নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
২৮ মে, ২০২৪,
১৮:২৪
ঢাকা।
বাবা,
গোধুলীর অপস্রিয়মান লাল আলোর শুভেচ্ছা তোমায়। জানো বাবা, অনেক দিন গোধূলী দেখি নি। তোমার ঠিকানা তো এখন আকাশ। ছোট ঠিকানার গন্ডিতে তোমাকে আর ধরে রাখা গেলো না। আকশে তো নির্দিষ্ট কোনো পোস্টকোড নেই। তুমি পাবে তো এ চিঠি!
চারপাশের সবকিছু হুট করে বদলে গেলো। আগে তোমাকে চাইলেই হোয়াটস্যাপে টেক্সট করতে পারতাম কিংবা মেসেঞ্জারে অথবা একটা কল ই দিতে পারতাম। কিন্তু তুমি এখন দূর আকাশের তারা। চাইলেই তোমাকে ছোয়া যায় না, তোমার সাথে মনের দুটো কথা বলা যায় না। তুমি হঠাৎ করেই সহস্র যোজন দূরে চলে গেলে, বাবা। খুব কি তাড়া ছিলো যাওয়ার!
তুমি আর আমি প্রায়শই দাদূর চলে যাওয়া নিয়ে কথা বলতাম। তুমি বলতে মৃত্যু মানুষকে হঠাৎ করে বড় করে দেয়। আমি এ রকম কিছুর সাক্ষী আগে কখনো হই নি। আর যেন কখনো না ও হই। তুমি আমার হাতে হাত ধরা অবস্থায় চলে গেলে। শক্ত করে ধরা হাতের মুঠি টা ধীরে ধীরে আলগা হয়ে গেলো। সাথে আমার মাথার উপরের ছাতা টা ও চিরদিনের মতো উড়ে গেলো, হাতে পড়ে রইলো শূন্য ছাতার কাঠামো মাত্র।
আমি কান্না করতে পারি নি, বাবা। পাছে আই সি ইউ তে থাকা অন্য পেশেন্ট খারাপ হয়ে যায়। আমি কান্না করতে পারি নি, কি জানি আমার মা কে যদি না সামলানো যায়। আমি কাঁদি নি কারণ তোমার মা, দিদি ভাই আর সোনা কে কে স্বান্তনা দেবে! আমি কান্না করতে পারিনি যেন কাকু তার ভাইয়ের মৃত্যুশোকে মূর্ছা না যায়।
কিন্তু আমি ও রক্ত মাংসের মানুষ, বাবা। সবাই কাঁদলো, আর আমি শূন্য দৃষ্টি তে চেয়ে থাকলাম। তোমাকে তোমার প্রিয় কর্মস্থলে নেওয়া হলো, হাজার হাজার মানুষ কাঁদলো, আমি কাঁদতে পারলাম না। তোমার শুন্য চেয়ার টা ধরে অদৃশ্য তোমার পায়ের কাছে বসে ছিলাম বেশ অনেক টা সময়। পরে শুনেছি তোমার চেয়ার টা ওরা আলাদা করে রেখে দিয়েছে। আর কাউকে নাকি ওই চেয়ারে বসতে দেওয়া হবে না। তোমার জলের মগ, চায়ের কাপ, ফাইল, কলম পেপার ওয়েট সব ই আগের মতো আছে, শুধু তুমি নেই, বাবা। তোমার ডেস্ক এর পিছনে, তোমার প্রিয় দক্ষিণের জানালা দিয়ে সেদিন ও আগের মতোই হাওয়া দিচ্ছিলো, শুধু সেই হাওয়া অনুভব করার জন্য তুমি ছিলে না।
তোমাকে নিজের হাতে চিতায় তুললাম। নিজের হাতে প্রিয় মুখে মুখাগ্নি করলাম। যে মুখের প্রতিটা কথা ছিলো আমার কাছে বেদবাক্য, সেই মুখেই আমি আগুন দিলাম। আমার চোখের সামনে ভস্ম হয়ে গেলো আমার এত দিনের আশ্রয়স্থল, আমার সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু। আমি দেখলাম, চিতার আগুন একটা গোটা মানুষ কে কিভাবে গ্রাস করে নেয়।
সব কাজ শেষ করে কর্তব্যের খাতিরে ঢাকায় ফিরেছি এ মাসের ২২ তারিখ। ২৩ তারিখ থেকে অফিস করছি। অফিসে বসে চোখ ভিজে যাচ্ছে, কি বোর্ডের উপর জমে থাকা ধূলো, কাদা হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু তবুও আমার শোক করার জন্য আলাদা করে সময় বা সুযোগ নেই। ঘরে মা আছে, তাই মায়ের সামনে চোখের জল লুকিয়ে রাখতেই হয়। আমি কাঁদতে পারলে আমার হালকা লাগতো। কিন্তু আমি পারছি না, বাবা। আমার গলার কাছে দলা পাকিয়ে আছে। ভীষণ চিৎকার করে কাঁদতে পারলে বোধ হয় এই দলা পাকানো ভাব টা দূর হতো।
সবাই স্বান্তনা দিচ্ছে, একদিন সবাই কে চলে যেতে হবে। কিন্তু যার যায় সেই তো বোঝে কি রত্ন হারালো। এই যে অফিস থেকে ফেরার পথে লম্বা রাস্তা, যেতে ঘন্টা দেড়েক লাগে, এই পুরো টা সময় আমি তোমার সাথে ফোনে কথা বলতাম। আমাদের কথা বলার আলাদা কোনো টপিকের দরকার হয় নি কখনো। তুমি চলে যাওয়ার পর আমি প্রয়োজন ব্যাতিরেকে কারো সাথে একটা শব্দ উচ্চারণ করিনি। এমন না যে আমি চাইছি না। কিন্তু আমি পারছি না। তাই আজ তোমাকে লিখতে বসেছি। যদি নিজেকে একটু হালকা করতে পারি।
ওপারে তুমি ভীষণ ভালো থেকো, বাবা। আর আমাদের জন্য প্রতীক্ষায় থেকো। আবার একদিন চাঁদের হাট বসবে সবাই কে নিয়ে।
ইতি,
তোমার হতভাগ্য সন্তান
পুনশ্চ: বাবা, এভাবেও কি চলে যাওয়া যায়! এত কিসের তাড়া ছিলো, তোমার! আমাকে তো অন্তত একবার বলতে!
২| ০৬ ই জুন, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৭
শায়মা বলেছেন: বাবার জন্য প্রার্থনা।
৩| ০৭ ই জুন, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২
রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: আমার বাবা জীবিত আছেন, কিন্তু নিজে থেকে তেমন কথা বলতে পারেন না। কিছু জিগ্যেস করলে একটা-দুটো উত্তর দেন। তাঁর আগের সেই চাঞ্চল্য মিস করি। একটা সময় গ্রামময় ঘুরে বেড়াতেন, তার পদধ্বনি মিস করি।
৪| ০৭ ই জুন, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৩৯
স্বপ্নের শঙ্খচিল বলেছেন: তুমি ভীষণ ভালো থেকো, বাবা। আর আমাদের জন্য প্রতীক্ষায় থেকো।
.......................................................................................................
আমাদের মানবিকতা যতদিন থাকবে ততদিনই মানুষ থাকবে ।
তো ভাই আপনার নিক নামটা আমার সাথে মিলে গেলনা ???
পরিবর্তন করলে খুশী হতাম ।
৫| ০৭ ই জুন, ২০২৪ রাত ১০:৪৪
করুণাধারা বলেছেন: খুব হৃদয় ছোঁয়া লেখা!! প্রার্থনা করি, আপনার বাবা যেন ওপারে ভালো থাকেন। আপনিও ভালো থাকুন।
৬| ০৮ ই জুন, ২০২৪ রাত ১২:৪৪
রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: @স্বপ্নের শঙ্খচিল, আপনার ব্লগ লেখার বয়স ৭ বছর ৬ মাস আর উনার ১২ বছর ৩ মাস। যদিও উনার তুলনায় আপনার ব্লগ পরিসংখ্যান সমৃদ্ধ।
©somewhere in net ltd.
১| ০৬ ই জুন, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৭
কামাল১৮ বলেছেন: আগুন দিয়ে পোড়ানো ঠিক আছে।কিন্তু মুখে আগুন দেয়া ঠিক না,অমানবিক।ছেলে হয়ে বাবার মুখে আগুন দেয়া।এই প্রথা থেকে বের হয়ে আসা প্রয়োজন।
আপনার দুঃখে মর্মাহত।