাকড়ী সরদার নামে এক পশতুন গোত্রপতির সুশীলা কুমারী কন্যার পাণি গ্রহণ করেন। সে স্ত্রীর গর্ভে তাঁর এক পুত্র সন্তানের জন্ম হয়। সে সময়ে হযরত সৈয়্যদ মুহাম্মাদ গিছুদারাজ রাহমাতুল্লাহি আলাইহি এক অতি পছন্দনীয় নিমন্ত্রণের অপেক্ষায় ছিলেন।আর তাঁর স্ত্রী ছিলেন সন্তান সম্ভবা। এমনি মধুর ক্ষণে তাঁর পূণ্যবতী সুশীলা স্ত্রীর কোল আলো করে জন্ম নেয় এক ফুটফুটে পুত্র সন্তান। পশতু ভাষায় মাসওয়ানী শব্দের অর্থ নিমন্ত্রন বা দাওয়াত।আনন্দ লহরীতে ভাসমান দম্পতি তাই নবজাতক সন্তানের আদুরে নাম রাখেন ‘মাসুদ শাহ্ মাসওয়ানী’।
হযরত সৈয়্যদ মুহাম্মাদ গিছুদারাজ রাহমাতুল্লাহি আলাইহিকে ইরান, আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের অনেকগুলো প্রসিদ্ধ সৈয়্যদ বংশীয় গোত্রের জনক হিসবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে। যেমন – মাসওয়ানী, ওয়ারদাক, হানি উস্ত্রানা প্রভৃতি)। তিনি ইরান থেকে পাকিস্তানের কুহে সুলায়মানি-তে হিজরত করলে তাঁর বংশীয় মর্যাদা বিবেচনা করে বিভিন্ন পশতুন গোত্রপতিগণ (কাকর, শিরাণী এবং কারলানী) তাঁর নিকট নিজ নিজ যুবতী কন্যা সন্তানকে উপহার হিসেবে প্রদান করেন। এ সকল পুণ্যবতী মহিলাদের গর্ভে ভূমিষ্ঠ তাঁর বেশ কয়েকজন পুত্র সন্তানের নাম পাওয়া যায়। যেমন – সৈয়্যদ মুহাম্মদ মাসুদ মাসওয়ানী, সৈয়্যদ হানি আল হসাইনি, সৈয়্যদ মুহাম্মাদ আল হুসায়নী, সৈয়্যদ স্ত্রোরে আল হুসায়নী ।
অন্যান্য সৈয়্যদ বংশীয়দের মত ৪৯০ হিজরি/ ৯৯৯ খৃষ্টাব্দে তাঁকেও বিষ প্রয়োগে শহীদ করা হয়। পাকিস্তানের কোহে সোলায়মানি এলাকায় এ মহান সাধকের মাযার রয়েছে।
তথ্যসূত্র ঃ
১। শাজরা শরীফ – প্রকাশক ঃ আঞ্জুমানে রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নীয়া, চট্টগ্রাম, বাংলাদেশ।
২। হালতে মাসওয়ানী (উর্দু) – পাকিস্তান থেকে প্রকাশিত।
৩। ইন্টারনেট
©somewhere in net ltd.