![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি কিছুই না।বুদবুদ।
আমার বড় কাকা। একজন সরল মানুষ-সহজ মানুষ ছিলেন।বাবার কাছে এবং দাদির কাছে শুনেছি ১৯৭১ সালে পাকিস্তানীরা কাকাকে মারার জন্য লাইনে দাড় করিয়েও কেন যেন মারেননি।কেউ কেউ বলেন কাকার সরলতা।কিন্ত্ত কাকা বোকা ছিলেন না।কাকার মুখে ছিলো একটা ইন্নোসেন্ট ভাব।সেখানে কোন ধূর্ততা ছিলোনা।পাকিরা কাকাকে নিয়ে সারা গ্রাম টহল দিলো।কাকা বিভিন্ন লোকের বাড়ীতে নিয়ে গেছেন।বেয়নেট দিয়ে খুচিয়ে টুচিয়ে রক্তাক্ত করেছে।তারপরও বেঁচে গেলেন কি ভাবে কে জানে। তারা কাকাকে ছেড়ে দিলো।অথচ তখন আমাদের গ্রামের দক্ষিণ কবর স্থানের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্প ।কাকা নাকি ভুলিয়ে ভালিয়ে ওদের উত্তর পারার কোন এক লোকের বাড়ি দেখিয়ে দিলেন যে বাড়িতে কেউ ২০ বছর বাস করেনা। ওরা মনের আনন্দে সেই ঘর পুড়িয়ে আলমনগরের বিল পেরিয়ে চলে গেল।নবীনগর।
বড় কাকা কিছুদিন আগে মারা গেলেন ব্রেইন স্ট্রোক করে।মৃত্যুগুলো এত কঠিন কেন হয় আমি বুঝতে পারিনা।
কয়েক বছর আগে কাকাকে নিয়ে আমি বার্ডেম হাসপাতালে।ডায়াবেটিস ছিলো ।সামান্য কাটা থেকে ইনফেকশান। ডায়াবেটিস হলে যা হয় আর কি।তখন কাকার বড় ছেলে এবং মেজো ছেলেকে বিদেশ পাঠাতে গিয়ে টাকা পয়সার একটা বিশাল টানাপোড়েনে পড়েছিলেন।বার্ডেমের চিকিৎসক কাকাকে পায়ে ৬ বার অপারেশন করেছিলেন।এবং কোন রকম অবশীকরণ ছাড়াই।অবশ করতে গেলে তখন পা*চশ টাকা দিতে হত শুধু অবশ করার জন্য।তো এটাকাটা মেনেজ করা অনেক কঠিন ছিলো।কাকাকে যখন একেকবার অপারেশন করতে পাঠানো হত তখন কাকা হাতে পায়েধরে বলতেন আমারে মাইরা ফালা তবুও আর কষ্ট দিস না।আমি দেখেছি ডাক্তার কিভাবে উনার পা'কে ছুরি দিয়ে পুছিয়ে পুছিয়ে কেটেছে।সেন্সলেস না করে।দূর থেকে উনার আর্তি শুনেছি।শিশুদের মত হাত কপালে তুলে।ডাক্তার সাব আমি আর সহ্য করতে পারছিনা।যতবার উনাকে আমি অপারেশন কক্ষে পাঠাতে বলেছি ততবার উনার শরীর ভয়ে কুকড়ে উঠেছে।এক একটা চিৎকার আজো আমার কানে বাজে ।একজন অবুঝ শিশুর মত সেকি আহাজারী।উনার চিৎকারে ডাক্তারও বিরক্ত।কি ধমক।এভাবে করলে তোমার কাকাকে চিকিৎসা করাতে পারবনা।এত চেচামেচি।৬ বার অপরেশনের পর ডাক্তার বললেন যে তোমার কাকাকে এখানে ভালো করা যাবেনা।রামপুরা ফুটকেয়ার হাসপাতাল আছে একটা ওখানে নিয়ে যাও।তো ওখানে নিতে গেলে অনেক টাকার দরকার টাকা ম্যানেজ করা !কিভাবে করব।আবার এদিকে ফুফির বাসায় ওনাকে নিয়ে থেকে থেকে বিরক্তি ধরিয়ে দিয়েছি।কাকার বড় ছেলে,আমার বাবা,কাকি সবাই বলছে আর টাকা পাঠাতে গেলে জমিজামা বিক্রি করে ফকির হয়ে যাবে।বাড়িতে নিয়ে আয়।হায়াৎ থাকলে বাঁচবে।যা যা খেতে চায় খাইয়ে দিই মরে যাক।কাকার সাথে থেকে আমিও উনার দাবিদাওয়া কথাবার্তায় যারপর নাই বিরক্ত।এমনও সময় গেছে মনে হয়েছে কাকাকে রেখে আমি পালিয়ে আসি।কিংবা গলা টিপে মেরে ফেলি।সাহস হয়নি।শরীর রাগে ফেটে যাবার অবস্থা ।বাড়িতে ফোন দিলাম।যেকরেই হোক যেভাবেই হোক টাকা পাঠাও ।না হলে আগুনে জ্যান্ত পুড়িয়ে মারব।কাকার বড় ছেলেটাতো আমাকে প্রায় দমক- নিছেন কেড়ে হাসপাতালে?অবশেষে রামপুরায় ভর্তি করালাম।৪৭ দিন পর রিলিজ পেলাম।মোটা বিল।টাকা ম্যানেজের সে একঝামেলা!তো যা বুঝলাম।ডায়াবেটিসের এরকম ঝামেলায় যারা পড়েন তাদের পায়ে ভালোরকম ব্লাড সার্কেলুশান না থাকার কারণে ক্ষতটা শুকায় না।কাকার হাটুর কিছুটা নিচে পর্যন্ত ভালো সার্কোলেশন ছিলো।বার্ডেমের ডাক্তার ব্যাপারটা আগেই জানতো।সে যদি আমাকে আগেই খুলে বলতো ঘটনাটা যে তোমার কাকার পায়ের ব্লাড সার্কোলেশন টেষ্ট করে দেখো '''''''''।তাহলে উনাকে আমি ৬ বার কচুকাটা করতে দিতাম না। বুঝলাম বাংলাদেশে বার্ডেমর চেয়েও ভাল হাসপাতাল আছে।সেখানে টাকার খরচ বেশি।ডাক্তারগুলো সব বার্ডেম থেকই যায়।ওখানে গিয়ে ভালো চিকিৎসক হন।সেবার ভালো হয়ে বাড়িতে আসি।জমি বিক্রি করে সবঝামেলা মিটাতে হয়।
বছর ঘুরতে না ঘুরতেই আবার আরেকটা পায়ে ইনফেকশান সামান্য কানি নখ থেকে।সারারাত বাড়িতে পড়ে কাঁদেন কেউ কাকার কাছে যায়না।বিষ খেতে চান কেউ সেটাও দেয়না।সিলেট থেকে আমি গেলাম।চিটাগাং থেকে ছোট।আবার সেই রামপুরা হাসপাতাল।দুইবার অপারেশন।দুই মাস হাসপাতাল।লম্বা একটা বিল।আবার টাকার ঝামেলা।বাড়িতে ফোন দিলাম কাকার বড় ছেলেকে টাকা ম্যানেজ কর ।সুদে টাকা আন।জমিজামা যা আছে বিক্রি কর।জমির মালিকানা এখনো তোর বাবার।এবারো কিছুটা সুস্থ হয়ে বাড়ি আসলেন।
বাঁচলেন পাঁচ মাস আটাস দিন।যেদিন কাকা স্ট্রোক করলেন সেদিন আমি বাড়িতে ফোন করেছিলাম।কেউ আমাকে জানায়নি কাকার অসুস্থতার কথা।আবার যদি আমি কোন গণ্ডগোল করি,সেই ভয়ে।সারারাত মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করলেন।সকলে মিলে খতম করলেন।কোরআন পড়লেন।আর দোয়া করলেন সহজ মৃত্যুর জন্য।কেউ ডাক্তার ডাকলেন না।সকালে মারা গেলেন।অফিস যেতে না যেতেই ফোন।কাকার বড় ছেলেটার।আব্বা আর নেই।কান্না।
বাড়ি যাব।পথে বাস নষ্ট।গোকর্ণঘাট থেকে লঞ্চে গেলে শেষ দেখাটা দেখতে পাবোনা।উপায় স্পিডবোট।গিয়ে দেখি জানাজা পড়া হয়ে যাবে যাবে।একজন কে যেন আমার বাবা কিংবা ছোট কাকা কিংবা আমার মৃত কাকার বড় ছেলে বলছে' উনি কেমন লোক ছিলেন?
সমবেত লোকেরা বলছে তানে 'উনি ভাল লোক ছিলেন'।কাকাকে আমি কবরে নামাবার আগে কবরটার উচ্চতা দেখি।দেখি দৈঘ্য,প্রস্থ।নিজ হাতে কবরে নামিয়ে উঠে যাবার আগে ইচ্ছে হল কাকার মুখটি শেষবারের মত দেখতে।মুখ থেকে কাপড় সরিয়ে দেখি কাকা চেয়ে আছেন।সেই চোখে
নেই কোন অভিমান,কোন জিজ্ঞাসা,কোন চাওয়া।উদাস দৃষ্টি।লোকেরা বলল মুখটি ঢেকে দিতে।আমি পারছিলাম না।এই বুঝি শেষ দেখা!আমি উপরে উঠে এলাম।বাঁশের কাঠিগুলো মাঝখান থেকে দিতে দিতে কাকাকে একেবারে ঢেকে দিলাম।
বাড়ি থেকে আমি পরদিনই চলে আসি।রাতে সবাই মিলে বসে সলাপরামর্শ করে।পাঁচদিনের দিন ভোজ করতে হবে।কত খরচ হবে?কম করে হলেও পঞ্চাশ হাজার টাকা।আমাকে কে যেন বলে কিরে অনুষ্ঠানে আসবি না?আমি কিছু বলতে পারিনা।ইচ্ছে হয়েছিলো চ' আধ্যক্ষরের বুলেট ছাড়ি।শেষে ঠোঁটটাকে দাঁত দিয়ে চেপে ধরে থাকি শক্ত করে।
হ্যাঁ আমার বড় কাকা ভাল লোক ছিলেন।ছোটবেলায় কাকাকে নিয়ে নৌকা করে কোথায় যেন যাচ্ছি
।নৌকায় একটা বড় বোয়াল মাছ পড়লো লাফ দিয়ে।কাকা মাছটি আমার হাতে দিলেন ভাল করে ধরে রাখতে।বললেন ভাতিজা তোর মাকে বল ভাল করে রান্না করতে।
আমার কাকা অনেক ভাল লোক ছিলেন।
আরেকবার শালুক তুলতে গিয়ে কাকার সাথে প্রতিযোগিতা করে পারছিলাম না।তাই যখন কাকা শালুক তুলতে ডুব দিত আমি কাকার শালুকগুলো আমার এদিকে এনে রেখে দিচ্ছিলাম।কিছুক্ষণ শালুক তুলতে তুলতে কাকা দেখলেন উনার শালুক খুব একটা বাড়ছে না।বরঞ্চ আমার শালুক উনার চেয়ে বেশি।কাকা বললেন ভাতিজা তোর আর আমার শালুক একসাথে কর।দুইজনে যা তুলতে পারি সেইগুলো পরে ভাগ করে সমান করে নেব।ঠিক আছে ?আমি মাথা নাড়িয়ে বলেছি ঠিক আছে।
আমার কাকা কত ভাল লোক ছিলেন!
আমি মিষ্টি খেতে পছন্দ করতাম।কাকা আমাকে মাথায় করে গ্রামের বাজারে নিয়ে যেতেন মিষ্টি খাওয়াতে।একদিন দোকানদারকে বললেন এককেজি মিষ্টি দিতে ।আমি কতগুলো খেয়ে আর পারছিলাম না।ভয়ে ছিলাম যদি কাকা ধমক দেয়?আমার কষ্ট দেখে কাকা দোকানদারকে প্যাকেট করে দিতে বললেন মিষ্টিগুলো।আমাকে বললেন ঘরে নিয়ে যা পরে খাস।
আমি মাঝেমাঝে দুঃস্বপ্ন দেখি।কাকা অপারেশন থিয়েটারে।কাকার পায়ে অপারেশন।সেন্সলেস না করেই পায়ের অপারেশন হচ্ছে।আর কাকা চিৎকার করছে।অবুঝ শিশুর মত।
ডাক্তার সাব ও ডাক্তার সাব!ও মারে ।ওওওও------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
২| ১৮ ই এপ্রিল, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:৪৯
শায়মা বলেছেন: এত ভয়ংকর কষ্টকর!!
আমার একজন আত্মীয়ও ঠিক এইভাবে ডায়াবেটিস রোগী ছিলেন। হজ করে ফেরার পথেই পায়ে ইনফেকশন দেখা দেয়। ৩ সপ্তাহের মাঝেই মারা যান।
৩| ১৮ ই এপ্রিল, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:৫২
বিড়ি বলেছেন: :'(
৪| ১৮ ই এপ্রিল, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:৫৭
যাযাবরমন বলেছেন: মৃত্যুর অধিকার চাই।
৫| ১৮ ই এপ্রিল, ২০১২ রাত ৮:০৬
আহমেদ সাব্বির পল্লব বলেছেন:
৬| ১৮ ই এপ্রিল, ২০১২ রাত ৮:০৬
নীল বরফ বলেছেন: আমি মুরুব্বীদের সাথে কোনো দিনও জোরে কথা বলিনি।উনি যেই হোক না কেনো।
পড়ে খারাপ লেগেছে।কিন্ত সত্য লিখেছেন।
৭| ১৮ ই এপ্রিল, ২০১২ রাত ৮:১০
নীল বরফ বলেছেন: আপনার লেখাটা পড়ে আমার চোখে পানি চলে এসেছে। আপনারা যা করেছেন, তা কি উনার পাপ্য ছিলো?
৮| ১৮ ই এপ্রিল, ২০১২ রাত ৯:১৭
সিকদার বলেছেন: আল্লাহ ঐ ভাল মানুষটিকে বেহেসত নসীব করুক।
৯| ১৮ ই এপ্রিল, ২০১২ রাত ৯:২৩
ত্রাতুল বলেছেন:
আমার বাবার ডায়াবেটিস ১৯৮৮ সাল থেকে। ২০১০-এ বার্ডেমে থাকতে হয়েছে ২৩দিনের মতো, বেশ বড় একটা অপারেশন হয়েছিল। কিছু বাজে অভিজ্ঞতাও হয়েছে। এখন খুব একটা ভাল নেই। লেখাটা পড়ে খুব কান্না পাচ্ছে, ভ্রাতা। কাছে থাকলে বুকে বুক মিশিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতাম কিছুক্ষণ।
১০| ১৮ ই এপ্রিল, ২০১২ রাত ৯:২৫
~মাইনাচ~ বলেছেন: সামুতে ভাল লেখা, অন্তরের লেখা, কষ্টের লেখা কেউ পড়েনা এটা তারই প্রমাণ।
মনটা কেমন জানি করে উঠলো।
কাকা ভাল থাকুক যেখানেই থাকুক।
১১| ১৮ ই এপ্রিল, ২০১২ রাত ১১:৫৮
মাহী ফ্লোরা বলেছেন: কি বলব বুঝতে পারছিনা!
১২| ১৯ শে এপ্রিল, ২০১২ রাত ৩:৫২
নস্টালজিক বলেছেন: আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামিন বেহেশত নসীব করুন!
১৩| ১৯ শে এপ্রিল, ২০১২ দুপুর ১:১৭
রেজোওয়ানা বলেছেন: উনার আত্ম চির শান্তি লাভ করুক......
তুমি তো আমাকে বলোনি সেদিন!
১৪| ১৯ শে এপ্রিল, ২০১২ বিকাল ৫:৫২
আবু সালেহ বলেছেন: উনার আত্মা চির শান্তি লাভ করুক.........
লেখাটা পড়ে বেশ কষ্ট লাগলো...........
১৫| ১৯ শে এপ্রিল, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:০৭
হাসান মাহবুব বলেছেন: মৃত্যু, বার্ধক্য, স্মৃতি... অতঃপর স্মরণার্থে বিশাল ভোজউৎসব... সবাইকে দেখে মনে হয় তারা স্মৃতির শরীর কেটেকুটে ভক্ষণ করছে...
তারপরেও কারো কারো মনে গচ্ছিত থাকে টুকরো পালক...ভেসে বেড়ায় প্রজাপতির মত...
বেঁচে থাকুক স্মৃতির প্রজাপতিরা।
১৬| ১৯ শে এপ্রিল, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:১৭
সোমহেপি বলেছেন: সবাইকে ধন্যবাদ
১৭| ২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০১২ বিকাল ৪:১৭
রঙ তুলি ক্যানভাস বলেছেন: আমি মৃত্যু নিয়ে কোনলিখা পারতপক্ষে পরিনা কারন আমি অনুভূতিপ্রবণ হতে চাইনা।
আজকে আপনার দুইটা লিখা পড়লাম,কেন পড়লাম শুধু শুধু?
স্মৃতিগুলো এখন পেইন দিবে।আমার যে অভিজ্ঞতা আছে তা তা সিনেমার গল্পের থেকে কমনা।তেমন কাউকে আপনার মত জানানো হয়নি,পারিনা জানাতে,তাহলে নিজেদের কিছু মানুষকেই যে অনেক ছোট করা হয়ে যাবে।
শুধু আল্লাহকে বলি আমাদের মতন অভিজ্ঞতা যেন তিনি কাউকে না দেন।
©somewhere in net ltd.
১|
১৮ ই এপ্রিল, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:৩৮
প্লিওসিন অথবা গ্লসিয়ার বলেছেন: একটা বিশ্রি লেখা!

এত পেইন সহ্য হয় না!