নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নতুনভাবে নিজের চিন্তার শক্তি আর ভাবনার বিশ্লেষণ করার সামর্থ অর্জনের জায়গা হল ব্লগ। বিচিত্র ভাবনারাশির আলোয় নিজেকে আলোড়িত আর আলোকিত করার উদ্দেশেই আমরা ব্লগে আসি। অবসর সময়টাকে ভালোভাবে কাটানোর জন্য এর চেয়ে মোক্ষম উপায় আর নেই। তদুপরি বিনোদন এখানে উপরি পাওনা

এস এম ইসমাঈল

মুক্তমনা, সকল রকমের সংস্কার মুক্ত, আমি ধর্মভীরু হলেও ধর্মান্ধতা আমাকে কখনো গ্রাস করে নিতে পারেনি।আমি সুস্থ্য চিন্তা আর মানবিক মূল্যবোধে বিশ্বাসী। আমার শক্তি আমার আবেগ আবার সে আবেগ-ই আমার বিশেষ দুর্বলতা। নেহায়েত সখের বশে এক আধটু কাব্য চর্চা করি, এই আর কি। প্রিয় বিষয় সাহিত্য, ইতিহাস, ধর্ম, সংগীত, দর্শন, দেশ ভ্রমন আর গোয়েন্দা সিরিজের বই পড়া।ভীষণ ভোজন রসিক আমি। জন্ম যদিও চট্টগ্রামে কিন্তু ঢাকা শহরেই লেখা পড়া আর বেড়ে উঠা। আমার জীবনের গল্প তাই আর দশ জনের মতো খুবই সাদামাটা।

এস এম ইসমাঈল › বিস্তারিত পোস্টঃ

সারা বিশ্বে একই দিনে সর্বত্র ঈদ উদযাপন ঃ সম্ভাবনা ও বাস্তবতা:

২৩ শে জুলাই, ২০১৮ রাত ১০:২৬

সম্প্রতি আমাদের দেশের বিভিন্ন স্থানে বিশেষতঃ চাঁদপুর, পটুয়াখালী, চট্টগ্রাম এর বিস্তীর্ণ এলাকায় সউদী আরবের সাথে মিল রেখে রমজানের ঈদ ও কুরবানীর ঈদ পালনের এক অভিনব ফ্যাশনের হিড়িক পড়ে গেছে। তাও আবার ইসলামের নামে। বিশ্বভ্রাতৃত্ব ও মুসলিম বিশ্বের ঐক্যের ধধুঁয়া তুলে একটা সর্বজনস্বীকৃত বিষয় নিয়ে নতুন করে অনৈক্য ও বিভেদ ছড়ানো হচ্ছে। বিষয়টি গভীর উদ্বেগজনক। এর পিছনে অমুসলিম শিবিরের সুদুর প্রসারী চক্রান্ত ও যড়যন্ত্রথাকাটাও বিচিত্র নয়।
মূল আলোচনা শুরু করার আগে কয়েকটি বিষয়ের উপর আলোকপাত করা প্রাসঙ্গিক হবে বলে মনে করছি -
১। মহান আল্লাহ্ তায়ালা পবিত্র কুরআনে হাকীমে বলেছেন, “ হে ঈমানদার বান্দাগন! রাসুলুল্লাহ (দঃ) তোমাদেরকে যা দেন, তা তোমরা গ্রহন কর এবং তিনি যা করতে নিষেধ করেন তা থেকে বিরত থাকো।” আল কুরআন
২। বিদায় হজ্বের দিনে মহান আল্লাহ্ পাক নুর নবীজীকে এ মর্মে সুখবর দিয়ে আয়াত নাযিল করেছেন যে, “আজ তিনি ইসলাম ধর্মকে সম্পূর্ণ করে দিয়েছেন এবং আমাদের জন্য তাঁর নিয়ামতসমুহকে পরিপর্ণ করে দিয়েছেন এবং ইসলাম ধর্মকে আমাদের জন্য অবশ্য পালনীয় ধর্ম হিসেবে মনোনীত করেছেন”।
৩। কোন দেশ বা ব্যক্তি ইসলামের জন্য দলীল হতে পারে না। বরং এ ক্ষেত্রে পবিত্র কুরআন ও সুন্নাহর বর্ণিত বিধিবিধান তথা শরীয়তের আইন-ই পালনীয় হবে। যে বিষয়ে পবিত্র কুরআন ও সুন্নাহ-তে কোন উল্লেখ নাই কিংবা সম্মানিত সাহাবীদের দ্বারা কৃত কোন স্বীকৃত আমলও নাই, সে রকম কোন বিষয় অর্থাৎ নতুন কোন বিধিবিধান প্রচলনের ক্ষেত্রে কখনও কোন প্রতিষ্ঠিত শরয়ী বিধানের বাইরে যাওয়া যাবে না।
৪। যে কোন ব্যক্তিকে তিনি যে দেশে অবস্থান করছেন অর্থাৎ তাঁর নিজ দেশের প্রচলিত আইন ও সমাজ ব্যবস্থার প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকতে হবে। শুধুমাত্র প্রবাসীগন এর আওতাধীন নন। তাঁদেরকে তিনি বর্তমানে যে দেশে কার্যোপলক্ষে বসবাস করে আসছেন, সে দেশের প্রচলিত বিধিবিধান মেনে চলতে হবে। এর অন্যথা করা চলবেনা।
৫। মহান আল্লাহ্ তায়ালা পবিত্র কুরআনে হাকীমে আরও বলেছেন, “হে ঈমানদারগন ! তোমরা আল্লাহ্ পাক, তাঁর রাসুল ও তোমদের জন্য যারা নেতা নির্বাচিত হয়েছে তাদের অনুসরণ কর”। তাই মহানবী যা কিছু করেছেন ও যা কিছু করার অনুমতি দিয়েছেন তা-ই করতে হবে এবং দেশের প্রচলিত ইসলামী সরকারের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করতে হবে। তাই মহান আল্লাহতায়ালা ও তাঁর রাসুলের (দঃ) নির্দেশের বাইরে গিয়ে কিংবা আবেগের বশবর্তী হয়ে নিজেদের মর্জি মাফিক কোন কাজ করা যাবেনা। তা আপতঃদৃষ্টিতে যত ভাল কাজই হোক না কেন। কারন অনেক সময় শয়তান মানুষকে নেক কাজের সুরতে এসে ধোঁকা দিয়ে থাকে।

৬। মহান আল্লাহ্ তায়ালা পবিত্র কুরআনে হাকীমে আরেক স্থানে বলেছেন, “নিশ্চয়ই তিনি সকল বিষয়ে অতিশয় ক্ষমতাবান। তিনি রাত্রকালীন অংশকে প্রবিষ্ট করান দিনের মধ্যে আর দিবকালীন অংশকে প্রবিষ্ট করান রাতের মধ্যে”। সুরা আল ইমরান- এখানে ঋতু পরিবর্তনের দিকে ইংগিত করা হয়েছে।
পবিত্র কুরআনে তিনি আরও বলেন,“তিনি রাত্র দ্বারা দিবসকে আছন্ন করেছেন এরূপে যে, সেই রাত্রি দিবসের প্রতি দ্রুত আসিয়া পৌঁছে। সুর্য,চন্দ্র ও তারকারাজি সৃষ্টি করেছেন এরূপে যে, সব কিছুই তাঁর আদেশের প্রতি অনুগত। ........... প্রকৃতপক্ষে আল্লাহতায়ালা সীমা অতিক্রমকারীদেরকে ভালবাসেন না।
আর তোমরা ভূপৃষ্ঠে ফ্যাসাদ সৃষ্টি করবে না। তা সংষ্কার/ মীমাংসার পর। আর তোমরা আল্লাহর ইবাদাত কর ভয়-ভীতি ও আশা-ভরসা সহকারে। নিশ্চয় আল্লাহর রহমত সৎকর্মশীল বান্দাদের অতি নিকটবর্তী”।
“হে ঈমানদার বান্দাগন! তোমরা নিজেদের কন্ঠস্বরকে নবীর কন্ঠস্বরের চেয়ে বেশী উঁচু করবেনা। যদি তোমরা তা কর, তাহলে তোমাদের নেক আমলসমুহ এমনভাবে বরবাদ হয়ে যাবে যে, তা তোমরা টেরও পাবেনা”। সুরা হুজুরাত
অর্থাৎ কোন কথা ও কাজে নবীজীর অগ্রবর্তী হওয়া চলবেনা। কারন, তাঁর নির্দেশিত পথেই রয়েছে আল্লাহর সন্তুষ্টি, মঙ্গল ও সাফল্য।
৭। আল্লাহতায়ালার অপরিসীম সৃষ্টি বৈচিত্র, অভিনবত্ব, মহাবিজ্ঞানময় সৃজন কুশলতা,বিশ্ব চরাচর সৃষ্টির পিছনে নিহিত তাঁর অপার মহিমা তথা সুমহান লক্ষ্য, সর্বোপরি, মানব কল্যাণের জন্য তাঁর সমগ্র সৃষ্টিকূলকে নিয়েজিত করার বিষয়টাকে সব সময় মনে রাখতে হবে। তিনি ইচ্ছা করলেই পৃথিবীর সর্বত্র একই সময়ে দিন ও রাত করতে পারতেন। সব মানুষকে সর্ববিষয়ে সমান যোগ্যতা/সপদ/মেধা সপন্ন করে সৃষ্টি করতে পারতেন। কিন্তু মহান স্রষ্টা তা করেননি। কারন এর পিছনে তাঁর সুমহান সৃষ্টিকৌশল, রুচিজ্ঞান, রুচিবৈচিত্র, ইচ্ছার বহুমুখীতা, অভিনবত্ব সৃষ্টির গোপন প্রেরণা ও বাসনা, মনব প্রেম ইত্যাদি ক্রিয়াশীল ছিল। কারন, আল্লাহ্ পাক এটাই চান যে, তার জমীনের সবর্ত্র যেন সব সময় তাঁর সেজদা ও জিকির চালু থাকে।
৮। মুসলিম বিশ্বের সব দেশে একই দিনে ঈদ উদযাপনের ব্যাপারে ক্ষীণতম সম্ভাবনা থাকলেও তিনি তা তাঁর উম্মতদের জন্য উম্মুক্ত করে দিতেন। কারন তাঁর প্রবর্তিত ধমের্র মল সুরইতো হচ্ছে বিশ্বভ্রাতৃত্ব ও মানবতাবাদ। এছাড়া তিনি কখনো বলেননি, “যে তোমরা বিশ্ব মুসলিমগন একই দিনে সম্মিলিতভাবে ঈদ-কুরবানী পালন করবে। এটা তোমাদের জন্য উত্তম”। কারন তিনি খুব ভাল করেই জানতেন যে, এটা কিছুতেই সম্ভব নয়। এটা সাধারণ যুক্তি বিরোধী ও আল্লাহ্’র বিধান এবং ইচ্ছার পরিপন্থী।
৯। এ বিষয়ে বাধ সেধেছে খোদ আন্তর্জাতিক তারিখ রেখা। যা পৃথিবীব্যাপী সঠিক সময় নির্নয়ের মানদন্ড হিসেবে বিবেচিত। আন্তর্জাতিকভাবে প্রচলিত ও সুস্বীকৃত। এটি আসলে ভূপৃষ্টের উপর একটা কল্পিত রেখা, যার দ্বারা বিভিন্ন দেশের সময়ের তারতম্য সঠিকভাবে নির্ণিত হয়ে থাকে। এটাকে বলে গ্রীনউইচ মান সময়। যা সকল দেশই নির্দ্বিধায় মেনে নিয়েছে।
১০। মহানবী যা কিছু করেছেন, তা’র সবই মানব কল্যাণের জন্যই করেছেন এবং আল্লাহ্’র নির্দেশ মোতাবিকই করেছেন। ভবিষ্যতের অনেক অনাগত ঘটনাবলীর ব্যাপারেও তিনি সম্মানিত সাহাবাদের নিকট ভবিষ্যতবানীও করেছেন। যেমন- পারস্য বিজয়, মক্কা বিজয়, কিয়ামতের আলামত সমুহ, ইত্যাদি। যদি বর্তমানকালের অভিনব উপায়ে ঈদ উদযাপনের ব্যপারে তাঁর কিছু জানা থাকতো তা তিনি অবশ্যই তাঁর প্রিয় সাহাবীদের অবগত করতেন।
১১। সীহাহ ছিত্তার হাদীস গ্রন্থসমুহের মধ্যে, বা ফিকাহের গ্রন্থাদিতে, চারি খলীফার আমলের কোন ঘটনার নজীর কিংবা চারি মাজহাবের ইমামগণের কোন গ্রন্থে এ বিষয়ে কোন উল্লেখ নেই। তাছাড়া নামাজ,রোজা, হজ্জ, যাকাত এ সব বিষয়ে নতুন কোন বিধান চালু করা যাবে না। কারন এটি হলো ইজতিহাদ ফিদ্দিন। তাই এটা নিষিদ্ধ।
১২। এরকম করা হলে, তা হবে যুক্তিবিরোধী। কারন আপনি নামাজ পড়বেন বাংলাদেশের স্থানীয় সময়ে, সেহেরী-ইফতার করবেন বাংলাদেশের স্থানীয় সময়ে আর ঈদ পালন করবেন সউদী আরবের সময়ে। এটা কী করে সম্ভব? এতো একরকম পাগলামী ও বাতিকগ্রস্থতা ছাড়া আর কিছুই নয়। আর একটা কথা জানিয়ে দিচ্ছি –, সউদী আরব কিন্তু ইসলামী প্রজাতান্ত্রিক দেশ নয়। এটা রাজতান্ত্রিক দেশ। রাজার হুকুমেই চলে সে দেশের সব কিছু। সেখানে রাজপরিবারে বিচারের জন্য প্রযোজ্য এক রকম আইন আর অন্যান্যদের জন্য ভিন্ন আইন। আর সউদী আরব নামটাও কিন্তু তাদেরই দেয়া। অথচ শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে মুসলিম বিশ্বে এটা আরব ভূখন্ড - তথা জাজিরাতুল আরব নামেই সর্বত্র পরিচিত ছিল।এরা শুধু মাত্র মুসলমানদের পবিত্র স্থানদ্বয়ের দেখাশুনাকারী ও রক্ষক মাত্র। এ ছাড়া তাদের আর কোন পরিচিতি নাই।তদুপরি বিশ্বের সব দেশের বিজ্ঞ আলেমেরা ইসলামের বিভিন্ন ইস্যুতে একমত নন।অঢেল পেট্রো ডলারের জোরে অনেক দেশের আলেমদের মাথা এরা কিনে নিয়েছে। ইসলামী শরীয়তের আইনকে অবজ্ঞা করে এরা নজদী/ওহাবীদের কথা মুতাবিক কাজ করছে। এই সব মৌলোভী, দুনিয়াদার আলেমদের সম্পর্কে আল কুরআনে বহু আগেই সতর্ক বাণী এসেছে -
মহান আল্লাহ্‌ পাক বলেন, “তারা আল্লাহ্‌’র বানীকে অতি সামান্য জিনিষের বিনিময়ে বিক্রি করে
এবার শুনুন বিজ্ঞানের কথা- বর্তমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত উৎকর্ষের যুগে এমন অভিনব প্রযুক্তি আবিষ্কৃত হয়েছে যে, যে কোন সময়ে, যে কোন স্থান থেকে নির্ভুলভাবে ভূপৃষ্টের যে কোন স্থানে চন্দ্রোদয়ের সঠিক তথ্য ও চিত্র পাওয়া অতি সহজ। তাই চাঁদ দেখা নিয়ে অহেতুক বিতর্ক সৃষ্টির কোন অবকাশ নেই। সরল বিশ্বাসে নবীজীর কথা ও কাজের উপর আমল করা অপরিহার্য। আর নবীজীর ভাষ্যমতে, “শেষ যুগে তাঁর সুন্নতকে জীবিতকারী ব্যক্তি এক শত শহীদের সমান বিশেষ সম্মান ও সওয়াবের ভাগীদার হবে।
আল্লাহ্‌ই সবাইকে সঠিকভাবে সত্য দ্বীন বুঝবার ও সে মতে আমল করার তৌফিক দাতা।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.